বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব 45

0
971

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#লেখনীঃ মনা হোসাইন
#পর্বঃ৪৫
আদি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না। ঠাস করে থা*প্পড় বসিয়ে দিল আদিবার গালে। আদিবা তাতে ব্যাথা পেলেও ভয় পেল না। রাগী চোখে তাকাল আদির দিকে। আদিবা ভয় পায়নি ব্যাপরটা আদির রাগের আগুনে যেন ঘী ঢালল। সে চেঁচিয়ে উঠল,
-“এসবের মানে কী? কী চাইছিস তুই আদিবা জবাব দে…
আদিবা উত্তর দিল না আদি আরও রেগে গিয়ে বলল,
-“সবকিছুর একটা লিমিট থাকে তুই সব সীমা পেরিয়ে গিয়েছিস আমাকে আর রাগাস না। সামলাতে পারবি না ভালয় ভালয় জবাব দে হাত কেটেছিস কেন …?
আদি বেশি রেগে যাচ্ছে দেখে আদিবা উত্তর দিতে বাধ্য হল খটমট করে উত্তর দিল,
-“কাটিনি,কেটে গেছে…
-“আবার মিথ্যা বলিস? সিসিটিভিতে আমি সবি দেখেছি। এত জেদ তোর? আজ যদি তোর জেদ আমি ভাংগতে না পারি আমার নাম আদি না। বলেই জিন্স থেকে বেল্ট খুলে আদিবার সামনে দাঁড়াল,
-“বল কেন কেটেছিস? এত বাড়াবাড়ির কারন কী? সুখে থাকতে ভূতে কিলায়..?
-“সুখ..? কোনটাকে সুখ মনে হচ্ছে আপনার?
-“মানে..? কি বুঝাতে চাইছিস? সরাসরি বল,
-“না বললে কী করবেন? মা*রবেন? মা*রুন। তবে তার আগে বলুন আমার ভুল টা কী? বিয়ের পর দিন নিজের বরকে কাছে পেতে চেয়েছি সেটা অন্যায়? বারবার ফোন করেছি সেটা অন্যায়?
-“না অন্যায় না তবে বাড়াবাড়ি। আমি কি ম*রে যাচ্ছিলাম বাসায় ফিরতাম না? আমি বার বার বলেছিলাম আজ আমার একটু কাজ আছে তারপরেও সারারাত ফাযলামি করেছিস আর এখন হা*ত কে*টে একাকার অবস্থা এভাবে আমার উপড় ট*র্চার করার মানে কী?
-“হাত আমার, ব্লা*ড আমার, আপনার অসুবিধা কোথায়?
-“আদিবা তুই বাচ্চাদের মত আচারন কেন করছিস? এমন তো না যে আমি তোকে রেখে অন্য কাউকে সময় দিতে চলে গিয়েছি এটা আমার প্রফেশন তোকে সেটা বুঝতে হবে।
-“বুঝলেই কী আর না বুঝলেই কী? আপনার কাছে আমার অভিমানের কোন দাম আছে?
-“মানে?
-“মানেটা বুঝলে অনেক আগেই বাসায় ফিরতেন রাতে ফিরতেন না যাইহোক নিচে যান আমি খাবার দিচ্ছি। বিয়ে করে এনেছেন দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে। তানাহলে আবার কখন থাপ্প*ড় লাগাবেন কে জানে?
-“আদিবা…?
আদিবা কিছু না বলে নিচে চলে গেল। আদিও নিচে নামছিল ঠিক তখন বাসার কলিং বেল বেজে উঠল আদিবা গিয়ে দরজা খোলল। দরজা খোলে আদিবা কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে আদির দিকে তাকাল কিন্তু আদি তাকে পাত্তা না দিয়ে তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে গেল।
-“আংকেল,সিনথিয়া,জেসমিন কেমন আছো তোমরা? এসো এসো ভিতরে এসো।
আদিবা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে তার চোখে মুঝে বিরক্তি ফুটে উঠছে।তবে আদিকে বেশ খুব প্রফুল্ল দেখাচ্ছে। সবাই ঘরে ঢুকতেই লোকটা বললেন,
-“আসলে বউ মার সাথে তো ভাল করে পরিচয় হয় নি। তুই এত ঝামেলা করে বিয়ে করলি কথা বলার সুযোগেই পেলাম না তাই দেখা করতে এসেছি।
-“খুব ভাল করেছো আম এমনিতেও ওকে নিয়ে বাসায় যেতাম।
-“তাত অবশ্যই যাবে তাই বলে আমরা যাব না? জেসমিন বউ মার গয়নাগুলো দাও তো..
