#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৭
ভার্সিটির প্রবেশ করতেই আহিদের চোখে পরে সিনিয়র কিছু ছেলে মিলে একটা মেয়েকে র্যাগিং করছে।র্যাগিং বললে ভুল হবে। একে বলে একপ্রকার হ্যারেসমেন্ট।কারন ছেলেটা মেয়েটার গায়ের ওড়না হাতে পেচিয়ে নিয়ে তা ক্রমাগত টানছে।আর মেয়েটা কেঁদে কেঁদে ওর ওড়না ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছে ।এইসব র্যাগিং ট্যাগিং আহিদের একদম পছন্দ না।অকারনে কেন একটা মানুষকে এইভাবে হেনস্তা করবে? কি মজা পায় এরা।আহিদ এগিয়ে যায় সেখানে।মেয়েটা মাথা নিচু করে কাঁদছে।ফলে মেয়েটার চেহারা এখনও ভালোভাবে দেখেনি আহিদ।সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে আহিদ এইবার ওই ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে বলল,
‘ কি সমস্যা ভাইয়া’রা?মেয়েটাকে কেন শুধু শুধু আটকে রেখেছেন? আর ওর ওড়না এইভাবে টানছেন কেন?’
আহিদের মাঝখানে এসে ব্যাঘাত দেওয়ায় তারা বেশ খানিক বিরক্তবোধ করল।রাগি স্বরে বলে,
‘ এটা আমাদের ব্যাপার।তুমি তোমার কাজে যাও।’
আহিদ যথাসম্ভব নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।আহিদ বেশ শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ নিজেদের ব্যাপার হলে নিজেরা বাড়ি গিয়ে স্যাটেল করবেন।এখানে ভার্সিটির মাঠে এসব করলে তো আর চুপ থাকা যায় না।’
‘ বেশি কথা বলছ তুমি ছেলে।’
রেগে গেল আহিদ।বলল,
‘ হ্যা বলছি।তো? কি করবেন?’
‘ নিজের ভালো চাইলে এখান থেকে কেটে পরো।’
‘ মেয়েটাকে যেতে দিন।’ আহিদ শক্ত গলায় বলল।
‘ তা তো সম্ভব না।এই মেয়েটাকে যা করতে বলেছি তা না করা পর্যন্ত একে ছাড়ব না।’
আহিদ এইবার ভয়া’নকভাবে রেগে গেল।রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ধুম করে একটা ঘুষি মেরে দেয় সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার মুখে।ছেলেটা ছিটকে গিয়ে পরল মাঠে।ওর সাথে দাঁড়ানো আরও তিনটে ছেলে দ্রুত ওই ছেলেটাকে টেনে তুলল।তারপর আহিদকে উদ্দেশ্য করে ক্ষুব্ধ স্বরে বলে,
‘ তোর এতো বড়ো সাহস।তুই আমাদের বন্ধুর গায়ে হাত তুলিস।আজ তোকে ছাড়ছি না।’
ছেলেটা এসে আহিদকে মারতে নিলেই আহিদ সজোড়ে চ’ড় মারে ছেলেটার গালে।অন্য ছেলেরা তেড়ে আসতে গেলেই সেখানে হাজির হয় অথৈ,রিধি,পিহু আর প্রিয়ান।প্রিয়ান আর অথৈ এসে অন্য ছেলেদের মারতে এগিয়ে যায়।কিন্তু তার আগেই সেখানে এসে উপস্থিত হয় রুদ্রিক,ইহান,সাফাত,নীল,অনিক,মারিয়া,জেনি আর সিয়া।রুদ্রিককে দেখেই ওই বদমা’শ ছেলেগুলো ঘাবড়ে যায়।রুদ্রিক রক্তিম চোখে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ কি হয়েছে এখানে?’
ছেলেগুলোর মধ্যে যে লিডার সে এগিয়ে এসে বলে,
‘ কিছু না ভাই।আমরা জাস্ট এই মেয়েটাকে একটু র্যাগিং দিচ্ছিলাম।আর এই ছেলেটা এসে আমাদের কাজে বাধা প্রদান করে।এখন আপনিই বলুন ভাই।ভার্সিটিতে তো একটু আধটু এমন হয়েই থাকে তাই নাহ?’
