#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
লেখিকাঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩
মাশরিফ মির্জাপুরে পৌঁছাল। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ। তার শৈশব, কৈশর সব এখানেই। ছোটো থেকে মায়ের চাকুরিসূত্রে পরিবার সহ এখানেই থাকত। তারপর সময়ে ক্রমবর্ধমানে এখানকার স্টুডেন্ট হলো। তারপর আর্মি জয়েন। সব কেমন ধারাবাহিক ভাবে চলছে।
মূল ফটকে এসে গাড়ি থামাল মাশরিফ। এখন দারোয়ান আসবে, চেক করবে তারপর গাড়ি ঢুকতে দিবে। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সামনে তাকালো। দারোয়ান তার পরিচিত। দারোয়ানকে সালাম দিয়ে গাঁড়ি নিয়ে ভেতরে চলে গেল। সারিবদ্ধ ভাবে গাছ লাগানো ও পরিষ্কার রাস্তা। লেক, উুঁচুভূমি সবই আছে। মসজিদ, হসপিটাল পেরিয়ে মূল একাডেমিক ভবনের সামনে এসে আবার গাড়ি থামাল। পাশেই তার হোস্টেল ভবন ফজলুল হক ভবন। পাহারারত দারোয়ান তাগদা দিলে গাঁড়ি মাঠে নিয়ে যায়। আবার গাঁড়ি থামিয়ে ভাবল, পুরো মাঠটা একবার দৌঁড়ে আসবে। নিজের এই অদম্য ইচ্ছা সে প্রতিবার পূরণ করে।
আট মিনিটে পুরো মাঠটা দৌঁড়ে এসে গাঁড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে মাঠেই বসে পরল। এবার মায়ের ফোন। রিসিভ করতেই মহিমা বেগম বলেন,
“বাসায় আয়। মাঠে দৌঁড়াতে হবে না। সকাল বেলা তো এমনিতেই দৌঁড়াবি।”
মাশরিফ হেসে বলে,
“দারোয়ান তোমাকে বলেছে তাই না? প্রতিবার এই সময়েই ফোন দাও। আমি গেইট দিয়ে ঢোকার ঠিক চৌদ্দ-পনেরো মিনিট পর।”
মহিমা বেগম অভিমান করলেন যেনো। বললেন,
“এর আগে ফোন করলে তো তুই ধরবি না। তাই এই সময়ে ফোন করি। ঘড়িতে সময় দেখেছিস? দশটার কাছাকাছি। জলদি আয়।”
“আসছি। দুই মিনিটেই আসছি।”
বসা থেকে চট করে উঠে গাঁড়িতে বসে গাঁড়ি স্টার্ট দেয়। তারপর গাঁড়ি জায়গামতো পার্ক করে বাসায় প্রবেশ করে। মহিমা বেগম দরজা খুলেই রেখেছিলেন। সেই সুযোগে মাশরিফ দৌঁড়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তিন মাস তাই না? তিন মাস পর আসলাম।”
“হ্যাঁ। মাঝে ছুটি পেয়েও আসিসনি তাও জানি। আমার কথা তো মনে পরে না।”
মায়ের অপ্রতিরোধ্য অভিযোগে মাশরিফ হালকা হাসে। অতঃপর বলে,
“তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ রেডি করতেই তো আসিনি। সারপ্রাইজটা পেয়ে তুমি অনেক খুশি হবে।”
“কোনো মেয়ে পছন্দ করেছিস নাকি? বিয়ে করবি? বল মেয়ে কোথায় পড়াশোনা করে? ছবি আছে?”
