প্রনয়-পর্ব 11

0
907

#প্রনয়
#নুসরাত সুলতানা সেজুথী
পর্ব-১১
আর-আর-সি ইন্ডাস্ট্রিজ।বিশাল জায়গা নিয়ে অফিসটি।দশতলা ভবনের।ভেতরে ঢুকলে এসির হিমহিম ঠান্ডা,কাঁচ বেস্টিত দেয়াল, চকচকে ঝকঝকে সব কিছু চোখে লাগতে বাধ্য।রুদ্রর মেইন অফিস এটি।এখানেই সব গুরুত্বপূর্ণ মিটিং,কনফারেন্স, ইম্পোর্ট -এক্সপোর্টের যাবতীয় কাজ সাড়ে সে।অন্যান্য গার্মেন্টস, রেস্টুরেন্ট গুলোতে ঢু মারলেও দিনের সব থেকে বেশি সময় কাটায় এখানেই। অফিসের সব থেকে আকর্ষনীয় জায়গাটি হচ্ছে রুদ্রর কেবিন।এত বড় জায়গা নিয়ে বানানো, দেখে বসার ঘর ভেবে বসবে যে কেউ।তার সাথে কেবিনে বিশাল বড় এক জানলা।যদিও সব সময় বন্ধই থাকে।তাও থাই গ্লাস ভেদ করে দূরের গাছগুলো দেখতে ভালো লাগে রুদ্রর।আশেপাশে আর উচু বিল্ডিং না থাকায় খুব সহজেই দেখা যায় সেসব।অভ্র মাত্রই রুদ্রর কেবিনের দরজায় নক করলো।রুদ্রর কেবিনের সব থেকে বিশেষ একটি দিক হচ্ছে তার দরজাটি রিমোর্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।ইচ্ছে করলে বসে বসেই লক করে দেয়,যখন মনে হয় একা থাকা প্রয়োজন। আবার ইচ্ছে হলে বসে বসেই খুলে দেয়।রুদ্রর ও বেশ লাগে বিষয় টা।অভ্র মাথা ঢুকিয়ে উঁকি দিলো,
—ভাই ডেকেছিলে?
‘ভেতরে আয়।
অভ্র আসতেই রুদ্র বসতে ইশারা করলো।অভ্র বরাবরই বাধ্য ভাই।বসতে সময় নিলোনা।তবে চিন্তিত সে।রুদ্র তাকে গল্প করতে ডাকেনা।খাবার খেতেও না।একমাত্র কাজ ছাড়া কেবিনে সবার ঢোকা নিষেধ।তাতে সে ভাই হলেও বা কী!
‘ কিছু হয়েছে ভাই?
রুদ্রর জবাব এলো সময় নিয়ে।অভ্রর দিকে একটা কাগজ মতো কিছু এগিয়ে দিয়ে বলল, ” পড় এটা।
অভ্র হাতে নিয়ে রুদ্রর দিক চেয়ে থাকলো বোঁকার মতন।রুদ্র ছোট্ট শ্বাস ফেলল
,আমাকে পরে দেখিস।আগে পড়।
অভ্র মনে মনে জিভ কেটে কাগজে চোখ দিলো।পুরোটা পড়লো এক নিঃশ্বাসে।
‘এটাতো…
‘ এপ্যোয়্যেন্টমেন্ট লেটার।
অভ্র জিজ্ঞাসু মুখচোখ নিয়ে বলল,
— হ্যা।কিন্তু কার ভাই?আর দেখো,এখানে আমাদের অফিসের নাম টাও ভুল এসছে। RRC ইন্ডাস্ট্রিজ এর জায়গায় শুধু চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিজ লেখা এসছে।
রুদ্র চেয়ারে হেলান দিলো।আঙুলের ফাঁকে পেন্সিল
ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,
— কার জন্যে সেটা না হয় পরে জানবি।এখানে যা আছে সব আমি দিয়েছি। কোনও ভুল নেই।তোকে বলছি কারন তোর কিছু কাজ আছে।
অভ্র প্রশ্ন করলনা।তাকিয়ে রইলো।রুদ্র বলল,
‘ আজকেই অফিসের নেম প্লেট চেঞ্জ করবি।
অভ্র এবারেও নিশ্চুপ।সে প্রশ্ন করতে চেয়েও করছেনা।ভাই নিজে থেকেই বলুক।একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুক উত্তরের।ভাইতো প্রশ্ন করা পছন্দই করেনা।
রুদ্র অভ্রকে এপোয়েন্টমেন্ট লেটার ইশারা করে বলল
‘ ওখানে অফিসের মালিকের নাম নেই।লক্ষ্য করেছিস?
