গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী #Maisha_jannat_nura(লেখিকা) #পর্ব_৭

0
416

#গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী
#Maisha_jannat_nura(লেখিকা)
#পর্ব_৭

তৃপ্তি খুবই যত্নশীল ভাবে তীব্রের সেবা করেছে, সময় মতো খাবার খাওয়ানো ঔষধ দেওয়া সব কাজ গুরত্ব সহকারে করেছে, তাই ডাক্তারের বলা সময়ের অনেক আগেই তীব্র সুস্থ হয়ে উঠেছে, আজ তীব্রকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দিয়েছে। আমজাদ চৌধুরী ও তূর্য চৌধুরী এসেছে তীব্র আর তৃপ্তি কে বাড়িতে নিয়ে যেতে, তৃপ্তি ওদের সাথে ওদের বাড়িতে যেতে বেশ সংকোচ বোধ করছিলো, তৃপ্তির এমন ছটফটানো ভাব ও মুখজুড়েই বিরাজ করছিলো যা সবার চোখ এড়িয়ে গেলেও তীব্রের চোখ এড়াতে পারে নি।তীব্র, আমজাদ চৌধুরী আর তূর্য কে উদ্দেশ্য করে বলে..

-দাদু, তূর্য তোরা গাড়িতে গিয়ে বোস আমি আর তৃপ্তি একটু পরে যাচ্ছি।

তূর্য আর আমজাদ চৌধুরী কথা না বাড়িয়ে গাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়, এদিকে তৃপ্তি ভ্রু কুঁচকে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছে, তৃপ্তিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তীব্র বলে..

-আমি জানি আমি অনেক সুন্দর দেখতে এর জন্য এভাবে দেখার কি আছে, মনে হচ্ছে এখনি চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে নিবে আমাকে।

তৃপ্তি নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয় আবারও সে এভাবে তাকিয়ে ছিলো তীব্রের দিকে ভাবতেই ওর নিজের উপর নিজেরই অনেক রাগ হচ্ছে, আর ওর রাগ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তীব্রের লুচু কথাই যথেষ্ট। তৃপ্তি তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-আপনি সুন্দর?

-কেন কোনো সন্দেহ আছে? (তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে বলে উঠে তীব্র)
9
-১০০ তে ১০০ ভাগই সন্দেহ আছে আমার এই বিষয়ে (তৃপ্তি)

-কিহহ, তুমি জানো এই তীব্র চৌধুরীর জন্য হাজার হাজার মেয়ে পাগল? (তীব্র)

-সব ধোঁকাবাজি, আপনি মোটেও সুন্দর নন, বান্দরের মতো মুখ চুল গুলো যেন ঘোরার লেজ, নাকটার তো কোনো তুলনাই হয় না, নাক নয় তো যেন সরু বাঁশ, চোখ দুটোর কথা আর কি বলবো মনে হয় যেন পঁচা ডোবার ভাসমান ডিম, হাতির মতো লম্বা দুটো কান আর উচ্চতা যেন আইফেল টাওয়ার (তৃপ্তি)

চোখ বন্ধ করে তীব্রকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলছে তো বলেই যাচ্ছে তৃপ্তি, থামার যেন কোনো নামই নেই, এদিকে তৃপ্তির এসব কথা শুনে তূর্যের ফর্সা মুখ লাল বর্ন ধারণ করেছে, তীব্র নিজের রাগকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে তৃপ্তির হাত ধরে টেনে নিয়ে দেওয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। হঠাৎ হেঁচকা টানে তৃপ্তি ভয়ে মুখ কুচকে নেয়, আস্তে করে চোখ মেলতেই নিজেকে তীব্রের বাহুডোরে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায় আর তীব্রের চোখের দিকে তাকাতেই তৃপ্তির ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেছে এমন অবস্থা হয়, শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীব্র তৃপ্তিকে থামিয়ে রাগী কন্ঠে বলে…

-আর একটা শব্দ ও যদি তুমি উচ্চারণ করো তবে কিভাবে তোমার মুখ বন্ধ করতে হবে তা আমি খুব ভালোভাবে জানি, আমাকে সেই কাজটি করতে বাধ্য করো না।

তৃপ্তি আর কিছু বলার সাহস পায় না, তীব্রের হাতের বাধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে একটু নড়াচড়া করতে নিলেই তীব্র আবারও বলে উঠে..

