#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ৩২ ||
বেলা ১১ টা বেজে গেছে প্রায়।ঊদিতার ঘুম ভেঙে গেছে তখন।আশিয়ানকে নিজের ওপর থেকে সরিয়ে ওঠে বসে আড়মোড়া ভাঙল সে।চোখ দুটো ভালো করে দুহাত দিয়ে ডলে বিছানা ছেড়ে কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল একদম গোসল সেড়ে আসার উদ্দেশ্যে।আশিয়ান তখনও ঘুমে।
ঊদিতা গোসল শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।নিজেকে একদম পালকের মতো হালকা মনে হচ্ছে তার।মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে।ভালো করে রুমটা পর্যবেক্ষণ করলো ঊদিতা।রুমের মধ্য খানে বিশাল একটা পুরনো আমলের কিন্তু অনেক সুন্দর কারুকার্য করা কাঠের রাজকীয় পালংক।বিছানার সাথে লাগোয়া চারটা স্ট্যান্ডও আছে মশারী টানানোর জন্য।রুমের এককোণে বিশাল একটা কাঠের আলমারি।অবশ্যই পুরনো ধাঁচের।পড়ার টেবিল আছে একটা।একটা পুরনো আমলের সোফা আছে।ড্রেসিং টেবিল আছে।বলতে গেলে রুমের সব আসবাবপত্র পুরনো আমলের অর্থাৎ অ্যান্টিক আরকি।একটা ঝাড়বাতিও আছে।তবে রুমের সবকিছু অনেক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।একটুও মনমরা লাগছে না দেখতে।ঊদিতার তো অনেক ভালো লেগেছে বাসাটা।
ঊদিতা নিজের চুল মুছে বারান্দার দিকে গেল।এটা রুফটপ নয়।তবে বিশাল বড় বারান্দা।ঊদিতা বারান্দায় গিয়ে পুরোপুরি থমকে গেল।এত সুন্দর মনোরম কোনো জায়গা হতে পারে জানা নেই তার।বারান্দা থেকে চা বাগানের দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ঊদিতা মোহের সাগরে ডুবে গেছে প্রায়।দুগালে হাত রেখে হাসিমুখে মুগ্ধ হয়ে পরিবেশটা উপভোগ করছে সে।ঠান্ডা নির্মল বাতাসে ঊদিতার চুলগুলো হালকা দুলছে।ঢাকায় এখনো গরমের রেশ রয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু সিলেটে যেন তার ছিটেফোঁটাও নেই।আজ সূর্য ওঠে নি।দিনটা কেমন মেঘলা মেঘলা হয়ে আছে।মৃদু ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে ঊদিতার।
ঊদিতা যখন মুগ্ধ হয়ে চারপাশে চোখ বোলাচ্ছিলো তখন আশিয়ান পেছন থেকে ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরলো।ঊদিতা চমকে পিছনে তাকাতেই আশিয়ানের নাকের সাথে তার নাকের ঘষা লাগলো।আশিয়ানের হাত চেপে বসে আছে ঊদিতার পেটের ওপর।ঊদিতার চুল সরিয়ে ঘাড়ে নিজের থুতনি রেখে আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-আমার বউয়ের পছন্দ হয়েছে বুঝি জায়গাটা?
ঊদিতা কিছু না বলে হ্যা বোধক মাথা ঝাকায় মৃদু।আশিয়ান ঠোঁট এলিয়ে হাসে।কানের লতিতে ঠোঁট বুলিয়ে বলে;
আশিয়ান:-হানিমুনের জন্য পারফেক্ট প্লেস!কী বলো জান?
ঊদিতা আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো;
ঊদিতা:-আপনি খুব অসভ্য একটা লোক!শুধু এসবই করতে চেনেন।
আশিয়ান ঊদিতাকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নিয়ে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে;
আশিয়ান:-এত সুন্দরী বউ পাশে থাকলে যে ছেলে জীবনে কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নি সেই ছেলেও অটোমেটিক্যালি রোমান্টিক হয়ে যাবে।আর আমার বউটা তো পরীর থেকেও সুন্দরী,, তাকে দেখলে আমি কী করে নিজেকে কন্ট্রোল করবো বলো?