অভ্র তড়িৎ বেগে চোখ বোলালো।’ আসলেই তো।
রুদ্র কপট রাগ নিয়ে বলল
,
তোকে পড়তে দিয়েছি কেন? এত কেয়ারলেস হলে চলবে অভ্র? একটা কাগজের কিছু পড়া মানে দাঁড়ি,কমা সব কিছুতে চোখ বোলানো।
অভ্র চোরের মত নামিয়ে নিলো মাথাটাকে।রুদ্র এবার শান্ত কন্ঠে বলল,
,
যা যা বলছি মন দিয়ে শোন।কান দিয়ে নয় শুধু,মন দিয়ে… ওকে?
অভ্র মাথা কাত করলো,
‘আমি একটা ঠিকানা দেব। ম্যানেজার কে দিয়ে এটা পাঠাবি সেখানে।আমি যা যা বলতে বলবো ঠিক তাই তাই যেনো বলা হয়।একটা ওয়ার্ড না বেশি আর না একটা ওয়ার্ড কম।
‘ ওকে ভাই।
,
যা এখন।এটা নিয়ে যা।
অভ্র বেরিয়ে যেতেই রুদ্র ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলল।পরমুহূর্তে রহস্য হাসলো।চোখ পিটপিট করে চেয়ে রইলো অদূরে।
,
আমি কারো ঋন রাখিনা মিস সেঁজুতি ……
___________
বাবা আর একটা কথাও নয়।তুমি যাবেনা ব্যাস!
সেঁজুতি কঁড়াভাবে বলে, সোফার ওপর ধুপ করে বসলো।পেছন পেছন হাজির হলেন আমির।মেয়েকে মানাতে বললেন,
‘আরে বাবা এতে কি এমন হয়েছে?এখন আমাদের যা অবস্থা তাতে তো বাসা টা ছাড়াতেই হবে তাইনা! দু মাসের ভাড়া আমাদের ঘাঁড়ে রে মা।একটু তো বোঝ!
সেঁজুতি বিস্ময় নিয়ে বলল,
— বাসা ছাড়বো মানে?ছোট্টবেলা থেকে এ বাসায় বড় হয়েছি আমি। এ বাসায় আমাদের কত স্মৃতি,বাসা কেনো ছাড়বো?
আমির মোলায়েম কন্ঠে বললেন
‘ এটাকী আমাদের বাড়ি রে মা? এটাতো ভাড়া বাড়ি।একদিন না একদিন ছাড়তে হবেনা?
‘ সে তখন দেখা যাবে বাবা।বাসা ছাড়লেও মাথা উঁচু করে ছাড়ব।এভাবে টাকা দিতে পারছিনা বলে অপমানের ভয়ে নয়।
আমির হতাশ শ্বাস ফেললেন,
সেঁজুতি এ বাসায় থাকতে হলে টাকা লাগবে।মাসে এত গুলো টাকা ভাঁড়া।কীভাবে সামলি সেটা তো ভাব।
সেঁজুতি অন্যমনস্ক হয়ে বলল,
একটা না একটা ব্যাবস্থা ঠিক হবে।
আমির অধৈর্য হয়ে পরলেন।মেয়েটা ঠিক তার মায়ের মতোন জেদি।একটা কথা যদি সহজে বোঝে।
‘ কি করে করবি তুই ব্যবস্থা?অপারেশনের জন্যে লোনের টাকাগুলোই তো এখনও শোধ হয়নি। এতো এতো টাকার ভার একা কিভাবে সামলাবি তুই?