-শত চেষ্টা করলেও তুমি নিজের হাত আমার হাতের বাধন থেকে খুলতে পারবে না, সো এতো ছটফট করো না চুপচাপ থাকো নয়তো উল্টোপাল্টা কিছু করে নিলে পরে আমার দোষ দিতে পারবা না।

তীব্রের রাগী দৃষ্টিতে শান্তগলায় বলা কথা শুনে তৃপ্তি আবারও শুকনো ঢোক গিলে ছটফটানো বন্ধ করে নেয়,একে তো দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে রেখেছে তারউপর এতোটা কাছে চলে এসেছে যে কথা বলার সময় তীব্রের গরম নিশ্বাস তৃপ্তির মুখে আছড়ে পড়ছে যার জন্য তৃপ্তির মাঝে খুবই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে..

-এতোসময় ধরে তো আমার সম্পর্কে বেশ বকবক করে নিলে, আমি এতোটা বাজে দেখতে! (তৃপ্তির মুখের কাছে মুখ এগিয়ে এনে বলে তীব্র)

তৃপ্তি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে..
-পি প্লিজ আ আম আমার থেকে দূ দূরে সরে দাঁড়ান, আ আম আমার অনেক
অ অস্বস্তিকর অনুভূতী হচ্ছে।

তৃপ্তির এমন কথায় তীব্রের যেন কোনো হেলদোল হলো না,তীব্র তৃপ্তির আরো একটু কাছে চলে আসে নিজের মুখটি তৃপ্তির কানের কাছে নিয়ে বলে..

-এতো সহজে তো তোমার আমার হাত থেকে মুক্তি নেই, আজ পর্যন্ত কারোর এতোটা সাহস হয় নি যে তীব্র চৌধুরীর সামনে দাড়িয়ে তাকেই ভেঙিয়ে এক ঝুড়ি মন্তব্য করবে, তুমি সেই ভুল করেছো এর জন্য তোমাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি পেতে হবে, যা একবারে তোমায় আমি দিবো না, ধীরে ধীরে আমার সময় ও সুবিধা অনুযাই দিবো, শাস্তির জন্য এখন থেকে নিজেকে প্রস্তুত করে নাও।

তীব্রের ঠান্ডা গলায় ভয় দেখানো কথায় তৃপ্তির সম্পূর্ণ শরীর কেঁপে উঠে, তীব্র তৃপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে ওর থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়িয়ে পরে। তৃপ্তি নিজের চোখ নিচে স্থির করে তীব্রের বলা কথাগুলো ভাবছে বারবার, আর বিরবির করে বলছে

-কেন যে বারবার এতো বেশি পাকনামি করতে যাই, এই বেডাকে এই কয়দিনে অল্প হলেও চিনতে পেরেছি মুখ দিয়ে যা বের করবে ঠিক সেটাই করবে।

-হুম বেশি পাকনা হওয়া ঠিক না, তাইতো এখন তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। চিন্তা করো না তোমার শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছি আমি যখন তুমি ভুল করবে
তখনই শাস্তি পেয়ে যাবে (তীব্র)।

তৃপ্তি চোখ বড়বড় করে তীব্রের দিকে একনজর দেখেও নিজের দৃষ্টি অন্যত্র সড়িয়ে নিয়ে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-আপনি মনে মনে বলা কথা বুঝতে পারেন কি ভাবে?

সোজা হয়ে দাড়িয়ে নিজের হাত দুটো পকেটে গুঁজে নিয়ে, বাহিরের দিকে দৃষ্টি স্থির করে তীব্র বলে..
-এতো জোড়ে মনে মনে কথা বললে আমি কেন সবাই শুনতে পারবে৷ (তীব্র)

-সত্যি আমি জোড়ে জোড়ে মনে মনে কথা বলি? (চোখ ছোটছোট করে তীব্রের দিকে তাকিয়ে বলে তৃপ্তি)

-হুম (তীব্র)

-আচ্ছা সেসবকথা বাদ দিন, আমাকে এখানে আটকে দিয়ে দাদু আর ঐ ভাইয়া টাকে চলে যেতে বলার কারণ কি? (কিন্ঞ্চিত পরিমাণ চিন্তার ভাজ মুখে প্রকাশ করে)

