চন্দ্ররঙা প্রেম -Part 19+20

0
420

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্বঃ19+20
#আর্শিয়া_সেহের
দীর্ঘ নয়টি বছর পর কোনো হারিয়ে যাওয়া আপনজনকে চোখের সামনে দেখতে পেলে ঠিক কেমন রিয়েক্ট করা উচিৎ বুঝতে পারছে না রুমঝুম। হা করে তাকিয়ে আছে রুমেলের দিকে।
তবে রুমেল মাথা তুলছে না। সে মাথা নিচু করেই রুমঝুমের সামনে খাবার রাখছে। রুমঝুম কয়েকবার ভাইয়া ভাইয়া করে ডেকেছে। তবুও সে মাথা তুলে তাকায়নি। যেন রুমঝুমের ডাক তার কানেই পৌঁছাচ্ছে না।
রুমঝুম একসময় ডাকা বন্ধ করে দিলো। নিষ্পলক চেয়ে রইলো তার ভাইয়ের দিকে। চেহেরাতে তেমন পরিবর্তন না এসেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। একটা দাগও যে শরীরে পাওয়া যেতো না সে শরীরে আজ দাগের অভাব নেই। মুখের জায়গায় জায়গায় গর্ত। হাতে অসংখ্য কাটা দাগ।‌ কপালে কয়েক জায়গায় লম্বাটে দাগ বসে গেছে। কিছু ক্ষত এখনো তাজা। কয়েকদিনের মধ্যেই হয়েছে। আবার কিছু ক্ষত অনেক পুরোনো।
রুমঝুম মুখ চেপে কেঁদে উঠলো। এভাবে নির্যাতন করেছে ছেলেটার উপর এতদিন। রুমঝুম রুমেলকে ছোঁয়ার জন্য একহাত বাড়ালো রুমেলের দিকে। তখনি আরমান আদেশের সুরে বললো,
-“ভেতরে যা,রুমেল। আমি না ডাকলে আসবি না।”
রুমেল এদিক ওদিক কোথাও না তাকিয়ে ঠিক যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই মাথা নিচু করে চলে গেলো। আশ্চর্যের বিষয় হলো সে কারো দিকে না তাকায় আর না কোনো কথা বলে।
রুমঝুম চেয়ে রইলো তার গমনপথে।
আরমান ধীরপায়ে রুমঝুমের সামনে এসে বসলো।‌ রুমঝুম চোখ তুলে তাকালো না। নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে সে। আরমান নিজে থেকেই বলতে শুরু করলো,
-“তোমার ভাইকে যেদিন তোমার মা আমার হাতে দিয়ে গিয়েছিলো সেদিন তোমার এগারোতম জন্মদিন ছিলো। রুমেলের বয়স তখন পনেরো। তোমার জন্য গিফট কিনতে বের হয়েছিলো বেচারা।”
রুমঝুম চকিতে আরমানের দিকে তাকালো। এখানেও তার সৎ মা? তাদের জীবনটাই ধ্বংস করে দিয়েছে।
আরমান রুমঝুমের চাহনি দেখে বুঝলো এখনো সে রুমেলের ব্যাপারে কিছু জানে না। শুধু ওই রুশান বিচ্ছুটাই বোধহয় জেনেছিলো।
আরমান গলা ঝেড়ে বললো,
-“আচ্ছা ওসব ছাড়ো। তখন তো তুমি বেশ ছোট। এর পরের ঘটনা শোনো।
রুমেলকে প্রথম যখন এখানে আনলাম তখন সে কি টগবগে ছিলো ও। কাউকে পরোয়া করতো না। সারাক্ষণ বোন বোন করতো। সামনে যাকে পেতো মারতো। পালানোর পথ খুঁজতো সবসময়। তোমার ছোট ভাইটা একদম ওর ডুপ্লিকেট কপি হয়েছিলো। সারাক্ষণ বোন বোন করে ঘ্যানঘ্যান করতো। আমার সব কাজে বাম হাত ঠেলতো।”
বলতে বলতে আরমান মেঝেতে বসে পড়লো। দু’হাত পেছনের দিকে রেখে সেখানে ভর দিয়ে রুমঝুমের দিকে তাকালো। বিশ্রী ভঙ্গিতে হেঁসে আবারও বলা শুরু করলো,
-“আজকের যে রুমেলকে তুমি দেখছো না? ওকে বহু কষ্টে এমন বানিয়েছি আমি। টানা একবছর ওর উপর অত্যাচার করার পর ওর রক্তিম দৃষ্টি শীতল হয়েছে। ও আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতো। একটা পুঁচকে ছেলে আমাকে চোখ রাঙাতো। ভাবতে পারো তুমি? ”
রুমঝুম যেন ওর ভাইয়ের কষ্টটা অনুভব করতে পারছে। কত কষ্ট পেয়ে জীবনের নয়টা বছর পার করেছে সে। রুমঝুম কথা বলতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। ওর কন্ঠ রোধ করে রেখেছে কেউ। খুব কষ্টে বললো,
-“ভা.. ভাইয়ার শরীরের দ.. দাগ গুলো আপ..নি করেছেন?”
