মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৩৮

0
1009

#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৩৮
#সুমাইয়া আক্তার মিম
_
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।বাতাসের ভারি ঝাপটানোর সাথে ঘুরি ঘুরি বৃষ্টি। আচমকা দমকা হাওয়া গাছপালা কে দুলিয়ে দিচ্ছে।ফুল বাগানের ফুল গুলো ভিজে স্নিগ্ধ হচ্ছে টইটম্বুর বৃষ্টির পানিতে। চারিদিকে আঁধার নেমে আসছে। আকাশের কালো তুলোর দল এক জোট হয়ে পৃথিবীতে আঁধার নামাতে চাইছে। বিকেল চারটা নাগাদ,সন্ধ্যা হতে ঢের বাকি। আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আঁধার কালো।আকাশের আঁধারের সাথে আজ খান বাড়ির সকলের মাঝে আঁধার নেমে এসেছে।আজ যে পরিবারে সবচেয়ে ছোট একটি জান চলে গেলো।হোক সে আল্লাহর দান একটি বোবা প্রানী যার অস্তিত্ব কিছুক্ষণ আগে বিলিন হয়ে গিয়েছে। বাড়ির ছোট পদের কর্মস্থল থেকে শুরু করে সকলের মনে আকাশ সমান কষ্ট।কম বেশি সকলের প্রিয় ছিল স্মাইলি নামের ছোট্ট বিড়াল ছানাটি। সম্পূর্ণ খান বাড়ি আজ নিস্তব্ধ কোথাও আজ খিলখিল হাসির ধ্বনি বেজে উঠছে না।সকলে শোকাহত। খিলখিল হাসির ধ্বনি কিভাবে বাজবে?যাকে নিয়ে রূপ খিলখিল আওয়াজে মেতে উঠতো সেতো আজ নিশ্চুপ।কিছুক্ষণ পূর্বে সাদা গোলাপ বাগানে একটুখানি স্থানে নিজের জায়গা করে নিয়েছে স্মাইলি। সেখানে তাঁর কবর দেওয়া হয়েছে, দেওয়া হয়েছে অন্তিম বিদায়।হায় মৃত্যু! কতোটা নিষ্ঠুর তুমি।একটি অবুঝ প্রানী যার কোনো দোষ ছিলো না তাঁর এই নির্মম কষ্ট কী প্রাপ্য?হুম সে দোষী ছিলো কারণ সে খুব প্রিয় একটি মানুষের খুব প্রিয় ছিলো।