-তুমি নিজেকে ঠিক করে নাও, এতোটা আনইজি ফিল করার কিছু নেই আমাদের বাড়ির সবগুলো মানুষ অনেক ভালো মনের তাদের থেকে কখনও কষ্ট বা অপমানিত হতে হবে না তোমাকে, তাদের সাথে একটু মিশতে চেষ্টা করলে তারা ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেয় (নিজের দৃষ্টি অন্তত্র স্থির রেখেই কথা গুলো বলে তীব্র)

তৃপ্তি অবাক নয়নে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছে, আর ভাবছে এই মানুষটা এতো সহজ ভাবেই সবটা বুঝে উঠতে পারেন কি করে, কিছুসময় এভাবে থেকেই তৃপ্তি মুখ ভার করে তীব্র কে উদ্দেশ্য করে বলে..

-এখন কাওকে বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয় (তৃপ্তি)

-জানি অতীতে তোমার সাথে যা যা হয়েছে তা খুবই খারাপ হয়েছে কিন্তু সব মানুষ যে তাদের মতো হবে তা তো নয়, নতুন করে বিশ্বাস – ভরসা করতে যদি সক্ষম না হতে পারো তাহলে বাকি জীবনটা সুন্দর ভাবে কাটাতে পারবে না (তীব্র)

তৃপ্তি ছলছল দৃষ্টিতে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, মাত্র তো কয়টা দিনের পরিচয় মানুষটা আমার সম্পর্কে কতোটা জেনে নিয়েছে এতো সুন্দর ভাবে বোঝানোর দক্ষতা তার, তৃপ্তি নিজেকে সামলে নিয়ে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-হুম আমি চেষ্টা করবো।

-ঠিক আছে, চলো তাহলে ওরা অনেক সময় হলো আমাদের জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছে (তীব্র)

-হুম চলুন (তৃপ্তি)

এই বলে ওরা দুজন হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে গাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা ধরে, একটু পর গাড়ির কাছে আসতেই তূর্য ভ্রু কুঁচকে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-এতো সময় ধরে অপেক্ষা করালি কেন?

-প্রেম করলাম তাই (স্বাভাবিক ভাবেই বলে তীব্র)

তূর্য চোখ বড়বড় করে মুখ খুলে তাকিয়ে আছে তীব্রের দিকে, তূর্যকে এভাবে তাকাতে দেখে তীব্র তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-এতোদিন ধরে দেখছি মেয়েরা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকে এখন দেখছি তুই ও বাদ যাচ্ছিস না চোখ দিয়ে গিলে খাওয়ার ভাবনায় আছিস।

তূর্য নিজেকে সংযত করে বলে..
-এভাবে না পচালেও পারতি।

তীব্র শব্দ করেই হেসে দেয়, ২ভাই কি থেকে কি কথা বলছে সব যেন তৃপ্তির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, হাসি থামিয়ে তৃপ্তির দিকে একনজর দেখে বলে..

-গাড়িতে উঠো, তোমাকে নতুন করে কিছু বলার নেই।

তীব্রের কথায় তৃপ্তি ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়, কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসে, বাকিরাও গাড়িতে বসে পড়ে। তূর্য ড্রাইভিং সিটে তার পাশে তীব্র আর পিছনে আমজাদ চৌধুরী, তৃপ্তি বসে আছে। গাড়ি চলছে চৌধুরী ম্যানশনের উদ্দেশ্যে, তীব্র লুকিং গ্লাসটা তৃপ্তির দিকে ঘুরিয়ে নেয় তৃপ্তিকে দেখবে জন্য। একটুপরে তৃপ্তি নিজের দৃষ্টি বাহির থেকে সামনে ঘুরালেই লুকিং গ্লাসে চোখ যায় দেখে তীব্র একনজরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, ভ্রু কুঁচকে গ্লাসের দিকে নিজের দৃষ্টি স্থির করলে তীব্র একটা চোখ দেয় তৃপ্তি যেন হা হয়ে গেছে তীব্রের এমন কাজে তাড়াতাড়ি করে নিজের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেই সে, তৃপ্তির চোখ সরিয়ে নেওয়া দেখে তীব্র হেসে দেয়, একটু পর গাড়ি চৌধুরী ম্যানশন এ প্রবেশ করে।

#চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here