আহিদ রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
‘ কুত্তার দল মিথ্যে বলছিস কেন?ভাই এরা এই মেয়েটার ওড়না টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।আমি বাধা দিলেই আমাকে আগে মারতে আসে।আর তাই আমি ওদের মেরে’ছি।’
রুদ্রিক কড়া গলায় আহিদকে ধমকে উঠল,
‘ এটা কিভাবে করেছ তুমি?’
অথৈ ভ্রু-কোচকালো।আশ্চর্য লোক।সাহস কতো বড়ো ওর বন্ধুদের ধমকাচ্ছে।দেখে নিবে একে।মনে মনে কথাগুলো বলে রুদ্রিককে মুখ ভেংচি মারল।এদিকে আহিদ রুদ্রিকের এমন কথায় অবাক হয়ে বলল,
‘ মানে?কি বলছেন এসব?’
‘ দাঁড়াও দেখাচ্ছি।’
রুদ্রিক দু ধাপ এগিয়ে গিয়ে ওই ছেলেটার সামনাসামনি দাঁড়ায়।তারপর খপ করে ছেলেটার হাত ধরে সজোডে মুচড়ে দেয়।ছেলেটা ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠে।রুদ্রিক ঘাড় ঘুরিয়ে আহিদের দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
‘ মেয়েদের ইজ্জতের দিকে যে বাজেভাবে হাত বাড়ায়।তার হাত এইভাবে ভে’ঙে দিতে হয়।বুঝেছ?’
আহিদ চওড়া হেসে বলে,
‘ জি ভাই বুঝেছি।’
অথৈর মন ছোটো হয়ে গেল।ইস,লোকটাকে শুধু গালমন্দ করল।মনে মনে রুদ্রিককে সরি বলে দিল।রুদ্রিক ছেলেটার হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে দিল।ছেলেটা হাতের ব্যথায় কাতরাচ্ছে।তারপর রক্তচক্ষু নিয়ে বাকি ছেলেদের দিকে তাকালো।ওই ছেলেগুলো রুদ্রিকের রাগি দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে গেল।দ্রুত তাদের লিডারকে সাথে নিয়ে তৎক্ষনাত জায়গা ত্যাগ করল।
রুদ্রিকের কাজে বেশ খুশি হলো।তবে তা প্রকাশ করল না।রুদ্রিক অতি সন্তর্পণে অথৈয়ের পাশে দাঁড়ালো।এই সুযোগে অথৈ কণ্ঠ খাদে নামিয়ে দুষ্টুমির স্বরে বলে,
‘ আমাকে ইমপ্রেস করার জন্যে বুঝি এসব করলেন?’
রুদ্রিক প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে টান হয়ে দাঁড়ালো।দৃষ্টি সামনের দিকে রেখেই ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করে হাসল।বলল,
‘ তোমাকে ইমপ্রেস করতে আমার এসব করা লাগবে না।রুদ্রিক তার বউকে স্পেশালভাবে ইমপ্রেস করতে জানে।ডিড ইউ আ্যন্ডর্স্টান্ড মাই ক্যাডেল বাগ।’
রুদ্রিকের মুখে বউ মুখে এমন কথা শুনে বেশ লজ্জা পেল অথৈ।’ক্যাডেল বাগ ‘ কথাটার মানে বুঝতে পেরেই অথৈ লজ্জায় নুইয়ে গেল।অথৈ নিজেও বুঝতে পারছে না।ইদানিং ওর এতো লজ্জা আসে কোথা থেকে?তাও শুধু রুদ্রিকের সামনেই ওর লজ্জা লাগে।এমন কেন হয়?
