#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ৩৫ ||
আশিয়ান আর ঊদিতা আজকে সারাদিন রাত হসপিটালেই ছিলো।ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিনকে প্রচুর সাহস জুগিয়ে দিয়েছে।মিসেস ইয়াসমিন যেন মনে বল পেলেন।মিসেস ইয়াসমিনের পাশে বসে মিষ্টি স্বরে কোরআন তেলাওয়াত করে শুনিয়েছে ঊদিতা।
আল্লাহর কুদরতে ৫ দিন শেষে মিসেস ইয়াসমিনের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ আছেন।আশিয়ান আর ঊদিতা ডক্টরদের পাশাপাশি ওরাও মিসেস ইয়াসমিনের প্রচুর খেয়াল রেখেছে।আশিয়ান নামাজ পড়ে শুধু মায়ের জন্য মোনাজাতে কান্নাকাটি করতো প্রচুর।ঊদিতাও সেইম।তাশজিদ,এনা,তাহমিদ থেকে শুরু করে পরিবারের সবাই মিসেস ইয়াসমিনের সুস্থতার জন্য মনেপ্রাণে দোয়া করেছে।
মি.মোরশেদ এতিমখানায় শিশুদেরকে কাপড় চোপড় বিলিয়ে দিয়েছেন।আশিয়ান ৫ টা গরু জবাই দিয়ে প্রত্যেক গরীব ও হতদরিদ্র মানুষদের বিলিয়ে দিয়েছে।তাহমিদ আর তাশজিদও পথশিশুদেরকে টাকা পয়সা বিতরণ করেছে।উদ্দেশ্য একটাই,,,মিসেস ইয়াসমিনের সুস্থতা।তাসকিন মিসেস ইয়াসমিনের অসুস্থতার কথা শুনামাত্র ঘুরাঘুরি বাদ দিয়ে আলেয়াকে নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছে।
আজ পুরো একসপ্তাহ পর ডক্টর মিসেস ইয়াসমিনকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে দিলো।মিসেস ইয়াসমিন এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছেন।মি.মোরশেদ তো আড়ালে প্রিয়তমা স্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে কান্না করেছেন।সন্তানদের বাপ যদি এমন পাগল টাইপের হয় তবে বাচ্চারা কেমন হবে তা বোঝাই যায়।মিসেস ইয়াসমিন তৃপ্তির একটা হাসি দিলেন।তার সংসার পুরোপুরি পরিপূর্ণ।
বাসাটা আজ ভরা ভরা লাগছে ঊদিতার কাছে।অবশেষে ঘরে আগের সেই শান্তি ফিরে এলো।আশিয়ান খুশিতে ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করেছে।মায়ের সুস্থতার খুশিতে ছেলেটা পুরো পাগল হয়ে গেছে যেন।তাহমিদের সাথে ঝগড়া করে বাসায় এসেছে কেয়া।তাহমিদের সাথে গত ৩ দিন ধরে কোনো কথা বলে না সে।সে চায় নি বাপের বাড়ি যেতে,, তাও তাদের কথায় যেতে হয়েছে।মিসেস ইয়াসমিনকে জড়িয়ে ধরে হাঁপুস নয়নে কান্না করেছে সে এই দুঃখে।
খুশির খবরের মধ্যে আরেকটা খুশি হলো আলেয়া প্রেগন্যান্ট।মাত্র দেড়মাস চলছে তার।মিসেস তারানা তো খুশিতে আত্মহারা।বাসায় আত্মীয় স্বজনরা এসে মিসেস ইয়াসমিনকে দেখে গেলেন।সাথে আলেয়াকেও দোয়া করে গেলেন সবাই।
ঊদিতা আর কেয়া মিসেস ইয়াসমিনের প্রচুর খেয়াল রাখে।সাথে আলেয়ারও।আলেয়া এখন ঊদিতার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করে।হিংসা করে না আর সে ঊদিতাকে।এতে ঊদিতাও খুশি।কিন্তু তারিন ঊদিতাকে এখনও পছন্দ করে না।তবে আর ক্ষতি করার চেষ্টা করে নি সে তার।
