#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ৫
#Jhorna_Islam
ইয়ানূর স্তব্ধ হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে অজ্ঞান হয়ে যেতে। মনে মনে খুব করে চাইছে যেনো সে এখনই জ্ঞান হারায়।আর এই বা’জে পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু যখন যেটা খুব করে চাওয়া হয় সেটা পাওয়া যায় না। ইয়ানূরের খুব করে চাওয়া ইচ্ছে টা ও পূরণ হলো না।
সৌন্দর্য সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নূরের দিকে একবার তাকায়।তারপর নিজের হাত দিয়ে ব্লেজার ঝাড়তে থাকে। হাত ঝাড়তে ঝাড়তে সৌন্দর্যের হাত টা ইয়ানূরের সামনে আসে।যার দরুন ইয়ানূরের হুঁশ আসে।তরিঘরি করে বোতল টা ইসরাতের হাতে ধরিয়ে দেয়। তারপর নিজে এগিয়ে এসে ঝেড়ে দিতে নিয়ে ও কি মনে করে হাত গুটিয়ে নেয়। তারপর সরি সরি বলতে থাকে।
চোখের পানি গুলো টলমল করছে। একটু ছোঁয়া লাগার অপেক্ষায় তারপর গাল গুলো ভাসিয়ে দিবে। করুন স্বরে শুধু একের পর এক স’রি বলে চলেছে।
সৌন্দর্য নূরের মুখের দিকে তাকায়। তারপর চোখে চোখ রাখে।নূর চোখ সরিয়ে নেয়। অস্বস্তি হচ্ছে খুব।কি বা’জে বা’জে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এই লোকটার কাছে যখনই আসে। সবসময় ছোট হতে হয়। লোকটা তো তাকে খারাপ মেয়ে ভাবে হয়েতো। গায়ে পরা মেয়ে ভাবে। কথাগুলো ভাবতেই টুপ করে এক ফোটা পানি চোখ থেকে গড়িয়ে পরে।
সৌন্দর্য এবার খুব কৌশলে ওর চোখ জোড়া ঘুরিয়ে নেয়। তারপর নূরকে উদ্দেশ্য করে,, তুমি,,,,, বলতে গিয়ে ও থেমে যায়। ফোস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে।পিছনে যেতে যেতে বলে,,, ইট’স ওকে!
নূর ঘাড় ঘুরিয়ে সৌন্দর্যের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ধপ করে নিজের সিটে বসে পরে। বসেই চোখ জোরা বন্ধ করে ফেলে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে।মনে হচ্ছে কয়েকশো মিটার দৌড়ে এসে হাঁপিয়ে গেছে।
ইসরাত এতো সময় সিটে বসে দুইজনের কান্ড দেখেছে সরু চোখে।
মনে মনে ভাবছে যতো প্রকার সমস্যা আছে সব এদের সাথেই ঘটছে সিনেমাটিক ভাবে। কি আশ্চর্য ব্যাপার। অন্য সময় হলে নূর কে খ্যা’পা’তো সে কিন্তু এখন কেন যেনো ইচ্ছে করলো না। হয়তো বিব্রত বোধ করবে।
সৌন্দর্য বসে বসে ফোনে ব্যস্ত হয়ে আছে। তালহা কিছু সময় পরপর এসে সৌন্দর্য কে বিরক্ত করে যাচ্ছে। ছাত্রীদের কি লাগবে,কেউ বমি-টমি করবে কিনা জিজ্ঞেস করছে।
নূরদের সিটে এসে জিজ্ঞেস করে,, নূর তুমি ঠিক আছো?
নূর এতোসময় সিটে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো।
তালহা স্যারের প্রশ্নে চোখ খুলে তাকায়। ঠিক হয়ে বসে জানায় সে একদম ঠিক আছে।
তাহলে চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন? অসুস্থ বোধ করলে বা খারাপ লাগলে কিন্তু বলবে আমাকে। আর বমি আসলেও বলবে।
নূর তালহা স্যারের কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
তালহা চলে যেতে নিয়ে ও ইসরাতের কথায় থেমে ব্রু কোচকে ইসরাতের দিকে তাকায়।
আশে পাশে মানুষের চোখ যায় না। আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন ও মনে করলো না। আমি কি মানুষের পকেটে বমি করবো যদি আমার বমি পায়?
ইসরাতের কথায় নূর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হাতে চি’মটি কাটে চুপ হওয়ার জন্য। কিন্তু মেয়েটা শোনে কই।
এই মেয়ে কি বললে তুমি? তোমার সাহস দেখছি দিন দিন বেড়েই চলেছে। তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছো?
তালহা স্যারের সাথে।
আমার নামের শেষে কি উচ্চারণ করলে আবার করো। জোরে করবে।
স-স্যার।
বেয়াদপ মেয়ে স্যারদের সাথে এভাবে কেউ কথা বলে? আজকে তোমার বেয়াদবি ছোটাবো। মনে ভয় ডর নেই তোমার।
স-সরি স্যার।
চুপ করো তুমি। উঠে দাঁড়াও।
স্যার প্লিজ আমাকে বাস থেকে নামিয়ে দিবেন না। আমিতো এই দিকের কিছুই চিনি না। যদি হারিয়ে যাই?
