তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_২

0
1101

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২

গুটি গুটি পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রাঙ্গনে গেলাম। তূর্ণ ভাইয়া আজ তো তুম গায়া। দেখো শুধু কি করে তোমায় নাস্তানাবুদ করি। পৈ শা চি ক হাসি দিয়ে অগ্রসর হলাম তূর্ণ ভাইয়ার দিকে। বেচারা! বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছে। কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়ছে স্বেদজল। রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে সারিবদ্ধ চেয়ারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইয়াহু! চটাপট বুদ্ধি পেয়ে গেছি। দ্রুত পায়ে ভাইয়ার পেছন দিকে চলে গেলাম। কচ্ছপের গতিতে গিয়ে দাঁড়ালাম তূর্ণ ভাইয়ার ঠিক পেছনেই। উনি এখন অবধি আমার উপস্থিতি টের পাননি। পাবেন ই বা কি করে? আমি তো ওনার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে। যাই হোক। উনি চেয়ারে ক্লান্ত দেহ এলিয়ে দিতে উদ্যত হলেন। তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলাম আমি। হঠাৎই নিঃশব্দে চেয়ার টেনে সরিয়ে দিলাম। উদ্দেশ্য ওনায় একবারের জন্য হলেও মাটিতে ভূপাতিত করা। কিন্তু এ কি! এটা কি করে হলো? উনি যেভাবে বসতে যাচ্ছিলেন আর আমি ঝড়ের বেগে চেয়ার সরিয়ে ফেললাম এতে তো ওনার মাটিতে পড়ে থাকার কথা। কিন্তু মহাশয় তো চেয়ারে বসে রয়েছে। তবে আমার হাতে কি? সাথে সাথে আমার হাতে তাকালাম। উঁহু! চেয়ার তো আমার হাতেই রয়েছে। তবে উনি চেয়ারে বসলেন কি করে? পাশ থেকে টেনে নিয়ে! কি ধূর্ত লোক! আমার ভাবনার মাঝে জল ঢেলে দিয়ে আমার দিকে পিছু ঘুরে তাকালেন উনি। ওনার চোখে চোখ পড়লো আমার। ঠিক সে মূহুর্তে আমায় হকচকিয়ে দিলেন উনি। চোখ টিপে বক্র হাসির রেখা ফুটিয়ে সোজা হয়ে বসলেন। আমি স্তম্ভিত! সত্যি বলছি। কোনোমতে হাতে থাকা চেয়ার রেখে দ্রুত পায়ে সেথা হতে প্রস্থান করলাম। নাহলে যে বিপদ আসন্ন!

আঁধার ঘনিয়ে এসেছে ধরিত্রীতে। কিছুক্ষণ বাদেই হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হবে। এই মূহুর্তে সকলেই রেডি হতে ব্যস্ত। ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে অবাক হয়ে গেলাম আমি। এ কি দেখছি! আমাদের রুমে তো রীতিমতো হু ল স্থু ল কাণ্ড! আয়নার সামনে দাঁড়ানোর জায়গা অবধি নেই। খালাতো বোন তৃষা আর ওর চাচাতো বোন নিশিপু তো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রীতিমতো ধাক্কা – ধাক্কি করছে। দু’জনের বয়সে ফারাক রয়েছে কিছুটা। তৃষা আমার সঙ্গে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে আর নিশিপু তৃতীয় বর্ষে। তাতে কি হয়েছে? দু’জনের মধ্যে বেশ খুনসুটি হয়। আমাদের রুমে শুধুমাত্র নিশিপু আর তৃষা নয় বরং আমাদের আরো কিছু কাজিন রয়েছে। দুইজন অজানা অতিথি অবধি দেখতে পাচ্ছি। মেকআপ করে করে একেকজন মেকআপ সুন্দ্রী হয়ে গেছে। এদিকে আমি? সবে মাত্র ড্রেস পড়ে বের হলাম। সাজগোজ তো বাকিই রয়েছে।

” এই তৃষা! একটু সর না। আইলাইনার দিতে পারছি না তো। ”

নিশিপু এর কথা শুনে তৃষা বিরক্ত হয়ে বললো,

” আপু আর কত সরবো? এবার আয়না থেকেই বেরিয়ে যাই? ”

