#তুমি_আমার_মুগ্ধতা
#পার্ট:০৬
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৩৩.
বাগান বাড়ির গেইটের সামনে এসে থমকে যায় আফ্রা। মুখে নক নিয়ে কি একটা ভেবে যেন বললো, “নাহ, মেইন গেইট দিয়ে যাওয়া যাবেনা। এইখানে অনেক গার্ড আছে। কিন্তু যাবটা কেমন করে?”
কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো আফ্রা হঠাৎ খুশিতে বলে উঠল, “আইডিয়া… এইখানে না হয় গার্ড আছে। কিন্তু মিস আফ্রা মির্জাতো চাইলেই প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢু’ক’তে পারে।”
৩৪.
কয়েকটা মেয়ে অর্ষাকে সাজিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। প্রান্তিক ব্ল্যাক ব্লেজার, ব্ল্যাক প্যান্ট, হাতে ঘড়ি, পায়ে ‘সু’ পড়ে রুমের ভেতরে ঢু’ক’তে ঢু’ক’তে বললো,
“আমার বউটাকে দেখে না জানি আজকে রিসেপশনে কে কে প্রপোজাল দিয়ে বসে।”
অর্ষা গহনা সামলাতে সামলাতে বললো,
“প্রপোস করতেই পারে। কারণ আমি মিস অর্ষা, নো মিসেস চৌধুরী।”
“নাউ ইউ মিসেস চৌধুরী মাই ডিয়ার বউউ।”
“শাট আপ…”
“হেই ব্রো, ভাবী এনি প্রবলেম? ঝ’গ’ ড়া করোনা তোমরা। এসো এসো নিচে এসো।”
অর্ণীক অর্ষা আর প্রান্তিককে, দু হাতে ধরে নিচে নিয়ে গেলো। অর্ষা প্রান্তিকের দিকে এক পলক তাকিয়ে অর্ণীকের দিকে তাকায়। দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক বেশ মজবুত’ই মনে হচ্ছে।
৩৫.
“ছোট মা, কোথায় যাচ্ছো?”
“চৌধুরী হাউজে।”
“কিন্তু কি জন্য?”
“হ্যাঁ, ছোট কি জন্য চৌধুরী হাউজে যাচ্ছিস?”
“আহানা চৌধুরী কে সবটা বলতে। যে অর্ষা বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আমি চাইনা, আমার আশায় তিনি তার ছেলেকে আনম্যারিড রাখুক।”
“ছোট…”
আর কিছু বলতে দিলেন না বড় জা’কে মিসেস নিশিতা মির্জা। দৃঢ় কন্ঠে বললেন,
“তুমি আর কিছু বলতে এসোনা ভাবী। তোমার জন্যই অর্ষা আজ এতটা ভার বেড়েছে। অনেক আগেই ওকে কঠিন গার্ডে রাখতে চেয়েছিলাম আমি।”
“ছোট..হিতে বিপরীত হতো।”
“এখন কি ভালো হয়েছে?”
“আমার মন বলছে, অর্ষা ভালো আছে।”
“আফ্রা! আফ্রা কোথায় ভাবী?”
তানিশা মির্জা চারিদিকে চোখ বুলান, আসলেই তার মেয়ে কোথায়? এই সময়তো ড্রইং রুমে থাকার কথা। রুমেওতো নেই।
৩৬.
“ইশশ…পা’টা গেলোরে…”
আফ্রা প্রাচীর টপকে সবুজ ঘাসের উপর পড়ে গেছে। তখনি পেছন থেকে আরেকটা পুরুষ পুরুষালী কন্ঠে শুনতে পেলো,
“ইশশ আমাকে মে’রে ফেললরে.. এই কেরে? কে আমাকে এইভাবে ধা’ক্কা মা’র’ল পেছন থেকে?”
কথাটি বলেই অর্ণীক পেছনে তাকায়। টিশার্ট আর জিন্স পড়া একটা মেয়েকে দেখতে পায় সে। পিঠ দেখা যাচ্ছে কেবল মুখ দেখা যাচ্ছেনা। আফ্রা ভ’য়ে ভ’য়ে উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে, ‘এখন কি হবে? যদি ধরা পড়ে যাই?”
