#অপরাজিতা
#১৩তম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা
রাজিতার চাচার বাসা থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত দশটা বেজে গেলো।সারারাস্তা রাজিতা আনানের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। আনান ভাবে যে, এই মেয়েটা যে এত দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারে!
রাজিতারা ডিনার করে ফিরলেও এইটুকু আসতে আসতে রাজিতার আবার ক্ষুধা লেগে গিয়েছে। কিন্তু লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারছে না। সবাই ভাববে, কি পেটুক মেয়েরে বাবা! খেয়ে আসতে না আসতেই আবার খেতে বসে!
রাজিতার চাচি আনানের মা-বাবার জন্য খাবার দিয়ে দিয়েছে। উনাদেরও যেতে বলেছিলো, কিন্তু নতুন আত্মীয় বাড়ি বলে উনারা যেতে রাজি হয়নি।
আনান আজ তাড়াতাড়ি-ই ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ কোনো একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ফোনটা নিয়ে ঘড়িতে দেখলো যে, রাত তিনটা বাজে। ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানার অপরপাশে হাত দিতেই দেখে যে, সেখানে রাজিতা নেই।
এতরাতে মেয়েটা কোথায় যেতে পারে! নিশ্চয়ই বাথরুমে! এটাভেবে চোখ বুজতে যাবে তখন ওর পায়ের দিক থেকে একটা আলো এসে চোখে পড়ল। আনান উঠে বসে ওদিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো।
ফোনের লাইট জ্বালিয়ে চেয়ারে বসে বসে রাজিতা কিছু একটা খাচ্ছে। আনান ওর পাশে গিয়ে দাড়ালো কিন্তু রাজিতার সেদিকে কোনো নজর নেই। ও একমনে আইসক্রিম খেয়েই যাচ্ছে।
আনান রাজিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল,
–“এতরাতে কারা খায় জানো?”
হঠাৎ কানের কাছে কারো আওয়াজ শুনতে পেয়ে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠল রাজিতা আর ওর হাতে থাকা আইসক্রিমের বাটিটা মেঝেতে পড়ে গেলো।
রাজিতা চেঁচাতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আনান একহাতে ওর মুখ চেপে ধরে আস্তে করে বলল,
–“আরে আমি! ভয় পেওনা। তুমি মাঝরাতে উঠে ভুতের মতো বসে-বসে আইসক্রিম খাচ্ছো। তোমাকে দেখে আমার ভয় পাওয়ার কথা! সেখানে তুমি উল্টো ভয় পাচ্ছো?”
কথাগুলো বলেই আনান রাজিতার মুখ ছেড়ে দিয়ে ওর সামনে এসে দাড়ালো। আনানকে সামনে দেখে লজ্জায় রাজিতা আমতা-আমতা করে বলতে লাগলো,
–“আসলে… আসলে আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছিল…তাই…”
রাজিতার এমন করে কথা বলতে দেখে আনান হাসতে হাসতে বলল,
–“মাঝরাতে ক্ষুধা পেয়েছে? নাকি ক্ষুধা নিয়েই ঘুমিয়েছিলে?”
রাজিতা এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উত্তর দিলো,
–“ক্ষুধা আগেই পেয়েছিল। তবে..”
–“ক্ষুধা লেগেছিল, খেয়ে তারপর ঘুমাতে।”
–“আসলে আমরাতো ডিনার করেই এসেছিলাম। তাই..”
–“ডিনার করেছো বলে আবার ক্ষুধা লাগলে খাবে না? শোন, এটাই এখন তোমার নিজের বাসা। সো, কোনোকিছু নিয়ে হেজিটেশন করবে না। যখন যেটা করতে মন চায়, সেটাই করবে। মাতো এমনি-এমনি বাসা নেওয়ার কথা বলছে না! তোমার এই কান্ডের কথা শুনলে কালকেই বাসায় পাঠিয়ে দিবে! ভাববে উনারা থাকে জন্য তুমি ফ্রি হতে পারো না!”
রাজিতা তাড়াতাড়ি করে বলল,
–“আরে মাকে একদম এসব কথা জানাবেন না কিন্তু! উনি কি ভাববেন!”
–“আর তুমি রাতে খেয়ে ঘুমালে কি ভাবতো! আমার মাকে তোমার ওমন মনে হয়?”
–“আরে না। আচ্ছা ঠিক আছে, নেক্সট টাইম আর এমন ভুল হবেনা।”
আনান আরেকটা চেয়ার টেনে রাজিতার সামনে বসে বলল,
–“এতরাতে তুমি আইসক্রিম কেন খাচ্ছিলে?”
–“কি খাবো ভাবতে ভাবতে ফ্রিজের আইসক্রিম চোখে পড়ল। তাই খাওয়া শুরু করলাম।”
–“কেন? ফ্রিজে কি খাওয়ার মতো আর কিছু ছিলো না?”
–“ছিলো, তবে আইসক্রিম থাকতে অন্যকিছু খাওয়ার কথা ভাবি কি করে!”
–“আইসক্রিম এত প্রিয়?”
–“হুম।”
–“আমাকে বললেই পারতে।”
–“আপনাকে বললে কি হতো?”
–“আরো অনেক আইসক্রিম এনে রাখবো। ওটাতো মে বি শিমুলের জন্য এনেছিল বাবা। ও মাঝেমধ্যে এসেই আইসক্রিম খাওয়ার বায়না ধরে।”
–“ইশ! আমি বাচ্চা ছেলেটার আইসক্রিম খেয়ে ফেললাম! আপনি কাল সকালেই আবার আইসক্রিম এনে রাখবেন। বাবা জানতে পারলে…”
–“বাবা জানতে পারলে আরো বেশি করে এনে রাখবেন, দুই বাচ্চার জন্য!”
বলেই আনান হাসতে লাগল। তারপর দুজনেই গিয়ে শুয়ে পড়ল। আনান রাজিতার মাথাটা নিজের বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলল,
–“আমার রুমেই দেখছি একটা ফ্রিজ এনে রাখতে হবে।”
–“কেন?”
–“আমার বউ যদি রাত-বিরেতে রুমের বাইরে গিয়ে খাবার খোঁজে ব্যাপারটা কেমন দেখায় না! রুমে ফ্রিজ থাকলে যখন যেটা খুশি নিয়ে খাবে!”
–“রুমে ফ্রিজ আনলে সবাই কি ভাববে! ”
–“কে কি ভাববে! মায়ের রুমেওতো একটা ফ্রিজ আছে। আমাদের রুমে থাকলে সমস্যা কি!”
–“মায়ের কথা আলাদা। বয়স হয়েছে! ”
–“আচ্ছা, বাদ দাও, ঘুমাও। কালতো তোমার সকালে ক্লাস৷ ”
ভার্সিটি যাওয়ার সময় রাজিতাকে নিয়ন কল করছিল। কিন্তু আনান সাথে থাকায় রাজিতা ধরেনি। ওর চাচি আনানের মনে নিয়নকে নিয়ে যে সন্দেহের বীজ বুনে দিয়েছে তা অঙ্কুরিত হতে দেওয়া যাবেনা। ওর জীবনের এত ভালবাসাগুলো ও কোনো প্রকারেই হারাতে চায়না!
গাড়ি থেকে নামার পর রাজিতা ক্লাসে ঢুকেই নিয়নকে কল করল। নিয়ন কল ধরে বলল,
–“কেমন আছিস? কল ধরছিলি না কেন?”
–“না মানে, রাস্তায় ছিলামতো। তাই ধরতে পারিনি। আমি ভালই আছি। আপনি কেমন আছেন?”
–“আমিও ভালো আছি। আবার কোনো ঝামেলা হয়নিতো? তুই আমার সাথে কথা বলতে চাস না কেন? আমি কোনো ভুল করেছি?”
–“না ভাইয়া। আসলে ক্লাসের অনেক প্রেশারতো তাই আর কি!”
–“রিমির কাছেতো আনানের অনেক প্রশংসা শুনলাম। তোর মুখ থেকে কিন্তু এখনো কিছু শুনিনি! নাকি নিজের স্বামীর প্রশংসা করতে মানা!”
রাজিতা একটু হেসে বলল,
–“রিমিতো বলেছেই। আমি আর কি বলব!”
–“রিমিতো রিমির মতো করে বলেছে। ও যেটুকু দেখেছে সেটুকুই বলেছে। আমিতো তোর মুখ থেকে না শোনা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারি না।”
–“হুম। ”
–“হুম কি? কিছু বল৷ আনানকে তোর পছন্দ হয়েছে কিনা ভাই হিসেবে সেটা জানা আমার দায়িত্ব। ”
–“হুম, উনি অনেক ভালো। ”
–“তোর খেয়াল রাখেতো ঠিকঠাক? আমার কাছে নাম্বার নেই, নাম্বার থাকলে আমি নিজেই কল দিতাম। নাম্বারটা দিসতো, আর না হলে ওর সাথে আমার কথা বলিয়ে দিস।”
–“আচ্ছা। ”
–“আর শোন, আরেকটা কথা। নিশাদ ছেলেটা কেমনরে? আনানেরতো ফ্রেন্ড। ওরতো খুব ভালো জানার কথা৷ তোকে কিছু বলেছে?”
–“হুম, উনি নাকি অনেক ভালো একটা ছেলে। ”
–“ভালো হলেই ভালো।”
–“হুম।”
নিয়ন আরোকিছু বলতে যাচ্ছিলো। কিন্তু রাজিতার স্যার ক্লাসে চলে আসায় রাজিতা বলল,
–“ভাইয়া, আমি ক্লাসে আছি। স্যার চলে এসেছে, পরে কথা বলি?”
নিয়ন, “আচ্ছা” বলতে না বলতেই রাজিতা কল কেটে দিলো।
রাজিতা এখনো নিয়নকে জানায়নি যে, ওর চাচি ওদের নিয়ে কি বাজে কথা রটানোর চেষ্টা করছে। শুনতে পারলে নিয়ন ওর মাকে অনেক কথা শুনাবে। শেষে এটা নিয়ে আবার কোনো বড় প্রকারের ঝামেলা হতে পারে। রাজিতা ওর জীবনে আর কোনো ঝামেলা চায়না।
আজ হঠাৎ করেই কেন জানি রাজিতার ‘সুবহা’ নামটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। ওর আবার কেন জানি মনে হচ্ছিলো যে, এই নামটা ও ওর ভার্সিটিতেই কোথাও একটা শুনেছে। ও ভালো করে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলো না। ভার্সিটিতে শুনে থাকলে নেহার অবশ্যই জানার কথা। কারণ ভার্সিটির খবর সব নেহা ভালো রাখে। আর রাজিতাও ওর জীবনের অনেককিছুই নেহার সাথে শেয়ার করে। হতে পারে যে, সুবহা নাম এর আগে শুনে থাকলে নেহাকেও বলে থাকবে!আর নামটাও রাজিতার কাছে কেমন আনকমন লাগছে, তাই হয়ত নেহারও মনে থাকবে!
রাজিতার কপালটাই খারাপ! নেহা আজ ক্লাসেই আসলো না। তাই ও মালিহাকেই জিজ্ঞেস করল,
–“মালিহা শোন, তুই কি সুবহা নামের কাউকে চিনিস?”
মালিহা মাথা নেড়ে বলল,
–“নাতো। কেনরে?”
–“না, এমনিই জানতে চাইলাম। আচ্ছা এই নামটা তুই কখনো শুনেছিস?”
–“নামটা মনে হয় আমার আপুর মুখে শুনেছি।”
–“কি শুনেছিস?”
–“কিছুই না। শুধু নামটাই শুনেছিলাম, আপু ওর বান্ধবীর সাথে কি একটা আলোচনা করছিলো, তখন নামটা শুনেছিলাম।”
–“তোর আপু তাহলে চিনবে মনে হয় তাইনা?”
–“কিন্তু তুই এই নামটা নিয়ে পড়েছিস কেন?”
–“এমনি৷ তুই শুধু শুনবি যে, এই সুবহা বেঁচে আছে কিনা।… আর বেঁচে থাকলে সিওর হতে হবে যে, এই সুবহাই সেই সুবহা কিনা! আর যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলেতো ১০০% সিওর হওয়া যাবে !আর যারা ওকে চেনে তারা আমাকে দেখলেই বুঝে যাবে যে, সুবহা আসলেই আমার মতো দেখতে কিনা। উনিতো সেদিন বলেছিলেন যে, সুবহার চেহারা নাকি কিছুটা আমার মতোই, তাই নিশাদ ভাইয়া আমাকে দেখে সুবহা বলেছিলেন।”
শেষের কথাগুলো ও এত আস্তে বলল যে, নিজেই শুনতে পেলো না। ওর বিড়বিড় করা দেখে মালিহা বলল,
–“তুই এসব পাগলের মতো কি বকছিস? পাগল হয়ে যাসনিতো!”
–“তুই বুঝবিনা। তুই শুধু আমাকে খোঁজ নিয়ে দিবি, কে এই সুবহা!”
–“আচ্ছা ঠিক আছে। আপুকে জিজ্ঞেস করবনে!”
মালিহার সাথে কথা বলা শেষ হতেই রাজিতা ভাবতে লাগলো যে, ও কি বোকার মতো চিন্তা করছে!মালিহার বোনতো এই ভার্সিটির। সুবহা এই ভার্সিটির হলে তার সাথে নিশাদের পরিচয় কীভাবে হতে পারে! আর এই সুবহাই যে, সেই সুবহা হবে ওর এটা কেন মনে হচ্ছে! যা হওয়ার হয়েছে। মালিহা ওকে পাগল ভাবছে! শুধু-শুধু ওকে এসব বলতে গেলো৷ এই সুবহা নামটা কেন জানি ওকে পাগল করে দিচ্ছে।
রাজিতা ক্লাস শেষ করে আনানকে কল করতে লাগল, কিন্তু আনান কল ধরছে না। আরেকবার কল করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে কল করেই ফেলল। ২য় বার কল করতেই আনান রিসিভ করল৷
–“এতবার কল করছো কেন? দেখছই যে কল ধরছে না, তারমানে ব্যস্ত আছে। কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।”
আনানের এমন কণ্ঠ শুনে রাজিতা অভ্যস্ত নয়৷ দুইবার কল দিতেই আনান এমনভাবে কথা বলবে রাজিতা ভাবতেও পারেনি। ও আস্তে করে বলল,
–“আমার ক্লাস শেষ। ”
–“ক্লাস শেষ, তো চলে যাও। আমার আজ একটা মিটিং আছে। যেতে দেরি হবে।”
রাজিতা আবার আস্তে আস্তে বলল,
–“আমি কি অপেক্ষা করব?”
–“আমি কি বলেছি অপেক্ষা করতে! যেতে বলছি, চুপচাপ চলে যাও।আর হ্যাঁ, মাকে বলে দিয়েছি তোমার সাথে গিয়ে ফ্রিজ কেনার কথা।আমার ফিরতে দেরি হবে।”
–“কিন্তু…”
রাজিতার কথা না শুনেই খট করে কলটা কেটে দিলো আনান। রাজিতার চোখের কোণায় পানি টলমল করছে। কোনোমতে গাড়ির কাছে গিয়ে নিজেই দরজা খুলে বসতে বসতে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“মিজান ভাই, চলেন।”
মিজান আশেপাশে তাকিয়ে আনানকে খুঁজছিলো। রাজিতা বুঝতে পেরে বলল,
–“উনি যাবেন না। আপনি চলুন।”
–“কিন্তু স্যারতো বলেছিলেন যে, আজ যাওয়ার সময় ফ্রিজ কিনতে যাবেন। বাসায় যেতে দেরি হবে। ”
–“কখন বলেছিলো এ কথা?”
–“সকালে গাড়ি থেকে নামার সময়।”
–“আচ্ছা, আপনি চলুন।”
রাজিতা বুঝতে পারল যে নিশ্চয়ই আনানের কিছু একটা হয়েছে। না হলে রাজিতার সাথে এমন কড়া করে কথা বলার মানুষ সে নয়। সকালেও যে মানুষটা হাসিখুশি ভাবে গল্প করতে করতে আসলো, দুপুর গড়াতেই তার কি এমন হলো যে, কথার ভোল পাল্টে ফেললো! ওর চাচিরা কেউ কিছু বলেনিতো আবার ওর নামে! নাকি নিয়ন ভাইয়া কিছু বলেছে! কি এমন হতে পারে!
সারারাস্তা বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা করতে করতে বাসায় পৌঁছালো রাজিতা।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। তবুও আনানের বাসায় ফেরার নাম নেই। রাজিতার শাশুড়ী ওকে ফ্রিজ কিনতে যাওয়ার কথা বলেছিলো, কিন্তু ভালো লাগছেনা বলে ও মানা করে দিলো। অন্যদিন হলে এতক্ষণ একটা ঘুম দিয়ে দিতো। কিন্তু আজ রাজিতার চোখ থেকে কেন জানি ঘুম-পাখি উড়াল দিয়েছে। বারবার ফোন চেক করছে, এই বুঝি মিটিং শেষে আনান কল করলো! কিন্তু আনানের কোনো নাম-গন্ধও নেই।
রাজিতাকে এমন ছটফট করতে দেখে ওর শাশুড়ী সন্ধ্যার দিকে ওকে নিয়ে শিমলাদের বাসায় গেলো।শিমলা শিমুলকে পড়াচ্ছিল। রাজিতাদের দেখে একটু কথা-বার্তা বলে চা বানাতে চলে গেলো।
রাজিতা এর আগেও শিমলাদের বাসায় একবার এসেছে। রাজিতাদের ফ্লোরটা ছাড়া বাকিসব ফ্লোর দুই ইউনিটের বাসা। শিমলারা একটা ইউনিটে থাকে। তারপরেও অনেকটা বড় বাসা।
রাজিতা দেখল শিমুল পড়ছে। ওদিকটায় এগিয়ে গিয়ে শিমুলের পড়া শুনল। শিমুল পড়ছে,
–“আই লাভ মাই মাদার মানে, আমি আমার মাকে খুব ভালবাসি।”
রাজিতা ওরদিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
–“এভাবে নয় বাবা, ‘আই লাভ মাই মাদার’ মানে, ‘আমি আমার মাকে শুধু ভালবাসি’ খুব হবে না।”
ওর কথাশুনে শিমুল পড়তে লাগলো,
–“আই লাভ মাই মাদার মানে, আমি আমার মাকে শুধু ভালবাসি।”
শিমুলের মুখে কথাটা শুনেই রাজিতা শব্দ করে হেসে ফেললো। তারপর আরো কয়েকবার শিমুলকে ও ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলো। ততক্ষণে শিমলা চা নিয়ে চলে এসেছে। চা-নাস্তা খেয়ে একটু গল্প-গুজব করে রাজিতারা নিজেদের বাসায় ফিরে আসলো।
রাজিতা রুমে ঢুকতেই আনানের উপস্থিতি টের পেলো। বিছানায় বসে ল্যাপটপে কোনো একটা কাজ করছিলো। রাজিতা ওর পাশে বসতে বসতে বললো,
–“কখন এলেন?”
–“একটু আগেই।”
–“এতদেরি হলো কেন?”
আনান এইবার একটু রেগে গিয়ে বলল,
–“বললাম না একটা মিটিং ছিলো। আর সব কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে নাকি! তুমি আমাকে সব বলেছো কখনো! ”
–“কি বলব আপনাকে? আমি কি কোনো ভুল করে ফেলেছি? ভুল করে থাকলে বলুন। আমি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব। এভাবে রেগে থাকলে আমি বুঝব কি করে!”
রাগে আনানের চোখমুখ লাল হয়ে উঠেছে। রাগটাকে কন্ট্রোল করার বৃথা চেষ্টা করে বলল,
–“তোমার যে বয়ফ্রেন্ড ছিলো সেটা আমাকে কখনো জানিয়েছো?”
কথাটা শুনে রাজিতা যেন আকাশ থেকে পড়ল। বয়ফ্রেন্ড! তাও আবার ওর! ও চোখ দু’টো বড়-বড় করে বলল,
–“মানে…”
চলবে…….