#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ২৮ ||
আসিফদের বাসায় এসে পৌঁছে গেলো ওরা।আসিফ প্রানপ্রিয় বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে ধরে।আশিয়ান পিঠ চাপড়ে দিলো আসিফের।তৌহিদ এসে বললো;
তৌহিদ:-বলদটায় মনে হয় আমারে খেয়াল করে নাই।
আশিয়ান অবাক হয়ে বললো;
আশিয়ান:-ওরেশ্শালা!তুই ও এসেছিস!আগে বলবি না আমায়!
এই বলে আশিয়ান জড়িয়ে ধরে তৌহিদকে।তৌহিদ দাঁত কেলিয়ে বলে;
তৌহিদ:-তুই এখানে আসছিস শুনে আমিও বউ বাচ্চা নিয়ে এখানে চলে এসেছি।একসাথে তিন বন্ধুতে মিলে আড্ডা দিবো।
আশিয়ান কাঁধ চাপড়ে বললো;
আশিয়ান:-ভালো করেছিস।
তাসকিন:-তিন বন্ধু কী আবার!আমাদেরকে চোখে পড়ে না বুঝি?একা একা আড্ডা দেয়ার কথা চিন্তাও করো না।আমরাও আছি।
আসিফ:-সে আর বলতে!তোমরা তো অবশ্যই আছো!
আশিয়ান ও বাকিসব ছেলেরা ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আসিফের মা বাবার সাথে আশিয়ানের মা বাবা ও তাসকিনের মা বাবা ওনারা পুরনো দিনের কথা বার্তায় মত্ত হয়ে গেছেন।
আসিফের বউ তূর্ণা ও তৌহিদের বউ মারিয়ার সাথে ঊদিতা,কেয়া,এনা,তারিন,আলেয়া ও আশা বসে গল্প করছে একরুমে।এখানে আড্ডার মাঝে ঊদিতাই একমাত্র সবার ছোট।বাকিরা এডাল্ট।তাদের কথাবার্তাও এডাল্ট।তবে এখানে ঊদিতাকে কেউ ছোট মনে করছে না।কারণ ছোট হোক আর যাই হোক সেও তাদের মতোই বিবাহিতা মহিলা।মেয়েলি কথাবার্তায় ব্যস্ত তারা।ঊদিতা চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছে।আশা হঠাৎ ঊদিতাকে ব্যঙ্গ করে বলে উঠে;
আশা:-আর যাই হোক না কেন,আমি শিওর আশিয়ান ঊদিতার সাথে কখনো রোমান্স টোমান্স এসব করে নি।কারণ সে এখনো তার এক্সকে ভীষণ ভালোবাসে!(হম্বিতম্বি দেখিয়ে)
কেয়া বিরক্ত হয়ে বললো;
কেয়া:-আমি বুঝি না আশা তাদের স্বামী স্ত্রীর প্রতি তোমার এত কিউরিসিটি কেন?ওরা কী করেছে না করেছে সেটা একান্তই তাদের ব্যাপার।সেটাতে তুমি নাক গলাতে যেও না।
আশা:-তাই!আচ্ছা আমি নাহয় নাক গলালাম না।এখানে তোমরা তোমাদের স্বামীদের নিয়ে কতকিছু বলছো।তবে ও চুপচাপ বসে আছে কেন?সেও তো চাইলে বলতে পারে আশিয়ানের কথা।আসলে কী বলো তো আশিয়ান মন থেকে তাকে নিজের স্ত্রী বলে মেনে নেয় নি।
এবার ঊদিতা কথা বলে উঠে;
ঊদিতা:-আচ্ছা!এত ইচ্ছা আপনার আমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে কী না জানার জন্য!তাহলে তো কিছু দেখাতেই হয়।
এই বলে ঊদিতা নিজের গলা থেকে হিজাবের ওড়না সরিয়ে আশিয়ানের দেয়া লাভবাইট গুলো দেখালো।ফর্সা গলায় জ্বলজ্বল করে তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে দাগগুলো।আশা মুখের ওপর জবাব পেয়ে চুপসে গেল পুরোপুরি।ঊদিতা গলা ঢেকে এবার আশাকে উচিৎ জবাব দেয়ার জন্য মুখ খুললো;
ঊদিতা:-আপনার মতো শো অফ করার স্বভাব আমার নেই।আমার স্বামীর সাথে আমার কিছু হয়েছে কী না তা আমি নিশ্চয়ই জনে জনে সবাইকে বলে বেরাবো না।আপনার মতো এত নিচু মেন্টালিটি সম্পন্ন মানুষের কাছ থেকে আর কীই বা আশা করা যায়।ওনার এক্সের মতো আপনার স্বভাব চরিত্রও সেইম মনে হচ্ছে।এখানে উনারা আপনার মতো এত খারাপ চিন্তা ভাবনা নিয়ে গল্প করছেন না।ভালো একটা আড্ডার মাঝে আপনি আপনার বাম হাত ঢুকিয়ে আমেজটাই নষ্ট করে দিলেন।এতই যখন আমাদের মধ্যে কী হয়েছে জানার শখ তবে নিজে কেন বিয়ে করছেন না?আজব পাবলিক!
