গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী #Maisha_jannat_nura(লেখিকা) #পর্ব_৯

0
372

#গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী
#Maisha_jannat_nura(লেখিকা)
#পর্ব_৯

তীব্র সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখে তৃপ্তি অথৈয়ের সাথে বসে খেলা করছে, তীব্র বিরবির করে বলছে..

-ফাজিল মেয়ে আমাকে বোকা বানিয়ে চলে আসলো।

তীব্র অথৈয়ের পাশে গিয়ে বসে, তীব্রকে পাশে বসতে দেখে অথৈ তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-মামাই তোমার সাথে আমি কথা বলবো না, তোমার সাথে আমার কাট্টি।

তীব্র ভ্রু কুঁচকে অথৈয়ের দিকে তাকায় আর বলে..
-আমি কি করেছি, যে প্রিন্সেস আমার উপর রেগে আছে?

-এই কয়দিন তুমি কোথায় ছিলে হুম? জানো না প্রিন্সেস তোমার সাথে কথা না বললে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারে না (অথৈ)

অথৈয়ের মুখে এমন মিষ্টি রাগের কথা শুনে তীব্র হেসে দেয়, অথৈকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে বলে..
-সরি আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে, এই দেখো মামাই কানে ধরেছে আর কখনও এমন কাজ সে করবে না।

-আচ্ছা ঠিক আছে (অথৈ)
বলেই তীব্রের গলা জড়িয়ে ধরে গালে পাপ্পি দেয় অথৈ, তীব্র অথৈকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় অথৈ দৌড়ে উপরে চলে যায়।

এদিকে তৃপ্তি এতোসময় ধরে মামা-ভাগনীর দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া-ভালোবাসা দেখেছিলো আর মিটিমিটি হাসছিলো, অথৈ চলে গেলে তীব্র তৃপ্তির পাশে এসে বসে পরে, তীব্রকে পাশে বসতে দেখে তৃপ্তি একটু ভয় পেয়ে যায় এটা ভেবে একটু আগে সে তীব্রকে বোকা বানিয়ে পালিয়ে এসেছিলো এখন সেটার জন্য শাস্তি দিবে না তো, এসব ভাবছে আর বিরবির বলছে..

-পালা তৃপ্তি পালা নয়তো আজ তোর এই বজ্জাতের হাত থেকে আর রক্ষা পাওয়া হবে না।

বলেই উঠতে নিলে তীব্র তৃপ্তির হাত ধরে হ্যাচকা টানে নিজের কোলের উপর বসিয়ে নেয়, শক্ত করে তৃপ্তির হাত দুটো চেপে ধরে। তীব্রের এমন কাজে তৃপ্তি চোখ মুখ কুঁচকে নেয় আর মনে মনে বলে..

-যেটার ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হলো, আব তু গেয়া তৃপ্তি।

তীব্র মুগ্ধ দৃষ্টিতে তৃপ্তির কুঁচকে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, কি মায়া আছে ওর এই মুখ জুড়ে একবার তাকালে আর নজর অন্যত্র ঘুরাতে ইচ্ছে করে না। তীব্রের কোনো আওয়াজ শুনতে না পেরে তৃপ্তি আস্তে করে চোখ মেলে দেখে তীব্র একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, তৃপ্তি নিজের দৃষ্টি তীব্রের দিকে স্থির করে, খুব কাছে থেকে দেখছে দুজন দুজনকে। তৃপ্তি মনে মনে বলে..

-আগে কখনও ওনার দিকে এভাবে দেখি নি, কেন জানি না আজ আর নিজের দৃষ্টি ওনার থেকে সরাতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করছে না, সত্যি অনেক সুন্দর দেখতে উনি শুধু সুন্দর বললেও কম হবে আল্লাহ যেন খুব নিখুঁত ভাবে সৃষ্টি করেছেন ওনাকে, ফর্সা মুখে নীল বর্নের চোখ, সরু নাক, ভ্রু গুলো কতো ঘন আর টানা, স্ট্রেট করা চুল, গোলাপী রংয়ের ঠোঁট, ইসস ওনাকে দেখে এখন আমারই হিংসে হচ্ছে এতো সুন্দরতা একটা ছেলের জন্য বেমানান, মুখজুড়ে চাপ দাড়ি সৌন্দর্য টাকে আরো বেশি ফুটিয়ে তুলেছে।

