#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ৫
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
কান্নার চোটে অবশেষে বাধ্য হয়ে আমাকে উনার ঘরে যান। উনার ঘরটা খুব সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো। ঘরে কি কি আছে সেগুলো দেখে আমার কাজ নেই। আমার মেইন প্রব্লেম হচ্ছে, এই হাদারাম মহব্বত আলি কি বুঝে না বিয়ের দিনে বরের ঘর ফুল দিয়ে সাজানো লাগে। জীবনে এটা প্রথম বিয়ে তাই হয়তো অভিজ্ঞতা নাই কিন্তু জীবনে কখনো কারো বিয়ে দেখে নি নাকি?
এতো গুলো প্রশ্ন পেটের ভিতর চেপে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই উনাকে বললাম,, আচ্ছা আপনি বাসোর ঘর সাজান নি কেন। আমার কত সখ ছিলো রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে আমার বাসোর ঘর সাজানো থাকবে আর বিছানা জুড়ে ছড়ানো ছিটানো থাকবে টিউলিপ। উউফ কি গীবন আমার কিচ্ছু হলো না,,,,
তুর্জ ইয়ায়া বড় বড় চোখ বের করে আমাকে বললেন,, আচ্ছা সেই দিন তোমার বয়স যেন কত বলছিলে??
ওওমায়া আপনি আমার বার্থডে সেলিব্রেট করবেন? ইইশস কি রোমান্টিক আপনি,, আগামী মাসে সতেরো তারিখে ষোল বছরে পা দিবো।
এই থামো থামো থামো,, সব সময় এতো বেশি বুঝো কেন তুমি? তোমার বয়স জানতে চেয়েছি তোমার বার্থডে সেলিব্রেট করার জন্য না। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তুমি কিভাবে কিভাবে বাসোর ঘর সাজাবে সেই প্ল্যান করে রাখছো তা ভেবে। বাই দ্যা ওয়ে,,,, গীবন মানে কি??
আরে বুদ্দু বুঝলেন না,,, জীবন = gibon. কিন্তু g তে জ এর উচ্চারণ না হয়ে গ এর উচ্চারণ হয়। অতএব
gibon= গীবন।
এই মেয়ের সাথে কথা বললে নির্ঘাত আমি পাগল হয়ে যাবো।
উনি ফোন টা বিছানার উপরে রেখে ওয়াশরুমে চলে গেছে। আমি ঘরটা একটু ভালো করে দেখলাম। ঘরের আনাচে কানাচে আভিজাত্যের ছোয়ায় পরিপূর্ণ। বেডের সামনে সেন্টার টেবিলের উপরে মহব্বত আলির একটা ঝাক্কাস পিক ফ্রেমে বাঁধানো। ইশ যত দেখছি তত প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।
বিছানার উপরে ফোনটা বেজেই চলেছে। ভাবলাম ফোন টা রিসিভ করি। এমন সময় উনি খট করে শব্দ করে বাইরে চলে আসেন। তারপর ফোন হাতে বারান্দায় চলে যায়। মনে হয় কোন ঝামেলা হয়েছে। উনি কাউকে বোঝাতে চাইছেন, এতে তার কোন দোষ ছিলো না। কিন্তু অপর প্রান্তের লোক হয়তো তা মানতে নারাজ। যাক বাবা যা হয় হোক ওইসবে আমার কান দিয়ে লাভ নেই। আমি বিছানার উপরে চুপচাপ সুয়ে আছি। উনি এখনো ফোনে কথা বলেই চলছে। উফফ বিরক্ত লাগছে। কতটা ব্যাক্কেল হলে বউ রেখে ফোনে কথা বলে।
আমি বিছানা থেকে উঠে বারান্দার পাশে যেতেই শুনতে পেলাম,, দেখো তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না। মেয়েটা এখনো অনেক ছোট,এই বয়সে এমন কলঙ্ক নিয়ে থাকলে তার ভবিষ্যত শেষ হয়ে যেতো। আর তুমি আমাকে এতো দিনেও চিনো নাই? মেয়েটা বড় হলে সময়ের সাথে এই ঘটনা টা চাপা পড়ে যাবে। তখন সে নিজের ভালো মন্দ বুঝে এমনই চলে যাবে। আর তুমি ভাবলে কিভাবে এইটুকু পিচ্চি মেয়েকে আমি বউ হিসেবে মেনে নিবো।
