#প্রেমালয় ২ -৬
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
শিশিরের হাত চেপে ধরে আছে মুগ্ধ। শিশিরকে নিয়ে দ্রুত পায়ে রুমে এসে ছুড়ে ফ্লোড়ে ফেলে দেয় মুগ্ধ। এতোক্ষন হাত চেপে ধরে রাখায় হাতটা কচলাচ্ছে শিশির। শিশিরের দিকে রাগি লুক নিয়ে মুগ্ধ বললো,
– তুমি আসলেই খুব সার্থপর একটা মেয়ে। হাতে ধরে নিজের বোনের সংসার নষ্ট করতে চাও তাই না?
চোখ তুলে মুগ্ধর দিকে তাকায় শিশির। হয়তো কথাটার মানে বুঝতে পারেনি শিশির। অবার বঙ্গিতে বললো,
– মানে?
– মানে হলো, সুশান্ত এখন তীসার বিয়ে করা স্বামি। তোমায় না পেয়ে তোমার বোন তীসাকে বিয়ে করে নিয়েছে সে। তোমার দোষ কতটুকু ছিলো এটাও যাচাই করার সময় ছিলো না তার। আর এখন তুমি তার কাছে ছুটে গিয়ে তোমার বোনের সংসার নষ্ট করতে চাইছো?
শিশির যেনো অবাকের চরম সীমানায় পৌছে গেল। সুশান্ত তীসা আপুকে বিয়ে করেছে অথচ আজ তার সাথে দেখা করলাম সে এই ব্যাপারে কিছুই বললো না। এর পর মুগ্ধ এসে শিশিরের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলো, আর মুগ্ধর গার্ড গুলো সুশান্তকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেল। চট করেই শিশির বললো,
– সুশান্ত ভাইয়া কোথায়? তাকে কোথায় নিচে গেলেন? কি করছেন তার সাথে?
– তেমন কিছুই না, শুধু তাকে একটু বুঝিয়ে দিবে আমার থেকে আমার ভালোবাসা কেড়ে নেওয়ার ফল টা।
– সে আপনার ভালোবাসা কেড়ে নেয় নি। আপনি নিজেই আপনার ভালোবাসাকে হারিয়েছেন।নিজ হাতে দুড়ে ঠেলে দিয়েছেন।
মুগ্ধ শিশিরের পাশে হাটুর উপর ভর করে বসলো,
– আমি সত্যিই আজও বুঝতে পারছি না তোমার আমার মাজে দুরুত্বটা কেন তৈরি হলো শিশির। যখন থেকেই তোমাকে তোমার ফ্যামিলির লোকরা হোস্টেলে ভর্তি করে দিলো, তখন থেকেই তুমি বদলাতে শুরু করলে। আমার সাথে যোগাযোগটা পর্যন্ত করতে না। ফ্যামিলির উপর রাগ করে ফোনও ইউজ করতে না। আমি কতো ভাবে তোমার সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করেছি। মাহিমাকে দিয়ে কতো চিঠি পাঠিয়েছি, একটারও উত্তর পাইনি।
একটু অবাক হলো শিশির। মুগ্ধ কি সত্য বলছে নাকি তার মনোরঞ্জন করার জন্য গল্প সাজিয়ে বলছে ওটাও বুঝতে পারছে না সে। কারণ মুগ্ধর লেখা একটা শব্দও তো তার কাছে পৌছায় নি। শুধু শেষ চিরেকুট টা ছারা।
– আপনি কেমন ভালোবেসেছিলেন তা আমার বুঝা হয়ে গেছে। সামান্য একটু দুরুত্ব বেড়েছিলো, আর আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করেন নি।
– আমি আজও অপেক্ষ করে আছি শিশির।
– প্লিজ আমি আর কিছু শুনতে ইচ্ছুক নই। আমাকে একটু একা থাকতে দিন, নয়তো মেরে ফেলে দিয়ে মুক্গ করে দিন।
এর মাঝে কেটে গেল একদিন। রুমের বেলকনিতে বসে আছে শিশির। গেটের সামনে কয়েকজন গার্ড বারি পাহারা দিচ্ছে। বেরোবার কোনো রাস্তা এই কয়েকদিনেও খুজে পেলো না সে। মাথাটা প্রচুর ধরে আছে। চারু মেয়েটাকে সেই কখন বলেছিলো এক কাপ চা করে দিতে। কিন্তু এখনো খবর নেই তার।
মুগ্ধর প্রতিটা কথাই প্রচুর ভাবাচ্ছে তাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় মুগ্ধই ঠিক। আবার মাজে মাঝে মনে হয় মুগ্ধই তো বেঈমানি করেছিলো তার সাথে। আর এখন বানিয়ে বানিয়ে বলছে না তো আবার?
