_লাল_নীল_সংসার_ #_মারিয়া_রশিদ_ #_পর্ব_১৬_

0
326

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_১৬_

ছোয়া মাত্র বাস থেকে নেমেছে। দিনকাল তার একদমই ভালো যাচ্ছে নাহ। সব সময় শিশিরকে মনে পড়ে। সেই রাতের পর আর শিশির দেখা তো দুরের কথা একটা কলও দেয় নি। তাহলে,, শিশিরও কি তার অতীত জেনে ভয় পেয়ে চলে গেলো,, তাকে ছেড়ে? শিশির নাকি তাকে ভালোবাসে,, এই তার ভালোবাসা? আসলেই,, এ কেমন জীবন ছোয়ার? তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় ছোয়া।

এইসব ভাবতে হাঁটছে ছোয়া। চারিদিকে ব্যাস্ত সব লোকজন। এতো মানুষ তার পাশে চলাচল করছে তাও এক শূন্যতা তাকে ঘিরে ধরে আছে। মনে হচ্ছে,, এক বিশাল মাঠের প্রান্তরে সে একা। একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় ছোয়া।

ছোয়া হাটতে হাটতে হঠাৎ সামনে কারো অস্তিত্ব পেয়ে কিছুটাহ চমকে উঠে সে। আস্তে আস্তে সামনে তাকাতেই যাকে দেখে তাকে দেখে মন টাহ শান্তি পেলেও,, একদমই এখানে আশা করে নি।

শিশির,, ছোয়ার সামনে শিশির দাঁড়িয়ে আছে। ছোয়ার চোখ ছলছল করে উঠে। ছোয়া কিছু বলতে পারছে নাহ। কান্না যেন দলা পাকিয়ে আসছে। শিশির কোনো কথা নাহ বলে ছোয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। ছোয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। কিন্তু,, তাও কোনো কথা নাহ বলে,, শিশিরের সাথে চুপচাপ যাচ্ছে।

একটু দুর আসতেই শিশির থেমে যায়। ছেড়ে দেয় ছোয়ার হাত। ছোয়া চারপাশে তাকিয়ে দেখে একটা ফাকা জায়গা। পাশেই একটা লেক। লেকের অপর পাশে অনেক মানুষজন আছে,, কিন্তু এই পাশে একদম ফাঁকা,, কেউ নেই। লেক টাহ বেশ বড়।

শিশির ছোয়ার থেকে কিছুটাহ দুরে দাঁড়িয়ে লেকের উল্টো পাশের লোকজন দেখছে। ছোয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ছোয়া নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ছোয়া নিজেকে কোনো রকম ভাবে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?”

শিশির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছোয়ার সামনে এসে দাড়ায়। ছোয়ার মুখ অশ্রুতে ভরে আছে। শিশির আরও একটু এগিয়ে আসে। শিশির এতো কাছে আসায় কিছুটাহ কেঁপে উঠে ছোয়া। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে সে। শিশির ছোয়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে ছোয়ার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। ছোয়া কেঁপে উঠে,, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে শিশিরের দিকে। শিশিরের এই ছোট্ট চুমু যেন ছোয়ার শরীরকে ঠান্ডা করে দিয়েছে। এক অদ্ভুত অনুভুতি তাকে ঘিরে ধরেছে। মনে হচ্ছে,, দুনিয়ার সব শান্তি এসে জড়ো হয়ে পড়েছে তার কাছে। শিশির ছোয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি ভেবেছিলে,, আমি তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি? তোমার অতীত শুনে পালিয়ে গেছি আমি?”

ছোয়া ছলছল চোখ নিয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে। শিশির আবার বলে ওঠে,
–” ছোয়া! আমি জানি,, তোমার অতীত টাহ খুব ভয়ংকর। অনেক কষ্টের। তোমার ছোট্ট জীবনে সব থেকে কষ্টকর মুহুর্ত,, ছোট্ট বয়সে অধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছো। কিন্তু,, তুমি যে ধারনা নিয়ে আছো এইটা তো সম্পুর্ন কুসংস্কার। গ্রামের যারা অশিক্ষিত,, তাদের মুখে মানায়। তোমার মতো একজন শিক্ষিত মেয়ের মুখে মানায় নাহ ছোয়া! একবার তোমার স্বামী মারা গেছে জন্য,, তুমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে একই কাহিনি ঘটবে এইটা একটা মিথ্যা বিশ্বাস। ছোয়া এইটা কি কখনো সম্ভব?”

ছোয়ার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। শিশির ছোয়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” ছোয়া! তোমার মনে একটা ভয় ঢুকে আছে। আর এই ভয়কে তুমি খুটি আকড়ে ধরার মতো আকড়ে ধরে আছো। কেন ছোয়া? একটা অতীতের জন্য নিজেকে গুটিয়ে কেন রাখছো? নিজের জীবনকে এরকম ভাবে শেষ করে দিচ্ছো কেন? ছোয়া! যখন তোমার সাথে ঐ ঘটনা ঘটেছিলো তখন,, তোমার জীবনের কিছুই শুরু হয় নি। ইনফ্যাক্ট ধরতে গেলে,, তোমার সম্পূর্ন জীবন এখনও পড়ে আছে। আর তুমি,, সেই মূল্যবান জীবনকে এইভাবে নষ্ট করছো,, কেন?”