এদিকে রুদ্রিক অথৈয়ের লজ্জায় রক্তিম আভা ছড়িয়ে যাওয়া মুখশ্রী দেখে তৃপ্তির হাসি দিল।প্রিয় মানুষটার লজ্জা পাওয়ার কারন হতে পেরে ভালোলাগায় হৃদয় জুড়িয়ে গেল।এদিকে অথৈ আর রুদ্রিককে ফিসফিস করে কথা বলতে দেখেছে রিধি।ও অথৈয়ের লজ্জামাখা মুখটা দেখে নিয়ে ঠোঁট টিপে হাসল।ওর এই ঘাড়ত্যাড়া,রাগি বান্ধবীটাও যে এইভাবে লজ্জা পেতে পারে জানা ছিলো না ওদের।রুদ্রিকের সংস্পর্শে এসে মেয়েটা কেমন নরম হয়ে যাচ্ছে।রিধি অথৈয়ের কানে কানে দুষ্টুমির স্বরে বলে,
‘ রুদ্রিক ভাইয়া কি এমন বলল যে তুই এইভাবে লজ্জায় লাল, নীল হচ্ছিস।আমাদেরকেও বল।’
রিধির এমন কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল অথৈ।নিজেকে সামলে নিয়ে মিথ্যে রাগ দেখানোর ভাণ ধরে বলে,
‘ চুপ থাক এমন কিছুই না।আমি লজ্জা পাচ্ছি না।’
‘ সেটা তো তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি জানেমন।’
হেসে দিলো অথ। বলল,
‘ চুপ কর না ইয়ার।উনি এখানে আছেন।শুনে ফেলবেন।’
‘ বাহ বাহ উনিইইইইই।’ লাস্ট ওয়ার্ডটা টেনে টেনে বলল রিধি।হেসে ফেলল অথৈ।অথৈকে এইভাবে হাসতে দেখে রুদ্রিক বলে উঠে,
‘ হাসছ যে?’
অথৈ আশেপাশে তাকিয়ে নরম স্বরে বলে,
‘ এমনি।’
রুদ্রিক আর কিছু বলবে তার আগেই নীল বলল ওদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।এখন যেতে হবে ওদের।রুদ্রিক ছোট্টো স্বরে ‘ ওকে’ বলল।তারপর অথৈকে সরল গলায় বলল,
‘ কালকের ওখানেই আমি থাকব।যদি এসে আমায় না পাও তাহলে একটু অপেক্ষা করো।আমি আসব।’
‘ জি আচ্ছা।’
রুদ্রিক উলটো ঘুরে গেল।অথৈয়ের একদম গা ঘেষে যাওয়ার সময় অথৈয়ের কানে কানে বলে গেল,
‘ ইউ ন্যো ইয়্যু আর সো কিউট। সো ইয়্যু ডিজার্ব অ্যা বিলিয়নস্ ওফ কিসেস্ ফ্রোম মি।’
কথাটা শেষ করে বড় বড় পা ফেলে চলে গেল রুদ্রিক আর ওর বাকি বন্ধুরাও।এদিকে রুদ্রিকের শেষের বলা বাক্যে শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে রইলো অথৈ।রুদ্রিকের বলা প্রতিটা শব্দ যেন এখনও ওর কানে বাজছে।দ্রিম দ্রিম করে সজোড়ে বিট করছে হৃৎপিণ্ডটা।শরীরটাও কাঁপছে।সেই সাথে যেন শরীরের প্রতিটা লোমকূপ দাঁড়িয়ে গিয়েছে রুদ্রিকের ওই ফিসফিসানো আওয়াজে।কারো ফিসফিস করে বলা কথাটাতেও এতোটা মাদকতা থাকে জানা ছিলো না অথৈয়ের।রুদ্রিকের বলা বাক্যটা অথৈকে ভয়ানক লজ্জার সাগরে ডুবিয়ে দিল।রুদ্রিক আঁড়চোখে পিছনে ফিরে তাকালো।রুদ্রিকও একই সময়ে তাকিয়েছে।অথৈকে ওর দিকে তাকাতে দেখে বাঁকা হেসে চোখ মেরে দিল।এরপর চলে গেল।অথৈ দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নিচু করে নিল বিরবির করল,
‘ এ কোন চরম অস’ভ্য এক লোকের খপ্পরে পরে গিয়েছি আমি।’
কান্নারত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে আহিদ।কেন যে ওই ক্রোদনরত লাল হয়ে যাওয়া ছোটো খাটো বাচ্চা চেহারাটা দেখতে ওর ভালো লাগছে।মেয়েটার চেহারায় যেন এক আকাশসম মায়া উপচে পরছে।আহিদের কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে।আহিফ ধীর পায়ে মেয়েটার কাছে এগিয়ে গেল।নরম গলায় বলল,
‘ তুমি ঠিক আছ?’
আহিদের প্রশ্নে মেয়েটা নড়ে উঠল যেন।দু হাতে চোখ মুছে নিল।তারপর ভেজা কণ্ঠে বলে,
‘ হুঁ!’
