স্বামী – পর্ব ১৯

0
469

#স্বামী
পর্ব-১৯
#Nirzana(Tanima_Anam)

“নির্ঝর অনু তোর থেকে মুক্তি চায়।অনুকে ছেড়ে দে ও তোর সাথে থাকতে চায় না।এভাবে ধরে বেঁধে আর যাউ হোক ভালোবাসা হয়না”

নির্ঝর শান্ত চোখে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে…।।

ছাদে দুই পা গুটিয়ে বসে বসে স্মোক করছিলো নির্ঝর।বলতে গেলে নির্ঝর একরকম চেইন স্মোকার।
মোটামুটি একপ্যাকেট সাবার করেছে সারা দিনে।এখন নতুন প্যাকেট নিয়ে বসেছে।।

-এসব বলে লাভ নেই অনুকে আমি ভালোবাসি!!অনু আমার স্ত্রী।মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওকে আমি ছাড়তে পারবো না।।
-তুই অনুকে ভালোবাসিস কিন্তু সে তো তোকে ভালোবাসে না তাহলে??কেন জোড় করে এভাবে…..
(মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে)
-তাহলে কিছুই না আজ বাসে না কাল ঠিকিই বাসবে।কিন্তু ভালো আমাকে বাসবেই!!

-এভাবে জোড় করে ভালোবাসা হয় না নির।।
-ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা পাওয়া যায় আমি অনুকে ভালোবাসি সো অনু ও একদিন না একদিন ঠিকিই আমাকে ভালোবাসবে….
-যদি ভালোই বাসতো তাহলে বার বার সায়ন সায়ন করতো না।তোর বউ তো ঘুমের ঘোরেও সায়নের নাম জপে! সে তো মনে প্রানে সায়নকে ভালোবাসে!!
-বাসবে অনু আমাকে একদিন ঠিক ভালোবাসবে…..
“আমি থাকি বা না থাকি অনু একদিন ঠিক আমাকে ভালোবাসবে।সায়নের থেকে বেশি ভালোবাসবে আমি জানি।আমি যে ওর স্বামী”

কথাটা বলতে বলতে নির্ঝর উঠে চলে আসে ঘরে অনু একা সুয়ে আছে।ব্যাথ্যায় একটু জ্বর ও এসেছে।অবশ্য নির্ঝর অনুকে ঔষুধও খাইয়ে দিয়েছে….
“বিষয়টা জুতো মেরে গরু দানের মতো লাগছে নির্ঝরের কাছে।নিজেই বউকে মেয়ে আবার বউয়ের সেবা করছে”
“কোই আমি তো মারতে চাই নি তোমাকে কিন্তু তুমিই তো আমাকে বাধ্য করলে।কেন তুমি সায়নের সাথে পালাতে চাইলে??”(মনে মনে)

অনু আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।বুকের আঁচলটা একটু সরাতেই ঘাড়ে কিছু দাগ চোখে পড়লো।দাগগুলো দেখতেই মুখে ম্লান হাসি ফুটে উঠলো।
এগুলো কাল রাতের দাগ।নির্ঝরের ভালোবাসার চিহ্ন।এবার অনু একটু পেছন ফিরতেই পিঠে, হাতে নীল হয়ে যাওয়া দাগ গুলো দেখতে পেলো।এগুলোও নির্ঝরের ভালোবাসার দাগ।
“একটা মানুষ দুরকম ভাবে ভালোবাসতে পারে।কখনো সোহাগ করে কখনো বা আঘাত করে”
হায়রে ভালোবাসা…

অনুকে আয়নার সামনে দাড়াতে দেখে নির্ঝর এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে!

-আহ্ নির্ঝর লাগছে ছাড়ুন আমাকে
-আমি তোমায় খুব ভালোবাসি অনু
-(…)
-কি হলো কথা বলছো না কেন?
-জানেন তো মি.চৌধূরী আপনি আমায় দুই রকম অভিগ্ঞতা উপহার দিয়েছেন!!
-কিসের??
-ভালোবাসার!!
-সরি।আসলে
-এতো আসল নকল বুঝি না যদি বুঝতাম আজ এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকতাম না!!
-(…)
-জানেন তো মি.চৌধূরী আমি একটু একটু করে আপনার সাথে মানিয়ে নিচ্ছিলাম আসলে নেওয়ার চেষ্ট করছিলাম কিন্তু…
-অনু তুমি কি সায়নের কাছে যেতে চাও????

অনু অবাক চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।নির্ঝর চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে।
-যেতে চাইলে কি আপনি আমাকে সায়নের কাছে রেখে আসবেন???

(নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
-আমার উপায় নেই!!
-যা পারবেন না তা বলে লাভ নেই!!
-তারমানে তুমি যেতে চাও
-কি জানি আমি যে কি চাই সে আমি নিজেও জানি না!!

