#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৯।
‘মোটেও তেমন কিছু না। আমার কেবল চিন্তা হচ্ছিল আপনি মা’কে কিছু বলেছেন কিনা। মায়ের সাথে কথা হয়েছে আপনার?’
‘না, এই ব্যাপারে কথা হয়নি। আসলে আমার বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল, মায়েরও তখন শোয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল। তাই আর বলা হয়নি। তবে মা আমাকে একটা কথা বলেছেন, আমার ওয়াইফের নাকি আমার উপর বেশ অভিযোগ, কথাটা কি সত্যি?’
মেহুল ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘জি না, আমার কারোর উপর কোনো অভিযোগ নেই।’
‘মা কি তবে মিথ্যে বলেছেন?’
‘না, ঠিক মিথ্যাও না। মা সন্ধ্যায় কল দিয়েছিলেন। তখন কথার প্রসঙ্গে বলেছিলাম আপনার সাথে আমার কথা হয়নি। তাই হয়তো মা ভেবেছেন আপনি আমাকে সময় দিতে পারছেন না আর তাতে বোধ হয় আমি কষ্ট পাচ্ছি।’
‘আচ্ছা, তো আমি সময় দিতে পারছি না বলে আপনার কষ্ট হচ্ছে না।’
‘না, একদমই না। এখন এসব কথা রাখুন। আগে বলুন, মা’কে সবকিছু কবে বলবেন।’
‘সময় এলে ঠিক বলব।’
‘সময়টা কখন আসবে? শুনুন, আমার ভার্সিটিতে সামনে একটা প্রোগ্রাম আছে। আমি কিন্তু তখন গান গাইব।’
‘কবে প্রোগ্রাম?’
‘সামনের মাসের পনেরো তারিখ।’
‘ঠিক আছে।’
‘গান গাইব?’
‘জি।’
‘আপনার মা শুনলে রাগ করবেন না?’
‘ভার্সিটির প্রোগ্রামে গান গাওয়ার অনুমতি আমি দিয়ে দিয়েছি। চিন্তা করবেন না।’
‘আর যদি বাইরে গান গাইতে চাই?’
‘সেটা আপাতত হবে না।’
‘কেন?’
‘কারণ, মা এখনও অনুমতি দেননি তাই।’
‘সেটার অনুমতিও আপনি নিয়ে নিবেন। আপনি বুঝি আপনার ওয়াইফের জন্য এইটুকুও করতে পারবেন না?’
মেহুল তাকে পটাতে আহ্লাদ নিয়ে বলে। রাবীর মৃদু হাসে। বলে,
‘প্রয়োজন পড়লে আমি আমার ওয়াইফের জন্য জানও দিতে পারব।’
‘থাক থাক, জান দিতে হবে না। শুধু গান গাওয়ার অনুমতি দিলেই চলবে।’
‘ঠিক আছে। আমি মায়ের সাথে কথা বলব। এখন ঘুমিয়ে পড়ুন। আল্লাহ হাফেজ।’
‘আচ্ছা। আল্লাহ হাফেজ।’
মেহুলের এই প্রথম রাবীরের সাথে কথা বলে এত ভালো লাগছে। ইশ, লোকটা কত সাপোর্টিভ। রাবীর যদি সবসময় এভাবেই তার পাশে থাকে তবে সে সব প্রতিকূলতা অনায়াসে পার করতে পারবে।
________
সকাল দশটা,
চলতি গাড়িতে হঠাৎ ব্রেক পড়ল। রাবীর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘কী হলো, ড্রাইভার? হঠাৎ ব্রেক করলে যে?’
‘স্যার, সামনে হুট করে এই গাড়িটা চলে এসেছে।’
রাবীর তার পি . এ’র দিকে চেয়ে বলল,
‘যাও তো, গিয়ে দেখে এসো এটা কার গাড়ি?’
পি . এ গাড়ি থেকে নেমে সামনের গাড়িটার কাছে যেতেই সেই গাড়ির দরজা খুলে একজন লোক বেরিয়ে এলেন। যাকে দেখে পি . এর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল। লোকটা তাকে হেসে বলল,
‘কী ব্যাপার, তোমার স্যার বেরুচ্ছে না কেন? ভয় পাচ্ছে নাকি?’
