#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব আঠারো
১৮.
ফায়াদ এবং তার পরিবার চলে গেল বেশ কিছুক্ষন হলো।অপরাজিতা এখনো শাড়ি পরে সোফায় বসে আছে।বসে একা একাই মুচকি মুচকি হাসছে সে। আসিফ ইসলাম এসে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন।রামিসা ইসলামও এসে সামনের সোফায় বসলেন। আপাতত তার কাজ বাবা মেয়ের কান্ড দেখা।
আসিফ ইসলাম মোলায়েম কন্ঠে বললেন,
‘আমার মা টা দেখতে দেখতে কতো বড় হয়ে গেলো। তার জন্য বিয়ের সম্বন্ধও আসছে। আম্মাজানের তার ছেলেটাকে রেখে চলে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে বুঝি!’
এতোক্ষণ খুশিতে নাচতে থাকা মনটা হুট করেই ধক করে উঠলো। অপরাজিতা বাবার দিকে তাকালো। বাবা তার দিকে খুব নরম চোখে তাকিয়ে আছেন। আসলেই তো! বিয়ে হলে বাবাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। ছেড়ে যেতে হবে মায়ের আচল। এতো বছর নিজের বাড়ি দাবী করা বাড়িটাও ছেড়ে যেতে হবে। এভাবে তো ভেবে দেখে নি। ভালোবাসাকে পাওয়ার আনন্দে সে ভুলেই বসেছিল যে কিছু পেতে হলে কিছু ছেড়ে দিতে হয়। চোখ টা টলমল করে উঠলো অপরাজিতার। ইশ বাবা তাকে ইমোশনাল করে দিল।
মাথা টা নিচু করে ফেলল সে।
আসিফ ইসলাম অপরাজিতার হাত টা নিজের হাতে নিয়ে বললেন,
‘মনে হয় এইতো সেদিন কোলে নিলাম। ডাক্তার এসে আমার হাতে ছোট একটা পুতুল ধরিয়ে দিয়েছিল। বলেছিল আমার মেয়ে হয়েছে৷ আমি বলেছি আমার মেয়ে না, আমার মা হয়েছে। আমার মা আমার কাছে ফিরে আসছে। এই ছোট হাত গুলো যখন ধরতাম আমার কি যে খুশি হতো। মনে হয়েছিল এক মায়ের হাত ধরে হাটা শিখেছি, আর এখন আমার আরেক মা কে হাতে ধরে হাটা শিখাব।আজ আমার মা টা মাশাআল্লাহ অনেক বড় হয়েছে।’
অপরাজিতার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মাথা নিচু করে আছে সে। রামিসা বেগমের চোখ দিয়েও পানি ঝরছে।তার দুষ্ট মেয়েটা কারো বাড়ির বউ হবে। মা মা করে মাথা খাবে না। ওড়না দিয়ে চোখ মুছলেন তিনি। আসিফ ইসলাম কাদছেন না৷ হাসি মুখে কথা গুলো বলছেন। কিন্তু তার কণ্ঠ কাপছে।
মেয়ের মাথা টা উচু করে বললেন,
‘আমার সামনে মাথা নিচু করবা না আম্মা।আমি তোমাকে মাথা উচু করে বাচতে শিখিয়েছি আমার সামনে মাথা নিচু করতে নয়। আর কাদছো কেন?’
মেয়ের মুখ নিজেই মুছে দিলেন।তারপর কৌতুক করে বললেন,
‘ইশ কেদে কি অবস্থা। এই ফেস ছেলেপক্ষ দেখলে ভাববে বিয়ে করার জন্য কান্না করছো!’
