#অপরাজিতা
#৮ম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা
–“বাইরে থেকে এসে ফ্রেস হতে হয় সেটাও কি জানো না নাকি! সারাদিন বাইরে ছিলে, আর এসেই এভাবে শুয়ে পড়লে!”
আনান রুমে ঢুকতে ঢুকতে শুয়ে থাকা রাজিতাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো।
রাজিতা ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখতে দেখতে বলল,
–“আমি ভীষণ টায়ার্ড। ফ্রেস হওয়ার এনার্জি নেই। আমারতো মন চাচ্ছে একটানা একটা ঘুম দিতে।তারপর ঘুম থেকে উঠে দেখব সূর্য মামা জেগে গেছে।আমাকে আর ডাকবেন না!”
রাজিতার কথা শুনে আনান ওর হাত ধরে টেনে তুলে বসালো, তারপর মুখে কিছুটা হাসি নিয়ে বলল,
–“এনার্জি আমারও নেই। তবে তুমি চাইলে তোমার ফ্রেস হতে সাহায্য করতে পারি। কি লাগবে নাকি সাহায্য! ”
আনানের কথায় লজ্জা পেয়ে রাজিতা এক দৌঁড়ে বাথরুমে যেতে যেতে বলল,
–“আমার কি হাত-পা নেই নাকি! আমি নিজেই ফ্রেস হতে পারি, কারোর সাহায্যের প্রয়োজন নেই।”
–“আমার কি আর খেয়ে কাজ নেই! তুমি বললে বলেইতো সাহায্য করতে চাইলাম। অসহায়দের সাহায্য করলে সওয়াব পাওয়া যায়।”
রাজিতা বাথরুম থেকে বলতে লাগল,
–“এতই যখন সাহায্য করার ইচ্ছে, তাহলে ওয়ারড্রব থেকে আমার একটা ড্রেস দিন।”
–“তোমার কি হুটহাট দৌঁড়ে বাথরুমে যাওয়ার রোগ আছে নাকি? ড্রেস চেঞ্জ করবে! অথচ ড্রেস-ই নেয়নি! ”
–“দিলে দিন, আর না দিলে আমি নিজেই নিয়ে নিচ্ছি।”
আনান কালো রঙের একটা ড্রেস হাতে নিয়ে বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে বলল,
–“বউয়ের হুকুম পালন না করে উপায় আছে! দরজাটা খুলতে পারো। এই নাও তোমার ড্রেস।”
রাজিতা দরজা খুলে ড্রেসটা নিয়েই আবার ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো আর বলতে লাগলো,
–“সাহায্যগুলো তুলে রাখছি, আপনার যখন লাগবে শুধু বলবেন আমাকে, সুদ-সমেত ফেরত দিয়ে দিবো। ”
–“আমি কোনো সুদ-ঘুষখোর নই! মুক্তহস্তে দান করে যাই! ”
–“পরে আবার পস্তাবেন না যে, কেন তখন রাজি হলাম না!”
রাজিতার কথা শুনে আনান একা-একাই হাসতে লাগলো।
সারাদিনের শপিং শেষে রাজিতা, আনান আর আনানের মা তিনজন-ই ক্লান্ত। রাজিতা মনে হয় এক বছরেও এত শপিং করেনি। পারলে পুরো শপিং মল তুলে নিয়ে আসবে এমন একটা অবস্থা। আনানের মা যেটাই দেখে সেটাই নিতে চায় নতুন বউয়ের জন্য।
বিকেল থেকে শুরু করে পুরো রাত ৯টা পর্যন্ত শপিং করেছে। ওরা বাইরে থেকেই ডিনার করে এসেছে। আনানের বাবাও কোনো একটা কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। উনি অবশ্য আনানদের আগেই ফিরেছেন।
বেশি মানুষকে বলা হয়নি কাল। আনানের দুই খালামনি আর ওর মামার পরিবার আসবে৷ আর রাজিতাদের বাসা থেকে রাজিতার চাচা-চাচিরা।
রাতে আনান এসব নিয়েই আলোচনা করছিলো ওর বাবার সাথে। ওর বাবা বলল,
–“তুই চাইলে তোর ফ্রেন্ডদেরকেও বলতে পারিস। ”
আনান ওর বাবার কথা শুনে বলল,
