#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্বঃ21+22
#আর্শিয়া_সেহের
প্রায় তিনদিন হয়ে গেছে সেদিনের পর। রুশান এখন অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছে। রুমেলও আগের মতো মাথা নিচু করে থাকে না। সবার দিকে তাকায়,সবার কথা শোনে। সে হাঁসতে চায়। কিন্তু পারে না। কতদিন হয়ে গেছে হাঁসির সাথে তার সাক্ষাৎ নেই।
তবে রুমেল কথা বলে না। গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হয় না। এটা নিয়ে অবশ্য কেউ এখনো তাকে জোর করেনি। ডাক্তার বলেছে সে ধীরে ধীরে একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর কথা বলবে।
রুমঝুমের বাবাকে সেদিন রাতেই শান সবটা বলেছিলো। রেজাউল সাহেব হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন সবটা শুনে। যাকে একটা পরিবার সাজানোর জন্য এনেছিলেন সেই তার অগোচরে তার পরিবার ভেঙে খানখান করে দিয়েছিলো।
শান রেজাউল সাহেবকে রুমেলের আশেপাশে বেশি বেশি আনে। রুমেল প্রথম কয়েকবার চোখ ফিরিয়ে নিতো। তবে রেজাউল সাহেবের আলিঙ্গন ধীরে ধীরে তার সাথে রুমেলকে কিছুটা স্বাভাবিক করেছে।
এই তিনদিনে কেউই রুমঝুমদের বাড়িতে যায়নি। শানের পরিবার আর মেহেদীর পরিবারও দু’দিন আগেই চলে এসেছে। সবাই এখন রাফিনের বাড়িতে আছে। তাহমিনা বেগমের খোঁজও আর কেউ করেনি। কাজের মেয়েটা বার কয়েক ফোন করে বলেছে যে তাহমিনা বেগম রুম থেকে বের হয়নি সেদিনের পর। তার রুম থেকে নাকি উদ্ভট গন্ধ বের হয়।
রেজাউল সাহেব কাজের মেয়েকে একবাক্যে বলে দিয়েছেন,
-“ও ঘরের আশেপাশে যাবি না। ও যা খুশি করুক।”
আজ তিনদিন পর দুই ছেলে, এক মেয়ে আর মেয়ে জামাইকে নিয়ে বাড়ি ফেরার বন্দোবস্ত করছেন রেজাউল সাহেব। শান তার ছেলের চেয়ে অধিক প্রিয় হয়ে উঠেছে এই কয়দিনে। নিঃস্বার্থভাবে কত কি করছে তাদের জন্য।
ডাক্তার এসে রেজাউল সাহেবকে ডাকলেন।শানও গেল রেজাউল সাহেবের পিছু পিছু। মেঘা ,রুমঝুম,সিন্থিয়া আর মাহেরা খাতুন রুমেলের কেবিনে বসে আছে। শাফিয়া আক্তার শিরীনকে নিয়ে রাফিনের বাড়িতে গিয়েছেন ওদের সবার জন্য খাবার রান্না করার উদ্দেশ্যে। শাফিয়া আক্তার রুমেল আর রুশানকে খুব পছন্দ করে ফেলেছেন। শুধু তিনি নয়, প্রত্যেকটা মানুষই ওদের দুই ভাইকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে এই তিনদিনে। এমন সোনার টুকরো ছেলে ক’জনার হয় ? যারা এদের কদর করতে পারেনি তারা মহাবোকা।
-“আপনার ছেলে মানে রুমেলকে আপনি বাড়ি নিতে চাচ্ছেন একা ঠিক আছে তবে তার উন্নতির ব্যাপারটাতে আপনাকে সতর্ক হতে হবে। গত তিনদিনে আপনি তার অবস্থা দেখেছেন। তাকে যখন তখন ড্রাগস দেওয়া হতো তাই সে প্রায় সময় পাগলামি করে। এটা থেকে রিকভারি করতে বেশ সময় লাগবে ।”
ডাক্তারের কথায় রেজাউল সাহেব কিছুটা চিন্তিত হলেন। শানও ভাবনায় পরে গেলো।
রেজাউল সাহেব বললেন,
-“আপনি আসলে কি বলতে চাইছেন? বুঝিয়ে বলুন তো ।”
ডাক্তার এবার ঝেড়ে কাঁশলেন। বললেন,
-“দেখুন আপনার ছেলের অবস্থা তো দেখেছেনই। তার এখন সার্বক্ষণিক একটা সঙ্গী প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একজন মা ই সবথেকে বেশি ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু আপনাদের থেকে সবটা শোনার পর বুঝলাম রুমেলের ক্ষেত্রে এই মানুষটি সঠিক না। তো সেকেন্ড..”