আরমান দাঁত বের করে হেঁসে দিলো। রুমঝুমের দিকে খানিকটা ঝুঁকে বললো,
-“হ্যাঁ, আমি। আমি করেছি। ও আমাকে মারতে আসতো। এজন্য শাস্তি দিয়েছি। লোহার শিক গরম করে ওর কপালে ঠেসে ধরতাম। হাত-পা বেঁধে ঘন্টার পর ঘন্টা উল্টা ঝুলিয়ে রাখতাম। একটা বছর। বুঝতে পারছো কতটা সময়?
তবে ওর হাতের দাগগুলো আমার করা না। ওগুলো ও নিজেই করেছে।”
রুমঝুম কান্না করেই চলেছে। ওর সবকিছু বিষাক্ত লাগছে। কিছু শুনতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু আরমান ওকে জোর করেই শুনালো আবারও।
-“রুমেলকে রেগুলার ড্রাগ দিতাম। ইচ্ছে করেই দু একদিন দিতাম না। ও তখন নিজেই নিজের উপর অত্যাচার করতো। আমি ওর আশেপাশে ব্লেড, ছুড়ি এগুলো রাখতাম। আর ও পাগলের মতো আচরন করে যখন ওই ব্লেড,ছুড়ি দিয়ে হাত-পা কাটতো আমি মজা করে দেখতাম সেগুলো।
ওইযে একটা কথা আছে না? ‘সাপ ছেড়ে দিয়ে খেলা দেখা’ ওই টাইপ আর কি।
এতোকিছু করে ওই ছেলেকে বশে এনেছি আমি। এখন ও তোমাকে চিনলেও কথা বলবে না। তোমার দিকে তাকাবেও না। তোমাকে চিনবে কি না সে গ্যারান্টিও দিতে পারছি না বুঝলে? দেখেছো তো,আমার চোখের দিকে পর্যন্ত তাকায় না। যা বলি চুপচাপ সেটাই করে। সারাক্ষণ মাথা নিচু করেই রাখে। কারন আমার চোখে চোখ রাখলে কি হয় সেটা ও খুব ভালো করেই জানে।
তোমার বিচ্ছু ভাইটা সেদিন কি কাঁদা কাঁদলো ওকে জড়িয়ে ধরে। কতবার ভাইয়া,ভাইয়া করলো। উহু,রুমেল ওর দিকে তাকালোও না। হয়তো চিনতেই পারলো না।
আমি নিজ হাতে আধমরা করে রেখেছিলাম ওকে। প্রথম যখন ওর হাঁটু বরাবর ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে একটা আঘাত করলাম , বিশ্বাস করো কি সুন্দর একটা সাউন্ড যে করেছিলো
আহ! আমার প্রানটা জুড়িয়ে গিয়েছিলো। শালা, আমার পিছনে লাগতে এসেছিলো।”
রুমঝুম আচমকা একদলা থুথু ছিটিয়ে দিলো আরমানের মুখে। ঘৃনা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
-“তুই মরবি শয়তান। এতো এতো পাপ করে পার পেয়ে যাবি ভেবেছিস? পাবি না। তোর সাথে যে কি হবে তুই নিজেও জানিস না।”
আরমান হা হা করে কিছুক্ষণ হাসলো। যেন রুমঝুম খুব হাসির একটা জোকস্ বলেছে।
বেশ কিছু সময় হেঁসে রুমঝুমের ওড়না টেনে মুখের থুথু মুছলো । রুমঝুমের দুই গাল চেপে ধরে বললো,
-“আমি পার না পেলে তোর ভাইও পাবে না। তোর ছোট ভাইকে তো তোর বড় ভাই খুন করেছে রে। আমার সামনে থেকেই টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছিলো টুকরো টুকরো করার জন্য। হা হা হা।”
রুমঝুম গাল চেপে ধরা অবস্থাতেই হাঁসলো। আরমান সেটা দেখে গাল ছেড়ে দিলো। ভ্রু কুঁচকে আড়চোখে চেয়ে রইলো রুমঝুমের দিকে। রুমঝুমের হাঁসির মানে খোঁজার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হলো বারংবার।
রুমঝুম মুখে ঈষৎ হাঁসির আভা ফুটিয়ে বললো,
-“নিজ চোঁখে দেখেছেন আমার ভাইয়ের লাশ?”
