তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_২০

0
684

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২০

” এ কেমন অবিচার দুয়া? নিজে তো আমার বিয়েতে পেটপুরে খেলি। অথচ নিজের বিয়েতে নো দাওয়াত? ”

দুয়া তার মা-বাবার সাথে কথা বলছিল। তখনই কর্ণ কুহরে পৌঁছালো পরিচিতি কণ্ঠ। খুশিমনে পিছু ঘুরে তাকালো সে। উৎফুল্ল হয়ে দ্রুত পায়ে ছুটলো। আলিঙ্গন করলো তার মামাতো বোন সিনথিপু’কে।

” আপু! কতদিন পর দেখা! ”

খুশিতে মেয়েটার কণ্ঠস্বর কাঁপছে। সিনথিয়া হাসিমুখে ওকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে নিলো। দুয়া আপুকে ছেড়ে মুখোমুখি দাঁড়ালো।

” আপু কেমন আছো বলো? আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? ”

” বোন আমার! আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আর হ্যাঁ আসতেও কোনো অসুবিধা হয়নি। এবার দেখি দেখি আমার বোনটাকে একটু ভালো করে দেখি। ”

সিনথিয়া পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ছোট বোনের পানে। এতে র’ক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো মেয়েটির মায়াবী মুখশ্রীতে।

” মাশাআল্লাহ্! বোনটাকে কি সুন্দর লাগছে! ”

পাশে এসে দাঁড়ালো তানজিনা।

” একদম। এজন্যই তো তূর্ণ ভায়া চোখই সরাতে পারছে না। ”

তানজিনা চোখের ইশারায় দেখিয়ে দিলো তূর্ণ’কে। মশাই অতিথিদের সঙ্গে আলাপচারিতার ফাঁকে ফাঁকে বারবার এদিকে তাকাচ্ছে। সে কি মোহাচ্ছন্ন চাহনি! দুয়া আড়চোখে তা লক্ষ্য করে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সিনথিয়া দুষ্টু হেসে বললো,

” হায়! বিয়ের একমাস হতে না হতেই কি জাদু করিলা বনু? ”

” উফ্ আপু। ”

লাজে রাঙা মেয়েটি দুষ্টুমি আর নিতে পারছে না। বারবার দৃষ্টি অবনত হয়ে আসছে। তা লক্ষ্য করে তানজিনা এবং সিনথিয়া একত্রে হেসে উঠলো।
.

” দ্যাখো দ্যাখো। কুকাম করে আবার ঢাকঢোল পিটিয়ে রিসিপশন করছে! ”

” বিয়ে তো হয়নি। এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকছে। বোঝেন না? ”

” বুঝবো না কেন? এসব বড়লোকি দরবার। খুব জানা আছে। ”

” হাঁ। হুটহাট আকাম কুকাম করে বসবে। এরপর টাকার গরম দেখিয়ে সবটা ধামাচাপা দেবে। ”

” ছিঃ! মনে হয় এতদিন লিভ ইনে ছিল। এখন ঢঙ করে সবটা প্রকাশ্যে আনছে। ”

” ছিঃ। ”

অনুষ্ঠানে আগত দুই নারী নিজেদের মধ্যে কটূক্তি করতে ব্যস্ত। তারা তো জানেও না তাদের এই নোং রা বাক্য কারোর কোমল হৃদয়ে শূiলের ন্যায় বি দ্ধ হচ্ছে। র-ক্তাক্ত করে তুলছে অন্তঃপুর। নোনাজল জমায়েত হয়ে চলেছে অক্ষিকোলে। দুয়া যখন মনে মনে বিiধ্বস্ত ঠিক তখনই বিপদের সঙ্গী রূপে হাজির হলো আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! মেয়েটির কোমল হাত আঁকড়ে ধরে নিয়ে গেল সে-ই কুচুটি কাকিমাদের পানে।

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দু’জনে। তূর্ণ’র হাতটি আলতো করে স্পর্শ করলো সঙ্গিনীর কটিদেশ। সেথায় হাত রেখে অধিকারের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। সহসা চমকালো মেয়েটি! শিরশির করে উঠলো গাত্র। আস্তে করে অবনত হলো লালাভ মুখখানি। তূর্ণ গমগমে স্বরে আন্টিদের উদ্দেশ্যে বললো,

