#রহস্যময়_ঘোর (শেষ পর্ব)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
তখন রাত ৮ টা ৫৫ মিনিট। তুষারকে বাঁচাতে হাতে আছে মাত্র ৫ মিনিট। বৃষ্টি থেমেছে কিছুক্ষণ হলো। প্রায় এক ঘন্টা ধরে বৃষ্টিতে ভিজে তুষারকে এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করে হতাশ হয়ে একপাশে বসলো দুজন। তুষারকে বাঁচানোর আশা অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছে তারা।
নিবিড় তীব্র ক্ষোভ নিয়ে রেজোয়ানের দিকে চেয়ে বলে,
“যদি তুষারের কিছু হয় তাহলে আপনাকে মে’রে প্রয়োজনে মা’র্ডা’র কেসের আসামী হবো আমি।”
কিছু বললো না রেজোয়ান। হটাৎ রাস্তার পাশ ধরে হেটে আশা একটা ছেলের দিকে চোখ পড়লো তার। সেদিকে চেয়ে বলে,
“কে যেন হেটে আসছে ওদিক থেকে।”
রেজোয়ানের কথায় নিবিড় সেদিকে তাকালো। ভালো করে লক্ষ করতেই তুষারের মতো মনে হলো তাকে। নিবিড় তাড়াহুড়ো করে উঠে দৌড়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো। দেখে তুষার ভেজা শরিরে এদিকে এগিয়ে আসছে।
নিবিড় তার কাছে গিয়েই এক হাত চেপে ধরে বলে,
“কোথায় ছিলি এতক্ষণ? ফোন কেটে দিয়েছিলি কেন?”
নিবিড় ও রেজোয়ানকে এমন উত্তেজিত দেখে তুষার অবাক হয়ে বলে,
“কেন, কি হয়েছে! খারাপ কিছু হয়েছে কি!”
তার কথার উত্তর দেওয়ার আগেই পাশ থেকে রেজোয়ান বলে,
“সময় খুব কম। তাকে শক্ত করে আটকে ধরুন।”
তুষার এখনো বুঝতে পারছে না এসব কি হচ্ছে। এদিকে নিবিড়ও পেছন থেকে দু’হাত আটকে নিয়েছে তার। তুষার আবারও বলে,
“পাগল হলি নাকি তোরা? কি করছিস এসব?”
তার কথার দিকে কারোই মনোযোগ নেই। নিবিড় শক্ত করে আটকে রেখেছে তাকে। রেজোয়ান দ্রুত ইনজেকশন বের করে প্রতিষেধক নিয়ে তুষারের শরিরে পুশ করে দিল। তার কয়েক সেকেন্ড পার হতেই অজ্ঞান হয়ে গেলো তুষার। ঘরির কাটা তখন ৮ টা ৫৯ মিনিটে গিয়ে ঠেকেছে।
জ্ঞান ফিরলে দেখে বাসায় শুয়ে আছে সে। তার পাশে বসে ফোনের স্কিনে চেয়ে আছে নিবিড়। তুষার আশেপাশে নিজের ফোনটা খুঁজে বলে,
“আমার ফোনটা কোথায়?”
নিবির পাশ থেকে বলে,
“গতকাল রাতে ভিজে বন্ধ হয়ে আছে। তাই রোদে শুকাতে দিয়ে এসেছি।”
আচমকাই তুষার চমকে উঠে বলে,
“রোদ! কয়টা বাজে এখন?”
নিবিড় ঘরির দিকে চেয়ে বলে,
“সকাল আট টা।”
তুষার এক প্রকার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“ও মাই গট। সকাল আট টায় ফারিহার সাথে দেখা করার কথা ছিল আমার। আরেকটু আগে ডেকে দিলি না কেন?”