তোমাকে আমি কি বলেছি? কথা শুনছো না কেন তুমি?
উঠে দাঁড়াও বলেই এক ধমক মারে তালহা ইসরাত কে।
ইসরাত তারাতাড়ি করে উঠে দাঁড়ায়। করুন চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বোঝায় আজকের মতো এই ব্যাটার হাত থেকে বাঁচিয়ে দে বোন। আজ এতো খে’পে কেন গেলো বুঝলাম না।
নূর চুপচাপ বসে আছে।
তালহা ইসরাত কে বলে,,কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে বাসের মধ্যে।
–স্যার আর হবে না।
— কি বলেছি আমি তুমি শুনোনি?
— স্যার,,
— বেশি কথা বললে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখবো।তখন ভালো লাগবে?
যদি বাস ব্রেক করে হুট করে। আর আমি পরে গিয়ে নাক মুখ ফেটে যায় তখন?
ঐসব কথা তোমার আগে মাথায় রাখা উচিত ছিলো।এখন শাস্তি ভোগ করো। বলেই তালহা সামনের দিকে চলে যায়। মুখে তার মিটমিটে হাসি।
ইসরাত অসহায়ের মতো কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পৃথিবীতে সেই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা পিকনিকে এসে ও শাস্তি পায়। তাও আবার বাসের মধ্যে হাহ্। দেখে নিবে সে এই স্যার কে কথাটা মনে মনে আওড়িয়ে মুখ বাঁকায়।
———————
বাস ঠিক সময়ে এসে থামে।সকলের গার্জিয়ানরা এসে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে নেওয়ার জন্য। ইসরাত আর নূর নেমে আসে বাস থেকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে নূর তার বাবা কে খোঁজার চেষ্টা করে। কিছু দূরেই দেখতে পায়।
কাঁধের ব্যাগ ইসরাতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় নিজের বাবার কাছে।
আব্বু বলেই জড়িয়ে ধরে। মনে হচ্ছে কতো জনম পর দেখা হলো তাদের। ইসরাত ও এগিয়ে আসে।
নূরের বাবা এতক্ষন নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। ইসরাত পাশে এসে দাঁড়াতেই ইসরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। জানতে চায় কেমন আছো আম্মারা?
ভালো আংকেল। ইসরাত উত্তর দেয়।
নূর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
এরমধ্যে সকল ছাত্রী কে তালহা আর অন্যান্য শিক্ষকরা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
নূরের বাবা দাঁড়িয়ে আছে তালহার সাথে কথা বলার জন্য। তালহা এগিয়ে আসতে আসতে বলে,,,
স’রি আংকেল আপনাকে অপেক্ষা করানোর জন্য।
ব্যাপার না বেটা। সব কিছুর আগে নিজের দায়িত্ব। আমি তোমার উপর খুব খুশি।
আরো কিছু কথা বলে নূর আর ইসরাত কে নিয়ে চলে আসে নূরের বাবা।ইসরাত নূরদের সাথেই যাবে।নূরদের বাড়ির কিছু পরেই ইসরাতের বাড়ি।তাই আর ইসরাতের বাবা আসেনি নেওয়ার জন্য।
সৌন্দর্য এতক্ষন বাসেই ছিলো নামেনি। তালহার সাথে যাবে।তালহা গাড়ি নিয়ে আসেনি। তাই সৌন্দর্যের সাথে যাবে। সৌন্দর্য আগেই ড্রাইভার কে গাড়ি নিয়ে আসতে ফোন দিয়েছে। তাই আর বের হয়নি।বাসেই বসে ছিলো।
এতক্ষন জানালার পাশে বসে সবই লক্ষ করেছে। এবার উঠে দাঁড়িয়ে নেমে আসে। তালহার ও সব কাজ শেষ।
ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসতেই সৌন্দর্য চাবি নিয়ে নেয়। তারপর নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। ড্রাইভার পিছনে গিয়ে বসে। তালহা হেলতে দুলতে দুলতে এসে সৌন্দর্যের পাশের সিটে বসে পরে। সিটে বসেই নিজেকে হেলিয়ে দেয়। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,
কেমনে পারিস ভাই? এতো এনার্জি কি করে পাস? অবশ্য তুই তো কোনো পরিশ্রম করিস নি।
সৌন্দর্য কথার উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে। তালহার বাড়ির সামনে এসে তালহা কে নামিয়ে দেয়। অবশ্য তালহা বলেছে ওদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য সৌন্দর্য না করে দেয়।
নিজের বাড়িতে এসে গাড়ি থেকে নেমে পরে। হাতে আঙুলে চাবিটা নাচাতে নাচাতে শিস বাজাতে বাজাতে মেইন দরজা দিয়ে বাড়ির কলিং বেল বাজায়। কিছুক্ষন পর এসে একজন দরজা খুলে দেয়।
সৌন্দর্য ভিতরে ঢুকে পরে। পিছন থেকে একজন হ্যান্ড’স আপ।
সৌন্দর্য থমকে যায়। তারপর নিজের হাত উপরে তুলে পিছনে তাকায়।
#চলবে,,,,,,,
কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।