#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_২৫
Tahrim Muntahana
সূর্যটা বিশাল আকাশের বুক থেকে বিদায় নিয়েছে কিছুক্ষণ হলো। চিরবিদায় নয় ক্ষণস্থায়ী বিদায়! সে আবার এক বুক ভালোবাসা নিয়ে আকাশের বুকে নিজের ঠিকানা সবার মাঝে তুলে ধরবে। প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগবে আকাশ শুধুই তার। কিন্তু প্রমাণ করার সময় তো সন্ধ্যা পযর্ন্তই। তারপর! বিশাল এই আকাশের বুক থেকে সূর্যকে সরিয়ে দিয়ে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে চাঁদ। লড়াই! এটাকেই হয়তো ভালোবাসার লড়াই বলে। কিন্তু একজনের বুকে তো দুইজন থাকতে পারেনা। আকাশের বুকে চাঁদ-সূর্য নিজের রূপ পাল্টে অবস্থান করে। দিনের বেলা সূর্যটা দুনিয়া আলোকিত করে ; রাতের বেলা চাঁদটা দুনিয়া অন্ধকারমুক্ত করে! ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আলোতেই! তেমনি হৃদানের বুকে আদর কখনো হাসি খেলে বাচ্চামো করে অবস্থান করে; আবার হুট করে দারুণ ম্যাচিউরিটির পরিচয় দিয়ে অবস্থান করে। হুট করেই তার বুকে ঝড় তুলে দেয়। যেই ঝড়ে তার মনকুঠিরে একরাশ সুখ এসে কিলবিল করে। ডানা মেলে উড়তে ইচ্ছা করে স্বাধীন পাখিদের মতো। উহু, একা নয়! বুকে তে অবস্থান করা মানবীটাকে নিয়ে! হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে গভীর অরণ্যে। যেখানে আর কেউ থাকবে না। হঠাৎ কোনো অজানা লতার মাঝে প্যাঁচিয়ে পড়লে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিবে। মুক্ত করবে বেড়াজাল থেকে!
ব্রেকফাস্ট করেই গ্রাম দেখতে বেড়িয়েছে সবাই। সাথে নাহার যোগ দিয়েছে। গ্রামের সৌন্দর্যটা চোখে বাঁধার মতো। শীত কালের কিছুটা সময় বাকি থাকলেও সূর্যের তীব্রতার জন্য বুঝা বড় দায়। আবার শেষ রাতের দিকে হালকা ঠান্ডায় আগমন ঘটার ইঙ্গিত দেয় শীত। ছোট ছোট ধান গাছ দিতে ভরে গেছে গ্রামের অনেকটা অংশ। আবার কিছু কিছু স্থানে নানান রকমের শাক-সবজির চাষ। আহা দৃশ্য। বাতাসের ঝাপ্টাই সূর্যের কিরণ ততটা গায়ে লাগছে না। ভালোয় লাগছে পরিবেশটা।
হৃদান তারিমের হাত টা শক্ত করে ধরে হাটছে। আজ বোনকে কিছুতেই একা ছাড়বে না এই পণ ই করেছে। সেদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর পর বিরক্তির শ্বাস ফেলছে আতইয়াব। এই মুহুর্তে হৃদান চৌধুরীর মাথাটা ফাটাতে ইচ্ছে করছে তার। মাথাটা দু ভাগ করে দেখতে ইচ্ছে করছে আর কি কি প্ল্যান করে রেখেছে তাকে তার বউ থেকে আলাদা করার। প্ল্যান গুলোকে হাতে কচলে শেষ করে তবেই মাথাটা ঠিক করে দিবে। কিন্তু নাহ! এটা হওয়ার নাহ! মাথা দুভাগ করলে মানুষ বাঁচবে! নিজের মাঝেই হাজার টা আফসোস নিয়ে নিজের বোনের সাথে হেটে চলছে সে। হৃদান একটু পর পর আদরের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে। ভাই সাথে বলে কি তাকে ভুলে যাবে? এটা কেমন কথা? একটু মায়া দয়া নেই এই মেয়ের মনে। শুধু বিয়েটা হতে দেরী তারপরেই বুঝাবে সে! কথাগুলো ভেবেই বাঁকা হেসে তাকালো আতইয়াবের দিকে। মুহূর্তেই তার মনটা পুলকিত হয়ে গেলো। আহা আতইয়াবের মুখটা দেখার মতো! বউ কে কাছে না পেয়ে পানি ছাড়া পান্তা ভাতের মতো লাগছে। এতেই তো শান্তি!
