#সুখ_সন্ধানী
পার্ট ৩
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
আর অমনি ওই লোক ঘরের চাটাই আটকে আমার দিকে এগুতে থাকে। আমি জোরে জোরে সুজন কে ডাকছি কিন্তু তার কোন জবাব নাই। লোকটা নেশা করা অবস্থায় আমাকে জড়িয়ে ধরে,, আমি আমার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু একজন পুরুষ মানুষের সাথে মেয়ে মানুষের শক্তি নিতান্তই কম। অনেক চেষ্টার পরে কোন রকম উনাকে ধাক্কা দিয়ে মাচাংয়ের ধারে থেকে ফেলে দিই। যেহেতু নড়বড়ে ঘরের বেড়া তাই বেড়ার কিছুটা অংশ ভেঙে যায়। উনি উঠে আবারও আমার কাছে আসতেই আমি যতদুর সম্ভব পিছনে সরে যায়,, উনিও ভাঙা বেড়ার যায়গা থেকে আমার দিকে এগিয়ে আসে। সাথে সাথে ওই ভাঙা ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আমি দৌড় দিই। কোন রকম একটু দূরে যেতেই সুজনের সাথে দেখা হয়। সুজন আমার হাত চেপে ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। যেহেতু আমি শক্তিতে পারছি না তাই জোরে জোরে আশেপাশের মানুষজনদের ডাকতে থাকি। আমার চিৎকার শুনে কিছু মানুষ টর্চলাইট জ্বালিয়ে আমাদের কাছে আসে।
আমি সাথে সাথে সুজন কে ধাক্কা দিয়ে তাদেরকে সব কিছু বলতে যাবো,, ঠিক তখনই সুজন আমাকে বলেন,,
বে** মা** বাপের বাড়ি তে নাগরের পরে নাগর ঢুকাতি ভেবে কি আমার বাড়িতেও ঢুকাবি। কি ভেবেছিলি? ধরতে পারবো না তোকে??কই তোর নতুন নাগর কোন দিকে গেলো। আপনারা সবাই দেখেন তো, মা**র নাগর টা কোন দিকে গেলো। শালী মা আব্বা বাড়িতে নাই সেই সুযোগে ঘরে মরদ ঢুকাইচে। আজ হাতে নাতে ধরছি কিন্তু সাথের নাগর কে ধরতে পারিনি।
মুহুর্তের মধ্যে আমি যেন ভিন্ন কোন জগতে চলে গেলাম। কি অকপটে আমার নামে দোষ চাপিয়ে দিলো। আশেপাশের আরো লোকজন জুটলো। কিছু কিছু মানুষ আমাদের বাড়িতে গেলো,, ঘরের এমন অবস্থা দেখে তারাও বুঝে নিলেন, আমি কাউকে ঘরে ঢুকিয়েছি আর সুজন দেখতে পাওয়াতে ওই আগন্তুক ঘরের বেড়া ভেঙে পালিয়েছে। সারারাত আমাকে উঠোনের মাঝখানে একটা বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হলো। সকালে বিচার হবে আমার। অনেক চেষ্টা করলাম সবাইকে সত্য ঘটনাটা বুঝানোর কিন্তু কেউ বুঝলো না। উল্টো আমাকে দুশ্চরিত্রা বলে আখ্যায়িত করে। কান্না করতে করতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে,, দলে দলে লোকজন আমাকে দেখার জন্য আসছে। মুহুর্তের মধ্যে বাতাসের বেগে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে গেছে কথাটা।
নির্ঘুম, চিন্তিত, দিশাহারা অবস্থা সকালের সূর্য উঁকি দিলো। রাত গড়িয়ে সকাল হলো তবুও মানুষের ঢল কমছে না। গ্রামের মেয়েরা আমার মুখের উপর যা নয় তা বলে গালি দিচ্ছে আমাকে। সকাল ১০ টাই নাকি গ্রামের স্কুল মাঠে আমার বিচার হবে। এই কথা টা শুনেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। হাত পা বাধ না থাকলে এই মুহূর্তেই নিজের জীবন শেষ করে দিতাম। আমার গ্রামের কিছু লোকজন সহ মা বাবা এসেছেন। মা এসেই কান্না করতে করতে বলে,,
এটা ষড়যন্ত্র, আমার মেয়েকে আমি চিনি, সে কখনো এমন বেয়াদবি কাজকর্ম করতে পারে না। ওই চোর আমার মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে,, নেশাখোর মাতাল চোরের কার্জসাজি এইসব।
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠি,,মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগে। আমি মাকে বলি, সব কথা,, আমি জানি না বললেও মা আমাকে বিশ্বাস করে যে আমার দ্বারা এতো নোংরা কাজ সম্ভব না।আমার শশুর শাশুড়ীও চলে আসছে। আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো স্কুল মাঠে, চারিদিকে গিজগিজ করছে মানুষ, ছোট বড়, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সবাই একজন চরিত্রহীনা মেয়ের শাস্তি দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। এক সাথে এতো গুলো মানুষের মধ্যে জীবনের প্রথম উপস্থিত হলাম। চেয়ারম্যান মেম্বার সহ আরো কত কে, যাদেরকে আমি জীবনেও দেখিনি।