” আন্টি’স! আমরা লিভ ইনে ছিলাম নাকি কাজিন, আপনারা জানলেন কি করে? নিজেদের হাই পাওয়ারি চোখ দুটোকে সিসি ক্যামেরা হিসেবে পেছনে লাগিয়ে রেখেছিলেন বুঝি? তাহলে তো বলতে হবে সিসি ক্যামেরা নষ্ট। গণ্ডগোল আছে। ভুলভাল দেখে। আমি সাজেস্ট করবো আপনারা ড. মাহমুদুর রহমানকে দেখান। হি ইজ অ্যান আই স্টেশালিস্ট।। চোখের বেশ ভালো ট্রিটমেন্ট করেন। কখনো কখনো রোগাক্রান্ত চোখ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করেও ফেলেন। বুঝলেন? আপনারা দ্রুত তার শরনাপন্ন হন। উপকার হবে। আপনার এবং পার্শ্ববর্তী দশজনের। ঠিক আছে? এনজয় দ্যা পার্টি। ”

অতি ভদ্র স্বরে অপমান বুঝি একেই বলে! আন্টি দু’জন ভোঁতা মুখে অপমান সহ্য করে নিলো। তূর্ণ গা জ্বালানো হাসি উপহার দিয়ে একান্ত সঙ্গিনীর হাতটি ধরে সেথা হতে প্রস্থান করলো। আর দুয়া! চলন্ত পথে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো স্বামীর নামক একান্ত মানুষটির পানে। মানুষটি কি সুন্দর করে তার প্রয়োজনে সান্নিধ্য দিলো। তাকে বুদ্ধিমত্তার সহিত আগলে নিলো! এমন পুরুষ ই তো সকল নারীর কাম্য! মোহনীয় দ্যুতি ছড়িয়ে পড়লো মেয়েটির মুখশ্রীতে! কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে একজন র ক্ত চক্ষুতে এসব দেখতে পেলো। শক্ত হলো চোয়াল। মুষ্ঠিমেয় হলো ডান হাত।
.

রিসিপশন পার্টি সুষ্ঠু রূপে চলমান। হাসিখুশিতে অতিবাহিত হচ্ছে মুহুর্ত। তূর্ণ এবং দুয়া পাশাপাশি স্টেজে দাঁড়িয়ে। আগত অতিথিরা একে একে এসে ওদের শুভকামনা জানাচ্ছে এবং নতুন জীবনের জন্য দোয়া করে দিচ্ছে। সাথে উপহার সামগ্রী তো রয়েছেই। দুয়া হাসিমুখে একজন নারী অতিথির থেকে উপহার গ্রহণ করছিল হঠাৎ নজর পড়লো সামান্য দূরে। সেথায় সাজেদা দাঁড়িয়ে।

” ফুপি! ”

দুয়া প্রসন্ন বদনে তার দিকে অগ্রসর হতে যাচ্ছিল। কিন্তু তা আর হলো না। সাজেদা তার প্রিয় ভাতিজিকে লক্ষ্য করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো। সেথা হতে সরে গেল তৎক্ষণাৎ। জাবির এবং দুয়া দুজনেই এতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। জাবির দ্রুত মায়ের পিছু নিলো। আর দুয়া’র নেত্রপল্লব গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা অশ্রু। তূর্ণ তা লক্ষ্য করে অতিথিদের এক্সকিউজ জানিয়ে সহধর্মিণীর পাশে এসে দাঁড়ালো। মৃদু স্বরে শুধালো কি হয়েছে। দুয়া নিজেকে সামলিয়ে মুচকি হাসলো। জানালো কিছুই হয়নি। তবুও প্রসন্ন হতে পারলো না তূর্ণ। মনে হলো কিছু তো হয়েছে।
.