আরমান কিছুটা ভড়কে গেলো এই প্রশ্নে। রুমেলকে নিয়মিত ড্রাগ দেওয়া হয়। ওর কাউকে চিনতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম। ও শুধু আদেশ মানে। গত সাত বছর ধরে রুমেলের হাত দিয়েই খুন করায় আরমান। রুমেলকে সে বিশ্বাসও করে এখন। কারন ছেলেটা অতীত মনে করতে পারে না তেমন একটা। অতীত মনে করতে না পারলে অতীতের মানুষগুলোকে কিভাবে চিনবে? তাও আবার যাদের নয় বছর আগে দেখেছে শেষবার।
এজন্যই রুশানকে মেরেছে কি না সেটা নিয়ে নিজে আর মাথা ঘামায়নি আরমান। তবে এখন রুমঝুমের কথা শুনে নিজের মধ্যেই কেমন জানি লাগছে।
রুমঝুম মুখে হাঁসি ধরে রেখেই বললো,
-“আমার ভাই পাগল না। তার দুইটা কলিজার টুকরাকে চিনতে কষ্ট হবে এতোটা নির্বোধও হয়নি সে। জন্মের পর থেকে আমাকে আর আমার ভাইকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে সে। এগারোটা বছর আমি আমার ভাইয়ের বুকে ঘুমিয়েছি। রুশান ঘুমিয়েছে সাড়ে আট বছর। আর রুশান তো দেখতে একদম আমার বাবার মতো। আমার ভাইয়া তাকে চিনতে ভুল করবে? কক্ষনো না। ”
আরমান রুমঝুমের কথার বিপরীতে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাইরে থেকে ধুপধাপ শব্দ এলো। অনেক মানুষের পায়ের শব্দ। আরমান রুমঝুমের দিকে তাকালো। রুমঝুম মিটমিট করে হাসছে। রুমঝুমের হাঁসি দেখে আরমানের রাগ উঠে গেলো। রুমঝুমের গালে কষে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। রুমঝুমের পাতলা ঠোঁট জোড়ায় রক্তের ফোয়ারা নামলো। তবুও তার মুখে হাঁসি।
আরমান আরো একটা থাপ্পড় দিতে যাবে তখনই দরজায় দাড়াম করে শব্দ হলো।
আরমান এদিক সেদিক চেয়ে একটা ছুড়ি পেলো। দৌড়ে ছুড়িটা এনে রুমঝুমের গলায় ধরলো।
রুমঝুম চুপচাপ বসে রইলো নিজের জায়গায়। ও জানে কে এসেছে। লোকটার অস্তিত্ব সে আগে থেকেই টের পায়।
মিনিট খানেকের মধ্যেই আরমানের চোখের সামনে এসে দাঁড়ালো শান, প্রান্ত,মেঘা আর তিহান। আরমান ডান দিকের কাঁচের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলো বাইরে বিশ-বাইশের মতো পুলিশ দাঁড়ানো।
হঠাৎ এমন আক্রমনের জন্য আরমান প্রস্তুত ছিলো না। এই গোডাউনের খোঁজ ওরা কি করে পেলো‌ সেটাই বুঝতে পারছে না সে। গোডাউনে আরমান,রুমেল এবং আরমানের এক বিশ্বস্ত লোক ছাড়া আপাতত কেউ নেই।
আরমান রুমঝুমের গলা থেকে ছুড়ি সরাচ্ছে না। শানের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে সেটা দেখে। যে কোনো মূহুর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এর মধ্যেই আরমানের বিশ্বস্ত লোক নাঈম বেরিয়ে এলো। হঠাৎ এতো মানুষ দেখে সে কিছুটা ভয় পেয়ে গোডাউনের পেছন দরজা দিয়ে দৌড় দিলো। প্রান্তও ছুটলো নাঈমের পিছু পিছু।
আরমান সেদিকে তাকাতেই এদিক দিয়ে শান কিছুটা এগিয়ে এলো। আরমান চকিতেই মাথা ঘুরিয়ে বললো,
-“একদম কাছে আসবি না। তোর বউয়ের দেহ থেকে মাথা কেটে ফেলবো কিন্তু।”
শান নিজের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে পড়লো। তিহান আর মেঘা মেইন দরজা ব্লক করে দাঁড়িয়ে আছে।
আরমান রুমঝুমের গলায় ছুড়ি ধরেই পেছনের দরজার দিকে এগুতে লাগলো। উদ্দেশ্যে,আপাতত এই দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া।
আরমান প্রায় দরজার কাছাকাছি চলে গেছে এমন সময় কোত্থেকে রুমেল চলে এলো । হাতে মোটা একটা লাঠি। সেটা দিয়ে আরমানের ঘাড়ের কাছ টাতে সজোরে আঘাত করলো। পেছন থেকে হঠাৎ এমন আঘাত পেয়ে আরমান রুমঝুমের থেকে বেশ খানিকটা সরে ফ্লোরে পরে গেলো। রুমেল আবার মারতে গেলে আরমান হঠাৎ ঘুরে রুমেলের পেট বরাবর ছুড়ি চালিয়ে দিলো। রুমেল লাঠি ফেলে পেট চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো। আরমান এই সুযোগেই উঠে দৌড় দিলো ।
