#অপরাজিতা
#১০ম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা
নাস্তা শেষে আনান হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে রাজিতাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“আমি কিন্তু রেডি। তোমাকে আর ৫মিনিট দিচ্ছি,এর মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আসো। ”
রাজিতা সবুজ রঙের ওড়নাটা ঠিক করতে করতে বলল,
–“আপনার ৫ মিনিট কে চায়! আমি রেডি। চলুন। ”
এতক্ষণে আনান রাজিতার দিকে তাকায়। সবুজ ড্রেসটায় রাজিতাকে দেখে আনানের মনটা প্রশান্ত হয়ে যায়।
আনানকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাজিতা ওর মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলতে লাগল,
–“হ্যালো মিস্টার! এই না আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে! এখন এভাবে দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন? চলুন। আমারতো দেরি হলেও সমস্যা নেই।”
আনানের চমক ভাঙতেই তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
আনান আর রাজিতা ওর মাকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসল।
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিতেই আনান বললো,
–“দেখি তোমার হাতটা দেখি। ”
–“আরে আপনি আবার আমার সেই হাত নিয়ে পড়ে আছেন! কিছুই হয়নি৷ এখন একদম পারফেক্ট । এই যে দেখুন!”
বলে রাজিতা ওর বাম হাতটা আনানকে দেখাতে লাগলো। আনান খপ করে ওর হাতটা ধরে অনামিকা আঙুলে একটা রিং পড়িয়ে দিতে দিতে বলল,
–“তুমি কি ভেবেছিলে বলোতো! আমিতো রিংটা পড়ানোর জন্য হাতটা চাচ্ছিলাম। ”
–“আমিতো ভাবলাম!”
–“তুমি আসলেই একটা বুদ্ধু! আমার কোনো সারপ্রাইজকেই আর সারপ্রাইজ থাকতে দাওনা।”
–“আবার কি করলাম?”
–“এই যে এই রিংটা কিনেছিলাম বিয়ের দিন তোমার হাতে পড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কান্নাকাটি আর অভিযোগের ভীড়ে সব মাটি করে দিলে৷ কাল ভাবলাম যে, সেদিন যা হয়েছে- হয়েছে, আজ রাতে রিংটা দিবো! তুমি কি করলে! কালকের সব প্ল্যানও ভেস্তে দিলে৷ ”
–“তাহলে আজ কেন দিলেন?”
–“আজ দিলাম কারণ, আমি চাইনা আমার বউয়ের দিকে অন্যকেউ নজর দিক।”
–“এই রিং দেখেই সবাই বুঝে যাবে আমি বিবাহিত? ”
–“তোমার বুদ্ধি-সুদ্ধি কবে হবে আল্লাহই ভালো জানেন!”
রাজিতা বারবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রিংটা দেখছিলো। আনান বলল,
–“কি! পছন্দ হয়েছে?”
–“হুম।খুব!”
–“তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।”
রাজিতা রিংটা দেখতে দেখতেই বলল,
–“হুম, বলুন।”
–“তোমার নিলা আপু মেয়ে হিসেবে কেমন?”
আনানের মুখে নিলার নাম শুনেই রাজিতার বুকের মধ্যে ধক করে উঠল৷ আজ আনান হঠাৎ নিলার কথা কেন জানতে চাইছে? কাল নিলাকে অনেক সুন্দর লাগছিলো বলে আনান আবার নিলার উপর ক্রাশ খায়নিতো? নাহ! তাহলেতো আজ ওকে রিং পড়িয়ে দিতো না৷ সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে আবার আনানের গলা শুনতে পেলো,
–“কি হলো? বলো।”
রাজিতার চোখ-মুখ পাংশু বর্ণ ধারণ করেছে। আনান রাজিতার মুখের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো৷
–“আরে তোমার আবার কি হলো? তুমি যা ভাবছো তা নয়৷ আমিতো নিশাদের জন্য জিজ্ঞেস করেছি। আমি বুঝতে পারিনি তুমি এতটা ভয় পেয়ে যাবে। ”
নিশাদের কথা শুনে রাজিতা যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেলো৷ আনানের কাধের উপর মাথা দিয়ে দুইহাত দিয়ে শক্ত করে আনানের একবাহু চেপে ধরে রাজিতা বলল,
–“আমিতো ভেবেছিলাম আপনি!”