-“আপনি কি কোনোভাবে রুমেলকে বিয়ে করানোর কথা বলতে চাচ্ছেন?”
ডাক্তারের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে শান প্রশ্ন ছুড়লো ডাক্তারের দিকে।
মধ্যবয়স্ক ডাক্তারটি মাথা দোলালেন। মানে তিনি এটাই বলতে চেয়েছেন। শান ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? রুমেলকে এই অবস্থায় কোন মেয়ে বিয়ে করবে? কেউ জেনেশুনে তো নিজের ক্ষতি করতে চাইবে না।”
রেজাউল সাহেব অনেকক্ষণ ভাবলেন। তারপর ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“একজন ভালো সেবিকা কি আমার ছেলেকে ঠিক করতে পারবে না? যত টাকা প্রয়োজন আমি তাকে দিবো।”
ডাক্তারটি হতাশ হয়ে বললেন,
-“টাকা দিয়ে এটা আপনি করতেই পারবেন তবে আপনার ছেলের সুস্থতার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারবো না। একজন মা আর একজন স্ত্রী অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অসুস্থ ছেলে বা স্বামীর সেবা করে। সেই সেবার সাথে দুনিয়ার কোনো সেবাকেই তুলনা করা যায় না।”
শানের হঠাৎ মেঘার কথা মনে হলো। ও যদি ভুল না হয় তাহলে মেঘা রুমেলের প্রতি দূর্বল।আর এটা সে শতভাগ নিশ্চিত। এই ব্যাপারে মেঘার সাথে কথা বলা প্রয়োজন।
রেজাউল সাহেব চিন্তিত মুখে ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হলেন। শান উনির পিছু পিছু বের হচ্ছিল তখনই প্রান্তর কল এলো। শান এক সাইডে গিয়ে কল রিসিভ করলো।
-“এই ব্যাটারে আর বাঁচায় রাখা সম্ভব না। যা করবি জলদি কর। এরে নিজের টাকায় খাবার গেলাইতেও আমার অসহ্য লাগে বাল।”
প্রান্তের কথায় শান হাঁসলো। বললো,
-“আর কিছুক্ষণ বাঁচায় রাখ। আজ বিকেলেই ওর জারিজুরি শেষ করে দিবো।”
প্রান্ত একটা বড়সড় হাই তুলে বললো,
-“আচ্ছা। জলদি আসিস। শালা এটার জন্য আমি আমার জানেমান টারেও একটু দেখতে পারতেছি না।”
-“চুপ কর বেয়াদব। তোর জানেমান পালাচ্ছে না। তুই ভালো করে ওইটারে পাহাড়া দে।”
প্রান্ত ব্যাঙ্গ করে হেঁসে বললো,
-“তোর দায়িত্বে রেখেছি তো এজন্যই যাতে পালাতে না পারে।”
-“এ তোর ফালতু প্যাঁচাল সাইডে রাখ। আমি সন্ধ্যার আগে চলে আসবো। এখন রাখতেছি।”
-“ওকে বস।”
শান ফোন কেটে রুমেলের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেলো। মেহেদী আর তিহান খাবার নিয়ে এসে গেছে।
রুমেল ঘুমিয়ে আছে। রুমেলের পাশে রুশানের জন্যও বেড দেওয়া হয়েছে। গতকাল থেকে সে ভাইয়ের পাশেই থাকে। রুশান বেডে বসে রুমেলের দিকে তাকিয়ে আছে।
পাশে সবাই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। রেজাউল সাহেব রুমেলের বেডে মাথা নিচু করে বসে আছেন।রুমঝুম আর সিন্থিয়া মাহেরা খাতুনের বসে থাকা চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মেঘা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শান বুঝতে পারলো রেজাউল সাহেব সবটা বলেছেন এখানে এসে। তাই সবাই নিরবতা পালন করছে।
নিরবতা ভেঙে মেঘাই প্রথম কথা বললো। নতমুখে ধীর কন্ঠে বললো,
-“তোমাদের আপত্তি না থাকলে আমি রুমেলকে বিয়ে করতে চাই। তাকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিতে চাই।”
মাহেরা খাতুন চকিতে মাথা তুলে তাকালেন। পাগল হয়ে গেলো নাকি মেয়ে? মেহেদীও বোনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
-“বিয়ে ছেলে খেলা না ,মেঘা। তাছাড়া রুমেল অসুস্থ। এমন ছেলের সাথে তোকে জড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবতেই পারি না আমরা।”
-“আমি যদি তার সাথে থাকতে পারি তবে তোমাদের কেন আপত্তি,ভাইয়া?”