লোকটি বলতেই একটা মেয়ে কয়েকটা গয়নার বক্স আদবার দিকে এগিয়ে দিল।সাথে সাথে আদি বলে উঠল,
-‘আরে আংকেল এসবের কি দরকার ছিল? তোমরা দেখা করতে এসেছো এই তো অনেক..
-“তা বললে হয় নাকি আমার একমাত্র ছেলের বউ আমার দায়িত্ব আছে না? বউ মা একটু এদিকে এসো।
লোকটি বলতেই আদি বলল,
-“আদিবা ইনিই আংকেল যার কথা তোকে বলেছিলাম আর সিনথিয়া জেসমিন আমার…বাকি কথা শেষ করার আগেই আদিবা বলে উঠল,
-“বোন তাই তো..?
আদি হেসে জবাব দিল।
-“হুম…
আদিবা ওদের হাই হ্যালো কিছু না বলে হন হন করে উপড়ে যেতে যেতে বলল
-“একটু উপড়ে আসুন তো…
আদিবার আচারনে আদি বিব্রত হল সে বেশ অবাক হয়েই আদিবার কাছে গেল,
-“এসবের মানে কী আদিবা..?
-“প্রশ্ন টা তো আমার করার কথা.. এরা কারা এখানে কী করছে..?
-“কারা মানে..আংকেলের কথা তো আগেই বলেছি আর ওরা আংকেলের মেয়ে…
-“তাদের সাথে আপনার এত ভাব কিসের।
-“আদিবা ওরা আমার বোন..
-“কেমন বোন নিজের বোন? নাকি বিয়ের আগে আমি যেমন ছিলাম তেমন বোন?
আদিবার কথাটা শুনে আদির মুখ কালো হয়ে গেল। আদি প্রচন্ড অবাক হয়ে আদিবার দিকে তাকাল,
-“মানে…?
-“মানেটা আপনি ভাল করেই বুঝেছেন।
-“আদিবা মুখ সামলে কথা বল এই ব্যাপারে কোন রকমের ফা*যলামি আমি সহ্য করব না।
-“আমি ফা*যলামি করছি? নাকি আপনি লুকানোর চেষ্টা করছেন..
-“আজব আমি কি লুকাব? তুই কী বুঝাতে চাইছিস? ওদের সাথে আমার অন্য কোন সম্পর্ক আছে..?
-“অবশ্যই আছে যদি না থাকে এখনী নিচে গিয়ে ওদের বেরয়ে যেতে বলুন…
-“তোর মাথা ঠিক আছে কি বলছিস বুঝতে পারছিস?
-“ভুল বলছি? আপনার যে চরিত্র! দেশে গিয়ে দুদিন থেকেছিলেন তারমধ্যে আমার সাথে যা যা করেছেন এদের সাথে ৬ বছর থেকে কিছু করেন নি কিভাবে বিশ্বাস করি? যাইহোক বিয়ের আগে যা করেছেন এখন আর সেসব সম্ভব না ওদের এক্ষনী বাসা থেকে বের করবেন যান।
আদি আদিবার আচারনে হতবাক হয়ে গেল সে উত্তর দিতে পারল না।
-“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? ও পারবেন না তাই তো..? ঠিক আছে আমিই যাচ্ছি বলে আদিবা হনহন করে চলে গেল আর আদি নিচে আসার আগেই আদিবার চেঁচানো কন্ঠ কানে আসল,
-“বিয়ের আগে যেসব ফূর্তি করার করেছেন এখন থেকে এসব বন্ধ আদির সাথে আপনারা আর কোন যোগাযোগ রাখবেন না। রাখতে চাইলেও আমি রাখতে দিব না বুঝেছেন? বেরিয়ে যান এখনী…
-“বউমা তুমি এসব কি বলছো? আদি আমার ছেলের মত আর ওরা আদির বোন..
-“সেটা আপনি বিশ্বাস করেন আমি তো করিনা।
বেরিয়ে যান বলছি…
আদিবার বাড়াবাড়ি দেখে আদি তাড়াতাড়ি ছুটে আসল,
-“আদিবা তুই এসব কি করছিস ।আংকেল ওর কথায় কিছু মনে করো না প্লিজ। আদিবা ভিতরে চল…
বলে আদি আদিবার হাত ধরতেই আদিবা চেঁচিয়ে উঠল,
-“আপনি আমাকে ভিতরে না নিয়ে ওদের বেরিয়ে যেতে বলুন।
আদির সমস্ত ধর্য্যের বাঁধ ভাংগল সে আবারও আদিবার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
আদিবা গালে হাত দিয়ে ছল ছল চোখে তাকিয়ে বলল,
-“আপনি বাইরের কারো জন্য আমায় গায়ে হাত তুললেন..?
