লাভ গেম -Part 8

0
362

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
৮.
আদ্রিশ পকেট থেকে মোবাইল বের করে খুব গোপনে সেজানকে কল করে সব জানাল। তারপর গাড়ির কাছে যেতে যেতে আবারও রুশার নাম্বারে কল করল। মোবাইল বেজে যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। গাড়ির কাছে গিয়ে গার্ডদের বলল রুশাকে খুঁজতে। আদ্রিশ কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। এত বড় হোটেলে কোথায় খুঁজবে, রুশা একা একা কোথায় যেতে পারে? যেদিন রুশাকে বিয়ে করেছে সেদিন থেকে মাথার ভেতরে টেনশন ঢুকে গেছে আর এ মেয়েটা এমন এমন কাজ করে যে টেনশন আরো বাড়িয়ে দেয়। এইবার যদি ওকে পায় তবে ঘরবন্দী করে রেখে দেবে৷
আদ্রিশ কি মনে করে লেডিস্ ওয়াশরুমের দিকে গেল। দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ। আদ্রিশ কাউকে পরোয়া না করলেও লেডিস্ ওয়াশরুমে যেতে সংকোচ করছে।
“হায় রুশা, কোথায় এনে দাঁড় করালে। শেষে লেডিস্ ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”
আদ্রিশ ওখানেই দাঁড়িয়ে আবারও রুশার নাম্বারে কল করল। রিং বেজে যাচ্ছে রিসিভ হচ্ছে না। আদ্রিশ এক মহিলাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,
“এক্সকিউজ মি, ভেতরে কালো শাড়ি পরা ২৩-২৪ বছরের একটা মেয়ে দেখেছেন?”
“খেয়াল করিনি।”
“একটু দেখবেন প্লিজ। আমার স্ত্রীকে কলে পাচ্ছি না আর ভেতরে গিয়েও দেখা সম্ভব না। খুব দরকার ওকে।”
“জি, আমি দেখছি।”
মহিলাটি কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে বলল,
“ভেতরে উনি নেই।”
আদ্রিশ আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গেল।বাইরে গিয়ে সেজানকে পেয়ে গেল।
“ভাই, পেয়েছেন?”
“না, সেজান। বুঝতে পারছি না কোথায় গেল।”
“এই গার্ডেনে খুঁজেছেন?”
“না, এখানে কি করবে?”
“ভাবি তো এমন পার্টিতে আগে কখনো আসেনি। হয়তো ভালো লাগছিল না। তাই বাইরে এসেছে।”
সেজান রুশাকে খুঁজতে লাগল। আদ্রিশ নিজের চুল টানছে আর রুশার নাম ধরে ডাকছে। আদ্রিশ হঠাৎ দূরে একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখল। আদ্রিশ কিছুটা কাছে গেল। রুশা ঘাসের উপর বসে বোতল থেকে পানি নিয়ে মাথায় দিচ্ছে।
“রুশা!”
আদ্রিশের গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে হাত থেকে বোতল পড়ে গেল। ঘুরে আদ্রিশের দিকে চেয়ে আছে।
আদ্রিশ হাঁটু গেড়ে বসে ওর দুই বাহু চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বলল,
“এখানে তুমি কি করছো? তোমাকে ওখানে চুপচাপ বসে থাকতে বলিনি?”
“হ্যা, বলেছিলেন।”
“তাহলে এখানে কি করছো?”
সেজান ওদের দেখে ওদের কাছে চলে এল। সেজানকে দেখে আদ্রিশ রুশাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
“ভাবি, এখানে বসে আছেন কেন?”
“পার্টিতে কীসব ড্রিংকস খেতে দিল ওসব খেয়ে আমার বমি আসছিল। কিন্তু ওয়াশরুম খুঁজে পাচ্ছিলাম না আর বমিও কন্ট্রোল করতে পারিনি তাই এখানে চলে এসেছি। বমি করে টায়ার্ড হয়ে গেছি। তাই এখানে বসে মুখ ধুয়ে মাথায় পানি দিচ্ছিলাম।”
আদ্রিশ স্থির দৃষ্টিতে রুশার দিকে চেয়ে আছে। রুশা সেজানকে উত্তর দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আদ্রিশের দিকে তাকাচ্ছিল।
আদ্রিশ শুধু জিজ্ঞেস করল,
“তোমার মোবাইল কোথায়?”
“ব্যাগে।”
“ব্যাগ কোথায়?”
“যেখানে বসে ছিলাম সেখানে।”
“ব্যাগ, মোবাইল ওখানে ফেলে চলে এলে?”