-“চুপ কর তুই। নিজের ভালো মন্দ বোঝার মতো বয়স এখনো তোর হয়নি।”
রেজাউল সাহেব সহ বাকি সবাই কাঠের পুতুলের মতো বসে আছে। মেঘার এমন ডিসাশনে শান ব্যাতীত সবাই কিছুটা চমকেছে। তবে মেহেদী নিজের জায়গায় ঠিক। জেনেশুনে বোনকে কেউ এমন একটা ছেলের হাতে তুলে দিবে না।
শান বুকে হাত গুঁজে এগিয়ে এলো মেঘার দিকে। মেঘার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তুমি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছো?”
মেঘা নতমুখেই বললো,
-“হ্যাঁ ভাইয়া। এই ছেলেটার এতো কষ্ট আমার সহ্য হয় না। ওর কিছু কষ্ট কমাতে পারলে আমারই ভালো লাগবে।”
মেহেদী গর্জে উঠে বললো,
-“কারো কষ্ট কমানোর দায়ভার নিতে বলেনি কেউ তোকে। এতো মানবসেবার প্রয়োজন নেই।”
মাহেরা খাতুন চুপচাপ শুনছেন। সে মেয়ের মতামতকে ছুড়ে ফেলতে পারছে না আবার একটা অনিশ্চয়তায় ও ভুগছেন।
শান মেহেদীর কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলো। শান্ত কন্ঠে বললো,
-“রিল্যাক্স ভাইয়া। আপনাকে আমরা সম্মান করি। আপনি যেটা বলছেন একজন ভাই হিসেবে যে কোনো ছেলে সেটা বলবে আমি জানি। আজ আমার বোন মেঘার জায়গায় থাকলে আমিও বলতাম। কিন্তু মেঘার দিকটা ভাবুন একবার। ও কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে? শুধুমাত্র মায়ায় পড়ে বা তার সেবা করার জন্য না বরং তাকে ভালোবেসে। মেঘা প্রথম দিন থেকেই রুমেলের প্রতি দুর্বল। হয়তো আপনাদের চোখে সেটা পড়েনি।
যাই হোক ,এবার আসুন রুমেলের কথায়। ছোট থেকেই অনেক কষ্ট পেয়ে বড় হয়েছে সে। পড়াশোনা করার সুযোগ তেমন হয়নি ওর তবে মাধ্যমিক পাশ করেছে। এটুকু আপনার আমার কাছে যথেষ্ট নয় আমি জানি। কিন্তু তার বাবার ব্যবসার হাল সে ধরলে আপনার বোনের ভরনপোষন খুব ভালো ভাবেই চালাতে পারবে।
তাছাড়া ছোট থেকে কষ্ট পেয়ে বড় হওয়া ছেলেটি হঠাৎ কারো থেকে এক বিন্দু ভালোবাসা পেলে তাকে কতটা ফিরিয়ে দিবে এটা ভাবতে পারছেন? মেঘাকে তো রানী করে রাখবে। শুধুমাত্র ওর সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা। আর আল্লাহ চাইলে সেটা হতেও খুব বেশি সময় লাগবে না।
এবার আপনি ভেবে দেখুন ভাইয়া।”
মেহেদী কে রেখে শান মাহেরা খাতুনের দিকে গেলো। মাহেরা খাতুন শানের কিছু বলার আগেই মুচকি হেঁসে বললো,
-“আমার মেয়ের সিদ্ধান্তে আমি খুশি। আমার আপত্তি নেই।”
শান মুচকি হেঁসে বললো,
-“আলহামদুলিল্লাহ।”
সবাই বেশ খুশি হলো। মেঘা মুখ তুলে সবার খুশি খুশি মুখ দেখে কান্না ভরা চোখেই হেঁসে ফেললো। সে হাঁসি দেখে মেহেদী চোখ ফেরাতে পারলো না। বোনের হাসি দেখে নিজের অজান্তেই হাঁসলো মেহেদী। রুমের সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বললো,
-“আমার কোনো আপত্তি নেই। আপনারা সবকিছু ঠিকঠাক করুন।”
মেঘা অবাক হয়ে মেহেদীর দিকে তাকালো। মেহেদী মেঘার কাছে গিয়ে বললো,
-“এবার খুশি তো তুই?”
মেঘা মেহেদী কে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“ভীষণ খুশি ভাইয়া।”
মেহেদী তৃপ্তির হাঁসি হাসলো। হাঁসিতে ভরে উঠলো হসপিটালের একটি কেবিন।
….
