যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া #আনিশা_সাবিহা পর্ব ৩৩

0
501

#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৩

চলন্ত বাসে শুরু হয়েছে অশান্তি। এক নারীর সাথে অ/শ্লীলতা করার পর শৌভিকের হাতে ধরা পড়ার কারণে সকলেই ধমকাচ্ছে তাকে। তবে সেই অপ/রাধ কৃত ছেলেটির মুখে কোনো প্রকার অনুশোচনার লেশ দেখতে পেল না শৌভিক। ছেলেটির ঘাড়ের দিকের কলার চেপে ধরে কাছে এনে বলে,
“কী রে! তোর মুখে সামান্য অনুশোচনাও দেখি না কেন আমি? কীসের এত দম্ভ দেখাচ্ছিস?”

ছেলেটি এবার ক্ষিপ্রতায় ফোঁস ফোঁস করে উঠল। উল্টো ধ;মকে বলল,
“ছাড় আমাকে। তুই জানিস তুই কাকে এমনে ধরছিস। তোরে কী হাল করতে পারি জানিস? একটা কল যাবে তোরে হসপিটালে পাঠানো হবে।”

শৌভিকের আরো ক্রুদ্ধ হলো। ছেলেটির গাল চেপে বলল,
“কোন রাজার পোলা তুই? শুনি তো আগে।”

ছেলেটি ছটফটিয়ে নিজেকে ছাড়াল। শৌভিকের মতো চওড়া গঠনের মানুষের সামনে নিজের সামান্য শক্তি দিয়ে পেরে ওঠা দায়। আঙ্গুল উঁচিয়ে শৌভিকের উদ্দেশ্যে বলল,
“কামালের ছেলে আমি। মন্ত্রী সরোয়ার সাহেরকে চিনিস তুই? তার সহযোগী কামালের ছেলে। এবার কী বলবি বল!”

মন্ত্রীর নাম শোনামাত্র সকলে তটস্থ হলো যেন। এতক্ষণ যে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল তাদের মুখের মাঝে ফ্যাকাসে ভাবের উদয় হলো। ছেলেটি ভাবল সকলের ন্যায় শৌভিকও নিভল বোধহয়। কারণ শান্ত দেখা গেল তাকে। তৎক্ষনাৎ শৌভিক নিজের পাঞ্জাবির হাতা ঠিক করতে করতে তার সাথে থাকা দুজন সঙ্গীকে বলল,
“রাতুল, নীরব! শুনলি তো? ভাইটা কিন্তু মন্ত্রী সাহেবের খাস লোক। আমাদের উচিত ভাইটির ভালো মতো আপ্যায়ন করা।”

শৌভিকের এ কথার মাঝে থাকা ইঙ্গিত বুঝে নিলো রাতুল এবং নীরব। এক গাল হেসে সম্মতি দিলো,
“অবশ্যই শৌভিক ভাই।”

বাস থেকে রাতুল আর নীরব ঘাড় ধরে নামালো ছেলেটিকে। দুজন দুদিকে ঘাড়ে হাত রেখে একপ্রকার জোর করে ধরে নিয়ে গেল সেলুনে। সেলুনে থাকা লোকটি শৌভিককে দেখামাত্র বলল,
“ভাই আপনে এখানে?”

শৌভিক ছেলেটিকে এনে ঘাড় ধরে বসিয়ে বলল,
“তেমন কিছু না। আপনার চুল কাটার মেশিনটা দেন তো ভাই।”

সেলুনের লোকটি কথা না বাড়িয়ে মেশিন এগিয়ে দেয়। উগ্র ছেলেটি চিল্লিয়ে বলল,
“দেখ, ভালো চাইলে ছাড় আমাকে। আমি ছাড় পেলে না তোকে পুঁ/তে ফেলব।”

শৌভিক সেসবে কর্ণপাত করল না। বরং রাতুল আর নীরবকে বলল,
“এই তোরা ভাইরে ধর ভালো করে। নড়তে যেন না পারে। নাহলে আপ্যায়ন ভালো মতো হবে না।”