সেজান খেয়াল করছে আদ্রিশ রেগে যাচ্ছে। তাই ওর প্রশ্ন করা থেকে বাঁধা দিতে রুশাকে বলল,
“ভাবি, উঠুন। বাসায় গিয়ে রেস্ট নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
রুশা আদ্রিশের দিকে একবার চেয়ে সেজানকে বলল,
“আমি এখন ঠিক আছি।”
হাত বাড়িয়ে দিল উঠার জন্য। সেজান আদ্রিশের দিকে তাকাল। আদ্রিশ তখনও চুপচাপ ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। রুশার হাত ধরে উঠাল। ওর হাত জোরে চেপে ধরল। রুশা না পারছে সহ্য করতে আর না পারছে কিছু বলতে।
আদ্রিশ রুশাকে নিয়ে গাড়িতে বসল। সেজান ওর ব্যাগ নিয়ে এল। সারা রাস্তায় আদ্রিশ কিছু বলে নি।
রুশা বাড়িতে ফিরে আদ্রিশের আগেই রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ভেতরে আছে। আদ্রিশ কোর্ট, টিশার্ট খুলে অধৈর্য্য হয়ে বসে আছে। আজ অনেক কিছু জানার আছে,অনেক বোঝাপড়া আছে রুশার সাথে। রুশা শাড়ি হাতে নিয়ে সুতির একটা জামা পরে বের হলো। আদ্রিশকে খালি গায়ে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। ওকে ইগ্নোর করে আলমারিরতে শাড়ি রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আদ্রিশ উঠে গিয়ে পাশের আলমারি থেকে একটা শার্ট নিয়ে পরে রুশার মুখোমুখি দাঁড়াল। রুশা আমতা আমতা করে বলল,
“কিছু বলবেন?”
আদ্রিশ এতক্ষণ বোম হয়ে ছিল এখন যেন বিস্ফোরিত হলো। ওকে আলমারির সাথে চেপে ধরে বলল,
“কি করতে চাইছো তুমি? কি চলছে তোমার মনে?”
রুশা ভয়ে ভয়ে বলল,
“আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না।”
“বুঝতে পারছো না? তুমি দেখতে যতটা মাসুম ঠিক ততটা মাসুম না। তোমার ভেতরে অনেক প্যাঁচ আছে। বমি করার ড্রামা কেন করলে?”
“আমি ড্রামা করিনি।”
“শাট আপ! আমাকে দেখে তোমার এতটা বোকা মনে হয়? তোমার ড্রামা আমি খুব সহজেই ধরতে পেরেছি। আজ যা করেছো সব ইচ্ছাকৃতভাবে করেছো। সেজানের সামনে চুপ ছিলাম কিন্তু এখন আমি জানতে চাই কিসের পরীক্ষা নিচ্ছো তুমি? আমার ধৈর্যের না ভালোবাসার?”
“আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা আমি কেন নেব?”
“তাহলে ভালোবাসার পরীক্ষা নিচ্ছো?”
রুশা ওর দিকে একবার চেয়ে চোখ নামিয়ে নিল। আদ্রিশ ওর নীরবতায় কিছু বুঝে নিল। তারপর একটা ছুরি নিয়ে ফিরে এল। রুশা ছুরি দেখে ভয়ে আলমারির সাথে লেপ্টে গেছে। আদ্রিশ ওর চোখের সামনে ছুরিটা নিলে ও চোখ বন্ধ করে ফেলে। ক্যাচ শব্দে রুশা চোখ মেলে, আদ্রিশ ওর দিকে চেয়ে আছে। রুশা কৌতূহল নিয়ে আদ্রিশের হাতে রাখা ছুরিটার দিকে তাকাল। তাতে রক্ত আর আদ্রিশের বাম হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে। রুশা আঁতকে উঠে নিজের মুখ চেপে ধরে। আদ্রিশ আবারও হাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করল। রুশা আর সহ্য করতে পারছে না।
“কি করছেন পাগল হয়ে গেছেন?”
“হ্যা, পাগল হয়ে গেছি। তোমার আচরণ, রোজ রোজ ড্রামা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।”
আদ্রিশ আবারও নিজের হাতে আঘাত করল,
“কিভাবে প্রমাণ করব? কি পরীক্ষা তুমি চাও? কি করলে তুমি ক্ষান্ত হবে?”
“আমি কোনো পরীক্ষা, প্রমাণ চাই না। আপনি থামুন প্লিজ। প্লিজ থামুন। ওটা ফেলে দিন। আমার ভয় লাগছে, মাথা ঘুরছে। ওটা ফেলে দিন।”
আদ্রিশের হাত থেকে গলগল করে মেঝেতে রক্ত পড়ছে। ও ছুরিটা ফেলে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। রুশা মেঝেতে বসে পড়ল। আদ্রিশের আচরণ বলছে ও সুস্থ নয়। রুশার প্রথম দিন থেকেই মনে হচ্ছে ওর মাথায় কোনো সমস্যা আছে। রুশা চোখের পানি মুছে ঘর থেকে বের হয়ে সিড়ির রেলিং ধরে দাঁড়াল। আদ্রিশের হাত ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে মিজান চাচা। রুশা রিলেক্স হলো ব্যান্ডেজ করতে দেখে।
.