অনু কথাগুলো বলতে বলতে বারান্দায় পা বারায় নির্ঝর অনুর হাত চেপে ধরে।তারপর অনুকে কাছে এনে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে….

-জানো তো অনু আমি যাকেই ভালোবাসি সেই আমাকে ছেড়ে চলে যায়।আচ্ছা আমি কি এতোই খারাপ যে আমাকে একটু ভালোবাসা যায় না????

অনু কি বলবে বুঝতে পারছে না…..

(অনু নির্ঝরকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে)
-নির্ঝর আমি সত্যিই সায়নের সাথে নিজে থেকে যোগাযোগ করি নি!! বিশ্বাস করুন..(নির্ঝরের চোখের দিকে তাকিয়ে)

নির্ঝর মুখ ফিরিয়ে নেয়
-ওও বিশ্বাস করলেন না তো??
-আমি তোমায় ভালোবাসি অনু
-বার বার ভালোবাসি ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয় না।আচ্ছা যাকে এতো ভালোবাসেন তাকে এতোগুলো আঘাত করতে একটুও কষ্ট হলো না আপনার!!
-তুমি তোমার শরীরের ক্ষত সবাইকে দেখাতে পারবে আমি আমার ক্ষত কাউকে দেখাতে পারবো না!!

অনুর সাথে কথা বলে নির্ঝর বেরিয়ে যায়…..

অনুর নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে।নির্ঝর অনুর কাছে একটা বড় প্রশ্ন চিহ্ন যাকে ঘিরে রহস্যের সীমা নেই।লোকটা কি চায় কেন চায় কিছুই জানা নেই অনুর।হুট হাট করে দূরে সারিয়ে দেয় আবার হুট করেই এতো কাছে টেনে নেয় যে ছাড়াবার উপায় নেই।
তবে লোকটা মাঝে বড্ড মায়া।আসলে বিয়ে সম্পর্কটায় যে বড্ড পবিত্র।যেখানে পবিত্রতা আছে,সেখানে শুদ্ধতা আছে আর যেখানে বিশুদ্ধ ভালোবাসা আছে সেখানে মায়া থাকাটায় স্বাভবিক!!

সায়ন অনেক চিন্তা ভাবনা করে নিয়েছে।এভাবে চলা সম্ভব নয়।অনুর সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে।অনুকে নির্ঝরের আসল রূপটা দেখাতে হবে!!

এসব কিছুর জন্য যে একমাত্র দায়ী নির্ঝর তা অনুকে জানাতে হবে।এই একটা লোকের জন্য তো আর আমাদের ভালোবাসা শেষ হয়ে যেতে পারে না!!!

অনেক চিন্তা ভাবনা করে সায়ন সিমিকে ফোন দেয়
দুই বার রিং হতেই সিমি রিসিভ করে…
-হ্যালো
-হ্যা বল
-সিমি কি হয়েছে তুই কাঁদছিলি নাকি?তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেন??
-নাহ্ কিছু হয়নি তো!!
-কি হয়েছে বল
-আসলে অনু
-কি হয়েছে অনুর
-কিছু না
-কি হলো বল??
-আজ সপিং মলে আমি তোর আর অনুর দেখা করাতে চাইছিলাম বলে নির্ঝর আমাকে যা নয় তাই বলেছে আমাদের এতো বছরের বন্ধুত্বার কোনো দামই তো নেই ওর কাছে।আর অনুকে তো….
-অনুকে কি করেছে??
-(..)
-কি হলো বল…
-অনুকে যা পিটিয়েছে মেয়েটা মার খেয়ে অগ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো…..!!
-কিহ্

সায়নের চোখ দুটো দপ করে জ্বালে উঠলো…
-নির্ঝর অনুর গায়ে হাত তুলেছে??
-হুম্ম
-সিমি একটা উপকার করবি দোস্ত প্লিজ
-কি??
-অনু সাথে একাবার আমার দেখা করিয়ে দিবি প্লিজ দোস্ত শুধু একবার।আমি অনুকে নিয়ে দূরে চলে যাবো অনেক দূরে মা বাবা আর নির্ঝরের থেকে দূরে….
-সায়ন আমি চেষ্টা করবো আমি ও তো চাই তুই অনুকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যা তোরা সুখে থাক।
-হুম্ম
-আমি মন থেকে চাই অনু নির্ঝরের থেকে দূরে চলে যাক….
-Thnx রে….
-☺☺☺

চলবে…….

(মাথা ব্যাথ্যা তবুও অনেক কষ্ট লিখলাম।জানি না কেমন হয়েছে।ভুল ত্রুটী ক্ষমা করবেন প্লিজ।কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here