পি. এ শক্ত গলায় বলল,
‘আমার স্যার কাউকে ভয় পান না।’
‘তাহলে যাও, গিয়ে তাকে আমার সামনে আসতে বলো।’
পি . এ রাবীরের গাড়ির কাছে গিয়ে বলল,
‘স্যার, এটা সাদরাজ আহমেদের গাড়ি। আপনাকে দেখা করতে বলছেন।’
রাবীরের মেজাজ বিগড়ে যায়। রাগে কটমট করে বলে,
‘ও কেন এখানে এসেছে?’
‘জানি না, স্যার। উনি আপনাকে ডাকছেন।’
রাবীর গাড়ি থেকে নেমে সাদরাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সাদরাজ তাকে দেখে হেসে বলে,
‘আরে, রাবীর খান… কেমন আছেন?’
রাবীর বাঁকা হেসে বলে,
‘আপনার দোয়ায় একদম সুস্থ আছি।’
সাদরাজ দাঁত কেলিয়ে হাসে। বিদ্রুপের সুরে বলে,
‘আমার দোয়ায় কেউ আবার ভালো থাকতে পারে? কথাটা বেশ হাস্যকর। যাকগে সেসব কথা, এখন আগে আসল কথায় আসি। তা আমার ভাবির কী খবর? ভাবিকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে কবে আসবেন?’
‘পরের বছর ইলেকশনে আবার জয়ী হয়ে এক প্যাকেট মিষ্টি সাথে আপনার ভাবিকে নিয়ে আপনার বাড়িতে ঘুরে আসব। দেখবেন, আপ্যায়নে যেন কোনো কমতি না হয়।’
সাদরাজ হাসে। তার হাসিতে প্রচন্ড ক্ষোভ উপচে পড়ছে। সে বলল,
‘পরের বছর ইলেকশনে কী হয়, সেটা আগেই কী করে বলবেন বলুন? মানুষের বাঁচা মরার কথা তো আর বলা যায় না। হতেও তো পারে, পরের বছর ইলেকশনের আগেই আপনি মারা গেলেন। তখন?’
রাবীর শব্দ করে হাসে। বলে,
‘হ্যাঁ, তা তো হতেই পারে। আবার এমনও হতে পারে পরের বছর ইলেকশন আসার আগে আপনি সহ আপনার পুরো পরিবার উধাও হয়ে গেলেন। তাহলে কেমন হয় বলুন তো?’
সাদরাজের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘নতুন নতুন বিয়ে করেছো, আমি চাইনা তোমার বউ এত তাড়াতাড়িই বিধবা হোক। তাই আমার সাথে লাগতে এসো না, রাবীর খান। নিজের কথা না ভাবলেও, তোমার নতুন বউয়ের কথাটা একটু ভেবো।’
রাবীর সাদরাজের কাঁধে হাত রাখল। শক্ত গলায় বলল,
‘আমার বউয়ের কথা তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি তোমার নিজের কথা ভাবো। আর তাতেই তোমার মঙ্গল।’
রাবীর তারপর চোখ রাঙিয়ে সাদরাজের দিকে একবার চেয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসে। তারপর ড্রাইভারকে বলে গাড়ি স্টার্ট দিতে। রাবীরের চলন্ত গাড়ির দিকে চেয়ে সাদরাজ মনে মনে বলে,
‘শুনেছি, তোর বউ নাকি আবার ভীষণ সুন্দরী। এমনিতেও তোর সব জিনিসের উপর আমার নজর থাকে। এত সুন্দরী বউ, একটু লুকিয়ে লুকিয়ে রাখিস। বলা তো যায় না, কখন আবার তোর বউয়ের উপরেই আমার নজর পড়ে যায়।’
কথাটা নিজ মনে ভেবেই কুৎসিত ভাবে হাসে সে। তারপর গাড়িতে বসে সেও নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
________
‘আমার না ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না। চল পার্কে যাই।’
‘সামনে এক্সাম, রিতা। এখন ক্লাস মিস করলে পরীক্ষার আগে কোনো নোট পাবি না।’
‘আরে একদিনই তো, চল না।’
‘না।’
‘তুই না গেলে কিন্তু আমি একাই যাব।’
‘উফফ, তোর জ্বালায় আমি বাঁচি না। ঠিক আছে, যা বের হো।’
রিতা খুশি হয়ে লাফাতে লাফাতে ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়। মেহুলও বাধ্য হয়ে তার পেছন পেছন বের হয়।
ভার্সিটির গেইটের বাইরে যেতেই মেহুল দেখল রাবীরের গাড়ি। মেহুল এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল। আশেপাশে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখল, রাবীর আছে কিনা। রিতা তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,
‘কী হয়েছে, চল।’
‘ঐ দেখ, নেতা সাহেবের গাড়ি। ভদ্র লোক কি এখানেই আছেন?’