সাজেদা এক কোণে এসে দাঁড়ালেন। ওনার আবেগপূর্ণ চেহারা মুহুর্তেই ক্ষো ভে পরিবর্তিত হলো। শক্ত হলো চোয়াল। যেই না পেছনে ছেলের উপস্থিতি টের পেলেন অমনি স্বাভাবিক রূপ ধারণ করলেন। ছলছল করতে লাগলো নয়ন জোড়া। জাবির সম্মুখে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,

” মা! কি হয়েছে তোমার? তুমি এভাবে চলে এলে কেন? দুয়া কি ভাবলো বলো তো। ”

সাজেদা ন্যা কা ভাব নিয়ে আবেগী কণ্ঠে বললেন,

” আমি কি করতাম বল? সইতে পারছিলাম না এত আনন্দ ফূর্তি। এসব তো তোর আর দুয়া’র হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। আমি মানতে পারছি না যে। ওই তূর্ণ’কে সহ্য হয় না। দেখলেই.. ”

” প্লিজ মা। এমনটা বলো না। ”

” কেন বলবো না? হাঁ? ওরা দুজনে বিয়ে করে মাখোমাখো প্রেম করছে। মাঝখান দিয়ে আমার ছেলেটা বিরহে কাতর হয়ে যাচ্ছে। মা হয়ে আমি এসব সহ্য করতে পারছি না। অসহ্য লাগছে সবটা। ”

একজন অতিথি ফোনে কথা বলতে বলতে পাশে এসে দাঁড়াতেই তাদের কথোপকথনে বাঁধা পড়লো। জাবির মিহি স্বরে বললো,

” এসব কথা এখন থাক মা। চলো মামার সাথে দেখা করবে। ”

মা’কে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়েই জাবির মায়ের হাতটি ধরলো। হাত ধরে সাজ্জাদ সাহেবের পানে অগ্রসর হতে লাগলো।
.

দুয়া ওর বন্ধুমহলের সঙ্গে খুনসুটি করছিল। এক পর্যায়ে দুয়া বললো,

” এক্সকিউজ মি! তোরা কথা বল। আমি আসছি। ”

দুয়া ওদের থেকে বিদায় নিয়ে পা বাড়ালো নিরালায়। সকলের দৃষ্টিসীমার বাহিরে চলে গেল মেয়েটি। যেই না লেডিস ওয়াশরুমে প্রবেশ করবে অমনি শক্তপোক্ত পুরুষালি একজোড়া হাত ওকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরলো। আকস্মিক কাণ্ডে ভড়কে গেল মেয়েটি! ভীত চাহনিতে তাকিয়ে দেখতে পেল রুমান! ওর কোমল দু’টো হাত দেওয়ালে ঠেসে ধরেছে।

” আ আপনি! আপনি এখানে কি করছেন? হাত ছাড়ুন। এ কেমন ধরনের অসiভ্যতা? ”

হাত দু’টো ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো দুয়া। তাতে আরো ক্ষু ব্ধ হলো রুমান। হিসহিসিয়ে উঠলো,

” হুঁশ। একটাও কথা না। ছলনাময়ী! তোর কত বড় দুঃসাহস! আমাকে ডিচ করে বিয়ে করে নিয়েছিস? ”

দুয়া হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে কঠিন স্বরে বললো,

” একদম বাজে বলবেন না। এখানে ডিচ আসছে কোথা থেকে? আমাদের মধ্যে কোনো প্রেম ছিল নাকি ভালোবাসা? ডিচ বলছেন কোন লজিকে? হাত ছাড়ুন বলছি। অস’ভ্য লোক। ”

” আমি অস’ভ্য! তাহলে সভ্য কে! তোর জামাই? ”

এক ঝটকায় দু হাত ছাড়িয়ে নিলো দুয়া। ডান হাতে বাম হাতের কব্জি ডলতে ডলতে বললো,

” ফালতু কথা বন্ধ করুন। আপনি এখানে আসলেন কি করে? হাঁ? এখানে এসে ড্রামা করছেন? সসম্মানে চলে যান। এখানে কিন্তু আমি একা নই। সব্বাই আছে। সো সাবধান। ”

দুয়া ভেবেছিল ওর হুমকিতে বুঝি সামান্য হলেও কাজ হবে। সেথা হতে প্রস্থান করবে রুমান। কিন্তু হিতে বিপরীত হলো। তড়িৎ ওর ডান হাতটি বাম হাত দিয়ে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরলো রুমান। ডান হাতে আঁকড়ে ধরলো চোয়াল। এতটাই শক্ত করে চেপে ধরেছে যে প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে। গালের চামড়ায় বুঝি দাঁত লেগে যাবে!