” হাঁ যা না। আমাকে অন্তত সাজতে দে। অনুষ্ঠান এই শুরু হলো বলে। ”

বলেই চোখে আইলাইনার পড়তে লাগলো নিশিপু। তৃষা বিরক্তিকর ভাবভঙ্গি করে কাণ্ড দেখছে শুধু। আমি হাসিমুখে ড্রেসিং টেবিল এর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। চিরুনি হাতে নিয়ে আমার পিঠ অবধি ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললাম,

” তৃষা তুই পারিসও বটে। পুরো সাজ কমপ্লিট। তবুও মুখ ফুলিয়ে রেখেছিস। আর কি বাকি আছে শুনি? ”

তৃষা বোধহয় আমাকে ক’টা কড়া কথা শোনাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে সে চরম আশ্চর্য হয়ে গেল! বুঝতে পারছি না মুখটা এতবড় হা করে রেখেছে কেন? মশা মাছি ঢুকে যাবে তো!

” কি রে? এতবড় হা করে আছিস কেন? মুখটা বন্ধ কর। মশা মাছি ঢুকে খেলা করা শুরু করে দেবে তো। ”

তৃষা মেজাজ দেখিয়ে বললো,

” দুয়া’র বাচ্চি! একটু পর অনুষ্ঠান শুরু হবে‌। আর তুই এখনো রেডি হসনি? ”

” আমি তো প্রায় রেডি। চুলগুলো আঁচড়ে চোখে কাজল আর ঠোঁটে… ”

” অ্যাই ছে ম ড়ি তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? সবাই এত সুন্দর করে সাজগোজ করছে। আর তুই কিনা শাবানা আপা হইয়া যাবি? ”

চুল আঁচড়ানো শেষে আমি কাজল হাতে নিয়ে বললাম,

” তুই খুব ভালো করেই জানিস অতিরিক্ত সাজগোজ আমার পছন্দ না। আমি সিম্পল থাকতেই পছন্দ করি।”

তৃষা কিছু বলতে নিলো তখনই নিশিপু বললো,

” এই তৃষা ফটরফটর না করে আয়নার সামনে আয়। আ’ম ডান। ”

” নিশিপু তুমি ওই দুয়া’কে দেখো একবার। ”

নিশিপু তৃষার কথা শুনে আমার দিকে তাকালো। অবাক হয়ে বললো,

” এ কি কাণ্ড! দুয়া! তোমার মেকআপ কই? ”

দু চোখে কাজল কালো রেখার প্রলেপ এঁকে আমি বললাম,

” আমি তো মেকআপ করিনি। ”

” কিহ্! অনুষ্ঠান শুরু হবে এখুনি। তুমি এখনো সাজোনি কেন? লেট হয়ে যাচ্ছে তো। ”

ঠোঁটে লিপবাম লাগিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই হিজাব বেঁধে নিলাম। অতঃপর বললাম,

” নিশিপু আমি রেডি। চলো যাওয়া যাক। ”

আমার কথা শুনে নিশিপু এমনভাবে তাকালো যেন সে পৃথিবীর দশম আশ্চর্য দেখছে! আমি মৃদু হেসে বললাম,

” আপু রিল্যাক্স। আমি এমনিই। সাজগোজ হতে কয়েক মাইল দূরে। ”

” হাউ? ”

নিশিপু এখনো অবাক হয়ে আছে। তৃষা বললো,

” আপু এই মাইয়া এমনই। এরে বইল্লা লাভ নাই। চলো এবার যাওয়া যাক। ”