নীরব আর রাতুল হেসে কুটিকুটি হয়ে ধরল ছেলেটিকে। শৌভিক মেশিন চালিয়ে দিলো ছেলেটির মাথায় আর চোখের ভ্রু-তে। ইচ্ছেমতো হাত চালিয়ে মাথার চুলের অবস্থা যা-তা করে ফেলল শৌভিক। আর বাম চোখের ভ্রু ছেটে ফেলে দিলো একবার। শেষমেশ তার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ে নীরব আর রাতুল। রাতুল বিনয়ী হবার ভান ধরে বলে,
“জোকার ভাই কেমন ফিল করছেন?”

ছেলেটি রাগে এবং অপমানে শরীর রি রি করে উঠলেও তখন বলার মতো কোনো পরিস্থিতিতে রইল না। শৌভিক তাকে টেনে তুলে বলল,
“তোর বাপের বাপ মানে মন্ত্রী মশাইকে আমি ভয় পাইনা। এরপর নিজের এসব আলগা ক্ষমতা আর মেয়েদের সাথে অসম্মানজনক কাজ করার আগে তোর চুল আর চোখের ভ্রুর এই দশা মনে পড়বে। যা ভাগ।”

শৌভিকের চেহারার দিকে একবার তাকাল ছেলেটি। মনে ভরা ক্রোধ নিয়ে একপ্রকার ছুটে বের হলো সেলুন থেকে।

গাড়িতে অনবরত নিজের মাথার চুল উন্মাদের মতো টানছে স্বচ্ছ। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এটা ভেবে যে সে মোহকে কোথায় খুঁজবে? আদেও যদি কেউ কিড/ন্যাপ করে থাকে তাহলে তাকে এখনো গ্রামের কোথাও কি রেখেছে? এরই মাঝে পাশে থাকা সৌমিত্র মুখ খুলল,
“ভাই! পুলিশে একবার জানাই? হয়ত পুলিশ মোহের বাবা-মায়ের কথা শুনবে না। আমাদের কথা তো শুনতেই পারে।”

স্বচ্ছ তেতে ওঠে তৎক্ষনাৎ। জোর গলায় বলে ওঠে,
“মাথা খারাপ তোর? পুলিশ আমাদের বাপের কথা শুনবে। আমাদের নয়। অন্যকিছু ভাবতে হবে।”

সৌমিত্র চুপ রইল। তানিয়ার সাথে বলা কথোপকথন আবারও মনে করতে করতে তার মস্তিষ্কে এলো কিছু ঘটনা। ক্ষীণ সন্দেহ তখন নিজের বাবার বিরুদ্ধে। ঢক গিলে নিলো সে। ভাইকে বলা উচিত হবে কি হবে না সেটা ভেবে কূলকিনারা পেল না। অবশেষে ধীর গলায় বলে ওঠে,
“ভাই আমি না একটা জিনিস খেয়াল করেছি। জানি না ব্যাপারটা কতটুকু লজিক্যাল!”

“তুই লজিক দিয়ে কবে থেকে কথা বলিস? আজকে সিরিয়াস টাইমে তোর লজিকের কথা মাথায় আসলো?”

সৌমিত্র আমতা আমতা করে বলল,
“দ্যা ম্যাটার ইজ ভেরি সেনসিটিভ, ব্রাদার৷”

“কী সেটা তাড়াতাড়ি বল!”

“কালকেই আমি আমাদের বাড়িতে ইয়াকীনকে দেখেছিলাম। ওর সাথে দেখা হয় আমার।”

সৌমিত্রের কথায় টনক নড়ে স্বচ্ছের। বিভ্রান্ত হয়ে প্রশ্ন করল,
“ইয়াকীন মানে ওই গু/ণ্ডা?”