হেসে দিল অপরাজিতা।মেয়েকে হাসিয়ে আসিফ ইসলামের মনটা যেন জুড়িয়ে গেল৷
তারপর তিনি বললেন,
‘ফায়াদ ছেলেটাকে আমার খুব পছন্দ। আর পরিবারটা আমার জানাশোনা। ফারদিন ভাই খুব ভালো মানুষ।ছেলে হিসেবে ফায়াদকে আমার কাছে চমৎকার লাগে। এখন তুমি বলো তোমার কোনো পছন্দ আছে? তোমার মতামত কি? আমি তোমাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়ে আর অঢেল ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি।কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না।’
অপরাজিতা কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তারপর নিচু স্বরে বলল,
‘আমার আর কোনো পছন্দ নেই বাবা।তোমার এখানে ভালো লাগলে এখানেই দেখো।’
আসিফ ইসলাম বললেন,
‘চাপ নিবা না আম্মা। তুমি বললে আমি বাদ দিয়ে দিব। তোমার থেকে দামী আমার কিছু নেই। ‘
অপরাজিতা তাড়াহুড়ো করে বলল,
‘না না বাবা।এখানেই এখানেই৷ উনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।’
বলার সাথে সাথে মুখে হাত দিয়ে ফেলল।বাবার সামনে এভাবে নির্লজ্জের মতো কিভাবে বলে ফেলল। এখন বাবা কি ভাববে!
রামিসা বেগম সোফা থেকে উঠে রান্না ঘরে যাওয়ার আগে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘আপনার মেয়ের হাবভাব দেখে লাগছে এখানে ছাড়া সে বিয়ে করবে না।’
আসিফ ইসলাম হেসে ফেললেন৷ কিন্তু অপরাজিতা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মা কি বুঝালো? সে কী জানে এটাই তার পছন্দের ছেলে? ভাবনার মাঝেই বাবার কথায় সম্বিত ফিরলো তার।
‘আচ্ছা রুমে যাও। আমি বাকি কথা তাদের সাথে বলবো। তুমি যেয়ে আরাম করো যাও।’
অপরাজিতা রুমে ফেরত এসেই আগে ফোন হাতে নিল। সেই তখন ফায়াদকে হুমকি দেওয়ার পর তো আর ফোন হাতে নেওয়া হয় নি। ফোনের লক খুলতেই ফায়াদের ম্যাসেজ সামনে আসলো তার। ম্যাসেজ দেখে এবার বুঝলো আসলে হয়েছে কি। ব্যাপার টা বুঝতে পেরে জোরে হেসে দিল সে।
তার হাসির শব্দ শুনে রামিসা বেগম আসলেন রুমে। এসেই ধমকে বললেন,
‘কি হইসে? পা’গলের মতো হাসিস কেন?’
মা কে দেখে অনেক কষ্টে হাসি থামালো সে। বলল,
‘কই? হাসি না তো!’
বলতে বলতে আবারো হেসে দিল। রামিসা চোখ রাঙানি দিয়ে বললেন,
‘শেষ? আর হাসতে হবে না৷ হাসলে কিন্তু বিয়ে ক্যান্সেল করায় দিব। পা’গলের মতো না হেসে চেঞ্জ কর এসব ‘
বলেই চলে গেলেন। অপরাজিতা হেসেই চলছে।সে জানে মা এমন কিছুই করবে না। কারন ফায়াদকে তার মায়ের সেই হাসপাতালে দেখেই পছন্দ হয়েছিল।নিজের মেয়ের জামাই হিসেবে পেয়ে তিনি মনে মনে খুশিই হবেন।বেশ কিছুক্ষণ হেসে তারপর শান্ত হলো সে।
অপরাজিতা শাড়ির সেফটিপিন খুলতে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো। আয়নাতে নিজেকে দেখেই ছাদের সেই মুহুর্তের কথা মনে পড়লো তার। শাড়ির আচল দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে নিল। তারপর আয়নার নিজের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘হুম, একদম লাগছে প্রেমিক পুরুষের বউ এর মতো।’
টিপের পাতা টা নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিল। আর টিপ পড়বে না সে। এখানে ভালোবাসার অধিকার আদায় করবে। ভেবেই লজ্জা পেয়ে ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল।
—————
ফায়াদ বাসায় পৌছানোর পর পর ই ফোন এলো ফারাজের। ফোন কানে দিতেই ওপাশ থেকে চিল্লানি ভেসে আসলো,
‘কিরেএএ আজ নাকি মেয়ে দেখতে গিয়েছিস ভাই। আমি দেখবো না পুচকি ভাবি?’