রুমঝুম রুমেলের দিকে চেয়ে থ হয়ে বসে আছে। কোনো প্রতিক্রিয়া করতে পারছে না।
শান,তিহান,মেঘা তিনজনই দৌড়ে এলো। মেঘা আর তিহান রুমেলকে ধরলো। শান রুমঝুমকে জড়িয়ে ধরলো। রুমঝুমের হুঁশ ফিরলো তখন। সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে উঠে বললো,
-“আমার ভাইয়া। শান, আমার ভাইয়া। আমার ভাইয়াকে পেয়েছি। আমার ভাইয়াকে বাঁচান। আপনার পায়ে পড়ি, আমার ভাইয়াকে বাঁচান।”
শান রুমঝুমকে নিজের সাথে আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে নিলো। রুমঝুমের কপালে চুমু দিয়ে ঠোঁটের রক্ত মুছে দিলো। রুমঝুমকে দাঁড় করিয়ে বললো,
-“তোমার ভাইয়ার কিচ্ছু হবে না।আমি কথা দিচ্ছি। তোমরা সবাই একটা সুন্দর জীবন পাবা এবার।”
মেঘা আর তিহান রুমেলকে নিয়ে ততক্ষণে গাড়িতে বসে পড়েছে।রুমেলের ক্ষতস্থান খুব বেশি গভীর না হলেও রক্ত বের হচ্ছে অনেক। শান রুমঝুমকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে ওর ফোনে মেসেজের টুংটাং শব্দ হলো। একহাতে রুমঝুমকে ধরে অন্যহাতে ফোন বের করে মেসেজটা অন করলো। মেসেজে একবার চোখ বুলিয়ে হালকা হেঁসে আবার ফোন পকেটে পুরে রাখলো।
বাইরে এসে একজন পুলিশকে ডাকলো। ব্যাস্ত ভঙ্গিতে হ্যান্ডশেক করে বললো,
-“অনেক ধন্যবাদ,রাফিন। তুই না থাকলে আজ কিছুই হতো না। আর আরমান আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেছে বুঝলি?”
রাফিন হাসলো । হাসলো শান ও। দু’জনের রহস্যময় হাঁসির মানে অন্যরা বুঝলো না। শান গাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
-“পরে কথা হবে দোস্ত। এখন আসি।”
রাফিনও হেঁসে বললো,
-“নিজের খেয়াল রাখিস। আর যা করবি সাবধানে করিস।”
শান আর পিছনে ফিরলো না। রুমঝুমকে গাড়িতে তুলে নিজেও গাড়িতে উঠে বসলো। মিনিট দশেকের মাথায় হসপিটালে এসে পৌঁছালো। শান হসপিটালে‌ পৌঁছানোর পূর্বেই রাফিন ফোন করে হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে নিয়েছে। এজন্য রুমেলের ব্যাপারটা পুলিশ কেস অবধি গড়ায়নি। শান আর তিহান দু’জন রুমেলকে নিয়ে স্ট্রেচারে তুলে দিলো। রুমঝুম মেঘাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে।
রুমেলকে ডাক্তাররা নিয়ে যাওয়ার পরপরই একজন নার্স হাঁফাতে হাঁফাতে শানের সামনে এসে দাঁড়ালো। বললো,
-“এইমাত্র যে জখম হওয়া ছেলেটাকে নিয়ে এলেন সে আপনার কি হয়?”
রুমঝুম মেঘাকে ছেড়ে উঠে এলো। নার্সের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আমার ভাই হন উনি। কেন?”
নার্সের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। রুমঝুমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আপনার আরেকটা ভাই আছে? ষোলো-সতেরো বছরের?”
রুমঝুম চমকে উঠলো। মেঘাও উঠে এসে রুমঝুমের পাশে দাঁড়ালো। শান আর তিহানও উৎসুক হয়ে তাকালো নার্সের দিকে।
রুমঝুম কিছু বলার আগে মেঘা বললো,
-“হ্যাঁ ওর ওই বয়সের একটা ভাই আছে। কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন? আর ওর ভাইয়াকে চিনলেন কিভাবে?”
নার্সটি বললো,
-“আরে এই ছেলেটাই তো দু’দিন আগে ওই ছেলেটাকে এখানে দিয়ে গেছে। আহা! বাচ্চা ছেলেটার পুরো শরীরে আঘাতের দাগ ছিলো। এই ছেলেটা ওকে রেখেই চলে গিয়েছিলো। কোনো কথা বলেনি।
গতকাল রাতে ছেলেটার জ্ঞান ফিরেছে। তারপর থেকেই শুধু ভাইয়া ভাইয়া বলছে। আর কিছুই বলতে পারছে না। আমি অনেক কষ্টে যেটুকু বুঝলাম, তাতে এই ছেলেটাকেই ও বারবার ভাইয়া ভাইয়া বলছিলো।”
রুমঝুম কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওর একে একে হারিয়ে যাওয়া দুটো ভাইকেই ও ফিরে পেয়েছে। আনন্দে ওর মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। শান এগিয়ে এসে বললো,
-“আমাদেরকে ওর কেবিনে নিয়ে যেতে পারবেন ,এখন?”