ঊদিতা এবার চা বাগানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আশিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-আচ্ছা,,,আজ যদি আমি কালো হতাম তবে কী আপনি আমাকে বিয়ে করতেন?না ভালোবাসতেন?(একটু থেমে)কিছুই করতেন না।দুনিয়ায় প্রায় সকল মানুষই সুন্দরের পূজারী।আপনিও তার ব্যতিক্রম নন।এই সৌন্দর্য্য তো ক্ষনিকের জন্য।মনটাই তো আসল।জানেন,, মনের সৌন্দর্য্যই কিন্তু বড় সৌন্দর্য্য!
আশিয়ান:-হুমম জানি!তবে আমার কাছে কালো ফর্সা এসব কখনো ম্যাটার করে না।গায়ের রং দেখে আমি কাউকে বাছবিচার করি না।আজ আমার ভাগ্যে যদি কালো কেউ জীবনসঙ্গী হিসেবে থাকতো তবে তাকেও আমি তোমাকে যেমনটা ভালোবাসি তেমনটাই ভালোবাসতাম।তবে আল্লাহ আমার ভাগ্যে তোমাকে লিখে রেখেছেন।এবং আমি তোমাকেই মনেপ্রাণে ভালোবাসি।এটা জানো তো ইলিয়ানার চেহারার মায়া দেখে আমি তার প্রেমে পড়েছিলাম।সে কিন্তু সৌন্দর্য্যের দিক দিয়ে তোমার ধারেকাছেও নেই।তারপরও তাকে আমি মন থেকে ভালোবেসেছিলাম।কিন্তু ধোঁকা দিয়ে চলে গেল।(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
ঊদিতা চুপ করে আশিয়ানের কথা শুনে যাচ্ছে।আশিয়ান ঊদিতার চুলের স্মেল নিয়ে আবারও বললো;
আশিয়ান:-তবে জানো তো,,আমার আম্মু আমাকে সবসময় শান্তনা দিয়ে বলতেন,,আল্লাহ তায়ালা যা করেন সবসময় ওনার বান্দাদের ভালোর জন্যই করেন।আমি এখন এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।আজ ইলিয়ানা ছেড়ে গিয়েছে বলেই আমি তোমাকে পেয়েছি।আমি ইলিয়ানার সাথে রিলেশনের আগে আল্লাহর কাছে যেমনটা চাইতাম সেরকম একজনকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পেয়েছি।এবং আমার বউ সুন্দরী এটা হয়তো আল্লাহর তরফ থেকে আমার জন্য গিফট যাতে আমি বারবার আমার বউয়ের ওপর ক্রাশ খেতে পারি।আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ ক্রাশ তুমি।আর কাউকে দেখে কখনো এত মুগ্ধ হইনি।এমনকি ইলিয়ানাকে দেখেও না।আমার পৃথিবী একমাত্র তুমিই জান!
ঊদিতার ঠোঁটের কোণে একটুকরো তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠেই মিলিয়ে গেল।বুঝতে দিলো না সে আশিয়ানকে।আশিয়ান এবার ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো;
আশিয়ান:-আচ্ছা চলো,,,আমরা দুজন এখন নাশতাটা সেড়ে ফেলি।তারপর দুজন চা বাগান ঘুরতে যাবো।
আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে নিচে নেমে এলো।কাজের বুয়া নাশতা তৈরি করে টেবিলে বেড়ে দিয়েছে।আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।দুজনে টুকটাক কথা বলে নাশতা করে নিলো।তারপর রুমে চলে এলো দুজন।আশিয়ান গোসল করতে গেছে।ঊদিতা সারা রুম ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।
প্রায় পনেরো মিনিট পর শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো আশিয়ান।ঊদিতা তার চুল মুছে দিলো সবসময়কার মতো।আশিয়ান বললো;
আশিয়ান:-দুজন এখন চা বাগান ঘুরতে যাবো,,তাই ঝটপট রেডি হয়ে নাও।
আশিয়ানের কথা মতো ঊদিতা লিনেন কাপড়ের একটা ঘেরওয়ালা জিলবাব পড়ে নিলো।আশিয়ান একটা ফোর কোয়ার্টার টাওজার আর একটা টি শার্ট পড়েছে শুধু।কারণ বাগান তো বাসার কাছেই।
দুজন বাসা থেকে বেরিয়ে এলো।আশিয়ান ঊদিতার হাত ধরে ধরে হাঁটছে।বাইরে মৃদুমন্দ বাতাসে গাছের পাতাগুলো তালে তালে নড়ছে।পরিবেশটা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