পিটপিট করে চোখ খুললো আরমান। কিছুদিন ধরে কখন চোখ খোলে,কখন বুঁজে সে খবর নেই তার। সারাদিন রাত চেয়ারেই বাঁধা পড়ে থাকে সে।
আরমান এদিক সেদিক চেয়ে হালকা আলো দেখতে পেলো। আলো দছখে মনে হচ্ছে সকাল ছয়টা-সাতটা বা বিকেল পাঁচটার মতো বাজে। তবে সঠিক আন্দাজ করতে পারলো না। সারাজীবন মানুষকে কষ্ট দিয়ে আজ নিজে কষ্ট পাচ্ছে। এখন বুঝতে পারলেও অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।সে বুঝতে পারছে তার সময় ঘনিয়ে এসেছে। রুমঝুমের কথা গুলোই সত্যি হতে চলেছে।
সেদিন মেহেদীর সামনেই তার সহযোগী নাঈমকে হত্যা করেছে শান। কিন্তু তার গায়ে ফুলের টোকাও দেয়নি। এর কারন সে বুঝতে পারেনি। তার পুরোনো গোডাউনেই বেঁধে রেখেছে তাকে।এখানে কত মানুষকে মেরেছে ,কত মেয়ের ইজ্জত নিয়েছে,কত মেয়েকে পাচার করেছে এখান থেকে তার ইয়ত্তা নেই।আজ সেখানেই বাঁধা পড়ে আছে নিজে। প্রকৃতির প্রতিশোধ হয়তো এমনই হয়। আজকাল সে বেশিক্ষন চোখ মেলে রাখতে পারে না। চোখ বন্ধ হয়ে আসে কেন জানি।
দরজায় খটখট শব্দ শুনে হালকা মেলে রাখা চোখে তাকালো সেদিকে। অল্প আলোতে তিন-চারটা অবয়ব দেখতে পেলো । তার ঝাপসা দৃষ্টি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হলো। হালকা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে প্রথমে এলো রুশান। তার পেছনে প্রান্ত আর রাফিন । একদম শেষে শান এলো রুমেলকে নিয়ে। রুমেলের চোখ বাঁধা। রুমেল কে একটা চেয়ারে বসিয়ে ওর চোখ খুলে দিলো শান। মৃদু হেঁসে বললো,
-“লেটস্ এনজয়।
আরমান রুমেলকে দেখে কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে রইলো। হ্যাংলা ছেলেটা তিনদিনেই কতটা পরিবর্তন হয়েছে। ঠিক নয় বছর আগের সেই ফর্সা, স্বাস্থ্যবান, আদুরে ছেলেটার মুখ ভেসে উঠলো আরমানের চোখের সামনে।
মূহুর্তেই বিকট চিৎকার করলো আরমান। চোখের পাতা থেকে রুমেলের ছবি সরে গিয়ে জমা হলো একরাশ ভয় আর ব্যাথার। হাঁটুটা বোধহয় ভেঙেচুরে গেছে। আরমান বহু কষ্টে চোখ মেললো। ঠিক সেই রকম এক ক্রিকেট ব্যাট হাতে রুশান দাঁড়িয়ে আছে। মুখে লেগে আছে তৃপ্তিময় হাঁসি। এই তিনদিনের মধ্যে এটাই তাকে করা প্রথম আঘাত যেটা রুশান করলো।
প্রান্ত শিস বাজাতে বাজাতে এগিয়ে এসে বললো,
-“এবার বুঝেছিস ,তোকে এতো আপ্যায়ন করে বাঁচিয়ে রাখার কারন?”
আরমান প্রান্তর কথা শুনলো না। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুমেলের দিকে। রুমেল হাঁসছে। হ্যাঁ, সত্যিই হাঁসছে। দীর্ঘ নয়টি বছর পর হেঁসেছে সে।
চলবে…..
(আগামীকালই আরমান আর রুমঝুমের মায়ের সানডে-মানডে ক্লোজ করে দিবো জনগন।
অতি দ্রুত লিখে রি-চেক ছাড়া পোস্ট করে দিলাম।
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্বঃ২২
#আর্শিয়া_সেহের
রাত নয়টা বাজে। মেঝেতে পড়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করছে আরমান। টানা দু ঘন্টা নিজ হাতে ওকে পিটিয়েছে রুশান। পিটিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখার ঘন্টাখানেক পর আরমানের পুরো শরীর ফুলে উঠেছিলো।
রুশানের অসুস্থ শরীরে এতটা দম দেখে তাকে বাহবা দিলো রাফিন। বড় হয়ে পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থাতে যোগদানের জন্য বললো রুশানকে। গোয়েন্দাগিরিতে রুশানের ঝোঁক আছে তাই তার ও প্রপোজালটা খারাপ মনে হলো না। তবে এখনি এসব নিয়ে ভাবতে চায় না সে।
রুমেল চেয়ারে বসে পুরোটা সময় হেঁসেছে। শেষ সময়ে শান রুমেলের কাছে এসে কিছু একটা বললো। রুমেল চেয়ার ছেড়ে উঠে বাম সাইডের একটা রুমে গেলো। ওই রুমেই রুমেলকে রাখতো আরমান। সেখান থেকে সেই ছুরিটা আনলো যেটা আরমান ওকে নিজের শরীর ক্ষতবিক্ষত করতে দিতো।
রুমেল ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো আরমানের দিকে। একহাতে ওর মুখ উঁচু করে ধরে বললো,
-“আমি আমার বোনকে পেয়েছি । আর আটকে রাখতে পারলি না তো আমায়।”
আরমানের কিছু বলার শক্তি নেই। তবুও মুখ খোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছু বলার আগেই শান বাতাসের গতিতে এসে রুমেলের হাত থেকে ছোঁ মেরে ছুরিটা নিয়ে পরপর দুইটা টান দিলো আরমানের ঠোঁট থেকে থুতনি পর্যন্ত। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো।
শান ছুরিটা আবার রুমেলের হাতে দিয়ে দিলো।
আরমানের দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে বললো,
-“এই আঘাতটা আমার চন্দ্রকন্যার ঠোঁট থেকে রক্ত বের করার জন্য তোর পাওনা ছিলো । ওর শরীরে একটা ফুলের টোকাও আমি সহ্য করতে পারি না বুঝেছিস?”