নিশিপু কোনোমতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

হলুদ সন্ধ্যায় সজ্জিত হয়ে আছে পুরো প্রাঙ্গন। ক্ষুদ্রাকৃতির স্টেজটি আবৃত হয়ে আছে হলদে কাপড়ে। স্টেজের দু প্রান্তে রাখা রয়েছে হলুদ কাপড়ে আবৃত কুশন ও পাশ বালিশ। হলদে স্টেজের দুই পাশে রাখা আছে মাঝারি আকৃতির ভাস যাতে রাখা হয়েছে গাঁদা ফুলের সমারোহ। স্টেজের ঠিক পেছনেই পর্দায় ন্যায় ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে অসংখ্য হলুদ গাঁদা ফুল। শুভ্র হলদে রঙা নেটের পর্দা শোভা পাচ্ছে স্টেজের দুই পাশে। পুরো হলদে আভায় আচ্ছাদিত হয়ে গিয়েছে প্রাঙ্গনটি। আমি ঘুরে ঘুরে সাজসজ্জা দেখছিলাম। তখনই বড়াপুর সাথে দেখা হয়ে গেল। আমার বড়াপু! তানজিনা আপু। সাথে রয়েছে দুলাভাই। রিশাদ ভাইয়া। আমি দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম বড়াপু’কে। বড়াপুও আমায় উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে নিলো।

” বড়াপু! কেমন আছো তুমি? ”

” এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস বোন? ”

” আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ”

রিশাদ ভাইয়া এর গলা খাঁকারিতে আপুর থেকে সরে এলাম আমি। ভাইয়া মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,

” কি শ্যালিকা! কেমন আছো তুমি? আপুকে পেয়ে ভাইয়াকে ভুলে গেলে? ”

আমি মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বললাম,

” কি যে বলেন না ভাইয়া! আপনি তো বড়াপুর সাথেই রিলেটেড। তাহলে আপনাকে ভুলবো কি করে বলুন তো? ভোলা কি যায়? ”

ভাইয়া মাথা নেড়ে বললেন,

” একদম ই যায় না। আর যাওয়া উচিতও নয়। ”

হাসিমুখে সম্মতি পোষণ করলাম আমি। বড়াপু বললো,

” হাঁ রে বোন আব্বু আম্মু কোথায়? ”

আমি আশপাশে চোখ বুলিয়ে বললাম,

” আশপাশেই আছে কোথাও। আমি মাত্রই এলাম তো। দেখিনি। ”

” আচ্ছা তুই থাক। আমি দেখা করে আসি। ”

” হুম। ”

আপুর সাথে যাওয়ার আগে রিশাদ ভাইয়া বলে গেলেন,

” শ্যালিকা সি ইউ সুন। ”

চলে গেলেন উনি। আমি এক কদম অগ্রসর হতে না হতেই আমার কাছে ছুটে এলো তৃষা। আমার খালাতো বোন কম বেস্টি বেশি এই মেয়েটা। আমি অবাক হয়ে বললাম,

” কি হয়েছে? এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন? ষাঁড়ে দৌড়ানি দিছে? ”

ও বিরক্তিকর মুখে বললো,

” ধ্যাৎ! এখানে ষাঁড় আসবে কোথা থেকে? আমি তো তোকে দেখে ছুটে এলাম। চল আমার সাথে। সিনথি আপুর কাছে যাবো। আপুকে পার্লারে যা সাজিয়েছে না? একদম ডানা কাটা পরীর মতো লাগছে। ”

” তাই নাকি? চল চল। ”

লেহেঙ্গা সামলিয়ে সিনথি আপুর কাছে ছুটলাম আমরা দু’জনে।
____

হলদে পরী সেজে বসে রয়েছে সিনথি আপু। খুব সুন্দর লাগছে ওকে! একদম ডানা কাটা পরীর মতো। আমি আর তৃষা গিয়ে আপুর দুই পাশে বসে পড়লাম। আমি বললাম,

” মাশাআল্লাহ! আপু তোমাকে কি সুন্দর লাগছে! কবির ভাইয়া তো তোমার এই হলদে অবতার দেখে হুঁশ হারিয়ে ফেলবে। ”

আপু লাজুক হেসে বললো,

” যাহ্! কি যে বলিস না। ”

” আরে আপু সত্যি বলছি। তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না তো? আচ্ছা ঠিক আছে। এই তৃষা ফটাফট আপুর কয়েকটা ফার্স্ট ক্লাস ফটো তোল তো। তারপর ফটোগুলা সোজা সেন্ড কর কবির ভাইয়ার কাছে। দেখ রিপ্লাই কি আসে। ”

আমার কথা শুনে তৃষা সত্যি সত্যিই মোবাইল হাতে নিলো। এ দেখে আপু কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