–“কাল শুধু ঘরের মানুষদের বলতে চাইছি। মামি বারবার বলছিল যে, আমার বউ দেখবে। বাইরের মানুষতো পার্টিতে থাকবেই সবাই৷ আর রাজিতার চাচ-চাচিও মেয়ের শশুরবাড়ি দেখে যাবে৷ বিয়েটা যেভাবে হয়েছে, তাই আমি চাচ্ছিলাম যে, সবার মধ্যে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং হোক।”
–“তারপরেও, তুই চাইলে নিশাদকে বলতে পারিস। ছেলেটা থাকলে অনেক কিছু ম্যানেজ করতে পারবে। কতদিন আমাদের বাসায় আসেনা। ”
নিশাদ আনানের ভার্সিটির বেস্ট ফ্রেন্ড। ভার্সিটিতে পড়ার সময় প্রায়-ই আনানদের বাসায় আসতো৷ আনানও রাজি হয়ে গেলো,
–“তুমি যখন বলছো, একবার ফোন করব দেখি। যদি আসে ভালই হবে৷ ও ঢাকাতেই নাকি আছে। বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছে।”
–“আচ্ছা। তাহলে বলিস। আর আমি রোকনকে বলে রেখেছি। বাদ-বাকি ব্যবস্থা ও করবে।”
–“আচ্ছা।”
আনানের মামাতো ভাই রোকন, উনার বউ শিমলা আর সাত বছরের একটা ছেলে শিমুল। ওরা আনানদের নিচের তলাতেই ভাড়া থাকে। যদিও আনানরা ওদের থেকে ভাড়া তেমন একটা নেয়না। ওদের যে মাসে ইচ্ছে হয় দেয়, না ইচ্ছে হলে না দেয়।
আনানের বিয়ের দিন শুধু ওরাই সাথে গিয়েছিলো। আনানের মামা আর খালারা বিয়ের ব্যাপারে জানলেও আনান কাউকে আসতে মানা করেছিল। সবাই আনানের বউ দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। তাই কাল আসার কথা বলতেই সবাই রাজি হয়ে গেছে।
আনান দরজার কাছে যেতেই শুনতে পায় যে রাজিতা গুনগুন করে গান গাইছে। আস্তে আস্তে দরজা খুলে চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রাজিতার গান শুনছিলো আর ভাবছিলো যে, মেয়েটার গানের গলাও ওর মতই মিষ্টি।
রাজিতার গান গাওয়া শেষ হতেই আনান বিছানার কাছে আসতে আসতে বলল,
–“বাহ! আমার মিষ্টি বউটা আবার গান ও গাইতে পারে দেখছি।”
আনান ওর গান শুনতে পেয়েছে ভাবতেই লজ্জা পায় রাজিতা।
–“লুকিয়ে লুকিয়ে গান শোনাটা কি ঠিক!”
–“তাহলে এখন আমার সামনেই গাও, শুনি!”
–“আমার বয়েই গেছে আপনাকে গান শুনাতে!”
–“তবে কাকে শোনাবে?”
–“কাউকেই না। আমার গান শুধু আমিই শুনব।”
আনান ওর পাশে শুয়ে পড়ল। রাজিতা নিজেকে একদিকে গুঁটিয়ে নিলো৷ তা দেখে আনান বলল,
–“এখনতো নিজেকে গুঁটিয়ে নিচ্ছো, ঘুমিয়ে পড়লেইতো হাত-পা ছুড়ে আমার গায়ের উপরেই দিবে!”
আনানের এই কথাটায় রাজিতা ভীষণ লজ্জা পেলো। কি বলবে ভেবে না পেয়ে কাথাটা মুখের উপর দিয়ে মুখ লুকালো।
আনান লাইট অফ করতে করতে বলল,
–“লজ্জাবতীকে আর লজ্জা পেয়ে মুখ লুকাতে হবেনা৷ লাইট অফ করে দিয়েছি।”
–“কে লজ্জা পাচ্ছে!”
–“কেন! আমার বাচ্চা বউটা!”
–“আমাকে বাচ্চা বলবেন না একদম। আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি!”
–“আমার মেমোরি যদি অতোটাও খারাপ না হয়ে থাকে, তাহলে কে যেন বলেছিলো যে, সে নাকি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের বাচ্চা একটা মেয়ে!”