ফায়াদ ফোনটা কান থেকে সরিয়ে ফেলল।তারপর আবার কানে দিয়ে বলল,
‘মায়ের সাথে কথা বলেছিস নিশ্চয়ই’
ফারাজ হেসে বলল,
‘তা নয় তো কি? আর কার কাছ থেকে খবর নিব। রাফিয়া তো নেই যে সে আমাকে নিজে থেকে খবর পাঠাবে।’
ফায়াদ দুঃখী ভাব করে বলল,
‘রাফিয়া আমাকে পাগল করে ফেলবে যখন জানবে আমার বিয়ে কার সাথে হবে। মেয়েটা আমাকে পেরেশান করার একটা চান্স ও ছাড়ে না।’
ফারাজ হাসছে। হেসে কৌতুক করে বলল,
‘মা তোর বিয়ের সাথে আমাকে আবার বিয়ে দিতে চায়। পুচকি ভাবির ছোট বোন টোন আছে নাকি?’
ফায়াদ আবারো সঠিক করার চেষ্টা করে বলল,
‘তোরা সবাই মিলে কি শুরু করছিস বলতো?পুচকি না।অপরাজিতা অপরাজিতা।’
‘একই একই’
ফারাজ কথা বলার মাঝেই নীতি এসে বলল,
‘স্যার আপনি যে বললেম কাল বাং—‘
নীতির কথা শেষ হওয়ার আগেই ফারাজ নীতি কে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলল।ফোনের দিকে ইশারা করে বুঝালো যে ফায়াদ ফোন করেছে। নীতি সাথে সাথে চুপ করে গেল। কারন তারা কাউকে না জানিয়ে যাচ্ছে। সারপ্রাইজ দিবে তাই।
ফায়াদ নীতির গলা শুনেই বলল,
‘ওটা নীতি ছিল না?বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলছিল!’
‘হ্যা হ্যা নীতিই।বাংলাদেশ না, সে বাংলো বলতে চেয়েছিল।’
‘ওহ আচ্ছা।আছে কাছে? দে কথা বলি।’
ফারাজ তাড়াতাড়ি বলল,
‘নেই।চলে গেছে।’
তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিল। নীতি সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু নীতিকে ফারাজ কথা বলতে দেয় নি কারন নীতি এক্সাইটেড থাকলে কথা চেপে রাখতে পারে না। নীতি জানে
ফারাজ এবং ফায়াদ যে জমজ ভাই। সে এক্সিডেন্ট থেকে সুস্থ হওয়ার পর থেকে ডিপ্রেশনে ভুগেছিল বেশ কিছুদিন।তখন সাহায্যের জন্য ফারাজ ফায়াদকে কল করে বলেছিল সাহায্য করতে কারন ফায়াদ বুঝদার বেশি। ফায়াদ নীতিকে ফোনে উৎসাহিত করতো জীবন নিয়ে। জীবনের ভালো দিক গুলো ধরিয়ে দিত। বলেছিল তাকে বড় ভাই ভাবতে এবং তার কথা মানতে। এভাবে সে ফায়াদকে চিনে এবং খুব সম্মান করে।
ফোন রাখার পর ফারাজ নীতিকে বলল,
‘বাংলাদেশ যাওয়ার পর একটা বিয়ে খেতে পারবেন।’
নীতি খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,
‘ফায়াদ ভাইয়ার? ওয়াও!’
