তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি – পর্ব ৩২

0
394

#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৩২
মিশান সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না সেখানে তীব্র ওর হাত ধরে ধেয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বাড়ির প্রাঙ্গণের এক কোণে মিশানকে নিয়ে দেয়ালের সাথে হাত চেপে ধরলো, মিশান একটুও বিরক্তবোধ না করে উল্টো হাসিমুখে তীব্রকে বললো,
-আরে স্যার আমাকে এভাবে ধরে আনলেন কেনো?এখানে তো আমার আসার কথা ছিলো, আমাকে পাঠিয়ে আপনি নিজেই আমার আগে এসে গেছেন!

তীব্র দাঁতে দাঁত চেপে রাগীস্বরে আওয়াজ নিচু করে বললো,
-অই নাটক বন্ধ,স্বাভাবিক ভাবে কথা বল।আমি জানি তুই মাতাল হোস নি,অভিনয় করছিস,এটা তোর নতুন নাটক না। ফলো করে এসেছিস এখানে তাই না? তোকে আমি কতবার ওয়ার্নিং দিয়েছি ?শেষমেশ আমার পিছু নিয়ে এই অব্ধি এসেই গেলি!
-আরে স্যার কি যা তা বকছেন?আপনাকে ফলো আমি করবো কেনো?আপনি কোন রাস্তা দিয়ে এসেছেন সেটাই তো আমি জানি না। নিজেই এড্রেস দিয়ে পাঠান, আবার নিজেই উল্টা পাল্টা বকছেন?
কি আজব,নেশা করি আমি মাতাল হোন আপনি! (মিশান কিটকিটে হাসি দিয়ে থেমে আবার বললো)আমি মিশান, পুরো বার শুষে খেলেও এক বিন্দু পিনিক ধরে না।
-আমি তোমাকে এই বাড়ির এড্রেস দিয়েছি?
মিশান সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
-ওয়েট স্যার, আমি দেখাচ্ছি।প্রুভ ছাড়া মিশান এক কদম হাঁটে না।
এটা বলেই মিশান পকেট থেকে একটা ছবি আর এড্রেস বের করলো।
তীব্রর হাতে দিতেই তীব্র একটু চিন্তিতো হয়ে গেলো,
ছবিটা অন্য একটা লোকের কিন্তু এড্রেস তীব্রর বাড়ির।ঘটনা টা উল্টে গেছে বলে মনে হচ্ছে, তীব্র নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা নাম্বারে কল দিলো।
ফোনে কথা বলা শেষ করে মিশানের সামনে দাঁড়ালো।
-মিশান তোমাকে যে লোকটা এড্রেস আর ছবি দিয়েছে সে কি জিনিসটা তোমার হাতে দিয়েছিলো নাকি টেবিলে?কিংবা এমন হয়েছিলো কি, তুমি এগুলো ভুলে টেবিলে ফেলে রেখে বেরুচ্ছিলে আর কেউ একজন তোমায় ডেকে এগুলো হাতে দেয়?
-নো স্যার একদম হ্যান্ড টু হ্যান্ড। এক হাতে নিয়ে বার থেকে বেরিয়েছি। তবে…!(বলেই একটু ভাবুক ভাব নিয়ে রইলো)
-তবে কি?
-বার থেকে বেরুনোর সময় একদম গেটের কাছে আসতেই একটা খাম্বার সাথে ধাক্কা লেগে হাত থেকে সব পড়ে যায়,আমি ওকে কষষে মারি এক থাপ্পড়! এরপর আর একটা ছেলে আমার জিনিস গুলো তুলে দেয়।
তীব্র ধমকের স্বরে বললো,
-নরাধম কোথাকার! কিভাবে চলো,যে মানুষের সাথে ধাক্কা লেগে হাতের জিনিস পড়ে যায়?
-আনফরচুনেটলি স্যার!
-আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট শিউর এড্রেসটা ওখান থেকে চেঞ্জ হয়েছে।
-মানে স্যার,এটা কি তাঁর বাড়ি না,যাকে আমি মারতে এসেছি?
-না।
-ধুর আমার পরিশ্রম ই ফালানি। কিন্তু এটা কার বাড়ি স্যার?
আপনার?ওটা কে ছিলো?আমার মাদার ইন ল?
তীব্র দ্বিগুণ হারে রেগে বললো,
-শাট আপ!
-কেনো স্যার?আগে বলবেন তো,উনি কি জানেন আমি তাঁর পুত্রবধূ? আমি এভাবে এন্ট্রি নিলাম! যাই মাদার ইন ল’র কাছে গিয়ে কদমবুসি করে আসি।
-খবরদার মিশান। এখান থেকে একচুলও ভেতরে ঢুকবি না, যে দিক দিয়ে এসছিস সোজা সেদিক দিয়ে চলে যাবি এখন। আজ আর কাউকে মারতে হবে না।