দুজন বাগানে প্রবেশ করলো।ঊদিতা চা পাতার ওপর হাত বুলিয়ে হাঁটছে।আশিয়ান পিছন থেকে ঊদিতার কাজ দেখছে।বাগানে হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ ছাড়া আর কেউই নেই।বাগানের পরিবেশ দেখে ঊদিতা ফিদা।আশিয়ান ঊদিতাকে বললো নেকাব খুলে ফেলতে।কারণ এখানে লোকজন নেই।আশিয়ানের কথামতো ঊদিতা নেকাব খুলে হাঁটতে লাগলো।ঊদিতা দুহাত মেলে খুশিতে একটা চক্কর দিলো।আশিয়ান হেসে ফেললো ঊদিতার বাচ্চামো দেখে।ফোন বের করে ঊদিতার অজান্তে কয়েকটা ক্যান্ডিড পিক তুলে নিলো সে।
দুজন মিলে সারা বাগান ঘুরে দেখছে।ঊদিতাকে জোর করে ধরে কয়েকটা সেলফি নিলো আশিয়ান।ঊদিতা মুক্ত পাখির ন্যায় যেন উড়ে উড়ে হাঁটছে।আশিয়ান ঊদিতার হাসি মুখ দেখছে তৃপ্তি নিয়ে।ঊদিতার খুশিতে সেও খুশি।
ঊদিতা এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে।আশিয়ান একটু দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো।দূর থেকে একটা মেয়ে আশিয়ানকে দেখে পুরোপুরি ফিদা হয়ে গেছে।ওরা কয়েকজন বান্ধবী মিলে বেড়াতে এসেছে বাগানে।মেয়েটা একপ্রকার দৌড়ে এলো আশিয়ানের কাছে।ঊদিতা পিছনে তাকায় নি তাই মেয়েটাকে দেখতে পেল না।আশিয়ান কান থেকে ফোনটা সরিয়ে টাওজারের পকেটে রেখে দিলো।মেয়েটা (আরফা) নিজে থেকেই বললো;
আরফা:-হাই আমি আরফা,,,আপনার নাম কী?(উচ্ছ্বসিত হয়ে)
আশিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো মেয়েটার দিকে।গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো;
আশিয়ান:-আমার নাম জেনে আপনি কী করবেন?আপনাকে কী আমি চিনি?(টাওজারের পকেটে দুহাত গুঁজে)
আরফা:-চেনেন না তো কী হয়েছে?চিনে নিবেন।বাই দ্যা ওয়ে আপনি কিন্তু অনেক কিউট!
আশিয়ান:-হুম,, আমি জানি আমি কিউট,,,বলতে হবে না।
আরফা:-আচ্ছা আপনি কী সিঙ্গেল?
এমনসময় ঊদিতা আশিয়ানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে বাজখাঁই গলায় জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-কেন সিঙ্গেল হলে বুঝি প্রপোজ করবেন?
ফারহা ভ্রু কুচকে তাকালো ঊদিতার দিকে।কাঠকাঠ কন্ঠে বললো;
ফারহা:-আপনাকে কেন বলবো?কে আপনি?
ঊদিতা রাগের ঠেলায় চিবিয়ে চিবিয়ে একবার আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে মেয়েটাকে বললো;
ঊদিতা:-আমার সামনে আমার হাসবেন্ডকে ফ্লার্ট করে আবার আমাকে বলা হচ্ছে কে আপনি?বাহ,,,সাহস আছে বলতে হবে।
ঊদিতার কথা শুনে মেয়েটা যেন আকাশ থেকে পড়লো।তাকানোর স্টাইলেই বোঝা যাচ্ছে যে সে ঊদিতার কথা একটুও বিশ্বাস করে নি।
ফারহা:-আপনার কথা কেন বিশ্বাস করবো আমি?কোনো প্রুভ আছে যে ওনি আপনার স্বামী?
ঊদিতা এবার আশিয়ানের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো;
ঊদিতা:-কী,,,!এমন নিরবতা পালন করছেন কেন?ভালো লাগে আপনার এসব ছ্যাচড়া মেয়েদের কাছ থেকে এটেনশন পেতে তাই না?ছিহ,,,আপনি এত লুচ্চা!আর কখনো কথা বলবেন না আমার সাথে!পয়দাগত লুচ্চাকে বিয়ে করে জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল আমার।
ঊদিতা রাগে হনহন করে চলে যেতে নিলো।আশিয়ান জোর করে হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললো;
আশিয়ান:-আমার স্ত্রীকে নিয়ে হানিমুনে এসেছি আপু।আপনি এখন আসতে পারেন।আমার বউটা মারাত্মকভাবে রেগে গেছে।
ফারহা হতভম্ব হয়ে একবার ঊদিতা তো একবার আশিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।বেচারি ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়েছে।আশিয়ান যে বিবাহিত তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার।হায়,,,দিল টুঁট গায়া!