ফারাজ চেয়ার থেকে উঠে নীতির সামনে এসে টেবিলে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বলল,
‘ফায়াদকে ভাইয়া বলেন। আবার তুমি করে সম্বোধন করেন। ফায়াদের থেকে তো আমি বেশি পরিচিত আপনার।’
নীতি জ্ঞানীদের মতো করে বলল,
‘আপনি তো বস।আপনাকে তো তুমি সম্বোধন করা যাবে না।’
ফারাজ টেবিল থেকে কফি নিয়ে খাচ্ছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। নীতির কথা শুনে বলল,
‘তা না বললেন।তবে অফিসের বাহিরে স্যার ডাকাটা তো এভয়েড করতে পারেন।’
নীতি ভ্রু কুচকে বলল,
‘তো কি ডাকবো?’
‘ফায়াদের মতো ভাইয়া বলেই ডাকতে পারেন।’
নীতি সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে বলল,’ একদম না’
নীতির কথা শুনে ফারাজ কফি চুমুক দিতে দিতে বলল,
‘কেনো?’
নীতি এদিক ওদিক তাকিয়ে গলার স্বর কিছুটা নিচু করে বলল,
‘আপনাকে আমার কাছে ভাইয়া ভাইয়া লাগে না।’
কথাটা শুনে ফারাজ বিষম খেয়ে গেল। ভাইয়া ভাইয়া লাগে না মানে? এইটা আবার কেমন কথা?সে কিছু বলতে নিবে তার আগেই নীতি বলল,
‘স্যার আমার অনেক কিছু গোছানো বাকি। আমি বাসায় গেলাম।’
বলেই সে দৌড় দিল।ফারাজ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। নীতি না বলেছিল তার সব গোছানো শেষ! যেতে যেতে দরজায় ধুম করে একটা বারি খেল। তা দেখে ফারাজ বলল,
‘আরে আস্তে ব্যাথা পেয়েছেন তো!’
নীতি পিছনে না ঘুরেই যেতে যেতে জোরে করে বলল,
‘পাই নি পাই নি।’
নীতি নিজেকে বকছে মনে মনে। পেটের কথা এভাবে হুট করে মুখে বলে ফেলবে সে ভাবতেও পারে নি। এখন যদি এটা নিয়ে তাকে জেরা করে? সে ভাবলো,
‘ধুর এতো টেনশন ভালো লাগে না। কিছু বললে মামা চাচা নানা ডেকে দিব। তাও ভাইয়া ডাকবো না। উনি আমার কোন জন্মের ভাই?’
————–
আজ রাতে ঘুমানোর সময় রামিসা এসে আবিরকে নিয়ে গেলেন।
‘ওকে কোথায় নাও?’
রামিসা বেগম বললেন,
‘ ঘুমাতে নিয়ে যাচ্ছি। রাতে বারান্দায় যাবি না।’
বলে আবিরকে নিয়ে চলে গেলেন তিনি। অপরাজিতা হা করব তাকিয়ে রইলো। মা কি তাকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে গেলো?আরে বাহ!
দেড়ি না করে ভিডিও কল দিল সে ফায়াদকে। ফায়াদ মাত্রই শুয়েছে। কল রিসিভ করেই বলল,
‘কি ব্যাপার আবির নেই আজ?’
কিন্তু অপরাজিতার তো মুখে কথা নেই। সে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে ফায়াদের দিকে। মনে হচ্ছে জীবনে দেখে নি। ফায়াদ অপরাজিতার এমন দৃষ্টি দেখে বলল,
‘কি হলো?’
অপরাজিতা নিজেকে সামলে বলল
‘আপনার জা জামা কই?’
ফায়াদ এবার স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘ঘুমানোর সময় নিশ্চয়ই শার্ট পড়ে ঘুমাবো না।’
অপরাজিতা অন্যদিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বলল,
‘ওহ স্যরি এভাবে দেখি নি কখনো তাই একটু’
অপরাজিতা যেই বুকে আজ মাথা রেখেছিল তা এভাবে খোলা অবস্থায় দেখে সেই বুকেই আবার লুটিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে তার।এটা তো আর বলা যায় না।নিজের খেয়ালে নিজেই লজ্জিত সে। তাই অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ফায়াদ অপরাজিতার ভাব বুঝতে পেরে পাতলা টিশার্ট জড়িয়ে নিল গায়ে। তারপর বলল,
‘তাকাও!’