-“কেন পারবো না? আসুন আমার সাথে।”
রুমেলকে তিহানের দায়িত্বে রেখে শান,মেঘা আর ও রুমঝুম চললো নার্সের পিছু পিছু। গন্তব্য রুশানের কেবিন।
চলবে…….
(নিন আপনাদের বিশ্বাসের জোরে রুশান ফিরে এলো। মারতে পারলাম নাহ ওকে।😑
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। )
#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্বঃ২০
#আর্শিয়া_সেহের
রুশান রুমঝুমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। হাত-পা কাঁপছে অস্বাভাবিক গতিতে। রুমঝুম ভাইকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে আছে। মেঘা রুশানের পায়ের দিকটাতে বসে আছে। শান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
রুশান‌ ক্ষনকাল চুপ থেকে বিরবির করে বললো,
-“আপু ভাইয়া মরে নি। ভাইয়া বেঁচে আছে। আমি দেখেছি ভাইয়াকে। ”
রুমঝুম রুশানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-“আমি জানি ভাইয়া বেঁচে আছে। ভাইয়াকে আমি নিয়ে এসেছি।”
রুশান তড়িৎ গতিতে রুমঝুমকে ছেড়ে উঠে বসলো। বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“ভাইয়াকে কি করে পেয়েছো তুমি? ও তো আরমানের কাছে। ও তো আরমানের লোক। ভাইয়া আমাদের চিনে না তো আপু।”
বলতে বলতে রুশান কেঁদে উঠলো। রুমঝুম মুচকি হেঁসে বললো,
-“ভাইয়া আমাদের না চিনলে তোকে কে বাঁচালো?”
রুশানের এতক্ষণে মনে হলো,’আসলেই তো। কে বাঁচালো ওকে?”
শান রুশানের কাছে এগিয়ে এলো। রুশানের মুখে হাত বুলিয়ে বললো,
-“সেদিনের কথা কিছু মনে আছে?”
রুশান চোখ বন্ধ করে পুরোটা মনে করলো।
সেদিন আরমান ওকে বেধড়ক পিটিয়েছিলো। রুশান প্রচন্ড ব্যাথায় অজ্ঞান হওয়ার আগে আবছা চোখে দেখেছিলো রুমেলকে ওর দিকে এগিয়ে আসতে। এরপর আর কিছুই মনে নেই ওর।
রুশান মেঘা,শান আর রুমঝুমকে সবটা বললো। শান রুশানের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। রুশানের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-“তোমার সাথে হওয়া প্রতিটি অত্যাচারের বদলা তুমি নিজ হাতে নিবে।”
রুশানের চোখ চকচক করে উঠলো শানের কথা শুনে।
মেঘা এক সাইডে গিয়ে রেজাউল সাহেবকে ফোন করলেন। এতো খুশির সংবাদ তাকে না জানালে হবে?
রেজাউল সাহেব প্রথমবারেই ফোন রিসিভ করলেন। ছেলেমেয়েদের খবর জানার জন্য এতোক্ষণ চাতকের মতো চেয়ে ছিলেন ফোনের দিকে।
-“আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। আমি মেঘা।”
-“হ.. হ্যাঁ মেঘা বলো। ওদের পেয়েছো? পেয়েছো আমার ছেলেমেয়েকে?”
মেঘা মুচকি হেঁসে বললো,
-“পেয়েছি তো। আপনার ছেলে মেয়ে সবাইকে পেয়েছি। সাথে আরেকজনকে পেয়েছি।”
রেজাউল সাহেব অধীর আগ্রহে জিজ্ঞাসা করলেন,
-“আর কাকে পেয়েছো ,মা?”
-“রুমেল। আপনার হারানো সন্তানকে।”
রেজাউল সাহেব ক্ষণিকের জন্য বোবা হয়ে পড়লেন। কি বলবেন? অবাক হবেন নাকি খুশি হবেন? বুঝতে পারলো না। তার প্রথম সন্তান,তার পিতৃত্বের অনুভূতি জাগানো প্রথম মানিক। রেজাউল সাহের হঠাৎ করেই কেঁদে উঠলেন। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে এতো বছর পর তার ছেলে ফিরে আসবে।
মেঘা রুশানের দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো সে বাবার সাথে কথা বলবে কি না?
রুশান মাথা হেলিয়ে হ্যাঁ বোঝালো।
মেঘা ফোন হাতে রুশানের পাশে বসলো। রেজাউল সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো,
-“রুশানের সাথে কথা বলুন , আঙ্কেল।”
রেজাউল সাহেব কান্না আটকালেন। ছেলে-মেয়েদের সামনে কান্না করা লজ্জার ব্যাপার। রুশান বেশ কিছুক্ষণ বাবার সাথে কথা বলে ফোনটা রুমঝুমের কাছে দিলো।
রেজাউল সাহেব হসপিটালের ঠিকানা চাইলো রুমঝুমের কাছে। রুমঝুম হসপিটালের ঠিকানা দেওয়ার পর রেজাউল সাহেব বললেন,
-“আমি রাতের মধ্যেই তোর মা’কে নিয়ে চলে আসবো।”
রুমঝুমের ইচ্ছে করলো না ওই মহিলার মুখ দেখার তবুও বাবার সামনে না করতে পারলো না। নতমুখে বললো,
-“আচ্ছা, সাবধানে এসো তোমরা।”
রুশান আড়চোখে চেয়ে বললো,
-“তোমরা মানে?কে কে আসছে?”