সকাল সকাল রুশা পত্রিকা দেখতে বসেছে।
ওকে একজন কল করে জানিয়েছে ওর ছবি ছাপানো হয়েছে পত্রিকায়। গতকাল রাতের পার্টির ছবি। সাথে ওদের বিয়ে নিয়ে আর্টিকেল ছাপা হয়েছে। দুজনকে এক সাথে কত সুন্দর লাগছে।
আদ্রিশ কফি খেতে খেতে রুশাকে একবার দেখল। ও মনোযোগ দিয়ে পত্রিকায় কিছু দেখছে। আদ্রিশ ওকে পাত্তা না দিয়ে নাস্তা করতে বসল।
একজন সার্ভেন্ট রুশাকে বলল,
“মেম, স্যার নাস্তা করার জন্য ডাকছেন।”
রুশা পত্রিকা রেখে খেতে গেল। একবার আদ্রিশের দিকে চেয়ে চেয়ার টেনে খেতে বসল। খেতে খেতে আদ্রিশের দিকে কয়েকবার তাকাল। আদ্রিশ নিজের মতো খাচ্ছে ওকে পাত্তা দিচ্ছে না।
“আপনার হাত এখন ঠিক আছে?”
আদ্রিশ অনেকক্ষণ পরে উত্তর দিল,
“কখনো দেখেছো একদিনে গভীর ক্ষত শুকাতে?”
রুশা যা বোঝার বুঝে নিল। তাই আর কথা বাড়ালো না। গভীর ক্ষত দ্বারা শুধু হাতই না রুশার আচরণকেও বোঝাচ্ছে।
আদ্রিশ চলে যেতেই রুশার মোবাইলে কল এল। রুশা জামার পকেট থেকে মোবাইল বের করে রিসিভ করল,
“হ্যালো!”
পুরুষালী কন্ঠস্বর কিছুটা রাগ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“নিউজপেপারে কি ছাপিয়েছে? মিষ্টার আদ্রিশ আফসানের স্ত্রী রুশা আফসান?”
“হুম, আদ্রিশের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে, এত বড় বিজনেসম্যান, তার স্ত্রীর ছবি পত্রিকায় ছাপা হওয়াটা আশ্চর্যের বিষয় না।”
“শাট আপ! পাগল হয়েছিস? কি করছিস? নিজের জীবন নিজেই ধ্বংস করছিস।ওর কাছ থেকে চলে আয়।”
“এত সহজ! এ-সব বাদ দেও। তোমাকে একটা কথা বলার আছে। যদিও আমি শিউর না।”
“হ্যা, বল।”
“আদ্রিশ হয়তো সুস্থ নয়। ওর একটা সমস্যা আছে।”
“যেমন?”
“ও মানসিক রোগী যাকে বলে পাগল।”
“পাগল তো তুই! ও পাগল হলে এত বড় সাম্রাজ্যে চালায় কি করে? তোর সাথে কিছু পাগলামি করেছে? তুই এই ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলে দেখ।”
“আমার ওর সাথে তেমন কথা হয় না। আর এরকম একটা ব্যাপার কি করে জিজ্ঞেস করব?”
“মেডিকেল রিপোর্ট কিছু নেই?”
“পাইনি। তবে একটা কথা কি জানো ওর আলাদা একটা ঘর আছে। আমরা যে ঘরে থাকি সেখানে ওর সবকিছু আছে কিন্তু এটা ওর আসল ঘর নয়। বিয়ের পর আমার সাথে এ ঘরে থাকে কিন্তু ওর আলাদা একটা ঘর আছে যেখানে আগে থাকত।”
“সেখানে খোঁজ করে দেখ।”
“পাগল! ও ঘরে কারো ঢোকার পারমিশন নেই। সব সময় লক থাকে।”
“তবে মর তুই। যা খুশি কর।”
বলে খট করে কল কেটে দিল। রুশা আলতো হাসল।
.
রুশা আদ্রিশের পালিত কুকুর ইলোকে নিয়ে খেলছে। ইলো নামটা শুনে প্রথম দিন রুশা বেশ অবাক হলো। কুকুরের নাম ইলো এটা কেমন নাম। পরে ভাবল আদ্রিশ যেমন উদ্ভট তেমনি কুকুরের নাম। ইলো আদ্রিশের ঘরের দরজার কাছে চলে গেছে। রুশাও পেছনে পেছনে ওকে ধরতে গেল। তারপর আদ্রিশের দরজার দিকে তাকাল। ইলোকে কোলে নিয়ে দরজার উপরের সিসি ক্যামেরা দেখে কিছুক্ষণ ভেংচি কেটে চলে এল।
রুশা একা একা বলছে,
“দরকার নেই বাবা, এই চিন্তা মাথায় আনিস না রুশা। তবে আদ্রিশ তোর মাথাটাই কেটে নিবে। এই ঘর থেকে মেপে মেপে বিশ হাত দূরে থাকবি। তবেই বেঁচে থাকবি।”
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here