_লাল_নীল_সংসার_ #_মারিয়া_রশিদ_ #_পর্ব_৯_

0
301

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_৯_

দুইদিন পর….
লাঞ্চ টাইম। শিশিরের আজ কিছু খাইতে ইচ্ছে করতেছে নাহ। তাই নিজের ডেস্কে বসে ফোন চালাচ্ছে আর কফি খাচ্ছে। এই দুইদিন ছোয়ার সাথে তার দেখা হয় নি। কিন্তু, মেয়েটার চিন্তা যেন সব সময় তার মাথায় গেঁথে ছিলো। এমন কেন হচ্ছে শিশির নিজেও জানে নাহ। মাঝে মাঝে মেয়েটার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে তার, দুচোখ ভরে মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু, তার সাথে হঠাৎ হঠাৎ দেখা ছাড়া কোনো মাধ্যমও নেই। আর কবে দেখা হবে তারও ঠিক নেই।

ফেসবুক চালাচ্ছে শিশির। এমন সময় একটা আইডি সামনে আসতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে শিশিরের। ফোনের উপর জ্বলজ্বল করছে ছোয়ার আইডি। কাকতালীয় ভাবে ছোয়ার আইডি তার সামনে। আইডির নাম ছোয়া এহমাদ! তাহলে কি ছোয়ার পুরো নাহ ছোয়া এহমাদ! ভাবতে থাকে শিশির। প্রোফাইল পিকচার টাহ দেখে শিশির যেন কিছুটা স্তব্ধ হয়ে যায়।

একটা সবুজ শাড়ী পড়ে হলুদ সূর্যমুখী ফুলের পাশে দাড়ানো সুন্দর একটা ফটো। ফটো টাহ বড় করে দেখার জন্য আইডির ভেতর ঢুকতেই দেখে আইডি লক করা। কি করবে শিশির এখন? তাকে কি ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট পাঠাবে? কিছুই মাথায় আসছে নাহ শিশিরের। নাহ, থাক, রিকোয়েস্ট পাঠানো টাহ ঠিক হবে নাহ। ভাবতেই শিশির ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসে।

এইদিকে লাঞ্চ টাইমও প্রায় শেষ হয়ে যায়। সবাই যে যার কাজ শুরু করে দিচ্ছে আস্তে আস্তে। শিশির আবারও একটু ফোনের দিকে তাকিয়ে ফেসবুক অন করে। সার্চ বারে গিয়ে ছোয়ার আউডি নাম সার্চ দিতেই প্রথমেই ছোয়ার আইডি টাহ চলে আসে। শিশির কিছু সময় ছোয়ার আইডির দিকে তাকিয়ে থেকে আবার ফেসবুক থেকে বের হয়ে যায়। ওয়াইফাই অফ করে দিয়ে কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।


আদনান স্নেহাদের বাসায় স্নেহাকে পড়ায় হেল্প করছে। স্নেহা খাতায় পড়া লিখতেছে। আদনান আড়চোখে স্নেহার দিকে তাকাচ্ছে। স্নেহার বাসার লুক আর ভার্সিটির লুক একদম আলাদা। স্নেহা ভার্সিটিতে নরমালি জিন্সের সাথে লং কুর্তি, লং কামিজ সাথে গলায় স্কার্ফ পরে। কিন্তু, বাসায় ট্রাউজার, থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট, টি-শার্ট এর সাথে গলায় স্কার্ফ পরে। একদম বাচ্চা বাচ্চা দেখা যায়। আজ যেন আরও বেশি বাচ্চা বাচ্চা দেখা যাচ্ছে। কারন, মেয়েটা একটা টি-শার্ট এর সাথে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট, গলায় স্কার্ফ পরা, সাথে চুল গুলো উচু করে ঝুটি করা। একদম বাচ্চা দেখা যাচ্ছে। পুরাই বার্বিডল।

স্নেহা লিখছে আর আদনান স্নেহাকে মুগ্ধ চোখে দেখছে আর মিষ্টি হাসি দিচ্ছে। এমন সময় দরজায় আওয়াজ হতেই আদনান তাকিয়ে দেখে মিসেস. আখি ( স্নেহার আম্মু ) দাড়িয়ে আছেন। স্নেহা এক পলক মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার লেখায় মন দেয়। আদনান মিসেস. আখির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে পড়ে। তারপর বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, আন্টি!”

পরের দিন আসলেই মিসেস. আখির সাথে আদনানের পরিচয় হয়েছিলো। মিসেস. আখি মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম, বাবা! বসো বাবা, দাড়াতে হবে নাহ।”

আদনান বসে পড়ে। মিসেস. আখি এগিয়ে এসে বিছানার উপর এসে বসে। তারপর আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তারপর কি খবর আদনান?”