-“বাবা আর মা।”
রুশান ক্ষিপ্ত বাঘের মতো তেতে উঠে বললো,
-“খবরদার আপু। ওই মহিলা যেন আসে না। উনি আসলে আমি এখনি এখান থেকে চলে যাবো।বাবাকে বারন করো ওই মহিলাকে আনতে।”
রুমঝুমকে কিছু বলতে হলো না। রেজাউল সাহেব সবটাই শুনেছেন। তবে ছেলের এতো রেগে থাকার কারন বুঝলেন না। তারপরও ছেলেকে শান্ত করতে বললেন,
-“আমি একাই আসছি। ওকে শান্ত হতে বল।”
রুশান শান্ত হলো। রেজাউল সাহেব ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললেন ড্রয়িং রুমে বসে। উপরে তাহমিনা বেগমের রুমের দরজায় একনজর তাকিয়ে বেরিয়ে গেলেন বাড়ি থেকে। যেতে যেতে কাজের মেয়েকে বললেন,
-“দরজা আটকে দে। রাতে আমি নাও ফিরতে পারি। তবে যখন ফিরবো আমার ভরা সংসার নিয়ে ফিরবো। তোর ম্যাডামকে বলে দিস।”
এতো বছরের কাজের জীবনে আজ প্রথম মেয়েটা রেজাউল সাহেবকে হাসতে দেখলো। তার চোখে মুখে ফুটে ওঠা আনন্দের ঝলকানি দেখলো। আহা! কাউকে এমন খুশি হতে দেখলেও কতই না ভালো লাগে।
শান,মেঘা,রুমঝুম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রুশানের দিকে। নিজের মা’কে এতো ঘৃনা করার কারন কেউই বুঝতে পারছে না। তাহমিনা বেগম যতই খারাপ হোক রুশানকে ভীষণ ভালোবাসে। রুশানও তো তার মাকে ভালোবাসতো। হ্যাঁ,রুমঝুমের সাথে হওয়া অন্যায় দেখে মায়ের প্রতি তার ঘৃনা জন্মেছে এটা ঠিক কিন্তু তাই বলে এতোটা?
রুমঝুম রুশানের কাঁধে হাত রাখলো। রুশান মাথা নিচু করে আছে। রুমঝুমের স্পর্শে রুশান হালকা নড়ে উঠলো কিন্তু মাথা উঁচু করলো না। মাথা নিচু রেখেই বললো,
-“আমি জানি তোমরা কি ভাবছো। চলো আজ তোমাদেরকে সেই সময়টা থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি যে সময়টা থেকে ওই মহিলা মানে আমার তথাকথিত মা আমাকে ঘুরিয়ে এনেছিলো কিছুদিন আগে।
আজ থেকে বিশ বছর পূর্বের কথা। রুমেল ভাইয়ার তখন বছর পাঁচেক বয়স। সেই সময়টাতে তোমার মা রেহনুমার গর্ভে এসেছিলে তুমি। রুমেল ভাইয়া ছিলো আব্বুর জান।‌ হঠাৎ তোমার আগমনী বার্তায় রুমেল ভাইয়া মুখ ফুলালো।‌ সে চায় না তার ভালোবাসায় কেউ ভাগ বসাতে আসুক।
কিন্তু সে না চাইলেই কি হবে? সৃষ্টিকর্তা তো চেয়েছিলো তুমি আসবে। তাই সকল বাঁধা পেরিয়ে চলে এলে এ পৃথিবীতে। কিন্তু বাঁচলো না তোমার মা। তোমাকে মা ছাড়া দুনিয়ায় রেখে চললেন ওপারে আর তার সবটুকু মমতা বোধহয় রুমেল ভাইয়ার অন্তরে রেখে গেলেন। রুমেল ভাইয়া তার অপরিপক্ক হাতে তুলে নিলো তোমায়‌। সেই যে তোমায় হাতে তুলে নিলো তারপর এগারোটা বছর তার হাতেই গড়ে উঠেছো তুমি।
তোমার তিন মাস বয়সের সময় আব্বুর মনে হলো তোমাদের দুজনেরই একটা মা প্রয়োজন। পাঁচ-ছয় বছরের একটা ছেলে আর তিন মাসের একটা মেয়েকে তিনি একা হাতে কিভাবে সামলাবেন? তাছাড়া বড় আম্মুকে হারিয়ে আব্বু ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিলো। ব্যবসা বাণিজ্যেও লস হচ্ছিলো। রুমেল ভাইয়ার জন্য আব্বু কাঁদতেও পারতো না। আব্বুকে কাঁদতে দেখলেই রুমেল ভাইয়া কাঁদতো আর আব্বুর হাত ধরে কান্নার কারন জিজ্ঞেস করতো। আব্বুকে সারাদিন বলতো তার মা’কে এনে দিতে।