বিচার কার্যক্রম শুরু হয় সুজনের জবানবন্দি দিয়ে। সুজন বলে,,
আমি বেশ কিছু দিন থেকে আমার বউকে সন্দেহ করি। বিভিন্ন কাজে রাত হয় বাড়ি ফিরতে। রাতে এসে মাঝে মাঝে বউকে ঘরে দেখতে পাই না। ডাকাডাকি করলে বাইরে থেকে জবাব দেয় সে টয়লেট করতে গেছে। আব্বা মা বাড়িতে থাকে বলে হয়তো ঘরে মানুষ ঢুকাতে পারে না। দুইদিন আগে আব্বা মা মামুর বাড়ি গেছে,, তাই আমি ওত পেতে বসে ছিলাম কার সাথে আমার বউয়ের অবৈধ সম্পর্ক তা ধরার জন্য। কিন্তু অন্ধকারে আমি তাকে দেখতে পাই নি। যখনই তাকে ধরতে গেছি আর অমনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের বেড়া ভেঙে পালিয়ে গেছে। বাকি ঘটনা গুলো আমাদের প্রতিবেশীরা দেখেছেন।
আমি মনে মনে খুব করে চাইছিলাম অন্তত আমার শাশুড়ী এইসব কথা গুলো অস্বীকার করবে কিন্তু তিনিও আমার পক্ষে কিছুই বলেন নি। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম, কোন কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। বের হবেই-বা কিভাবে, একটা মিথ্যার প্রতিবাদ করা যায় কিন্তু এমন সাজানো হাজার হাজার মিথ্যার প্রতিবাদ কিভাবে করি? বিচারকরা বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করছে, কার সাথে আমার সম্পর্ক? নাম কি তার? বাড়ি কোথায় ইত্যাদি। আমার কথা গুলো গলার মাঝে আটকে গেছে,, উত্তর দেওয়ার মতো কোন শব্দ বের হচ্ছে না। আমি মনে হয় পাথর হয়ে গেছি। বেশ কিছুক্ষণ ধরে আমাকে বারবার কথা গুলো জিজ্ঞেস করার পরেও যখন কোন উত্তর খুঁজে পাইনি তখন আমাকে জোড়া বেতের ৩০ আঘাত এবং মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। স্বামী থাকা স্বত্বেও পরপুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরী করা নারীর বিচারটা যথাযোগ্য হয়েছে।
এতো অপমান সহ্য করার পরে যদি কোনো মানুষ জীবিত থাকে তাহলে সেই মানুষটা শুধুমাত্র আমি। জনগণের মাঝে থেকে সঠিক বিচার হওয়ার ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। তপ্ত দুপুরে প্রখর রোদে আমাকে শাস্তি দেওয়ার পরে সবাই আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে। এক ফোটাও পানি নেই আমার চোখে। কান্না করতে ভুলে গেছি আমি। মা আমাকে স্কুলের টিউবওয়েল পাড়ে নিয়ে গেলো। তারপর আমার পিঠে এবং পায়ের উরুতে আঘাতের স্থানে পানি দিতে লাগলো। পুরো দুনিয়া এক দিকে অথচ মা বাবা সন্তানের পক্ষে।
এই মুখ নিয়ে সুজনের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব না তাই বাবা মা আমাকে নিয়ে চলে আসে। কিন্তু ওইযে,খারাপ কথা গুলো বাতাসের আগে ভাসে,, আমাদের গ্রামের সব মানুষের মুখে মুখে আমার এইসব কথা ছাড়া অন্য কিছু নাই। বাবা লজ্জায় কাজে যেতে পারে না। রাতুল মুকুল স্কুলে গেলেও নাকি সবাই আমার কথা জিজ্ঞেস করে। মা ইটের ভাটায় কাজ করতে গেলে বারবার নাকি বিভিন্ন রকম ভাবে এটা সেটা বলে। আমার জন্য আমার পুরো পরিবারের জীবন নরক হয়ে গেছে। এই ছন্নছাড়া জীবনে সুখ সন্ধানী হওয়া টা সম্পুর্ন অনুচিত ছিলো। আমাদের মতো গরীবের কপালে সুখ বলে কিছু নাই।
দিন গুলো কোন রকম খেয়ে না খেয়ে পার হতে লাগলো। আমি লজ্জায় বাড়ির বাইরে যায় না। তারপরও হঠাৎ করে কারো সাথে দেখা হলেই আমাকে খোঁচা দিয়ে কথা বলে। আর ছেলে মানুষ হলে সরাসরি কু-প্রস্তাব দেয়।
এভাবেই কোন রকম কেটে যাচ্ছিলো দিন। আজ পুকুর ঘাট থেকে থালাবাসন পরিষ্কার করে উঠার সময় মাথা ঘুরে পড়ে যায়। হাত থেকে থালাবাসনের ঝনঝন শব্দ শুনে রাতুল ছুটে আসে। তারপর বাবাকে ডেকে নিয়ে আসে,,বাবা আর রাতুল আমাকে ধরে বাড়ির ভিতর নিয়ে যায়। এখানে আসার পরে থেকে কোন খাবার গলার নিচে নামে না, ভাবতাম অশান্তির কারণে খাবারের রুচি হারিয়ে গেছে। কিন্তু আজ মাথা ঘুরানিতে সন্দেহ টা প্রখর হলো,,,
চলবে,,,,,
গল্পটাতে আশা-স্বরুপ রিয়েক্ট কমেন্ট পাচ্ছি না। গল্পটা কি আপনাদের পছন্দ হয় নি? ভাষা বা বানানে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন।