#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পার্টঃ২৬
#লেখনীঃ #মনা_হোসাইন
(এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোন স্থান,কাল কিংবা চরিত্রের মিল নেই সবটাই কাল্পনিক। গল্পের কোন কাহিনি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন না)
আদির কাছে ছাতা নেই ফলে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে যেতে হবে এই একটা ব্যাপার আদিবাকে স্বস্তি দিচ্ছে। তার পক্ষে আদিকে শায়েস্তা করা সম্ভব না তাই এই বৃষ্টিতে ভিজে যদি আদির একটু শিক্ষা হয় সেটা ভেবেই খুশি খুশি লাগছে..
আদিবা হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে এগুলোই ভাবছিল হটাৎ করে তার ধ্যান ভেঙে দিয়ে কানের কাছে কেউ ফিসফিস করে বলে উঠল,
-“বৃষ্টিতে ভিজে যদি আমার জ্বর আসে, সেবা যত্ন কিন্তু তাকেও করতে হবে যে এখন বদদোয়া দিচ্ছে…
আদির কথায় আদিবা কটমটিয়ে তাকাল,
-“আমি কি বলেছি আমি বদদোয়া দিচ্ছি?
-“তোর মত ডায়নীবুড়ি এর চেয়ে বেশি কি আর করবে যাইহোক এসে যেন দেখি ঘরটা পুরো ঝকঝক করছে।
বলে আদি ভিজতে ভিজতেই চলে গেল। আদিবাও ঘর গোছানোর কাজে লেগে পড়ল।
-“ধুর এই মেঘলা দিন স্যাঁত স্যাঁতে পরিবেশ কার ভাল লাগে? একা একা এসেছিলাম একটু শান্তির জন্য,তা না এসে জুটেছেন একজন। ইচ্ছে করছে বনবাসে চলে যাই। বলতেই মন উত্তর দিল তুই জাহান্নামে গেলেও এই আদি নামক প্রানীটি তোর পিছু নিবে। তাই চেষ্টা বাদ দিল আদিবা।
।
।
।
।
ঘর গুছাতে বেশ সময় লাগছে। আদির চোদ্দগুষ্টি শুদ্ধ বকা দিতে দিতে আদিবা ঘর গুছিয়ে শেষ করার ঠিক আগ মূহুর্তে বাইরে থেকে আদির কন্ঠ ভেসে আসল। তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না বৃষ্টিতে ভেজা নিয়ে তার কোন আপত্তি আছে বরং বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে আসছে সে। তার হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে তিনি সিনেমার নায়ক আর এখানে সিনেমার শুটিং চলছে। এই ছেলের শ*রী*রে এত ঢং কোথা থেকে আসে আদিবার মাথায় ঢুকল না। তবে দেখতে মন্দ লাগছে না। ফুল স্লিভ সাদা শার্টের সাথে কালো থ্রীকোয়ার্টার। কিছু চুল এলোমেলো হয়ে কপালের উপড় ছড়িয়ে আছে। আদির বরাবর লম্বা চুল পছন্দ। প্রায়ই তার চুল, কপাল ছাড়িয়ে চোখের উপড় এসে পড়ত তবুও কাটতে চাইত না। এখনো হয়ত সে অভ্যাস যায় নি। পিছনের দিকে চুল ছোট করে কাটা থাকলেও সামনের দিকে কিছুটা বড়। চোখের উপড় না পড়লেও ভ্রুয়ের উপড় ছড়িয়ে আছে। চুল থেকে টুপটুপ পানি পড়ছে।আদিবা অবাক নয়নে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বাস্তবে ফিরল আর দেখল আদি খালি হাতে ফিরেছে ।আদিকে খালি হাতে দেখে আদিবার মেজাজ বিগড়ে গেল।আদি গুন গুন করতে ঘরে ঢুকে বলল,
-“আদিবা টাওয়াল টা দে তো…
আদিবা চরম বিরক্তি নিয়ে আদিত্যের দিকে এগিয়ে আসল। আদিবা রেগে গেছে আদি কি সেটা বুঝল নাকি বুঝল না আদিবার বোধগম্য হল না।(গল্পটি সবার আগে পেতে মনা হোসাইন পেইজটি ফলো দিতে ভুলবেন না) আদিবা এগিয়ে যেতেই আদি বলল,
-“সমস্যা কী..?
আদিবা উল্টে প্রশ্ন করল,
-“আপনাকে কী সিনেমার শুটিং করতে বাজারে পাঠিয়েছিলাম?বাজার কোথায়?
আদির ভাবলেশহীনভাবে উত্তর দিল,
-“আমি শুটিং করছিলাম তোকে কে বলল?
-“নিজেই দেখলাম গান গাইতে গাইতে আসলেন।এমন একটা ভাব যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যাক্তি।
-“দুঃখে থাকার মত কোন কারন তো দেখতে পাচ্ছিনা..তার উপড় আজ তোর কপালে যে শনি লিখা আছে সেটা ভেবেই মন ভরে উঠছে।
-“আমার কপালে শনি জন্মের আগে থেকেই লিখা ছিল তানাহলে আপনার বোন হয়ে জন্মাই..
-“বোন হতে এত আফসোস থাকলে সম্পর্ক বদলের রাস্তা তো আছেই বদলে ফেল।
-“বাজে কথা রেখে বলেন বাজার কোথায়..?হিরোগিরি দেখাতে তো বাজারে পাঠাইনি তাই না?
-“তোর মত এমন একটা পুচকি মেয়ের কথায় আদিত্য চৌধুরী বাজারের ব্যাগ হাতে হাঁটবে এটা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব বাস্তবে না।
-” হাহ…আমার মত কোন মেয়ের কথাতেই সারাজীবন চলতে হবে বুঝেছেন। সারাজীবন তো আর বিয়ে না করে থাকতে পারবেন না। তখন আপনার বউ প্রতিদিন আপনাকে দিয়ে বাজার করাবে.যাইহোক ভালই হয়েছে বাজার করেন নি তারমানে আমাকে রান্না করতে হবে না…
-“ঠিক বলেছিস তেমন কিছু রান্না করার প্রয়োজন নেই বুঝেছিস? শুধু ভুনা খিচুড়ির গরুর ঝাল মাংস,মুরগীর পাতলা ঝোল। সাথে গরম ভাত আর ইলিশ পাতুরি,চিংড়ির মালাইকারি,রুই মাছের মুড়োঘন্ট,ভাজা চপ,পাতলা ডাল সাথে একটু সাদা সবজি,পায়েশ আর আচাড় এইটুকু করলেই হবে…
কাবাব রোস্ট পোলাও এসবের দরকার নেই কি বলিস?
আদির কথায় আদিবা ভ্রু কুচকে তাকাল…
-“এসবের মানে কী…?
-“জীবনে প্রথমবার বাজারে পাঠালি খালি হাতে ফিরে আসব..? ভ্যানে বাজার পাঠিয়েছি এখনী চলে আসবে। আসলে আমার হাতে বাজারের ব্যাগ মানায় না তাছাড়া এত কিছু আনতেও পারতাম না।
-“কি কি বাজার করেছেন আপনি?
-“সেটা ত কিছুক্ষন পরেই দেখতে পাবি।
আমাকে বাজারে পাঠানোর মজা এবার হাড়ে হাড়ে বুঝবি। কি কি পদ বলেছি মনে আছে তো..?
আদিবা কিছু বলার আগেই ভ্যান ওয়ালা দরজার সামনে হাজির আদি টাওয়ালে মাথা মুছতে মুছতে এগিয়ে গিয়ে গিয়ে বলল সব নামিয়ে রাখতে।
বাজারের ধরন দেখে আদিবার ভিমড়ি খাওয়ার যোগার…ভ্যানওয়ালা সব নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।
আদি ঘরে যেতে যেতে বলল,
-“আদিবা… নাও তোমার বাজার চলে এসেছে রান্না শুরু করে দাও আমি চেঞ্জ করে আসছি…
আদি চলে যেতে চাইতেই আদিবা বলে উঠল
-“আপনি কী জানতেন না বাড়িতে যে ফ্রিজ নেই..?এতগুলো বাজার করলেন কোন বুদ্ধিতে?
-“আরে ফ্রিজ দিয়ে কি হবে? তুই কী শোনিস নি আমি কী কী রান্না করতে বলেছি…না শুনলেও সমস্যা নেই এখানে যা যা আছে সবি আজ তোকে রান্না করতে হবে তাই ফ্রিজ নিয়ে টেনশন করার দরকার নেই।
-“আপনার মাথা ঠিক আছে? এতগুলো কে খাবে..?
-“এলাকার লোকজন…আমি সবাইকে দাওয়াত করে এসেছি।
-“মানে কী..? হটাৎ লোকজনকে দাওয়াত খাওয়ানোর কথা আসল কোথা থেকে..?
-“তার কইফত কী তোকে দিতে হবে..?
-“অবশ্যই দিতে হবে আমি তো এতকিছু রান্না করব না।
-“তুই করবি তোর ঘাড় করবে…
-“আপনার মনে হয় এতগুলো রান্না করা আমার একার পক্ষে করা সম্ভব?
-“তোর পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব,রাতের বেলা তেজ দেখিয়ে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসা সম্ভব। আমাকে থাপ্পড় মারা সম্ভব। তাহলে এগুলো সম্ভব হবে না কেন?
আদিবা মুখ কালো করে বলল,
-“খামখেয়ালি বন্ধ করুন আমি এসব রান্না করতে পারব না….
শেষ শব্দটা উচ্চারনের আগেই বিকট শব্দে আত্না কেঁপে উঠল আদিবার। তাকিয়ে দেখল আদিত্য সামনে থাকা ড্রেসিং টেবিলের কাচ টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে সাথে ফুলদানিটাও আদিবার বুঝতে সময় লাগল না যে আদি রাগে ফুলদানিটা ছুড়ে মেরেছে। আদিবা অবাক চোখে তাকাতেই দেখলে মুহূর্তেই আদির মায়াবী মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠছে।
আদি চোখ সরু করে বলল,
-“পারব না,হবে না,করব না শব্দ গুলো আমার সামনে বলবি না শুনতে ভাল লাগে না…
-“আ আ আপনি গ্লাস টা ভেঙে ফেললেন কেন..?
-“তুই মুখ কালো করে কথা বলছিলি দেখতে খারাপ লাগছিল। যে আয়নায় তাকালে মেজাজ খারাপ হবে সেটা রাখার দরকার কী? যদিও দোষটা আয়নার ছিল না..
আদির উত্তর শুনে আদিবার কথা আটকে গেল…
কি বলবে বুঝতে পারছে না।
-“আর কিছু বলবি..?
আদিবা মাথা নিচু করে নিল কারন আদির রাগের পরিমান এতক্ষনে তার বুঝা শেষ। এখন কিছু বললে গায়ে হাত তুলবে তাই বাধ্য হয়ে এগিয়ে গেল… সাথে সাথে পিছন থেকে আদিত্য বলে উঠল।
-“দাঁড়া ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?
-“আ আ আ…আমি
-“আমি বাঘ কিংবা ভাল্লুক নই তাছাড়া আমতা আমতা করার মত কিছু ঘটেনি। যা বলতে চাস স্পষ্ট ভাষায় বল…
-“ক ক কিছু না আমি কাচ গুলো পরিষ্কার করে রান্না করতে যাচ্ছি।
-“লাগবে না তুই কাচ পরিষ্কার করতে পারবি না। হাতে লেগে যাবে। তুই রান্নার জোগাড় কর গিয়ে যা..
-“কিন্তু সারা ঘরে তো কাঁচ পড়ে…
আদিবাকে কথা শেষ করার সুযোগ দিল না চোখ পাঁকিয়ে তাকাল আদি।আদিবা কথা বাড়াল না..
পিছন ঘুরে যেতে চাইল পিছন থেকে আদি বলে উঠল,
-“হাত কেটে যাওয়া,পুড়ে যাওয়ার মত অঘটন যেন না ঘটে. কোনভাবেই যেন আজ কোন অঘটন না ঘটে। ধীরে ধীরে রান্না করবি তাড়াহুড়ো করার কোন প্রয়োজন নেই।
আদিবা মাথা নেড়ে গিয়ে বাজার নিয়ে বসল সেই ফাঁকে আদিও চেঞ্জ করতে চলে গেল।
আদিবা কা-টা-কুটি করতে করতে আদি এসে ঘরের কাচ পরিষ্কার করতে শুরু করল। দৃশ্য টা দেখে আদিবা অবাক হল। আদি কাঁচ গুলো সরিয়ে রেখে বিছানায় ফোন নিয়ে বসে পড়ল। বারান্দায় বৃষ্টির ছাঁট আসছিল বলে আদিবা ঘরে বসেই কাটাকুটি করছে।আদি ফোনের দিকে মনযোগ দিলেও মাঝে মাঝেই মুখ তুলে আদিবাকে দেখছে..আদিবা ভয় পেয়েছে তাই মন দিয়ে কাজ করছে।
হটাৎ আদি বলে উঠল,
-“তারপর আদিবা গ্রামে এসে তোর কেমন লাগছে বল?
-“মানে..?
-“এই যে রান্না করা ঘর গোছানো সব মিলে এখানে এসে ভুল করেছিস মনে হচ্ছে না?
-“নাহ! কিসের ভুল আমার কোন অসুবিধে হচ্ছে না..
-“তাই নাকি? তা তুই কি জানিস এখানে মিক্সার নেই সব মসলা তোকে বাঁটাবাটি করতে হবে..?তারপর রান্নাঘরে গিয়ে ভিজে ভিজে রান্না করতে হবে…
কথাগুলো শুনে আদিবা অসহায় চোখে তাকাল কিন্তু আদি পাত্তা না দিয়ে বলল,
-“এখনো সময় আছে স্বীকার কর বাসা থেকে বেরিয়ে এসে ভুল করেছিস।
আদিবা উত্তর দিল না।
-“জেদ টা একেবারে ছোটবেলার মতই আছে এই জেদের জন্যই তুই মার খেতি।
-“আপনিও আগের মতই আছেন…
-“নাহ আমি অনেক কন্ট্রোল করতে শিখেছি নাহলে আজ আয়নার বদলে কারোর হাত পা ভাংগত…
আদিবা প্রসঙ্গ টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল,
-“আমি রান্না করতে পারব আপনি চুপচাপ বসে থাকুন।
-“করত ত হবেই। ধর তোর শ্বশুড়বাড়িতে যদি অনেক লোক থাকে তখন কী করবি?এখন থেকে অভ্যাস করে নে।
-“অনেক লোক থাকলেও সমস্যা নেই আপনার মত কেউ না থাকলেই চলবে।
আদিবার কথা শুনে আদিত্য হা হা করে হেসে উঠল
-“কেন আমি আবার কি করেছি? আজ তো তোকে একটাও বাজে কথা বলি নি মারিও নি।
আদিবা কিছু না বলে রান্না ঘরে চলে গেল। বৃষ্টি কমেছে কিন্তু সবগুলো জিনিস রান্না ঘরে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে।আদিবা কয়কবার যাওয়া আসা করে হাঁফিয়ে উঠল,আদির দিকে তাকিয়ে অসহায় ভংগিতে বলল,
-“আপনি কী মানুষ?
-“অন্য কিছু মনে হওয়ার কারন কী..?
-” আমি একা একা কষ্ট করছি আর আপনি বসে বসে মজা দেখছেন..?
-“এছাড়া আমার আর কী করার আছে..?
-“রান্না নাই পারলেন জিনিসগুলো নিতে একটু হেল্প তো করতে পারেন।
-“আগে বলবি না? আগে বল্লেই হেল্প করতাম বলেই আদি নেমে এসে আদিবাকে কোলে তুলে নিল।
-“ক ক কী করছেন?
-“তুই তো বললি হেল্প করে দিতে তাই নিয়ে যাচ্ছি যদি আমার হেল্প চাস এভাবেই হেল্প করব প্রতিটা জিনিস তুই নিয়ে যাবি, আর আমি তোকে।
-“আমি এমন হেল্প চাইনি কথায় কথা গাঁয়ে হাত দেওয়া কেমন স্বভাব? লোকে দেখলে কি ভাব্বে? ছাড়ুন বলছি।
-“ছেড়ে দিব..?