অপরাজিতা প্রথমে আড়চোখে তাকালো। যখন দেখলো ফায়াদ টিশার্ট পড়েছে তখন পুরোপুরি তাকিয়ে ধরে রাখা নিশ্বাস টা ছেড়ে দিল৷ অপরাজিতা কান্ড দেখে ফায়াদ মিটমিট করে হাসছে। হাসি লক্ষ্য করতেই সে প্রতিবাদ করে বলে উঠলো,
‘হাসবেন না! আপনার লজ্জা নাই থাকতে পারে। আমার আছে।’
ফায়াদ দুষ্টুমি করে বলল,
‘আচ্ছা? বিয়ের পর যখন আমার খোলা বুকে মাথা রেখে ঘুমাবা তখন লজ্জা কোথায় রাখো দেখবো তো’
অপরাজিতা এক হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলল,
‘এই আপনি রোমান্টিক হলেন কিভাবে?মুভি টুভি দেখেন নাকি?’
‘হুম অপরাজিতা মুভি দেখি। এই মুভিটা আমাকে প্রেম শিখিয়েছে।’
অপরাজিতা লজ্জা পেয়ে বলল,
‘হায় আল্লাহ!’
‘তোমার লেখা পড়ার কি খবর?’
‘আবার লেখা পড়া কই থেকে আসলো?’
ফায়াদ এবার সিরিয়াস হয়ে তাকালো।ফায়াদের দৃষ্টি পরিবর্তন দেখে অপরাজিতা আমতা আমতা করে বলল,
‘ভা ভালো খখবর।’
‘কিছুদিন ধরে পড়তে বসছো না তুমি আমি জানি। এসব আমার পছন্দ না। ভালোবাসায় গা ভাসিয়ে বসে থাকবা না। আমি তো হারিয়ে যাবো না।’
অপরাজিতা নিচু করে অভিযোগ এর সুরে বলল,
‘এমন করেন কেন? ২/৩ দিনই তো।’
ফায়াদ শান্ত গম্ভির আওয়াজে বলল,
‘ভার্সিটি তে যখন চান্স না পাবা তখন তোমার খবর আছে!’
এই স্বর শুনলে অপরাজিতা আর কিছু বলতে পারে না।কিছুটা অভিমান নিয়েই বলল,
‘বসছি পড়তে’
বলেই ফোন কেটে দিল। কিভাবে হুমকি দিল! তার নাকি খবর আছে। দিবে না ফোন! পড়বে সারাক্ষণ পড়বে।টেবিলে গিয়ে স্টিকি নোট লিখলো,
‘দেখিয়ে দিব ডাক্তারকে।হুহ!’
ফোন কান থেকে নামিয়ে ফায়াদ মুচকি হাসলো।এটা দরকার ছিল। কারন ফায়াদের সায় পেয়ে অপরাজিতা অনুভূতিতেই হারিয়ে যাচ্ছিল। তাই বাস্তবতায় নিয়ে আসলো তাকে। অপরাজিতার বাবা ফোন দিয়েছিল ফারদিন আহমেদ কে। তিনি তার মেয়েকে ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার পর বিয়ে দিবেন। আপাতত আংটি বদল করিয়ে রাখার কথা বলেছে ফারদিন আহমেদ।তারা রাজি হয়েছে। অপরাজিতার বাবা তার মেয়েকে অনেক ভালোবাসেন। তিনি চান তার মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হোক। ফায়াদ সে পথে বাধা হবে না। বাবার মেয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করুক।
ফোনটা পাশে রেখে বালিশে মাথা এলিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিতে দিতে বিরবির করে বলল,
‘ ভালোবাসি ভালোবাসি’
কথাটা যাকে উদ্দেশ্য করে বলা সে শুনলো না। শুনলো শুধু সেই আবছা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা চারটি নিস্তব্ধ দেওয়াল।
(চলবে)