“হ্যাঁ ভাই। বাবার কাছে এসেছিল সম্ভবত। কিন্তু কেন এসেছিল জানি না। আমি জানি বাবার উপর সন্দেহ করা ঠিক হচ্ছে না তবুও মনে হলো তাই…”

স্বচ্ছ ক্রুদ্ধ হয়ে জবাব দিল,
” সন্দেহ করা ঠিক হচ্ছে না আবার কী? মানুষটা সাংঘাতিক। এই কয়দিনে যেন নতুন চিনছি তাকে। তার এই রূপ সম্পর্কে আমি অবগত ছিলামই না। আবারও বোঝাপড়া হবে! শুধু একবার উনি বাড়ি ফিরুক।”

সৌমিত্র এবার আর কিছু বলে না। সে নিজেও হতবাক হবে কাজটা যদি সত্যিই তাদের বাবা করে থাকে। স্বচ্ছ জিজ্ঞেস করল,
“ইয়াকীনের ডেরা কোথায় জানিস তুই?”

“আমি একবার শুনেছিলাম। কিন্তু এখনো ওখানে থাকে কিনা জানি না।”

“গাড়ি থেকে নাম।”

সৌমিত্র তব্দা খেয়ে তাকায় ভাইয়ের দিকে। অসহায় পানে বলে,
“তুমি সবসময় আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কী মজা পাও ভাই?”

“নাম বলছি!”

সৌমিত্র এবার বাধ্য মতো নেমে গেল। জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই স্বচ্ছ বলল,
“ফোনে ইয়াকীনের আগের ডেরার এড্রেস পাঠা। আর বাকিদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা এখন ও ওখানেই থাকে কিনা। আমার হাতে সময় কম। আমি চাইনা কোনোভাবে আমার বা বাবার জন্য মোহের সামান্যতমও ক/ষ্ট হোক।”

স্বচ্ছ তাড়াহুড়ো করে গাড়ি নিয়ে চলল। সৌমিত্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“হয়, হয়। প্রেম রোগে ধরলে এমনি হয়।”

ধীরে ধীরে দুচোখ খুলে ঝাপসা দেখল ইয়াকীন। টিমটিমে আলোতে শুধু অস্পষ্ট দেখল এক নারী অবয়ব। নড়েচড়ে ওঠে ইয়াকীন। মস্তিষ্ক তাকে মনে করায় জ্ঞান হারানোর আগের কাণ্ড। রাগে ফেটে পড়ে সে। উঠে বসতে গিয়ে খেয়াল করে তারই হাত-পা বাঁধা। মোহ তাকিয়ে তাকিয়ে ইয়াকীনের কর্মকাণ্ড দেখছে। হাতে তার ফোন। ফোনটা ইয়াকীনের। ইয়াকীন চিৎকার দিয়ে ওঠে,
“খুলে দে বাঁধন।”

মোহ স্পষ্টভাবে বলে,
“খুলব। একটা শর্ত আছে আমার।”

“তোর শর্তের গুষ্টির ***। তুই না খুললে তোর অবস্থা কী হবে জানিস? খুলে দে।”

“নিজের অবস্থার কথা চিন্তা করছি না মোটেই। ভয় দেখাতে আমিও পারি। আমার হাতে এখনো দড়ির কিছু অংশ আছে। এটা দিয়ে চেপে ধরলে এবার জ্ঞান আর হারাবি না। চিরতরে ঘুমিয়ে পড়বি। এখন পছন্দ তোর। আমার কথা মতো কাজ করবি নাকি আমি আমার আগের কাজটা পুনরায় করব।”

দড়ির ফাঁ/সের কথা মনে পড়তেই ইয়াকীনের যেন ম/রণ যন্ত্র/ণা অনুভব করে। কত কাছেই ছিল মৃ/ত্যু। সে ভয়ে পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বলে,
“না, না৷ আমি ম/রতে চাইনা।”

মোহ হাসে। হাসিতে তাচ্ছিল্য মিশে রয়েছে।
“যে নিজেই মৃ/ত্যুর ভয় কাটাতে পারে না সে আবার অন্যকে মা/রতে আসে।”

“আমাকে ছেড়ে দে।”

ইয়াকীনের কণ্ঠে এবার অনুরোধ। মোহ বলে,
“শর্ত মানবি?”

