জীবনসঙ্গী – পর্ব ১

0
1103

জীবনসঙ্গী
পর্ব ১
writer Tanishq Tani

কিরে এতো দেরি হলো কেন?

মা তুমি না? সব ভুলে যাও,,আজ এক্সট্রা ক্লাস ছিলো ভুলে গেছ,,,কলেজের ব্যাগ বিছানায় রেখে শুয়ে পড়ে

ওতো বাপু মনে থাকে না আমার তোদের এক্সট্রা ভেক্সট্রা,,,
একি শুয়ে পড়লি কেন?

টায়ার্ড লাগছে খুব মা,,

ওঠ মা ভালো,,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে,, আজ রিশাদের পরিবার আসছে একটু পর,,

মা! প্লিজ আমাকে এখন বিয়ে দিয়ো না,,আমি পড়ালেখা শেষ করে নিজের পায়ে দাড়াতে চাই,,

শশী! সবসময় এক কথা কেন বলিস বল,,রেগে,,

শশী কাঁদতে থাকে,,

কাদিস না রে মা! বুঝার চেষ্টা কর,,তোর বাপটা তো তোদের জন্ম দিয়েই পালালো,,
ভাই ভাবীর সংসারে বোঝা হয়ে আর কতো থাকবো বল,,তোর বিয়েটা হলে তুই সামির আর শিমুর দায়িত্ব নিতে পারবি,,আমার বড় ছেলে বলিস মেয়ে বলিস সব তুই রে মা,,
রিশাদ তোর মামাকে বলেছে ও সামির আর শিমুর দায়িত্ব নেবে,,ওদের মুখ চেয়ে আমার কথায় রাজি হয়ে যা মা,,

শশী চোখ মুছে মনকে শক্ত করে,,সবসময় মনের মতো তো আর জগতে চলা যায় না,,দায়িত্বের কাছে সব বিসর্জন দিতে হয়,,

ঠিক আছে মা! তুমি আর মামা যা বলবা তাই হবে,,,

লক্ষি মা আমার,,,কষ্ট নিস না,,আমি তো সারাজীবনে তোদের শখ আহ্লাদ পূরন করতে পারলাম না,,আল্লাহ এতো দিনে মুখ তুলে চেয়েছেন, নয়লে এতো বড় ঘর থেকে তোর জন্য সমন্ধ আসে বল,,

শশীকে তাড়াতাড়ি শাড়িটা পড়িয়ে দেয়,,ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা করতে চাই রিশাদরা,,কারন তারা নাকি শশীদের খরচ করাতে চাই না,,,

সন্ধ্যার পরপরই বিয়েটা হয়ে যায় শশী ও রিশাদের,, বরপক্ষ থেকে রিশাদের বাবা ও দুলাভাই এসেছিলে শুধু,,

শশীর বুকের মাঝে কেমন যেন ভয় কাজ করে,,মনটা কোনোভাবেই যেন বিয়েতে সায় দেয় না,,

কিন্তু কথায় আছে না,,গরিব মানুষের মন বলে কিছু থাকতে নেই,,, তাই শশীও নিজের মনের সকল আকাঙ্ক্ষাকে দাফন করে দেয় বুকের মাঝে,,
পরিবারের জন্য এতোটুকু ত্যাগ একটা মেয়ের জন্য কিছুই না সমাজে,,,

বিয়ে নিয়ে প্রতিটি মেয়েই আজন্ম স্বপ্ন লালন করে,, এমন নিরবে আমেজ ছাড়া হুট করে বিয়ে কোনো মেয়ের কাম্য না,,

কয়েকদিন পর উঠিয়ে নেবে বলে বিয়েটা পড়িয়ে চলে যায় রিশাদ সহ রিশাদের পরিবার,,,

ভালো করে খাই ও না ওরা,,,

যাওয়ার আগে শশীর মামাতো ভাই একপ্রকার জোর করে শশীর মোবাইল নাম্বারটা রিশাদকে দিয়ে দেয়,,

রিশাদ পুরোটা সময় চুপচাপ ছিলো,,যেন বাবার বাধ্য ছেলে,,,একটিবার নিজের নতুন বউয়ের সাথে নিজস্ব ভাবে কোনো কথাও বলে নি,,এই নিয়ে যথেষ্ট কানাঘুষো করে শশীদের বাড়ির লোক,,
শশীর খুব খারাপ লাগে বিষয়টা,,,

ঐ দিন রাতে ভালো করে কিছু খাই ও নাই শশী,,বালিশে মুখ চেপে কান্না করেছে শুধু,,কি একটা জীবন শশীর মন খুলে কান্নাও করতে পারে না,,

সকালে ঘুম ভাঙে অচেনা নাম্বার থেকে আসা কলের কারনে,,

বিরক্তি ভরা কন্ঠে কল টা রিসিভ করে,,

হ্যাঁলো আসসালামু আলাইকুম,,

কেমন আছ শশী,,সালামের উত্তর না দিয়েই

জ্বী ভালো,,কে বলছেন আপনি?

