তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি – Part 2

0
366

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ_আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
পর্ব ২
ইয়াশ অসহায় ভাবে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রাহিমা বেগম রেগে ভিতরে চলে যান।
ইরফান যেতে নিলে ইয়াশ হাত ধরে আটকে দেয়।
“ছাড় আমার হাত।তোর সাথে দাড়িয়ে থেকে বেইজ্জতি হতে আমি পারবোনা।”
“ভাইয়া হেল্প।”
“আমি পারবো না।এখন এই হাফ প্যান্ট পড়েই মেয়ে দেখ গাধা একটা।”
“ধ্যাত।”
সবাই ইয়াশকে রেখে ভিতরে গেলো।তখন তোরশার বোনের হাসবেন্ড অনিক এগিয়ে আসে ইয়াশের দিকে।
“আরেহ তুমি এভাবে মুড অফ করো না। এসো আমি তোমাকে হেল্প করছি।”
“Thank you ভাইয়া। একমাত্র আপনিই বুঝলেন আমার অবস্থাটা।”
অনিক রুমে এসে ইয়াশকে ওর একটা নিউ প্যান্ট পড়তে দেয়।ইয়াশ খুশি হয়ে পড়ে নেয়।বাট প্যান্টটা এতোই ঢিলা হয় যে খুলে যেতে নেয় বার বার।আসলে অনিক একটু গুলুমুলু টাইপ।
ইয়াশের অবস্থা এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি। আর কি করার এই প্যান্ট পড়েই কোনোরকম ধরে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে ইয়াশ।।
বর্তমান,,
ইরফান ওকে দেখে হেসে কুটিকুটি।আনিশার আম্মু সকলকে খাবার দিতেছে।সবাই একে অপরের সাথে কথা বলছে।
তখনই ইয়াশের বাবা বলে,,
“আমাদের তো সব কথা বলা হলো এবার যারা সারাজীবন একে অপরের সাথে থাকবে তাদের একে অপরের সাথে আলাদা কথা বলা উচিত।”
আনিশার বাবা বলে,,
“হুম তাই তো।আনিশা মা যাও ইয়াশ বাবাকে নিয়ে ছাদে যাও।কথা বলো দু’জন।”
আনিশার নাক পিটপিট করছে অনেকক্ষন ধরে। ভাবছিলো কখন এখান থেকে উঠবে।তার মধ্যে এই কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো ওর।তারপরও হাসি মুখে উঠে দাড়ালো।আর ইয়াশ প্যান্ট নিয়ে বহু কষ্টে ছাদে উঠলো।
বেশ অনেকক্ষণ ধরে ২জনই চুপ।ইয়াশ ভাবছে কিছু বলবে।তখনই তোরশা সহ কয়েকজন কাজিন জুস নিয়ে এলো।আনিশা এই সুযোগে সাইডে গিয়ে নাক মুছে নিলো। ওর কাছে টিসু থাকেই সবসময়।
কিন্তু কথা হলো টিসুটা ফেলবে কোথায়?নিচে বিল্ডিং নির্মানের কাজ চলছে।আর ছাদের মধ্যে ফেললে যদি ইয়াশের চোখে পড়ে যায় একটা লজ্জাজনক ঘটনা হবে।তাই আনিশা ঠিক করলো চোখ বন্ধ করে সামনের দিকে ছুড়বে।
করলও তাই।
তারপর চোখ খুলতেই দেখলো ইয়াশ ওর দিকে আসছে। আর ওর মাথায় টিসুটা।
ইয়াশ বুঝেছে কিছু একটা ওর মাথায় পড়েছে।কি সেটা দেখার জন্য মাথায় হাত দিয়ে দেখলো টিসু।ইয়াশ অদ্ভুত চোখে আনিশার দিকে তাকালো।
আনিশা মেকি এক হাসি দিয়ে ওখান থেকে সরে অন্য পাশে গেলো।
কাজিনরা চলে গেছে জুসের ট্রে রেখেই।আনিশার আম্মু ছাদে আচার রোদে জন্য একটা টেবিল রেখেছে।তার উপরই জুসের ট্রে রেখে গেছে তোরশারা।
আনিশা জুসের গ্লাস জোড়া থেকে একটি গ্লাস নিয়ে খেতে লাগলো।তখনই আনিশার পাশে এসে দাড়ায় ইয়াশ।ইতস্তত বোধ করছে ও।
আনিশা বুঝেছে ইয়াশ এসে দাড়িয়েছে ওর পাশে।কিন্তু লজ্জায় তাকাতে পারছে না।
ইয়াশ বলল,,
“হ্যালো!ওয়াশরুম কোথায়?”