দুপুরের আগেই চলে এসেছে সবাই। নাসির চৌধুরী ফোন দিয়ে জরুরি তলব করেছে। মিসেস রেহানা রান্না শেষ করে বসে আছে ; ওদের ছাড়া একটা দানাও মুখে তুলবে না। কথাটি শোনার পর হৃদান এত খুশি কেন লাগছে সে বুঝতে পারছে না। আপনজন দের একটু যত্নতে এত শান্তি? তারিম তো তাও একটি পরিবারে বেড়ে উঠেছে কিন্তু হৃদান! সেই পনেরো বছর থেকে একা একা স্ট্রাগল করে আসছে। যখন বাবা-মার সাথে আনন্দে ঘুরে বেড়ানোর কথা তখন সে নিজেকে শক্ত করেছে। বাঁচার তাগিদে ছুটে বেড়িয়েছে। তারিমের হাতের ধাক্কায় ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে হৃদান। চাপা শ্বাস ফেলে এগিয়ে যায় ডাইনিংয়ের দিকে। হৃদান কে দেখেই মিসেস রেহানার চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। যত্ন সহকারে এটা ওটা তুলে দেয়। হৃদানের চোখও ছলছল করে উঠে। আজ তার মা থাকলে সেও এমন যত্ন করে খাওয়াতো বুঝি! ভাইয়ের চোখে স্বস্তি দেখে তারিম হাসে। প্রাণখোলা সেই হাসি। যে হাসিতে ভালোবাসাটা প্রখর ভাবে প্রকাশ পায়।
সূর্য অস্ত যাওয়ার অনেকটা সময় বাকি। প্রকৃতি নরম; শান্ত হয়ে আছে। গ্রামীণ এই পরিবেশে বাঁশ ঝাড়ের মাথায় হালকা রোদ খেলা করছে। একটু পর তাও মুছে যাবে। সূর্যের যাওয়ার তাড়া যেন ব্যপক। ঠিক এই সময়টাই হন্তদন্ত হয়ে চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করলো পিয়াস। ঘামে জুবুথুবু হয়ে আছে। এ অসময় পিয়াস কে দেখেই রোহানির মন পুলকিত হয়ে গেলো। খুব মিস করছিলো মানুষটাকে। নিজ উদ্যোগে রান্না ঘরের দিকে ছুটলো সে। উদ্দেশ্য শরবত বানাবে পিয়াসের জন্য। পিয়াস এসেই হৃদানের ঘরটাই ঢুকে পড়েছে। সবাই সেখানেই ছিলো। ঘরে ঢুকেই কাত হয়ে শুয়ে পড়ে সে। শরীর চলছে না। আদর কৌশলে নাহার কে ঘর থেকে বের করে দিলো। পিয়াসের হাত থেকে ফাইল টা নিয়ে দেখতে লাগলো। চোখ অজানা খুশিতে চিকচিক করে উঠলো। শুধু একটা থানা না চারটে থানায় নাসির চৌধুরী কেইস করেছিলো। কোনো ফল আসেনি। হৃদান চাতক পাখির মতো আদরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো সে চাইছে তাদের এখনকার ভাবনা টা সত্যিই হোক। আদর এতটা খুশি হয়েছে যে সে কথা বলতে পারছে না। ঘন ঘন মাথা নাড়িয়ে বুঝাতে চাইলো। কেউ না বুঝলেও হৃদান কিছুক্ষণ আদরের মুখের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। আদর নিজেও হাসতে হাসতে হৃদানের পিছু নিলো। কেউ কিছু বুঝলো না। আতইয়াব তারিমের হাতটা ধরে আছে শক্ত করে। সে জানে তার বউ এখন কাঁদবে। কিন্তু তার যে কষ্ট হয়। সবাই ঘর থেকে বের হওয়ার পর শান্ত সুরে আতইয়াব বললো,
একটু পর যা হবে তোমার চোখ থেকে যেন এক ফোঁটা পানি না পড়ে। মনে থাকবে?