” এই কি করছিস তোরা? মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? ”

আমি দুষ্টু হেসে বললাম,

” আমাদের মাথা ঠিক ই আছে। তবে মাথা খারাপ হতে চলেছে…”

” কবির ভাইয়ার। ”

আমার অসম্পূর্ণ কথা সম্পূর্ণ করলো তৃষা। আমাদের হাসিতে লজ্জা পেল আপু। আমি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু দু’জন অতিথি এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো। আপুর সাথে কথা বলছে। তাই আমরা দু’জন আর বিরক্ত না করে উঠে পড়লাম। সরে গেলাম ওখান থেকে।
____

ছোট ভাইটাকে এখন অবধি দেখলাম না। মিস্টার ভাব কোথায় আছে কে জানে? আম্মু তো বারবার বলছিলো ওকে দেখে রাখতে। কিন্তু আমার ভাইটা যে কোথায় গিয়ে ভাব দেখাচ্ছে আল্লাহ্ মালুম। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ই চক্ষু নিবদ্ধ হলো আমার ছোট ভাইয়ের দিকে। মাশাআল্লাহ! আমার গুলুমুলু ভাইটাকে কি সুন্দর লাগছে! সবুজ পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামায় একদম রাজপুত্র লাগছে। কিন্তু রাজপুত্র মুখ ভাড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে কেন? আমি গিয়ে জাহিন এর সামনে দাঁড়ালাম।

” ভাইয়ু এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস? ”

” অনুষ্ঠান দেখছি। ”

গম্ভীর স্বর ওর। আমি মাঝেমাঝে বুঝে উঠতে পারিনা যে আমার ভাই হয়ে এই গুলুমুলুটা এত ভাব কোথা থেকে আমদানী করলো? সবে মাত্র ক্লাস থ্রি তে পড়ে। কিন্তু এমন ভাব নিয়ে চলে যেন এশিয়ার এক নম্বর বিজনেসম্যান। ভাব দেখে বাঁচি না।

” ভাইয়ু আমার সাথে সাথে থাক। আম্মু বলেছে। ”

ভাইটা কিচ্ছু না বলে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো যেন সে আমারই সাথে রয়েছে। মাথায় হাত চলে গেল আমার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর কাঁধে বাঁ হাত জড়িয়ে বললাম,

” চল ভাই আমার। তোকে নিয়ে গবেষণা করতে গেলে হলুদের অনুষ্ঠান খতম হয়ে যাবে। ”
_____

জাহিনকে আব্বুর কাছে রেখে এসে আমি আমার বন্ধুমহলকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। সবগুলো কোথায় গিয়ে উধাও হলো আল্লাহ্ মালুম। দাঁড়িয়ে রয়েছি তখনই ডান পাশ হতে আমার হিজাবে আবৃত মাথায় গাট্টা মা|রলো কেউ। হকচকিয়ে পাশে ফিরলাম। তূর্ণ ভাইয়া দাঁড়িয়ে।

” কিরে পুতলা একা একা কি করছিস? তোর সাগরেদরা কোথায়? ”

মাথায় হাত ডলে বিরক্তিকর কন্ঠে বললাম,

” ভাইয়া! শুধু শুধু গাট্টা মা|রলে কেন? ”

” ইচ্ছে হয়েছে তাই। ”

মাথা হতে হাত সরিয়ে বললাম,

” তোমার ইচ্ছায় এক বালতি পানি ঢালি। আর আর আমাকে পুতলা বলে ডাকলে কেন? ”

” পুতুলকে পুতলা বলে ডাকবো না তো কি ডাকবো? ”

আঙুল উঁচিয়ে বললাম,

” শোনো আমার একটা নাম আছে। আ’ম নট পুতুল। জাহিরাহ্ দুয়া আমার নাম। ”

তূর্ণ ভাইয়া ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,

” সে জাহি হোক কিংবা আহি আই ডোন্ট কেয়ার। আমার কাছে তোর একটাই নাম‌। পুতুল ওরফে পুতলা। বুঝেছিস? ”

” জ্বি না। ”