ছোয়া চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই শিশির ছোয়ার হাত ধরে ফেলে। ছোয়া থেমে যায়। শিশির ছোয়ার হাত ধরে টান দিতেই ছোয়া শিশিরের একদম কাছে চলে আসে। ছোয়া শিশিরের এতো কাছে এসে যেন কাঁপতে থাকে। শিশির ছোয়ার দিকে আরও একটু এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” দেখো, ছোয়া! আমি সোজা একটা কথা বলছি,, তোমার অতীতে কি হয়েছিলো,, তার প্রভাব আমার উপর কেমন পড়বে,, আমার কিছুই জানার দরকার নেই। আমি শুধু এইটুকুই জানি,, তুমি শুধু আমার হবে। ছোয়াকে শিশিরের হতেই হবে। তুমি অন্য সবার কাছে বিষকন্যা হতে পারো,, কিন্তু আমার কাছে তুমি মায়াবী কন্যা। যার মায়ায় আমি জড়িয়ে গেছি। যার ভাবনা ছাড়া আমার এক মিনিটও ভালো যায় নাহ।”

ছোয়া শিশিরের কাছের থেকে একটু সরে আসে। শক্ত গলায় বলে ওঠে,
–” আপনি যায়ই বলুন নাহ কেন,, আমি আপানকে বিয়ে করবো নাহ। সম্ভব নাহ আমার দ্বারা।”

শিশির যেদি কন্ঠে বলে ওঠে,
–” তুমি যাই বলো নাহ কেন ছোয়া,, আমি তোমার অনুমতির অপেক্ষা রাখছি নাহ। আমার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। অপেক্ষা করো,, আসছি তোমাকে নিজের করে নিতে,, তোমাকে বিয়ে করতে। আসছি আমি খুব শিঘ্রই,, তোমাকে ছোয়া এহমাদ থেকে ছোয়া শিশির রহমান বানাতে। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

ছোয়া শিশিরের দিকে থম ধরে তাকিয়ে আছে। আজ শিশিরের এই গম্ভীর কন্ঠ যেন তাকে কাঁপিয়ে তুলছে। কিছু বলার শক্তি পাচ্ছে নাহ সে। শিশির এগিয়ে এসে ছোয়ার হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে। ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে। শিশির একবারের জন্যও ছোয়ার দিকে তাকাচ্ছে নাহ। ছোয়া শিশিরের দিক থেকে একবারও চোখ সরায় নাহ। শিশির একটা রিকশা ঠিক করে ছোয়ার দিকে তাকায়। ছোয়া এখনো শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে। শিশির আবার অন্য দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” রিকশায় উঠো।”

শিশিরের কথায় ধ্যান ভাঙে ছোয়ার। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ওরা মেইন রোডে। এতো সময় টেরই পায় নি ছোয়া। এখন টের পেতেই নিজেই নিজের কাছে অবাক হয়ে যায় ছোয়া। এতো সময় শিশিরকে দেখছিলো সে,, কেমন যেন একটা ঘোরের মাঝে ছিলো,, এতোটাই ঘোরের মাঝে ছিলো যে কখন মেইন রাস্তায় এসেছে টেরই পেলো নাহ। শিশির আবার বলে ওঠে,
–” অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে,, রিকশাও অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে,, উঠো।”

শিশিরের কথা শুনে ছোয়ার ভাবনা কেটে যায়। শিশিরের দিকে একপলক তাকিয়ে রিকশায় উঠে বসে ছোয়া। শিশির মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে রিকশাওয়ালা কে দিয়ে বলে ওঠে,
–” মামা! যেখানে বললাম সাবধানে পৌঁছে দিয়েন।”

তারপর ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আল্লাহ হাফিজ!”

রিকশা চলতে শুরু করে। ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ছোয়ার রিকশা দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলে, শিশির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,, তারপর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।


সাঝ আদনানের রুমে এসেছে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে আদনান নেই। কিন্তু মা যে বললো, দাভাই বাসায়,, তাহলে কোথায়? তারপর বাথরুম থেকে পানির আওয়াজ পেতেই সাঝ বুঝে যায় আদনান বাথরুমে। এতো রাতে গোসল করছে কেন দাভাই? সাঝ আদনানের রুমে এসে বিছানার উপর বসে,, আদনানের একটা বই টেনে নিয়ে চোখ বুলাতে থাকে।

এমন সময় টেবিলের উপর আদনানের ফোন বেজে উঠতেই সাঝ এগিয়ে যায়। ফোন হাতে নিতেই দেখে ” বার্বিডল ” নামে সেভ করা একটা নাম্বার থেকে কল আসছে। সাঝ কিছুটাহ অবাক হয়ে যায়। একবার বাথরুমের দিকে তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকায়।

কল কেটে যায়। আবার কিছু সময় পর কল আসে। সাঝের একটু কৌতুহল জাগে,, বার্বিডল লেখা ব্যাক্তি টাহ আসলে কে? কল রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে একটি মিষ্টি মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে। ফোনের ওপাশ থেকে বলে ওঠে,
–” আদনান! কালকের জন্য একটা ধামাকা প্লান আছে।”

সাঝ কিছুটাহ অপ্রস্তুত হয়ে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম!”