তারিম হয়তো বুঝে ফেলেছে। এক ঝটকাই হাত ছাড়িয়ে দরজা খুলে বাইরে চলে গেলো। আতইয়াব দীর্ঘশ্বাস ফেললো আজ আরো একটা পরিবার এক হবে। ভালোবাসা বিনিময় হবে। হৃদয় পুড়বে তার! বউয়ের চোখের পানি তার সহ্য হয় নাহ! নিজেও নিচে যাওয়ার জন্য হাটা ধরলো।
ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো নাসির চৌধুরী। গ্রামের কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসেছে গ্রামের উন্নতির জন্য কথা বলতে। সড়ক মেরামত করতে চায়ছে কিন্তু বাজেটে কুলাচ্ছে না। হঠাৎ হৃদান কে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে কিছুটা বিচলিত হয় সে। হৃদান কিছু না বলেই নাসির চৌধুরীর পা ঝাপটে ধরে কোলে মাথা রাখে। থমকে যায় নাসির চৌধুরী। ততক্ষণে মিসেস রেহানা ও নাহার ও চলে এসেছে। মিসেস রেহানা অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ফুপিয়ে কাঁদছে হৃদান! চমকে উঠে আদর। চিনচিন ব্যাথা করছে তার বুকে। এত শক্ত মানুষটার চোখে পানি সে মানতে পারছে না। ঘুরে দাড়িয়ে রইলো ঠোঁট কামড়ে। সে এখন কাঁদলে সবাই ছিঁচকাদুনে বলবে আবার। সে একটু না হয় বেশীই কাঁদে; কিছু হলেই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদে তাই বলে সে ছিঁচকাদুনে নয়!
আচমকা সবাইকে অবাক করে দিয়ে হৃদান ডেকে উঠলো,
বড়বাবা!
আহ কি মধুর ডাক। প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো! নাসির চৌধুরী যেন স্বপ্ন দেখছে। নড়ার শক্তিও সে পাচ্ছে না। গ্রামের মানুষজন ও অবাক হয়ে দেখছে। হৃদান আবার বলে উঠলো,
বড় বাবা আমি তোমার ছোট ভাইয়ের সেই ছোট্ট ছেলে! হৃদান! আমাকে ক্ষমা করে দাও বড়বাবা আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি!
নাসির চৌধুরী কাঁপা কাঁপা হাতে হৃদানের মাথায় হাত রাখলো। তার চোখ থেকেও পানি পড়ছে। মিসেস রেহানা দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরে কেঁদে উঠলো। আজ অনেক বছরের কষ্টের সমাপ্তি ঘটছে! অনেকক্ষণ কাঁদার পর হৃদান তারিম কে ওদের সামনে নিয়ে বলল,
ও আমার বোন; হৃদযা চৌধুরী। যাকে হারিয়ে ফেলিছিলাম!
বুকে টেনে নিলো নাসির চৌধুরী। নাহার তো টাশকি খেয়ে দাড়িয়ে আছে। হৃদান চৌধুরী তার কাজিন সে যেন বিশ্বাস ই করতে পারছে না। হৃদান নাহারের মাথায় হাত রেখে মুচকি হাসলো। জড়িয়ে ধরলে তার গর্দান যাবে কোনো সন্দেহ নেই! গ্রামের সবাই এখনো রয়ে গেছে। একটু একটু বুঝেছে তারা। নাবিল চৌধুরী ছেলে মেয়ে পেয়ে তারাও মন ভরে দোয়া করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর হৃদান আদরের সামনে গিয়ে দাড়ালো। সবার সামনে ঝাপটে ধরে বলে উঠলো,
থ্যাংকস থাংকস থাংকস মাই কুইন। তোমার জন্য আমি আমার পরিবার পেয়েছি। আই লাভ ইউ সো সো সো মাচ। নিজের পরোয়া না করলেও আমি তোমার পরোয়া করি। ভালোবাসি আন্ডাবাচ্চা; খুব ভালোবাসি!
