#আকাশেও_অল্প_নীল #পর্বঃ০৫ #আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

0
531

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ০৫
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

১২,
পরেরদিন সকালবেলায়, নাস্তা খেয়ে রুমে বসে ফোন ঘাটছে রাইমা। তখনই শাহনাজ বেগম রুমে আসলেন। মা-কে দেখে ফোন রেখে রাইমা বললো,

“কিছু বলবে মা?”

শাহনাজ বেগম মেয়ের কাছে একপাশে বসলেন। মেয়ের গালে হাত রেখে বললেন,

“সেদিন একটু বেশিই বকাঝকা করে ফেলেছিলাম, তাইনা?”

“হঠাৎ এই প্রশ্ন করছো কেনো?”

রাইমা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। শাহনাজ বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

“না হলে তুমি বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা কেনো করেছিলে?”

“ভুল বুঝছো মা। আমি বাসা ছেড়ে যাইনি সেদিন। এমনি মন খারাপ ছিলো, হাটতে বের হয়ে অনেকটা দূর চলে গিয়েছিলাম বেখেয়ালে।”

“কিন্তু তোমার চোখ তো মিথ্যা বলছে রাইমা। মায়ের কাছে কি লুকাচ্ছো? মায়েরা কিন্তু মিথ্যা ধরে ফেলতে পারে।”

রাইমা ভেতর থেকে কেঁপে উঠে মায়ের কথায়। আসলেই তো সে কথা লুকাচ্ছে। থাক না কিছু কথা, অন্তরালে। রাইমা মা-কে আশস্ত করতে হাসার চেষ্টা করে বলে,

“মাই মাদার বাংলাদেশ, আমি তোমার থেকে কিছু লুকাচ্ছি না। একটু বিশ্বাস করো আমায়।”

“আচ্ছা বিশ্বাস করলাম। কিন্তু তোমার খালামনি ফোন দিয়ে যে মাহাদের কার সাথে জানি সম্পর্ক আছে। সেই মেয়েকে দেখতে যাবে। তোমাকেও সাথে যেতে বলেছে নাকি সেই মেয়ে! আগামীকাল যাওয়ার সময় তোমার সাথে আমাকেও যেতে বললো তোমার খালামনি।”

মায়ের কথাতে স্নেহার পাশাপাশি যখনই মনে পরলো দিগন্ত স্নেহার ভাই, রাইমার মুখটা চুপসে গেলো। সে নিস্তেজ ভাবে বিছানায় আগের মতো হেলান দিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,

“আমার বদলে তুমিই চলে যেও মা। আমি যাবোনা। আগামীকাল আমার ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে।”

“কিন্তু তোমার খালামনি যে বললো! না গেলে বিষয়টা কেমন একটা দেখায় না রাইমা! মেয়েটাও যেখানে তোমায় বলেছে!”

“আগামীকালের বিষয় আগামীকাল দেখা যাবে মা। আপাতত এসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছেনা। তুমি রান্না করবেনা দুপুরের? চলো তোমায় সাহায্য করি!”

রাইমা কথা কা’টাতে রান্নার কথা তোলে। শাহনাজ বেগম উত্তরে বলেন,

“হ্যাঁ রান্না একটু করতে হতো৷ কিন্তু তোমার সাহায্য করতে হবে না। রেস্ট করো। সারা সপ্তাহ ভার্সিটিতে ছোটাছুটি করো। গতকালও মাহাদের সাথে দৌড়ে বেড়ালে। রেস্ট করো।”

“বাবা আর আরফান কোথায়?”

রাইমা প্রশ্ন করে। শাহনাজ বেগম উত্তরে বলেন,

“বাজারে গেছে একটু। তোমার ভাইয়ের কখন কি বায়না তার ঠিক থাকেনা। তুমি রেস্ট করো।”