সেঁজুতি ও বাবার সমান রাগ দেখিয়ে বলল
— তাই বলে তুমি জামাকাপড় ফেরি করবে??
আমির ক্ষীন হাসলেন মেয়ের রাগে।আদুরে কন্ঠে বললেন,
তাতে কি হয়েছে আম্মা?পৃথিবীতে কোনও কাজ ই ছোট নয়।
সেঁজুতি মুখ ঘুরিয়ে বলল
হোক।তাও তুমি কোত্থাও যাবেনা
।না মানে না।আমি ছেলে হলে কী আমার ওপর ভরসা করতেনা? তাহলে এখন কেনো করতে পারছোনা।আমি মেয়ে বলে??
আমির বিরক্ত হলেন ” আমি কখন বললাম?
,
বলোনিতো?তাহলে অামার কথা শুনবে।আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইছিনা।তুমি কোত্থাও যাবেনা।তোমাকে কোনও কাজ করতে হবেনা ব্যস।
সেঁজুতির অবিচল জেদ।অবশেষে হার মানলেন আমির।দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।সেঁজুতি আঁড়চোখে একবার বাবাকে দেখে রান্নাঘরে গেলো।এই সময় চা খাওয়ার অভ্যেস তাদের।খেয়ে পড়তে বসবে।শরীর খারাপ থাকায় ভার্সিটি যাওয়া হলোনা।হাতে এক হাজার টাকা আছে। আপাতত দু একদিনের বাজার হয়ে যাবে এতে।কিন্তু খন্দকারকে যে বলল বাড়ি ভাঁড়া পরশুর মধ্যে দেবে কী করবে তার?
এদিকে সকালে তাদের বাড়িতে বিরাট এক কান্ড ঘটেছে।খন্দকার কোথা থেকে নাক মুখ ফাঁটিয়েছেন।কানেও কম কম শুনছেন নাকী।সেঁজুতিদের পাশের ফ্ল্যাটে এক জোড়া দম্পতি থাকেন।তারা অবশ্য এক রুমে থেকে, বাকী রুম ব্যাচেলর ছেলেদের ভাঁড়া দিয়েছেন।স্বামী স্ত্রী দুজনেই চাকরীজীবি।আটটা বাজলেই অফিসে চলে যায়।ফেরেও একসাথে।প্রেমের বিয়ে। দুজনেই একই অফিসে।ব্যাচেলর ছেলে গুলোতো সারাদিন থাকেনা বাসায়। গতকাল উনিই রান্না করে দিয়েছিলেন।আজকেও দেখতে এসেছিলেন বাবা মেয়েকে।ওনার মুখেই খন্দকারের কথা কানে যায় সেঁজুতির।লোকটা নাকি সিড়ি থেকে পরে গেছিলেন।সবাই দেখতে গেলেও সেঁজুতি যাইনি।উলটে মনে মনে খুশিই হলো,
” সকালে তাকে আজেবাজে কথা শোনানোর ফল এগুলো।এতদিন ভাঁড়া ঠিকঠাক দিয়েছে। লোকটার গলায় তখন মধু ঝড়তো।যেই দুটো মাস দিতে পারলোনা ওমনি প্রত্যেকটা কথায় যেন বিষ পরে।
______
আমির চুপ করে বসে আছেন।মেঝের টাইলস গুলোর সুন্দর নকশা দেখছেন মনোযোগ দিয়ে।