রুমেল অবাক চোখে চেয়ে রইলো শানের দিকে।
রাফিন বেশ অবাক হলো শানের এমন রুপ দেখে। শান্তশিষ্ট ছেলের মধ্যেও এতো ক্ষমতা চলে আসে ভালোবাসার জোরে? প্রান্ত খুব একটা অবাক হলো না। রুমঝুম আসার পর শানের পাল্টে যাওয়াটা সবার চোখেই কমবেশি পড়েছে। মেয়েটাকে আগলে রাখতেই ছেলেটা বদলেছে।
রুশান একটু দূরে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। আরমানকে পিটিয়ে ভীষণ ক্লান্ত সে। ক্লান্তি মাখা উজ্জ্বল শ্যামলা মুখে শানের দিকে চেয়ে কৃতজ্ঞতাপূর্ন হাঁসি হাঁসলো সে। তার বোনের নিরাপদ আশ্রয় একমাত্রই শান। এই ছেলেটার কাছে তারা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।
শান রুমেলকে রেখে সরে এলো আরমানের সামনে থেকে। আরমান মেঝেতে পড়ে গোঙাচ্ছে। রুমেল শানের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আরমানের দিকে তাকালো। ওর স্মৃতিতে এসে ভর করলো আট-নয় বছর আগের সেই ভয়াবহ দিনগুলো। চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো রুমেল। এরপর চোখ মেলে আরমানের দিকে তাকালো। একে একে কেটে দিলো হাত ও পায়ের শিরা গুলো। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর। আরমান এখনো জীবিত তবে নিস্তেজ।
রুমেল, প্রান্ত আর শান মিলে এই গোডাউনের একটি ঘরে বড় এক কাঠের বাক্সের মধ্যে আটকে রাখলো আরমানকে। বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে দিলো বাক্সটা। তারপর তালাবদ্ধ করলো রুমটা।
তারা জানেনা এখানে কতদিন বা কতবছর মানুষের আনাগোনা হবে না। তবে যতদিনে এখানে লোকালয় হবে ততদিনে আরমানের দেহটা একটা শুকনো কঙ্কালে পরিনত হয়ে যাবে।
সবাই গোডাউন থেকে বেরিয়ে সেটাকে আগের মতোই তালাবন্ধ করে দিলো। তারপর রওনা দিলো যশোরের উদ্দেশ্যে। শান বাড়ির সবাইকে বলেছিলো পুলিশের ঝামেলা শেষ করার জন্য থানায় যাচ্ছে রুমেল আর রুশানকে নিয়ে। সেখান থেকে সরাসরি যশোর পৌঁছে যাবে ওদের নিয়ে। বাকিরাও তাই নিজেদের মতো করে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলো।
…
মেহেদী আর তিহান সবাইকে নিয়ে যশোর পৌঁছেছে রাত আটটার মধ্যেই। শান,রাফিন,প্রান্ত,রুশান,রুমেল পৌঁছেছে দশটার দিকে। রাফিনকে অনেকটা জোর করেই এনেছে শান। ছেলেটা অনেক সাহায্য করেছে ওকে।
রেজাউল সাহেব সবাইকে নিয়ে সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়িতে পৌছালেন।
গাড়ি থেকে নেমে রুমঝুম আর রুশান দৌড় দিলো । কে আগে কলিং বেল চাপ দিতে পারে?
