#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_10
সবাই ডাইনিং এসে সকালের খাবার খেয়ে প্রসংশা করে দেয় নীলার নামে। আজগর চৌধুরী বলে আমি যেনো আমার মায়ের হাতের রান্না খেলাম, অনেকদিন পর। নীলা প্রসংশা শুনে মন থেকে ভয় কেটে ফেলে। উষশী বলে নীলা ভাইয়াকে ডাক দিলানা ওকে ছাড়াই খেয়ে উঠলাম। নীলা বলে ও ঘুমুচ্ছে আমি ওর জন্য খাবার উপরে নিয়ে যাচ্ছি। আর্জিনা চৌধুরী বললো হুম তাই ভালো হবে, যাও বউমা। খাবার নিয়ে উপরে যাও। দুজনে খেয়ে নেও।
এরপরে নীলা খাবার নিয়ে নিজের রুমে আসে। এসে দেখছে আকাশ অঘোরে ঘুমাচ্ছে। নীলা বললো সারারাত আমাকে জাগিয়ে রেখে এখন কিভাবে ঘুমাচ্ছে। রাতের কথা মনে করতেই নীলা মুচকি হাসি দেয় ঠোঁট দিয়ে। আকাশের কাছে যেয়ে কানের ধারে ঠোঁট লাগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলছো উঠো আকাশ খেতে হবেনা। আকাশ ঘুমের তালে গরম গরম নিঃশ্বাসের অনুভূতি পেয়ে ছটফট করছে। নীলা তা দেখে আকাশের কানের লতি কামড়ে সুড়সুড়ি দিলো। আকাশ চোখ খুলে দেখে নীলা এরকম করছে।
আকাশ নীলাকে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে নিয়ে বলে আরো আদর চাই। তোমার বলেই নীলার ঠোঁটে কিস করে।
নীলা বলে উফফ ছাড়ো সারারাত দুষ্টুমি করছো। এখন আবারো শুরু করলা। আকাশ বলে তুমিই তো কাছে এসে উত্তেজিত করে দিলা আমাকে।
নীলা খাবার আনছি উঠে খেয়ে নাও। আকাশ বলে তুমি কাছে আসলে আর কোনো খাবার লাগেনা। বলেই নীলাকে নিজের বুক থেকে ছাড়িয়ে বেডে ফেলে দিয়ে আকাশ নীলার উপড়ে উঠলো।
নীলা বলে, উফফ ছাড়ো ৭০ কেজির ভারী লোক আমার উপরে বারবার উঠে। আমি মরে যাবো আকাশ। আকাশ বলে মরবা না বলেই নীলার ঘাড়ে কিস করে।আর মুখে ইচ্ছে তালে কিস করতে থাকে।
নীলা নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে আকাশ ভাবী রুম আসছে উঠো উঠো।
আকাশ নীলাকে ছাড়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দরজার দিকে তাকায়,কাউকে দেখতে না পেয়ে আকাশ বললো এটা কি করলা নীলা রাগী মুখে। 😾
নীলা বিছানা থেকে উঠে, নিজের কাপড় ঠিক করে। বলে এছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না। তোমার হাত থেকে বাঁচার।
আকাশ বলে ও আমি তোমাকে এতটাই কষ্ট দিয়েছি রাতে রাগী মুখে। 😾
নীলা উফফ আকাশ বোঝার চেষ্টা করো খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তর্ক না করে খেতে আসো।
আকাশ মন খারাপ করে ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেস হয়।
নীলা খাবার গুলো রেডি করে।
আকাশ বেসিনে আয়নায় মুখ দেখে দেখতে পেলো। তার গলার নিচে নখের আচড়। এটা দেখে আকাশ রুমে যেয়ে নীলাকে বললো খালি আমি কষ্ট দিছি আর তুমি যে আমাকে নখ দিয়ে আচড় মারছো। তাও তো আমি বলি নাই আমায় কষ্ট দিছো ক্যান?