রূপের কষ্টটা জেনো সকলের কষ্ট দিগুন করে দিচ্ছে।মেয়েটা কান্না করতে করতে কেমন নেতিয়ে গিয়েছে। থেকে থেকে চিৎকার করে কাঁদছে।যাকে সামাল দেওয়া বাড়ির সকলের এবংকি বারিশের পক্ষেও কঠিন হয়ে উঠেছে। খুব প্রিয় জিনিস হারিয়ে গেলে ঠিক কতোটা কষ্ট তাঁর কোনো সংজ্ঞা হয় না। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম।খুব তুচ্ছ জিনিস মানুষের প্রিয় হয়ে ওঠে একসময় সেই প্রিয় জিনিস খুব বেশিই প্রিয় হয়ে ওঠে।একদিন সেই তুচ্ছ জিনিসটাও নিজের স্মৃতির রং তাজা করে চলে যায় দূরে কোথাও কিন্তু রেখে যায় সেই মনকাড়া স্মৃতি। রূপের সাথেও ঠিক এমনটাই হলো।স্মাইলি তাঁর পছন্দের তালিকায় ছোট্ট একটি জীব যাকে নিয়ে সারাদিন মেতে থাকতো সে।যার সাথে খুনসুটি করে দিন পার করতো।খুব অল্প সময়ে খুব বিশাল জায়গা জুড়ে গিয়েছিল স্মাইলি।আজো সকাল বেলা যে মন মরা হয়ে তাঁর কুলে আশ্রয় নিয়েছে,নিজের লোমে পরিপূর্ণ লেজ দ্বারা আদর করে দিয়েছে রূপের গালে। ভাবতে চোখ দুটো ভরে আসে অশ্রুতে।আজ সকালের সেই শান্ত থাকার কারনটা কী তাহলে স্মাইলির মৃত্যুর আবাস বুঝতে পারা ছিলো। গুরুজনে বলে একটা প্রানী নাকি মৃত্যু বিষয়টি সবার আগে বুঝতে পারে শুধু সে কথা বলতে অক্ষম বলে চিৎকার করে কাউকে নিজের কষ্ট বুঝাতে পারে না। কথাগুলো ভাবলো রূপ।নিজ কক্ষে বিছানায় বারিশের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে সে।হাতের দিকে দৃষ্টি দিতে দেখতে পেলো স্মাইলির শরীরের রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে তাঁর তুলতুলে নরম সাদা হাত জোড়া। এতোক্ষণে রক্ত জমাট বেঁধে রঙের ন্যায় মিশে গিয়েছে হাতে।বারিশ হাজার চেষ্টা করেও হাত ক্লিন করতে পারেনি।তাঁর পাশে বারিশ তাকে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।নানা কথা বলে তাকে বুঝিয়ে চলছে।রূপ এখন শান্ত।দীর্ঘ সময় কান্না করার ফলে না আছে চোখে জল আর না আছে শক্তি।কষ্টে রাগে সব তছনছ করে দিতে ইচ্ছে করছে তবুও সে ভাব শূন্য।নিজের মাঝে নেই সে। বারবার মাথাতে আওড়াছে স্মাইলি তাঁর প্রিয় বস্তু তাই তাঁর প্রাণ গিয়েছে। তারমানে রূপকে কষ্ট দেওয়ার জন্য রূপের সব প্রিয় বস্তুকে এমন নির্মম নির্যাতন উপভোগ করতে হবে। ভাবতেই রূপ বারিশের বুক খামচে ধরলো। রূপের অবস্থা বুঝে বারিশ অস্থির হয়ে রূপকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। রূপের সামনে শুধু ভেসে উঠলো স্মাইলির নিথর দেহ। থেতলানো মুখ, থেতলানো লেজ। শরীরের প্রতিটি জায়গায় জুড়ে দাঁড়ালো ছুরির আঘাত।সাদা শরীরটা দেখে বোঝা দায় ছিলো এটা রূপের প্রিয় সাদা বিলাইটা। খুব নিখুঁত ভাবে আস্তে আস্তে খুব প্রশান্তি নিয়ে মারা হয়েছে।যার সময় আনুমানিক দীর্ঘ হবে। বোঝা মুশকিল ছিলো এটা স্মাইলি।আজ রূপ একদম ভয় পায়নি তাঁর রক্তাক্ত বিড়াল ছানাটিকে দেখে।টুপটাপ বৃষ্টি ন্যায় চোখ জোড়া পানি ঝরেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে আগলে নিয়ে ছিলো শেষ সময়টুকু পর্যন্ত স্মাইলিকে।খুতিয়ে খুতিয়ে দেখেছে প্রতিটি ক্ষত বিক্ষত স্থান।একদম ভয় হয়নি তখন।বারিশ তখন নির্বাক। চেয়েও রূপকে শান্ত করেনি বারিশ।আগলিয়ে নিলেও রূপকে রূপের মতো করতে দিয়েছে সবকিছু। রূপের কষ্ট সব ধ্বংস করতে ইচ্ছে হলেও সে তখন শুধু নির্বাক ছিলো।শান্ত দৃষ্টিতে শুধু রূপকে দেখেছে। রূপের কষ্টটা তাকে একদম অগোছালো করে দিয়েছে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে গিয়েছে রাগে মাংস পেশী ফুলে এসেছে। তবুও সে শান্ত।নিজ হাতে সাদা কাপড় মুড়ানো স্মাইলিকে কবর দিয়েছে। সেই সময়,দূর থেকে চিৎকার করে কান্না করা প্রেয়সীর আর্তনাদ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখেছে। মনের মাঝে হিংস্রতাকে তিব্র থেকে তিব্র করেছে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম।সেই ছোট বোবা প্রাণীটি নিশ্চয়ই অভিশাপ দিলো ছায়ান সিত্তিস নামের পাপিকে। হয়তো তাঁর আত্মা চিৎকার করে বলছে.. আমার নির্মম মৃত্যুর বিচার চাই। সকলের কষ্টের আহাজারি আল্লাহ সহ্য করলেও এই অসহায় বোবা প্রাণীর কষ্ট আল্লাহ সহ্য করবেন না।যার শাস্তি স্বরূপ খুব ভয়ংকর মৃত্যু আল্লাহ ধার্য করেছেন।