আদনান মিসেস. আখির দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ওঠে,
–” আলহামদুলিল্লাহ! আন্টি! আপনার শরীরের কি অবস্থা?”

–” আছি, ভালোই। তা তোমার বাবা কি করে আদনান?”

–” কিছুই নাহ আন্টি! আসলে, আব্বু আগে ব্যবসা করতো। তারপর ব্যাবসায় একটু লস যাচ্ছিলো, তারপর আব্বু একটু অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। তখন থেকে ভাইয়া আর আব্বুকে কাজ করতে দেয় নি।”

মিসেস. আখি একটু হেসে বলে ওঠে,
–” বাহ! ভালো তো। তা, কয় ভাইবোন তোমরা?”

আদনান কেমন যেন মিসেস. আখির সামনে একটু নার্ভাস ফিল করছে। একবার স্নেহার দিকে তাকিয়ে দেখে স্নেহা চুপচাপ লিখে যাচ্ছে। তারপর আবার মিসেস. আখির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জি, আন্টি! আমরা তিন ভাই বোন। আমার বড় একটা ভাই আছে আর ছোট একটা বোন আছে।”

মিসেস. আখি একটু আরাম করে বসে বলে ওঠে,
–” কি করে তোমার ভাইয়া?”

–” জি! একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে।”

–” পোস্ট কেমন?”

স্নেহা এইবার লেখা একটু থামিয়ে মিসেস. আখির দিকে তাকিয়ে একটু চাপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আহ! মামনি! এইসব কি জিজ্ঞেস করছো তুমি ওকে?”

মিসেস. আখি একটু নড়েচড়ে বসে বলে ওঠে,
–” কেন? আদনান তো এই প্রথম আমাদের বাসায় আসছে। ছেলেটার সম্পর্কে একটু জানছি। তোর অনেক ফ্রেন্ডই তো আগে এসেছে। আদনান তো আর আসে নি। একটুু জানছি, তোর ফ্রেন্ডসরা কেমন।”

স্নেহা কিছুটা বিরক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” কেমন বলতে, কি বোঝাতে চাইছো তুমি?”

মিসেস. আখি একটু হেসে বলে ওঠে,
–” শুধু শুধু তুই এরকম চেতে যাচ্ছিস কেন? আদনান! আমি তোমাকে এইসব প্রশ্ন করছি জন্য রাগ করছো নাকি বাবা?”

আদনান একবার স্নেহার দিকে তাকিয়ে আবার মিসেস. আখির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” না, না আন্টি রাগ করবো কেন? স্নেহা তুই লিখ। আসলে, আন্টি! ভাইয়া খুব বড় পোস্ট চাকরি করে নাহ। মাঝামাঝি রকমের। কিন্তু, প্রোমোশন হওয়ার চান্স আছে।”

স্নেহা রেগে আবার চুপচাপ লিখা শুরু করে। মিসেস. আখি একটু হেসে আবার আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুমি কিভাবে চলো? তোমার ভাইয়া হাত খরচ দেয় তোমাকে?”

স্নেহার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, কিন্তু কিছুই করতে পারছে নাহ। লেখা অফ করে দিয়ে খাতার দিকে তাকিয়ে আছে। আদনান একটা ঢুক গিলে বলে ওঠে,
–” আসলে, আন্টি আমার ভাইয়ার হাত খরচ নেওয়ার কোনো দরকার হয় নাহ। কারন, আমি তিনটা টিউশন করাই, আর তাতে আমার আলহামদুলিল্লাহ হয়ে যায়।”

মিসেস. আখি একটু কেমন জানি হাসি দিলো। আদনান মাথা নিচু করে রয়েছে। খুব অসহ্য লাগতেছে তার। নিজেকে খুব অসহায় লাগতেছে। মিসেস. আখি একটু হেসে গা ছাড়া ভাবে বলে ওঠে,
–” তাহলে, পড়ো তোমরা আমি আসি। আর নাস্তা গুলো এখনও খাও নি যে? খেয়ে যাও। খাবার গুলো অনেক মজার। ভালোই লাগবে তোমার।”

কথা গুলো বলে মিসেস. আখি চলে যায়। স্নেহা আড়চোখে আদনানের দিকে তাকিয়ে দেখে আদনান নিচের দিকে তাকিয়ে বার বার চোখের পলক ফেলছে। স্নেহার নিজের কাছেই কেমন যেন খারাপ লাগছে। নিজের মায়ের উপর প্রচন্ড রাগও হচ্ছে। স্নেহার নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট ছোট লাগছে। স্নেহা নিজেকে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান!”