-ওকে স্যার, তাহলে তাই হোক।আমি চলে যাই। মাদার ইন ল কে তো আমি আন্টি সম্বোধন করে ফেলেছি, তাকে বলবেন আমি সুন্দর করে তাকে একটা সালাম জানিয়েছি।
-ইডিয়েট, গেট লস্ট!
-গেট টা কোন দিকে স্যার?হারাবো কি করে?

তীব্র চোখ গরম করে তাকিয়ে মিশানের হাত শক্ত করে চেপে ধরে,
-আরে স্যার এভাবে টেনে ধরলে যাবো কি করে?এতোই যখন মায়া তাহলে ভেতরে নিয়ে চলুন, আপনার ফ্যামিলির সাথেও একটা মিটিং হয়ে যাক। আর কত এভাবে দূরে রাখবেন স্যার? আমি তো ভেবেছিলাম আপনার কোনো পরিবার নেই, এখন তো দেখছি আপনার মা আছে তারমানে আপনার বাবাও আছে,কিন্তু কথা হলো আরো ভাই বোন আছে কিনা।তবে স্যার আপনার মা কিন্তু হেভবি সুইট আছে দেখতে,একটু বয়ষ্ক লাগছে,বাট ইট’স ওকে।ভাববেন না ড্রিঙ্ক করেছি বলে ভুলে যাবো সব, পরে দেখা হলে ঠিক চিনে যাবো!মিশান যেটা ভুলে যায় সেটা ইচ্ছে করে ভুলে, আর যেটা মনে রাখে সারাজীবনে ভুলে না।
সে যাই হোক(তীব্র মিশানের মুখ চেপে ধরলো হাত দিয়ে)
-আর একটা ওয়ার্ড মুখ দিয়ে বের হবে আর আমার এই হাত তোমার নরম গালে এমন ভাবে স্পর্শ করবে শুধু ঠাস ঠাস শব্দ হবে। এটা আমার বাড়ি না, অই মহিলাও আমার কেউ না, আমি এখানে একটা কাজে এসেছি, বুঝেছিস?

মিশান তীব্রর দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের একটা আঙুল ঠোঁটের উপর রাখলো,এরপর ঢোলতে ঢোলতে যেভাবে এসেছিলো,সেভাবেই চলে গেলো।
তীব্র লম্বা দীর্ঘশ্বাস টেনে ঘুরে গিয়ে বাড়ির ভেতর গেলো।গেটের সামনে যেতেই দেখে তীব্র ওর মাকে দরজা আটকে দিতে বললেও সে আটকায়নি। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সে তীব্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়েছিলো, সেভাবেই আছে এখনো।এটা ভাবছিলো তীব্রর কোনো ক্ষতি না হয়ে যায় আবার। এগিয়ে যাবে সে সাহসও হচ্ছিলো না কারণ তীব্র অনেক রাগ করবে সেজন্য।
-তুমি এখনো এখানেই দাঁড়িয়ে আছো?
-দরজাটা আটকানোর সাহস হচ্ছিলো না বাবু।
তীব্র এদিক ওদিকা চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে বললো,
-কাউকে ডেকে তুলোনি তো আবার?
-না, কাউকে ডাকি নি।