আশা এসেছিলো মিসেস ইয়াসমিনকে দেখতে তবে একা নয়।সাথে তার ফিয়ন্সেও এসেছিলো।ছেলেটা অনেক ভালো।মিশুকও প্রচুর।বেচারি আশাকে আশিয়ানের আশা পুরোপুরি ছাড়তে হলো।ঊদিতা আগের থেকে আরও অনেক ম্যাচুয়ের হয়েছে।সে এখন পরিপূর্ণা সংসারী নারী।
ইলিয়ানাকে আসাদ ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে একমাস আগে।আসাদের প্রথম বউ ইলিয়ানার বাবার ওপর মামলা ঠুকে দিয়েছে।কারণ লোভে পড়ে বিবাহিত আসাদের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ওনি।আসাদের প্রথম স্ত্রী লন্ডনে ছিলো বিধায় ২-৩ বছর তারা শান্তিতে কাটিয়েছে।কিন্তু এখন ভদ্রমহিলা স্বামীর কাছে চলে এসেছেন।তাই ইলিয়ানার দিন শেষ।আসাদও তার প্রথম বউয়ের হাতের পুতুল।প্রথম স্ত্রীর কথায় সুরসুর করে ইলিয়ানাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে ইলিয়ানা একজন ডিভোর্সি মেয়ে।সেদিন আশিয়ান ইলিয়ানাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু পরে কী একটা মনে করে মনোভাব পাল্টায় সে।কারণ তার বিশ্বাস ছিলো আল্লাহর ওপর।এবং আল্লাহ ঠিকই এর বিচার করেছেন।একটা কথা আছে না,,লোভে পাপ,পাপে মৃত্যু!প্রবাদটা ইলিয়ানার সাথে অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে।
আশিয়ানের এতে কোনো আক্ষেপ নেই।সে তার বর্তমান নিয়ে অনেক ভালো আছে।ঊদিতাই এখন তার জীবনের সব।ভাগ্য করে মানুষ এমন স্ত্রী পায়।আশিয়ানের ব্যবসায়ের এখন আরও উন্নতি হয়েছে।সবকিছু নিয়ে অনেক ভালো আছে সে।
মিসেস ইয়াসমিনের পর তাহমিদ আর আশিয়ান জ্বরের কোপে পড়ে।ঊদিতা দিনরাত আশিয়ানের সেবা করেছে।টাইমলি খাবার খায়িয়েছে,ঔষধ দিয়েছে,গা মুছিয়ে দিয়েছে।টানা চারদিন জ্বরে ভোগে পরে সুস্থ হয় আশিয়ান।তাহমিদেরও সেবাযত্নে কোনো ত্রুটি রাখে নি কেয়া।ওরা হসপিটালে বেশি ছিলো তাই দুজনকেই ভাইরাস আক্রমণ করেছে।তাও ভালো গুরুতর কিছু হয় নি।শক্তসমর্থ যুবক হওয়ায় এবং অনেক সেবাযত্ন পাওয়ায় দ্রুতই সুস্থ হয়ে ওঠেছে দুই ভাই।
🍁🍁🍁
দেখতে দেখতে দেড়মাস পাড় হয়ে গেছে,,সময় যে কীভাবে যায় তা টেরই পাওয়া যায় না।সময় তার নিজ গতিতে স্রোতের মতো বয়ে চলে যায়।কারও জন্য থেমে থাকে না।
ইদানীং ঊদিতার প্রচুর বমি ভাব করে,,এমনকি কয়েকদিন ধরে বমিও হয়েছে।মাথা ঘুরায় খালি,,কোনোকিছুর গন্ধ সহ্য করতে পারে না।এমনকি পারফিউমের ঘ্রাণও না।আশিয়ান যখনই পারফিউম লাগাতে যায় তখনই ঊদিতা নাকে কাপড় দিয়ে বারান্দায় চলে যায়।আশিয়ান তো ঊদিতার এমন কান্ডে হতবাক।কারণ এর আগে ঊদিতা কখনো এমন করে নি।ঊদিতার শুধু টক খেতে মন চায়।যত রকমের আচার ছিলো বাসায় সব সে আর আলেয়া মিলে শেষ করেছে।আলেয়ার বর্তমানে সাড়ে তিনমাস চলছে প্রেগ্ন্যাসির।