আদনান নিজেকে সামলিয়ে স্নেহার দিকে তাকাতেই স্নেহার বুক টাহ ধুক করে উঠে। স্নেহা বুঝতে পারছে আদনানের খারাপ লাগছে। আদনানের আত্মসম্মান অনেক। স্নেহা করুন ভাবে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সরি, আদনান! মামনি, তোকে যা সব বলেছে তার জন্য সরি।”

আদনান স্নেহার দিকে তাকিয়ে দেখে স্নেহার চোখ ছলছল করছে। মুখে ভেসে উঠেছে অপরাধবোধের ছাপ। আদনান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আরে কি বলছিস এইসব? আমি আন্টির কথায় কিছু মনে করিনি। আন্টি শুধু আমার ব্যাপারে একটু জানতে চেয়েছে। এতে এতো সরি বলার কি আছে?”

স্নেহা কিছু নাহ বলে আদনানের দিকে তাকিয়ে থাকে। আদনান হঠাৎ স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” স্নেহা! আমার নাহ আজ একটু তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। তুই এইগুলো পড়তে থাক আর আমার একটু কাজ আছে, আমি আজ আসি। কেমন?”

স্নেহা অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
–” হুম!”

আদনান আর থাকে নাহ। তাড়াতাড়ি স্নেহাদের বাসা থেকে চলে যায়। স্নেহা আদনানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। স্নেহার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। সে জানে আদনান খুব কষ্ট পেয়েছে আজ মায়ের কথায়। স্নেহার খুব খারাপ লাগতে শুরু করে। আদনানের পারিবারিক অবস্থা সে সবার সাথে খোলাখুলি বলে দেয়। স্নেহারও অজানা নাহ। কিন্তু, আদনান মানুষটা যে তার কাছে একদম আলাদা অনুভুতি। একদম প্রথম দিন থেকেই। কখনো আদনানকে একটু কষ্ট দিয়ে কথা বলে নি সে। কিন্তু, আজ তার বাসায় তার মায়ের দ্বারাই কষ্ট পেলো আদনান।

বই-খাতা গুলো বন্ধ করে দেয়। পাশে রাখা খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে একই ভাবে পড়ে আছে। আদনান কিছুই ছুঁয়ে দেখেনি। স্নেহা সার্ভেন্ট কে ডেকে খাবার গুলো পাঠিয়ে দেয়। তারপর রুমের লাইট অফ করে বিছানার উপর উবুড় হয়ে শুয়ে কান্না করতে থাকে।


শিশির নিজের রুমে বিছানার উপর আধশোয়া হয়ে আছে। আজ অল্প টাকার এমবি কিনেছে সে। কেন কিনলো নিজেও জানে নাহ, কিন্তু মন চেয়েছে কিনে ফেলেছে। বার বার ডাটা অন করছে, ফেসবুক লগইন করছে, ছোয়ার আইডিতে যাচ্ছে, আবার চলে আসতেছে, ডাটা অফ করে দিচ্ছে। এরকম বেশ কয়েকবার করে ফেলেছে ইতোমধ্যে। কিন্তু, ছোয়াকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে নাহ।

ফোন টাহ পাশে রেখে মাঝের রুমে আসে শিশির। সাঝ নিজের রুমে পড়ছে। আজকাল খুব একটা বের হয় নাহ সাঝ। নিজের রুমেই বেশি থাকে, আর পড়ালেখা করে। সামনে পরীক্ষা, নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে মেয়েটা। আজিজ রহমান সোফার উপর বসে টিভি দেখছে। আহিয়া রহমান রান্নাঘরে কাজ করছেন।

শিশির সাঝের রুমের দিকে এগুতে যাবে এমন সময় দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ ভেসে আসে। শিশির গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখে আদনান। ভার্সিটি বন্ধ হওয়ার পর থেকেই আদনান সন্ধ্যা হতে নাহ হতেই বাসায় চলে আসে। তারপর পড়াশোনা করে। আজ এতো দেরি করে আসছিলো জন্য, শিশির ফোন দিয়েছিলো। আদনান জানিয়েছিলো, বন্ধুর কাছের থেকে নোট নিচ্ছে। তাই সময় লাগবে। কিন্তু, আদনানের গলাটাহ ভালো লাগেনি শিশিরের। তাও ফোনের ভিতর কিছু জিজ্ঞেসও করে নি।

কিন্তু দরজা খুলে আদনানের মুখটাহ দেখতেই শিশিরের বুক টাহ ধুক করে উঠে। এমন দেখাচ্ছে কেন তার আদরের ভাইকে? কেমন যেন বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে। চুলগুলো কেমন উসকো খুসকো, মুখটাহ মলিন, চোখ গুলোও লাল হয়ে আছে। কি হয়েছে তার ভাইয়ের? আদনান শিশিরকে দেখে মলিন হেসে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া!”