ভাগ্য তাকে কি দিন দেখালো!এত বড় ঘরের সন্তান হয়েও ভালোবেসে বিয়ে করার অপরাধে ঘর ছেড়েছিলো একদিন।প্রিয় মানুষ টির নাম ছিলো মুনারা।তিনি ভালোবেসে ডাকতেন মুনা বলে।ছোট্ট একটা ভাড়া বাসায় নিজেদের সংসার সাজিয়েছিলো দুজনে।তখন তার মাস্টার্স শেষ।প্রথম প্রথম দুজনেই বেশ কষ্ট করেছেন।পরে যখন তার ব্যাংকের কাজ টা হলো,তখন আর পেছনে তাকাতে হয়নি।স্বচ্ছলতার ছোয়ায় এত বড় বাসায় এসে উঠলো।ভালোই যাচ্ছিলো দিন।তারপর ঘর আলো করে এলো সেজুথি।কি ফুটফুটে সুন্দর পুতুলের মতোন হয়েছিলো মেয়েটা।মুনা প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পরেন তারপরপরই।
আর এক মাস পরেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন।এরপর মেয়েকে নিজের মত মানুষ করেছেন আমির।একা হাতে ছোট্ট শিশুটাকে মায়ের মত আগলেছেন,আবার অফিসের কাজও করেছেন।আয়া রেখেছিলেন যদিও।কিন্তু সেঁজুতি ছোট থেকেই বড্ড ন্যাওটা ছিলো তার। স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়েও দু বাড়ির কেউই আসেনি মুনারা বা তাদের দেখতে।তাই রাগ আর অভিমানে তিনিও সেজুথিকে জানাননি ওর দাদু বাড়ি বা নানু বাড়ি সম্পর্কে।ভেবেছিলেন মেয়েটার বিয়ে দিলে তার একার জীবন কোনো মতে চলে যাবে।দ্বিতীয় বিয়ের কথা মাথায়ও আনেননি।কোনও দিন কি স্বপ্নেও ভেবেছিলো, তার পুতুলের মতো মেয়েটিকে সংসারের জোয়াল টানতে হবে? গত কদিনেই মেয়েটার শরীর ভেঙে গিয়েছে।রাতেতো ঠিকঠাক ঘুমায়ওনা। নিজের এমন করুন অবস্থা হবে আর বসে বসে মেয়ের কষ্টের টাকায় তাকে খেতে হবে ভাবেনি আমির।এতো ছোট বয়সে মেয়ে টা মা হারালো,আর এখন এই বয়সে পুরো সংসার খরচের দায়িত্ব কাঁধে।কি করবে কে জানে!এখন তো আল্লাহই তাদের একমাত্র ভরসা।
____
সেঁজুতি মাত্রই চা বানিয়ে বাবার হাতে দিয়েছে। তখন কলিংবেল বাজলো।
‘এখন আবার কে এলো?
‘ বাড়িওয়ালা নাকী? বলেছিলাম তো টাকা কাল দেব।এখন এলো কেন?
‘ দরজা খুলে দে।খবরদার খারাপ ব্যাবহার করবিনা।
সেঁজুতি বাবার আঁড়ালে মুখ বাঁকালো।খারাপ ব্যাবহার উনি করবেন,আমি ছেড়ে দেব নাকী?
চায়ের কাপ টা শব্দ করে রাখলো টি-টেবিলে। দরজা খুলতেই দেখল একজন অপরিচিত ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে। সেঁজুতি লোকটির পা থেকে মাথা অব্দি দেখলো।একেবারে স্যুটেড বুট্যেড যাকে বলে।
ভেতরের রুম থেকে জিজ্ঞেস করলো আমির ‘ কে এলো?
‘ দেখছি বাবা।
সেঁজুতি লোকটির দিকে তাকালো।মিষ্টি করে বলল,
-জ্বি, বলুন! কাকে চান?
‘ এটাকী মিস্টার আমির উদ্দিন এর বাসা?
‘ হ্যা।
‘ ওনার মেয়ে মিস নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি আছেন?