রূপ বেশ ক্লান্ত। মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে।বারিশ রূপের গালে হাত রেখে বলল,

‘রূপজান চলো ফ্রেস হবে।আমি তোমাকে প্রমিস করছি তোমার জন্য নতুন বিড়াল আনিয়ে দিবো।’

রূপ হুহা করে কেঁদে উঠলো।বারিশ সঙ্গে সঙ্গে রূপকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।রূপ বারিশের দিকে তাকিয়ে আবদার সুরে বললো,

‘আমার স্মাইলি চাই বারিশ।প্লীজ নিয়ে আসুন না স্মাইলিকে। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আপনিতো আমি কিছু চাওয়ার পূর্বে নিয়ে আসেন। এখন আমি চাইছি প্লীজ এনে দিবেন।’

বারিশ চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।রূপকে আরেকটু জড়িয়ে ধরে শান্ত গলায় বললো,

‘স্মাইলি আর বেঁচে নেই রূপজান।প্লীজ বাচ্চাদের মতো অবুঝ হবে না। তোমার কষ্ট আমাকে ক্ষতবিক্ষত করছে। আমি বলছি তো তোমাকে আরো ভালো বিড়াল আনিয়ে দিবো।প্লীজ শান্ত হও।’

ক্ষেপে উঠলো রূপ।বারিশের বুকের কাছে শার্ট খামচে ধরে চিৎকার করে বললো,

‘কী নতুন এনে দেবো, নতুন এনে দেবো শুরু করেছেন! আপনার আমাকে বাচ্চা মনে হয় একটা হারিয়ে গিয়েছে তাই নতুন দিয়ে মন ভোলাবেন।একদমই নয়।আমি বাচ্চা নই বারিশ।না আমি স্বার্থপর, যে আমার স্মাইলি মারা গিয়েছে নতুন দিয়ে মন ভোলাবো।সে আমার কাছে অনেক কিছু আমার কাছে সে দীর্ঘ সময় ছিলো। তাঁর এমন মৃত্যু আমাকে কষ্ট দিচ্ছে আপনি বুঝতে পারছেন না। আপনি তো বলেছেন ঔ ছায়ান সিত্তিস এর শাস্তি দিবেন।এতো সময় পার হয়ে গিয়েছে ঔ ছায়ান সিত্তিস এখনো আজাদি কী করে ঘুরে বেড়াচ্ছে?বলুন আমাকে!’

বারিশ রূপের ধরে রাখা হাত শক্ত করে চেপে ধরে উত্তেজিত হয়ে আশ্বাস দিয়ে বললো,

‘রিলেক্স রূপজান।এতো হাইপার হলে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে।খুব শীঘ্রই ছায়ান সিত্তিস কে আটক করা হবে।তুমি প্লীজ শান্ত হও।ছায়ান সিত্তিসের খুব জঘন্যতম শাস্তি দেওয়া হবে যা কেউ কখনো কল্পনা করতে পারবে না।’