” না বুঝলে সেটা তোর ফল্ট। বাই দ্যা ওয়ে… ”

আমায় আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে দুষ্টু কন্ঠে বললেন,

” কি ব্যাপার পুতুল? সবাই ময়দা সুন্দরী হয়ে ঘোরাঘুরি করছে আর সেখানে তুই কিনা উইদাউট ময়দা! কেন কেন? ময়দা কেনার পয়সা ছিল না বুঝি? ”

এত্ত বড় কথা! দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম,

” শোনো ময়দা আমি পুরোপুরি অপছন্দ করি। তাই ময়দা হতে কয়েক’শো মাইল দূরে থাকি। আর আমার আব্বুর না যথেষ্ট পয়সা আছে। পয়সার অভাবে ময়দা কিনতে পারিনি এটা একদম ফা ল তু কথা। বুঝলে? ”

তূর্ণ ভাইয়া ভয় পাওয়ার ভঙ্গি করে বললেন,

” ওরে বাপ রে! পুতলা তোর দাঁত চিবিয়ে কথা বলা দেখে আমি না হেব্বি ভয় পাইছি। দাঁত ঠিক করে কথা বল। নইলে অকালে দাঁত হারাতে হবে তো। ”

” হলে হোক। তাতে তোমার কি? ”

বিড়বিড় করে কিছু একটা বললেন উনি যা আমি শুনতে পেলাম না। তাই বললাম,

” কি বললে? ”

আমার দিকে দৃষ্টিপাত করে মেয়েদের মতো গোল গোল ঘুরে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বললেন,

” আমায় ভালো করে একবার দেখ তো পুতলা। কেমন লাগছে? হ্যান্ডসাম? মেয়েদের যন্ত্রনায় তো টিকতেই পারছি না। কালাটিকা দেয়া উচিত ছিল বোধহয়। ”

আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও আত্ম প্রশংসায় পঞ্চমুখ তূর্ণ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। উনি শুভ্র রঙা পাঞ্জাবি জড়িয়েছেন ওনার গৌর বর্ণের দেহে। পাঞ্জাবির ওপরে দেহের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে শুভ্র ও অফ হোয়াইট ডিজিটাল প্রিন্টের একটি ওয়েস্ট কোট। বাঁ হাতে রিস্ট ওয়াচ। ওনার হালকা লালচে বিদেশীদের মতন চুলগুলো স্পাইক করা। কপোলে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। পায়ে কালো চকচকে জুতো। ওনার মুগ্ধকর সৌন্দর্যে ঘোর লেগে গেল আমার। অজানা অনুভূতিতে তলিয়ে যেতে লাগলাম। পরোক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে নিলাম আমি। এ কি হচ্ছিল আমার সাথে! বক্ষপিঞ্জরের আড়ালে লুকায়িত হৃদযন্ত্রটি এখনো ধুকপুক ধুকপুক করছে। হঠাৎই আমার ঘোর কেটে গেল তূর্ণ ভাইয়ার স্পর্শে। আমার চোখে লেপ্টে থাকা কাজলে আঙুল ছুঁয়ে নিজের কানের পেছনে লাগিয়ে দিলেন উনি। দুষ্টু হেসে বললেন,

” নাউ পারফেক্ট। এবার আর কারোর নজর লাগবে না।”

দুষ্টুমি ভর করলো আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে। আমি বললাম,

” উঁহু নজরটিকা এভাবে লাগালে চলবে না। ”

উনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন আমার পানে। আমি চোখে লাগিয়ে রাখা কাজলে আঙুল ছুঁয়ে আঙুলে কিছুটা কাজল লাগালাম। তূর্ণ ভাইয়া কিছু বুঝে ওঠার আগে হঠাৎই ওনার কপালের ঠিক বাম পাশে হালকা কাজল লাগিয়ে দিলাম। একদম ছোট বাচ্চাদের মতো। হেসে বললাম,

” নাউ পারফেক্ট। ”

ওনার বোধগম্য হতেই ক্ষে পে গেলেন উনি।

” তবে রে! ”

আমায় আর পায় কে? হলুদ লেহেঙ্গা সামলিয়ে দিলাম এক দৌড়। হা হা হা!

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here