আলেয়াকে সবাই প্রচুর যত্ন করে।দেখেশুনে রাখে তাকে।আগে তো এমনিতেই কোনো কাজ করতো না।এখন তো পানিটাও নিজে ঢেলে খায় না। মিসেস তারানা তো তাকে সবসময় মুখে তুলে খাবার খায়িয়ে দেন।এতটাই স্নেহ করে সবাই তাকে।এরকম শ্বশুর বাড়ি পেতে হলে কপাল লাগে কপাল।
আজ সকালে,
ঊদিতা বিছানার ওপর শুয়ে আছে।বিছানা ছেড়েও ওঠতে মন চাইছে না তার।আশিয়ান আজকে অফিসে যায় নি।এখনও ঊদিতার বুকে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।ঊদিতা এখন অলস হয়ে গেছে প্রচুর।কিছু করতে গেলেই বিরক্তি চলে আসে তার।অথচ এই সেই মেয়ে যে সারাদিন সারা বাসায় টইটই করে কাজকর্ম করে।নিজেকে দেখে মাঝেমধ্যে নিজেই অবাক হয়ে যায় ঊদিতা।সে তো আগে এরকম ছিলো না।তবে এখন এরকম হয়ে গেল কেন?
ঊদিতা আশিয়ানের চুল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে একমনে।এমন করায় আশিয়ানের ঘুম ভেঙে গেল।চোখ মুখ কুচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে ঊদিতার দিকে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে বললো;
আশিয়ান:-কী হয়েছে তোমার ঊদিতা?এমন করছো কেন?ঘুমাতে দাও প্লিজ!
ঊদিতা:-আমার কিছু ভালো লাগছে না।
আশিয়ান:-তাহলে বাইরে গিয়ে হাঁটো।নয়তো তোমার বাগানে যাও।দেখবে ভালো লাগবে তোমার।
ঊদিতা:-ধ্যাত,,,এসব কিছু করতে ভালো লাগছে না।
আশিয়ান এবার ঊদিতার থুতনি ধরে বললো;
আশিয়ান:-তাহলে এভাবেই শুয়ে থাকো।আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।
ঊদিতা আশিয়ানকে কিছু বলতে যাবে তখনই ওর পেট মোচড় দিয়ে গা গুলিয়ে ওঠলো।ওয়াক ওয়াক করতে করতে আশিয়ানকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করতে লাগলো সে বেসিনে।আশিয়ান অবাক হলো অনেক।হঠাৎ কী হলো মেয়েটার?
আশিয়ানও বিছানা ছেড়ে ওঠে দ্রুত ঊদিতার কাছে গিয়ে ঊদিতাকে ধরে পিঠে আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।বমি করতে করতে ঊদিতা ক্লান্ত।শরীরের শক্তি সব উধাও হয়ে গেছে তার বমি করে।আশিয়ান ঊদিতাকে আগলে ধরে তার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে কোলে নিয়ে বিছানায় এনে তাকে শোয়ালো।ঊদিতা একদম নেতিয়ে গেছে একবার বমি করে।আশিয়ান ঊদিতার গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-এই বউ,,,হঠাৎ করে কী হলো তোমার?
ঊদিতা কিছু না বলে পানি খেতে চাইলে আশিয়ান তাকে ধরে যত্ন সহকারে পানি খায়িয়ে দিলো।ঊদিতা আবারও ধপ করে শুয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।আশিয়ান ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঊদিতার জন্য।সে বুঝতে পারছে না হুট করে ঊদিতার কী হলো!
আশিয়ান:-কী হয়েছে তোমার সোনা?হঠাৎ বমি করলে কেন?
ঊদিতা:-জানি না।আমার গা গোলাচ্ছে শুধু।বমি ভাব হচ্ছে।
আশিয়ান:-ডক্টরের কাছে যাবে?