“এই এই মেয়ে কে তুমি হুম? রিসেশন ছেড়ে এইখানে কি করছ?”
আফ্রা বুঝতে পারল যে তাকে ছেলেটি দেখেনি প্রাচীর টপকে আসতে। আফ্রা নিজের মাঝে সা’হ’স সঞ্চয় করে বললো,
“এই ছেলে আপনি জানেন না? অপরিচিত কাউকে তুমি করে বলতে নেই।”
অর্ণীকের চোখ আ’ট’কে যায় মেয়েটিকে দেখে। কাজল চোখ দুটো টানা টানা। গেজ দাঁত আছে মেয়েটির। সে আপনমনেই বলে উঠল,
“গজনন্দীনি।”
“এই যে এইভাবে হা করে কি দেখছেন? কখনো কি মেয়ে দেখেননি নাকি?”
“হেই… অর্ণীক কিছু বলতে গিয়েও বললোনা। তারপর ভাব নিয়ে বললো,
” সুন্দর ছেলে দেখলে মেয়েরা এইভাবেই ঝা’পি’য়ে পড়ে ঝ’গ’রা’য়। একচুয়ালি, সুন্দর ছেলেদের সাথে ঝ’গ’ড়া করাটাওতো এক ধরনের লা’কের মধ্যে পড়ে। সবার ভাগ্যে’তো আর তা থাকেনা।”
আফ্রা চোখ বড় বড় করে বললো,
“হেই হেই মিস্টার কি বললেন আপনি! আপনি সুন্দর? কখনো নিজের মুখটা আয়নায় দেখেছেন কখনো?”
“নিজেকেতো দেখিনি, দেখেছি একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে।”
আফ্রা অবাক হয়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে ভাবে, “না, এর সাথে ঝ’গ’ড়া করলে হবেনা। এই জায়গা ত্যাগ করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।”
৩৭.
“হেই মিস্টার প্রান্তিক, বিয়ে করলেন আমাদেরকে বললেন ওনা?”
প্রান্তিক হেসে বললো,
“এইতো রিসেপশনে বললাম। আসলে সবকিছু খুব দ্রুত’ই হয়ে গেল।”
“হেই মিসেস চৌধুরী। ”
অর্ষা প্রান্তিকের পাশে পেস্ট কালার একটা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে দাঁড়িয়ে থাকতে না চাইলেও বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে। ভদ্রলোকের সাথে বেশ নম্রতার সাথেই অর্ষার কোশল বিনিময় করলেন। প্রান্তিক হুট করে অর্ষার হাত ধরে একটা রুমে গেল। অর্ষা অবাক হয়ে বললো,
“এইখানে কেন?”
“একটু আ দ র করব যে তোমায় বউউ।”
“মানে কি? আপনি কি সা’ই’কো?”
“সে তুমি বলতেই পারো।”
কথাটি বলেই প্রান্তিক অর্ষার অধর দুটো আগলে ধরে। অর্ষা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে বটে, তবে পুরুষের শক্তির সাথে কি আর নারী পেরে উঠে?”
অর্ষাকে ছেড়ে দেয় প্রান্তিক। অর্ষা নি’শ্বা’স ফেলতে ফেলতে বললো,
“অ’স’ভ্য লোক।”
“অ’স’ভ্য লোক না বউ, রোমান্টিক হাসবেন্ড। ইউ আর লাকী বউ, যে এমন একজন রোমান্টিক হাসবেন্ড পেয়েছো। কয়জন পায় এমন হাসবেন্ড? হোয়াট ইউ নো বউ? প্রান্তিক চৌধুরীর জন্য হাজারো মেয়ে উ’ন্মা’দ।”
“কিছু ভালোবাসা, হয়ে যায় মনের অজান্তে,
তা মনে কড়া নাড়ে, সময় হলে মন প্রান্তে।
কিছু মানুষ জানেনা ভালোবাসা কি? তার কাছেই যায় আমরা অবহেলা পাই বেশি,
যারা আমাদের ভালোবাসে, তাদের ভালোবাসলেই তারা হয় ভীষণ খুশি।
৩৮.