তীব্র ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে কর্কশ কন্ঠে বললো,
-আমি সুস্থ ভাবে এসে পড়েছি, দেখেছো?এখন যাও শুয়ে পড়ো।
-মেয়েটা কে ছিলো বাবু?তোর পরিচিত কেউ?
– আমি কি চিনি নাকি?
-তাহলে ওভাবে গেটের সামনে দাঁড়ালো কেনো?আর বাইরের গেটে তো সিকিউরিটি আছে, মেয়েটাকে ঢুকতে দিলো কি করে?স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো মেয়েটা মাতাল , অনেক নেশা করেছে।আর হাতে একটা ছুরিও দেখলাম।মনে হয় তখন তোকে ডাক না দিলে ছুরিটা আমার পেটে ঢুকিয়ে দিতো।আমি তো ভেবেই পাচ্ছি না,এতো রাতে অচেনা একটা মাতাল মেয়েকে সিকিউরিটি কিভাবে ঢুকতে দিলো !
-আরে মা এতো গভীর চিন্তা করছো কেনো?মেয়েটা ভুলে আমাদের বাড়িতে এসে পড়েছিলো, রাত করে পার্টি করেছে বন্ধুদের সাথে,জোর করে ড্রিঙ্ক করিয়েছে,আর হাতে অই ছুরিটা আত্মরক্ষার জন্য রেখেছে।
-এতো রাতে একটা মেয়ে কেনো ঘরের বাইরে থাকবে?কেমন পরিবারের মেয়ে বাবা!বাবা মা কোনো খোঁজ রাখেনা এসব মেয়েদের?
রাস্তাঘাটে ধর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে এসব মেয়েদের কারণে।
কি যুগ এসেছে মেয়ে মানুষ এতো রাত অব্ধি বাইরে থাকে, তারউপর মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঘরে ঢুকবে,বাবা মা আবার সাদরে তাকে গ্রহণও করবে।মেয়েটা দেখতে কত সুন্দর দেখেছিস?আর চরিত্রটা কেমন বিপরীত!
আমার মেয়ে এমন হলে তেজ্য করে দিতে দুবার ভাবতাম না।

মিশানের নামে তীব্রর মায়ের মুখে কড়া কথা শুনে,তীব্রর গায়ে হয়তো একটু লাগলো, কিন্তু প্রকাশ করতে পারলো না। শুধু মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুটে বললো,
-তাহলে আমাকে তেজ্য করছো না কেনো?
-তোকে তেজ্য কেনো করবো বাবু?
-আমিও তো রাত বিরাত দেরি করে বাড়ি ফিরি ,কোনো কোনো রাতে ফিরিই না।শেষ রাতের আগে বাড়িতে আসতেই পারি না। হিসেব অনুযায়ী আমাকেও তেজ্য করা উচিৎ।
-তুই তো ছেলে।কখনো কি শুনেছিস রাস্তাঘাটে কোনো ছেলে ধর্ষিত হয়েছে?আর তুই কি মদ খাস?আজ অব্ধি দেখলাম না তো মাতাল হয়ে ফিরতে।
-একই হলো মা। মেয়েদের রাত বিরাত চলাফেরা করাটা আমরা পুরুষরাই কঠিন করে দিয়েছি।
একটা নিউজ দেখেছো মা?গত এক বছর ওমানে একটা ধর্ষণও হয় নি,কেনো জানো?অই দেশের পুরুষ রা প্রয়োজনে বিয়ে করে, ধর্ষণ বা নোংরামি করে না।
-তুই কি আমার উপর রেগে গেলি বাবু?
-রাগ করবো কেনো? তোমাকে বুঝালাম ব্যাপারটা।আর কাউকে একবার দেখে জাজ করতে হয় না, সব কিছুর পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে।
বড়সড় বিষয়ে সিম্পল কারণ থাকে,মাথায় রাখবে। কাউকে একবার দেখে খারাপ বলতে হয় না। কেউ খারাপ হলেও তার পেছনেও কারণ থাকে,এমনি এমনি কেউ খারাপ হয় না। চোর চুরি করে পেটের দায়ে, যদি সে রোজগার করার জন্য কাজ পেতো,কিংবা তাঁর চাহিদা পূরণ করার মতো অর্থ সে পেতো তাহলে চুরি করতো না।
এসব জিনিস কি বাবা তোমাকে কখনো বুঝায় নি?