আর কিছু শুনতে হবে না। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি উনি আমাকে মন থেকে বিয়ে করেন নি। আর উনার গার্লফ্রেন্ড আছে। আমাকে শুধু মাত্র করুনা করেছেন। উনি আমাকে বউ হিসেবে মানেন না এটা আমি নিতে পারছি না। বুকের কোথায় যেন ব্যাথা করছে। আমি চুপচাপ গুটিসুটি মেরে আবারও বিছানার এক কোণে সুয়ে, কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেছি। আমি ঘুমানোর আগ পর্যন্ত উনি বারান্দায় ছিলেন। জানিনা কখন কথা শেষ হয়েছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রুমে নাই। বিছানায় দুটো বালিশ ছিলো কিন্তু এখন দেখি একটা। হয়তো উনি অন্য বালিশ নিয়ে পাশের কোন রুমে গেছেন। আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। আমি নিচে যেতেই দেখি মা আমাকে ডাকার জন্য উপরে আসছিলেন। আমাকে দেখে মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নিজে নিজে এতো সকালে ঘুম থেকে উঠো তুমি?
হ্যাঁ মা, প্রতিদিন সকালে স্কুলে যেতে হতো তাই আমার মামুনি সকালেই ঘুম থেকে ডেকে দিতেন। তা থেকেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। স্কুলের কথা মনে হতেই মন খারাপ হয়ে গেলো। মা আমাকে নিজে হাতে খাইয়ে দিলেন। মামুনির সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। কাল সন্ধ্যার পরে কথা হয়েছিল তার পরে থেকে আর কথা হয় নি। মা হয়তো আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছেন।
মা আমার হাতে ফোন দিয়ে বলে, নাও তোমার মামুনির সাথে কথা বলো।
আমি মামুনিকে ফোন করতেই ওপাশ থেকে মামুনি বলে, তোর বাবাই তোর বই নিয়ে যাচ্ছে ওখানে। কাল থেকেই আবারও স্কুলে যাবি। আমি কাল রাতে তোকে দেখতে যাবো। মামুনির জন্য খুব মন খারাপ লাগছে তাইনা। আমার সোনা মেয়েটা, মন খারাপ করে না। যখন মন চাইবে তখনই আমাদের কাছে চলে আসবি আচ্ছা। রাতে তুর্জের এমন কথা শোনার পরে থেকে প্রচুর মন খারাপ ছিলো তাই এখন মামুনির আদর পেয়ে কান্না বেরিয়ে আসে। আমি কোন কথাই বলতে পারছি না। শুধু কান্না করে চলেছি। মা আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু তাতে মনে হচ্ছে কেউ আগুনে ঘি ডালছে।
মায়ের কোলে মাথা দিয়ে ড্রইংরুমের সোফাতে সুয়ে থেকে টিভিতে কার্টুন দেখছিলাম। দীর্ঘক্ষণ কান্না করার জন্য কিছুক্ষণ পরপরই নিশ্বাসের সাথে একটা ফিনকি উঠছে। এমন সময় তুর্জকে দেখি কেডস টাউজার আর গেঞ্জি পড়ে বাইরে থেকে আসছে। তারমানে সকালে উঠে হাটতে বা জিমে গেছিলো। এতো স্মার্ট হ্যান্ডসাম ছেলে কে বর হিসেবে পেয়েও হারাতে হবে ভাবতেই ইয়ায়া বড় ছ্যাঁকা খাচ্ছি।