দাঁতে দাঁত চেপে।রূপ শুনলো না। দিগুন রেগে আরো শক্ত করে খামচে ধরে বলতে লাগলো,

‘শাস্তি না আমার ছায়ান সিত্তিস এর মৃত্যু চাই,বারিশ। শুনতে পাচ্ছেন আমার শাস্তি নয় মৃত্যু চাই।কী দোষ ছিলো ঔ ছোট প্রাণীটার?শুধু মাত্র আমার প্রিয় বলে এতোটা যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু কী প্রাপ্য ছিলো।যে এতো নিকৃষ্ট কাজ করতে পারে তাঁর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। আপনি বুঝতে পারছেন, তাঁর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম।ঐ লোকটা একটা নিকৃষ্ট জীব যে শুধু হাহাকার, কষ্টের আর ধ্বংসের কারণ হতে পারে। শুধু স্মাইলি নয় আমার প্রতিটা মানুষের বিচার চাই যাদের সে ধ্বংস করেছে যাদের প্রতিনিয়ত হাহাকার কষ্টের কারণ হয়েছে।যাদের সে তিলতিল করে শেষ করে আনন্দ উপভোগ করছে নিজের সুখ আর তৃপ্তির সম্রাজ্য বানিয়েছে।সে শুধু নিজের নোংরা বিচ ছড়িয়ে দিয়ে আঁধার নামাতে পারে। মানুষের কষ্টের কারণ হতে পারে।তাঁর খুব নির্মম মৃত্যু চাই আমি। সকলের কষ্টের আর্তনাদের মুল্য চাই আর তা হতে পারে শুধু ছায়ান সিত্তিস এর কঠিন মৃত্যু। আমার কিছু চাই না আমার শুধু ছায়ান সিত্তিস এর যন্ত্রণাদয়ক মৃত্যু চাই। দিবেন না। বলুন রাখবেন তো আমার কথা। দিবেন তো সকল অন্যায়ের শাস্তি। করবেন তো প্রশান্তি যাদের হাহাকার কষ্টের আর্তনাদ মুখরিত হয়েছে চারিপাশ।’

কথাগুলো বলতে বলতে রূপ বারিশের বুকে ঢলে পড়ে।কান্না করতে করতে সে নিস্তেজ।গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।বারিশ কাঁপা হাতে রূপকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়তে রূপের চুলে মুখ গুজে তা আড়াল করে নিলো। চোখ বন্ধ করে থমথমে গলায় বললো,

‘আই প্রমিস রূপজান তোমার প্রতিটি চোখের পানির পরিমাণ হিসেবে ছায়ান সিত্তিস এর তিল তিল করে নিঃশেষ হওয়ার কারণ হবে। খুব কঠিন মৃত্যু উপহার দিবো তাকে।’

শান্ত হলো রূপ। থেকে থেকে কাঁপছে।মাথাটাও প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে।বারিশ রূপের কপালে চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। রূপের হাতের রক্ত পরিষ্কার করে হালকা চোখ মুখে পানি দিয়ে পুনরায় কোলে তুলে নিলো।রূপ বারিশের বুকে মাথা রেখে আছে। চোখ দুটো কান্না করার ফলে টকটকে লাল হয়ে গিয়েছে,মুখটাও বেশ ফুলে গিয়েছে। দেখতে ভীষণ কিউট লাগছে তাকে।বারিশ রূপকে বিছানায় আধশোয়া করে শুইয়ে দিলো। একজন সার্ভেন্টকে বলে রূপের জন্য খাবার নিয়ে আসে।বেশি একটা খাইনি বারিশো আর জোর করলো না।হালকা খাবার খাইয়ে পেইন কিলার খাইয়ে দিলো। কপালে চুমু খেয়ে বললো,

‘এবার একটু ঘুম প্রয়োজন।ঘুমাবে এখন একদম নড়াচড়া করবে না। চোখ অফ করো।’

বারিশের কথা মতো রূপ চোখ বন্ধ করে নিলো।খুব ক্লান্ত লাগছে চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠেছে। বারিশ রূপের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আলতো হাতে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। দীর্ঘ সময় রূপের নড়াচড়া না দেখে রূপের কপালে চুমু খেয়ে শরীরে ব্লানকেট জড়িয়ে দিলো। রূপের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ বুজে ঘার এদিক‌ সেদিক করে ধপাধপ পা ফেলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।বারিশ বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর রূপ পিটপিট করে চোখ খুললো।টেনে চোখ খুলে রাখা দায় হয়ে পড়েছে। কোনোরকমে দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। দরজার পর্দা এখনো এদিক সেদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। মাত্রা বারিশ রেগে বের হলো।রূপ পিটপিট চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।বিরবির করে বলে উঠলো,

‘খুব তুচ্ছ জিনিস আপনার মৃত্যুর ফাঁস হতে চলছে…ছায়ান সিত্তিস।’

কথাগুলো বলে রূপ পুনরায় ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

চলবে,,,,❣️
[লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম]
❌কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ ❌

গল্প সম্পর্কে দুই লাইন গঠন মূলক মন্তব্য করুন।

গ্ৰুপ লিংক 👇
https://www.facebook.com/groups/317078740134340/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here