#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১৪
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
আমরা ঠিক করলাম আজকে রিক্সায় করে ঘুরবো। এটা মূলত আমাদের মেয়েদের বায়না। জোর করে রাজি করালাম। তাই তিনটা রিক্সা ডাকা হলো। একটাতে ইয়াদ ভাইয়া আর রিহু বসলো আরেকটায় ইমা আপু আর ফাহিম ভাইয়া বসলো। আমি আর রোয়েন ভাই একটায় বসলাম।
কোথায় যাচ্ছি বুঝতে পারলাম না তাই জিজ্ঞেস করে ফেললাম আমরা কোথায় যাচ্ছি ভাইয়া?
কপাট রাগ দেখিয়ে বললো আমি তোর ভাইয়া হই?
না মানে আসলে সব সময় তো ভাইয়া ডেকেছি তাই মুখে ভাইয়া চলে আসে।
আর একবার ভাইয়া ডেকে দেখ মুখ সেলাই করে দিবো একদম।
এই লোকটা কেমন আমি বুঝি না। এই ভালো বিহেব করে আবার বকা দেয়। এই তুমি করে বলে আবার তুই বলে। গিরগিটি একটা খনে খনে রং বদলায়।
আমতা আমতা করে বললাম তাহলে কি ডাকবো?
আমার নাম ধরে ডাকবি।
চোখ বড় বড় করে তাকালাম তার দিকে বলে কি এই লোক? সে আমার কতো বড়, তার নাম ধরে ডাকবো আমি?
এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিস কেনো?
তার কথা শুনে চোখ নামিয়ে নিলাম। লোকটা আচ্ছা ফাজিল,খাটাশ একটা।
মনে মনে আর গালি দেওয়া লাগবে না এসে পরেছি আমরা নামো।
এই লোক কি মনের কথাও বুঝে নাকি। এখন দেখছি মনে মনেও কিছু বলা যাবে না।
উনি নেমে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি তার হাত ধরে আস্তে করে নামলাম।
নেমে দেখলাম যায়গাটা খুব নিরিবিলি একটু সামনে আগাতেই দেখলাম সামনে নদী। নদী দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। এক ছুটে নদীর কাছে চলে গেলাম। যায়গাটা এতো ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।
রিহু চল নদীতে পা ভিজাই।
চল আমারও ভেজাতে ইচ্ছে করছে।
চল তহলে এই বলে ওকে নিয়ে নদীর পারে বসে শাড়ি হালকা উপরে উঠিয়ে পা ভিজিয়ে বসে রইলাম।
ইমা আপু আর ফাহিম ভাইয়া একটু দূরে দুজন এক সাথে বসে চুটিয়ে প্রেম করছে।
রোয়েন আর ইয়াদ ভাইয়া আমাদের থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
হঠাৎ রিহুকে ইমা আপু ডাক দিলো। বললো আপুদের কাঁপল পিক তুলে দিতে। রিহু চলে গেলো আপুদের পিক তুলে দিতে। আমি চোখ বন্ধ করে নদীতে পা ভিজিয়ে রেখে পরিবেশটা উপভোগ করছিলাম তখন পাশে এসে কেউ বসলো। আমি ভেবেছি রিহু বসেছে তাই না ভেবে ওভাবেই বসে রইলাম।
হঠাৎ অনুভব করলাম আমার হাত আকরে ধরে আমার আঙুলের ভাজে করো হাত রাখলে আলতো করে। চমকে পাশে তাকিয়ে দেখি রোয়েন আমার পাশে বসে এবং আমার আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে রেখেছে।
আমার তাকানো দেখে তিনি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন কেমন লগছে পরিবেশ টা?
অনেক অনেক সুন্দর, আমার খুব পছন্দ হয়েছে জায়গাটা।
তোমার পছন্দ হবে ভেবেই এই জায়গায় আসা।
আপনি ঠিক করেছেন এই যায়গায় আসার?
হ্যা।
বুঝলেন কিভাবে আমার এই জায়গাটা পছন্দ হবে?