আদর লাজুক হাসলো। খুশিতে সবার সামনে কি করছে হৃদান নিজেই জানেনা! নাসির চৌধুরী কেশে গলা ঝাড়লেন। হৃদান ফট করে আদর কে ছেড়ে দিলো। মাথা চুলকে হাসলো সে। আদর নাসির চৌধুরী সামনে গিয়ে বলল,
আমাদের অনেক কিছু জানার আছে আংকেল!
নাসির চৌধুরী সোফায় বসলেন। চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবাই কে হাত দিয়ে ইশারা করলেন বসার জন্য। বসলো সবাই। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
আমি আর নাবিল আহনাফ ছিলাম বন্ধুর মতো তিন ভাই। আহনাফ আমাদের খালাতো ভাই। তিন জন কেউ কাউকে ছাড়া থাকতাম না। আহনাফের বাড়ি গ্রামের শেষ মাথায়। আমাদের বাড়িতেই থাকতো বেশী। আহনাফের দুই বোন। রিদিমা, রিনিশা। নাবিল আর রিদিমার সম্পর্ক ছিলো জানতাম না আমরা। রিদিমার বিয়ের দিন পালিয়ে যায় ওরা। গ্রামের সবার সামনে এত অপমান মানতে না পেরে স্ট্রোক করে মারা যায় খালা। খালু হিংস্র হয়ে উঠে নাবিলের ক্ষতি করার জন্য। আমি ওকে লুকিয়ে থাকতে বলি। ঘর আলো করে হৃদান আসে। দেখতে যেতে পারিনি। হৃদযা হয়। রিদিমা মারা যায় হৃদযা কে জন্ম দিতে গিয়ে। তখনো নাবিল কে মারার জন্য খুঁজতে থাকে খালু। এর মধ্যে ঘটনা ঘটে রিনিশা কে নিয়ে। রিনিশা নিজেও নাবিল কে পছন্দ করতো কেউ জানতাম না। ওর কথাতেই খালু এতটা হিংস্র হয়ে উঠে। জমিদার দের রক্ত হিংস্র জানোতো! আহনাফ বোনকে খুব ভালোবাসতো সাথে বন্ধু কে। মেনে নিয়েছিলো। খুঁজে বের করে। আমি জানতাম না। এর মধ্যেই খালু ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মারা যায়। তারপর দিন ই রিনিশা বিয়ে করে পাশের এলাকার হিয়ান কে। চলে যায় দূরে। কিছুই মাথায় ঢুকছিলো না। এত শোক কাটিয়ে উঠেছিলাম প্রায়। ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ হতো প্রায় ই। একদিন হঠাৎ করে খবর আসে আমার ভাই আর নেই। কারা যেন মেরে ফেলেছে। ছেলে-মেয়ে দুটোও নেই।ছুটে যাই শহরে। ভাইয়ের লাশ টাও দেখতে পারিনি। কেইস করলাম। কোনো ফল পায়নি। আহনাফ আসলো একদিন। সে হৃদান কে পেয়েছে। আমার কাছে নিয়ে আসবে। কিছুদিন পর তারও নিখোঁজ সংবাদ দিশেহারা হয়ে যাই। আমার উপরেও হামলা হয়। সেদিন মালি ছিলো বলেই রক্ষা। এরপর থেকে একবুক কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি। কিছুদিন আগেই খবরের কাগজ পড়ে জানতে পারি। আদর আহনাফের মেয়ে! আর তুমি আমার ভাইয়ের রক্ত! কিন্তু পরিচয় দিতে পারছিলাম না। কোন মুখে দিবো। অপরাধী লাগছিলো।
সবার চোখেই অবাকতা। এত কিছু! আদর রিয়া কে দেখিয়ে দিয়ে বলে,
আমি না; রিয়া আপু হলো আহনাফ আংকেলের মেয়ে। আমি জার্নালিস্ট রাতাফ আহমেদের মেয়ে!