‘ নাম কি তোমার?’ আহিদের সোজাসাপ্টা প্রশ্নে মেয়েটা ঘাবড়ে গেল একটু বোধহয়।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘ মাইশা জেরিন।’
‘ নামটা সুন্দর।এখন বলো কোন ডিপার্টমেন্ট? ‘
‘ ডিপার্টমেন্ট ওফ ম্যানেজমেন্ট ফার্স্ট ইয়ার।’
মাইশার মুখে এই কথা শুনে আহিদ বলে,
‘ ওহ তারমানে আমরা একই ক্লাসের।শুধু ডিপার্টমেন্ট আলাদা।’
অবাক হলো মাইশা।বলল,
‘ আপনিও ফার্স্ট ইয়ার?’
ভ্রু-কুচকালো আহিদ।
‘ হ্যা কোনো সমস্যা?’
ভয় পেলো মাইশা।বলে,
‘ ন..না সমস্যা হবে কেন।’
আসলে মাইশার বিশ্বাস হচ্ছে না।এমন লম্বা-চওড়া সুদর্শন দেখতে ছেলেটা ওর সাথেই পড়ে।মানে একই ক্লাস।ও তো ভেবে নিয়েছিল ছেলেটা বোধহয় থার্ড ইয়ার বা ফাইনাল ইয়ারে পড়ে।নিজের ভাবনায় নিজেই বোকা বনে গেল মাইশা।মাইশার ধ্যান ভঙ হয় আহিদের গম্ভীর পুরুষালি কণ্ঠে,
‘ মেয়ে মানুষ হয়েছ বলে যে নিজেকে সবার কাছে দূর্বল প্রমান করবে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা।মেয়েরা চাইলেই সব করতে পারে।এইযে একটু আগে তোমার সাথে যা হলো তুমি চাইলেই প্রতিবাদ করতে পারতে।থা’পড়িয়ে গাল লাল করে দিতে পারতে।কিন্তু তুমি তা করোনি।শুধু তোমার মনে এই কথাটা বাদা বেধেছে যে তুমি মেয়ে তুমি দূর্বল।এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।পরিস্থিতি দেখে নিজেকে প্রেজেন্ট করার চেষ্টা করো।নিজেকে ভীতু নয় সাহসী করে তোলো।দেখবে লাইফটা কতো সুন্দর হয়ে গিয়েছে তোমার।’
মাইশার মনে আহিদের বলা প্রতিটা কথা গভীরভাবে দাগ কাটল।মুগ্ধ হয়ে শুনল আহিদের কথা।আহিদ ফের বল,
‘ বুঝতে পেরেছ আমি কি বলেছি?’
ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে মাইশা বলে,
‘ জি বুঝেছি।ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে আমাকে বোঝানোর জন্যে।’
‘ হুম ভালো।এখন যাও নিজের ক্লাসে।’
মাইশা আহিদের কথায় ক্লাসে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।কি মনে করে যেন আবার পিছনে ফিরে তাকালো।আহিদকে উদ্দেশ্য বলল,
‘ ধন্যবাদ আপনাকে। আমাকে প্রোটেক্ট করার জন্যে।’
তারপর পিছনে দাঁড়ানো অথৈ,রিধি,পিহু,প্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ আপনাদেরকেও ধন্যবাদ আমার বিপদে এগিয়ে আসার জন্যে।আর হ্যা ওইযে ভাইয়াগুলো আসল না? তাদেরকেও আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয় দিবেন। আসি তাহলে।আল্লাহ্ হাফেজ।’
মাইশা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে গেল।আর মাইশার সেই হাসিটা যেন আহিদের ঠিক বুকে গিয়ে লাগল।মন আটকে গেল সেই হাসিতে।এখন আদৌ কি এই মেয়ের মিষ্টি হাসির মায়াজাল থেকে বের হতে পারবে ও?
#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।জানি আজকের পর্বটা এলোমেলো হয়েছে।লিখতে গিয়েও বার বার ফিরে এসেছি।লিখতে ইচ্ছে করে না।তাও আপনাদের খুশির জন্যে লিখলাম।এইজন্যে অগোছালো হয়েছে।ভুল হলে ক্ষমা করবেন।