সেকি? কাল বিয়ে হলো আর আজই ভুলে গেলে নিজের বরটাকে,,

শশী বিছানা ছেড়ে বসে,,নিজের বর,,অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে কথাটা শুনে

সরি! আস্তে করে উত্তর দেয়,,

ঠিক আছে জানটা,,সরি বলা লাগবে না,,এই আমি তোমাকে জান বলতে পারি তো নাকি?

জ্বী,, কোনো অনুভূতি হয় না এমন কথা শুনেও কেন যেন শশীর,,,

জানো আমার খুব ইচ্ছা ছিলো কাল রাতটা তোমার সাথে কাটানোর,,কিন্তু কি করবো বলো আম্মুর প্রেশার টা বেড়ে যাওয়ায় চলে আসতে হলো,,

সমস্যা নাই,,,

কেমন মেয়ে তুমি বলো সমস্যা নাই,,,

সরি!

আবার সরি বলো,,,

তুমি কি এই বিয়েতে খুশি নও,,

না! না! ঠিক তা নয়,,
আসলে হঠাৎ করে হলো তো বিয়েটা তাই সবকিছু মানতে একটু সময় লাগবে,,,

আচ্ছা ঠিক আছে,,আমার ই তো হয়ে গেছো যতো সময় নাও নিতে পারো,,

আচ্ছা রাখি পরে ফোন দিবো,,তুমি উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে আমাকে মিসকল দিয়ো,,

জ্বী,,,

ওপাশ থেকে রিশাদ কলটা কেটে দেয়,,

মনের মধ্যে কেমন কেমন করলেও অন্যরকম অনুভূতি লাগে রিশাদের কথায়,,এভাবে এতোক্ষন কোনো পুরুষের সাথে কথা বলে নাই শশী,,তারপর কল কাটার পরপরই কাজিনরা সব মজা করতে থাকে রিশাদের নাম নিয়ে,,শশী লজ্জা পাই,,

আজ আর শশী কলেজে যায় না,,নাস্তা করে বসে থাকে,,কিছুই ভালো লাগছে না,,

কিরে রিশাদ বলে তোকে মিস কল দিতে বলেছিলো,,তো দিচ্ছিস না কেনো,,,

ভালো লাগছে মা,,পরে দিবো,,

দেখ শশী,,নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে তোদের,,এখন যেভাবেই হোক স্বামীর মন জয় কর,,মনে রাখিস তোর কাঁধেই আমাদের ভবিষ্যত,, রিশাদ যেন কোন বিষয় নিয়ে কষ্ট না পাই,,,

মায়ের কথায় মন না চাইলেও রিশাদকে কয়েকদফা কল দেয়,,কিন্তু রিশাদ কলটা ধরে না,,মায়ের জোরাজুরিতে পরে আবার কল দেওয়ার পর এবার রিশাদের মোবাইল টা সুইচ অফ পাই,,,

খুব অপমানিতবোধ করে,,

এ কোন ধরনের ব্যবহার নিজেই তো বললো মিসকল দিতে,,তাহলে এমন করলো কেন,,
কল ধরে বলতে তো পারতো বিজি আছি পরে কল দাও,,

আরে! পুরুষ মানুষ কতো কাজে ব্যস্ত থাকে,,

তুই এসব জিনিসে কষ্ট নিস না,,পরে আবার কল করিস,, শশীর মা উঠে চলে যায়,,

শশীর কান্না পাই,,এ কেমন সম্পর্কে জরালাম,,কোনো আবেগ ভালোবাসা সম্মানবোধ কিছুই নেয় যেখানে,,,

দুপুর পর্যন্ত শুয়ে থাকে,,

এই শশী! দেখ কে এসেছে,,

রিমি তুই?

তোমরা বসে গল্প করো আমি আসছি,,,

কিরে শশী আমি কি এতো পর হয়ে গেলাম যে একটিবার আমাকে তোর বিয়ের বিষয়টা বলতে পারলি না,,,

তুই রাগ করিস না রিমি,, হঠাৎ করে হয়ে যায়,,তাই বলতে পারিনি,,,

হুমম! শুনলাম আন্টির কাছে,,আমার কিন্তু কেমন যেন লাগছে,,এভাবে এতো বড়লোকের ছেলে তোকে বিয়ে করতে যাবে কেন,,

জানি না রে,,

অনিকেত কাল কলেজে তোর কথা জিজ্ঞেস করেছিলো,,

ওসব কথা বাদ দে,,

আচ্ছা তাহলে বল,,আমাদের দুলাভাই দেখতে কেমন?

জানি না,,

জানি না মানে?

আমি তাকে দেখি নি এখনো,,

কাল বিয়ে পড়ানোর সময় তাকাস নি দুলাভাইয়ের দিকে?

না,,,

এ কেমন কথা,,মন খারাপ তোর তাই না শশী?

না রে,,এমনিতেই ভাল লাগছে না,,,

আচ্ছা শোন মন খারাপ করিস না,,চল ছাদে যায়,,

রিমি জোর করে শশীকে ছাদে নিয়ে যায়,,,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here