#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৮
_________________
মেহরিন ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল বেণি করছে।তা মুগ্ধ নয়নে দেখছে শেহরেয়ার।মেহরিনের বেণি করা শেষ হলে সে পিছনে ঘুরে বললো,
-“দেখা শেষ হয়েছে?”
শেহরেয়ার মুচকি হেসে বললো,
-“আপনাকে দেখা একমাত্র শেষ হতে পারে আমার মৃত্যুতে।”
-“অনেক ফিল্মি ডায়লগ দেওয়া হয়েছে।এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।অনেক রাত হয়েছে!”
-“বাসর রাতে কেউ ঘুমায় নাকি?”
মেহরিন কিছু বলতে যাবে তার আগে শেহরেয়ার বললো,
-“চিন্তা করবেন না।প্রথম দিনই এমন কিছু আবদার করবো না যাতে আপনি অস্বস্তিতে পড়েন!চলুন আজ দুজনে চন্দ্রস্নান করি।”
-“আকাশে মেঘ জমেছে।আজকে চন্দ্রস্নান করার ইচ্ছাটা বাদ দেন।”
শেহরেয়ার মুখ গোমড়া করে বললো,
-“এই মেঘও এখন আমার শত্রু হয়ে গেছে।”
শেহরেয়ারের কথায় খিলখিল করে হেসে দিল মেহরিন।শেহরেয়ার মৃদু হেসে মেহরিনের হাসি দেখতে ব্যস্ত!শেহরেয়ারকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেহরিন হাসি থামিয়ে বললো,
-“শেহরেয়ার অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমান প্লিজ।আমার সকাল সকাল উঠতে হবে।অনেক কাজ আছে।”
-“আপনার ভার্সিটিতে তো দশটায় যাওয়া লাগে।তা সকাল সকাল উঠে কি করবেন?”
মেহরিন চোখ ছোট ছোট করে বললো,
-“আপনাকে আমি সবকিছু বলতে বাধ্য নই।”
তারপরে সে গিয়ে রায়ানকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।যা দেখে শেহরেয়ার নিঃশব্দে হেসে দিল।নিশ্বাস নিয়ে বললো,
-“বাই দ্যা ওয়ে ম্যাম!আমি কি বিছানায় আপনাদের সাথে ঘুমাতে পারবো?নাকি সোফায় শুতে হবে আমার?”
-“এতো কথা বাদ দিয়ে রায়ানের পাশে এসে শুয়ে পড়ুন।আপনি কি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন নাকি যে আপনি সোফায় শুবেন!”
-“হ্যাঁ তা তো ঠিক।আপনি তো বিয়েতে রাজিই ছিলেন।আই থিংক সামথিং সামথিং চলছে আপনার মনে।”
মেহরিন চোখ রাঙিয়ে শেহরেয়ারের দিকে তাকালো।শেহরেয়ার হাত উঁচু করে রাগ না করার ইশারা করে বললো,
-“রিলাক্স ম্যাম!আপনি ঘুমান।আমি এখনি শুয়ে পড়তেছি।”
_____________________
-“তুমি রান্নাঘরে কি করছো?”
হেনা সাহেবার কথায় পিছনে ঘুরে তাকালো মেহরিন।মৃদু হেসে বললো,
-“সকলের জন্য ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছি।”
হেনা সাহেবা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-“তুমি কি ভেবছো এইসব করে আমার মন জয় করতে পারবে?”
-“মা…..এটা আমার দায়িত্ব।আপনার মন জয় করার জন্য এইসব করার আমি প্রয়োজন বোধ করছি না!”
-“তুমি আমার মুখে মুখে তর্ক করছো?”
-“আহ্!চুপ করো হেনা।সকাল সকাল কি শুরু করলে?”
শেহমীর মির্জার কথায় পিছনে ঘুরে তাকিয়ে হেনা সাহেবা বললেন,
-“তুমি খালি আমার কথা শুনতে পারতেছো?তোমার ছেলের বউয়ের কথা শুনছো না?”
শেহমীর মির্জা সোফায় বসে খবরের কাগজে চোখ বুলাতে বুলাতে বললেন,
-“শুধু আমার না তোমার ছেলেরও বউ।”
-“মানি না আমি!”
-“তোমার মাননে কিছু যায় আসে না।”
-“মা আপনিও এভাবে বলছেন?”
সেতারা বেগম’ হেনা সাহেবার কথার কোনো জবাব না দিয়ে মেহরিনের কাছে গেলেন।মেহরিনের থুতনি ধরে বললেন,
-“মাশাআল্লাহ!কি সুন্দর আমার নাতবউ।”
সেতারা বেগমের কথায় মুচকি হেসে মেহরিন উনাকে সালাম করে বললো,
-“আপনি জানলেন কিভাবে আমার কথা দিদা?”
-“আমার পোলায় আমারে কইছে তোমার কথা।হেয় আর আমি মিল্লা উইঠে তো তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ি তখনই কইছে!”
শেহরেয়ার এসে সেতারা বেগমের কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“কেমন লাগলো আমার বউকে?”
-“অনেক ভালো লাগছে।তোর লিগ্গা একদম পারপেকঠ!”
-“দিদুন ওটা পারপেকঠ না।পারফেক্ট!”
