#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৬।
‘মি. রাবীর খান, আমার পি.এ কে ছেড়ে দাও। নয়তো তোমার পি.এ কে আমি জানে মেরে ফেলব।’
রাবীর দাঁতে দাঁত চেপে রাগী গলায় বলে,
‘আমার গোডাউনে আগুন লাগানোর সাহস হয় কী করে তোমার?’
‘প্রমান আছে? হু? আমি যে তোমার গোডাউনে আগুন লাগিয়েছি তার কোনো প্রমান আছে? আগে প্রমান দাও, তারপর কথা বলো।’
‘হ্যাঁ, সেই প্রমানের জন্যই তোমার পি.এ কে এখানে ধরে আনা হয়েছে। আর এই কাজটা আমি না, পুলিশ করেছেন।’
‘পুলিশকে দিয়ে তুমি করিয়েছো। খুব খারাপ করছো রাবীর খান। আমি কিন্তু এর শোধ নিয়েই ছাড়ব।’
সাদরাজ চেঁচিয়ে বলল। রাবীর ঠান্ডা মেজাজে বলল,
‘যদি তুমি বা তোমার লোক কিছু করে না থাকে তবে তুমি নিশ্চিন্তে থাকো, তোমার লোকের কিছুই হবে না।’
সাদরাজ কঠিন গলায় বলল,
‘আমি আমার পি.এ কে আধঘন্টার মধ্যে আমার অফিসে দেখতে চাই। আর তা না হলে কিন্তু, তোমার পি.এ আধঘন্টা পর আর এই দুনিয়াতেই থাকবে না। কথাটা যেন মাথায় থাকে।’
সাদরাজ কল কাটে। রাবীর ফোনটা চেয়ারের উপর ছুঁড়ে মারে। তার মন বলছে, এইসব কিছুর পেছনে সাদরাজের’ই হাত রয়েছে। কিন্তু, এখন উপযুক্ত প্রমানের অভাবে সে কিচ্ছু করতে পারছে না।
একজন অফিসার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। রাবীর তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,
‘কিছু বলেছে?’
‘না। সে তখন থেকে এক কথাই বলছে, সে কিছু জানে না। তার স্যার কিছু করেনি।’
‘ঠিক আছে। তাকে এবার ছেড়ে দিন। প্রমান ছাড়া তো আর কিছু করা যাবে না। আগে প্রমান পায়, তারপর সব হবে।’
থানা থেকে বেরিয়ে রাবীর যখন গাড়িতে উঠে, তখনই তার ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে কিছু ম্যাসেজ আসে। সে গাড়িতে গিয়ে বসে। ড্রাইভারকে বলে গাড়ি স্টার্ট দিতে। তারপর সে সেই ম্যাসেজ অপশনে ঢোকে। কিছু ছবি পাঠানো হয়েছে। রাবীর দেখে ছবিগুলো তো মেহুলের। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সে একজনের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে বসে আছে। তবে তার মুখ দেখা গেলেও তার অপর পাশের মানুষটাকে চেনা যাচ্ছে না। কারণ ছবিটা সেই ব্যক্তির পেছন থেকে তোলা। তবে এই ছবি দেখে একটা জিনিস ঠিকই আন্দাজ করা যাচ্ছে যে, ব্যক্তিটা একজন পুরুষ মানুষ। আর তার সাথে ছবিগুলোতে মেহুলের হাস্যজ্জ্বল মুখটাই দেখা যাচ্ছে। রাবীর বুঝতে পারে না লোকটা কে। সে সঙ্গে সঙ্গেই ঐ নাম্বারে কল দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে নাম্বারটাও বন্ধ। তাই সে আপাতত ছবিগুলো সেইভ করে গ্যালারিতে রেখে দেয়। তারপর সে ড্রাইভার কে বলে সংবাদপত্রের অফিসে যেতে। ড্রাইভার সেদিকেই গাড়ি ঘুরায়।
রাবীর সেই অফিসে গিয়েই সোজা বসের রুমে যায়। বস এবার তাকে দেখে জোরপূর্বক হাসে। সালাম দিয়ে বলে,
‘কেমন আছেন, খান সাহেব?’
‘জি, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সেই রিপোর্টার ছুটি থেকে এসেছেন?’
‘হে? অহ হ্যাঁ হ্যাঁ, এসেছেন। আপনি বসুন। আমি উনাকে কল দিয়ে আসতে বলছি।’
তারপর তিনি একজন ব্যক্তিকে কল দিয়ে তার কেবিনে আসতে বলেন। রাবীরের দিকে চেয়ে বলেন,
‘কী খাবেন বলুন, চা না কফি?’
‘কিছুই না। কাজে এসেছি কাজ শেষে চলে যাব।’
বস জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজালেন। তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। তিনি কোনমতেই চাইছেন না, তার অফিসের কোনো রেপুটেশন খারাপ হোক। কিন্তু, কীভাবে কী হয়েছে সেই ব্যাপারেও তিনি অবগত নন। তাই আপাতত তিনি চুপ রইলেন।
একটু পর সেই কেবিনে একজন ব্যক্তি আসেন। বস তাকে দেখে বলেন,
‘আসুন, আপনার সাথে রাবীর খান কথা বলতে চাইছেন।’
লোকটা ইতস্তত স্বরে রাবীরের দিকে চেয়ে বলে,
‘জি স্যার, বলুন।’
‘বসুন আপনি।’
লোকটি চেয়ারে বসে। তার চোখ মুখ স্থির নয়। সে ব্যস্ত চোখে এদিক ওদিক দেখছে। রাবীর জিজ্ঞেস করে,
‘গত বিশ তারিখের একটা প্রতিবেদন, যেটা একটা মেয়েকে নিয়ে তৈরি করা হয়; তার গানের বিষয়ে। সেই প্রতিবেদনটা কি আপনি তৈরি করেছিলেন?’