রুমেল পেছন থেকে উচ্চ স্বরে বললো,
-“আরে দৌড়াচ্ছিস কেন,দুজন? আস্তে যা। পড়ে যাবি তো।”
শান সহ বাকি সবাই ওদের তিনজনের দিকে তাকালো। কি মধুর সম্পর্ক।শান ভাবলো, তারা তিনজনও তো এভাবে হেঁসে খেলে বড় হয়েছে। কিন্তু এরা তিনজন? কষ্টে জর্জরিত এক অতীত পার করে এসেছে।
রেজাউল সাহেব শানের কাঁধে হাত রাখলো। শান মাথা ঘুরিয়ে তাকালো তার দিকে। রেজাউল সাহেব শানের সামনে দুহাত জোড় করে মাথা নিচু করে ফেললো। কাঁপা গলায় বললো,
-“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বাবা। আমাকে আরেকবার আমার ছেলেমেয়েদের কে পাইয়ে দেওয়ার জন্য আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।”
শান মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,
-“বুঝেছি তো। আমাকে ছেলে মনে করেন না। করলে এভাবে বলতে পারতেন না।”
রেজাউল সাহেব হেঁসে ফেললেন। এই ছেলেটা ভীষণ ভালো। কত সুন্দর ম্যাজিক করে তার ভাঙা সংসারটা জুড়ে দিলো। তার শূন্য সংসার ভরিয়ে দিলো। তার প্রাণহীন সংসারটাতে প্রান এনে দিলো।এই ছেলের কাছে সারাজীবন ঋণী হয়ে থাকবে সে।
রুশান আগে দরজার কাছে পৌঁছালেও সে রুমঝুমকে কলিং বেল চাপতে দিলো। রুমঝুম হেঁসে কলিং বেল বাজালো। মিনিট খানেকের মধ্যেই কাজের মেয়েটি এসে দরজা খুললো। একজন একজন করে সকলেই ভেতরে ঢুকলো। রুমেল,শান,মেঘা আর রাফিন এখনো বাইরে দাঁড়ানো। রুমেল একদৃষ্টিতে বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। কত বছর আগে এই বাড়িটি দেখেছিলো। তার শৈশব, কৈশোর কেটেছে এবাড়িতে। বাড়িটির তার মায়ের পছন্দে করা হয়েছিলো। ঠিক তেমন ভাবেই আজও দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি।
শান মেঘাকে ইশারা করে রাফিনকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। মেঘা রুমেলের ডান বাহুতে হাত রাখলো।রুমেল বাড়ি থেকে চোখ ফিরিয়ে মেঘার দিকে তাকালো। তাদের বিয়ের ব্যাপারে রুমেল এখনো কিছু জানে না। তবে রুমেলের মনে মেঘার জন্য একটা সফট কর্নার আগে থেকেই তৈরি হয়েছে।
প্রথম দিন থেকেই মেয়েটা তার খুব যত্ন নিয়েছে। অপরিচিত একটা মানুষকে এভাবে যত্ন করা যায় তা মেঘাকে না দেখলে বোঝা যেতো না। সময় মতো খাওয়ানো, শরীর মুছে দেওয়া, উত্তেজিত হয়ে পড়লে ডাক্তার ডাকা এগুলো বেশিরভাগই মেঘা করেছে।
রুমঝুম রুশানকে দেখাশোনা করতো আর মেঘা রুমেলকে।
মেঘার ডাকে হুঁশ এলো রুমেলের। মেঘা রুমেলের হাতে হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,
-“ভেতরে চলুন। অনেক রাত হয়েছে। আর কতক্ষণ দাঁড়াবেন?”
রুমেল নিজেকে সামলে বললো,
-“হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন।”
বলেই হনহন করে ভেতরে ঢুকে পড়লো রুমেল। মেঘা ঠোঁট বাঁকিয়ে রুমেলের পিছু পিছু নিজেও বাড়িতে ঢুকে পড়লো।
বাড়িতে ঢুকে বিশ্রী গন্ধ নাকে আসলো সবার। শাফিয়া আক্তার নাক ঢেকে ফেললেন। শান সিঁড়ি অবধি হেঁটে গিয়ে বললো,
-“গন্ধ উপর থেকে আসছে বোধহয়। সিঁড়ির দিকে এগুলে গন্ধ তীব্র হচ্ছে।”
রাফিন, শান,তিহান, প্রান্ত আর রুশান উপরে গেলো। রাফিন রুশানের মায়ের রুমটা দেখিয়ে বললো,
-“ওই ঘরটা কার?”
