#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam
ইয়ানূর চোখের পানি মুছতে মুছতে বাস থেকে নামে।যতো মুছার চেষ্টা করছে চোখ দিয়ে ততোই পানি ঝড়ে চলেছে। চোখ দুটো যেনো আজ প্রতিযোগিতা করে চলেছে কতোটুকু পানি ঝড়াতে পারে। হাত দিয়ে না মুছে এবার ওড়নার এক কোণা দিয়ে মুছে চলেছে।
ইসরাত এতো সময় সামনে থেকে বকবক করে এগিয়ে চলেছে। ইয়ানূর যে তার কথার এক টা শব্দ ও কানে নেয় নি সেই দিকে মেয়েটার হুঁশ কোথায়।
এরমধ্যে নাক টানার শব্দে নিজের কথা থামিয়ে ব্রু কোচকে পিছনের দিকে তাকায়। তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। তার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী কেঁদে কেটে নাক,মুখ,চোখ লাল বানিয়ে ফেলেছে।
আল্লাহ নূর তোর কি হয়েছে? ব্যাথা পেয়েছিস? পড়ে যাস নি তো আবার?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
এই ছেমরি কথা বলছিস না কেন?
“আমি ম্যানার্সলেস গার্ল?”
“কোন হা/লায় তোরে এই কথা বলছে? তুই ম্যানার্সলেস হতে যাবি কোন সুখে? থু’রি দুঃখে? যে বলছে সে ম্যানার্স লেস।তার চৌদ্দ গুষ্ঠি ম্যানার্সলেস। হা/লার ঘরের হা,,,, ইয়ানূরের দিকে তাকিয়ে না মানে বলছিলাম কতো বড় সাহস।”
ইসরাতের কথায় ইয়ানূর কান্না থামিয়ে নাক মুখ কোচকে ফেলে। এই মেয়েটা কোনো দিন ও নিজের ভাষা সংযত করতে পারবে না। কতো করে বলেছে ইয়ানূর এমন ভাবে কথা না বলতে কিন্তু মেয়ে টা শুনে কই?
ইশু তুই আগে তোর ভাষা ঠিক কর।ছিঃ মুখের কি ভাষা।ইয়াক।
এমন ভাবে বলছিস কেন? তোর কান্না দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। তাই আমি না চাইতে ও মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে। এসব বাদ দে এখন বল কান্না করছিলি কেন? আর কে তোকে ম্যানার্সলেস বলেছে শুনি?
পরে বলবো এখন ভিতরে চল।রোদে আমার ভালো লাগছে না। ফ্রেশ হওয়া দরকার।
আচ্ছা চল বলেই দুজন রিসোর্টের ভিতর ঢুকে পড়ে। ইয়ানূর অবশ্য চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখে চলেছে। রিসোর্ট টা বেশ সুন্দর। ইয়ানূরের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই ভালো লাগে। মন চায় হারিয়ে যেতে।কৃত্রিম পরিবেশ তাকে ততোটা আকৃষ্ট করতে পারে না।
রিসোর্টে ঢুকে যে যার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে যায়। এক রুমে তিনজন করে থাকবে। ইয়ানূর ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইসরাত বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে মরার মতো পরে আছে। ফ্রেশ হওয়ার কোনো নাম গন্ধ নেই।
ইয়ানূর গিয়ে ইসরাত কে ডাক দেয়।
“ইশু,,,,এই ইশু,,ফ্রেশ হয়ে নে। তোর শরীরে কতো জীবানু এখন জানিস? এসব নিয়ে তুই বিছানায় শুয়ে আছিস কেন? ”
“উহু”
উঠ।
ইসরাত নড়েচড়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে, দোস্ত একটু ঘুমাতে দে।বাসে নেচে হাত পা ব্যাথা হয়ে গেছে আমার।তার উপর সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে।
