#আম্মার_সংসার
#পর্ব৮
আমি বসে বসে বৃষ্টি দেখছি। লটকন মানে অরন্য ভাইয়া পাশে বসেত বসতে বললো –
– এক কাপ চা দেয়া যাবে?
আমি এক লাফে দাঁড়িয়ে গেলাম। দাদি যদি দেখে এই লোকের পাশাপাশি বসে আছি কেয়ামত হয়ে যাবে।
– কি ব্যাপার টায়রা তুমি লাফ দিয়ে সরে গেলে কেন?
– এমনি,আপনার জন্য চা নিয়ে আসি।
– চা লাগবে না,যে আমার পাশাপাশি বসতে পারে না তার হাতের চা খাওয়ার মতো যোগ্যতা আমার হয় নাই।
– আরে বিষয় টা এমন না। আপনাকে পরে একদিন বলবো।
– টায়রা একটু কাছে এসে দাঁড়াবে। তুমি যতো টা খারাপ চিন্তা করো আমি কিন্তু এতো খারাপ না। ছেলে হিসেবে ভাল আছি।
– নিজের সুনাম নিজে করতে হয় না। নিজের সুনাম করবে অন্যরা।
– জানো টায়রা, একটা মেয়ের চুল ছোঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। দেখা যাবে?
– মেয়ে টা অনুমতি দিলে ছোঁয়ে দেখেন। আমাকে বলার কি আছে।
– মেয়ে টা তো তুমি।
– আরে কি বলেন এসব! আপনি তো যাচ্ছে তাই বলছেন।
– দাও না একটা বার শুধু ছুঁয়ে দেখবো,তার চুল ছুঁয়ে দেখার মধ্যে কি এমন নেশা আছে।
– আপনার তো চলে যাবার কথা ছিল,আপনি সামান্য অজুহাত দেখিয়ে আবার ফিরে এসেছেন এসব বলার জন্য।
– আমি তোমাকে ভালোবাসি। একটা ছেলে যখন কোন মেয়ে কে ভালোবাসে তাকে ছোঁয়ে দেখতে চাওয়া টা অন্যায় কিছু না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেই জায়গা থেকে আমি অন্যায় কোন আবদার করছি না।
– ছেলে টা ভালোবাসলেই হলো,মেয়ের কোন মতামত থাকতে হবে না।
– তুমি ও আমাকে ভালোবাসা। মেয়েরা যে ছেলে কে ভালোবাসে তার সাথে কথায় কথায় রাগ দেখায় অভিমান করে।
– হুম,আপনি ভালোই বুঝতে পেরেছেন। এতো কথা বলার সময় নেই। মিলন দুলাভাই আসবে,কাজ আছে অনেক।
– হা,হা,হা মিলন টা আবার কে?
– হা,হা করছেন কেন আগে বলেন?
– মিলন একটা অশ্লীল শব্দ। এইটা কারো নাম হয় কি করে আমি বুঝতে পারি না।
– ধ্যাত,আপনি নিজে-ই একটা অশ্লীল।
বলে কোন রকম তার কাছ থেকে সরে আসতে পারলেই জান বাঁচে।
– এই মেয়ে বলে তো যাও মিলন দুলাভাই টা আবার কে?
– আপনার যমদূত।
জমসেদ দুলাভাইয়ের আরেক নাম মিলন। জমসেদ বলতে কেমন কেমন লাগে তাই মিলন বললাম। লটকন টা দিলতো মিলন নামের বারো টা বাজিয়ে।
টুনি আপা এসেছে। তাকে দেখতে যা লাগছে কি ভাবে বর্ণনা দিলে যে বুঝানো যাবে বুঝতে পারছি না।
মিলন দুলাভাই না মানে জমসেদ দুলাভাই তো জমিদার জমিদার ভাব নিয়ে থাকে। আজ গলায় পরেছে একটা সাদা মুক্তার মালা।
তাদের কে দেখে মনে হচ্ছে ভুল করে স্টার প্লাস চ্যানেলে ঢোকে গেছি।
একটা বিষয় হচ্ছে টাকাওয়ালা মানুষের সাথে কথা বলতে ও কয়েক গ্লাস পানি গিলতে হয়।
তাই হয়তো আব্বা সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেনি। আম্মা আগের চেয়ে অনেক সুস্থ হয়ে গেছে।
আম্মা তো সারাক্ষণ কি করবে না করবে এই চিন্তায় অস্থির।
আব্বা বললেন-
– জামাই তোমরা কয়েক টা দিন আমাদের সাথে থাক। তোমার শাশুড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।
রঙ্গন ভাইয়া এতো করে ফোনে বললো যা জিজ্ঞেস করার সামনা-সামনি জিজ্ঞেস করতে। কেন টুনি আপা এতো কান্না করলো? কিসের এতো ভয়?
