প্রেমালয় ২ – ৭.
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
– শিশির কে নিয়ে আসার পর আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন তাই না?
হটাৎ তীসার এমন প্রশ্নে অবাক হয়ে তীসার দিকে তাকায় সুশান্ত। আজ তীসার কন্ঠ টা খুব করুন শুনালো তার কাছে। কিছু বললো না সুশান্ত। উঠে বসে গেলো সে। তীসা একটু ঘাবড়ে যায় হুট করে সুশান্তের চোখে মুখে এমন পরিবর্তন দেখে।
সুশান্ত একটু অস্থির ভাব নিয়ে বললো,
– এখান থেকে যা।
তীসা অবাক হলেও চুপচাপ ওখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছে। সুশান্ত পেছন থেকে আবার ডেকে বললো,
– শুন, কড়া করে এক কাপ রং চা নিয়ে আসিস।
তীসা কিছু বললো না চুপচাপ চলে গেলো সেখান থেকে।
দাদির রুম দিয়ে আসার সময় ডাক দিলো দাদি। দাদীর ডাক শুনতেই মুখে হাঁসি ফুটে উঠে তীসার। দাদি খুব রসিক মানুষ। আবার প্রচুর ঢংগি ও। এই বয়সে এসেও এতো রং ঢং করা মানুষ দ্বিতীয় টা তীসার চোখে পরেনি।
দাদির কাছে গিয়ে বসতেই দাদি একটু রাগি ভাব নিয়ে বললো,
– সারা দিন কই থাকস শুনি? তোরে কইলাম না কাজ কাম না থাকলেই আমার কাছে চইলা আসবি। কই ছিলি এতোক্ষন?
– ওইতো তোমার নাতি,,,,,
এইটুকু বলতেই হেসে দিলো দাদি। হাসতে হাসতে বললো,
– থাক আর বলা লাগবে না।
তীসা একটু অবাক হয়ে বললো,
– হাসছো কেন? আমি ওর মাথা টিপে দিচ্ছিলাম এতোক্ষন।
দাদি হাসি থাকিয়ে বললো,
– আচ্ছা, আয় লুডু খেলি।
– তুমি লুডু পারো?
– আমার লগে পারবি? আমি লুডুতে প্রো প্লেয়ার।
– দেখি কেমন প্রো প্লেয়ার? আমার সাথে পারো কি না?
দুজনের মাঝে খুব ভালো ভাবে খেলা জমেছে। দাদি তীসার দিকে চেয়ে বললো,
– তুই তো খুব ভালো খেলস। তোগো মতো থাকতে আমরা বড় একটা বোর্ডে খেলতাম। আমার ননদ টা ছিলো চোরামিতে সেরা। চোখ এদিক ওদিক হতেই তার গুটি পাকা ঘরে। কিভাবে যেত ওটা বুঝাও মুশকিল ছিলো।
তীসা গুটি চালতে চালতে বললো,
– আজ সুন্দর একটা নিউজ হবে দাদি, লুডুতে প্রো প্লেয়ার নাত বৌ এর কাছে হার।
– আরে ধুর ছেমড়ি, খেলা এখনো বহুত বাকি। জামাইর লগে খেলস?
হুট করে এমন প্রশ্নে দাদির দিকে তাকালে তীসা। দাদি আবার বললো,
– এখন করে চাইয়া রইছস কেন? আমি লুডু খেলার কথা কইতাছি।
খেলা শেষে তীসার হুট করে মনে হলো সুশান্ত তো চা চেয়েছিলো। তার মনে নানার চিন্তা ঘুরপাক খাওয়ায় এই ছোট খাটো বিষয় গুলোও ভুলে যায় সে। কিচেনে গিয়ে এক কাপ চা করে সুশান্তের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। সুশান্ত তখন শুয়ে ছিলো। তীসা তার কাছে গিয়ে চা টা এগিয়ে দিয়ে বললো, আপনার চা।
সুশান্ত উঠে বসে। চায়ের কাপ টা হাতে নিয়েই চা ছুড়ে মারে তীসার মুখে।
– কখন বলেছিলাম চা দিতে, আর কখন নিয়ে এলি? তোর চা তুই খা।
হটাৎ এমন ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না তীসা। গরম চা মুখে পড়তেই একটা বেদনা দায়ক শব্দ করে উঠে সে। মুখটা জ্বলছে খুব। ওয়াশ রুমে গিয়ে মুখে অনেক্ষন পানি ছিটালো। তবুও কমছে না জ্বালাতন। ফর্সা মুখ টকটকে লাল হয়ে গেছে। ওয়াশ রমের দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে কেঁদে উঠে তীসা। কাতর কন্ঠে ডেকে উঠে, মা,,,,,,,।
‘কেন আমায় এমন একটা মানুষের কাছে ছেরে দিলে? প্রতি নিয়ত আমায় মানষিক টর্চার করেই যাচ্ছে। এবার মনে হয় শারিরিক টর্চারও শুরু করবে।
মুখে হাত দিয়ে নিরবে কেঁদে চলছে তীসা। মুখটা জ্বলছে খুব।
,
,
সন্ধায় মুগ্ধর বাবা মা এসেছে তার কাছে। ছেলের এমন অবস্থা দেখে তারা কেঁদে কেঁটে অস্থির। একটু পর ডাক্তার এসে অনেক কিছু বুজিয়ে বললো তাদের। এখন চুপচাপ মুগ্ধর পাশে বসে আছে তার বাবা মা। যেন কিছুই হয়নি তার।
এক কোনে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা শিশিরের দিকে তাকালো মুগ্ধরর বাবা মেহের। অশ্রু সিক্ত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। মুগ্ধকে ঘৃনা করলেও আজ মুগ্ধর এমন অবস্থায় খুব কষ্ট হচ্ছে তার।