ফ্রেশ হয়ে নে আগে।
ইসরাত আর কোনো সাড়া ই দেয় নি।
ইয়ানূর অগত্যা আর ডাক দেয় না। জানে টেনে হিচড়ে ও কোনো লাভ নেই। তাই ফোন টা নিজের সাইড ব্যাগ থেকে বের করে বারান্দায় পা বাড়ায়।
বারান্দায় গিয়ে ইয়ানূরের চোখ জোড়া শীতল হয়ে যায়। একরাশ মুগ্ধতা এসে ভর করে। বাতাস এসে নিজের শরীর টা ছুঁয়ে দিয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে ইয়ানূর নিশ্বাস নেয়। বারান্দা থেকে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর দৃশ্য। ইয়ানূর কিছু সময় পরিবেশ টা উপভোগ করে। তারপর বাড়িতে ফোন করে। বাবা,মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। মনটা কেমন আনচান করছে। ওদের রেখে ইয়ানূর এতো দূরে কখনো আসেনি।
ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করতেই ইয়ানূর উৎসাহের সাথে বলে উঠে,, আসসালামু আলাইকুম আব্বু।
ওয়ালাইকুম আসসালাম আমার আম্মাজান।
আম্মাজান ডাকটা শুনে ইয়ানূর চোখ বন্ধ করে ফেলে।এই ডাকটা শুনলে তার প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
পৌঁছে গেছেন আম্মাজান?
“হ্যা আব্বু মাত্র এসে পৌঁছেছি।”
“সেকি কথা আম্মাজান? আগে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিবেন তা না করে। ”
ফ্রেশ হয়েছি আব্বু। ফ্রেশ হয়েই তোমাকে কল করেছি। আর তোমাদের না জানিয়ে আমি কি শান্তিতে রেস্ট নিতে পারতাম? তোমাদের ও তো টেনশন হচ্ছিল।
এবার গিয়ে রেস্ট নিন।এখন পড়াশোনা করার দরকার নেই। ঠিক সময়ে খেয়ে নিবেন।আর সাবধানে থাকবেন।
হুম আব্বু। আম্মু কোথায়?
আপনার আম্মু বাড়িতে আছে।আমি একটু চা খেতে বাইরে এসেছি। পরে কথা বলে নিয়েন।
আচ্ছা আব্বু। আম্মু কে বলে দিও আমি ঠিক আছি।
আচ্ছা।
আর চায়ে কিন্তু একদম চিনি দিতে বলবে না। তোমার কিন্তু চিনি খাওয়া বারণ।
হুম আম্মাজান।
আল্লাহ হাফেজ আব্বু।
আল্লাহ হাফেজ।
ইয়ানূর তার বাবার সাথে কথা বলে রুমে ঢুকে। তারপর এক সাইডে গিয়ে শুয়ে পরে। ইসরাত পাশেই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
———————————–
সেই কখন থেকে তালহা হেঁসে চলেছে। তালহার দিকে কটমট দৃষ্টিতে কিছু সময় পরপর তাকাচ্ছে সৌন্দর্য । কিন্তু তালহা তাতে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। সে কিছুতেই তার হাসি থামাতে পারছে না।
তোর এই ভয়ংকর হাসি থামাবি তুই? সৌন্দর্য তালহার দিকে রা’গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
“একদম আমার হাসি কে ভয়ংকর বলবি না বেটা। তবে বলতে পারিস যদি ভয়ংকরের সাথে সুন্দর শব্দ টা এড করে নিস তো।”
সুন্দর আর তোর হাসি? ভাগ্যিস রিসোর্টের রুম গুলো সাউন্ড প্রোফ নয়তো রাতের বেলা কোনো ভূত প্রেতের হাসি ভেবে পালিয়ে যেতো লোকজন।
অপমান করা বাদ দে বেটা। তোর গাল আর ঘাড় দেখলে কিছুতেই আমার হাসি থামছে না। আমি কি করবো বলতো? এতো সুন্দর চেহারায় মনে হচ্ছে কেউ সি’ল মেরে দিয়েছে।