-আচ্ছা বাবা,আতংকিত হয়ে একটু ভুল কথা বলে ফেলেছি।তুই রাগ করিস না আবার।পরবর্তীতে এরকম বলবো না।

-রাত অনেক হয়েছে, ঘুমাও গিয়ে যাও,কথা বাড়িও না।
-আচ্ছা তীব্র, মেয়েটার যে ওরকম মাতাল অবস্থা,ঠিক মতো বাড়িতে পৌঁছাতে পারবে তো?তুই একটু এগিয়ে দিয়ে আসতি।হাজার হলেও মেয়ে তো!যদি কোনো বিপদে পড়ে রাস্তায়।
-সেটা অই মেয়ের বাবা মা বুঝবে।তোমার চিন্তা করতে হবে না। এখন হয়তো বলবে, “নিজের বোন হলে পারতি এরকম করতে? “তাহলে শুনো, বোন আমার একটাই। তাই আর এক বোনের সাথে অন্য মেয়েদের তুলনা করো না।মা বোনের দোহায় দিয়ে কথা আমার একদম ই পছন্দ না।

একটু গরম মেজাজে কথাগুলো বলে তীব্র চলে গেলো সামনে থেকে।তীব্রর মা একবার তীব্রর যাওয়ার দিকে তাকায় আবার পেছনের দিকে ঘুরে তাকায়। মিশানের প্রতি যতোটা রাগ কাজ করছে ততোটা চিন্তাও কাজ করছে।

মিশান তো ছন্নছাড়া বান্দা।রাস্তা দিয়ে হাঁটছে নাতো, মনে হয় উড়ছে।ওদিকে বাড়ি থেকে দ্বীপ মিশানকে অনবরত কল করে যাচ্ছে, মিশান ফোন সুইচড অফ করে রেখে দিয়েছে। শেষমেশ তীব্রকে কল দিলে তীব্র জানায়,মিশান ঠিক আছে, তবে আজ বাড়ি নাও ফিরতে পারে।

কোন এলাকায় ঢুকেছে নিজেও জানে না, এলাকার গলির পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখে ফুটপাতের উপর ল্যাম্পপোস্টের নিচে জড়সড় হয়ে একটা ছোট্ট বাচ্চা বসে আছে।মিশান কাছে যেতেই দেখে নয় দশ বছর বয়সী একটা মেয়ে, খসখসে এলোমেলো চুল দিয়ে মুখ ঢাকা, দুই হাঁটু এক করে তাতে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

মিশান মেয়েটার পাশে গিয়ে ধপাস করে বসে পড়ে।মেয়েটা একটু ছিটকে গিয়ে পাশ ফিরে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চোখ করে বলে,
-বস্ আপনে!

মিশান চোখ কুঁচকে তাকিয়ে ভালোমতো দেখে এটা টুকটুকি।
যদিও মিশান এখনো মাতাল মাতাল, তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো, বাচ্চাটার সামনে স্বাভাবিক স্বরে কথা বলার।
-তুই এতো রাতে এই ফুটপাতে একা একা এখানে বসে কি করছিস?