নীলা বলে চুপ করো তুমি আমার সারা বডিতে এসব আচড় মারছো তাও বলি নাই একবারো আমার লাগছে। আর এগুলা হলো ভালোবাসার রাগ এগুলা বলতে নেই আকাশ বলেই হাত ধরে খাবার খেতে বসালো।
আকাশ দুই প্লেটে খাবার দেখে বললো এক প্লেটে ভাত খেলে খাবার খাবো নাহলে নয়। নীলা মুচকি হাসি দিয়ে এক প্লেটেই তরকারি নিয়ে আকাশ কে বললো হা করো। আকাশ হা করলো, নীলা আকাশকে খেয়ে দিলো। আকাশ নীলাকে খাইয়ে দিলো।
অন্যদিকে হামজা বলে আমি আসছি নীলা তোমাদের চমক দেখাতে জাষ্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
আকাশের বাড়িতে ল্যান্ডলাইন বেজে উঠে। ইমরান যেয়ে ফোন টা ধরে। মেঘ বলে ভাইয়া আমি দেশে ফিরছি আজকে আমার ফ্লাইট ছিলো মাকে বলিয়ো আর আকাশ ভাইয়ার বিয়ে মিস করছি ওদেরকে বলিয়ো আমি আসছি নীলা ভাবির রান্না খেতে। ইমরান বলে তুই দেশে আসলি তাও ফোন করলি না একবারো আজ তোর ফ্লাইট ছিলো। আমি তোকে রিসিভ করতে যেতাম। মেঘ বলে সারপ্রাইজ দিতে চাইছি আর বাড়ি যেয়ে আরো সারপ্রাইজ দিচ্ছি বলেই ফোন কেটে দিলো।
বাড়িতে শোরগোল লেগে গেলো মেঘ আসছে বলে। ইমরান বাড়ির সবাইকে বললো ও নাকি সারপ্রাইজ দিবে বুঝলাম আর কি সারপ্রাইজ দিবে।
বাড়ির সকল লোক বললো ও বাড়িতে ফিরছে এটাইতো সারপ্রাইজ।
মেঘের মা মেয়ের পছন্দ মতো সব খাবার তৈরি করতে কিচেনে গেলো। আর্জিনা চৌধুরী ও হেল্প করতে গেলো।
আর আপনাদের তো বলি নাই মেঘ কে মেঘ হলো ইমরানের বোন। আকাশ,আর ইশানের কাজিন।
আকাশ আর নীলা এই খবর পেলো। আকাশ বলে আসুক তোমার একটা সময় কাটানোর মতো বন্ধু হবে আমি অফিসে যাওয়া শুরু করলে ।
আকাশ আবার দুষ্টুমি শুরু করে নীলার সাথে। আকাশ নীলাকে বলে আজ থেকে তোমাকে আমি নীলা না শুধু বউ আর সুইটহার্ট বলে ডাকবো ঠিক আছে। নীলা বলে ক্যান যে তোমাকে কাল সারপ্রাইজ দিলাম। আগে যদি জানতাম তোমার গায়ে পড়া স্বভাব কখনো বলতাম না তোমাকে ভালোবাসি। আকাশ এবার জড়িয়ে ধরে বলে চলো দুপুরে তো গোসল করতে হবেই আরেক বার নাহয় গোসল করার আগে। নীলা বলে বাচ্চাদের মতো সবসময় বাহানা। আকাশ বলে বউয়ের কাছে তো বাহানা করবেই রাগী মুখে। 😾
নীলা বলে এই দেখো সবসময় রাগ দেখিয়ে ভালোবাসা আদায় করা। আকাশ বলে ভালোবেসে না হলে রাগ দেখিয়েই আদায় করে নিতে হয়।
আকাশ দুহাত দিয়ে নীলাকে ধরে চুমু দিতে থাকে।
এমন সময় বাড়িতে লেগে যায় হট্রগোল। ইমরানের মা ও আফা ও ভাইয়া ও ইমরানের বাপ দেখো তোমাদের মেয়ে কি করেছে। সবাই নিচে এসে মেঘকে দেখে অবাক হয়।