মায়ের অত্যাধিক অধীরতায় মাশরিফ কপালে হাত দিয়ে মাকে চেয়ারে বসিয়ে বলে,
“নাম, ছবি, এসব কিছুই বলব না। তবে এক ডাক্তারনী পাবে। যে তোমাকে টাইট দিয়ে রাখবে। বাকিটা সারপ্রাইজ। আর বিয়ে এখনি করব না। ডাক্তারনী আগে জানুক।”
“ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা কিছু নাই করুক, তাতেও কোন সমস্যা নেই। শুধু মেয়েটা ভালো হোক। যে আমার অবর্তমানে সবসময় তোর সাথে থাকবে।”
মায়ের এহেনো অশুভ কথায় মাশরিফ ভারি রুষ্ট হলো।
“তুমি সবসময় এসব বলো কেনো? দেখো পরের ছয় মাসেও আসব না।”
মহিমা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
“আচ্ছা ঠিক আছে। আর বলবো না। এইবার চল তো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবি। ওর পছন্দ মতো পাঙাশ মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট করেছি। তারপর করলা দিয়ে শিং মাছের ঝোল, আর চিকেন সবজি। জানি রাতে বেশি খেতে পারবি না তাই এটুকু। সাথে তোর পছন্দের পাটিসাপটা পিঠাও আছে।”
“এসব কম মা? এগুলোর জন্য কম করে হলেও দেড় প্লেট ভাত খেতে হবে। আর পাটিসাপটা! এজন্যই অভী বলে, বাসায় গেলেই অভ্যাস খারাপ হয়ে যায়।”
মাশরিফের কথায় মহিমা বেগম বলেন,
“তোর সব বন্ধুদের নিয়ে আসিস। ওদের কথামতো একদিনেই মোটু করে দিব। যা এবার ফ্রেশ হ।”
মাশরিফ মাকে আরেকবার জড়িয়ে ধরে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
__________
তিতির পড়ছে এমন সময় নাজমা বেগমের ফোন আসে। তিতির ফোন রিসিভ করে কুশলাদি জিজ্ঞেসা শেষে নাজমা বেগম বলেন,
“বাসা পেয়েছিস? ”
“না। মা। কাল আবার বের হবো।”
“নতুন মাস তো শুরু হলো আজকে। কি করবি?”
তিতির হতাশ স্বরে বলল,
“দেখি কি করা যায়। তোমরা আর কয়েকদিন থাকো। তারপর সব ঠিক হলে নিয়ে আসব। চাচা-চাচি কিছু বলেছে?”
“না। তোর চাচা-চাচি তো বলছে এই মাসটা থেকে যেতে। তোকে বাসা খোঁজা নিয়ে প্রেশার না দিতে।”
তিতির স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“যে কয়দিন বাসা পাবো না, ততোদিন কিছু করার তো নেই। হিয়াকে বলো হায়াতের কয়েকটা ছবি পাঠাতে। বাচ্চাটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।”
“আচ্ছা বলবনে। তুই সাবধানে থাকিস। রাখছি।”
কথা বলা শেষে দেখে লিরা তিতিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তিতির ইশারায় ‘কি হয়েছে?’ বুঝালে লিরা বলল,
“নাথিং। ইউ ক্যান টক উইথ রাফি, অর্ক ভাইয়া। দে ক্যান হেল্প ইউ।”
“রিয়ালি? বাট..!”
লিরা এবার তিতিরের পাশে এসে বলল,
“দে আর সো ফ্রেন্ডলি। টোমার সিট..”
হুট করে লিরা থেমে গেল। তিতির ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেসা করে,
“আমার সিট কী?”
