#তোমার_আমার_চিরকাল🌸
|| পর্ব – ৫ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি
আকাশে কালো মেঘের দল ছুটে বেড়াচ্ছে। পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে এ গাছ থেকে ঐ গাছে উড়ছে। মৃদু বাতাশ হচ্ছে। এই বুঝি আবার একটা ঝড় উঠবে। কলেজের ক্লাস শেষ করে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মীরা। ঝড় উঠার আগেই তাকে বাসায় পৌঁছুতে হবে। মীরার বান্ধবী পাশ থেকে বলল, “কিরে, ঝড় তো শুরু হয়ে যাবে। বাসায় যাবি না?”
মীরা তার বান্ধবীর দিকে আড়চোখে তাকালো। “বাসায় যাওয়ার জন্যই তো রিক্সা দেখছি। কিন্তু রিক্সা তো পাচ্ছিনা। একটাও খালি নেই।”
“আমি বলি কি! তুই আজ আমার বাসায় চল। কলেজ থেকে তো আমার বাসা দূরে নয়।”
“নারে, বাসায় না জানিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না।”
“আরে তুই তো ঝড়ে আটকে পড়বি তাহলে৷ বাসায় গিয়ে নাহয় কল করে নিবি।”
“না দোস্ত, তুই যা।”
মীরার বান্ধবী আর কথা বাড়ালো না। সে চলে যেতে লাগলো তার বাসায়। মীরার বিরক্তি লাগছে। বাতাশ হচ্ছে। হুট করে একটা বাইক এসে থামলো মীরার সামনে। মীরা তাড়াতাড়ি সে-ই বাইকে উঠে বসে। বাইকারের কাঁধে হাত দিয়ে বলে, “তাড়াতাড়ি চলো তুর্য ভাই। অবশেষে তুমি এলে। আজ খুব দেরি হয়ে যেতো।”
তুর্য হেসে বলে, “আমি থাকতে তোর কিচ্ছু হবে না মীরু।”
তুর্য বাইক নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
–
বাসায় বসে কাঁচা আম লবণ মরিচ দিয়ে মেখে খাচ্ছে মীরা, তার ভাবি ও তুর্য। তুর্য একটু আগেই আম মেখে এনেছে। তুর্যর একটা গুণ হলো সে টক খেতে খুব পছন্দ করে, ঠিক মেয়েদের মতো। টক খাওয়ার কম্পিটিশন হলে তুর্য সব মেয়েকেই হারিয়ে দিত। মীরা মাঝে মাঝে ভাবে এতো টক কিভাবে খেতে পারে ছেলেটা?
তুর্য আম খেতে খেতে বলল, “আজ একটা কম্পিটিশন হয়ে যাক মীরু। দেখি কে বেশি টক খেতে পারে।”
মীরা ভ্রু কুচকে বলল, “আমি বাবা নাই৷ তোমার সাথে কম্পিটিশন করতে গিয়ে আমার রাতের খাওয়াটাই হবে না। দাঁত টক হয়ে যাবে।”
তুর্য বাঁকা হেসে বলল, “তুই পারবি না। এই তুর্যকে হারানো এতো সহজ না।”
মীরা বলে, “অ্যাঁহ? কোন নবাব এলেন রে,
ওনাকে নাকি আমি হারাতে পারব না।”
“তাহলে প্রতিযোগিতা করে দেখা।”
“তুর্য ভাই দেখো, অন্য একদিন। আজ না। ভালো লাগছে না।”
মীরার কথা শুনে তুর্য অস্থির হয়ে গেলো। সে মীরার কপালে হাত রেখে বলল, “শরীর খারাপ তোর? ভালো লাগছে না কেন?”
মীরা দুই ঠোঁট প্রসারিত করে একটু হেসে বলে, “তুমি একটু বেশিই ভাবো।”
“তোকে নিয়ে বেশি ভাববো না তো কাকে নিয়ে ভাববো?”
“কেন আর বুঝি তোমার কাজিন নেই?”
“তুই আর সবাই এক না। তুই আমার কাছে আলাদা।”
মীরা তুর্যর চোখ পানে চাইলো। আলাদা বলতে কি বুঝিয়েছে তুর্য? মীরার ভাবি অনেক্ক্ষণ আগেই নিচে চলে গেছে। তাই তুর্য আর মীরার কথাবার্তা সে শুনতে পায়নি। মীরা উঠে দাঁড়িয়ে যায় বসা থেকে। তারপর “আসছি।” বলেই ছাঁদ থেকে নিচে চলে আসে সে। আর তুর্য ওখানে দেবদাস-এর মতো দাঁড়িয়ে থাকে মীরার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে।
–
রাত তখন নয়টা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট। নিজের পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিল মীরা। পড়ার ফাঁকে হঠাৎই মীরার চোখে ভাসতে লাগলো সেদিনের কথা, যেদিন ঝড়ে আম কুঁড়াতে গিয়ে আম গাছের একটা ঢাল ওর মাথায় পড়ছিল। কিন্তু সেটা পড়ার হাত থেকে তাকে বাঁচিয়ে দেয় আহান। কিভাবে এক টানে আহানের বুকের সাথে মিশে ছিল সে সেটাই ভাবছে। আহান ছেলেটা খারাপ না। ভালোই। মীরা আনমনে হেসে উঠে। পরক্ষণেই নিজে নিজে বলতে থাকে, “আশ্চর্য! আমি হাসছি কেন? আর কি ভাবছি এসব আমি? ধুর!”