সব ঘটনায় খুলে বললো আদর। সবাই কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো। হুট করে হিমেল বলে উঠলো,
আংকেল আপনি কোন হিয়ানের কথা বললেন? রিনিশা? হিয়ান খান- রিনিশা আনসারী তো আমার বাবা-মায়ের নাম!
চমকে উঠলো সবাই। নাসির চৌধুরী বলে উঠলো,
তোমার বাবা-মায়ের ছবি আছে?
হিমেল নিজের ফোন বের করে ছবি দেখাতেই নাসির চৌধুরী বললো,
এরা দুজনই তো। রিনিশা তো চৌধুরী; আনসারী কেন হবে? আর হিয়ান তো খান না; হিয়ান শিকদার বংশ।
মানে হাসান শিকদার আর হিয়ান শিকদার ভাই?
নাসির চৌধুরীর কথা শুনেই আতইয়াব কথাটি বলে উঠলো; এখন একটু একটু করে সব রহস্যের জট খুলছে। এর মধ্যে পান্চু বলে উঠলো,
হিয়ান-রিনিশা যদি এত দেরী করে বিয়ে করে হিমেল কি ওদের সন্তান না?
পান্চুর কথায় যেন বাজ পড়লো সবার মাথায়। এটা তো ভেবে দেখেনি কেউ। হিমেল নিজেও অবাক। আদর পান্চুর গাল টেনে দিলো বাচ্চাদের মতো। হাসতে হাসতে টাক মাথায় হাত বুলিয়ে ভাব নিলো সে। পিয়াস চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
আমার মনে হয় এই হিয়ান খান আর তার স্ত্রী রিনিশা কে ধরতে পারলেই সব কিছু জানতে পারবো আমরা। আহনাফ আংকেল কেউ খুঁজে পাবো!
সবাই মাথা নাড়ালো। বিষাদ মুখে বসে রইলো নাসির চৌধুরী। ভাইয়ের কথা মনে হলে খুব কষ্ট হয় তার। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে একাই এখন আছে। একজন নেই; আরেকজন নিখোঁজ! হৃদান তার বড় বাবার দিকে তাকিয়ে বুঝলো ব্যাপারটা। মানুষটা কম কষ্ট পায়নি। মুচকি হেসে বলে উঠলো,
তোমার মুড ঠিক করতে কি এখন বউয়ের চুমু লাগবে? না যে প্রেম তোমাদের! দেখলেই মাথায় আগুন জ্বলে; আমি এখনো বিয়েই করতে পারলাম না!
মিসেস রেহানা লজ্জা পেয়ে চলে গেলেন। নাসির চৌধুরী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ছেলে যে প্রেমে পড়ে নিলর্জ্জ হয়ে গেছে সে ঢের বুঝতে পারছে। কিছু না বলেই উঠে চলে গেলো। না তার আসলেই বউ কে লাগবে মনে হচ্ছে। তিনি চলে যেতেই সবাই একসাথে হেসে উঠলো। হৃদানের ভালো লাগছে বড়বাবার মুড ঠিক করতে পেরে! আবার সবাই প্ল্যান করতে বসলো। মিসেস রেহানা সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। হৃদান বলল,
বড়মা তোমাদের জমিদারদের নাকি শাস্তি দেওয়ার জন্য আলাদা ঘর থাকতো। এখন নেই?
আছে তো বাপ। ওইযে নিচের ওই করিডরের সব্বার শেষের বড় ঘরডা। এহন বন্ধ থাকে বাপ।
বলেই মিষ্টি হেসে চলে গেলেন। হৃদান বাঁকা হাসলো। সবাই বুঝতে পারলো এবার তারা আগের হৃদান চৌধুরী কে দেখবে!
চলবে,,,?