-“ওই একখান হইছে।”
এর মধ্যে রায়ান নিচে নেমে শেহরেয়ারকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“গুড মর্নিং পাপা।”
শেহরেয়ার হাঁটু গেড়ে বসে রায়ানের গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
-“গুড মর্নিং বাবাই।”
সেতারা বেগম গিয়ে রায়ানের গাল ধরে বললেন,
-“ওমাহ্!কি ফুটফুটে বাচ্চাডা।”
হেনা বেগম পাশে থেকে বললেন,
-“আপনাদের এইসব আর কতক্ষণ চলবে?বিরক্ত লাগছে একদম।”
শেহমীর মির্জা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“তা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?রুমে গিয়ে পান চুবোও আর প্লান করো বউমাকে কিভাবে জ্বালাতে পারো!”
-“তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে?”
-“তোমার সাথে এভাবেই বলতে হয়।”
রায়ান কানে হাত দিয়ে বললো,
-“ওফ!এতো চিল্লাচিল্লি করছো কেনো তোমার?”
শেহমীর মির্জা রায়ানকে কোলে নিয়ে বললো,
-“কিছু না সোনা ভাই।তোমার দিদুন একটু চিল্লাচিল্লি করতে পছন্দ করে!”
হেনা সাহেবা আর সেখানে না দাঁড়িয়ে বাগানের দিকে চলে গেলেন।রায়ান সেতারা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আচ্ছা ওই ওল্ড লেডিটা কে?”
মেহরিন রায়ানের নাক টেনে বললো,
-“উনি তোমার দাদুর মা হন।তুমি উনাকে বড় মা বলল ডেকো।”
রায়ান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।তারপরে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসলো হেনা সাহেবা বাদে।
-“বাহ্ বৌমা!প্রথম দিন এসেই এতো কাজ করছো!”
-“এতো সামান্য বাবা!”
শেহরেয়ার ব্রেকফাস্ট শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“মেহরিন আপনি এখনো রেডি হননি কেনো?আপনার ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে তো প্রায়।”
এমন সময় সেখানে আসলেন হেনা সাহেবা।শেহরেয়ারের কথা শুনে বললেন,
-“ও কি এখন আবার ভার্সিটিতে যাবে শিক্ষকতা করতে?”
শেহরেয়ার ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“হ্যাঁ যাবেই তো।”
-“আমার ছেলের বউয়ের চাকরি করার কোনো প্রয়োজন নেই।”
শেহমীর মির্জা পাশে থেকে বললেন,
-“একটু আগে তুমি না বললে ও-কে ছেলের বউ হিসেবে মানো না।”
হেনা সাহেবা চোখ রাঙিয়ে শেহমীর মির্জার দিকে তাকালেন।মেহরিন চুপ থেকে সবটা শুনছিল এতোক্ষণ।কিন্তু সে এবার বললো,
-“আমি চাকরিটা ছাড়তে পারবো না মা।”
শেহরেয়ার মেহরিনের কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“আপনার চাকরিটা ছাড়তেও হবে না মেহরিন।আপনি রেডি হয়ে আসেন।আমি এখানে অপেক্ষা করছি!”
হেনা সাহেবা হাত মুথো করে দাঁড়িয়ে আছেন।শেহমীর মির্জা উনার কাছে গিয়ে বললেন,
-“এইসব কথা না বললেই পারো।”
শেহমীর মির্জা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন।হেনা সাহেবা সেখানে না দাঁড়িয়ে উনার রুমে চলে গেলেন।
________________________
-“আপুকে অনেক মিস করছি রে!”
রুমি মুনিয়ার কাঁধে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
-“কিছু তো করার নেই তাই-না।বিয়ে হয়ে গেছে আপুর।এখন তো তার শ্বশুরবাড়িতেই থাকবে।”
মুনিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এমন সময় হামিদ এসে সেখানে উপস্থিত হলো।হামিদকে মুনিয়া আর রুমি দুজনেই বেশ অবাক হলো।মুনিয়া ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“রুমি তোর কাজিন এসেছে তোর সাথে দেখা করতে।”
হামিদ চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে বললো,
-“আমি রুমির সাথে না আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি।”
মুনিয়া অবাক হয়ে বললো,
-“আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন মানে?”
হামিদ রুমিকে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো।রুমি মুচকি হেসে মুনিয়াকে বললো,
-“হয়তো কোনো জরুরি কথা আছে।আমি বরং ক্যান্টিনের দিকে যাই।কথা শেষ হলে চলে আসিস।”
মুনিয়া রুমিকে আটকানোর চেষ্টা করলেও সে এক প্রকার দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল।মুনিয়া রাগে কটকট করে বললো,
-“এই মেয়েটাও না!”
-“ও চলে গিয়েছে তো কি হয়েছে?আমি তো আছি।”
হামিদের কথায় তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো মুনিয়া।
-“সমস্যা কি?আমার সাথে আপনার কিসের কথা আছে?”
-“আগে আমার কথা শোনো।তাহলে তো জানবে!”
-“এই আপনি আমাকে ‘তুমি’ করে বলছেন কেনো?”
-“আমি কাউকে বেশিক্ষণ আপনি করে বলতে পারি না।আর ভালোবাসার মানুষকে তো একদমই না।”
মুনিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“পাগল হয়ে গেছেন আপনি?”
-“সে তো তোমাকে দেখার পরে থেকেই হয়ে গেছি।”
-“দেখুন এমনি আমার মন ভালো নেই।এখন এইসব কথা বলবেন না।”
-“আমি তো বলবোই।”
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]