টুকটুকি একটু সরে বসে উত্তর দিলো,
-এমনেই।
-তুই এভাবে সরে বসলি কেনো?
-না এমনেই।
মিশান ভাবলো হয়তো ওর পান করা কড়া এলকোহলের ফ্লেভারের কারণে টুকটুকি সরে বসেছে।তাই নিজ দায়িত্বে মিশানও কিছুটা দূরে সরে বসে।
-এবার বল এখানে কি করছিস?
টুকটুকি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
-ইট্টু পরেই ঘরে যামু গা, এহন এনেই বইয়া রইছি।
-তুই কি জানিস টুকটুকি, এই রাস্তায় একবার একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছিলো সেই গাড়ির সব যাত্রী এখানে মরে গেছে।
ওদের আত্মা এখান দিয়েই ঘুরে,সবার আত্মা খুব তৃষ্ণার্ত!
-ফাউ কতা কইয়েন না, আমি জানি আপনে ডর দেহাইয়া আমার প্যাট থিকা কতা টানতাছেন। আমি এইনে গত তিন দিন ধইরা বইয়া থাকি,মাই আইয়া ডাক দিলেই ঘরে যাই।
-কেনো তোর মা তোকে এই সময় বাইরে বসিয়ে রাখে কেনো?
টুকটুকি মুখ শুকনো করে বললো,
-জানি ন্যা।
মিশান ফুটপাতের উপর শুয়ে পড়ে টুকটুকির দিকে ঘুরে বললো,
-কেস টা কি বল তো, শুনি।
-আপনে তো এহন দেহা করবার আহেন ই না। আমার চা ও খাইবার আহেন না।আর ব্যাচাকিনাও অয় না।কয়ডা দিন ধইরা খুব অভাব যাইতাছে আমাগো।আব্বার কি জানি অসুখ অইছে,হাসপাতালে ভরতি, মেলা ট্যাহার ওষুধ খাওন অয়।চিকিৎস্যার লিগ্যা আমাগো বস্তির যে মালিক ব্যাডা আছে, তাঁর থিক্যা মায় কিছু ট্যাহা করজো নিছাল।সাতদিন আগে ট্যাহা ফিরত দেওনের কতা আছাল। মায় সব ট্যাহা দিবার পারে নাই দেইখা কয়দিন ধইরা পতি রাইতে মালিক ব্যাডায় আমাগো ঘরে আহে, আর তহন ব্যাডায় আমারে কয় বাইরে বইয়া থাকবার,যহন মায় ঘরে যাইবার কইবো তহন যাইবার।আমি জিগাইছি বাইরে যামু ক্যা?ব্যাডায় কয়,”তর মায়ের লগে বুঝাপড়া আছে,তুই বাইরে যা এহন। “আমি কইছি আমি ঘরে থাকলে কি অইবো? হেতি কয়,”তুই আরো বড় অইয়া নি, তারপর তর লগেও বুঝাপড়া অইবো। ” আমি যহন ঘর থিকা বাইরাই মালিক ব্যাডায় দরজা আটকাই দেয় ঘরের।তারপর থিক্যা আমি এইনে আইয়া বইয়া থাকি,যহন ডর করে তহন কান্দি,মাই আইলেই ঘরে যাইগ্যা।

টুকটুকির মুখের কথা শুনে মিশানের মাথায় চক্কর উঠে গেলো, লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ায় ,
-চল আমার সাথে।
-কনে?
-তোদের বস্তিতে।
-আমাগো ঘরে?
-হুম।
-মাই তো ডাকবার আহে নাই।
-দরকার নেই চল তুই।
-আইচ্ছা নন।
-আর শোন,ওখানে যা হবে সকালের সাথে তুই সব ভুলে যাবি কেমন?তোর মা যদি জিজ্ঞেস করে আমি কে তাহলে বলবি আমাকে চিনিস না তুই।
-আইচ্ছা।
টুকটুকির হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাঁধেভর করে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে ওদের ঘরের সামনে দাঁড়ায়। মিশান কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো,ভেতর থেকে স্পষ্ট শব্দে একটা গোঙানীর আওয়াজ আসছে।
টুকটুকি বাইরে থেকে খটখট শব্দ করে নক করতে যাবে, তার আগেই মিশান ওর হাত আটকে ধরে।কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে।
-তুই এখানে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাক। যতক্ষণ না আমি চোখ খুলে তাকাতে বলবো তুই তাকাবি না।
-আইচ্ছা।
এরপর মিশান মুখে মাস্ক পড়ে মাথার ক্যাপটা সামনের দিকে টান দেয় যেনো কপাল চোখ ঢেকে থাকে।এরপর ওর পকেট থেকে কিছু একটা বের করে সেটার সাহায্যে দরজার ছিটকিনি খুলে ফেলে বাইরে থেকে।
টুকটুকি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে আর মিশান ভেতরে গিয়ে দেখে, টুকটুকির মা আর বস্তির মালিক দুজনেই আপত্তিকর অবস্থাতে আছে।ওর মায়ের চোখ ভরা পানি,মনে হচ্ছে অনেক কেঁদেছে, আর এখনো কাঁদছে, না চাইতেও অভাবের তাড়নায় বিপদে পড়ে, মালিকের ফাঁদে পা ফেলতে হয়েছে।
এই দৃশ্য দেখে মিশান রাগবে নাকি ফাটবে বুঝতে পারছে না। তবে যতোটা না খারাপ লাগছে টুকটুকির মায়ের অবস্থা দেখে, তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগছে টুকটুকিকে যে বাজে ইংগিতে খারাপ কথা বলেছে তার জন্য।