এই সবকিছু আব্বু বলেছিলো আমার সো কল্ড মা’কে। তবুও তোমাদের প্রতি তার একবিন্দু ভালোবাসা জাগে নি। তোমাদের না তোমাদের না। শুধুমাত্র ভাইয়ার। তার দূর্বিষহ দিনগুলো নেমে এসেছিলো আব্বু দ্বিতীয় বিয়ে করার পর মানে আমার মা’কে ঘরে আনার পর।
মা সবসময় ভাইয়ার উপর অত্যাচার করতো। ভাইয়া যদি মায়ের কথা না শুনতো তাহলে মা তোমার উপর অত্যাচার করতো। তুমি ছিলে ভাইয়ার উইক পয়েন্ট। তাই তোমার প্রতি অত্যাচার দেখে ভাইয়া দমে যেতো। মায়ের সব কথা মুখ বুঁজে মেনে নিতো। একটু ওলটপালট হলেই তোমাকে খাবার দিতো না মা । এই ভয়ে ভাইয়া শত কষ্ট সহ্য করতো। তুমি তো দুধের শিশু ছিলে। তুমি কিভাবে জানবে বলো এসব?
আব্বু বাড়িতে থাকতো না তেমন। এজন্য তোমাদের দিকে তেমন খেয়াল দিতে পারনি। একে একে কেটে যায় তিনটি বছর। এরপর দুনিয়াতে এলাম আমি। আমার আসার পর আব্বুও ঘরমুখো হলো। তবে ততদিনে হারিয়ে গেছে আগের রুমেল। একটা বাচ্চা ছেলের বদলে যাওয়ার জন্য তিনটি বছর নেহাৎই কম নয়।
আমি মায়ের জান ছিলাম অথচ তোমাদের সাথে কুকুরের মতো ব্যবহার করতো। তবুও ভাইয়া কতটা ভালোবাসতো আমাকে।
জানো আপু, ভাইয়ার একটা আলাদা পৃথিবী ছিলো? সেই পৃথিবীতে না‌ ছিলো কোনো বাবা,আর না ছিলো কোনো মা। সেই ছোট্ট পৃথিবীর একচ্ছত্র আধিপত্য তুলে দিয়েছিলো তার একমাত্র বোন রুমঝুমের হাতে। পড়াশোনা,সৎ মায়ের নিত্যদিনের অত্যাচার আর একমাত্র বোন নিয়েই তার দিন কাটতো।
তার সেই ছোট্ট পৃথিবীতে সে আমাকেও জায়গা দিয়েছিলো। মা আমাকে সেদিন কেঁদে কেঁদে বলেছে, ভাইয়া একহাতে তোমাকে ধরে আর অন্য হাতে আমায় বুকে আগলে নিয়ে সারা বাড়ি হেঁটে বেরাতো। তার ছোট্ট পৃথিবীটা নিয়ে সে একপা দু’পা করছ ঘুরতো।
আম্মু প্রথম আমাকে নিতে বারন করতো ভাইয়াকে। কিন্তু ভাইয়া চুরি করে নিতো। টুপ করে চুমু খেয়ে চলে যেতো মাঝে মাঝে। তবে কয়েকদিন পর থেকে মা আর ভাইয়াকে বারন করতো না আমাকে নিতে। বিনা কষ্টে তার ছেলে বড় হয়ে যাবে এটা ভেবেই হয়তো বারন করেনি।
গুটি গুটি পায়ে বছর এগুতে থাকলো।তোমার সেদিন এগারো তম জন্মদিন ছিলো। ভাইয়া আব্বুর থেকে তোমার জন্য কিছু টাকা চেয়েছিলো। আব্বু ভাইয়ার হাতে হাজার পাঁচেক টাকা দিয়ে ব্যবসার জন্য কুমিল্লা চলে গেলো সেদিন। তোমাকে আর আমাকে বাসায় রেখে ভাইয়া তোমার জন্য কেক আনতে দোকানে গিয়েছিলো। তোমার খালাতো বোনের জন্মদিনে গিয়ে কেক দেখে তুমিও নাকি ভাইয়ার কাছে বায়না করেছিলে কেক খাওয়ার। ভাইয়া তোমার সেই বায়নাই পূরন করতে গিয়েছিলো সেদিন। কিন্তু আফসোস! সেই যাওয়াটাতেই সে পার করে দিলো গোটা নয়টি বছর। তুমি আর আমি ভাইয়ার পথ চেয়ে কতশত দিন পার করে দিয়েছি কিন্তু,ভাইয়া আর ফেরেনি। তাকে ফিরতে দেয়নি। কে দেয়নি জানো? ”
-“হুম। মা দেয়নি।”
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো রুমঝুম।
রুশান কিছুটা চমকে উঠলো। বললো,
-“তুমি সব জানো?”