এত বড় বেইজ্জতি এক্সেপ্ট করে নি আশা।বিব্রত হয়ে রুম থেকেই বেরিয়ে চলে গেল।তারিন এবার ঊদিতাকে কঠোর গলায় বলে উঠে;
তারিন:-আশা তোমার বড় হয়!সো তাকে তোমার এভাবে কথা শুনানো উচিৎ হয় নি।সে জানতে চেয়েছে যখন সুন্দর করে বলে দিলেই পারতে।অপমান করার কী দরকার ছিলো?
ঊদিতা:-তোমার এত দরদ লাগলে আমার কিছু করার নেই মেঝোভাবী।যে যেমন তার সাথে তেমন করেই কথা বলতে হয়।ওনার বোঝা উচিৎ সবার সামনে এসব জিজ্ঞাসা করা কোনো ম্যানার্সের মধ্যে পড়ে না।
তারিনও আর কিছু বলতে পারলো না।কেয়া আর এনা মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ফেললো।এমনসময় আশিয়ান রুমে এসে নক করে।আশিয়ানের পিছনে আসিফ আর তৌহিদও ছিলো।ঊদিতার নেকাব লাগানোই আছে।আশিয়ান এসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে কিছুটা লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-ভাবীরা,,আমি একটু ওকে নিয়ে যাই?আসলে একটু দরকার ছিলো আরকি!(আমতা আমতা করে)
তূর্ণা দুষ্টু হেসে একবার আশিয়ান আর একবার ঊদিতার দিকে তাকিয়ে বললো;
তূর্ণা:-বাব্বাহ,,,বউকে ছাড়া দেখছি একমুহূর্তও চলছে না আর আমাদের ভাইয়ের!
মারিয়া:-ও মাগো কী টুরু লাভ!
তাদের কথা শুনে বাকিরা হাসছে।আশিয়ান লজ্জা পেয়ে গেল।ঊদিতা তো লজ্জায় কারও দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।লোকটা এমন কেন?কীসের এমন দরকার যে ওনার সাথে যেতে হবে!ভাবছে ঊদিতা।
অবশেষে সবার মুখের টিপ্পনীর তোপ থেকে ঊদিতাকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো আশিয়ান।ড্রয়িং রুম থেকে তাদের দুজনকে এভাবে একসাথে দেখে আশার চোখ জোড়ায় দাউদাউ করে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে ওঠলো।মনে মনে বললো;
আশা:-আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো ঊদিতা।খালি সময়ের অপেক্ষা।আশিয়ান আমার না হলেও আমি তোমায় ওর সাথে কখনো সুখে থাকতে দিবো না।ধ্বংস করে দেব তোমার সুখের সংসার।এমন কিছু করবো যাতে আশিয়ান তোমাকে আর সহ্যই করতে না পারে।জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।আমাকে অপমান করার শোধ আমি কড়ায় গণ্ডায় তুলবো ঊদিতা, মাইন্ড ইট।
আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে একটা গেস্ট রুমে ঢুকে দরজা লক করে ফেললো।ঊদিতা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-আপনার কী হয়েছে?এভাবে সবার সামনে হাসির পাত্র হয়ে আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন?কিছু দরকার আপনার?কী লাগবে বলুন আমায়?
আশিয়ান ঊদিতার সামনে এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বললো;
আশিয়ান:-সারাদিনে প্রচুর এনার্জি লস হয়েছে আমার।এখন এনার্জি রিচার্জ করতে তোমার চুমু চাই।ঠোঁটে,গালে ইভেন সারা মুখে।দাও।
আশিয়ানের কথা শুনে ফাঁকা ঢোক গিলে বললো;
ঊদিতা:-এসব করার জন্য নিয়ে এসেছেন নাকি!এখন এসব হবে না।বাসায় যাওয়ার পর নাহয়,,,
আশিয়ান:-আমি এতক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবো না।আমার এক্ষুনি লাগবে মানে লাগবেই।আই নিড দিস।
এই বলে আশিয়ান একমুহূর্তও দেরি না করে ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এলো।তারপর বাকিটা ইতিহাস!