-“অবশ্যই ছাড়ুন বলছি অসভ্যতা করবেন না…
কথাটা শুনে কোন সংকেত ছাড়াই আদি আদিবাকে ছেড়ে দিল..আদিবা নিচে পড়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকাল তাৎক্ষনিক ঘটনায় ব্রেইন ব্যাথার পরিমান পরিমাপ করতে পারে নি তাই আদিবা চিৎকার দেওয়ার সুযোগ পায়নি।
আদিবাকে নিচে ফেলে দিয়ে আদি হন হন করস ঘরে চলে গেল। নাহ আদিবা ব্যাথা তেমন পায়নি তবে কাঁদায় পড়ে সারা শরীর মাখামাখি অবস্থা..আদি কয়েকবার ড্রেস বদলে নিতে বললেও আদিবা ড্রেস চেঞ্জ করল না। কাঁদা ধুয়ে নিয়ে ভেজা কাপড়েই রান্না করছে…মসলা বাটা সবজি কাটা সব করতে করতে হাফিয়ে উঠেছে আদিবা।
আদি আদিবার কান্ড দেখছে কিছু বলছে না। এত দুনিয়ার কাজ করে আদিবার প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা বেশ কষ্ট করে সবগুলো রান্না শেষ করে আদিবা ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল…ভীষন কষ্ট হয়েছে।আদিত্য কোন কারন ছাড়া তাকে দিয়ে এতগুলো কাজ করিয়েছে ভেবেই খারাপ লাগছে। তবে কী আদির মনে তার জন্য কোন মায়া নেই? যে মানুষটা তাকে এতটা পরিশ্রম করাতে পারে সে আর যাইহোক তাকে ভালবাসতে পারে না। আদিবা কেঁদে কেঁদে নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করছে।
বেশঅনেক্ষন ধরে আদিবা ওয়াশরুমে বসে আছে দেখে আদি দরজার সামনে গিয়ে গলা ছাড়ল,
-“সু*সা*ইড করার সুব্যাবস্থা এখানে নেই তাই ঢং বাদ দিয়ে বাইরে আয়…
আদিবা উত্তর দিল না..
-“১ থেকে ৩ গুনব যদি বের না হোস তোর কপালে আজ যে কি আছে আদিবা ভাবতেও পারছিস না..দরজা খোল।
আদিবা তাড়াতাড়ি চোখ মুখে পানি দিয়ে বের হল…আদি নিজের আরও এক সেট কাপড় এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“আসার সময় কাপড়গুলোন অন্তত আনা উচিত ছিল।যাইহোক কান্নাকাটির দরকার ছিল না। এইটুকু শাস্তি তোর প্রাপ্য ছিল আমি শুধু বুঝাতে চেয়েছিলাম গ্রামের জীবনটা তোর জন্য না।
-“এখানে থাকতে আমার কোন কষ্ট হত না কিন্তু একদিনে এতগুলো রান্নার সত্যিই কী কোন দরকার ছিল…?
আদি অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তুই আমায় বিয়ে করতে চাস সেটা এভাবে প্রমাণ না করে বাসায় বললেই তো পারিস..
-“মানে..?কিসব আবল তাবল বলছেন? আমি কখন বললাম আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই..?
-” গ্রামের বাড়িতে হুট করে দুটো ছেলে মেয়ে এসে একসাথে থাকার মানে তুই বুঝিস আদিবা..?
আদিবা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
-” মানে…কী বলতে চাইছেন?
-“গ্রামে কেউই আমায় চিনে না তোর সাথে আমার কী সম্পর্ক সেটা কেউ জানে না.যখন কেউ আমাদের একসাথে দেখবে কি ভাব্বে?
-“কী ভাব্বে..?
-“তুই ছোট বাচ্চা না আমি কী বুঝাতে চাইছি তুই বুঝেছিস।
-“একজনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে যার পুরো শরীরে নিজের দখলদারির প্রমাণ এঁকে দিয়েছেন এখন তার সম্মানের কথা ভাবছেন? অদ্ভুত লাগছে শুনতে..
-“আমি মিথ্যে বলি না আর তোকে আমি ভাল চোখে দেখিও না আর সেজন্যেই ভয় পাচ্ছি কিন্তু আমাকে নিয়ে যে যাই বলুক আমি চাই না কেউ একটা বারের জন্য বলুক আদিবা কোন ছেলের সাথে….
আদিবা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল আদির দিকে..
-“কাল রাতে আমরা এসেছি তাই হয়ত কেউ খেয়াল করেনি কিন্তু আজ কেউ না কেউ নিশ্চুই দেখবে তাই আগেই সবাইকে বাড়িতে আসতে বলে দিয়েছি। কেউ তোকে নিয়ে কিছু বলার আগে আমি সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই তুই আমার কে হোস….
আদিবা আদির চোখে চোখে তাকিয়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করল,
-“কে হই আমি আপনার….?
।
।
।
চলবে…!!!