#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_বত্রিশ
–আপনার লজ্জা করলো না। যে মানুষ’টা আপনাকে ভাই এর আসন দিলো। সেই মানুষ’টার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে আপনার বিবেকে বাধলো না……..
ফাইজা চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে উঠলো। শরীর থেলে প্রচুর রক্ত ঝড়ে যাওয়ায় ফলে ওর শরীর দূর্বল হয়ে গেছে। চোখ মেলার শক্তি অব্দি নেই। বুকের ক্ষত’টা ব্যান্ডেজ করা। কাল থেকে না খাওয়া সব মিলিয়ে নিরবের দম ফুরিয়ে আসচ্ছে। তিথী’র অবস্থা বেশি খারাপ না হলেও অভুক্ত থাকায় সেও দূর্বল হয়ে পড়েছে। তিথী নিরব দুজনেই খুব কষ্ট চোখ খোলা রেখেছে। আর সামনেই ফারদিন মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ফাইজা’র চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও ভয়ংকর রেগে আছে। ফাইজার কথার জবাবে নিরব ওর দিকে অসহায় চোখে তাঁকিয়ে রইলো। কিছু বলার মতো শক্তি নেই ওর। তিথী অস্পষ্ট স্বরে “পানি” চাইতে ফারদিন গার্ড’দের ইশারা করতে একজন এক গ্লাস পানি এনে দিতেই তিথী এক চুমুকে’ই সব পানি খেয়ে ফেললো। তাও ওর তৃষ্ণা ফুরাচ্ছেনা। শরীরে কিছু’টা শক্তি ফিরে পেতে তিথী হালকা হেসে নিঁচু স্বরেই বলে উঠলো……
–তোর মা_বাবা’কে প্রথমে উপরে না পাঠিয়ে তোকে উপরে পাঠানো দরকার ছিলো। তোর পাশে আমার ফারদিন’কে একটুও মানাচ্ছে না। মন চাচ্ছে একটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তোকে খন্ড বিখন্ড করে ফেলি……
তিথী’র কথা শুনে ফারদিন রেগে ওর দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে’ই ওর কানে থা’প্প’ড় এর শব্দ ভেসে আসলো। তা দেখে ফারদিন হালকা হেসে আবার থেমে গেলো। তিথী কথা বলা শেষ না করতে’ই ফাইজা ওর গালে পর পর দুইটা থা’প্প’ড় দিয়ে উঠলো। তারপর তিথী’র গাল চে’পে ধরে অগ্নী ঝড়া চাহনী দিয়ে বলে উঠলো……
–আমাকে খুব বোকা মনে হয় তোর। লজ্জা করছেনা একটুও। দুইটা মানুষ তোর জন্য নিজেদের জীবন হারালো। তোর মধ্যে বিন্দু মাত্র অনুশোচনা হচ্ছে না……….
ফাইজার কথা শুনে তিথী শব্দ করে হাসতে লাগলো। এখনো তিথী’কে হাসতে দেখে ফারদিন ফাইজা দুজনে’ই বেঁকুব হয়ে আছে। তিথী হাসতে হাসতে বলে উঠলো…….
—অনুশোচনা মাই ফুট। পৃথিবী থেকে দুইটা আবর্জনা দূর হয়েছে এতে অনুশোচনা হওয়ার কি আছে। আমি ত…..
আর বলতে পারলো তার আগে’ই ফারদিন একটা ধারালো ছু’ড়ি সোজা তিথী’র মুখে ঢুঁকিয়ে দিলো। চোখের পলকে তিথীর দুই ঠোঁট কে’টে থেতলে গেলো। মুখ দিয়ে গলগল করে র’ক্ত পড়তে লাগলো। তাতে তিথী চিৎকার করে উঠলো না। ফাইজা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। ফারদিন ছু’ড়ি’টা ওর মুখ থেকে বের করে এনে সোজা গলায় বসিয়ে দিলো। এতে তিথী এইবার যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো। ফারদিন এইবার দাতে দাত কড়মড় করতে করতে বলে উঠলো…
–তোর শাস্তি’টা কম হয়ে গেলো। তোকে আরো ভয়ং’কর ভাবে মা-রতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তোর মুখ’টা এই মুহূর্তে বন্ধ করা খুব দরকার ছিলো…….
বলে রিভলবার নিয়ে তিথী’র মাথা বরাবর শুট করে দিলোম তিথী ছটফট করতে করতে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। নিরব দশর্ক হয়ে সব’টা দেখছে নিশ্চুপ। ফাইজা ভয়ে কাঁপছে দেখে ফারদিন ও’কে এক হাতে বুকের মধ্যে চে’পে ধরলো। নিরব এতক্ষনে এইবার অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো……..
–তিথী মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলো। তাই ওর বিহেভিয়ার এমন ছিলো…….
কথা’টা শুনে’ই ফারদিন ফাইজা দুজনে’ই বিস্ফোরিত চোখে নিরবের দিকে তাঁকালো। ওদের প্রশ্নোত্তর চোখে তাঁকাতে দেখে নিরব মাথা নাড়ালো।
ফাইজা ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে করুন স্বরে প্রশ্ন করলো……
–আপনি কেনো এমন করলেন নিরব ভাইয়া? আপনি তো আমাকে বোনের মতো আগলে রেখেছিলেন। তাহলে কেনো এমন করলেন?
ফাইজার প্রশ্নের উওরে নিরব একটু হাসলো। সাথে সাথে ওর চোখ দিয়ে অশ্র ফোটা গড়িয়ে পড়লো। নিরব করুন স্বরে ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…….