২জনেই যেন একটা ঘোরের ভিতর চলে গেছে, এভাবেই বেশকিছু সময় কেটে যায়, তূর্য কাজ শেষ করে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই তৃপ্তি আর তীব্রকে এতোটা কাছাকাছি দেখে তাড়াতাড়ি নিজের দৃষ্টি ঘুরিয়ে জোড়ে কেশে দেয়, কাশির শব্দে তীব্র আর তৃপ্তির ঘোর কেটে যায় তৃপ্তি তাড়াতাড়ি করে তীব্রের কোল থেকে উঠে দৌড়ে উপরে চলে যায়, বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতির ভিতরে পরে গেছে সে।

এদিকে তীব্রের কোনো হেলদোল নেই সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বসে আছে যেন কিছুই হয় নি, তূর্য তীব্রের পাশে বসে আর তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে…

-দাভাই তুই ঠিক আছিস তো?

তীব্র ভ্রু কুঁচকে তূর্যের দিকে তাকায় আর বলে..
-কেন আমাকে দেখে কি আনফিট মনে হচ্ছে তোর?

তীব্রের এমন প্রশ্নে তূর্য কি বলবে বুঝতে পারছে না, নিজেকে সামলে নিয়ে বলে..

-তুই কি তৃপ্তিকে ভালোবাসিস দাভাই?

তূর্যের প্রশ্নে তীব্র অবাক হয় না, স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলে..
-ভালোবাসি কিনা জানি না, তবে ওকে আমার চাই যেকোনো মূল্য, ওও শুধু আমার অন্য কারোর নজর ও সহ্য হবে না যদি কেও সেই সাহস করে তার চোখ তুলে ফেলবো।

তীব্রের কথায় তূর্য ও অবাক হয় না কারণ সে খুব ভালো করে জানে তীব্র যখন যেটা নিজের বলে মনে সেটা যেভাবেই হোক করেই নিবে, তূর্য আবারও প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-তৃপ্তি যদি রাজি না হয়?

-যদি ভালো কথায় রাজি হয়ে যায় তাহলে ওর জন্যই সেটা ভালো হবে, আর রাজি না হলেও সমস্যা নেই তীব্র চৌধুরী নিজের জিনিস কি করে নিজের করে নিতে হয় তা খুব ভালো করে জানে, সেচ্ছায় না পেলে জোড় করে হলেও নিজের করে নিবো আমি তৃপ্তিকে (তীব্র)

-ওও তো তোর রাগের সাইড সম্পর্কে অঙ্গাত,
বেশি রুড হয়ে পড়িস না ওর প্রতি (তূর্য)

-তুই জানিস রাগের সময় আমার মাথা কাজ করে না, ওও ভালোভাবে থাকলে কখনও আমার খারাপ সাইড ওকে দেখতে হবে না বাট যদি ভালোভাবে না থাকে তাহলে জানি না কি হবে তবে ভালোটা যে হবে না এতোটুকুও বলতে পারি (তীব্র)

তীব্র শান্ত গলায় শরীর কাঁপানো কথায় এবার তূর্য কিছুটা ভয় পেয়ে যে মনে মনে বলে..
-জানি না কি আছে মেয়েটার ভাগ্যে, দাভাই যে খুব বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে ওর প্রতি এই ঘোর কখনও কাটার নয়।

-আচ্ছা এসব কথা বাদ দে, এখন বল অফিসের কি অবস্থা? সিংগাপুরের থেকে যে প্রজেক্ট টা এসেছিলো সেটার কাজ ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছে তো? (তীব্র)

-হুম হচ্ছে মোটামুটি, তোকে ছাড়া অফিসটাও কেমন যেন অগোছালো হয়ে গেছে এই কদিনেই, কবে থেকে অফিসে আসবি তুই? আমি এতো প্রেসার একা সামলাতে পারছি না (তূর্য)

-কাল থেকেই যাবো (তীব্র)

-বাঁচিয়ে দিলি দাভাই, এই কয়দিন যে কিভাবে কাটলো আমার উফফ এতো প্রেসার আমি নিতে পারি না (তূর্য)

-আচ্ছা এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট কর, আমি একটু দাদুর কাছে যাবো (তীব্র)

-আচ্ছা ঠিক আছে (তূর্য)