ইমরানের মা অজ্ঞান হয়ে যায়। উষশী আর ইমরান ধরে ধরে নিয়ে যেয়ে সোফায় বসায় এরপরে উষশী চোখে পানি দেয়।
নীলা বলে বাইরে চিল্লাচিল্লি হচ্ছে আকাশ আমায় ছাড়ো আমি নিচে যাবো। আকাশ তখন বলে সবসময় রোমান্স করতে গেলেই ডিস্টার্ব চলো নিচে যাই। দেখি কি হয়েছে? এই বলে নীলা আর আকাশ নিচে আসে।
মেঘকে বধূবেশে দেখে অবাক হয় বাড়ির সকলেই।
মেঘ বলে সবাই খালি অবাক হচ্ছো আমাকে কেউ ভিতরেও যেতে বলছো না কি ব্যাপার স্যাপার।
মেঘের বাবা বললো নিলজ্জ মেয়ে কোথাকার এই সাজে তুমি ক্যান? মেঘ বললো বাবা আমি বিয়ে করেছি। মেঘের রাগ করে নীলাকে চড় মারতে যায়।ইশান তার আঙ্কেলের হাত ধরে বলে আঙ্কেল আগে সবটা শুনি। এরপরে মেঘের বাবা আজগর চৌধুরী কে বলে ভাইয়া কি করবো আমি?
আজগর চৌধুরী বলে মেঘ তুমি যদি বিয়েই করবা তাহলে আমাদের বলতা আমরা ভালো ছেলে দেখে তোমাকে বিয়ে দিতাম। আমাদের বংশে কেউ এরকম করার সাহস পায় নাই কোনোদিন। আর তুমি এভাবে বিয়ে করে আমাদের রীতিনীতির ১২ টা বাজিয়ে দিলে।
মেঘ বলে বড়বাবা আমি এরকম কোনো ছেলেকে বিয়ে করিনাই যে তোমাদের বংশের জন্য সম্মানহানি হয়।
ইমরান বলে ইস্টুপিট কোথাকার বড়বাবার মুখের উপর কথা বলিস!
মেঘ বলে আমার পছন্দ থাকতে পারেনা নাকি ভালোবেসে বিয়ে করা অন্যায়?
আকাশ আর ইশান বলে তো ছেলে কি করে মেঘ?
মেঘের মায়ের জ্ঞান ফিরে পেয়ে দৌড়ে এসে আকাশ কে বলে ওকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও আকাশ।
আর্জিনা চৌধুরী মেঘের মা কে ধরে বলে ছোট চুপ থাক।
মেঘ বলে ভাইয়ারা এইটা ডিজিটাল যুগ আর একটা এডাল্ট মেয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে আমি যদি বিয়ে করে ভূল করে থাকি তাহলে আমি বের হয়ে যাচ্ছি। আমার দায়িত্ব ছিলো তোমাদের বিষয়টা অবগত করা তাই অবগত করে গেলাম। এই বলে পা চালিয়ে বের হতে যাচ্ছে।
এমন সময় আকাশ মেঘের হাত ধরে ঠাঠিয়ে থাপ্পড় মারে। মেঘ বলে ভাইয়া তুমি আমাকে মারলে। ইমরান বলে ঠিক করছিস ভাই ওকে বেড় করে দে আমাদের বোন আজ থেকে মৃত্যু। ইশান বলে তুই বিয়ে করে আমাদের জানাইতে এসেছিস আরে তোকে ছোট থেকে বড় করেছি একটি মাত্র বোন আমাদের।
আমাদের আশা ছিলো না তোকে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেওয়া।
আকাশ বলে বাবা আর আঙ্কেল তোমরা থাকতে আমরা তিন ভাই আর কিছু বলতে পারবো না তোমরা ওর সিদ্ধান্ত নেও। ইশান বলে আজ বড় হয়ে লায়ক হয়ে গেছিস এডাল্ট এডাল্ট বলছিস। আরে একবার বলতি তোর পছন্দ করা ছেলেকে দিয়েই বিয়ে দিতাম।