আদনানের গলাটাহ ও ভালো শোনাচ্ছে নাহ শিশিরের কাছে। শিশির আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম! আই ভেতরে আই।”

আদনান সোজা নিজের রুমে চলে যায়। শিশির আদনানের যাওয়ার দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে থাকে।আদনান রুমে এসে ওয়াড্রোব খুলে জামা নিতে থাকে। এতো সময় আদনান একা একা একটা লেকের পাড়ে বসে ছিলো। ভাবছিলো স্নেহার মায়ের বলা কথাগুলো। ভদ্রমহিলার সব কথার মানেই আদনান বুঝতে পারছিলো। আদনানের অবস্থান আদনানকে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন ভালো করে। আদনানের চোখ আবার ভরে আসে। আদনান হাত দিয়ে চোখ মুছে একটা টিশার্ট আর লুঙ্গি নিয়ে বাথরুমে চলে যায়।

শিশির রুমে এসে বিছানায় বসে আছে। আবারও ফোন অন করে একবার ছোয়ার আইডি ঘুরে এসেছে শিশির। কিন্তু, রিকোয়েস্ট দিলো নাহ। তারপর ফোন টাহ অফ করে পাশে রেখে ভাবতে লাগলো আদনানের কথা। এমন বিমর্ষ লাগছে কেন ছেলেটাহ কে? কি হয়েছে তার আদরের ভাইয়ের? সকালে তো ঠিকই ছিলো, দুপুরে যখন ফোনে কথা বলেছিলো তখনও ঠিকঠাকই লেগেছিলো, তাহলে সন্ধ্যার পর ফোন দেওয়া থেকে এমন লাগছে কেন ছেলেটাহকে? কি হয়েছে তার?

আদনান গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রুমে চলে আসে। তারপর গামছাটা দরজার উপর নেড়ে দিয়ে একটা বই নিয়ে পড়তে বসে। শিশির এতো সময় ভাইকে খেয়াল করছিলো। আদনানকে খুব গোমড়া গোমড়া দেখাচ্ছে। শিশির আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান!”

আদনান বই থেকে মুখ সরিয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জি! ভাইয়া!”

শিশির আদনানের দিকে সোজা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই ঠিক আছিস?”

আদনান একটু চুপ থেকে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” হ্যা! ভাইয়া! আমি তো ঠিকই আছি। কি হবে আমার?”

শিশির একটু ভ্রু কুচকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার মনে হয় না তুই ঠিক আছিস। কেমন যেন লাগছে তোকে। কিছু কি হয়েছে?”

আদনান মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” নাহ ভাইয়া! কিছুই হয় নি। আমি ঠিক আছি।”

–” সত্যি তো?”

আদনান সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যা! ভাইয়া! আমি একদম ঠিক আছি। তুই চিন্তা করিস নাহ।”

শিশির একটা জোরে নিশ্বাস নিয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে ফোন হাতে নেয়। আবার লগইন করে ফেসবুক। কিছু সময় পর সবাই খাওয়া দাওয়া করে। আদনান আজ খাবার টেবিলেও চুপচাপ ছিলো। ব্যাপার টাহ আবার শিশিরের নজরে আসলেও চুপ করে থাকে।

সবাই শুয়ে পড়েছে। শুধু সাঝের রুম থেকে পড়ার আওয়াজ ভেসে আসছে। শিশির ফোন অন করে আবার একই কাজ করলো। আদনানও উল্টো দিক ঘুরে শুয়ে আছে। চোখের পাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। পাশে শিশির শোয়া, কিন্তু সে বুঝতে পারছে নাহ। আর বুঝতে পারার কথাও নাহ। কেননা আদনানের চোখ দিয়েই শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে, কোনো শব্দ হচ্ছে নাহ।

আজ স্নেহার মায়ের কথা বলার ধরন, প্রশ্ন এইসব মাথায় ঘুরছে। ভদ্রমহিলা বার বার তার অবস্থান বুঝিয়ে দিচ্ছিলো। শেষের হাসিটা আরও কষ্ট লেগেছে আদনানের। আদনানও এই কয়দিন বিশেষ করে স্নেহাদের বাড়ি যাওয়ার পর বুঝেছে তার বার্বিডল আর তার মাঝে কতো তফাৎ। আর আজ স্নেহার আম্মু সেই তফাৎ টাহ আরও খুচিয়ে দেখিয়ে দিলেন।

আদনান হাত দিয়ে আস্তে করে নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে। শিশিরও ফোনটাহ উল্টো করে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কি আশ্চর্য, তাই নাহ? একই রুমে একই বিছানায় দু’ভাই ই ঘুমানোর চেষ্টা করছে। একজন নিজের অস্থির মন কে শান্ত করার চেষ্টায় ঘুমাতে চাচ্ছে, আর একজন তার মনের কষ্ট কমানোর জন্য ঘুমাতে চাইছে। নসীব! সবই নসীব!!!

#_চলবে…………🌹

{{ ভুল, ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি। 🤗 }}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here