লোকটা ঢোক গিলে। অস্থির চোখে বসের দিকে তাকায়। বস তার দিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। লোকটি বুঝতে পারছে না যে সে অন্যায়টা কী করেছে। সে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
‘জি।’
‘আচ্ছা। আর সেই প্রতিবেদনটা তৈরি করার কথা আপনাকে কে বলেছে?’
‘একজন লোক।’
রাবীরের দু ভ্রু এর মাঝে খানিক ভাঁজ পড়ে। সে জিজ্ঞেস করে,
‘কে সে?’
‘আমি তো তাকে চিনি না।’
‘নাম পরিচয় কিছুই জানেন না?’
‘নাম বলেছিলেন সিয়াম, যতটুকু মনে পড়ছে।’
‘আর পরিচয়?’
‘যেই ভার্সিটির মেয়েকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছি সেই ছেলেটাও সেই ভার্সিটির।’
রাবীর তখন অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে,
‘আর কিছু জানেন আপনি তার ব্যাপারে?’
‘না স্যার।’
‘ঠিক আছে। তবে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন কারো অনুমতি ব্যতিত তাকে নিয়ে খবরের কাগজে কিছু লিখবেন না, বুঝতে পেরেছেন?’
‘জি স্যার।’
রাবীর উঠে দাঁড়ালে বস বলেন,
‘কিছু খেয়ে যান। এভাবে খালি মুখে চলে যাচ্ছেন..’
রাবীর এক পলক তার দিকে চেয়ে বলে,
‘আমি আপনার বাড়ির মেহমান নয় যে খেয়ে যেতে হবে। আসছি।’
________
রাবীর মেহুলকে কল দিচ্ছে। কিন্তু রিং বাজলেও কল রিসিভ হচ্ছে না। বেশ অনেকক্ষণ পর মেহুল ওয়াশরু থেকে বেরিয়ে আসে। একটা লম্বা সময় ধরে শাওয়ার নিয়েছে সে। ভেজা চুল ভালোভাবে মুছেওনি। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই নিজেকে দেখে ভাবনায় পড়ে। কাল রাতের কথা মনে হয়। রাবীরের শরীরের উষ্ণতা গায়ে যেন এখনো মিশে আছে তার। খানিক লজ্জা পায়। ঠোঁট চেপে হাসে। তখনই ফোনটা তার আবার বেজে উঠে। উঁকি দিয়ে স্ক্রিনে নেতা সাহেব নামটা দেখতেই দ্রুত কল রিসিভ করে সে। রাবীর জিজ্ঞেস করে,
‘কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?’
‘শাওয়ার নিচ্ছিলাম।’
রাবীর ঘড়ির দিকে চেয়ে বলে,
‘বিকেল পাঁচটায়?’
‘হ্যাঁ, আজকে একটু ঘর দোর পরিষ্কার করেছি তো। তাই একেবারে সব করে এখন শাওয়ার নিয়েছি।’
‘খেয়েছেন?’
‘না, এখন গিয়ে খাব। আপনি খেয়েছেন?’
‘জি, আমি সবকিছু সময়মতো করি।’
মেহুল তখন ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘আপনি কি আমাকে খোঁচা দিতে চাইছেন নাকি?’
‘না, আমার এসব খোঁচাখুঁচির অভ্যাস নেই। একটা জরুরি কাজে ফোন দিয়েছিলাম।’
‘জি, বলুন।’
‘সিয়াম নামে কাউকে চিনেন?’
মেহুল অল্প অবাক হয়। বলে,
‘জি, ও তো আমার ফ্রেন্ড। কেন?’
‘আপনার নামে প্রতিবেদন ওই লিখিয়েছে।’
‘কী?’
মেহুল চমকে যায়। বলে,
‘না, ও এমন কিছু করলে তো আমাকে বলতো।’
‘আমি আজকে সেই রিপোর্টারের সাথে কথা বলে এসেছি মেহুল। উনি আমাকে এই নামটাই বলেছেন। আর বলেছেন, এই ছেলেটা নাকি আপনার ভার্সিটিতেই পড়ে।’
মেহুল তো বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। এমন কিছু হবে সে ভাবেনি। তার ক্লাসের কেউই এই ব্যাপারটা স্বীকার করেনি। আর সিয়াম, এই ছেলে হুট করে কেন এসব করতে যাবে? ওর সাথে তো খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তার নেই। তাহলে?
মেহুলের ভাবনার মাঝেই রাবীর বলে,
‘আপনার সাথে আমার আরো কিছু কথা আছে। আমি একটু পর আসছি।’
‘আবার কী হয়েছে?’
‘এসেই সবকিছু বলব। আপনি গিয়ে এখন আগে খেয়ে নিন।’
রাবীর এই বলে কল কেটে দেয়। মেহুলের চিন্তার মাত্রা এবার দ্বিগুণ হয়। রাবীর আর কী বলতে চায়? এমন কী কথা, যার জন্য সে নিজেই এখানে চলে আসছে? আবার গুরুতর কিছু হয়েছে নাকি? উফফ, একটার পর একটা ঝামেলা যেন লেগেই যাচ্ছে। আজকাল একটুও শান্তি পাচ্ছে না সে। আর এইসব হলো একজন নেতাসাহেবকে বিয়ে করার সাইড ইফেক্ট।
চলবে…