“কী শর্ত? সব মানব।”

“আমি ভিডিও করব সেখানে সমস্ত কীর্তির কথা স্বীকার করবি। তোকে কে কাজটা করতে বলেছে সব বলতে হবে। আমি মন্ত্রী সাহেবের পতন চাই।”

ইয়াকীন সঙ্গে সঙ্গে হাঁসফাঁস করে উঠে বলল,
“না৷ এটা আমি পারব না। আমি নিজের ভুল স্বীকার করতে পারব কিন্তু মন্ত্রী সাহেবের নাম নিতে পারব না।”

“তাহলে এখানেই ম;রতে হবে।”

মোহ শুধু আতঙ্কিত করতেই এগোয় ইয়াকীনের নিকটে। ছটফটিয়ে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে ইয়াকীন। মোহ দড়িটা ইয়াকীনের গ/লায় দিতেই ইয়াকীন বলে,
“আমি সব করব। আমারে মা/রিস না। বাসায় দুইডা পোলা আছে আমার। মা নাই তাদের। ছেড়ে চলে গেছে। আমি ম/রলে ওদের কে দেখবে? দুই বেলা খাবার তুলে দেওয়ারও লোক নাই।”

মোহ থমকায়। কথাগুলো হৃদয়ে সামান্য পীড়া দেয়। মায়া লাগে। তবে এই মায়া ক্রোধের ঊর্ধ্বে যায় না। পৃথিবীর সকল মানুষ নিজ স্বার্থে কাজ করে। লোকটি যদি কাজটি করে বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে তবে মোহও কাজটি করছে সরোয়ার সাহেবের আসল রূপ বের করতে।
“গু/ণ্ডামি, কিড;ন্যাপিং ছাড়াও অনেক কাজ করা যায়। যা অন্যায় ব্যতীত। তুই সেটা করিস নি। আজকাল মানুষ ময়লা সংগ্রহ করেও সংসার চালায়। তাই আমাকে এসব কথা বলে ভোলানো সম্ভব নয়।”

বহু তর্ক বির্তকের পর অবশেষে নিজের কাজ করতে সক্ষম হলো মোহ। শুধুমাত্র একারণেই সে এখনো পালিয়ে যায় নি। সে যদি পালিয়ে যায় তবে সত্যিটা কাউকে মুখ ফুটে বললেও বিশ্বাস করত না। সে শা/স্তি চায় নিজের সাথে করা অ/ন্যায়ের। কঠোর শা/স্তি।