” আমাকে হু*মকি দিচ্ছিস তুই? ভয় দেখাচ্ছিস? ভয় পাই নাকি? তোর মতো মেয়েরা এই রুমান শিকদারের বিছানায় যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। আমার এক ইশারায় ওরা নিজেকে বিলিয়ে দেয়। সেখানে তুই কিনা দেমাগ দেখাচ্ছিস? সাতটা মাস ধরে তোর পেছনে ঘুরঘুর করছি কি এইদিন দেখার জন্য? তোর ওই কুলা* ভাইয়ের ধমকি সহ্য করেছি এসব দেখার জন্য? হুঁ? ”

চোয়ালের ব্যথায় মেয়েটির নেত্রপল্লব সিক্ত হলো। বাম হাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে লাগলো চোয়াল হতে পুরুষালি হাত সরানোর। কিছু বলতে অবধি পারছে না সে। রাগে ক্ষো’ভে রুমান আরো শক্ত করে চোয়াল চেপে ধরলো। দেয়ালে চেপে ধরা হাতটি সরিয়ে শক্ত করে খামচে ধরলো মেয়েটির কোমর। অ*শ্লীল ভঙ্গিতে সেথায় হাত রেখে বলে উঠলো,

” এখানে? এখানে ছুঁয়েছে না ওই শ*তান? ওর ছোঁয়া ভালো লাগে আর আমি ধরলেই দোষ? আমি তো ভেবেছিলাম তুই সতী সাবিত্রী। কিন্তু না? তুই তো পঁচা পুকুরে গা ভাসানো বে**! খালাতো ভাইয়ের সাথে যে কিনা… ”

আর বলতে পারলো না রুমান। ডান হাতে ওর গালে প্রগাঢ় রূপে চ ড় মে”রে দিলো মেয়েটি। সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো। অশ্রু ভেজা কণ্ঠে ধিক্কার জানালো,

” ছিঃ! ”

মেয়েটি আর কিছু বলতে পারছিল না। লজ্জা-অপমানে কণ্ঠনালী বুঝি অবরুদ্ধ! কাঁদতে কাঁদতে দ্রুত পায়ে সেথা হতে ছুটলো দুয়া। ওয়াশরুমের ফাঁকা শুনশান এরিয়া ত্যাগ করার পূর্বেই পেছন হতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো রুমান। শক্ত হাতে ওর হিজাবে আবৃত কেশ পেছন হতে আঁকড়ে ধরতে উদ্যত হলো। কিন্তু সর্বশেষ মুহূর্তে ঘটলো মিরাকল! আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ’র শক্তপোক্ত হাতটি আঁকড়ে ধরলো রুমানের নোংরা হাতটি। রুমান কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই গালে জোরসে এক ঘু ষি! মাটিতে ছিটকে পড়লো রুমান। ক্রন্দনরত মাইরা’কে দ্রুততম ভঙ্গিতে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নিলো তূর্ণ। ভরসাযোগ্য মানুষটির বক্ষপটে মুখ লুকিয়ে হুঁ হুঁ করে কাঁদতে লাগলো দুয়া। এতক্ষণে পেল কাছের মানুষটির সান্নিধ্য। এতগুলো নোংরা বাক্যে জর্জরিত মেয়েটি দু হাতে স্বামীর পৃষ্ঠদেশ খামচে ধরলো। কাঁদতে লাগলো অবিরাম। যে ক্রন্দন ধ্বনি দিশেহারা করে তুলছে একান্ত মানুষটির অন্তঃস্থল। ধ্বং স করে দিতে ইচ্ছে করছে সবটুকু। র|ক্তিম চাহনিতে নোংরা মানসিকতার মানুষটির দিকে তাকালো তূর্ণ। নিজেকে বহু কষ্টে সংযত করলো পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে। ডান হাতে আদুরে সঙ্গিনীকে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম হতে। বাহির হতে ওয়াশরুম বদ্ধ করে দ্রুততার সহিত মোবাইলে কাউকে মেসেজ সেন্ড করলো। অতঃপর লালাভ চাহনিতে বদ্ধ দরজার পানে তাকিয়ে আরো হিং”স্র রূপ জাগ্রত হতে চাইলো। কিন্তু না! বুকে লেপ্টে থাকা আদুরে রমণীর পানে তাকিয়ে চক্ষু জোড়া মুদিত করে নিলো তূর্ণ। ঘন ঘন শ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করবার প্রয়াস চালিয়ে গেল।