ফারহা গোমড়া মুখে চলে গেল তার বান্ধবীদের কাছে।ঊদিতা আশিয়ানের কাছ থেকে ছোটার জন্য ছটফট করছে।আশিয়ান শক্ত করে তাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললো;
আশিয়ান:-আমার বউটা এত্ত জেলাস ফিল করে আমাকে নিয়ে!বাপরে,,,আমি শিহরিত!
ঊদিতা:-ছাড়ুন আমাকে!লুচ্চা লোক!মেয়ে দেখলেই মনের ভেতর কিলবিল করে তাই না?তো যান না ওসব মেয়েদের কাছে।আমার সাথে কেন আছেন?
ঊদিতা রেগেমেগে লাল হয়ে গেছে পুরো।পুরোই যেন এটম বোম।এক্ষুনি ব্লাস্ট হবে হবে ভাব।আশিয়ান ঊদিতাকে কোলে তুলে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে হাঁটতে বললো;
আশিয়ান:-এত রাগ করা ভালো নয় গো বউ!আমি কী করবো বলো,,আমি তো ফোনে কথা বলছিলাম আমার অফিসের ম্যানেজারের সাথে।মেয়েটা কোথা থেকে এসেছে,কেন এসেছে আমি কিছুই জানি না!ট্রাস্ট মি জান!
ঊদিতা:-কে বলেছিলো আপনাকে এসব টাওজার, গেঞ্জি পড়ে আসতে?মেয়েদের কী দোষ?আপনি এত এট্রাকটিভ হয়ে সেজে থাকেন দেখেই তো মেয়েরা ফিদা হয়ে যায়!যত্তসব!(রাগে গজগজ করে)
আশিয়ান মুচকি হেসে বললো;
আশিয়ান:-তোমার কী জ্বলছে বউ?
ঊদিতা রাগের মাথায় বলে উঠে;
ঊদিতা:-জ্বলবে না,,,মেয়েটা কী লুচ্চা!আমার সামনে আমার বরকে বলে আপনি কী কিউট!কেন রে,,জীবনে কোনো ছেলে দেখিস নি?আমার স্বামীকেই চোখে পড়লো!
আশিয়ান ঠোঁট এলিয়ে হেসে ঊদিতার গালে চুমু খেয়ে আদুরে কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-তার মানে আমার বউটা আর আমার ওপর অভিমান করে নেই!তাই না বউ?আমি জানি তো আমার জানু আমার ওপর কখনো রাগ করে থাকতে পারেই না!
ঊদিতা মুখ ঝামটা মেরে ঝাঁজালো কন্ঠে বলে উঠে;
ঊদিতা:-আমার মোটেই রাগ ভাঙে নি।আমি এখনো রেগে আছি আপনার ওপর।হুহ,,,এত ইজিলি ক্ষমা করার প্রশ্নই ওঠে না।লুচ্চা লোক একটা!
আশিয়ান নির্বিকার ভাবে বললো;
আশিয়ান:-আচ্ছা ঠিক আছে।আগে বাসায় যেয়ে নিই,,লুচ্চামি কতপ্রকার ও কী কী তা হারে হারে টের পাইয়ে দেবো!
ঊদিতা আশিয়ানের কথা শুনে ফাঁকা ঢোক গিলে।ততক্ষণে বাসায় পৌঁছে গেছে দুজন।আশিয়ান ঊদিতাকে কোলে নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে এলো।ঊদিতাকে বিছানার ওপর শুয়িয়ে গিয়ে দরজা লক করে এলো সে।নিজের গেন্জি খুলতে খুলতে বললো;
আশিয়ান:-কী যেন বলছিলে!আমি লুচ্চা?তাই না?ঠিক আছে।এখন দেখবা আশিয়ান চাইলে ঠিক কতটা লুচ্চামি করতে পারে।
ঊদিতা শোয়া থেকে ওঠে বসে পেছাতে লাগলো।আশিয়ান ঊদিতার পায়ে ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো।ঊদিতা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-দেখুন,,বাড়াবাড়ি করবেন না বলে দিচ্ছি।দূরে যান।আপনার জন্য আমি আবার গোসল করতে পারবো না।
আশিয়ান:-জাস্ট চিল ডিয়ার।বিকেলে দুজন সুইমিংপুলে একসাথে গোসল করবো।হানিমুনে এসেছি কীসের জন্য যদি তোমাকেই কাছে না পাই?