ঊদিতা:-নাহ,,,এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবো।
আশিয়ান ঊদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তার মাথায় একবারও আসে নি যে ঊদিতা প্রেগন্যান্ট হতে পারে।
আশিয়ান হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে ঊদিতার জন্য খাবার নিয়ে এলো।ঊদিতা বিছানায়ই শুয়ে আছে আগের মতো।আশিয়ান ঊদিতাকে মুখে তুলে খাবার খায়িয়ে দিলো।তারপর নিজে নাশতা করে নিলো।খাওয়ার পর ঊদিতার শক্তি ফিরে এলো যেন।এখন কিছুটা ভালো লাগছে তার।
আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে নিচে নেমে এলো।বাসায় আজ কমবেশি সবাই আছে।শুধু মি.মোরশেদ,মি.এনামুল ১৫ দিনের জন্য দেশের বাহিরে গিয়েছেন ব্যবসায়ের কাজে।তাহমিদ আর তামজিদ অফিসের কাজে বিজি।বাকিরা বাসায়ই আছে।তাসকিন সোফায় বসে আলেয়াকে ফল খাওয়াচ্ছে।ঊদিতাকে নিয়ে আশিয়ান অপর একটা সোফায় বসলো।
টি টেবিলের ওপর ফল আর চাকু রাখা আছে।আশিয়ান চাকু হাতে নিয়ে একটা আপেল কেটে ঊদিতাকে দিলো।ঊদিতা প্রথমে না করলেও আশিয়ানের ধমকে আপেলের পিস নিয়ে খেতে লাগলো।কেয়া কফি বানিয়ে নিয়ে এসে সোফায় বসলো।এনা এসে একে একে সবার হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে নিজেও একটা মগ নিয়ে সোফায় বসে পড়ে।ঊদিতা কফি না খেয়ে আলেয়ার মতো ফল খাচ্ছে।ভালোই লাগছে ফল খেতে।ঊদিতা সবার সাথে কথা বলতে বলতে প্রায় অর্ধেক ফল খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে।আশিয়ান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ঊদিতার দিকে।
আশিয়ানের এমন তাকানোতে হুঁশ ফিরে ঊদিতার।এতক্ষণে খেয়াল করে দেখে সে বহুত খেয়ে ফেলেছে।তবুও যেন আরও খেতে পারবে এমন অবস্থা।বেক্কলের মতো হেসে লাস্ট একটা আঙ্গুর নিয়ে মুখে পুরে দিলো সে।আশিয়ান ঊদিতার কপালে হাত ছুঁয়ে দিলো।বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-তোমার শরীর ঠিক আছে তো ঊদিতা?কী হয়েছে তোমার?তুমি তো কখনোই এত ফল খাও না!জোর করেও তো তোমাকে খাওয়ানো যায় না।
ঊদিতা হাতে হাত ঘষে আমতা আমতা করে বললো;
ঊদিতা:-কী জানি!মাঝে মাঝে খালি খেতে ইচ্ছা করে।
মিসেস ইয়াসমিন:-খাক না।সমস্যা কী?তাতেও যদি ওর স্বাস্থ্য আরেকটু বাড়ে।ওর বয়সের থাকতে আমি এরথেকেও বেশি খেতাম।
মিসেস তারানা:-তুই খা তো মা!ওর কথা শুনিস না।
ঊদিতা:-না থাক,,,পেট ভরে গেছে।
আশিয়ান কেমন করে যেন তাকালো ঊদিতার দিকে।ঊদিতার এমন অদ্ভুত বিহেভিয়ারের জন্য সন্দেহ হচ্ছে তার।তাসকিনের কথায় বাস্তবে ফিরে এলো সে,,মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো সন্দেহটা।
তাসকিন:-আশু,,,যাবি আজকে হাতিরঝিল?
আশিয়ান:-কীসের জন্য?