আব্বা-আম্মা এসব কিছুই জিজ্ঞেস করছে না। রঙ্গন ভাইয়া চাইলে ফোনে জিজ্ঞেস করতে পারে,সে ও জিজ্ঞেস করছে না।
আমি অরন্য ভাইয়া কে বললাম –
– একটা উপকার করবেন?
– তুমি বললে দুনিয়া ছেড়ে দেই,উপকার করা তো আমার কাছে এ্যামিবা তুল্য ঘটনা।
– আপনি কি আমাকে দেখলেই ফ্লার্ট করেন?
– আরে কি বলো আমি এমন ছেলে-ই না। তোমাকে ভালোবাসি ফ্লার্ট করবো কেন?
প্রয়োজনে পরীক্ষা নিতে পারো কত ভালোবাসি।
– যা বুঝার বুঝতে পেরেছি। থাক আপনার উপকার করা লাগবে না।
– আরে বলো বলো কি করতে হবে। এক্ষুনি করে দিচ্ছি।
– টুনি আপার জামাই কে জিজ্ঞেস করতে পারবেন আপার সাথে তাদের কি সমস্যা?
– মিলন দুলাভাই কে জিজ্ঞেস করবো?
– আপনি এক নম্বর একটা লম্পট।
– আরে আমি খারাপ কি বললাম? মিলন কে তো মিলন-ই বললাম।
– আপনাকে দুই গালে চটাস চটাস করে চড় মারতে পারলে শান্তি পেতাম।
– তোমরা মেয়েদের বুঝতে পারা আসলেই কঠিন।
বড় ফুপু এসে পৌঁছেছেন। দাদির সাথে কথা বলে আব্বা কে কাছে ডেকে বললেন-
– তোরা জামাই কে কিছু জিজ্ঞেস করছিস না কেন? মেয়ে বিয়ে দিছিস,বিক্রি তো করিস নাই।
সাহস না থাকলে আমি জিজ্ঞেস করি।
দাদির পানের বাটা থেকে দুইটা পান এক সাথে জড়ো করে বাবা জর্দা দিয়ে মুখে পুড়ে জমসেদ দুলাভাইয়ের কাছে গিয়ে বসলেন ফুপু।
– জামাই শরীর টা ভালো?
– জ্বি।
– টুনি কে নাকি বাবার বাড়ি আসতে দেও না । তেমন কোন যোগযোগ করতে দেও না। আমাদের পক্ষ থেকে কোন বেয়াদবি হয়েছে বাবা?
– না,না ফুপু এমন কিছু না। বিয়ে করেছি বউ বাপের বাড়িতে রাখার জন্য না।
– তা ঠিক আমাদের মেয়ে বিয়ে করেছ বলে
আমাদের উদ্ধার করে ফেলেছ বিষয়ে টা কিন্তু এমন ও না।
শুনলাম টুনি খুব কান্না কাটি করেছে,কি কারনে?
দুলাভাই সোজা কোন কথাই বলছে না।
ফুপু এবার যা বললেন আমরা সবাই আকাশ থেকে পড়লাম।
– তোমার নাকি এর আগে বিয়ে হয়েছে,বউ বাচ্চা আছে? কথা টা কি সত্যি?
– বউ থাক তো অন্যায় কিছু না। আমার সামর্থ্য আছে। তাছাড়া বড় বউয়ের মাথায় সমস্যা আছে। আপনাদের মেয়ে কে আমি রানীর মতো করে রাখছি। তার কিছু কমতি রাখিনি।
– আমরা কি মেয়ে কে ভিখারিনীর মতো রাখছিলাম? তুমি প্রতারণা করেছো কেন? আমাদের বলোনি কেন তুমি বিবাহিত?
যে এতো বড় একটা সত্য গোপন করতে পারে সে আরো বড় কিছু ঘটাতে পারে।
আমার ভাই কথা বলছে না, বলে ভেবো না আমরা দূর্বল। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।
– ফুপু আপনি আমাকে আইন বুঝাতে আসবেন না। আমার বউ আমি নিয়ে যাবো। পারলে কিছু করেন।
চলবে….
#তানজীনা_আফরিন_মেরিন
( প্রিয় পাঠক আমি আপনাদের প্রত্যেক টা কমেন্ট পড়ি। নেক্সট, নাইস না লিখে আমার উদ্দেশ্যে আপনারা ও তো দুই লাইন লিখতে পারেন।)