তমস্র নিশি। বিছানার নরম গদিতে পাশাপাশি শুয়ে দু’জনে। ওপাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে অশ্রুত্যাগ করে চলেছে মেয়েটি। সেই কখন থেকে কাঁদছে। থামছেই না। সে কি বুঝতে পারছে না তার ক্রন্দন ধ্বনি একজনের বুকে ছু রি বিদ্ধ করে চলেছে! বুকের মধ্যিখানে ভেঙ্গে চৌচির প্রায়। আর সহ্য করা যাচ্ছে না। দিশেহারা তূর্ণ শক্ত হাতে দুয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। হঠাৎ কাণ্ডে থমকে গেল মেয়েটি। অশ্রুসজল নয়নে তাকালো স্বামীর পানে। তূর্ণ লাল বর্ণ চোখে ওর দিকে তাকালো। হাহাকার করে উঠলো অন্তঃপুরে। তার উপস্থিতিতে এ কি হাল হয়েছে মাইরা’র! এ যে বড্ড যন্ত্রণার! অসহনীয়! শুকনো ঢোক গিললো তূর্ণ। আলতো হাসার চেষ্টা করে মেয়েটির দু কপোলে লেপ্টে থাকা নোনাজল মুছে দিতে লাগলো। সে কি আদুরে স্পর্শ! যেন একটু রূক্ষ হলেই ব্যথা পাবে তার মাইরা! তাই তো অতীব আলতো ছোঁয়ায় নোনাজল মুছে দিলো সে। দুয়া চক্ষু মুদিত করে অনুভব করতে লাগলো যত্নশীল সে ছোঁয়া! তূর্ণ আস্তে আস্তে করে এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে দিলো। কানের পিঠে গুঁজে দিল কিছু চুল। আদুরে কণ্ঠে বললো,

” কাঁদে না দুয়া। সব ঠিক হয়ে গেছে তো। এই যে তুমি আমার কাছে। নিরাপদে আছো তো।‌ বলো নিরাপদে আছো না? ”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মেয়েটি। কেমন মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে রয়েছে। তূর্ণ মুচকি হেসে বললো,

” এই তো। আমার বউটা আমার কাছেই আছে। আর কোনো ভয় নেই। এখানে কোনো বাজে লোকের ছায়া অবধি নেই। শুধু তুমি আর আমি। তাই না? ”

দুয়া অস্ফুট স্বরে মাথা নাড়িয়ে বললো, ” হুঁ। ”

” গুড। এবার চুপটি করে আমার বুকে আসো তো। এখানটায় মাথা রেখে শুয়ে পড়ো। এটি হলো তোমার সবচেয়ে ভরসাযোগ্য স্থান। যখনই ভয় পাবে, খুব কষ্ট হবে, কাঁদতে ইচ্ছে করবে- ব্যাস এখানটায় চলে আসবে মাইরা। আমি কিচ্ছুটি বলবো না। শুধু নীরবে আগলে নেবো তোমায়। এখানে একবার মাথা রেখে দেখোই না! সমস্ত দুঃখকষ্ট-ভয় এক লহমায় ফুরুৎ। ”

নিজের বক্ষপটে আসার আহ্বান জানালো আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! সম্মোহিত এর ন্যায় তাকিয়ে রইল দুয়া।

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here