অর্ষা বসে আছে সোফায়। একেকজন গেস্ট এসে তাকে ফুল দিচ্ছে, উপহার দিচ্ছে। অর্ষা মনে মনে ভাবছে, কিভাবে এই ঝা’মা’লা থেকে বের হবে। আফ্রা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে তার জন্য। প্রান্তিক দূরে গেস্টদের সাথে কথা বলছিল। অর্ষার চিন্তিত মুখমণ্ডল দেখে অর্ষার কাছে গেল। তারপর বললো,
“কি হয়েছে বউ? আরও কি’স লাগবে নাকি? হাসি ফোটাতে?”
অর্ষা ল’জ্জা’য় নু’য়ে যায়। প্রান্তিক হাসে। মিনমিনিয়ে হাসি। যে হাসির শব্দ নেই কিন্তু অর্থ আছে।
“হেই মিস্টার প্রান্তিক, কেমন আছেন?”
অফিসের গেস্ট আসতেই প্রান্তিক তাদের সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অর্ষা মনে মনে ভাবে, এইতো সময়, তাড়াতাড়ি বের হয় এইখান থেকে।
৩৯.
আফ্রা বাগানের পেছনে ১ ঘন্টা অব্দি দাঁড়িয়ে আছে অথচ অর্ষার আসার নাম গন্ধ নেই। ওই ছেলেটাকে ভুলভাল বলেতো সে চলে এলো, পড়ে যদি আবার কেউ বুঝতে পারে? আফ্রা চারদিকে চোখ বুলায়, ‘নিশ্চয়ই এ বাড়িতে আজ কোনো অনুষ্ঠান আছে, নয়তো এতো ঝাঁক ঝমক ভাবে সাজানো কেন?
‘আফ্রা..”
অর্ষার কন্ঠ শুনে পেছন তাকায় আফ্রা। অবাক হয়ে তাকায় বোনের দিকে।
“তুই এই সাজে কেন অর্ষা?”
“আমি্ আমি সব বলছি চল আগে আমার সাথে।”
“কোথায়?”
“গেস্ট রুমে।”
অর্ষা আফ্রাকে নিয়ে বাগানের পেছন দিয়ে বাড়িতে ঢু’কে। একটা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বলল,
“আমার বিয়ে হয়ে গেছে আফ্রা।”
“হোয়াট?”
আফ্রা মৃদুস্বরে চি ৎ কা র দিয়ে বললো কথাটি। অর্ষা কা’ন্না করে জ’ড়ি’য়ে ধরে আফ্রাকে। আফ্রা বার বার বলছে,
“কিভাবে হয়েছে? কার সাথে? একটাবার জানাতে পারতি’তো?”
“জানানোর মতো পজিশন ছিলনা। অনেক বা’জেভাবে বিয়েটা হয়েছে আফ্রা।”
“কার সাথে! কিরে বল…বলনা..”
“প্রান্তিক চৌধুরীর সাথে।”
“হোয়াট?”
অর্ষা সব খু’লে আফ্রাকে বলে। আফ্রা শুনে অবাক হচ্ছে। কিভাবে সম্ভব একটা অচেনা মেয়েকে এই ভাবে বিয়ে করা?
“চল..এক্ষুনি এইখান থেকে।”
“কোথায়!”
“বাড়িতে।’
‘আফ্রা কি যা তা বলছিস তুই?”
“যেই বিয়ে করবিনা বলে পা লি য়ে আসলি বাড়ি থেকে, ঘুরেফিরেতো সেই বিয়েই করলি তুই।”
“আমি্..”
“আমি কি?”
“আমি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি আফ্রা।”
৪০.