শাহনাজ বেগম মেয়ের গালে হাত বুলিয়ে চলে গেলেন। রাইমা মুচকি হেসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। চোখ বন্ধ করে কপালের উপর এক হাত দিয়ে শুয়ে পরে বিছানায়। চোখের পাতায় আবছা কিছু স্মৃতি। মনের ভেতর মোচর দিয়ে উঠে রাইমার। চোখের কার্ণিশে জলধারা বয়ে চলে। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর রাইমা শার্লিনের কণ্ঠস্বর শুনতে পায়। ধরফরিয়ে উঠে বসে রাইমা। এই মেয়ে এখন এসে চোখে জল দেখলে নির্ঘাত কানের পোকা ভর্তা করে ছেড়ে দেবে। সে উঠে চোখ ভালো করে চোখ মুছেই ওয়াশরুমে যায় দৌড় দিয়ে। চোখমুখে জল ছিটায় ভালো করে। শার্লিন এদিকে রাইমার রুমে এসে হাঁক ছেড়ে রাইমাকে ডাকছে। রাইমা তোয়ালে দিয়ে চোখ মুখ মুছতে মুছতে রুমে এসে দেখে শার্লিন তার খাটে বসে আপেল খাচ্ছে। সে তোয়ালে ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে এসে বসলো শার্লিনের পাশে। শার্লিন রাইমাকে দেখে ওর দিকে আপেল এগিয়ে দিয়ে বললো,

“আপেল খাবি?”

“তুই খাচ্ছিস খা, আমায় বলিস কেন?”

“কাঁদছিলি কেনো?”

রাইমা থমকে যায় শার্লিনের প্রশ্নে। চোখেমুখে বিস্ময় প্রকাশ পায় তার। সে বিস্মিত কণ্ঠে জিগাসা করে,

“কোথায় কাঁদলাম আমি? কি বলছিস?”

শার্লিন আপেলে আরও কয়েকটা কামড় দিয়ে শেষ করে। রাইমার ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে বলে,

“আমার থেকে কথা আড়াল করতে শিখে গেছিস? বিষয়টা তোর সাথে যাচ্ছে না ঠিক।”

“কি সব যা তা বলছিস শালু!”

“এই ডাকলি শালু! তোর এতোটা প্রিয় এমনি এমনি হইনি, যতোটা হলে কেউ ভালোবেসে আমায় একটা ডাকনাম দিবে। ডাকনাম দেওয়ার জন্যও অফুরন্ত ভালোবাসা লাগে রাই। আর ভালোবাসার কাছ থেকেই আজকাল কথা লুকাস? বিষয়টা মেনে নিতে পারলাম না।”

১৩,
শার্লিনকে জড়িয়ে কাঁদছে রাইমা। হেঁচকি উঠে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। শার্লিন কিছু সময় কাঁদার জন্য ছেড়ে দিয়ে যখন দেখলো কান্নার দমক বেড়ে যাচ্ছে, সে রাইমাকে ছাড়িয়ে সরিয়ে দিলো। চোখ মুছে দিয়ে বললো,

“আমি তোর বর নই যে জড়িয়ে কেঁদেই যাবি। আমার স্বপ্ন কিছু হলে আমার বরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদবো। কিন্তু তুই বাই এনি চান্স আমায় তোর বর ভেবে সেই স্বপ্ন পূরণ করছিস? তোর কপালে তো প্রেম ভালোবাসা নাই, তাই এমনটা ভাবতেও পারিস! বলে রাখি আমি কিন্তু ছেলে নই। চাইলে আমায় টেস্ট করে দেখতে পারিস আমি মেয়ে কিনা এটা নিয়ে সন্দেহ থাকলে।”

রাইমার মুহুর্তে কান্না থেমে হেঁচকি উঠে যায়। শার্লিন বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে রাইমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“খেয়ে নে। জানিনা আমি, আমার কথা শুনলেই তোর হেঁচকি কেনো উঠে?”

“তোর সাথে আমার বড্ড মিল বুঝলি শালু। এমনি এমনি তোকে আমার আত্মার সাথি বলি না। সবার জীবনে একটা ব্যক্তিগত মানুষ থাকা দরকার। সেই মানুষ যে শুধু ভালোবাসার মানুষই হবে, এমনটা নয়। এই তোর মতো আত্মার সাথী থাকলেই হবে। যে চট করে মন খারাপ ধরে ফেলব, অধিকার দেখিয়ে জানতে চাইবে কি হয়েছে, সময় দেবে। কানৃনা করার জন্য একটা ভরসার কাঁধ হবে। আর মুহুর্তে হাঁসাবে। সবার জীবনে এমন একটা মানুষ থাকে না। আমার ভাগ্য আমি তোকে পেয়েছি।”

রাইমা এক দমে কথাগুলো শার্লিনের উদ্দেশ্যে বলে। রাইমার ঠোঁটের কোণে হাসি। শার্লিন মুচকি হাসে, রাইমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আমারও ভাগ্য আমি তোকে পেয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস কর তোকে আমার জীবনে আঁটকে রাখার বা তোর জীবনে আঁটকে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। আমরা দুজন দুজনের প্রতি আঁটকে থাকলে আমাদের বেচারা বরের কপাল পুড়”বে। ওদের কপালে বউ জুটবে না।”

রাইমা শার্লিনকে জড়িয়েই ওর পিঠে দুমদাম কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয়। শার্লিন আরও শক্ত করে রাইমাকে জড়িয়ে ধরে। রাইমা হেসে জড়িয়ে ধরে বলে,

“তুই আর ভালো হলি না?”