আমার জানা আছে আমার হুর পরীর কি পছন্দ হবে আর কি হবে না এই বলে হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে ধরলো।
আমার হুর পরী কথাটা শুনে থমকে গেলাম আমি। এতো ভালোবাসে লোকটা আমায় কিন্তু কখনো প্রকাশ করে না। এই প্রথম ভালোবাসাময় কথা বললেন, নিজের #লুকানো_অনুভূতি কিছুটা প্রকাশ করলেন। ভালো-লাগা ছেয়ে গেলো আমার মনের ভিতর। আলতো করে তার কাধে মাথা রাখলাম। খুব ইচ্ছে ছিলো আমার প্রিয় মানুষটার সাথে কোনো এক নদীর তীরে বসে তার কাধে মাথা রেখে চোখ বুঁজে পরিবেশ টা উপভোগ করবো। আজ আমার ইচ্ছে টা পুরোন হলো।
রোয়েন হুরের এক হাত ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে পিছ থেকে জড়িয়ে ধরলো। আবেশে চোখ বুঁজে নিলো হুর। দুজনেই চুপচাপ পরিবেশ টা উপভোগ করতে লাগলো।
এইদিকে রিহু ইমা আর ফহিমের কাঁপল পিক তুলে দিতে দিতে ক্লান্ত। তখন ইয়াদ যেয়ে বলে আজকে কি পিক তুলতে তুলতে ফোন ভেঙে ফেলবি নাকি। সবাই প্রেম করছে আমাকে তো একটু সুযোগ দে।
মুখ টিপে হাসলো ইমা আপু। এটা তোর শাস্তি, আমাদের পিছে সব সময় পড়ে থাকিস না এবার বুঝ ঠেলা।
আর জীবনেও তোদের পিছে লাগবো না এবার অন্তত ছাড়।
আচ্ছা ছাড়লাম, মনে থাকে যেনো এই কথা এই বলে ইমা ফাহিমকে নিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।
ইমা যেতেই রিহু বললো পাগল হয়ে গেলে? এখানে ভাইয়া আছে সেই খবর তোমার আছে?
হুস চুপ রোয়েন এখন প্রেম করতে ব্যস্ত। এইদিকে ওর খেয়াল নেই তাকিয়ে দেখো তুমি।
ইয়াদের কথা শুনে রিহু তাকালো রোয়েনদের দিকে। কি সুন্দর এক সাথে বসে দুজন পরিবেশ টা উপভোগ করছে।
সবাই মন মতো প্রেম করছে আমরা কতো দিন এভাবে লুকিয়ে প্রেম করবো? মন খারাপ করে বললো রিহু।
ইয়াদ রিহুর এক হাত জড়িয়ে ধরে বলে খুব শীঘ্র আমরাও সবার সামনে চলাফেরা করতে পারবো। একটা ব্যবস্থা করতে হবে, সবাই বউ নিয়ে ঘোরে আর আমার এখনো কপালে বউ জুটলো না এটা কি মানা যায়?
হয়েছে তুমি সব সময় পটপট এই করতে পারো কাজের কাজ কিছুই করতে পারো না।
কি বললে তুমি? আমি কাজের কাজ কিছু করি না? কপাট রাগ দেখিয়ে বললো ইয়াদ।
হয়েছে রাগ করা লাগবে না। চলো ওই দিক থেকে হেটে আসি একটু।
হুম চলো এই বলে ওরা একে অপরের হাত ধরে এক সাথে গল্প করে হাটতে লাগলো।
—————-
হুর…
হঠাৎ রোয়েনের ভরাট কন্ঠ শুনে চোখ খুললো হুর। আস্তে করে বললো জি।
আমাদের এ হঠাৎ বিয়েতে কি তোমার কোনো আপত্তি আছে? আমাদের বিয়েটা কি মেনে নিতে তোমার কষ্ট হচ্ছে?
হঠাৎ এই প্রশ্ন করলেন যে?
না মানে তুমি আমার সাথে সহজ হতে পারছো না কেনো? আমাকে এতো ভয় পেয়ে চলো কেনো? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?