অনেকক্ষণ পরে আশিয়ান ঊদিতাকে ছেড়ে দিয়ে কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে চুপ করে বিছানায় বসে রইলো।ঊদিতা জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে।আশিয়ান ছোট ছোট চুমু দিয়ে ঊদিতার মুখ ভর্তি করে ফেলছে।ঊদিতার সংস্পর্শে থাকলে নিজেকে পাগল পাগল মনে হয় আশিয়ানের।কন্ট্রোল থাকে না নিজের ওপর।ঊদিতা আশিয়ানের দিকে এবার শান্ত নজরে তাকিয়ে বললো;
ঊদিতা:-আপনি অনেক বড় একজন বিজনেসম্যান এবং একজন সমাজসেবক।আপনার অনেক ফ্যান আছে,বন্ধু বান্ধব সব আছে মানছি।সবার সাথে আপনি অনেক আন্তরিক তাও মানলাম।মেয়ে বন্ধুদেরকে বা মেয়ে কাজিনকে আন্তরিক ভঙ্গিতে জড়িয়ে ধরা এসব আপনাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হতে পারে।কিন্তু এটা আমার কাছে পুরোই অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার।ইসলামে মেয়েদেরকে যেমন বেগানা পুরুষদের থেকে পর্দা বজায় রাখতে বলা হয়েছে ঠিক তেমনি ছেলেদেরকেও বলা হয়েছে বেগানা মেয়েলোকদের কাছে পর্দা করতে।তা কী আপনি জানেন?
ঊদিতার প্রশ্নের জবাব আশিয়ান দিতে পারলো না।কারণ এটা তাদের পরিবার ও সোসাইটিতে একদমই সাধারণ একটা বিষয়।পানিভাতও বলা যায়।তার পরিবার থেকেও কখনো তাকে এরকম বাঁধা দেয়া হয় নি।তাই এ বিষয়ে একদমই উদাসীন ছিলো সে।নামাজ পড়া,রোযা রাখা,যাকাত দেয়া কুরবানী করা এসব ছাড়া এক্সট্রা কোনো কিছু যে ইসলামে আছে তা সে সহ তার পরিবারের সবাই ভুলেই গেছে।আর এসব ব্যাপারে সে অবগতও নয়।আশিয়ানকে নিরুত্তর দেখে ঊদিতা আবারও বললো;
ঊদিতা:-শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লেই হয়ে যায় না বুঝলেন।ইসলামের বাকি বিধিনিষেধগুলোও মেনে চলতে হয়।আপনি অনেক শিক্ষিত একজন মানুষ অথচ আপনি ইসলামের ব্যাপারে আমার থেকেও প্রচুর অজ্ঞ।আপনার বাসায় অনেক উপন্যাসের বই দেখেছি অথচ ইসলামিক বই তেমন একটা নেই।যা আছে সেগুলো থেকে শুধু নামাজ রোযার ব্যাপারেই জানা যাবে।সে যাকগে,যা বলছিলাম!আজ থেকে আর কোনোদিন কোনো মেয়েকে যেন জড়িয়ে ধরতে না দেখি আমি।আর আমার অগোচরে যদি আমার কথাটা আপনি অমান্য করেন তাহলে সেটা আমি না দেখলেও আল্লাহ দেখবেন।কারণ তিনি সবকিছুর ব্যাপারে অবগত আছেন।যেটা বললাম সেটা মনে থাকে যেন।ছোট হলেও আমি আপনার মতো এত অজ্ঞ নই।আপনাকে সঠিক করতে যা যা করতে হবে আমি সব করবো।শুধু অনুরোধ আমার কথাগুলো মানার চেষ্টা করবেন আপনি।
আশিয়ান ঊদিতার কথাগুলো নিরবে শুনে মৃদু হেসে বললো;
আশিয়ান:-ঠিক আছে।তোমার সব কথা আমি শুনবো।আসলে আমি জানতাম না এটা ঠিক নয়।ছোটবেলা থেকেই আমার পরিবারের সবাইকে এরকমটা করতে দেখে এসেছি আমি।মনে করতাম এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।না করলেই বরং মনে হয় অস্বাভাবিক।যাইহোক,আমি আর জীবনেও কোনো মেয়েকে হাগ করতে যাবো না।এমনকি কেউ করতে আসলেও ফিরিয়ে দেবো।
ঊদিতা:-শুধু তাই নয়।কোনো মেয়ের সাথে হ্যান্ডশেকও করবেন না।কোনো মেয়ের দিকে ভালোমতন তাকাবেনও না।আর মেয়েদের সাথে এত হা হা হি হি করারও দরকার নেই হোক না সে আপনার কাজিন!মেয়েদের থেকে একশো হাত দূরে থাকবেন।জানেন আমাদের নবী বলেছিলেন শেষ জামানায় মেয়েরাই হবে ছেলেদের জন্য ফিৎনা স্বরুপ।বিষয়টা আমি প্রথমে বুঝি নাই তবে পরে ঐ আশার বাচ্চা দূরাশাকে দেখে বুঝলাম কেন নবী এই কথাটা বলেছেন।এসব মেয়ের জন্যই দুনিয়াটা আজ কলঙ্কিত।
আশিয়ান:-হুম বুঝলাম।আচ্ছা আমি কোনো ভুল করলে আমাকে এভাবে বলে দিও কেমন?না বললে বুঝতে পারবো না আমি ভুল না সঠিক!