“ভালো হলে তোকে কে হাসাবে রাই?”

“তোর ভালো হওয়ার দরকার নেই, এমনই থাকিস।”

“আচ্ছা এসব বাদ, কাঁদছিলি কেনো?”

“তুই বুঝলি কি করে আমি কাঁদছিলাম?”

“তোর চোখ মুখ বলে দেয়। তাছাড়া বাসায় এসে আগে তোর রুমেই উঁকি দিয়ে দেখলাম কাঁদছিস। এরপর আন্টির সামনে হইচই করে জানান দিয়ে দেখলাম, আমি এসেছি দেখে তুই কি করিস! কান্না প্রকাশ করিস, নাকি আড়াল করিস।”

রাইমা শার্লিনকে ছেড়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বসে। মৃদু স্বরে বলে,

“বিকেলে চল ফুচকা খেতে যাই। সাথে একটু ঘুরাঘুরি করবো। এরপর বলবো।”

“ওকে ডান। বিকেলে রেডি থাকিস, আমি আসবো ডাকতে। এখন যাই।”

শার্লিন চলে যায় কথাটা বলেই। রাইমা ফোনে তাকিয়ে সময় দেখে নেয়। এরপর চলে যায় গোসল দিতে।

১৪,
দুপুরের খাবার পর একটু ঘুমিয়েছিলো স্নেহা। বিকেল চারটের সময় ঘুমটা ভেঙে যেতেই দেখে বাসার চেহারায় পাল্টে বসে আছে। পুরো ড্রইং রুম জুড়ে নতুন ফার্ণিচার আর সেগুলো সেট করছে কিছু লোকজন। দিগন্ত তাদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছে কোথায় কি সাজাবে। আর পুরাতন গুলো বাসার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে কিছু লোক। স্নেহা দিগন্তের এহেন কর্মে পুরোপুরি হতবাক। দিগন্ত বোনকে রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বোনের পাশে দাড়িয়ে জিগাসা করে,

“আপা দেখ তো, সব পছন্দ হয় কিনা!”

“কিন্তু হঠাৎ সবকিছু এমন পাল্টে দিচ্ছিস কেনো?”

“আগামীকাল থেকে তোরও নতুন জীবনের সূচনা, আর আমারও। পুরোনো কোনো স্মৃতি আমাদের জীবনে না থাকুক।”

“সব পাল্টে দিলেই কি সব স্মৃতি মুছে যাবে দিগন্ত!”

দিগন্ত বোনের প্রশ্নে বোনের দিকে তাকিয়ে হাসে। স্নেহা অবাক হয়ে ভাইয়ের হাসি দেখে। প্রশ্ন করে,

“তুই হাসছিস?”

“হাসবো না তো কি করবো বলতো আপা! বাদ দে, তুই যে কেনো সব জেনেও মেনে নিয়ে মনে আঁটকে রাখিস! আমি জানিনা।”

“দিনশেষে এটাই মনে হয় উনি আমাদের জন্মদাত্রী মা।”

“মা শব্দ টার সম্মান উনি রেখেছেন?”

“বাদ দে তুই তোর কাজ কর।”

স্নেহা রুমে ঢুকে যায়। ফ্রেশ হওয়া জরুরী। দিগন্ত বোনের লুকোচুরি দেখে মৃদু হাসে। হাসতে হাসতেই গম্ভীর হয়ে যায়। হাত মুঠোবন্দি করে মনে মনে ভাবে,

‘জীবনেও উনাকে ক্ষমা করবোনা আমি, কখনও না৷’

“স্যার এই ল্যাম্পটা কোথায় রাখবো?”

যারা সবকিছু জায়গা মতো সেট করে দিচ্ছিলো, তাদেরই একজনের প্রশ্নে দিগন্ত সব ভাবনা চিন্তা ছেড়ে ওদের সাথে কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে। অন্তত কাজের মাঝে থাকলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়, আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here