শুধু তোর জন্য আমার গালে আর গলায় স্পট হয়ে গেছে। তোর জোরাজোরি তে আমি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি। তাও চেয়েছিলাম আমার গাড়ি নিয়ে আসতে কিন্তু তুই,,,
আমার কি দোষ? আর এটা তো একটা এক্সিডেন্ট। তারপর দুষ্টু হেসে বলে,,
যদিও লোকে অন্য কিছু ভাববে।
সৌন্দর্য তালহা কে তাড়া করে বলে, বের হো তুই আমার রুম থেকে।
ভাই ভাবা যায় দা গ্রেট সৌন্দর্য ওয়াহিদের গালে আর গলায় মেয়ে মানুষের খা’মচি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ব্রেকিং নিউজ টা বন্ধুমহলে জানিয়ে দিবো নাকি? বলেই চোখ মারে তালহা।
সৌন্দর্য এবার নিজের পায়ের জোতা খুলে ছুরে মারে তালহার দিকে। কিন্তু তালহা ততক্ষণে রুম থেকে বের হয়ে গেছে।
সৌন্দর্য গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজের গাল আর ঘারে চোখ বুলিয়ে নেয় একবার।
—————————
ভোরের আলো ফোটতেই সকলকে এসে ডেকে দিয়ে যায় ম্যামরা। অবশ্য ইয়ানূর কে ডাকতে হয়নি। সে ভোর রাত থেকে উঠেই বই নিয়ে বসেছে। কিছু সময় সিলেটের সকালের সৌন্দর্য বারান্দা থেকে দেখে এসেছে। ফুরফুরে মনে আছে সে।মায়ের সাথে ও কথা বলে নিয়েছে।
সকলে গিয়ে একসাথে খাবার খেয়েছে। তালহার উপর আর আরেকটা ম্যামের উপর ইয়ানূরদের দেখাশোনা ও গাইড করার দায়িত্ব পরেছে।
সকলেই জাফলং যাবে।সেই অনুযায়ী ওখানে গিয়ে পৌঁছায়।
এইবার বাসে তালহার সাথে লোকটা ছিলো না। ইয়ানূর মনে মনে খুজেছে একটা স’রি বলার জন্য। কিন্তু কোথাও দেখতে পায়নি। এটা নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি সে।
সেখানে পৌঁছে সকলেই যে যার মতো ঘুরছে।অবশ্য বলে দেওয়া হয়েছে বেশি দূর যাওয়া যাবে না একা একা।
এর মধ্যে ইসরাত এসে বলে,,দোস্ত দেখ পরা,,, হায় হায় কি সুন্দর পরা।
ইয়ানূর বোঝার চেষ্টা করে। পরা মানে? কিসের পরা?
আরে সামনে তাকিয়ে দেখ তালহা স্যারের সাথে ঐ স্যার টা। আহা কি সুন্দর দেখতেরে।
উনি স্যার হলো কিভাবে? আর পরা কি?
তালহা আমাদের কি হয়? স্যার।আর স্যারের বন্ধু তো স্যার ই।
হুম বুঝলাম। তাহলে পরা কি?
আরে পরির মেইল ভার্সন কি জানি না। লোকটা কতো সুন্দর তাই পরা বললাম।
ইয়ানূর ইসরাতের কথায় মাথা ঘামায় না।ইসরাত কে তার সাথে আসতে বলে, লোকটার দিকে এগিয়ে যায়। সরি বলবে বলে।
কিন্তু তালহা আর সৌন্দর্যের কাছে পৌঁছেই আরেক বিপত্তি ঘটে। পাথরের সাথে হোঁচট খেয়ে সৌন্দর্যের উপর গিয়ে পরে ইয়ানূর।নিজেকে বাঁচাতে সৌন্দর্যের বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে। যার দরুন ইয়ানূরের নখ গুলো সৌন্দর্যের বু’কে গিয়ে বিধে।
সৌন্দর্য মিনিটের মাঝে ইয়ানূর কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে শার্ট ঠিক করতে করতে তালহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“স্পেশাল চাইল্ডদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিতে পারিস না? ”
#চলবে,,,,
কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।
সবাই রেসপন্স করবেন। আর কেমন হলো জানাবেন।🥹