গুধুলিন আলোর সাথে নিভে যাচ্ছে দিন টাও। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে অনেক আগেই ঢুবে গেছে। কিছুক্ষন পর সন্ধা মেনে আসবে।
তারাহুরা করে রুমে ঢুকলো চারু। তবে হাতে চা নেই। শরিরে কেমন একটা উত্তেজিত ভাব।
শিশির তৃক্ষ্ম চোখে সেি উত্তেজনা টা কেয়াল করে বললো,
– এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন তোমাকে? আর চা কোথায়?
শিশিরের সামনে এসে দাড়িয়ে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা নিশ্বাস নিলো চারু।
– আপু, স্যার নাকি গাড়ি এক্সিডেন্ড করেছে। এখন হসপিটালে আছে, অবস্থা খুব সিরিয়াস।
শিশিরের মনে কেমন যেনো অদ্ভুত একটা ঢেউ বয়ে গেলো।
যেই মানুষটাকে এতো ঘৃনা করে তার জন্য এমন হুট করে কষ্ট জেগে উঠলো কেন এটা তার অজানা।
দৌড়ে সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো শিশির। আজ গার্ড গুলোও তাকে বাধা দেয় নি। গেট পেড়িয়ে রাস্তায় আসে সে। একটা গাড়ি ডেকে হসপিটালে উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সে।
আজতো চাইলেই পালিয়ে যেতে পারে সে। কিন্তু কোনো অজানা টানে পালিয়ে যেতে পারছে না আজ।
মনে হচ্ছে অদৃশ্য কিছু একটা তাকে খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। বার বার বাইরের দিকে উকি দিচ্ছে আর কতটুকু রাস্তা বাকি আছে?
হসপিটালে রিসিপশন থেকে কোজ নিয়ে মুগ্ধর কেবিনে চলে গেলো সে। দেখে দুই হাত আর দুি পা বেন্ডেজ করা তার। আর বেডে ঘুমিয়ে আছে মুগ্ধ। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো।
ডাকা নিষেধ। তাই পাশে চোক গড়িয়ে পানি পড়ছে শিশিরের। মনে পরলো সেই প্রথম দিনের কথা। যেদিন এভাবেই শিশিরের পাশে বসে ছিলো মুগ্ধ। কিন্তু সেদিন একজনের সাথে আরেক জনের এতোটা টান ছিলো না তাদের। আজ কেন যানি বড্ড কষ্ট হচ্ছে মানুষ টার জন্য।
ডাক্তার এসে মুগ্ধকে দেখছে। শিশির ডাক্তারকে বলছে, মুগ্ধ ঠিক আছে তো? কিছু হবেনা তো তার, বলেন না।
ডাক্তার যেটা বললো তা শোনার জন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলো না সে। বুক ফেটে কান্না আসছে শিশিরের। বেচে থাকলে মুগ্ধ আর কখনো হাটতে পারবে না। আর বাচবে বলে এমনও গ্যারান্টি দিতে পারছে না তারা।
আজ খুব কান্না পাচ্ছে শিশিরের।
,
,
সন্ধায় বাসায় ফেরার পর থেকেই বিষণ্ন মনে শুয়ে আছে সুশান্ত। কাউকে কিছু বলছে না। তীসাকে ডেকে বললো,
– মাথা টা টিপে দে তো, ব্যাথা করছে প্রচুর।
ভয়ে ভয়ে সুশান্তের পাশে এসে দাড়ায় তীসা। পাশে বসে মাথা টিপতে শুরু করলো কাপা হাতে।
– জানিস, শিশিরের কোজ পেয়েছি আমি। সে পালায়নি। মুগ্ধ জোড় করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো তাকে। সব বলেছে আমায় শিশির। শুধু শুধু আমরা সবাই তাকে ভুল বুঝেছিলাম।
– কোথায় সে? টিক আছে তো?(তীসা বললো)
– হুম, যত দ্রুত সম্ভব মুগ্ধর থেকে ুদ্ধার করে নিয়ে আসবো আমি। ওকে আমি আর কারো হতে দিবো না।
তীসা কিছু বলছে না। চুপচাপ পাশে বসে সুশান্তের মাতা টিপে দিচ্চে সে। তার মনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো। সুশান্তের দিকে তাকিয়ে বললো,
– শিশিরকে নিয়ে আসার পর আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন তাই না?
চলবে?,,,,,,,,,
~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইলো। আইডি হ্যাক হওয়ার কারণে গল্প দিতে দেরি হয়েছে।💖