ঊদিতা:-জ্বী আচ্ছা।তাহলে এখন আমি যাই।পরে ওনারা মজা করবে আমাকে নিয়ে।
আশিয়ান ঊদিতার গালে শব্দ করে চুমু খেয়ে বললো;
আশিয়ান:-আচ্ছা যাও।
ঊদিতা হাসিমুখে আশিয়ানের দুইগালে আর কপালে চুমু খেয়ে রুম থেকে চলে গেল।ঊদিতা যাওয়ার পর আশিয়ানও রুম থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের কাছে চলে গেল।
আসিফদের বাসা থেকে ডিনার শেষে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতে রওনা দিতে রাত প্রায় সাড়ে দশটা বেজে গেছে।বাসায় যেতে আরও একঘন্টার মতো সময় লাগবে।আশিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করছে।ঊদিতা তার পাশেই বসে আছে।আশিয়ান একহাতে গাড়ি ড্রাইভ করে ঊদিতার হাত টেনে নিয়ে তাতে চুমু খেল।ঊদিতা মৃদু হাসলো শুধু কিছু বললো না।
বাসায় পৌঁছাতে রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে।সারাদিনের ধকলে সবাই ক্লান্ত।তাই সবাই যে যার রুমে চলে গেল।ঊদিতার এশার নামাজ বাকি রয়ে গেছে।তাই ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আগে নামাজ আদায় করে নিলো।তার বিছানায় চলে এলো ঘুমাতে।শরীরটা ভীষণ ম্যাজম্যাজ করছে তার।আশিয়ান বুঝতে পারলো যে ঊদিতার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।তাই সে ঊদিতাকে নিজের বুকের কাছে টেনে এনে ঊদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।ঊদিতা আশিয়ানের বুকের সাথে গুটিসুটি মেরে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাে।আশিয়ান হালকা মুচকি হেসে ঊদিতার কপালে চুমু খেয়ে তাকে দু’হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল।
❤️❤️❤️
এভাবেই দিনের পর দিন যেতে থাকে।ঈদের পর আশিয়ান ঊদিতাকে সাথে নিয়ে বহু জায়গায় ঘুরেছে।কখনো পরিবারের সবার সাথে কখনো আবার দুজন একা।আশিয়ান আর ঊদিতার বন্ডিং আরও মজবুত হয়েছে।আশা যতদিন চৌধুরী হাউজে ছিলো ততদিন ঠিকই ঊদিতার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি।অতঃপর ঈদের একসপ্তাহ পর সে কিছুটা নিরাশ হয়ে তার বাসায় ফিরে যায়।তবে নিজের জেদ ভুলে নি সে।আশিয়ান আর ঊদিতার সুখের সংসারে ভাঙন ধরাতে সে আবারও কোনো শয়তানি বুদ্ধি করে খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে।
ঊদিতা এখন আশিয়ানের সাথে অনেক সহজ হয়েছে।দুজনের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।আশিয়ান এখন ঊদিতা ছাড়া বুঝে না।দুজনের বন্ডিং এতই ভালো যে তাদের মধ্যে কখনো ঝগড়া হয় না।যদিও ঊদিতা মাঝে মধ্যে আশিয়ানের ওপর অভিমান করে।আশিয়ান ঊদিতাকে ভালো একটি কলেজে ভর্তি করে দিয়েছে।বই খাতা এবং প্রয়োজনীয় যা লাগবে সব কিনে দিয়েছে আশিয়ান।কলেজে যেতে হয় না ঊদিতার।আশিয়ান ঊদিতাকে সমস্ত পড়া নিজে কালেক্ট করে দেয়।এবং রাতে নিজে মাঝেমধ্যে গাইড করে।আর নয়তো কেয়া দেখিয়ে দেয়।ঊদিতার মতো আশিয়ান আর কেয়াও ব্যবসায় শিক্ষার স্টুডেন্ট ছিলো।তাই পড়াতে কোনো সমস্যা হয় না।
আশিয়ান এখন প্রায় প্রতিদিনই ঊদিতার সাথে মিলিত হয়।ঊদিতা আশিয়ানের নেশা বলা যায়।যে নেশা কখনো কাটবার নয়।ঊদিতা তো আশিয়ানের হুটহাট আদরে অতিষ্ঠ।লোকটাকে সে কিছু বলতেও পারে না।আশিয়ান মুখে কখনো ঊদিতাকে ভালোবাসি না বললেও ঊদিতার সেটা নিজে থেকে বুঝে নিতে সমস্যা হয় না।আশিয়ানের কেয়ারেই বোঝা যায় সে ঊদিতার জন্য ঠিক কতটা ডেস্পারেট।
পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ খুশি আশিয়ানের আগের মতো হয়ে যাওয়ায়।ওনারা কখনো আশাই করেন নি যে আশিয়ান আবারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।বরং আগের থেকে সে আরও বেশি প্রানবন্ত হয়ে গেছে।হাসি যেন তার মুখ থেকে সরেই না।আর এসব ক্রেডিট হলো ঊদিতার।সে আসায় আশিয়ান একদম আগের মতোন হাসিখুশি হয়ে গেছে।মিসেস ইয়াসমিন তো খুশিতে কতবার যে চোখের জল ফেলেছেন তা বলার বাইরে।নিজের সন্তানের হাসিমুখ দেখতে কোন মা-ই না চায়?তিনি ঊদিতাকে নিজের মেয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসেন।কারণ ঊদিতা একদম নিঃস্বার্থ ভাবে আশিয়ানকে ও পুরো পরিবারের সবাইকে ভালোবাসে।
সময় কারও জন্য থেমে থাকে না।ভালোয় ভালোয় কেটে গেছে প্রায় ৬ টি মাস।পড়ালেখা ও স্বামী সংসার নিয়ে অনেক ভালো কাটছে ঊদিতার দিন।অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে কিছুদিন আগে ঊদিতা।আশিয়ান অনেক গাইড করেছে তাকে।নিজে গিয়ে পরীক্ষা হলে দিয়ে আবার নিজে বাসায় নিয়ে আসতো।মাঝখানের সময়টা প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে বসে থাকতো।ঊদিতা ভীষণ লাকি যে আশিয়ানের মতো কাউকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছে।
আশিয়ান তো ঊদিতা বলতে পাগল।অফিস থেকে দ্রুত বাসায় চলে আসে সে একমাত্র ঊদিতার জন্য।একমাত্র তাকে দেখলেই বোঝা যায় যে কাউকে কীভাবে এতটা ভালোবাসা যায়!কালকে আশিয়ানের জন্মদিন।সে এখনও অফিসে।ঊদিতা চায়নি আশিয়ানের বার্থডে এত ঘটা করে পালন করতে।কিন্তু তার বন্ধু বান্ধব আর পরিবারের লোকজনদের কী করে মানা করবে সে।তাই সে কিছুই বলে নি।ওরা তো প্ল্যানিং করতে ব্যস্ত।ঊদিতা এতে মাথা ঘামায় না।সে ভাবছে আশিয়ানের জন্য কালকে তার প্রিয় খাবার গুলো রান্না করে খাওয়াবে।আর গিফট তো আছেই।ব্যস,,এত দামী কোনো গিফট দিতে হবে না।
রাতে ঘর্মাক্ত শরীরে আশিয়ান বাসায় ফিরে।যদিও এখন শীতের হাওয়া পড়ে গেছে প্রায়।ঊদিতা আশিয়ানের জন্য প্রতিদিনকার মতো কফি বানিয়ে নিয়ে আসে।আশিয়ান গোসল করে বিছানায় এসে বসতেই ঊদিতা হাসিমুখে টাওয়েল দিয়ে তার চুল মুছে দিতে লাগে।আশিয়ান জামার ওপরই ঊদিতার পেটে নিজের নাকমুখ ঘষে।ঊদিতা ঈষৎ কেঁপে ওঠে।আশিয়ান ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরে তার পেটে একইভাবে মুখ গুঁজে চুপচাপ বসে আছে।
ঊদিতা আশিয়ানের মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে মৃদু নাড়াচাড়া করে।আশিয়ানের চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এসেছে।তাই ঊদিতাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে সেও ঊদিতার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।ঊদিতা হেসে ফেললো আশিয়ানের কর্মকাণ্ড দেখে।ঊদিতা একটুও চমকালো না কারণ আশিয়ান মাঝেমধ্যেই এমন করে।আশিয়ান ঘুমিয়ে গেছে।ঊদিতা আশিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সস্নেহে।রাতে আশিয়ান অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছিলো।ল্যাপটপে কী একটা কাজ করতে গিয়ে সারা রাত ঘুমাতে পারে নি সে।তাই এখন ঘুমিয়ে পড়লো আরকি ঘুম পোষাতে।