লিরা কিয়ৎ ভাবলো। অতঃপর বলল,
“সিট পরে পেয়েছ দ্যাটস হোয়াই প্রবলেম হচ্ছে।”
লিরার কথার ভাবার্থ তিতিরের মা*থায় ঢুকলো না। তিতির আর জিজ্ঞেসাও করল না। হালকা হেসে আবার পড়তে শুরু করে। লিরা নিজের বেডে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে।
_______
সুজন, পলাশদের জামিন নিয়ে এক উকিল এসেছে। হিয়ার উপর আ*ক্রম*ণের কেনো প্রমাণ দেই বলে কোর্টেও চালান করতে পারেনি। নতুন অফিসার নাদিম বিপাকে পরে যায়। দুইদিন যাবত তাই শুধু আটকেই রেখেছে। এবার উকিলকে নাদিম বলেন,
“তিয়াস আহমেদের হ*ত্যা মা*মলার আ*সামি ওরা। তিয়াস আহমেদের পরিবার হ*ত্যা মা*মলা দায়ের করেছিল। তারা মানে না ওটা অ্যা*ক্সিডেন্ট। সেটার ইনভেস্টিগেশন মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে কে*সটা অ্যা*ক্সিডেন্ট হিসাবে চালিয়ে দিয়েছে আগের পুলিশ অফিসার। সেটার আবার রিওপেন হবে।”
উকিল এবার বললেন,
“কোন প্রমাণ না পেলে সেটাকে হ*ত্যা মা*মলা কিভাবে বলা হয়? কেউ কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। আর সেই পুলিশ অফিসার প্রমাণ না পেয়েই অ্যা*ক্সিডেন্ট হিসেবে কেসটা ডিসমিস করেছে। নতুন কোন প্রমাণ ছাড়া কেস রিওপেন করেই লাভ কি? আর ভি*কটিমের পরিবারকে তো দেখছি না। তারা কোথায়?”
পু*লিশ অফিসার নাদিম আর কিছু বলে না। সুজন ও পলাশকে ছেড়ে দিতে বলে। সুজন ও পলাশ জে*ল থেকে বেরিয়ে, পু*লিশ অফিসার নাদিমকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কি-রে? কইছিলাম না? দুইদিনও রাখতে পারবি না আমারে। আমার লগে পাঙ্গা নিস না অফিসার। এই থানায় টিকতে পারবি না।”
এই বলে সুজন ও পলাশ উকিলের সাথে থানা থেকে বেরিয়ে যায়। অফিসার নাদিম নিজের টেবিলে রাগে ঘু*ষি মা*রে।
থানা থেকে বেরিয়ে পলাশ উকিলকে জিজ্ঞেসা করে,
“উকিল সাব, আমাগো জামিন করাইলো কেডা?”
“তাকে আমিও চিনি না। মুখে মাস্ক পরা ছিল। আমার অফিসে এসে মোটা অংকের টাকা টেবিলে রাখল। আর আপনাদের কে*স হিস্টোরি আমাকে দেখালো তারপর আমি জামিনের ব্যাবস্থা করেছি। এরপর থেকে কেয়ারফুল থাকবেন। আসি।”
উকিল চলে গেলে সুজন ও পলাশ হাঁটতে থাকে তখন সুজনের ফোনে একটা কল আসে। সুজন নাম্বারটা চেনে। মুখে তার বিশ্রি হাসি ফুটে উঠল। রিসিভ করে বলল,
“সন্দেহ হইতাছিল আপনারাই জামিন করাইছেন। আপনাগো এত সাহায্য করছি, এটুকু তো করাইবেনই। ধন্যবাদ।”
অপরপাশ থেকে বলল,
“তোমাদের জামিন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে তোমাদের মুখ থেকে কোন কথা বের না করতে পারে। রি*মান্ডে নিয়ে গেলে তখন তো তোমরা বলেও দিতে পারো। আমরা নিজেদের অ্যাইডেন্টিটি প্রকাশ করতে চাই না। আশাকরি, শিঘ্রই দেখা হবে। ততোদিন স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করবে।”
কথা শেষ করে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে কল কেটে দিল। সুজন বিড়বিড় করে বলে,
“শা*লা! সবাই স্বার্থ বোঝে। নিজেগো স্বার্থ ছাড়া আমাগো বাইর করত না। চল পলাম বাড়িত গিয়া ঘুম দিমু তারপর সক্কাল সক্কাল পাখিগো দেখতে যামু।”
পলাশ ও সুজন একটা সিএনজি নিয়ে রওনা করে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।