ঊদিতা:-আপনি আসলেই একটা লুচ্চা।ছাড়ুন আমার পা।
আশিয়ান:-হ্যা আমি লুচ্চা।তবে সেটা একান্তই আমার বউয়ের জন্য।আসো বউ কাছে আসো।
আশিয়ান ঊদিতার পরনে থেকে হিজাব নেকাব খুলে নিলো।ঊদিতা লাফালাফি করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য।কিন্তু আশিয়ানের শক্তির কাছে তা তুচ্ছ।একটাসময় হার মেনে ধরা দিলো সে আশিয়ানকে।আশিয়ান ঊদিতার পরনে থেকে বোরকাটা খুলে নিয়ে তার দু’হাতের ভাঁজে নিজের দুহাত ঢুকিয়ে শক্ত করে বিছানার সাথে চেপে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।ঊদিতার শরীর জুড়ে এক অদ্ভুত ধরনের শিহরণ বয়ে গেল।দুজনে তলিয়ে গেল অফুরন্ত ভালোবাসার অথৈ সমুদ্রে।
বিকেল হয়ে গেছে।তবে আকাশ দেখে মনে হচ্ছে সন্ধা হয়ে গেছে।আজ আর কোথাও যাওয়ার প্ল্যান নেই তাদের।আশিয়ান ঊদিতার বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।ঊদিতা আশিয়ানকে একহাত দিয়ে আগলে রেখে মাথার ওপর ঝাড়বাতির দিকে তাকিয়ে আছে।আশিয়ানের গরম নিঃশ্বাস ঊদিতার গলায় আগুনের হল্কার মতো গিয়ে লাগছে।
একটা সময় আশিয়ানের ঘুম ভাঙলো।ঊদিতা টিপ্পনী কেটে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-অবশেষে মহারাজার ঘুম ভাঙলো।
আশিয়ান মুখ তুলে ঊদিতার তুলতুলে নরম গালে নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে অস্পষ্ট কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-হুমম,,,আজকের দিনটা অনেক স্পেশাল কেটেছে,,,থ্যাংকিউ সোনা বউ!উমমম,,(গাল কামড়ে ধরে)
ঊদিতা বিরবির করে বললো;
ঊদিতা:-লুচ্চামি লোকটার শিরায় শিরায় বহমান।
ঊদিতা আস্তে করে বললেও আশিয়ান শুনে ফেললো তা।মুচকি হেসে গালে ছোট ছোট চুমু দিয়ে বললো;
আশিয়ান:-অনলি ফর ইউ বেব,,,!
ঊদিতা এবার মুখ ভার করে বললো;
ঊদিতা:-আপনি আছেন আপনার ধান্দায়।এদিকে খিদেয় আমার পেট জ্বলে গেল।সেই সকালে হালকা নাশতা করেছিলাম।আর সারাদিনে পেটে কিচ্ছুটি পড়ে নি।এই আপনার ভালোবাসা বুঝি?রোমান্স দিয়ে পেট ভরবেন নাকি?
আশিয়ান ঊদিতার কথা শুনে শোয়া থেকে ওঠে বসলো।ঊদিতাকে বললো;
আশিয়ান:-একটু ওয়েট করো।আমি কিচেন থেকে খাবার নিয়ে আসি।
ঊদিতা:-কেন বাসায় আর কেউ নেই?
আশিয়ান:-সিকিউরিটি গার্ড ছাড়া বাকিদেরকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি।দুজনে একান্তে সময় কাটাবো বলে।
ঊদিতা মুখ বাকালো আশিয়ানের কথা শুনে।আশিয়ান শর্ট টাওজার পরিহিত অবস্থায় উদোম গায়ে রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল।ঊদিতার পরনে আশিয়ানের টি শার্ট আর নিজের প্লাজু।
মিনিট পাঁচেক পর আশিয়ান বিশাল একটা ট্রে তে করে খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।ঊদিতা শোয়া থেকে ওঠে বসেছে।আশিয়ান বিছানার পাশের টেবিলের ওপর ট্রে টা রাখলো।ঊদিতা গোঁ ধরে বললো;
ঊদিতা:-আমি নিজের হাতে খেতে পারবো না কিন্তু।খাইয়ে দিতে হবে।
আশিয়ান বেচারা কী আর করবে!বউয়ের আবদার তো রাখতেই হবে।হাত ধুয়ে এসে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ভাত মাখিয়ে লোকমা বানিয়ে ঊদিতাকে খাওয়াতে লাগলো সে।ঊদিতা গপগপ করে খেয়ে যাচ্ছে।ঊদিতাকে খায়িয়ে আশিয়ান নিজেও খেয়ে নিলো।তারপর রান্নাঘরে গিয়ে এটো থালাবাসন সব রেখে ফিরে এলো নিজের রুমে।
ঊদিতা বিছানায় বসে আশিয়ানের ফোন চেক করছে।আশিয়ান ঊদিতাকে নিজের কোলে নিয়ে বললো;
আশিয়ান:-আসো দুজন গোসল করে আসি সুইমিংপুল থেকে।
ঊদিতা ফোন রেখে বললো;
ঊদিতা:-নাহ,,আমি যাবো না।আমি সাঁতার কাটতে জানি না।পরে পানিতে ডুবে যদি মরে যাই?