সাঝের কন্ঠ শুনে ফোন কলের এইপাশে স্নেহা কিছুটাহ ভেবাচেকা খেয়ে যায়। স্নেহা আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম! আপনি কে? আর আদনান কোথায়?”

–” আমি সাঝ!……”

সাঝ আর কিছু বলার আগেই স্নেহা আনন্দিত গলায় বলে ওঠে,
–” তুমিই সাঝ? ওয়াও! আদনানের বোন, রাইট?”

–” জি!!”

–” তোমার সাথে আমি অনেকবার দেখা করতে চেয়েছি,, কথাও বলতে চেয়েছি,, বদ আদনান কখনো করায় নি। ভালোই হলো,, তুমি কল রিসিভ করলে।”

–” ভাইয়া মেইবি গোসল করে।”

–” সমস্যা নেই। তো আমাকে মনে হয় তুমি চিনো নি। আমি স্নেহা! আদনানের ফ্রেন্ড!”

সাঝ মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” ওহ! কেমন আছেন?”

সাঝ আর স্নেহা দুইজনে কথা বলছে। সাঝের বেশ ভালোই লাগছে,, স্নেহার সাথে কথা বলতে। স্নেহাও অনেক মজা পাচ্ছে,, সাঝের সাথে কথা বলতে। এমন সময় আদনান বাথরুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে। সাঝকে তার নিজের ফোনে কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে থাকে আদনান।

সাঝ কথা বলতে বলতে সামনে তাকিয়ে দেখে আদনান বেরিয়ে এসেছে বাথরুম থেকে। সাঝ ফোন কানে নিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া বের হয়েছে। দিবো?”

স্নেহা হেসে বলে ওঠে,
–” হ্যা! দাও। আর তোমার সাথে কথা বলেও আমার অনেক ভালো লেগেছে। তোমার তো পরশুদিন মেডিকেল এ্যাডমিশন এক্সাম তাই নাহ?”

–” হ্যা!”

–” মন দিয়ে পড়ো। ইনশাআল্লাহ চান্স হয়ে যাবে।”

–” দোয়া করবেন আপু! আল্লাহ হাফিজ!”

–” আল্লাহ হাফিজ!”

সাঝ আদনানের দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” স্নেহা আপু কল করেছে।”

আদনান চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে সাঝের দিকে তাকিয়ে ফোন টাহ হাতে নেয়। সাঝ মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়। আদনান ফোন কানে রেখে বলে ওঠে,
–” হ্যালো!”

–” হেই! তোর থেকে তোর বোন অনেক ভালো বুঝলি?”

–” হ্যা! হয়েছে। কল দিলি কেন?”

স্নেহা একটু ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে,
–” কেন? আমি কি তোকে কল দিতে পারি নাহ?”

–” নাহ মানে,, সব সময় তো ইয়াশের সাথে ব্যাস্ত থাকিস। তাই বললাম।”

–” এমন করে বলছিস কেন তুই?”

–” কেমন করে বললাম?”

–” আচ্ছা! বাদ দে,, শোন,, আগামীকাল ইয়াশের বার্থডে। পার্ক সেন্টারে ওর বার্থডে সেলিব্রেট করা হবে। তোকেও ইনভাইট করেছে। সো,, তুই সন্ধ্যায় চলে আসবি।”

–” সরি! পারবো নাহ। এই বার্থডে ফার্থডে আমরা নিজেরাও করি নাহ। আর কারো বার্থডেতে এটেন্ডও করি নাহ।”

–” এমন করছিস কেন? আই প্লিজ অনেক মজা হবে। আমাদের পুরে ফ্রেন্ডস সার্কেল আসবে।”

–” তো,, আমি কি করবো? যার যার ইচ্ছে হবে সে সে যাবে। আমি যাবো নাহ।”

–” তুই নাহ গেলে কিন্তু আমিও যাবো নাহ।”

–” তাহলে তো আরও ভালো।”

–” কি? আদনান! প্লিজ!”

–” স্নেহা!”

স্নেহা হালকা জোর কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আমি কিছু শুনতে চাই নাহ। তুই আসবি মানে আসবি,, ব্যাস। আর কোনো কথা নাই। রাখলাম।”

–” আরে! শোন,, হ্যালো,, স্নেহা,, হ্যালো!”

আদনান ফোন সামনে এনে দেখে স্নেহা কল কেটে দিছে। আদনানের প্রচন্ড রাগ লাগছে। এই ইয়াশকে একদমই সহ্য করতে পারছে নাহ আদনান। এই কয়েকদিন ধরে ইয়াশ আর স্নেহাকে একসাথে দেখে নিজের রাগ যেন সপ্তমে উঠে রয়েছে। পচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে আছে তার। অসহ্য!!!

#_চলবে…………🌹

{{ ভুল,, ত্রুটি সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি।।। 😇 }}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here