“আফ্রা জানে অর্ষা কোথায় আমি শিউর মা।”
শাফওয়াতের কথা শুনে চমকে উঠেন তানিশা মির্জা। ছেলে এই কথা বলছে নিশ্চয়ই তার কোনো কারণ আছে। তিনি বিছানা চাদর বিছাতে বিছাতে বললেন,
“তোর এইটা কেন মনে হলো বাবা?”
“মা আফ্রার চলাফেরা আজকাল আমার সুবিধের মনে হচ্ছেনা।”
“যেমন?”
“এই যে এখন আফ্রা বাসায় নেই। কেন নেই কোথায় গেছে ওহ? ছোট মাকে তুমি যতই বোঝাও কোনো বন্ধুর বাড়ি গেছে আফ্রা, কিন্তু আমাকে এইসব বোঝাতে পারবেনা। আফ্রা কোনো বন্ধুর কাছে নয়, বরংচ অর্ষার কাছে গেছে।”
“কি!”
“হ্যাঁ, মা।”
৪১.
পর্ণা’কে দেখে প্রান্তি’কের চোখ দুটো ভি’জে উঠে। পর্ণা’র চোখের পা’নি আর একটু হলেই গা’ল বেয়ে পড়ে যাবে। সে দৌঁড়ে গিয়ে জ’ড়ি’য়ে ধরে ভাইকে। কা’ন্না করে দেয় পর্ণা। ঠোঁ/ট উল্টোয়ে কা ন্না থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে। প্রান্তিক বোনের মাথায় হাত বুুলিয়ে বললো,
“কাঁদছিস কেন প্রিন্সেস?”
“ভাই্ ভাইয়া…”
কা’ন্নার কারণে ভাল করে কথাও বলতে পারছেনা মেয়েটা। প্রান্তিক পর্ণা এক জায়গায় বসিয়ে পা’নি খাওয়ায়। তারপর বলে,
“এইভাবে ছোট বাচ্চাদের মতো কা’ন্না করলে হবে? তুইনা ভার্সিটিতে পড়িস?”
পর্ণার কা’ন্নার গতি বেড়ে যায় আরও। ভাইকে সে কতদিন পর দেখেছে। ও বাড়ি থেকে’তো তাকে কেউ এই বাড়িতে আসতেই দেয়না। আজ সে জো’র করে এসেছে। আজ যে তার ভাইয়ের জীবনের এক বিশেষ দিন।
“ভাইয়া..তোমাকে ছাড়া আমরা কেউ ভাল নেই, কেউনা..প্লিজ চলোনা ফিরে, আমার সাথে।”
বোনের কথার জবাব দেয়না প্রান্তিক। কেবল বোনের কা ন্না মাখা চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে সে। কেঁ দে চোখ মুখ কেমন মলিন করে ফেলেছে এই কয়েক মিনিটেই।
“তুই কি এইভাবে কাঁদবি প্রিন্সেস? নাকি এখন ভাইয়াকেও কাঁদাবি?”
ভাইয়ের বু’কে মু খ গুঁজে পর্ণা। কা’ন্না তার কিছুতেই থামছেনা। প্রান্তিক দূরে তাকিয়ে দেখে অর্ণীক চোখের পানি মু’চ’ছে। প্রান্তিক এক হাত বাড়িয়ে দেয় অর্ণীকের দিকে। সে দৌঁড়ে ভাই আর বোনকে জ’ড়ি’য়ে ধরে। এ যেন এক স্নিগ্ধ সম্পর্ক ভাইবোনের।
“ভাবী কোথায় ভাইয়া?”
পর্ণা চোখ মুখ মুছে কথাটি বলতেই প্রান্তিক বললো, “ওই যে তোর ভা..কিছু আর বলতে পারলোনা প্রান্তিক। চমকে উঠে বলে,
” আরে, অর্ষা কোথায়? একটু আগেইতে এইখানে বসেছিল। তাহলে কি…”
না সে আর ভাবতে পারছেনা। বু’কে তীব্র য ন্ত্র ণা হচ্ছে এখন তার।
চলবে….