বলেই তুষার উঠতে গেলে নিবিড় তাকে থামিয়ে বলে,
“কেউ অপেক্ষা করে নেই তোর জন্য। আর তোর সেই ফারিহা নামক সেহ মেয়েটারও পৃথিবীতে কোনো অস্তিত্ব নেই।”
তুষার কিছুটা বিরক্তি হয়ে বলে,
“সকাল সকাল মজা করবি না একদম। আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। এখন আসছি আমি পরে কথা হবে।”
তুষার উঠে যেতে চাইলে নিবিড় আবার তাকে ধরে বলে,
“তোর ঘোর কেটে গেছে। ফারিহা আর আসবে না কখনো।”
তুষার নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,
“কালকে তাকে মনের কথা বলছি আমি। সে কিছু বলেনি। বলেছে আজ সকালে তার উত্তর জানাবে। সাথে কি যেন একটা সারপ্রাইজ ও আছে বলল। এতক্ষণে সে নিশ্চই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
বলেই আর কোনো কথা না বলে ওভাবেই বেড়িয়ে গেলো তুষার। তুষারের দিকে চেয়ে একটা হতাশার নিশ্বাস ছাড়লো নিবিড়। ছেলেটা প্রেমে একদম পা’গল হয়ে গেছে।
,
,
দুপুরের দিকে বাসায় ফিরে তুষার। মনটা খুব বিষণ্ণ মনে হচ্ছে তার। নিবিড় তার পাশে বসে বলে,
“ফারিহার সাথে দেখা হয়েছে?”
তুষার মন খারাপ করে দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“আসেনি সে।”
“সে আর কখনো আসবে না। এমনকি পৃথিবীতে তার কোনো অস্তিত্বই নেই।”
“বাজে বকবি না তো ভাই। এমনিতেও মন মেজাজ খুব খারাপ।”
দুই দিন পার হয়ে গেলো। ফারিহার সাথে আর এক বারের জন্যও কথা হয়নি তার। যা মেনে নিতে না পেরে বলতে গেলে অনেকটাই পাগলপ্রায় অবস্থা।
এবার নিবিড়ের কথা কিছুটা বিশ্বাস হলো তার। তার কাছ থেকে সবটা শুনে রেজোয়ানের কাছে গেলো সে। সবটা জেনে রেজোয়ানকে পরপর দুইটা ঘুষি দিতেই নিবিড় ছাড়িয়ে নিল তাকে।
সেই দিনটাও ওভাবে কেটে গেলো। জীবনে প্রথম একাকি বসে কারো জন্য চোখ ভিজে উঠলো তুষারের।
পর দিন আবারও রেজোয়ানের কাছে গেলো সে। এবার মাথা গরম করে না। একদম শান্ত হয়ে। তার কাছে সেই ইনজেকশন টা চাইলো যা তাকে আগের বার দেওয়া হয়েছিল।
রেজোয়ান পড়ে গেলো বিপাকে। সে তুষারকে বোঝানোর চেষ্টা করেও যেন ব্যর্থ হচ্ছে, সে এখন আর এই ইনজেকশন টা নিতে পারবে না। এটা নেওয়ার একটা নিয়ম আছে। তা হলো প্রতি ছয় মাস পর একবার। মানে একজন মানুষ বছরে সর্বোচ্চ দুইবার এই ইনজেকশন নিতে পারবে। তাই আগামী ছয় মাসের আগে তুষার আবার ঐ ইনজেকশন নিলে এটা এবার তার মৃ’ত্যু ঘটাবে। শরির দুর্বল হয়ে গেলে এবার প্রতিষেধকও কাজ করার সম্ভাবনা খুব কম।
যার ফলে নিশ্চিত মৃ’ত্যুর হার ৯০%। বাকি ১০% কাকতালীয় ভাবে বেচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যদি সে ব্যাক্তি খুব বেশিই ভাগ্যবান হয়। তাছাড়া বাকি ৯০% নিশ্চিত তার মৃ’ত্যু। তাই রেজোয়ান সরাসরিই বলে দিল, সে তুষারকে মৃ’ত্যুর দিকে ঠেলে দিবে না কোনো ভাবেই।
তুষার হতাশ হলেও হাল ছাড়লো না। মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, ফারিহাকে আবারও ফিরে পেতে হবে তার। সেটা যেভাবেই হোক। বেচে যাওয়ার বাকি ১০% এর উপর ভিত্তি করে ঝুঁকি নিতে হবে তাকে। এছাড়া ফারিহার কাছে পৌছানোর দ্বিতীয় কোনো রাস্তা দেখছে না সে। সিদ্ধান্ত নিল, রেজোয়ানকে ফলো করে সেই ঔষধের সন্ধান জেনে তা চুরি করবে সে।
কেটে গেলো আরো একদিন। তুষার অপেক্ষায় আছে রেজোয়ান কখন বাসা থেকে বের হয়ে তার গোপন আস্তানার দিকে যাবে। এই লোকটাকে শুরু থেকেই রাজের মতো রহস্যময় মনে হয়েছিল তার।
সেদিন রাতে রেজোয়ানের ল্যাব এর সন্ধান বের করে সেই ঔষধের এক শিশি সরিয়ে নিল তুষার। যার উপর বড়ো বড়ো করে লেখা, Realization of feelings,,,,,,,
,
,
বাসার সেই ছোট বেলায় হারিয়ে যাওয়া ফাহাদের কথা উঠতেই ফারিহা বাবা-মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
“কিছুদিন আগে একটা লোক আমাকে দু’দিন ডিস্টার্ব করেছিল। নাম তুষার। বললো, সে নাকি ভাইয়ার ব্যাপারে জানে। ফাহাদ ভাইয়ার বর্তমান নাম নাকি নিবিড়। কিসব হাবিজাবি বলছিল। তার নাম্বার ব্লক করেলে সে পরদিন আমার অন্য সিমে কল দেয়।”
মেয়ের কথায় ফারহা কিছুটা চমকে উঠে বলে,
“কোন ছেলে! এখন তার নাম্বার আছে তোর কাছে?”