তাসকিন:-এমনি বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসলাম।
আশিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-বাচ্চাদের মতো কথা বলিস তাসু,,তোর বউ প্রেগন্যান্ট।ফালতু আড্ডায় সময় না কাটিয়ে এই সময়টা নিজের স্ত্রীকে দে।ভালো হবে।আর বেড়াতে ইচ্ছে করলে সামনের লেনগুলো থেকে আলেয়াকে নিয়ে হেঁটে আয় এতে আরও ভালো হবে।
মিসেস তারানা:-আশিয়ান তো ঠিক কথাই বলেছে রে!মেয়েটাকে নিয়ে বাইরে হেঁটে আয়।এই সময়টাতে হাঁটাহাঁটি করা অনেক ভালো।বাজে আড্ডায় যাওয়ার কোনো দরকার নেই।বউ বাচ্চাকে সময় দে।এখন তুই আর একা নস যে যখন ইচ্ছা হবে এখানে ওখানে চলে যাবি।
মিসেস ইয়াসমিন এবার এসব প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আশিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-আশিয়ান,,কিছু শুনেছিস তুই!
আশিয়ান:-কী শুনবো আম্মু?(জানতে চেয়ে)
মিসেস ইয়াসমিন:-তোর আদরের ছোট ভাই,,একটা মেয়েকে পছন্দ করে!
মিসেস ইয়াসমিনের কথা শুনে তাশজিদের বিষম লেগে গেল।এনা ঠাস ঠাস করে তাশজিদের মাথায় বারি মারলো বিষম নামার জন্য।তাশজিদ কটমট করে এনার দিকে তাকালো।এনা দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিলো।
আশিয়ান অবাক হয়ে গেছে মায়ের কথা শুনে।বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-কী বলছো আম্মু তুমি এসব?তাশজিদ কোন মেয়েকে পছন্দ করে?
মিসেস ইয়াসমিন:-তোর গুনধর ভাই কেয়ার মামাতো বোন তিশাকে পছন্দ করে।শুধু পছন্দ অবধি থেমে থাকে নি,,শুনলাম তাদের দুই বছর ধরে রিলেশনও আছে।
আশিয়ান এবার তাশজিদের দিকে তাকালো।তাশজিদ ভয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো।আশিয়ান আবারও বললো;
আশিয়ান:-ভাবী,,তিশা না মাত্র ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে!তবে এসব কেমনে কী?
কেয়া:-কী জানি ভাই!আমিও বুঝতে পারছি না আসলে।এসব আমার দেবরের কুকীর্তি।আমি নিজেও জানতাম না তাদের ব্যাপারে।তবে তিশা আমার ছোট বোন হেনার কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায় সব খুলে বলেছে।হেনা পরে আমাকে জানালো গতকাল।
আশিয়ান:-কী রে তাশজিদ?কী শুনছি এসব?(ভ্রু নাচিয়ে)
তাসকিন:-আরিব্বাস,,,!অবশেষে তাশজিদ মিয়া দেখা যায় ডুবে ডুবে জল খাচ্ছেন!হে,,,কী ব্যাপার!
তাজিম:-ছি ছি তাশজিদ,,,তোর এসব কান্ড দেখে আমার কচুগাছের সাথে ফাঁসি দিয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।তোকে তো আমি সহজসরল মনে করতাম কিন্তু তুই দেখা যায় অবশেষে কালপ্রিট বের হলি।শেইম অন ইউ তাশজিদ!
তাশজিদ পড়েছে মাইনকার চিপায়।এরা পঁচিয়েই ছাড়বে তাকে।লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তার।মনে মনে বলছে,,হে ধরনী,,মাটি ফাঁক হও আমি সেখানে ঢুকে যাই!
আশিয়ান:-তো এখন কী করার আম্মু?পাপা জানে তোমার ছোট ছেলের কুকীর্তির কথা?