–“তখনতো ভয় পেয়ে…”
এটুকু বলেই থেমে যায় রাজিতা। আনান ওর মুখ থেকে কাথাটা সরিয়ে দিতে দিতে বলল,
–“কাথাটা এবার সরাতে পারো। লাইট অফ করে দিয়েছি।আচ্ছা,সেদিন কি আমাকে দেখে ভীষণ ভয় লাগছিলো?”
–“জানিনা। তবে মনে হয়েছিলো যে, আপনি খুব খারাপ একজন মানুষ হবেন হয়ত৷ ”
–“এখন কি মনে হয়?”
–“এখনতো মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বামীদের একজনকে হয়ত আল্লাহ আমার জন্য রেখে দিয়েছিলেন! বাংলায় যাকে বলে ‘খাটি সোনা’! আর ইংরেজিতে ‘পিওর গোল্ড’!”
–“সেই খাটি সোনায় যদি কখনো খাঁদ খুঁজে পাও? তাহলে কি ছুড়ে ফেলে দেবে?”
–“কখনো এমন শুনেছেন কখনো যে, সোনায় খাঁদ থাকার কারণে সেটা কেউ ফেলে দিয়েছে?”
–“তুমি কি করবে?”
–“অবশ্যই খাঁদটুকু ফেলে দিয়ে খাটি সোনাটুকু রাখব৷ আর মাঝেমধ্যে সোনার মধ্যে খাঁদ মেশানোর প্রয়োজন ও পড়ে।”
–“এখনো কি আমাকে বিশ্বাস করা যায়না?”
রাজিতা আমতা-আমতা করে বলে,
–“হয়তো যায়!”
–“এখনো তুমি তোমার গন্ডি থেকে বের হতে পারো নি।”
–“হয়ত বের হয়েছি!”
তারপর দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ থেকে আনান বলল,
–“একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
কিন্তু রাজিতার কোনো উত্তর না পেয়ে আনান ওর নাম ধরে ডাকতে লাগলো৷
‘রাজিতা’ নামটা মুখে নেওয়ার সাথে-সাথে আনানের মনের মধ্যে একটা প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যায় যেন।
রাজিতার কোনো উত্তর না পেয়ে আনান বুঝে গেলো যে, রাজিতা ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাদিন যা ধকল গিয়েছে!
রাজিতার কপালের লেপ্টে থাকা চুলগুলো সরিয়ে আলতো করে একটা ভালবাসার চুমু এঁকে দিয়ে আনানও কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল।
আনানদের পুরো বাসা লাইটিং করা হয়েছে৷ ছাদের উপরে আনান আর রাজিতার বসার জন্য অনেক সুন্দর করে প্যানেল সাজানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর পুরো বাসা সোনালি আলোয় ঝলমল করতে লাগলো।
আনানের রোকন ভাইয়ের বউ রাজিতাকে সাজিয়ে দিলো৷ উনি একসময় পার্লারে কাজ করতেন। হাল্কা গোল্ডেন কালারের লেহেঙ্গায় রাজিতাকে পুরো বউ-বউ লাগছে।
আনান ও গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানী পড়েছে। ওকেও কম সুন্দর লাগছে না৷ আনান আর রাজিতার দিক থেকে যেন চোখ ফেরানো যাচ্ছে না!
আনানের ছোট খালামনি আর উনার স্বামী এসেছেন, উনাদের কোনো সন্তান নেই। রাজিতাকে উনার খুব পছন্দ হয়েছে।
আনানের বড় খালামনির দুই ছেলে, কোনো মেয়ে নেই। বড় ছেলে রাফসান, নতুন নতুন বিয়ে করেছে। ছোট ছেলে আফফান, এখনো বিয়ে করেনি। উনারাও সবাই এসেছেন। উনার এক্সপ্রেশন দেখে বোঝার উপায় নেই যে, রাজিতাকে উনার পছন্দ হয়েছে কিনা!
আনানের মামি উনার স্বামী আর মেয়ে রুকমাকে নিয়ে এসেছেন। উনিতো আসার পর থেকে রাজিতাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন।
শিমলা ভাবির থেকে রাজিতা শুনেছে যে, আনানের মামি নাকি উনার মেয়ের সাথে আনানের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো। আনানেরা রাজি হয়নি বলে উনি নাকি বলেছিল যে, দেখবে আনান কত ভালো বিয়ে করে!