“আমি নিয়ে যাচ্ছি আসুন।”
আনিশা গ্লাসটা ট্রে তে রেখে ইয়াশের দিকে তাকালো বেশ হাসি পাচ্ছে ওর। তবুও চেপে রেখে ইয়াশকে ওর রুমের ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো।
আর ইয়াশ অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে আনিশার দিকে।
মেয়ে দেখতে এসে এমন পরিস্থিতি পড়তে হবে জানলে ইয়াশ আসতো না।কালই শ্যাম্পু করেছিলো সে।এখন মন চাচ্ছে আবার গোসল করতে।এমনিতে ইয়াশ অলস।ঘুম তার ভিষন প্রিয়।শ্যাম্পু করার ভয়ে শীতকালে ১ দিন পর পর গোসল করবে বলে এবার ঠিক করেছে।
ইয়াশ কোনোরকম পাজামাটা ভালে করে বেধে চুল পরিষ্কার করে নিলো।তারপর বের হয়ে দেখে আনিশা দাড়িয়ে আছে।ইয়াশ আনিশা দু’জন একসাথে নিচে গেলো সবাই যেখানে আছে সেখানে।
ওদের দেখতেই একটা ৫বছরের ছেলে আনিশাদের প্রতিবেশি আর কি সে বলে উঠলো,,
“এ মা দেখো ছেলে হয়ে মেয়েদের প্লাজু পড়েছে।”
ছেলেটির পাশেই ছিলো তার মা। এ কথা শুনতেই ছেলের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরল। আনিশা এবার হাসি আটকাতে পারলো না হেসেই দিলো।
হাসির মাঝে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে হাসি বন্ধ করে সবার সামনে গিয়ে দাড়ালো দু’জন।
ইরফান ইয়াশের কানে কানে প্রশ্ন করল,,
“কেমন লাগলো হবু বউকে মেরা ভাই?”
ইয়াশ অসহায় একটা লুক দিলো।কি বলবে ও আলাদা কথা বলতে গিয়ে কথা তো বলা হয়ই নি উল্টো নাক মুছা টিসু ওর মাথা পড়েছে।ছি ছি কি লজ্জাজনক কথা।
কথা বলে সবাই ঠিক করলো ১০ দিন ওর Engagement এবং তার ২০দিন পর বিয়ে।
তারপর আরও কিছু ক্ষন কথা বলে ইয়াশরা চলে গেলো৷
ইয়াশরা যেতেই আনিশা সোফায় বসে গলা ফাটিয়ে হাসলে লাগলো।
ওদিকে গাড়িকে মুখে বিরক্তি নিয়ে বসে আছে ইয়াশ।
এরকম ঘটনা মেয়ে দেখতে গিয়ে কারোর সাথে আজ পর্যন্ত হয়েছে কি না সন্দেহ।
বাড়ি পৌঁছে ইয়াশ আগে গেছে শাওয়ার নিতে।
এগিয়ে কফি খেতে ইয়াশকে ডাকছে রাহিমা বেগম।
“এই ছেলে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে আমি নিশ্চিত। কি এক কান্ড ঘটিয়ে এলো হ্যা।আমার মান সমান আর একটু হলে যাচ্ছিলো।ওরা ভালো বলে রাজি হলো।নাহলে এই বেক্কল ছেলেকে কেউ মেয়ে দিতো না।”
“আহ ইয়াশের মা থামো তো ছেলেটা না হয় একটা ভুল করে ফেলেছে।
সারাটা সপ্তাহ তো কলেজে যায় ক্লাস করাতে।প্রফেসর বলে কথা।২টো দিনই তো বাড়ি থাকে। তাই এভাবে ঘুম নিয়ে খোটা দিচ্ছো।আর তা ছাড়া ও তো বেকার নয় যে ওর কাছে কেউ মেয়ে দিবে না।”
“তুমি থামো।একদম ছেলের হয়ে সাফাই গাইবে না। হাফ প্যান্ট পড়ে গিয়েছে ও মেয়ে বাড়িতে।আর কলেজ থেকে এসে এক ঘুম দেয় রাতে উঠে ২,৩ টা পর্যন্ত জেগে থাকে।এমন ছেলে আছে কোথায় তাও এতোবড় ছেলে। টিনএজার তো নয় যে এমন করবে।”
“বিয়ের আগে একটু এমন করছে, বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না।আর কফিটা দাও আমি দিয়ে আসছি।”
“ধরো। ভালো লাগে না আর।”
বলে কফির মগ রিশাদ সাহেবের হাতে দেন রাহিমা বেগম।
চলবে…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here