‘ জ্বি আমিই সেঁজুতি। আপনি কে?
, আমি চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম। আপনার জন্যে একটি চাকরির অফার এনেছি।এই যে আপনার এপ্যোয়েন্টমেন্ট লেটার।
সেঁজুতি অবাক হলো।লোকটি ফাইল থেকে দুপাতার কাগজটি বের করে এগিয়ে দিলেন। সেঁজুতি পড়ার আগেই বলল
‘কিন্তু আমিতো আপনাদের অফিসে চাকরীর জন্যে এপ্লাই করিনি।
লোকটি সামান্য হেসে বললেন,
— জ্বি ম্যাডাম।আপনি এপ্লাই করেননি।তবে এটা আমাদের পক্ষ থেকে সেইসব ব্রাইট স্টুডেন্ট দের জন্যে একটি গোল্ডেন চান্স,নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার।একেক বছর একেক ভার্সিটির স্টুডেন্ট দের চান্স দেয়া হয় যাদের পাশিং মার্ক্স ভালো।এ বছর আপনাদের ভার্সিটি থেকে আপনাকে সহ আরও কয়েকজন কে দেয়া হচ্ছে।আমরা আপনাদের ভার্সিটিতে খোজ নিয়ে তবেই এসেছি।নাহলে এড্রেস কোথায় পেলাম বলুন! লাস্ট ইয়ার এক্সামে আপনার রেজাল্ট ভালো ছিলো তাই জন্যেই আপনি এই চান্স টা পাচ্ছেন,,,…
খুশিতে ঝলমল করে উঠলো সেঁজুতির চেহারা।অপ্রত্যাশিত চাকরি পেয়ে বিশ্বাসই হচ্ছেনা যেন।
দুচোখে সুখ আর কৃতজ্ঞবোধ উপচে আসছে।
‘ ভেতরে আসুন আপনি।
আশরাফুল বললেন,
‘ নো ম্যাম। আমার তাড়া আছে।তবে একটা কথা।এই নিউজটি আপাতত লিক করবেন না।
সেঁজুতি সন্দেহী চোখে তাকালো
‘কেনো? এই যে আপনারা বললেন আপানারা খোজ নিয়েই এসছেন আমার ভার্সিটি থেকে।
,
হ্যা কিন্তু সেটা টেকনিক্যালি জেনে নিয়েছি।এইরকম কোনও ব্যাপার জানাজানি হওয়া টা আমাদের অফিসের আউট অফ রুলস।তাছাড়া এটা,,আমাদের ইকোনোমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে
তাই আপনাকে বলছিলাম যে…
সেঁজুতি ছোট করে বলল ‘ বুঝেছি।
,
ধন্যবাদ,,,তবে আপনি কালই অফিসে আসুন।আর এখানে সমস্ত ডিটেইলস আর এড্রেস দেয়াই আছে।
‘আচ্ছা।
লোকটি চলে যেতেই সেঁজুতি দরজা আটকালো।
“কে ছিলো?
“একটা চাকরীর এপোয়েন্টমেন্ট লেটার এসছে বাবা।তাও আবার এপ্লাই ছাড়াই।
‘এপ্লাই ছাড়া আবার চাকরী?
সেঁজুতি খুশি খুশি কন্ঠে বলল
‘তাইতো। এটা নাকি ভার্সিটির ভালো ছাত্রছাত্রিদের চান্স দেয়া হয়ে থাকে ওনাদের অফিস থেকে। আর সেটা প্রতি বছর,এ বছর আমি আর কজন পাচ্ছি।
আমির শ্বাস ফেলে বললেন,
ওহহ!” যাক ভালোই হলো,,,আল্লাহ একটা উপায় করে দিয়েছেন।
সেঁজুতি কে এবার চিন্তিত দেখালো।
‘কিন্তু কাল ই যেতে বলেছে,বাড়িওয়ালা তো কাল ই আসবে।কীভাবে কি করব?