রুশান ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
-“আমার মায়ের।”
রাফিন শানের দিকে তাকালো। গলার স্বর নিচু করে বললো,
-“এটা লাশ পঁচা গন্ধ শান। লাশের মৃত্যু তিন থেকে চারদিন আগেই হয়েছে।”
রুশানের বুক ধক করে উঠলো। যতই ঘৃনা করুক, মা তো। মায়ের জন্য কোথাও না কোথাও একটুখানি ভালোবাসা থেকেই যায়। তবুও নিজেকে সামলানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলো রুশান। বাকিরা এটুকু ছেলের সহ্য শক্তি দেখে অবাক হয়ে গেলো। কি সুনিপুণ ভাবে চোখের পানি লুকাচ্ছে।
শান আর তিহান নিচে এসে সবাইকে গন্ধের উৎসের ব্যাপারে বললো। একের পর এক বিপদে সবাই ক্লান্ত এখন। রেজাউল সাহেবের কোনো ভাবান্তর নেই। রুমঝুম ঘাড় ঘুরিয়ে রুমেলকে দেখলো। রুমেলের ঠোঁটে হাঁসি ঝুলে আছে। তার সাথে করা সকল অন্যায়ের শাস্তি পাচ্ছে আজ অপরাধীরা। নিঃসন্দেহে এটি তার জীবনের একটি শ্রেষ্ঠ দিন।
প্রান্ত রুশানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রাফিন পুলিশে খবর দিয়েছে। তারা এসেই দরজা ভেঙে লাশ নামাবে। পুরো বাড়িতে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। বাতাসে ভাসছে লাশ পঁচা গন্ধ।
মিনিট বিশেকের মাথায় পুলিশ এলেন। আশেপাশের প্রতিবেশীরাও জমা হলেন বাড়িতে। শাফিয়া আক্তার শান্ত, শিরীন, মেঘা আর রুমেল কে গেস্ট রুমে দরজা আটকে থাকতে বললেন। লাশের কি অবস্থা সেটা কেউ জানেনা । বাচ্চারা দেখলে ভয় পেয়ে যেতে পারে।
রুশান দোতলায় তাহমিনা বেগমের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। শেষ কয়েকটা দিনে তাহমিনা বেগম অপরাধবোধে ভুগতো। তবে ততদিনে তিনি সবই হারিয়ে ফেলেছেন।
কয়েকজন পুলিশ ড্রয়িং রুমে বসে রেজাউল সাহেবকে প্রশ্ন করছে। শান রেজাউল সাহেবের পাশে দাঁড়িয়ে অধিকাংশ উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। রাফিন,তিহান, প্রান্ত, শানের বাবা,রুশান সহ কয়েকজন তাহমিনা বেগমের দরজা ভাঙছে। রুমঝুম নীচে থেকে পলকহীন চোখে চেয়ে আছে সেদিকে।
দরজা ভাঙার সাথে সাথেই বিশ্রী দূর্গন্ধ বেরিয়ে এলো বাইরে। তিহান মুখ চেপে সাইডে গিয়ে বমি করে দিলো। প্রান্তও মুখ পেট চেপে ধরে সরে দাঁড়ালো। সবারই অবস্থা শোচনীয় হয়ে দাঁড়ালো এই দূর্গন্ধে। তবে রুশানের ভঙ্গি তেমন নির্বিকারই আছে। সে ধীরে ধীরে পা ফেলে ঢুকে পড়লো তার মায়ের রুমে। রাফিন বহুকষ্টে নিজেকে সামলে রুশানের পিছু পিছু ঢুকলো। বাকিরাও নাক টিপে ভেতরে এলো।
পুরো রুম অন্ধকারে ছেয়ে আছে। রুশান হাতড়ে গিয়ে লাইট অন করলো। সাথে সাথেই একজন পুলিশ চিৎকার করে উঠলো। চোখ ফিরিয়ে নিলো প্রত্যেকেই।
শান দৌড়ে উপরে চলে এলো। দরজা থেকেই কেঁপে উঠলো সে। তাহমিনা বেগম ফ্লোরে পড়ে আছেন। চোখের কোটর ফাঁকা। ইঁদুরে বোধহয় চোখ খেয়ে নিয়েছে। পুরো শরীরেও একটু একটু করে খেয়ে গেছে । কালশীটে হয়ে গেছে পুরো শরীর। ঠোঁটের আশেপাশেও খেয়ে গেছে খানিকটা।
ভয়াবহ অবস্থা লাশের। শান নিজেকে শক্ত করলো রুশানের জন্য। রুশান তার মায়ের পাশে হাঁটু গেড়ে বসলো। আলতো করে ছুঁয়ে দিলো পুরো মুখ।
হুট করেই আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। রুম থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বললো,
-“উনার লাশ নিয়ে যান। যা করার করুন। এই বাড়িতে যেন আর না আসে এই লাশ। এমন মহিলার কবরে মাটিও দিতে চাই না আমরা।”
কথাটা বলেই দেরি না করে বেরিয়ে গেলো রুশান। নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
পুলিশ লাশ ঢেকে দিয়ে পুরো ঘরে তল্লাশি করলেন। তাহমিনা বেগম স্পষ্ট ভাবে লিখে গেছেন, তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। সেই লেখার পাশেই রয়েছে একটি চার ভাজের খোলা চিঠি।
রাফিন গিয়ে চিঠিটি হাতে নিলো। চিঠি হাতে নিয়ে লাশ সহ ড্রয়িং রুমে নেমে এলো। রেজাউল সাহেব হাতের ইশারায় লাশ নামাতে বারন করলেন। অগত্যা লাশ নিয়ে বাইরে দাড় করানো অ্যাম্বুলেন্স রাখলেন ।
পরিবারের সদস্য বাদে উপস্থিত সকলেই অবাক হলেন। একটা মানুষ ঠিক কতটা ঘৃন্য হলে আপনজনেরা তার লাশটি অবধি দেখে না। এমন মানুষের পৃথিবীতে জন্মে লাভ কি? কি পেয়েছে জীবনে মানুষের ঘৃনা ছাড়া? টাকাগুলো আজ কোন কাজে লাগছে?