আনান রাজিতার মাথায় আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বলল,
–“তুমি কি ভেবেছিলে! পাগলী একটা৷ এসব আজেবাজে চিন্তা স্বপ্নেও ভাববে না। তাহলে আমি কিন্তু তোমাকে স্বপ্নও দেখতে দিবো না।”
রাজিতা মুখে এক ঝিলিক হাসির রেখা টেনে বলল,
–“স্বপ্নদেখা আপনি আটকাবেন কি করে!”
–“ঘুমাতেই দেবো না৷ তাহলে আর স্বপ্ন দেখবে কি করে শুনি!”
রাজিতা আনানের কাধ থেকে মাথা তুলতে যাচ্ছিলো, আনান ওর হাতটা রাজিতার কাঁধের উপর দিয়ে বলল,
–“এভাবেই থাকবে।”
–“কিন্তু!”
কথাটা বলে রাজিতা ড্রাইভারের দিকে তাকালো। আনান বুঝতে পেরে বলল,
–“ওর কাজ ও করছে। ”
রাজিতা কিছুটা লজ্জা পেয়েছে। নিশাদের কথা মনে হতেই সুবহা নামটাও মনে পড়ে গেলো রাজিতার। তাই আনানকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
–“সুবহা কে?”
নামটা শুনে আনানের হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে৷ ওর হার্টবিটের দ্রুত গতিতে ঢিপঢিপ শব্দটা রাজিতা উপলব্ধি করতে পারল।
সুবহা নামটা শুনে আনান রাজিতাকে আরো শক্ত করে ধরল। আনানকে চুপ থাকতে দেখে রাজিতা আবার বলল,
–“নিশাদ ভাইয়া সেদিন আমাকে দেখে সুবহা বলল কেন?”
–“আসলে সুবহা হচ্ছে…”
বলেই আনান থেমে গেলো৷ তারপর আবার বলল,
–“সুবহা হচ্ছে নিশাদের এক্স গার্লফ্রেন্ড। ”
–“উনি এখন কোথায় আছে? আর নিশাদ ভাইয়া আমাকে দেখেই বা কেন ওই নামটা বলল।”
–“সুবহা এখন… সুবহা আসলে মারা গেছে।”
রাজিতা আনানের বাহু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অবাক হয়ে বলল,
–“মারা গেছে মানে? কীভাবে?”
–“আরেকদিন বলব।”
বলেই কিছুক্ষণের জন্য দুজনেই নিরব হয়ে গেলো।
ওকটু পরেই ওরা ক্যাম্পাসে পৌঁছে গেলো।
রাজিতার আগেই আনান গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলো৷ আনানের এমন ব্যাবহার দেখে রাজিতা কিছুটা অবাক হয়ে গেলো৷ ভাবলো যে, হয়ত আনানের ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এই সুবহার নাম শুনে আনানের এমন প্রতিক্রিয়া কেন ছিল? আর কিভাবেই বা এই সুবহা মারা গেলো? এসবের কোনো মানেই বুঝতে পারছিলো না রাজিতা। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো বড় রহস্য লুকিয়ে আছে। কিন্তু সেটা কি? আনান কি ওকে বলবে! আর নিশাদের জন্য নিলার কথাই বা কেন জিজ্ঞেস করছিলো! এটা কি নিশাদ বলেছে? নাকি আনান নিজেই বলছে?