“হ্যাঁ।”
“কল দে তো আমি কথা বলি তার সাথে।”
“কিন্তু মা আমি তো দুই সিম থেকেই ব্লক করে দিয়েছি।”
“আন-ব্লক করে কল দে।”
“আমাকে ডিস্টার্ব করেছে দেখে আমি ব্লক করলাম। এখন আবার আমিই কল দিয়ে বিষয়টা কেমন দেখান না মা?”
ফারহা হারিয়ে যাওয়া ছেলের কথা ভাবতেই মেয়ের দিকে তাকিয়ে মনে তীব্র উত্তেজনা নিয়ে বলে,
“যেমনই দেখাক। তাড়াতাড়ি কল দে তুই।”
,
,
রুমের দরজা বন্ধ করে হাতে ইনজেকশন নিয়ে বসে আছে তুষার। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে ফোনটা এক পাশে রেখে বেলকনিতে চলে গেলো সে। মুক্ত বাতাসে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে,
“আমি তোমার কাছে আবারও আসছি ফারিহা।”
বলেই চোখ বন্ধ করে দ্বিতীয় বারের মতো ইনজেকশন টা নিজের শরিরে পুশ করে নিল সে। সেখানে আর দেড়ি না করে রুমে এসে অন্ধকার শুয়ে পড়লো চুপচাপ। তার বিশ্বাস এই ঘুম আবারও তাকে ফারিহার কাছেই নিয়ে যাবে।
পাশে তুষারের ফোনটা বেজেই চলছে। সেদিকে আর কোনো খেয়াল নেই তার। পরপর দুইবার কল দিয়ে ফারিহা মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
“লোকটা তো ফোন ধরছে না, মা।”
মা পাশে দাড়িয়ে বলে,
“আবারও কল দে। কল দিতে থাক।”
এদিকে নিবিড়ের ফোন বাজতেই রিসিভ করলো সে। ওপাশ থেকে রেজোয়ান উত্তেজিত গলায় বলে,
“ল্যাব থেকে ঐ ইনজেকশন এর একটা শিশি গায়েব। আপনারা ছাড়া এখনো এই ব্যাপারে কেউ কিছু জানেনা। ক্যামরায়ও তুষারকে দেখা যাচ্ছে। নিশ্চিয়ই তুষার ঐ মেয়েটার কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য, এক শিশি সরিয়ে নিয়েছে। এখন যত দ্রুত পারেন তুষারকে থামান। সে যেন কিছুতেই ওটা তার শরিরে পুষ করতে না পারে।”
নিবিড় রুমে ছুটে এসে দেখে দরজা বন্ধ। দরজায় টানা আঘাত করেও কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছে না সে। ওদিকে ফারিহা একের পর এক কল করে যাচ্ছে তার ফোনে। ফোন বাজছে। তার পাশে গভির ঘুমে তলিয়ে গেলো তুষার।
আবারও সেই রহস্যময় ঘোরের মাঝে হারিয়ে গেলো সে। তবে এবার আর রহস্যময় নেই। রহস্যের উন্মোচন হয়েছে। যার এখন রুপ নিয়েছে মৃ’ত্যুময় ঘোরে। জেনে শুনেও সে এই ঘোরে গা ভাসিয়ে দিয়েছে ফারিহার কাছে ফিরে যাবে বলে। কারণ মৃত্যুর হার ৯০% হলেও বেচে থাকার ১০% সম্ভাবনা আছে।
~ সমাপ্ত,,,,,,,,,,,
~ গল্পটার মুল পয়েন্টই হলো একটা ঘোর।