মোহ কাঁচুমাচু করে বের হলো ছোট্ট কুঠুরি মতো ঘর থেকে। বাহিরে বিশাল বারান্দা। বারান্দায় পড়ে থাকা নেশার বোতল দেখে বোঝায় যাচ্ছে এখানে প্রতিদিন আড্ডা বসে নেশাখোরদের। মোহ বাহিরে গিয়ে বুঝল এই জায়গাটি ভালো নয়। চারিপাশে সব পুরুষ জু/য়া খেলতে বসেছে। এ সময় এক অল্পবয়সী নারীকে দেখে হতবাক হয়ে ঘুরে ঘুরে মোহকে দেখছে তারা। ওড়না দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টায় রইল মোহ। হাঁটার গতি বাড়াল। পায়ে নেই জুতো। নিচে থাকা ছোটো ছোটো ইটের টুকরো পায়ে বিঁধছে। গলি পেরিয়ে পাকা রাস্তায় এলো মোহ। এখানে দুয়েকটা গাড়ি চলছে। স্বস্তির শ্বাস ফেলল সে। জায়গাটি দেখে তার গ্রাম মনে হলো না আর। তবে কি সে ফের ঢাকা শহরে চলে এসেছে? ইথান কী করছে তাকে ছাড়া? দুর্বল শরীরে এসব ভাবনা চিন্তায় মাথা ঘুরল মোহের। পাশে এক দোকানের সাইনবোর্ড দেখে বুঝল জায়গাটি আসলেই শহরের মধ্যে। মোহ এবার ইয়াকীনের ফোনটা দেখে ভাবল, বাবার নম্বরে কল দেওয়া যাক। ফাঁকা অটো পায় কিনা সেটা ভেবে ভয়ে ভয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফোনের নম্বর ডায়াল করতে থাকল সে। অন্ধকার নেমে এসেছে আকাশে। সামনে দেখা গেল এক বড়ো গাড়ির আলোর ঝলকানি। বেশ জোরেই আসছে। নিজের শক্তি হারাচ্ছে মোহ। আগপাছ না ভেবে যেই না হাত বাড়িয়ে গাড়িকে দাঁড় করাতে চাইল গাড়িটি থেমেও গেল। গাড়ি থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসা মানুষটিকে দেখে বিস্মিত হলেও যেন কোথাও স্বস্তির বাতাস এসে লাগল মনে। স্বচ্ছ ছুটে এলো। মোহের অবস্থা পরিলক্ষিত করল। পায়ে জুতো নেই, হাতে এখনো দড়ি দিয়ে বাঁধার দাগ স্পষ্ট। সুন্দর হয়ে সবসময় পরিপাটি হয়ে থাকা চুল এলোমেলো। গোল গোল সুন্দর আঁখি দুটো যেন কিছু ঘণ্টার ব্যবধানে গর্তে ঢুকে গিয়েছে। কপালের পাশে জমাট বাঁধা র;ক্ত। মোহ তাল হারায়। চোখ বুঁজে আসে। সে নিজেও জানে না এতক্ষণ কী করে সাহস ধরে রেখে কাজগুলো করেছে। এখন আর শক্তিতে কুলায় না। স্বচ্ছ চোট করে ধরে মোহের বাহু।
“ঠিক আছো তুমি? কী হয়েছে তোমার? কে করেছে অবস্থা?”

স্বচ্ছের শ্বাসরুদ্ধকর কণ্ঠ। কী যে উচাটন তার মনে সেটা তার কথাতেই স্পষ্ট। মোহ প্রায় নিভে যাওয়া কণ্ঠস্বরে বলল,
“আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবেন প্লিজ? আমি বাড়ি যেতে চাই।”

“হ্যাঁ। চলো। আমায় ধরে হাঁটো। এখন আবার অস্বস্তি বোধ করো না।”

স্বচ্ছের কোথায় এক পলক তাকাল মোহ দুর্বল দৃষ্টিতে। স্বচ্ছ আস্তে করে মোহের হাত ধরল। মোহ পায়ের ধাপ ফেলে খুবই ধীর গলায় বিড়বিড়িয়ে বলল,
“হয় না অস্বস্তি এখন আর।”

স্বচ্ছের কান অবধি কথা পৌঁছায় না। সে নানান চিন্তায় দিশাহারা। মোহকে সাবধানে গাড়িতে তুলে বসাতেই মোহ বলে,
“পানি আছে? তেষ্টা পেয়েছে।”

“আচ্ছা দাঁড়াও। আমি দেখছি। বসো একটু।”

মোহ বন্ধ করে বসে রইল। স্বচ্ছ দোকানে গিয়ে পানি কিনে আনলো। পানি খেয়ে এবং মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে যেন ফিরে এলো চেহারায় সামান্য সজীবতা। শক্তি ফিরে পেল যেন মোহ। স্বচ্ছ এবার বলল,
“তোমার হাতটা দাও।”

মোহের নেত্রপল্লব বড়ো হলো। শুধাল,
“কেন?”