এতগুলো প্রশ্ন রাজিতার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, গাড়ি থেকে নেমে ও কখন সিড়ির সামনে চলে এসেছে বুঝতেই পারেনি৷
রাজিতা সিড়ির প্রথম ধাপে পা রাখতেই চমকে উঠে। পড়ে যাবে, ঠিক তখনি কেউ এসে ওর সামনে থেকে হাতটা ধরে টান মারে৷
রাজিতা কিছু বুঝে উঠার আগেই আরেকহাতে সিড়ির রেলিং ধরে সামনের দিকে তাকায়। দেখে যে, সেখানে ওর ফ্রেন্ড সিনান দাঁড়িয়ে আছে। একহাত দিয়ে রাজিতাকে ধরে আছে, আরেকহাতে সিড়ির রেলিং এ।
এরপর রাজিতা নিজেকে সামলে নিতেই সিনান ওর হাতটা ছেড়ে দিয়ে কিছুটা ধমকের সুরে বলল,
–“কিরে! দেখে চলতে পারিস না। চোখ কি আকাশে থাকে! আমি না থাকলেইতো এতক্ষণে… ”
বলেই থেমে যায় সিনান। রাজিতা উপরে উঠতে উঠতে বলতে থাকে,
–“থ্যাংকস।”
রাজিতাদের তিনতলায় ক্লাস হয়। আজ ওদের যে রুমে ক্লাস আছে রাজিতা ওদিকেই যাচ্ছিলো। সিনান ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
–“ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস? সিনিয়রদের ক্লাস হচ্ছে।”
একথা শুনেই রাজিতার মনে পড়ে গেলো যে, এখনতো ওর ক্লাস নেই। কিন্তু সিনান কেন এত আগে এসেছে? কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে রাজিতা বলল,
–“ক্লাস নেই, তাহলে তুই এত আগে এসেছিস কেন?”
–“আমার একটু কাজ ছিলো। কিন্তু তুইতো এত আগে আসার বান্দা নয়? ”
রাজিতা আমতা-আমতা করে বলল,
–“আসলে তোকে বলাই হয়নি, আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”
–“হুম, জানি। কিন্তু তার সাথে আগে ক্যম্পাসে আসার সম্পর্ক কি বুঝলাম না।”
–“আমার হাজব্যান্ড হচ্ছে….”
এটুকু বলতেই দেখতে পেলো ওদের এক স্যার ওদিকেই আসছে। তখন সিনান ওকে নিয়ে ক্যান্টিনে চলে গেলো। যদিও রাজিতার যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিলো না, কিন্তু সিনান সকালের নাস্তা করেনি বলে ওর সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলো। কারণ ও একা-একাই বা কি করবে! তারচেয়ে সিনানের সাথে গল্প করে সময় কাটবে।
সিনান সবটা শুনে যেন হাঁ হয়ে গেলো। ওর যেন বিশ্বাস-ই হতে চাচ্ছিলো না যে, ওদের নতুন স্যার-ই রাজিতার হাজব্যান্ড!
রাজিতার অন্যান্য ফ্রেন্ডদের প্রতিক্রিয়াটাও একই ছিলো এটা শুনে যে, আনান-ই ওর হাজব্যান্ড। সবার মধ্যে একটা কানাঘুষা চলতে লাগল। কেউ কেউ আবার রাজিতাকে বলেই ফেললো,
–“আমারতো মনে হয় রাজিতার জন্যই স্যার আমাদের ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছে।”
–“হুম, আমারো তাই মনে হয়। এত সুন্দরী বউকে একা ক্যাম্পাসে ছাড়ার সাহস পায়নি।”
–“আমারতো মনে হয় রাজিতার উপরে উনার মোটেও বিশ্বাস নেই! স্যার হয়ে চলে এসেছে বউয়ের উপরে নজর রাখার জন্য!”
–“আরে হতে পারে অতিরিক্ত ভালবাসা! চোখের আড়াল করতে চায়না।”
–“কি রোমান্টিক-রে বাবা! বউকে চোখের আড়ালও হতে দেবেনা!”
–“ইস! আমার যদি এমন একটা হাজব্যান্ড থাকতো! যেমন চেহারা! তেমন হ্যান্ডসাম! আর তেমনি এটিটিউড! যখন হাটে মনে হয় বাকিসব ফিকে হয়ে যায়! শুধু উনাকেই চোখে পড়ে।”
–“কি বেহায়া মেয়েরে বাবা! বান্ধবীর বরের দিকে নজর দিতে নেই। তার উপরে আবার স্যার!”
–“আচ্ছা স্যারকে আমরাতো দুলাভাইও বলতে পারি!”
–“সে সাহস আছে তোর!”