আশিয়ান ঊদিতার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো;
আশিয়ান:-বোকা মাইয়া!আমি আছি কীসের জন্য তাহলে?আমি সাঁতার কাটা শেখাবো তোমায়!আর ভয় নেই তুমি ডুববে না।আমি আছি তো তোমার সাথে!
ঊদিতা মানা করেছিলো।কিন্তু আশিয়ান শুনলো না।জোর করে বাসার ছাদের সুইমিংপুলে নিয়ে এলো তাকে।ঊদিতাকে কোলে নিয়ে সুইমিংপুলে নামলো আশিয়ান।ঊদিতা আশিয়ানের গলা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কোলে ওঠে বসে আছে।ভয়ে পানিতে নামতে চাচ্ছে না।আশিয়ান ঊদিতার ভয় কাটানোর জন্য বললো;
আশিয়ান:-সুইমিংপুলকে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই ঊদিতা।বললাম তো তুমি ডুববে না।আমি আছি তো।দেখাে তোমার অনেক ভালো লাগবে।
ঊদিতা:-নাহ,,আমি সুইমিংপুলে গোসল করবো না।আমাকে মাটিতে ছেড়ে দিন।আমার ভয় করছে ভীষণ।(আতঙ্কিত হয়ে)
আশিয়ান কোনো কথা না বলে ঊদিতার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট আলতোভাবে লাগিয়ে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।ঊদিতা শক্ত করে আশিয়ানকে ধরে আছে।আশিয়ান লিপকিস করা অবস্থায়ই ঊদিতাকে নিয়ে পানিতে ডুব দিলো।ঊদিতা ভয়ে শেষ,,চোখ বন্ধ করে আশিয়ানের ঠোঁট কামড়ে ধরে সে।যদি আশিয়ান ছেড়ে দেয় তাহলে তো দমবন্ধ হয়ে যাবে তার।
প্রায় এক মিনিট পর পানির ওপরে ভেসে ওঠে দুজনের মাথা।আশিয়ান ঊদিতার ঠোঁট ছেড়ে দিয়েছে।ঊদিতা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে কাশতে লাগলো।আশিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে সে।আশিয়ান ঊদিতার ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে;
আশিয়ান:-স্বাভাবিক হও সোনা।আমার সাথে আরও অনেকবার সাঁতার কাটতে হবে তোমায়।তাই এখন থেকে অভ্যাস করে নাও।
আশিয়ান ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটলো।সাঁতার কাটার সময় রোমান্সও চললো সমানতালে।অতঃপর গোসল শেষে দুজন দুটো বাথরোব পড়ে রুমে চলে এলো।আশিয়ান যত্ন সহকারে ঊদিতার চুল মুছে দিলো।তারপর হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিয়ে ঊদিতার হাতে কাপড় ধরিয়ে দিলো পড়ে আসার জন্য।
ঊদিতা ওয়াশরুম থেকে কাপড় পড়ে এলো।আশিয়ান দুমগ কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে রুমে।ঊদিতার হাতে একটামগ ধরিয়ে দিয়ে নিজে একটা মগে চুমুক বসালো।দুজনেই বারান্দার দোলনায় এসে বসেছে।
(ছোট হয়েছে বলে কেউ মনখারাপ করবেন না প্লিজ।আর আজকের পার্টে তাদের দুজনের কিছু রোমান্স উল্লেখ করা হয়েছে।ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।এবং সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন বলে আশা করছি।হ্যাপি রিডিং গাইজ।)
চলবে…🍃