–চার বছর আগে তোমাকে দেখেছিলাম নিজের বাবার সাথে হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলে। একটা বাচ্চা’ মেয়ে’টা হাতে আইস্ক্রিম খেতে খেতে লাফাতে লাফাতে বাবার সাথে হাটছিলো। দেখে চোখ ফেরাতে পারিনি৷ মেয়ে’টা সৌন্দর্য আমাকে ঘিরে ধরেছিলো ভীষন ভাবে। সেদিন থেকে চেয়েও তোমার থেকে দূরে থাকতে পারিনি। প্রতিদিন তোমাকে দেখার জন্য ছুটে যেতাম। এভাবেই কেটেছিলো সময় যেদিন ফারদিনের থেকে শুনলাম আমি যাকে ভালোবাসি। সেই বাচ্চা মেয়েটা’কেই ফারদিন ভালোবেসে বিয়ে করে নিয়েছে। সেদিন প্রচন্ড আঘাতেও শুধু ফারদিনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে নিজের ভালোবাসা’কে ভুলে ছিলাম। অনেক মাস পর যখন তোমাকে আবার হসপিটালে দেখলাম তখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। ফারদিনের প্রতি রাগ আর তোমাকে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খায় তিথীর সাথে হাত মিলিয়ে সবার আগে তোমার বাবা-মা কে সরিয়ে দেওয়ার প্লান করলাম। এতে তুমি ভেঙে যাবে আর যখন জানবে এসব তিথী করেছে তখন ফারদিনের প্রতি রাগে ওর সাথে সম্পর্ক’টা নড়বড়ে হয়ে যাবে। আর এই সুযোগ’টা কাজে লাগিয়ে তোমাকে কাছে পাওয়ার চেষ্টায় আমি মগ্ন থাকতে পারব। আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি…….
এতক্ষন চুপ করে শুনলেও ফারদিন এখন আর সহ্য করতে পারলো না। ফাইজা ঘৃনা ভরা চোখে নিরবের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ফাইজা কিছু বলে উঠার আগেই ফারদিনের বুকে আঘাত করা স্থানে আবারো আঘাত করে উঠলো। এতে নিরব এইবার গলা ফাটিয়ে আতৎনাদ করে উঠলো। ফাইজা ভয়ে চোখ হাতে দিয়ে কাঁপছে। ফারদিন ছু’ড়ি’টা নিরবের গলায় ধরে বলে উঠলো….
–তুই পেছন থেকে আঘাত করেছিলি। আমি সামনে থেকে করলাম……
বলেই এক টান দিতেই গলার দিক’টা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। ফিনকি দিয়ে লাল র’ক্ত স্রোতের মতো বের হতে লাগলো। নিরবের ছটফটা’নি দেখে ফারদিনের চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ফারদিন নিরবের সামনে ধপ করে বসে পড়ে কান্নারত স্বরে বলে উঠলো….
–আমাকে ক্ষমা করে দিস প্লিজ। তোকে তো নিজের ভাই ভাবতাম। কেনো এমন করলি বল? যদি তুই ফাইজা’কে এত’টা কষ্ট না দিতি তাহলে আজ তোকে ও এত’টা আঘাত করতাম না আমি…….
বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো ফারদিন। সত্যি নিরব’কে তো ও নিজের ভাই ভাবতো৷ খুব ভালোবাসতো৷ আর সেই মানুষ’টার থেকে পাওয়া আঘাত কিছু’তেই সহ্য করতে পারছেনা ও। ফাইজা ফারদিনের পাশে বসে ফারদিন’কে আগলে নিলো। দুজনেই নিশ্চুপে চোখের পানি ফেলছে।
____________________________________________
পূর্নিমার চাদ’টা থালার মতো হয়ে চারদিকে আলোয় আলোকিত করে রেখেছে। ছাদের এক কোনে দোলনায় বসে আছে ফারদিনের কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে আছে ফাইজা। আজ সকালেই ফাইজা’কে নিয়ে ফারদিন চলে এসেছিলো। এখন ফারদিনের বাসায় আছে ফাইজা। ওদের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। ১৫ দিন পরে’ই দুজন সারাজীবনের জন্য একসাথে হবে। ফারদিন আকাশের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..
–আমি কিছু’তেই মেনে নিতে পারছি না। আমি খুব খারাপ মানুষ তাইনা জান। নিজের হাতে চার’টা জীবন নিয়েছি। অপবিত্র হয়ে গেছি আমি৷ নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে। যাদের আমি শাস্তি দিলাম এখন ওদের আর আমার মাঝে কোনো তফাৎ রইলোনা। আমিও ওদের মতোই খু’নী হয়ে গেলাম। আমি নিরব’কে মা/রতে চাইনি বিশ্বাস করো। ও’কে তো খুব বেশি ভালোবাসতাম। কিন্তু ওর বিশ্বাস-ঘাতকতা’টাও মেনে নিতে পারছিলাম না। আমার উপর তোমার ঘৃনা হচ্ছে তাইনা। হবেই তো আমার জন্য আন্টি, আংকেল’কে হারাতে হলো।
নিজের বাবা’কে যে ছেলে খু/ন করতে পারে সে কাউকে ভালোবাসতে পারেনা। কাউকে না……
বলে ফারদিন হুট করে উঠে নিচে নেমে এলো। ফাইজা ও’কে আটকালো না। নিশ্চুপ আকাশের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। মানুষ’টা নিজে কত’টা কষ্ট পাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছে ফাইজা। কাছের মানুষ’গুলোর থেকে সেই ছোট থেকে ধোকা খেয়ে আসচ্ছে। আর কত বার ঠকতে হবে ছেলে’টাকে?
#চলবে