মনের রাগে বারবার এই চ্যানেল থেকে ওই চ্যানেল চেঞ্জ করে চলেছি। হটাৎ একটা চ্যানেলে চোখ আটকে যায়, কোন একটা বাংলা সিনেমা হবে হয়তো, নায়িকা মৌসুমি বলছেন,,, তোর মতো মেয়ে কখনো আল্লাহ প্রদত্ত স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কে চিরতরে শেষ করতে পারবে না। হয়তো কিছু সময় জন্য দুজনের মধ্যে বিচ্ছেদ হবে কিন্তু আমার কাছে রাজুকে ফিরে আসতেই হবে।
ওরেব্বাস, এই কথা গুলো এতোক্ষণ আমার ভিতর আসেনি কেন? এতো কম বুদ্ধি আমার তা কখনোই বুঝিনি। এই রিমোট এর কসম,, আজ থেকে আমিও আমার স্বামী কে মৌসুমির মতো এতো ফিরিয়ে আনবোই। শুরু করে দিলাম বাংলা সিনেমা দেখা। কিভাবে স্বামী সেবা করে শতশত নায়িকা স্বামীর মনে যায়গা করে নিয়েছে সেগুলো শিখা।
কিন্তু ১০ মিনিট সিনেমা দেখতে না দেখতেই ২ বার এড দিয়েছে তারপর যেই না আবারও সিনেমা টা দিবে ওমনি বাবাই চলে এসেছে। আমিও দৌড়ে বাবাইকে জড়িয়ে ধরি। বাবাই আমার ফেভারিট চকলেট এনেছে। আমি সেগুলো এক দৌড়ে আমাদের রুমে রেখে আবারও বাবাই এর কাছে আসি। মা বাবাই কে নাস্তা দিলেন। আমার বইগুলোর সাথে আরো কিছু জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন বাবাই। মনে হচ্ছে কতদিন পরে বাবাইকে দেখছি। ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। আমি সব সময় বাবাই এর হাতের আঙুলের ফাঁকে আমার হাতের আঙুল দিয়ে খুব পাশে বসে ছিলাম। দুপুর পরে বাবাই চলে যাওয়ার আগে খুব কান্না পেলো। কিন্তু আমি চলে গেলে ওই শাকচুন্নি আমার আলাভোলা মহব্বত আলির মাথা চিবিয়ে খাবে তাই ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও যাওয়ার জন্য বায়না ধরলাম না।
তুর্জ সকালে অফিসে যাওয়ার পরে এখনো বাসায় আসেনি। মা বলেছে কাল থেকে আমি আবারও স্কুলে যাবো তাই সন্ধ্যার পরে বই নিয়ে বসি। বেশ কিছু দিন থেকে পড়াশোনা তুঙ্গে উঠছে। প্রায় ১০ টা পর্যন্ত পড়ার পরে ভালো করে খেয়াল করি চকলেটের ঠোঙাতে পুরো বিছানা এবং ফ্লোরে ভরে গেছে। আশ্চর্য কে খেয়ে নিলো আমার প্রিয় চকলেট গুলো। রুমে তো কেউ নাই,আমি খেয়েছি? কই মনে হচ্ছে না কেন? তাহলে কি ভুত আছে?
এতো কিছু ভাবতে ভাবতে ভয়ে ভয়ে ঘুরে তাকাতেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে আমার মতো দেখতে একটা মেয়েকে দেখলাম। পুরো মুখে আর নাকের উপর কালো কালো কি যেন লেগে আছে? চোখ বন্ধ করে দিলাম গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার,, সাথে সাথে মা, কাজের মেয়ে ময়না দৌড়ে আসে রুমে। আমি চোখ বন্ধ করেই বলে চলেছি ভুত ভুয়ত ভুভুয়ত!!
সবাই বলছে কই ভুত, ভুত নেই, তুমি চোখ খুলে দেখো আসেপাশে কোথাও কোন ভুত নেই। উনাদের কথার ফাঁকে তুর্জের কণ্ঠ শুনতে পায়,, সে বলছে কি হয়েছে এখানে??
আমি চোখ বন্ধ অবস্থায় বলি, ওই আয়নার ভিতরে আমার মতো দেখতে একটা মেয়ে ভুত আছে, যার মুখে নাকে কালো রঙের রক্ত লেগে আছে। আমি শুনেছিলাম ভুতের রক্ত নাকি কালো রঙের হয়।
চলবে,,,