‘ ওনা কে নাহয় বুঝিয়ে বলবো।তুই ভাবিস না।চাকরী হয়েছে শুনলে নিশ্চয়ই ছাড় দেবেন।সামনের মাসে তো দিয়েই দিচ্ছি তাইনা।
,
হু
সেঁজুতি হাতের কাগজটি উলটে পালটে দেখলো।খটকা নিয়ে ভাবলো,
চাকরীর লেটার অথচ বসের নাম নেই?
____
অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলো সেজুতি।ঠিকানা অনুযায়ী রিক্সা থেকে ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লো চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির সামনে।সামনে তাকাতেই মুখটা হা হয়ে এলো
‘বাপরে কত্ত বড় অফিস,,এতো বড় অফিসে আমি কাজ করব? এত ভাগ্য আমার?
সেঁজুতি চারপাশ দেখলো।কত্ত গাড়ি এখানে।বিভিন্ন রংয়ের।আরেকটু খেয়াল করলে হয়ত সেই লোকটির কালো গাড়িটাও দেখতে পেতো।বেশ নার্ভাস হয়ে ভেতরে নরম পায়ে প্রবেশ করলো।
অফিসের ভেতর ঢুকে তার অজ্ঞান হওয়ার জোগাড়।এটাত ফুটখেলার মাঠ! এদিক ওদিক তাকাচ্ছে সেজুতি। সব কিছু কতটা গোছানো, পরিপাটি।এক চুল পরিমান যেখানে কোনও অসৌজন্যতা নেই।কেন যেন এখানে নিজেকে বড্ড বেমানান লাগছে তার।কিন্তু তাকে ঠিক কোথায় যেতে হবে কিছুই তো জানেনা।চোখে পরলো রিসেপশন।কিছু না ভেবে সেখানে গেলো।
‘এক্সিকিউজ মি!
পাতলা গড়নের একটি মেয়ে।চুল গুলো ওপরে ঝুটি করে বাঁধা।পড়নে লেডিস কোর্ট। মন দিয়ে কাজ করছিলো কম্পিউটারে। সেঁজুতি ডাকতেই চোখ না তুলেই বলল,
ইয়েস ??
‘আমাকে এখানে ডাকা হয়েছে।ওই..
পুরো কথা বলার আগেই রিসেপশনিস্ট মেয়েটার টেলিফোন বাজলো।মেয়েটি ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,
‘এক মিনিট অপেক্ষা করুন,,
টেলিফোনের রিসিভারটি কানে তুললো মেয়েটি।ওপাশ থেকে কী বলল শোনা গেলোনা।মেয়েটি তৎপর কন্ঠে বলছে,
‘ইয়েস স্যার,,
‘ ওকে স্যার ওকে ,আমি পাঠাচ্ছি…
এতক্ষনে মেয়েটি হাসলো।মোলায়েম সুরে বলল,
,
ম্যাম আপনাকে এখানে জবের জন্যে ডাকা হয়েছে রাইট??
সেঁজুতি মাথা নাড়তেই বলল,
,
ওকে আপনাকে তাহলে অফিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের রুমে যেতে হবে।
,
রুম টা কোথায় একটু বলবেন?
মেয়েটি হাতের ইশারায় একটা দিক দেখাতেই সেঁজুতি হাটা ধরলো।প্রত্যেকটা কদমে বুক ধুকপুক করছে সাথে ভীরছে আকাশ কুসুম ভাবনা।
এই ম্যানেজিং ডিরেক্টর ই কি তার বস? বস কি অনেক রাগী হবে?বয়ষ্ক হবে? কিংবা তামিল ভিলেন দের মত মোটা বড় বড় গোফ থাকবে?
অনেক কৌতুহল নিয়ে দরজার সামনে এসে দাড়ালো সেজুথি।একবার নক করতেই ভেতর থেকে উত্তর এলো..
কাম ইন….
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here