স্বচ্ছ জবাব ব্যতীত মোহের হাত ধরল। মোহের হাতে দাগ হয়ে যাওয়া অংশে ঠাণ্ডা পানি দিলো সে যত্নের সহিত। হাতটা ধরেছেও হালকাভাবে। যদি আবার আ;ঘাত পায়? ব্যস্ত কণ্ঠে স্বচ্ছ এবার বলে,
“একটু হলেও যন্ত্র/ণা থেকে রেহাই পাবে।”

এবার গাড়ির দরজা খোলে স্বচ্ছ। হাঁটু মুড়িয়ে বসে সে গাড়ির কাছে। মোহকে বলল,
“পা একটু বাড়িয়ে দাও।”

মোহ সাফ মানা করে।
“না, না। পায়ে দিতে হবে না। উঠুন। খারাপ দেখাচ্ছে বিষয়টা।”

“আমার বিষয় খারাপ দেখাক, ভালো দেখাক, বিশ্রী দেখাক তোমায় চিন্তা করতে হবে না। পা ধরে মা/রব এক টান। শুধু পা নয় পুরো বডি চলে আসবে।”

মোহ জেদ ধরে বলল,
“আমি বাড়ি যাব। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এতটুকু সাহায্য কী করতে পারবেন? নাকি অন্য রাস্তা দেখব?”

স্বচ্ছের ঘোলাটে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এবার মোহের জেদ অতিক্রম করে। মোহকে জানান দেয়, এবার তার কথা না শুনলে সত্যিই পা ধরে দেবে টান। মোহ পা বাড়িয়ে দেয়। আস্তে করে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিলো স্বচ্ছ। বিড়বিড়িয়ে নিজ মনে বলল,
“সূর্যের সমান তেজ নিয়ে জন্ম নিয়েছে যেন!”

সবশেষে গাড়িতে উঠে বসে স্বচ্ছ। বুকের ধকধকানি কমানো যাচ্ছে না কিছুতেই। মন করছে বা/জে এক আবদার। এত সময় উদ্ভ্রান্ত হয়ে খুঁজে যাওয়া নারীটি তার সামনে থাকায় জড়িয়ে ধরে নিজেকে শান্ত করতে মন চাইছে। আচমকা স্বচ্ছ নিজের দুহাত দিয়ে নিজের দাড়ি যুক্ত গালে আলতো করে একের পর এক থা/প্পড় মা/রতে লাগলে অবাক পানে তাকায় মোহ। এই লোকটা আবার পাগল হলো নাকি? আকাশসম বিস্ময় নিয়ে বলল,
“এ কী! মাথা ঠিক আছে আপনার? নাকি যতটুকু ভালো তারগুলো ছিল সেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে?”

স্বচ্ছ হাফ ছেড়ে বলল,
“তুমি ওসব বুঝবে না। তোমাকে খুঁজে পাওয়ার পর মনে অদ্ভুত চিন্তাধারা ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

“কী চিন্তাধারা?”

স্বচ্ছ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঢক গিলে নির্লিপ্তে বলে ফেলল,
“অশ্লীল অসভ্য চিন্তাধারা।”

মোহের চক্ষুদ্বয় তখন কপালে। পুরো মুখশ্রীতে বিস্ময়ের ঝলকানি। থমতম খেয়ে শুধায়,
“মানে?”

“না, কিছু না। চুপ করো তো। আমার চিন্তার কথা বলতে গেলে আমি এক্সি/ডেন্ট করে বসব।”

স্বচ্ছের ধমকানিতে ভ্যাবাচেকা খেয়ে নীরব হয় মোহ। মিনিট দুয়েক পরেই স্বচ্ছ হুট করে শুধায়,
“আচ্ছা! কাউকে নিয়ে অসভ্য চিন্তা কখন ঘুরপাক খায়?”

মোহ বিরক্তি নিয়ে তাকায় স্বচ্ছের পানে। এই লোকের কথার আগামাথা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই মোহ সোজা উত্তর করে,
“যখন ভেতরের কুস্বভাব মেয়েদের দেখলে নাড়া দেয় তখন।”

“ছি, ছি। বহুবচনে যাইনি আমি। একবচনে আঁটকে আছি। আমার অসভ্যতা একবচনকে ঘিরেই।”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here