মীরা পড়ায় মনোযোগ দিল। একটু পরেই কলিংবেল এর শব্দে মীরার ধ্যান ভাঙে।
মীরার মনে কৌতূহল জাগে৷ কে এলো এখন? মোটামুটি এই সময়ে সবাই বাসায় থাকে। তাহলে কে এলো? মীরা পড়ার টেবিল থেকে উঠে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ড্রয়িংরুমে এসে দরজার কাছে যায়। দরজা খুলেই সামনের মানুষটিকে দেখে মীরা বেশ অবাক হয়। কি বিধস্ত অবস্থা তার। চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। লাল হয়ে আছে চোখ আর ফুলেও আছে। এলোমেলো হয়ে আছে চুল। আহান মীরার সামনেই হন হন করে ভিতরে ঢুকে গেলো। চোখ বুলিয়ে কাউকে খুঁজতে লাগলো সে। মীরা বলল, “কি হয়েছে?, আপনার এমন অবস্থা কেন?”
আহান দ্রুত গলায় বলল, “মিরাজ, মিরাজ কোথায়?”
“ভাইয়া তো ওর ঘরে।”
“অহ।”
আহান মিরাজের রুমে যেতে নিলেই মীরা আহানের হাত ধরে বলে, “আরে আরে, কি করছেন আপনি? ভাইয়া ভাবি আছে ওখানে। এভাবে হুট করে ঢোকা যায় নাকি? দাঁড়ান। আমি ডেকে দিচ্ছি ভাইয়াকে।”
আহান থেমে গেল। অস্থির হয়ে গিয়েছিল সে। মীরা মিরাজের ঘরের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কায়। মীরার পিছন থেকে আহানও আসে ওখানে। মিরাজের বউ দরজা খুলে দেয়। মীরা ভিতরে ঢুকে। মিরাজ জিগ্যেস করে, “কি হয়েছে?”
মীরা বলে, “তোর বন্ধু আহান এসেছে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাভাবিক লাগছে না তাকে। তোকে ডাকছে।”
মীরার কথা শেষ না হতেই ঝড়ের গতিতে এসে আহান মিরাজকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। মিরাজের বউ আর মীরা কৌতুহল নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। মিরাজ ইশারা দিয়ে তার বউকে চলে যেতে বলে। কিন্তু মীরা থেকে যায় ওখানে। আহান নরম গলায় বলল, “আর পারছিনা দোস্ত। সহ্য হচ্ছেনা আমার।”
মীরা চমকালো! চোখের পাতা ঝাপটালো। মীরার ভালো লাগলো না আহানের কণ্ঠেস্বর। কিছু একটা নিয়ে কষ্ট পেয়েছে বোধয়। তাই একটু কান্নামিশ্রিত কণ্ঠ হয়ে আছে। কি হয়েছে আহানের? মিরাজ দেখলো মীরা দাঁড়িয়ে আছে স্থির হয়ে। মিরাজ মীরাকেও ইশারা দিল চলে যাওয়ার জন্য। মীরা চিন্তিত হয়ে প্রস্থান করলো ওখান থেকে।
.
ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসে আছে মীরার দাদি আর আব্বু। মীরার আম্মু ও মীরার ভাবি মিলে রাতের খাবার সাজাচ্ছেন টেবিলে। মীরার দাদি পান চিবুচ্ছেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন আহান আসছে ভিতরের রুম থেকে। আসছে মিরাজও। ওদের পিছনে আসছে মীরা। মীরা এতক্ষণ নিজের রুমেই ছিল। আহান মীরার আব্বুকে দেখে বলে উঠে, “আসসালামু আলাইকুম আংকেল।”
মীরার বাবা টিভি থেকে চোখ সরিয়ে আহানের দিকে তাকালেন। “ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আহান তুমি! ভালো আছো?”
“জি, আংকেল ভালো।”
মীরার দাদি মুহুর্তেই বলে উঠলেন, “তা ছেলে, তুমি এতো আসো কেন আমাদের বাড়িতে? তোমার মতলব তো ভালো না।”
আহান স্তম্ভিত। ওর এখানে আসাতে কি বিরক্তবোধ করেন উনি? মীরার বাবা তার মা’কে বলেন, “মা, কি হচ্ছে৷ আহান মিরাজের বন্ধু, আসতেই পারে।’
“তুই চুপ থাক৷ ঘরে একটা যুবতী মেয়ে আছে, ভুলে যাস না। আজ একটা কিছু হয়ে গেলে কি হবে?”
মীরা চমকালো। কপালে ভাজ পড়লো তার৷ আড়াআড়িভাবে আহানের দিকে তাকায় সে। আহানের খারাপ লেগে গেলো৷ আহান মীরার দাদিকে বলল, “আর আসবো না দাদি৷ দোয়ায় রাখবেন।” আহান বেরিয়ে গেলো। মিরাজ রেগে গিয়ে তার দাদিকে বলল, “আহান সম্পর্কে না জেনে কিছু বলবে না দাদি। ও শুধু এখানে আমার জন্য আসে। অন্য কোনো ইন্টেনশনের জন্য নয়। এর আগেও তুমি তুর্যকে একি কথা বলেছো৷ তুমি কি ভাবো হ্যাঁ? সব এতো সোজা?”
মীরার দাদি মীরার বাবার উপর চ্যাঁচেয়ি বললেন, “দেখেছিস তোর ছেলের কাণ্ড? আমাকে কথা শুনায়”
মীরার বাবা বিরক্তি নিয়ে বলল, “ভুল কিছু তো বলেনি মা।”
“তুই ও?” মীরার দাদি উঠে চলে গেলেন। মিরাজও বাইরে বেরিয়ে গেলো৷ মীরার বাবা মীরার দিকে চেয়ে আছেন। মীরা চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে নিজের ঘরে চলে গেলো। আহানের বিষয়টি নিয়ে একসময় ভাইয়ার সাথে আলোচনা করবে। কি হয়েছে আহানের?
চলবে…