আদি দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দিল
-“ওরা বাইরের কেউ না।
-“তাহলে কী আমি বাইরের?
-“মানে..?
-“আপনি ওদের আর আমার মাঝে কাকে বেঁচে নিবেন হয় ওদের বের করে দিন অথবা আমি নিজে বেরিয়ে যাব..
আদিবার কথা শেষ হতেই লোকটি বলে উঠল,
-“ছি ছি বউমা তুমি এসব কি বলছো? তোমাকে কোথাও যেতে হবে না আমরা এখনী চলে যাচ্ছি তুমি এত রাগ করো না।
বলে ওরা চলে যেতে নিল সাথে সাথে আদি দৃঢ় কন্ঠে বলল,
-” না আংকেল তোমরা কোথাও যাবে না।
আদির কথা শুনে আদিবা আদির দিকে তাকাল সে ভাবতেও পারেনি আদি এমন কিছু বলবে তাই হতবাক হয়ে বলল,
-“আপনি…??
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আদি বলল,
-“বাইরে যাওয়ার দরজাটা ওদিকে.. বলে আদি আদিবাকে দরজা দেখিয়ে দিল।
আদিবা আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বাইরের দিকে ছুটল।
সাথে সাথেই লোকটি বলল,
-“আদি কি করলে এটা? যাও এখনী বউমা কে ফিরিয়ে আনো…
-“না আংকেল,আমি কোনদিন অন্যায়ের সাথে আপোস করিনি। আজও করব না। চিন্তা করো না নিজের ভুল যখন বুঝতে পারবে তখন নিজে থেকেই ফিরে আসবে…




আদি আদিবার পিছু পিছু গেল না তারা সবাই মিলে অপেক্ষা করছিল আদিবার জন্য। কিন্তু আদিবার ফিরার নাম নেই বেশ কিছুক্ষন কেটে যাওয়ার পর জেসমিল বলল,
-“আদি ভাই আমার মনে হচ্ছে তুমি ভুল করছো তোমার ভাবীর কাছে যাওয়া উচিত…
-” ভুল আমি করেছি নাকি আদিবা করেছে..? আমি এখন ওকে আনতে গেলে ও নিজের ভুলটা কখনই বুঝবে না। ওর উচিত নিজের থেকে নিজের ভুলটা অনুধাবন করা।
-“কিন্তু আমার মনে হয় ভাবী তোমাকে একটু বেশিই ভালবাসে তাই তুমি অন্য কোন মেয়ের প্রতি কেয়ারিং সেটা মানতে পারে নি।
-“তাই বলে অযথা রিয়েক্ট করবে..?
-‘ অতিরিক্ত ভালবাসায় এমন possessiveness দেখা যায়…
-“এটাকে ভালবাসা বলে না। ভালবাসলে ওপর পাশের মানুষটার কথা ভাবতে হয় আদিবা এসেছে থেকে আমাকে একের পর এক প্রেসার দিয়ে যাচ্ছে…
-“একদিনেই ওর উপড় থেকে তোমার মন উঠে গেল?
আদি বিস্ময় চোখে জেসমিনের দিকে তাকাল,
-“ভাইয়া আমি এভাবে বলতে চাইনি কিন্তু তোমার আচারনে সেটাই প্রকাশ পাচ্ছে।
-“না বুঝে ভুলভাল বকবা না। তোমার কোন ধারনা আছে আদিবা এসেছে থেকে কি কি করেছে? আমি অফিস থেকে ওকটু লেইটে ফিরেছি বলে নিজেফ হা*ত কে*টে…
-“কী বলছো এসব? সামান্য অফিসে যাওয়া নিয়ে…
-“হ্যা এবার ভাবো কতটা ছেলমানুষ…
-“সত্যিই ভাবার কথা,একবার ভাবো সামান্য কারনে যে হাত কা-টতে পারে সে তোমার এমন আচারন দেখে কি করবে?
-“মানে..?
-“তুমি অন্য মেয়েদের জন্য তাকে বের করে দিয়েছো এটা কি সে সহ্য করতে পারবে..? সামান্য দেরি করে বাসায় আসায় যে নিজের ক্ষতি করতে পারে সে এত বড় ধাক্কার পর গাড়ির নিচে মা*থা দিবে না তার কি গ্যারান্টি আছে..? দেখা গেল ভাবি নিজের ভুল বুঝার আগেই কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলল।
-“নাহ… বলেই আদি চেঁচিয়ে উঠল।
-‘আমার আদিবার কিছু হতে পারে না।
বলতে বলতে সে বাইরের দিকে ছুটল…



চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here