মিসেস ইয়াসমিন:-নাহ,,বলি নি এখনো।চিন্তা করছি এ দুটোর আকদ করে রাখবো বর্তমানে।তারপর তাশজিদের ডক্টর হওয়ার পর বিয়ে।তিশাকে আমারও অনেক ভালো লাগে।মেয়েটা বড়ই মিশুক,ভদ্র আর আন্তরিক ঠিক আমার ঊদিতার মতো।তোর বাবা আসলে কেয়ার মামার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাবো।
তাশজিদ খুশিতে লুঙ্গি ড্যান্স দিচ্ছে মনে মনে।এত্ত খুশি সে জীবনেও হয় নি।তার আম্মু কত ভালো।কী সুন্দর কোনো আন্দোলন ছাড়াই রাজি হয়ে গেছেন।একটা বকাও খায় নি এই বিষয় নিয়ে।
আশিয়ান:-হুম ভালো হবে।
আরও বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো সবাই বসে বসে।ঊদিতার আবারও গা গোলাচ্ছে।তাই সে বসা থেকে ওঠে রুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়েই গরগর করে বমি করে দিলো।আশিয়ান ঊদিতার ফ্যাকাশে চেহারা দেখে পিছু পিছু রুমে এসে দেখলো ঊদিতা সকালের মতো এবারও বমি করছে।আশিয়ান চিন্তিত হয়ে পড়লো ঊদিতাকে নিয়ে।এত বমি করার কারণটা কী?বদহজম হয়েছে না অন্যকিছু?
ঊদিতা আবারও নেতিয়ে গেছে বমি করতে করতে।আশিয়ান কোলে নিয়ে পানি খায়িয়ে আবারও ঊদিতাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিলো।চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-আচ্ছা বমি কী আজকেই হচ্ছে নাকি আগে থেকে এই সমস্যা?
ঊদিতা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলো;
ঊদিতা:-বেশ কিছুদিন ধরে এমন হচ্ছে।বমি বমি ভাব করে সবসময়,বিশেষ করে ভাত খাওয়ার সময়।বমিও হয়েছে বেশ কয়েকবার।নাকে খালি উদ্ভট গন্ধ এসে লাগে।বুঝতে পারি না এমন কেন হচ্ছে!
আশিয়ানের এবার সন্দেহটা আরেকটু গাঢ় হয়।বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে;
আশিয়ান:-আচ্ছা তোমার কী এই মাসে পিরিয়ড হয়েছে?
ঊদিতা:-এসব কী জিজ্ঞেস করছেন আপনি উল্টা পাল্টা?বেশরম লোক!
আশিয়ান:-তুমি বলো তো!আমি সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করছি,,এখন ফাইজলামি করার মুডে নেই।
ঊদিতা মুখ গোমড়া করে জবাব দিলো;
ঊদিতা:-দু মাস ধরে হচ্ছে না।জানি না কেন!আমার ভয় লাগছে অনেক।মনে হচ্ছে মরার সময় চলে এসেছে।নয়তো এসব কী হচ্ছে আমার সাথে বলুন তো?
আশিয়ান:-বোকা মাইয়া।আসলেই তুমি হাঁদা।শুয়ে থাকো,,আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।
ঊদিতা:-কোথায় যাচ্ছেন?
আশিয়ান:-ফার্মেসিতে।নো মোর কুয়েশ্চন!ওকে?
এই বলে আশিয়ান মুখে মাস্ক লাগিয়ে হুডিওয়ালা জ্যাকেট পড়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল।ঊদিতাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ দিলো না।ঊদিতা শুয়ে রইলো আগের মতো।
প্রায় ১৫ মিনিট পর আশিয়ান ফিরে এলো একটা প্যাকেট হাতে।আশিয়ানকে দেখে ঊদিতা ওঠে বসলো।ঊদিতার হাতে প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো আশিয়ান।ঊদিতা প্যাকেট খুলে এর ভেতর আরও ৫ টা ছোট ছোট প্যাকেট পেল।আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-এসব কীসের প্যাকেট?