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ঘুম ভাঙে আশিয়ানের।ঊদিতা আশিয়ানের জন্য স্পঞ্জের মতো নরম তুলতুলে চকোলেট কেক বানিয়ে রেখেছে আশিয়ানের ঘুমিয়ে যাওয়ার পর।রাত বারোটায় তাকে উইশ করবে তাই।সময়টা একান্তই দুজন মিলে কাটাবে।ঊদিতার মুখে হাসি লেগেই আছে।লোকটার আজ ২৬ বছর পূর্ণ হয়ে ২৭ এ পা রাখবে।
ঊদিতা আজ গাঢ় নীল রঙের একটি সুতির শাড়ি আটপৌরে ভাবে পড়েছে।শুধু আশিয়ানের জন্য।কোনো পিন টিন এর সাহায্যে পড়ে নি।জাস্ট এমনিতেই সুন্দর করে পড়েছে।আজ রাতটা তাদের দুজনকে কেউ ডিস্টার্ব করবে না।এটা মিসেস ইয়াসমিনের আদেশ।পরেরদিন সকালে তাকে সবাই উইশ করবে।
আশিয়ান ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ঊদিতা সারা রুম সুন্দর করে সাজিয়েছে।বাগান থেকে কাঠগোলাপ ফুল একগুচ্ছ এনে রেখেছে।বারান্দায় রাখা টেবিলে ছোট ছোট মোমবাতি দিয়ে সাজিয়েছে।একটা গ্লাসের ফ্লাওয়ার ভাসে কয়েক জাতের গোলাপ ফুল পানিতে ডুবিয়ে রেখেছে সে তরতাজা থাকার জন্য।টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নয়নতারা ফুল।গাছগুলোতে ফেইরি লাইট আগেই লাগিয়েছিলো ঊদিতা।সেগুলো এখন জ্বালিয়ে দিলো।পরিবেশটা ভীষণ সুন্দর।আর ঊদিতা মনে মনে এক্সাইটেড হয়ে আছে কখন সে আশিয়ানকে সারপ্রাইজ দেবে সেটা ভেবে।
আশিয়ান ঘুম থেকে ওঠে ঊদিতাকে এ রূপে দেখে যেন ফিদা হয়ে গেল।ঊদিতার লম্বা চুলগুলো ছেড়ে রাখা।নীল শাড়ির ফাঁক ফোকর দিয়ে ঊদিতার ফর্সা পেট পিঠ দেখা যাচ্ছে।আশিয়ান তো ঊদিতার লুকে পাগল প্রায়।আশিয়ান বসা থেকে ওঠে গিয়ে ঊদিতাকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার চুল সরিয়ে ঘাড়ে চুমু খেতে লাগে।ঊদিতা আশিয়ানকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললো;
ঊদিতা:-এতক্ষণ ধরে ঘুমিয়েছেন।যান গিয়ে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না।আমি এখানেই আছি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।যান।
আশিয়ান শুনলো না ঊদিতার কথা সে আবারও ঊদিতাকে ঝাপটে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।পাগলের মতো ঊদিতার কাঁধে চুমু খাচ্ছে সে।ঊদিতা পড়লো মহা ফ্যাসাদে।কী করে তাকে সরাবে সে ভেবে পাচ্ছে না।দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো ঊদিতা।১১ টা ৪৩ বাজে।ঊদিতা গুনে গুনে ৪ মিনিট পর আশিয়ানকে আবারও সরিয়ে দিয়ে বললো;
ঊদিতা:-জলদি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।নয়তো আজকে রাতে কাছে আসতে দেব না কিন্তু।(থ্রেড দিয়ে)
আশিয়ান বিরক্তবোধ করলো ঊদিতার কাজে।সে শাড়িটা খুলে ফেলার পায়তারা করছিলো কিন্তু পারলো না মেয়েটার জন্য।অন্যদিন বাঁধা দেয় না তবে আজ কেন দিচ্ছে বোধগম্য হলো না আশিয়ানের।বিরক্তি নিয়ে ওয়াশরুমে গেল সে।আশিয়ানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ঊদিতা।
প্রায় মিনিট দশেক পর আশিয়ান ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো।আশিয়ানের পরনে একটা ধূসর রঙের টি শার্ট ছিলো আর থ্রি কোয়ার্টার টাওজার।এতেই তাকে পুরো চকোলেট বয় লাগছে।আশিয়ান টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ঊদিতার কাছে এগিয়ে এসে আবারও কোমড়ে হাত দিতে যাবে তখনই ঊদিতা আশিয়ানকে বললো;
ঊদিতা:-আপনার এসব করার জন্য সারারাত পড়ে রয়েছে।এখন আমি যা বলবো তা শুনুন!
আশিয়ান:-কী?