‘কী জানি।’
‘আচ্ছা, আমি এখানে দাঁড়ায়। তুই গিয়ে একবার দেখে আয়।’
রিতা আস্তে আস্তে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ভেতরে চেয়ে খেয়াল করে দেখল ড্রাইভারের সিটে একজন লোক বসে আছে। আর কেউ নেই। রিতা মেহুলের কাছে আবার ফিরে এসে বলল,
‘গাড়িতে কেবল ড্রাইভার আছেন। আর কেউ নেই।’
‘ঠিক আছে, চল তাহলে; আজ একটু গাড়িতেই ঘুরে আসি।’
তারপর দুজন গিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। মেহুল ড্রাইভারকে বলল,
‘মামা, আমাদের সামনের পার্কটাতে নিয়ে যান।’
ড্রাইভার ও তাই করল। তাদের নিয়ে সামনের পার্কে গেল। মেহুল আর রিতা পার্কের ভেতরে গিয়ে এক কোণে বসল। মেহুল ত্রিশ টাকার বাদাম কিনে আনে। দুজনে বসে বাদাম খাচ্ছে আর গল্প করছে। তাদের গল্পের মাঝেই একজন লোক এসে তাদের সামনে হাজির হয়। মেহুল আর রিতা দুজনে চমকে যায়। দুজনেই লোকটার দিকে তাকায়। মেহুল জিজ্ঞেস করে,
‘কে আপনি?’
‘নিন।’
লোকটা মেহুলের দিকে একটি হলুদ রঙের কাগজ এগিয়ে দিল। মেহুল চিন্তায় পড়ে গেল, কাগজটা নিবে কী নিবে না। লোকটা কাগজ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েই আছে। মেহুল কাগজটা হাতে নেয়। পুনরায় প্রশ্ন করার আগেই লোকটা দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। রিতা অবাক হয়ে বলে,
‘কী আছে কাগজে, খুলে দেখ তো।’
মেহুল দ্বিধা মন নিয়ে কাগজটা খুলল। দেখল, তাতে কিছু লেখা। মেহুল পড়ল সেটা। লেখা ছিল,
‘হয়তো আপনাকে দেখার জন্যই সৃষ্টিকর্তা আমাকে দৃষ্টিশক্তি দিয়েছিলেন।’
মেহুল লেখাটা পড়ে আরো দ্বিধায় পড়ে যায়। এটা কে দিল? লোকটা তো হাওয়া হয়ে গিয়েছে। সে এখন বুঝবে কী করে এটা কে দিয়েছে। রিতা বলে,
‘আমার মনে হয় এটা ভাইয়া দিয়েছেন।’
‘কিন্তু, উনি এখানে কী করে আসবেন?’
‘আরে বাবা, উনি আসতে পারবেন না তো কী হয়েছে। উনার ড্রাইভার আছেন না। হয়তো উনার মাধ্যমেই এটা পাঠিয়েছেন।’
‘উনার কি আর কোনো কাজ কাম নেই? কীসব টিনেজদের মতো কার্যকলাপ করছেন।’
রিতা হেসে বলল,
‘ধুর, তুই তো দেখছি প্রেম ও বুঝিস না। ভাইয়া তোর সাথে প্রেম করার চেষ্টা করছেন। তুই বুঝছিস না কেন, গাধী।’
‘উমম, এত সহজেই? উঁহু, আমার মন পাওয়া এত সহজ না। এসব চিরকুটে প্রেম দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। আমার প্রেম পেতে হলে আরো অনেক খাটতে হবে।’
‘হ্যাঁ, দেখবি ভাইয়া সব করতে পারবে।’
‘তা তো সময় এলেই দেখা যাবে।’
চলবে …
(নেতা সাহেব কি সত্যিই চিরকুট দিয়ে প্রেমের আহ্বান জানাচ্ছেন? কী মনে হয় আপনাদের?)