–“রাজিতা শোন! স্যার যখন প্রশ্ন তৈরি করবে, তখন স্যারকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে আমাদের জন্য প্রশ্ন যোগাড় করে দিবি!”
–“স্যারকে তোমার গাধা মনে হয়!”
–“আচ্ছা, স্যারকে আমরা এখন থেকে দুলাভাই স্যার বলব!”
–“আচ্ছা, রাজিতা তোর হাজব্যান্ড সরি স্যারের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিবি না?”
–“আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়?”
–“কি কাজ?”
–“আমাদের সবার সামনে রাজিতা স্যারকে ‘আই লাভ ইউ’ বলবে! আইডিয়াটা কেমন?”
নেহার মুখে এমন প্রস্তাব শুনে সবাই রাজিতাকে ঘিরে ধরলো।
রাজিতা এতক্ষণ চুপচাপ সবার কথা শুনছিলো আর মিটিমিটি হাসছিলো। কিন্তু এইবার আর চুপ থাকতে পারলো না।
–“তোরা কি পাগল হয়ে গিয়েছিস? কি বলছিস তোদের ধারণা আছে! এটা কোন পার্ক বা রেস্টুরেন্ট পাসনি! এটা একটা ভার্সিটি! আর উনি একজন টিচার!”
রাজিতার কথা শুনে ওর এক বান্ধবী বলে উঠল,
–“বিয়েতে আমাদের ইনভাইট না করার জন্য এটা তোর শাস্তি! আমাদের সাথে আলাদাভাবে পরিচয় করাতে হবেনা। এই কাজটা করলেই হবে। ”
রাজিতা রাগান্বিত হয়ে বলল,
–“প্লিজ! তোরা বোঝার চেষ্টা কর! উনি ভার্সিটির সিনিয়র কোনো ভাই নয় যে, র্যাগিং এর কথা বলে পার পেয়ে যাবো!”
মালিহা বলল,
–“আরে ভাই, আমরাতো তোকে র্যাগিং করছি না। আত স্যারতো তোর হাজব্যান্ড-ই। অন্যকেউতো নয়৷ আর হাজব্যান্ডকে ‘আই লাভ ইউ ‘ বলাটা কোনো ব্যাপার হলো!”
সবার জোরাজুরিতে না থাকতে পেরে রাজিতা রাজি হয়ে গেলো। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আনান ক্লাসে আসবে৷ রাজিতার বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। মনে হচ্ছে যে, হাতুড়ি দিয়ে কেউ ওর হৃৎপিণ্ডের মধ্যে আঘাত করছে৷
সবাই খুব এক্সাইটেড। এরমধ্যে একটা ছেলে আবার কয়েকটা লাল গোলাপও যোগাড় করে ফেলেছে। সেগুলো দিয়েই রাজিতা আনানকে প্রপোজ করবে৷ ক্লাসের মধ্যে স্যারকে প্রপোজ! নতুন একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে৷ অনেকে আবার ভিডিও করার জন্য রেডি হয়ে আছে।
সবাই স্যারের আসার অপেক্ষায় আছে। স্যারের প্রতিক্রিয়াটা দেখার জন্য সবার আর তর সইছে না।
সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হাতে এটেনডেন্সের ফাইল নিয়ে আগমন ঘটে আনানের।
আনান ক্লাসে ঢুকতেই রাজিতার বিবর্ণ মুখ দেখতে পায়।সবার চোখেমুখে এক রহস্যময় চাহনি দেখতে পায়৷ আনান কিছু বুঝে উঠার আগেই নেহা আর ওর আরেক বান্ধবী রাজিতার হাতে ফুলগুলো দিয়ে ঠেলে পাঠিয়ে দেয় আনানের সামনে।
রাজিতা হাতটা পেছনে রেখেছে৷ সবাই ওকে ইশারা করছে প্রপোজ করার জন্য৷ আনান বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। ও কিছু বলার আগেই রাজিতা ওর হাতে থাকা ফুলগুলো আনানের হাতে গুজে দিয়ে আস্তে করে বলল,
–“আই লাভ ইউ!”