আসলে এমন কিছু না, হঠাৎ বিয়ে হয়ে গেলো তো তাই আমার মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে কিন্তু বিয়েটা আমি মন থেকে মানি। আমি অনেক খুশিও আপনার মতো এমন একজন জীবনসঙ্গী পেয়ে।
আমি কেমন? ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো রোয়েন।
আমি কি বলবো খুঁজে পেলাম না তাই চুপ করে রইলাম।
কি হলো চুপ কেনো?
আপনি অনেক কেয়ারিং একজন হাসবেন্ড। সব মেয়েরাই চায় এমন একজন জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে।
রোয়েন আমাকে আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো তাই নাকি?
আমি ছোট করে বললাম হুম।
তখন রিহু পিছ থেকে বললো ভাইয়া চলো তোমাদের কাঁপল পিক তুলে দেই।
আমি ভেবেছিলাম রোয়েন না করে দিবে কিন্তু সে আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার হাত তার মুঠোয় নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
তারপর রিহুর দিকে তার ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো তোল।
রিহু আমাদের পিক তুলে দিতে লাগলো। আর এক এক রকমের স্টাইল করতে বললো। ছবি তোলার এক পর্যায়ে রোয়েন আমার কোমর হাত রেখে একদম তার সাথে মিশিয়ে নিলো। কেঁপে উঠে চমকে তার দিকে তাকালাম আর সে আমার দিকে তখনই রিহু একটা পিক তুলে ফেললো।
পিকটা তুলে আমাদের কাছে নিয়ে এসে বললো ভাইয়া দেখো এই পিকটা সব থেকে সুন্দর হয়েছে। পিকটা দেখে লজ্জামাখা হাসলাম আমি।
এভাবে আরে কিছু সময় ঘুরলাম আমরা। তারপর চলে গেলাম আমরা একটা রেস্টুরেন্টে।
সেখানে যেয়ে সবাই সবার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করলাম।
খাওয়া শেষে রোয়েন বিল পেমেন্ট করে দিলো। ফাহিম বিল দেওয়ার জন্য জোর করেছিলো কিন্তু রোয়েন দিতে দিলো না। কথা ছিলো দুইজনের থেকে খাওয়া হবে তাই ঠিক করলাম রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে ফাহিম ভাইয়া আইসক্রিম খাওয়াবে।
রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে ফাহিম ভাইয়া আমাদের আইসক্রিম কিনে দিলো। ছেলেরা কেউ খেলো না আমরা মেয়েরা নিলাম শুধু।
রাত হয়ে গেছে অনেকটা, রাতে বেলা হাঁটার মজাই আলাদা তাই আমরা একটু হাঁটতে ছিলাম। রোয়েন ভাই আমার পাশে ছিলো, আমার এক হাত তার হাতের মুঠোয়। রাতে বেলা প্রিয় মানুষের সাথে পাশাপাশি হাঁটা অন্য রকম একটা সুখ পাওয়া যায়।
আজকের দিনটা স্মৃতির পাতায় লেখা থাকবে। খুব খুব এনজয় করেছি আজকে আমরা।
আমরা আবার রিক্সায় উঠে বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। আসার সময় যে যার সাথে এসেছে যাওয়ার সময় ও সে তার সাথে বসলো।
মনটা খুব ভালো আজকে। রোয়েনের সাথে এই প্রথম এতো সুন্দর দিন কাটালাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
কেনো?
আজকে এতো সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য। আমার অনেক অনেক ভালো লেগেছে আজকের দিনটা।
এক হাত দিয়ে আমাকে পিছ থেকে আকরে ধরে তার কাছে নিয়ে আসলো আর বললো সব সময় এমন হাসিখুশি রাখবো তোমাকে হুর পরী। তোমার মুখে সব সময় হাসিটাই মানায় বুঝলে।
মুচকি হাসলাম তার কথা শুনে।
তিনি আমাকে আরেকটু কাছে এনে কপালে চুমু খেলেন। এভাবেই টুকিটাকি কথা বলতে বলতেই পৌঁছে গেলাম বাড়িতে।
চলবে?