রাজিতা পুতুলের মতো বসে আছে৷ আনান এখানে-সেখানে দৌড়াদৌড়ি করছে। শুধুমাত্র ছবি তোলার জন্য একটু সময় এসেছিল, তাও চুপচাপ শুধু সবার সাথে ছবি তুলেছে।
রাজিতার চাচিরা অনেক পরে আসলো। ওদের দেখে রাজিতা দৌড়ে গেলো। সবাইকে একসাথে দেখে রাজিতার কি যে আনন্দ লাগছে তা বলে বোঝানোর নয়!
রাজিতার চাচা-চাচিকে দেখেই আনানের মামি এগিয়ে গিয়ে ওর চাচিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“আপনি নিশ্চয়ই মেয়ের মা?”
রাজিতার চাচি মাথা নাড়িয়ে বলল,
–“আরে না! আমি ওর চাচি। ওর মা-বাবাতো অনেক আগেই মারা গেছেন!”
কথাটা শুনেই আনানের মামি নাক সিটকিয়ে বলল,
–“আমাদের নতুন বউ তারমানে এতিম?”
আনান আশেপাশে ছিলো না। কিন্তু কথাটা রাজিতার কানে যেতেই ওর কলিজাটা যেন ছিদ্র হয়ে গেলো। এতিম হওয়াটা কি খুব বড় অন্যায়। আনানের মামির চাহনি দেখে রাজিতার মনে হচ্ছিলো যে, ও যেন চিড়িয়াখানার কোনো আজব প্রাণী!
রাজিতাও হার মানার পাত্রী নয়। আশেপাশে ওর শাশুড়ীকে খুঁজতে লাগলো। ওর শাশুড়ীকে দেখেই রাজিতা উনাকে জড়িয়ে ধরে আনানের মামির সামনে গিয়ে বলতে লাগলো,
–“মা আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন? আর বাবা কোথায়? বাবাকে দেখছি নাতো?”
রাজিতার শাশুড়ী রাজিতার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বলল,
–“কেন কি হয়েছে আমার মেয়েটার! ”
রাজিতা আনানের মামিকে লক্ষ্য করে বলল,
–“মা-বাবা পাশে না থাকলে মানুষজন আবার আমাকে এতিম ভেবে ভুল করবে!”
রাজিতার এই কথাটা বলার সময় আনান পাশ থেকে শুনতে পেলো। ও বুঝতে পারলো যে, কেউ একজন রাজিতাকে কিছু বলেছে।
আনান কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ওর মা বলল,
–“আমরা বেঁচে থাকতে আমাদের মেয়েটাকে কে এতিম বলবে, শুনি!”
আনানের মামির মুখটা তখন দেখার মতো ছিলো। রাজিতা ওকে এভাবে জব্দ করবে হয়ত বুঝতে পারেনি উনি।
“যত্তসব ঢং” বলে ওখান থেকে চলে গেলেন উনি। বিড়বিড় করে আরো কিছু বলছিল, রাজিতা শুনতে পেলো না।
রাজিতার চাচা আর রিমির মুখ হাসি-খুশি থাকলেও ওর চাচি আর নিলার মুখে মেঘ জমে আছে। রাজিতাও বেশি ঘাটালো না, শেষে আবার ঝড়-তুফান শুরু হয়ে যেতে পারে!
রাজিতার চাচাদের সাথে আবার ছবি তুললো। এইবার আনান রাজিতার পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো,
–“আজ যে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে, সে কথা কি কেউ বলেছে!”
রাজিতা লজ্জা পেলো, কিছুই বলল না। ও ভাবল যে৷ আনান এতগুলো লোকের সামনে এভাবে বলছে, কেউ শুনলে কি ভাববে!
–“ছবি তোলা শেষ হলে একটু রুমে এসো। কিছু কথা আছে। বেশিক্ষণ ওয়েট করিও না কিন্তু!”
রাজিতা তবুও কিছু বলল না।
ছবি তোলা শেষে রাজিতা বাথরুমে যাবে বলে ওখান থেকে রুমে চলে আসার জন্য পা বাড়ালো। রিমি ওর আসা দেখে বলল,
–“বাথরুমের কথা না বললেও হতো! আমরা সবাই শুনে নিয়েছি যে, তোমার ভালবাসা তোমাকে চুম্বকের মতো টানছে।”
তারমানে আনানের বলা কথাগুলো সবাই শুনেছে! ভাবতেই লজ্জায় নুইয়ে পড়ল রাজিতা।
রুমে ঢুকেই আনানকে দেখতে পেলো ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। রাজিতাকে দেখতে পেয়ে ফোনটা রেখে বলল,
–“আমার এক ফ্রেন্ডকে বলেছিলাম। ও আসছে।”
রাজিতার মুখটা গোল-আলুর মতো করে বলল,
–“এভাবে সবার সামনে কেউ ফিসফিস করে! সবাইতো শুনেই নিয়েছে! ”
–“শুনলে শুনুক! সবার শোনার জন্যইতো বলেছি। নইলে ভাববে যে, আমার বউটাকে মনে হয় আমি…”
এটুকু বলেই থেমে গেলো আনান। রাজিতা বলল,
–“কি?”