বলেই এক দৌড়ে নিজের জায়গায় চলে এলো৷
আনান ফুলগুলো হাতে নিয়ে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে।এটা কি হলো ওর সাথে! রাজিতার ফ্রেন্ডরা ভেবেছিলো যে রাজিতা হয়ত শেষ পর্যন্ত কাজটা করতে পারবে না। কিন্তু রাজিতা ওর কাজটা শেষ করার সাথে-সাথেই পুরো ক্লাসের সবাই চেঁচিয়ে উঠলো। অনেকে আবার ভিডিও করছে।
আনান যখন পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তখন মনে-মনে অনেক খুশি হলেও ভিডিও করা দেখতেই ওর টনক নড়ল। এই ব্যাপারটা বাইরে জানাজানি হয়ে গেলে একটা কেলেঙ্কারি কান্ড ঘটে যাবে!
ফুলগুলো টেবিলের উপর রেখে সবাইকে একটা ধমক দিয়ে বলল,
–“স্টপ ইট! আমার ভাবতেও অবাক লাগছে যে, তোমরা একটা ভার্সিটির স্টুডেন্ট! ভিডিও বন্ধ করো, আর সবার ফোন থেকে ভিডিও ডিলিট করে দিবে৷ এর মধ্যে থেকে একটা ভিডিও যদি থাকে তাহলে ভালো হবে না কিন্তু! আর কেউ এই ভিডিও রেখে কোনো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করলে তাকে খুঁজে বের করতে আমার বেশি সময় লাগবে না। আর তারপর কি হবে তা তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। ”
আনানের কথা শুনে সবাই ভিডিও করা বন্ধ করে দিয়েছে৷ রাজিতা ভয়ে জড়সড় হয়ে গেছে। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ও এমন একটা কাজ করে ফেলবে বুঝতেই পারেনি। আনান ওকে এত কেয়ার করে, আর ও আনানের সম্মানের কথা একবারও ভাবলো না! আনান নিশ্চয়ই ওর উপরে অনেক রেগে গেছে৷ নিজের বন্ধুদের উপর আর নিজের উপর রাজিতার অনেক রাগ হচ্ছিলো।
আনান আবার বলতে লাগলো,
–“তোমরা এখানে পড়াশোনা করতে এসেছো, মজা-মস্তি করার জন্য নয়। মজা-মস্তি করার জন্য আরো অনেক জায়গা আছে। এই কাজটাই তোমরা যদি অন্য জায়গায় করতে আমি অনেক খুশি হতাম৷ কিন্তু এখন আমি খুশি হতে পারছি না৷ কারণ এটা একটা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। আর আমি এখানে শুধুই তোমাদের টিচার৷ প্রফেশনাল লাইফ আর পার্সোনাল লাইফ দুইটা আলাদা জিনিস। তোমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, প্রফেশনাল লাইফ আর পার্সোনাল লাইফ কখনো এক করবে না। আজকের মতো মাফ করে দিলাম। নেক্সট টাইম কথাগুলো যেন মাথায় থাকে৷ বাইরে দুলাভাই হিসেবে তোমরা যেকোনো কিছু করতে পারো আমি মাইন্ড করবো না। কিন্তু যতক্ষণ ক্লাসে থাকবো ততক্ষণ আমি শুধুমাত্র তোমাদের একজন টিচার৷ আর টিচারের সাথে কেমন ব্যাবহার করতে হয় তা তোমরা ভালো করেই জানো।”
রাজিতাসহ ক্লাসের সবাই মাথানিচু করে আছে। সবার মুখটা একেবারে দেখার মতো। ওরা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে, আনানের প্রতিক্রিয়াটা এমন হবে৷ জানলে কি আর ওরা এমন কাজ করতো৷ রাজিতার কপালে যে আজ কি আছে! তা ভেবে ওরা আরো বিচলিত হচ্ছে। ওদের জন্য বেচারি বিপদে পড়ে গেলো। মাত্র ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে! ক্যাম্পাসের ভেতরেতো দূরে থাক! ক্যাম্পাসের বাইরেও কেউ হয়ত আনানের দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না!
আনান রোবটের মতো ক্লাস নিতে লাগলো। আর সবাইও চুপচাপ রোবটের মতোই ক্লাস করতে লাগলো। পুরো ক্লাসজুড়ে একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
চলবে….