রাফিন সকলের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বললো,
-” উনি একটি চিঠি লিখে গেছেন। বেনামি চিঠি। চিঠিটা গত চারদিন আগের রাতে লেখা। আমি পড়ছি। আপনারা শুনুন।”
সকলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও শোনার চেষ্টা করলো।
“এই চিঠি যখন পাবে তখন আমি এ দুনিয়ায় থাকবো না। এই জীবনে অনেক পাপ করেছি আমি। জানি আমি ক্ষমার যোগ্য নই। ভেবেছিলাম নিজ হাতে আরমানকে খুন করবো। কিন্তু তার আগেই ও আমার ছেলেটাকে মেরে ফেললো। আমাকে ফোন করে আমার ছেলের মৃত্যু সংবাদ দিয়ে পৈশাচিক হাঁসি হাঁসছিলো সে। নিজের ছেলের মৃত্যু সংবাদ মেনে নিতে পারিনি। মনে হচ্ছিলো সবকিছু শেষ করে দেই। হঠাৎ ভাবলাম, আমার ছেলে মরে গেছে তাহলে আমার সতীনের মেয়ে শান্তি পাবে কেন? ওর জন্যই তো মরলো আমার ছেলে।
আমি সেই রাতে নিজেই আরমানকে বাড়ির ভিতরে আসতে দিয়েছিলাম। আমি কতটা নোংরা মস্তিষ্কের ভাবতে পারছো? নিজ ছেলের খুনির সাথে কাজ করেছি শুধুমাত্র রুমঝুমের সুখ শেষ করার জন্য।রুমঝুমকে আরমান ছাদ থেকে নিয়ে যাওয়ার পর রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ভাবতে থাকি আমি কি করলাম?
ওই সময়ে আমার টনক নড়লো। আমি কি জঘন্য কাজ করলাম আবারও। ঘৃনা হতে লাগলো নিজের উপর। মেয়েটা ভাইয়ের হারানোর কথা শুনে তাকে খুঁজতে এখানে এসেছে আর আমি তারই সর্বনাশ করলাম। শান ছেলেটা নিঃস্বার্থে আমার ছেলেকে খোঁজার কত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আর আমি তার ভালোবাসাকে এভাবে শত্রুর হাতে তুলে দিলাম?
নিজের প্রতি প্রচন্ড ঘৃনা হচ্ছে আমার। আমি জানি শান ঠিকই রুমঝুমকে পাবে। ছেলেটার চোখে অগাধ ভালোবাসা দেখেছি মেয়েটার জন্য। ওরা আবারও এক হবে,ভালো থাকবে। কিন্তু আমি আর এই মুখ কাউকে দেখাতে পারবো না। তাই চলে যাচ্ছি পৃথিবী থেকে। নিজ হাতেই একটা কীটকে খুন করছি আমি।
জানি ক্ষমা করা সম্ভব না, তবুও ক্ষমা করার চেষ্টা করো আমাকে। রুমঝুম,আমাকে মাফ করিস তুই।”
রাফিন চিঠি পড়া শেষ করলো। একজন মানুষের মৃত্যুতে কেউ কষ্ট পেলো না এরকমটা সে আর কখনো দেখেনি। রুমঝুমের আগে কষ্ট হলেও এখন বিন্দুমাত্র কষ্ট হচ্ছে না। সে ভাবলেশহীন ভাবে হেঁটে রুমেলের কাছে গেস্ট রুমে চলে গেলো। রুশানও নিজের রুম থেকে বেরিয়ে গেস্ট রুমে ঢুকলো।
প্রতিবেশীরা নানা ধরনের কথা বলতে বলতে চলে গেলো। আত্মীয়-স্বজন তেমন কেউ আসেনি। তাহমিনা বেগম কারোরই প্রিয় পাত্রী হতে পারেন নি।
একটা মৃত্যু হয়েছে অথচ কোথাও কোনো শোকের ছায়া নেই। এমনও বুঝি মৃত্যু হয়?
চলবে……..