বলেই তূর্য ড্রয়িংরুম থেকে চলে যায় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে, তীব্র ও উঠে হাটা ধরে আমজাদ চৌধুরীর রুমের দিকে। আমজাদ চৌধুরী রুমের ভিতর পাইচারী করছেন, বিছানার উপর সুবর্ণা চৌধুরী বসে বসে আমজাদ চৌধুরীর কান্ড দেখছে, একটু পর তীব্র আমজাদ চৌধুরীর রুমে প্রবেশ করে, দাদুকে এভাবে পায়চারী করতে দেখে সে বেশ অবাক হয় পাশে সুবর্ণা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ইশারায় জানতে চায় কি হয়েছে, সুবর্ণা চৌধুরী মাথা নাড়িয়ে বলে সে কিছু জানে না। তীব্র আমজাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-বুড়ো কি একটু বেশি খাবার খেয়ে ফেলেছে আজকে যে এভাবে পায়চারী করে তা হজম করার চেষ্টা করছে।

তীব্রের কথায় আমজাদ চৌধুরী পায়চারী থামায়, তীব্রের দিকে ভ্রুর কুঁচকে তাকিয়ে বলে..
-আমি এখন এতো খাবার খাই না।

-তাহলে পায়চারী করছো কেন? (তীব্র)

-একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিলাম (আমজাদ চৌধুরী)

তীব্র আমজাদ চৌধুরীর কাছে এসে হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয় আর নিজেও পাশে বসে পরে, তারপর বলে..

-কি বিষয় নিয়ে এতো চিন্তা তোমার? (তীব্র)

আমজাদ চৌধুরী সুবর্ণা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে..
-তৃপ্তির কাছে যাও তো, মেয়েটা এসেছে থেকে একা একা হয়ে গেছে।

-ঠিক আছে (সুবর্ণা চৌধুরী)

বলে উঠে চলে যায় তৃপ্তির কাছে, আমজাদ চৌধুরী আবার ও বলে..
-দাদুভাই তোকে মারার পিছনে তুই কি ARC কোম্পানির CEO কে সন্দেহ করছিস?

তীব্র স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলে
-সন্দেহের কিছু নেই দাদু, এটা ওর ই কাজ আমি ১০০% শিউর।

-কিন্তু তোর কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই,
কিসের ভিত্তিতে তুই ওকে ধরবি? (আমজাদ চৌধুরী)

-সেদিন রাতে আমাকে যখন ওরা মারছিলো তখন আমার সেন্স ছিলো না, আমি তৃপ্তিকে আলাদা ভাবে জিঙ্গাসা করেছিলাম আমাকে মারার সময় ওও যাদের দেখেছিলো পরবর্তীতে তাদের দেখলে চিহ্নিত করতে পারবে কি না, ওও হ্যা সূচক জবাব দিয়েছে আর এটাই আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট।

-কিন্তু… (আমজাদ চৌধুরী)

-কোনো কিন্তু নয় দাদু, এখন শুধু সময় আর সুযোগের অপেক্ষা, সঠিক সময় হলে ওদের এক এক করে আমি বের করবো, এতোটা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ওদের দিবো পরবর্তীতে এমন কাজ করার আগে ওদের আত্না কেঁপে উঠবে (তীব্র)

তীব্রের কথায় আমজাদ চৌধুরী বেশ ঘাবড়ে যায়, এই ছেলেটা একেবারেই অন্যরকম হয়েছে কি করে যে একে একটু শান্ত করানো যায়, আল্লাহ জানে কি হবে।

-আচ্ছা দাদু তুমি এসব নিয়ে ভেবো না, আমার তোমার সাথে অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলার ছিলো (তীব্র)

-কি বিষয় (আমজাদ চৌধুরী)

-তৃপ্তির বিষয়ে (তীব্র)

আমজাদ চৌধুরী নিজের দৃষ্টি তীব্রের উপর স্থির করে প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে বলে
-দিদি ভাইয়ের বিষয়ে কি বলবি বল।

-তৃপ্তি আগে কোথায় থাকতো, সেইসব জানতে চাই (তীব্র)

আমজাদ চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তৃপ্তির বিষয়ে সবকথা তীব্রকে বলে, সবটা শোনার পর তীব্রের রাগে ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে, সম্পূর্ণ শরীরে রক্ত যেন টগবগ করে ফুটছে, তীব্র ওর দৃষ্টি মেঝের উপর স্থির করে কিছু একটা ভেবে আমজাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-আমি আসছি দাদু।

আমজাদ চৌধুরী কিছু বলার আগেই তীব্র রুম থেকে বেরিয়ে আসে……

#চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here