ঊদিতা:-আপনি একটু নিচু হন প্লিজ।আমি আপনার চোখ ধরবো।
আশিয়ান এবার মহা বিরক্তি নিয়ে বললো;
আশিয়ান:-এখন কী লুকোচুরি খেলার সময় ঊদিতা!বাচ্চাদের মতো কীসব বলছো?
ঊদিতা মুখ ফুলিয়ে বললো;
ঊদিতা:-আমি কিছু বললেই সেটা আপনার ভালো লাগে না তাই না!নিজে তো ঠিকই সুযোগ সন্ধানীর মতো শুধু কাছে আসার পায়তারা করেন।আমার কথা না শুনলে আমার কাছেও আসার দরকার নেই হুহ!
আশিয়ান বাধ্য হয়ে মাথা নিচু করে ঊদিতার গালে চুমু খেয়ে বললো;
আশিয়ান:-রাগ করতে হবে না।এইতো আমি মাথা নিচু করেছি।তোমার যা ইচ্ছা করো।আমি কিছু বলবো না।তবে রাতে আমায় অনেক বেশি আদর করতে হবে কিন্তু মনে রেখো!
ঊদিতা:-আচ্ছা।(হাসিমুখে)
ঊদিতা আশিয়ানের চোখ ধরে তাকে নিয়ে ধীরে ধীরে বারান্দার দিকে অগ্রসর হলো।হাতের চিকন ব্রেসলেটের ঘড়ির দিকে তাকালো সে।১১ টা বেজে ৫৯।
ঊদিতা আশিয়ানকে নিয়ে টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো।পুরো ১২ টা বেজে গেছে তখন ঘড়িতে।ঊদিতা আশিয়ানের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো;
ঊদিতা:-হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মাই ডিয়ার হাসবেন্ড।মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে!
এই বলে ঊদিতা আশিয়ানের চোখ থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো।আশিয়ান অবাক হয়ে গেছে ঊদিতার কথা শুনে।তার একটুও মনে নেই নিজের বার্থডের কথা।টেবিলের ওপর ক্যান্ডেলগুলো ও নয়নতারা ফুলের মধ্যমণি করে একটা চকোলেট কেক রাখা আছে।সাথে ফ্লাওয়ার ভাসে তরতাজা গোলাপ ফুল।চারদিকে সাদা আর সোনালী রঙের থোকা থোকা ফেইরি লাইট জ্বলছে।সাথে দুটো গ্লাসে হাতে বানানো ম্যাংগো স্কোয়াশ দিয়ে জুস রাখা।আশিয়ান পুরাই সারপ্রাইজড।
ঊদিতা সেই কাঠগোলাপের গুচ্ছটি নিয়ে এসে আশিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বললো;
ঊদিতা:-জীবনের প্রথম কোনো ছেলের প্রেমে এতটা গভীর ভাবে পড়েছি আমি।এর আগে প্রেম ভালোবাসা কী তাই চিনতাম না।কখনো ভাবি নি যে আমিও কারও প্রেমে পড়বো।অন্তর থেকে কাউকে ভালোবাসবো।আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি আমার স্বামীকে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।এতটা ভালোবাসি যে এরচেয়ে বেশি আর কাউকে ভালোবাসা যায় না।আমার চিন্তাভাবনা সমস্তটা জুড়ে সারাক্ষণ আপনি বিরাজ করেন।ভালোবাসা কী তা আপনার কাছ থেকেই শিখেছি আমি।কোনো মেয়ে আপনার কাছে আসলে এত কেন জেলাস ফিল করি আমি জানেন?তার কারণ হলো আমি আপনাকে ভালোবাসি।আই লাভ ইউ।
লজ্জায় লাল হয়ে আশিয়ানকে প্রেম নিবেদন করলো ঊদিতা।আশিয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রাণপ্রিয়া স্ত্রীর দিকে।এই প্রথম কোনো প্রপোজাল পেয়ে আশিয়ান খুশিতে ফেটে পড়তে চাইছে।এত খুশি এর আগে কখনো হয় নি সে।আশিয়ানের দিকে ফুলের গুচ্ছটা বাড়িয়ে ধরে আছে ঊদিতা।আশিয়ান ঊদিতার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে এগিয়ে এসে ঊদিতাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় চুমু খেলো।ঊদিতা খুশিতে দুহাত দিয়ে ঝাপটে ধরলো আশিয়ানকে।ঊদিতা আশিয়ানকে হালকা ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-আমি কিন্তু আমার কথার রিপ্লাই পেলাম না।উত্তর দিবেন না।
আশিয়ান ঊদিতার নাকের সাথে নাক ঘষে মৃদু গলায় বললো;
আশিয়ান:-উহু,,,কিছু কথা মুখে বলতে হয় না।বুঝে নিতে হয়।তুমিও বুঝে নাও আমি কী বলতে চাই।
ঊদিতা:-আচ্ছা চলুন কেকটা কেটে নিন এখন।কেকটা আমি নিজের হাতে বানিয়েছি।খেয়ে বলবেন কিন্তু কেমন হয়েছে!