–“এটাই! যে, আমি আমার বউয়ের খেয়াল রাখি না৷ ”
–“হয়েছে! আজ অনেক লোকজন আছে আপনার বউয়ের খেয়াল রাখার। আপনি আজকের জন্য এ দায়িত্ব থেকে মুক্ত।”
–“সবার কথা আলাদা, আর আমার কথা আলাদা!”
–“আচ্ছা, হয়েছে। এবার আমি আসি৷ সবাই খুঁজবে।”
আনান রাজিতার হাত টেনে ধরে বলল,
–“সবারতো আর খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই! তোমাকে কেন খুঁজবে?”
রাজিতা আস্তে করে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
–“শুধু আমাকে নয়। ভালো করে শুনুন, কেউ আপনাকে ডাকছে।”
আনান কান পেতে শুনল যে, সত্যিই কেউ ওর নাম ধরে ডাকছে।
–“আরে এতো নিশাদ! আমার ফ্রেন্ড। আচ্ছা, কথাটা পরে বলবনে৷ চলো নিশাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”
বলেই দুজনে রুম থেকে বের হতেই শুনতে পেলো যে, রাজিতার চাচি কাউকে বলছে,
–“আর বলবেন না, আমার ছেলেটার মাথা খেয়ে এখন এসে পয়সার লোভে আনানকে বিয়ে করে নিয়েছে। ”
এরপর ওরা অন্য একটা কণ্ঠ শুনতে পেলো,
–“এজন্যই বলে যে, এতিম মেয়েদের করুণা করেও ছেলের বউ করা উচিৎ নয়৷ মা-বাবা থাকতেই সন্তানেরা সু-শিক্ষা পায়না! আর এদেরতো মা-বাবাই থাকে না! ”
–“আমিতো এ মেয়ের হাত থেকে বেঁচে গেছি। কিন্তু আমার ছেলেটা দেশে ফিরে কি যে করবে! বড্ড কষ্ট পাচ্ছে ছেলেটা আমার। মা হয়ে ছেলের কষ্ট কি করে দেখব!”
কথাগুলো শুনতেই আনানের রক্ত যেন টগবগ করে ফুটতে লাগলো। রাজিতার চোখে কান্না চলে এসেছে৷ রাজিতা উনাদের সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আনান ওকে শক্ত করে চেপে ধরল৷
রাগের কারণে আনান রাজিতার হাত এতজোরে চেপে ধরেছে যে, রাজিতা হাতটা নড়াতেও পারছে না।
আনান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–“এসব মানুষের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। যাও।”
রাজিতা ভেবেছিলো যে, কথাগুলো শুনে আনান ওকে ভুল বুঝবে। কিন্তু উল্টো আনান-ই ওকে সাপোর্ট করছে দেখে এবার কষ্টে নয়, আনন্দে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে।
–“হাত না ছাড়লে যাবো কি করে!”
আনানের হুশ হতেই রাজিতার হাতটা ছেড়ে দিলো। ফর্সা হাতটা পুরো লাল হয়ে গেছে৷ আনানের আঙুলের ছাপ-গুলো স্পষ্ট ফুঁটে উঠেছে।আনান সেদিকে খেয়াল করতেই বলল,
–“সরি! আমি বুঝতে পারিনি। খুব লেগেছে? চলো মুভ লাগিয়ে দেই।”
রাজিতা হাতটা নাড়িয়ে-চাড়িয়ে বলল,
–“আপনি পাগল হয়েছেন! তাড়াতাড়ি যান, আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে বেচারা পাগল হয়ে যাচ্ছে! আমাকেও নিশ্চয়ই খুঁজছে এতক্ষণে। কিছুই হয়নি।”
তারপর দুজন-ই ওখান থেকে চলে গে