-“না। শুধু এটুকুই জানি।”
মেঘা দু’হাতে মুখ চেপে কাঁদছে। এতোটাও নিষ্ঠুর মানুষ হয়? আরে, ভালোবাসতে সম্পর্ক লাগে নাকি? ছোট ছোট নিষ্পাপ বাচ্চা দেখলে তো এমনিতেও ভালোবাসতে মন চায়। তবে কিছু কিছু সৎ মায়েরা এমন করে কিভাবে? মেঘার কেন যেন খুব কষ্ট হলো রুমেলকে ভেবে। ছেলেটা সেই ছোট থেকে কষ্ট পেয়েছে। সে যদি কোনো ম্যাজিক জানতো তাহলে এক নিমিষেই রুমেলের সব কষ্ট শেষ করে দিতো।
রুমঝুম কাঁদছে না আজ। এগুলোর সাথে তো সে অভ্যস্ত। রুমেল নিরুদ্দেশ হওয়ার পর সমস্ত অত্যাচার সহ্য করতে হয় রুমঝুমকে। তাকে বাঁচানোর মানুষটা যে হারিঢয়ে গিয়েছিলো।
শান নির্বাক। যে মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত দিয়েছেন আল্লাহ সেই মায়েরও এমন রুপ হয়? তার কাছে তার মা শ্রেষ্ঠ কিন্তু অপর প্রান্তে অন্য কারো কাছে তার মা ই সবচেয়ে ঘৃন্য।
শান এগিয়ে এলো রুশানের দিকে। প্রশ্ন ছুঁড়ে বললো,
-“আরমানকে তোমার মা কিভাবে চিনতো? আর রুমেলকে কেন উনার হাতে তুলে দিয়েছিলো?”
রুশান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
-“দুইটি কারনে।
১. রুমেল ভাইয়াকে আরমান টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিলো।আর আমার মা তো টাকার কাঙাল।
২. আব্বুর সম্পত্তির একজন ভাগীদার কমানোর জন্য।
তাছাড়া তার ছেলেও তো তখন বড় হয়ে গেছে। আটটা বছর যে ছেলেটি তার ছেলেকে মানুষ করেছে সেই ছেলেটির আর কোনো প্রয়োজন রইলো না তার কাছে। দু’টো ছেলেমেয়ে একসাথে হারালে তার দিকে আঙুল উঠবে ভেবে আপুকে রেখে দিলো। নতুবা সেদিন আপুকেও হয়তো তুলে দিতো আরমানের হাতে।
আরমান ভাইয়াকে দেখেছিলো শপিং মলে। আম্মু তাকে বকে বকে কাজ করাচ্ছিলো। সেদিন শপিং এর বিল আরমান দিয়ে দিয়েছিলো। ব্যাস এতেই আম্মু খুশিতে আটখানা। আরমান কথায় কথায় জেনে নিলো ভাইয়া আম্মুর সৎ ছেলে। তারপর সুযোগ বুঝে তিনি আম্মুর কাছে ভাইয়াকে কিনে নেওয়ার কুপ্রস্তাব দেয়। টাকার কথা শুনে ওই লোভী মহিলাও রাজি হয়ে যায়।
আরমানের একটা কিশোর ছেলের দরকার ছিলো। গরম টগবগে রক্তে ভরপুর একটা ছেলে। কুৎসিত মস্তিষ্কের লোকটা সেই ছেলেকে অত্যাচার করে আনন্দ পাবে এজন্য দরকার ছিলো। আর কপাল দোষে সেই ছেলেটি হলো আমাদের ভাইয়া।
সেদিন আরমান আমাকে মেরে খুব মজা পাচ্ছিলো। পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিলো লোকটা। ও একটা অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। একটা বদ্ধ উন্মাদ। একটা জানোয়ার।”
রুশানের চোখে মুখে একরাশ রাগের আভা ফুটে উঠলো কথা গুলো বলতে বলতে।
ধীর পায়ে এগিয়ে এলো শান। রুশানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“দেখো তোমার মায়ের সাথে তোমরা কি করবা এটা সম্পূর্ণ তোমাদের ব্যাপার। তার শাস্তি তোমাদের হাতে।
তবে তোমাকে এটুকু বলতে পারি যে, এবার আরমানের সহ্য করার পালা। আর মজা নেওয়ার পালা আমাদের। প্রস্তুত তো তুমি?”
রুশান কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো শানের মুখের দিকে ।তারপর ধীরে ধীরে প্রসারিত হলো তার ঠোঁট। শানের ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছে সে। মেঘা আর রুমঝুম হয়তো কিছু বুঝলো বা বুঝলো না। তারা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো শুধু।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here