লোকটা মিশানকে দেখে টুকটুকির মাকে ভোগ করা ছেড়ে দিয়ে লুঙ্গী খুঁজে সেটা পড়তে লাগলো, টুকটুকির মাও জামা ঠিক করতে লাগলো।
দুজনের চোখেই ভয়।
মিশান টুকটুকিকে ভেতরে আসতে বসে,টুকটুকিকে জিজ্ঞেস করলো,
-ঘরে কোনো বস্তা আছে?
-আছে।
-দড়ি?
-আছে।
-দাঁ?
-বটি দাঁ আছে।কি করবেন?
-সব গুলো জড়ো কর এনে, একটা জাদু দেখাবো।
-অই ক্যারা তুই? কার অনুমতি নিয়া বস্তিতে ঢুকছস?মাস্তানি এই বস্তিতে চলবো না। মাইয়া মাস্তান এই প্রতম দেকলাম । ফুঁ মাইরা উড়াইতে টাইম নিমু না।
ভালো চাস তো বস্তির ত্রিসীমানা ছাড়।
-শালা ফাটা ক**** বাচ্চা। তোর স্যাটার্ডে ফ্রাইডে ক্লোজ করতে এসেছি।
মানুষের অভাবের সুযোগ নেয়ার স্পেশাল ক্লাস নেয়া শেখাবো, সারাজীবন মনে রাখার প্রয়োজন পড়বে না।যেখানে তুই ই অন্য নারীকে সম্মান করতে জানিস না, সেখানে তোর প্রজন্মটা কেমন হবে? তাই সব রাস্তা ক্লোজ করতে এসেছি।

-ক্যারা কারে ক্লোজ করে দেহাইতাছি।
বস্তির মালিকটা তড়িঘড়ি করে তাঁর মোবাইলটা নিয়ে কাকে যেনো ফোন করবে বলে ডায়াল করতে যাবে তার আগেই মিশান লাত্থি মেরে মোবাইল সরিয়ে দেয়, লোকটার পেটে লাত্থি মেরে শুইয়ে ফেলে, টুকটুকির মা মুখ ছাপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।

একটা গামছা দিয়ে লোকটার মুখ বেঁধে দেয়,যেনো শব্দ না হয়।

মারতে মারতে একদম আধামরা করে দেয়, এরপর তাঁর পুরুষাঙ্গ কেটে দিয়ে একটা দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে বস্তার ভেতর ভরে ফেলে।

লোকটার মোবাইল টা টুকটুকির মায়ের হাতে দিয়ে বলে,
-এই মোবাইলটা নিয়ে এখান থেকে চৌরাস্তায় দাঁড়াবেন, সেখানে ৩০ মিনিট মোবাইলটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন,কেউ কল দিলে রিসিভ করার প্রয়োজন নেই। তারপর মোবাইল টা নিয়ে ওর বাড়ির সামনে ফেলে চলে আসবেন।

টুকটুকির মা ভয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। মিশানের বলা শেষে সে মাথা হাল্কা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
-টাকার অভাবে যে কাজটা করেছেন সেটা যেনো দ্বিতীয় বার না হয়, দোষ কিন্তু উনার একা ছিলো না। আপনি চাইলে অন্য কোনো ভাবেও টাকা ম্যানেজ করতে পারতেন।যখন উনি আপনার কাছে টাকা উসুলের জন্য কুপ্রস্তাব দিয়েছে তখনি উচিৎ ছিলো কোনো গুণি ব্যক্তি বা থানায় জানানো।
লোকের বাসায় বাসায় কাজও তো করতে পারেন তাই না?
টুকটুকির মা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-আমার এক আত ভাংগা,আরেক আত ভালো, এক আত দিয়ে কি কাম করুম?আমি তো পঙ্গু।
-হয়েছে,এক্সকিউজ দিলে অনেক দেয়া যায়।

মিশান পকেট থেকে কিছু টাকা টুকটুকির হাতে দিয়ে, বস্তাটা টেনে নিতে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেশ খানিকটা দূরে, ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত এক পড়ন্ত বিকেলে একটা নিরিবিলি রাস্তায় মিশান দাঁড়িয়ে আছে।একটা অফ হোয়াইট কালারের শাড়ী, গলায় একটা মুক্তার মালা পড়া,চুলগুলো খোঁপা করা।
দেখতে বড্ড মায়াবী লাগছে। মিশানের মিষ্টি সাজের সাথে হাল্কা সাজ দেয়াই বেশ মানান সই।