আশিয়ান:-প্রেগ্ন্যাসি কিট।
ঊদিতা:-বুঝলাম না।
আশিয়ান:-একটু পর বুঝতে পারবে।এখন টেস্ট করে দেখবো আমার সন্দেহ সঠিক কী না।
আশিয়ানের কথা ঊদিতার মাথার ওপর দিয়ে গেল।সে কিছুই বুঝতে পারে নি আশিয়ানের কথা।আশিয়ান নিয়ম অনুযায়ী প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে ঊদিতাকে টেস্ট কীভাবে করতে হবে তা বুঝিয়ে দিলো।ঊদিতা আশিয়ানের কথা মতো তিনটা স্টিক দিয়ে টেস্ট করলো।তারপর স্টিকগুলো আশিয়ানের হাতে এনে দিলো।আশিয়ান স্টিক তিনটির দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।তিনটা স্টিকেই দুটো করে লাল রেখা স্পষ্ট ভাবে ফুটে ওঠেছে।প্রেগন্যান্সি পজিটিভ।মানে ঊদিতা মা হতে যাচ্ছে।
আশিয়ানের চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে আনন্দে।স্টিক তিনটি হাতে রেখেই ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরে সে।ঊদিতা বুঝতে পারলো না কিছু।আশিয়ানের পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে;
ঊদিতা:-কী হয়েছে আপনার?কিছু তো বলুন!আমি গোলকধাঁধায় আছি মনে হচ্ছে।
আশিয়ান ঊদিতার কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠে;
আশিয়ান:-তুমি মা হতে যাচ্ছো ঊদিতা!তোমার পেটে আমার সন্তান বেড়ে ওঠছে।
আশিয়ানের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে যেন ঊদিতা।তার বিশ্বাস হচ্ছে না আশিয়ানের কথা।আবারও জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-কী বললেন আপনি?আবার বলুন প্লিজ।
আশিয়ান এবার টেবিলের ওপর কিটগুলো রেখে ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে ওপরে তুললো।আশিয়ানের মাথা বরাবর ঊদিতার মাথা হতেই ঊদিতার কপালের সাথে কপাল লাগায় সে।হাসিমুখে বলে উঠে;
আশিয়ান:-আমাদের পিচ্চি একটা বেবি আসবে ঊদিতা।সে তোমাকে আম্মু ডাকবে আর আমায় ডাকবে পাপা।বুঝতে পারছো তুমি?আমার অনেক খুশি লাগছে ঊদিতা,,,তুমি আমাকে অনেক বড় একটা খুশির খবর দিলে।এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না।
খুশিতে ঊদিতা কেঁদে দিয়েছে।এতদিন বাচ্চার জন্য মাথা খেয়েছে আশিয়ানের।আর আজ সেই স্বপ্নটা পূরণের পথ পেয়ে গেছে।ঊদিতা আশিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো;
ঊদিতা:-উফফ,,,আমার অনেক বেশি আনন্দ হচ্ছে এ কথাটা শুনে।আমিও মা হবো,,,ইশশ কী যে ভালো লাগছে।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমার ইচ্ছেটা পূরণ করে দেয়ার জন্য।
(কে যেন বলেছেন ঊদিতার ক্যারেক্টারটা স্টার জলসার নায়িকাদের মতো।তারমানে আমিও স্টার জলসার নায়িকা,,,ওয়াও,,ভালো তো।আমিও ঊদিতার মতো এরকম আন্তরিক আর পরোপকারী ব্যক্তি,,আমি কিন্তু নিজের প্রশংসা করছি না বাট এটা সত্যি কথা।দুনিয়ার সব মেয়েরা খারাপ হয় না কিন্তু।এটা মনে রাখবেন।আর কে যেন বলছেন আমি করোনার ব্যাপারে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছি।করোনা হলো আল্লাহর তরফ থেকে আগত মহামারী।আমি একদম প্রথম থেকেই কখনোই করোনাকে ভয় পাই না,,কারণ আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী।করোনাতে যদি আমার মৃত্যু লেখা থাকে তাতেও আমার কোনো আক্ষেপ নেই।আর আমি মনে করি গল্পকে গল্প বলেই ট্রিট করা বুদ্ধিমানের কাজ।এতে কেউ বাস্তবতা খুঁজতে যাবেন না প্লিজ।আমার কথায় কারও খারাপ লেগে থাকলে দুঃখিত।আমি কাউকে কষ্ট দেয়ার মনোভাব নিয়ে কথাগুলো বলি নি।এনিওয়ে,, হ্যাপি রিডিং গাইজ।)
চলবে…🍃