আশিয়ান হাসলো ঊদিতার কথা শুনে।দুজন মিলে একসাথে কেক কেটে একজন আরেকজনকে খায়িয়ে দিলো।কেক খাওয়ার শেষে ঊদিতা আশিয়ানের হাতে রেপিং পেপারে মোড়ানো একটা মিডিয়াম সাইজের বক্স তুলে দিলো।দিয়ে খুলে দেখতে বললো।আশিয়ান কৌতুহলী হয়ে পেপার খুলে বক্সটা খুলে দেখলো তাতে তিনটে প্যাকেট রাখা।তিনটা প্যাকেটেই হাতে বানানো পাঞ্জাবি ও পাজামা।অনেক সুন্দর নিপুণ হাতে যত্নসহকারে কারুকার্য শোভিত পাঞ্জাবি সেগুলো।আশিয়ান সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে রইলো।ঊদিতা মৃদু হেসে বললো;
ঊদিতা:-জানি না আপনার পছন্দ হয়েছে কী না।আমি যখন মামণির কাছ থেকে প্রথম সেলাই কাজ শিখি তখন পাঞ্জাবি তৈরি করা শিখেছিলাম।সর্বপ্রথম আপনার জন্য পাঞ্জাবিগুলো বানিয়ে তারপর নিজহাতে সেগুলোতে হ্যান্ডপেইন্টের কাজ ও সুতোর কারুকাজ করেছি।তখন চিন্তা করেছিলাম এগুলো আপনার বার্থডে তে গিফট করবো।আপনার মনে হয় পছন্দ হয় নি তাই না?আসলে এত দামী গিফট নয় এগুলো,,
ঊদিতার কথার মাঝখানে আশিয়ান ঊদিতার কপালে চুমু খেয়ে বললো;
আশিয়ান:-আমার বউ আমার জন্য ভালোবেসে নিজহাতে পাঞ্জাবিগুলো বানিয়েছে আর আমার পছন্দ হবে না তা কী করে হয়?আমার কাছে বেস্ট গিফট এগুলো।কালকেই এখান থেকে একটা পাঞ্জাবি পড়বো আমি।মেনি মেনি থ্যাংকস বউ।
ঊদিতা আশিয়ানের সাথে বেঞ্চে বসে আশিয়ানের বুকে মাথা রেখে অনেকক্ষণ গল্প করলো।তারপর আশিয়ান ঊদিতাকে কোলে নিয়ে রুমে এসে বিছানার ওপর শুয়িয়ে দিয়ে তার ওপর নিজের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলো।রুমের লাইট নিভিয়ে দিলো সে।হারিয়ে গেল দুজন ভালোবাসার সাগরে।
(আপকামিং ঝড়ের জন্য সবাই রেডি থাইকেন।যারা বলছেন তাদের মধ্যে ঝগড়া নেই কেন!সব নিরামিষ লাগে,তাদের জন্য সুখবর।খুব শীঘ্রই তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাবো আমি।তাদের ভালোবাসার পরিণতি শেষে কী হয় তাই দেখার বিষয়।যাকগে আর একটা কথা আমি নিজেই ঊদিতার মতো কিছুই চিনতাম না একসময়।এতটাই হাঁদা ছিলাম।অতঃপর ক্লাস টেনে ওঠার পরে আমি আস্তে আস্তে এই পর্যায়ে এসে অনেক কিছু শিখেছি।আমি এখন এতটাই জানি যে কেউ আমার সামনে ইশারাতে ডাবল মিনিং কিছু বললেই আমি সেটা বুঝে যাই।তেমনি ঊদিতাও কিছুই জানতো না।কিন্তু বিয়ের পর সে এখন সব বিষয়েই অনেকটা পাকা হয়ে গেছে।তা মূলত সঙ্গদোষের জন্য।আমার মতো আরকি।আর একটা কথা এটা একটা গল্প সবাই এটাকে গল্পের মতোই ট্রিট করবেন।এত হাদিস খুজতে যেতে হবে না।নয়তো গল্প পড়ার প্রকৃত মজা নষ্ট হবে।আমি কিছু ক্ষেত্রে হাদিসের ব্যাপারে বলি একটু শিক্ষনীয় দিক তুলে ধরার জন্য।এরবেশি কিছু না।ভুলত্রুটি ক্ষমা সাপেক্ষ।হ্যাপি রিডিং।❤️)
চলবে…🍃