মেহের চৌধুরি কিছু বলতে চাইলেও পারলো না। মুগ্ধ মেহের চৌধুরির হাত ধরে করুন চোখে তাকালো। মেহের চৌধুরির চোখে এখনো সেই দৃশ্য ভাসছে, কিভাবে শিশিরের বাবা তাকে অপমান করেছিলো। কিছু না বলে স্ত্রীকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো সে।
,
,
রাতে খেতে যায়নি তীসা। কারন এখন সবার সামনে গেলে মুখটা সবাই দেখলে অনেক প্রশ্ন করা শুরু করবে। আর একটা ঝামেলা সৃষ্টি হবে। তাই চুপচাপ রুমে বসে আছে সে। কারণ মুখটা এখনো লাল হয়ে আছে। আর সে চায় না এসব কেউ দেখুক। নিজের কষ্ট নিজের মাঝেই পুষে রাখতে চায় সে। নিজেকে বুঝ দেয়, হয়তো এটা তার ভাগ্যে লেখা ছিলো।
হাতে খাবার নিয়ে রুমে আসে দাদি।
– এই ছেমড়ি উঠ। রাতে খাবার না খেলে শরির দুর্বল হয়ে যায়। সারা রাত উপাস থাকা ভালো না।
তীসা উপর হয়ে শুয়ে আছে। দাদি এবার পাশে খাবার রেখে টেনে তীসাকে তার দিকে ফিরায় দেখে তীসা কাঁদছে। আর মুখটাও টগবগে গরম চা পড়ায় ঝলসে লাল হয়ে আছে।
– এই কি হইচে তোর? মুখের এই অবস্থা কি করে হলো তোর? আর কাঁদছিস কেন?
তীসা মুহুর্তেই একটা গল্প বানানোর চেষ্টা করলো। চোখের পানি মুছে বললো,
– না দাদি কিছু হয় নি। আসলে বাবা মায়ের কথা খুব মনে পরছিলো। এতোদিন হয়ে গেলো, এখনো তাদের মুখ দেখতে দেয়নি। তাই তাদের কথা মনে পরছিলো খুব। আর মুখে কিছু হয়নি। একটু কাঁদলেই আমার মুখটা এমন লাল হয়ে যায়।
দাদির খুব তৃক্ষ্ম চোখ। তীসার দিকে চেয়ে রাগম্বিত চেহারায় তাকিয়ে বললো,
– বয়স টা আমার এমনি এমনি বাড়েনি। চুলও বাতাসে পাকেনি। সো, আমার সামনে ওভার স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করিস না।
তীসা এবার দাদিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। সব কিছু বলতেই দাদি রেগে ফায়ার। তীসার হাত ধরে টেনে ড্রায়িং রুমে নিয়ে যায় তাকে। সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে এখানে। সুশান্তের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– দেখ তোর পোলা মাইয়াটারে কি করছে। আমি না গেলে তো জানতেই পারতাম না।
তীসা বার বার দাদিকে অনুরুধ করছে কোনো ঝামেলা না করতে। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
সুশান্তর বাবা রেগে সুশান্তকে ডাক দিলো। কিন্তু কোথায় সুশান্ত? সারা ঘরেও তার কোনো হদিস নেই। একটু আগেই বাড়ির বাইরে চলে গেছে সে। কারণ, সে ভালোই বুঝতে পারছে দাদি ক্ষেপেছে মানে নির্ঘাত কোনো ঘূর্ণিঝড় বয়ে আনবে।
দাদি রাগম্বিত কন্ঠের ত্যাজ ছুড়ে দেয় সকলের দিকে।
– দিন দিন মাইয়াটারে এতো কষ্ট দিবো, আর সবাই চুপচাপ থাকবো? তা হবে না। তীসার বাপরে ফোন দে। আর সকালেই আইসা তীসারে বাড়ি নিয়া যাইতে ক। এর পর সব মেনে নিয়া তীসারে এই বারিতে নিয়ে আসা পর্যন্ত ওই ছ্যামরার এই বাড়িতে ঝায়গা নাই।
আদেশ মুলক বক্তব্য ছেড়ে সোজা তীসারে নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো দাদি।
– আয়, তুই আমার লগে থাকবি।
,
,
,
পরদিন মুগ্ধর এক্সিডেন্টের খবর শুনে হসপিটালে আসে মাহিমা। মুগ্ধর পাশে বসে সে। তখন কেবিনে কেউ ছিলো না। অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে শুয়ে আছে মুগ্ধ। মাহিয়া মুগ্ধর পাশে এসে বসলো। মুগ্ধর দিকে কিছুক্ষন এক নজরে তাকিয়ে আছে সে। মুগ্ধর দুই পা’ই পুরোপুরি ব্যান্ডেজ করা। মাহিমার উপস্থিতি টের পেয়ে পিট পিট করে তার দিকে তাকাচ্ছে মুগ্ধ। মাহিমা বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো,
– তোমাকে আজ অনেক কথা বলার আছে মুগ্ধ। অনেক সময় মানুষ যা চোখে দেখে ওটাও সত্যি হয় না। আর যা সত্যি তা সবার দৃষ্টির আড়ালে থাকে। সেখানে তোমাদের মাঝেও অনেক গল্প তোমাদের দুজনেরই অজানা। শুনেছি তোমার বেচে ফিরার তেমন একটা গ্যারান্টি দিতে পারছে না কেউ। তাই ভাবলাম মরার আগে হলেও তোমার কথা গুলো জানা দরকার।
চলবে?,,,,,,,,,,,