মেঘের বাবা মা বলে আজ থেকে আমাদের মেয়ে মৃত্যু আমাদের খালি তিনটি ছেলে।
আজগর চৌধুরী বলে স্টপ থামো সবাই এই বলে মেঘের হাত ধরে কাছে নিয়ে এসে বলে কি হয়েছে মা। এমন করলা ক্যান? আমরা কি তোমায় ছোট থেকে ডমিনেট করছি আমরাতো তোমায় ইনডিপেনডেন্স রাইট দিছি। তার প্রতিদান তুমি এইভাবে দিলা আমাদের পরিবারে একমাত্র মেয়ে যে কিনা তার পছন্দ মতো পাত্রকে একাই বিয়ে করে নিছে। একবার খালি মুখ ফুটে বলতা আমরা সবাই তোমাকে আনন্দের সহিত সেই ছেলের সাথে বিয়ে দিতাম।
এইবার মেঘ কান্না করে ফেলে আর বড়বাবাকে জড়িয়ে ধরে মাফ চায় আমি বুঝতে পারি নাই বাবা তোমরা কষ্ট পাবা।
অন্য দিকে মেঘের জামাই গাড়িতে এসব দেখে বলে ড্রামাতো কেবল শুরু আমাকে দেখলে বিগ বাজেটের ড্রামা শুরু হবে বলেই অট্রহাসি দেয়।
মেঘ বলে বড় বাবা, বাবা ও ভাইয়ারা ছোটবেলা থেকে এত আদরের মানুষ হয়েছি যে যখন যা চাইতাম তাই হাতের কাছে তোমরা রেডি করে দিতা। এর জন্য মনে করেছিলাম আমি বিয়ে করলে তোমরা সারপ্রাইজ হবা, কিন্তু এইটা ভাবিনি যে এতটা সারপ্রাইজ হবে। আসলে ছোটবেলা যা চাইতাম তোমরা তাই এনে দিতা এতো ইনডিপেনডেন্স ভাবে মানুষ করেছো আমার মনুষ্যত্বের বুদ্ধি লোপ পেয়েছিলো। আমাকে মাফ করা যায়না বলেই কেঁদে কেদে ফ্লোরে বসে পড়ে।
আজগর চৌধুরী বলে হ্যা মা তুমি একাই কেনো জামাইকে নিয়ে আসো।
মেঘ অবাক হয়ে যায়।
মেঘের বাবা বলে ওকে মাফ কইরো না ভাইয়া।
তখন ইমরান,ইশান,আকাশ একসুরে বলে আমরা আমাদের বোনকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমাদের বোনকে মাফ করা হোক। একমাত্র বোন আমাদের কলিজার টুকরো।
মেঘ দৌড়ে যেয়ে তিন ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে আমি জানতাম আমার ভাইয়েরা তাদের বোনকে মাফ করে দিবে।
আজগর চৌধুরী বলে একমাত্র মেয়ে আমাদের ভূল করেছে। তাকে বুঝানোর যা বুঝাইছি। সবাই ওকে মাফ করে দাও।
মেঘের মা আর্জিনা চৌধুরী কে বলে আফা এই কষ্ট কই রাখবো। আর্জিনা বলে মেয়ে হয় আমাদের মাফ করে দে।
নীলা উষশীকে বলে কেমন ছেলেকে যে বিয়ে করলো বুকটা খুব দুরু দুরু করছে। উষশী বলে আমারো সেইম।
আকাশ বলে আমাদের বোন জামাইকে দেখতে চাই নিয়ে আসো মেঘ।
মেঘ তার স্বামীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে আসে। নীলা খুব অবাক হয়ে যায় আর আকাশকে দৌড়ে যেয়ে ধরে বিমড়ি খেয়ে মেঘের জামাইকে দেখে।
চলবে,,,
[ ভূল ত্রুটি মার্জনীয়। মেঘ এমন কোন ছেলেকে বিয়ে করলো যার জন্য নীলা ভয় পেলো। তা জানতে হলে আমার গল্পের সাথেই থাকুন ]