একদৃষ্টিতে পথ চেয়ে আছে যেনো কারো অপেক্ষায়।ওর দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে যেনো কত যুগ ধরে কারো ফেরার তাগিদে অপেক্ষা করছে।

হঠাৎ করেই চোখের কোণ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে, পানিটাকে প্রশ্রয় না দিয়ে মুছে ফেলে আবার সেই তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

-না তো নিজের স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে পারলাম, না তো কারো স্বপ্নের অংশীদার হতে পারলাম। চাওয়া না পাওয়ার হিসেবের খাতাটা খুলে যখন চোখ বুলাই, জীবনের এ যাত্রায় কিছুই পাই নি, যা পেয়েছিলাম সেসব হারিয়ে গেছি।আচ্ছা দোষটা কি আমার?আমিই কি আমার জিনিস গুলো আগলে রাখতে পারি না?আমার অবহেলার কারণেই কি সব হারিয়ে যাচ্ছে?
যা কিছু চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে সেগুলোর মাঝে আমি শুধু প্রশ্ন খুঁজে পাই,কেনো উত্তরেরা আমার সাথে লুকোচুরি খেলায় মত্ত?

মনে মনে আক্ষেপ করা কালিন হঠাৎ কানের মাঝে কেউ পিছন থেকে সজোরে হাওয়া দিলো।
মিশান পাশ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখে তীব্র।
-এখানে একা একা ভূতের মতো দাঁড়িয়ে কি করছো?অনেক্ষণ ধরে খেয়াল করছি স্ট্যাচু হয়ে এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছো একদৃষ্টিতে। ভাবলাম প্রাণ খুলে গেলো নাকি তোমার।

মিশান উত্তর না দিয়ে তীব্রর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তীব্র মিশানের দিকে উপর থেকে নিচ অব্ধি দেখে বলে,

-আবার শাড়িও পড়েছো দেখছি,কারো জন্য অপেক্ষা?
-হুম?
-কার জন্য?
মিশান ভেজা গলায় উত্তর দিলো,
-যার জন্য অপেক্ষা করছি,সে হয়তো কখনো ফিরবে না।সে কবে ফিরবে আমায় বলে যায় নি,তাই এখানে অপেক্ষা করি তাঁর জন্য।

তীব্র সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-তোমার জীবনে কি আমিই একা নই?
মিশান আবার তীব্রর চোখের দিকে তাকালো,নজর সরিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দিলো,
-নাহ!আপনি আমার জীবনে দ্বিতীয় পুরুষ!

তীব্র মিশানের কথাটা শুনে ধাক্কা খেলো একটা। নরম স্বরে প্রশ্ন করলো।
-সে কেনো চলে গেছে তোমায় ছেড়ে?
-কারণ আমি তাকে ভালোবেসেছি, প্রেমও করেছি,কিন্তু প্রেমিকা হতে পারি নি।
হয়তো দায়িত্ব পালন করতে পারিনি তাই।
এই পথটাতে তাঁর সাথে শেষ দেখা হয়েছিলো।তাই অপেক্ষা করি হয়তো এখানেই আবার দেখা হয়ে যাবে।

কথা গুলো বলতে বলতে মিশানের গলা ধরে আসে,এদিকে তীব্রর পায়ের তলার মাটি যেনো নেই।

চলবে…………

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ভুল গুলো ধরিয়ে দেবেন শুধরে নেবো। গল্পকে গল্প হিসেবে দেখুন,বাস্তব জীবনের সাথে মেলাতে যাবেন না দয়া করে।
ভালো লাগলে অনুপ্রেরণা দিয়ে পাশে থাকুন,ভালো না লাগলে ইগনোর করুন,ধন্যবাদ!)
আগের পর্বের লিংক:-
https://www.facebook.com/112848997065058/posts/273527654330524/
পরের পর্বের লিংক:-
https://www.facebook.com/112848997065058/posts/279240390425917/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here