তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছি🤍 #ইশা_আহমেদ #পর্ব_৬

0
371

#তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছি🤍
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৬

১৭.
তনাজকে সকাল সকালই তার বাবা তাকে নামিয়ে দিলো জমিদার বাড়ির সামনে।আজকে সে শাড়ি পরেছে তিন বছর পর।শাড়িটা সেদিনের পর থেকে আর পরা হয়নি তার।শাড়ি পরেছে কিন্তু লাল না কালো।সে মাথায় ঘোমটা দিয়ে জমিদার বাড়িতে পা রাখলো।তিনটা বছর পর সে এ বাড়িতে ঢুকছে।ছোট্ট একটা মেয়ে মামনি বলে ছুটে তার কাছে আসলো।তানাজ তাকে কোলে তুলে নিলো।মেয়েটার মুখে চুমু দিয়ে বলল,,,,”কেমন আছে আমার আরসু মামনি”

ছোট্ট মেয়েটা বলল,,,”আমি তো ভাতো তেমন আছো মামলি”

তানাজ আরসুর কথায় ফিক করে হেসে দিলো।সে তানাজকে আরো চুমু দিয়ে বলল,,,,”আমিও ভালো আছি আমার সোনা মা”

দূর থেকে তানিম তানাজের হাসি দেখে।সে তিনবছরে অনেকবারই লুকিয়ে দেখে গিয়েছে এই মেয়েটাকে কিন্তু যত বারই দেখেছে সে হাসিনি।সেই দিনের পরই থেকেই হয়তো ওর হাসি গায়েব হয়ে গিয়েছে।তানিমও যে তানাজকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছিলো তা তানাজ চলে যাওয়ার পরই সে খুব করে টের পেয়েছে সে তানাজকে ভালোবাসে ভীষন রকম ভালোবাসে।

তানাজকে দেখে সবাই খুশি হয়।জমিদার বাড়ির ছোট বউ যে তিনবছর পর ফিরেছে।সামিহা নিচে আসে।তানাজকে দেখে জড়িয়ে ধরে।তারপর আরশিকে রুমে নিয়ে যেতে বলে তানাজকে কিন্তু তানাজ না করে।সামিহা আর আরশি জোড় করে তানাজকে তানিমের রুমে ঢুকিয়ে দেয়।বাইরে থেকে লক করে দেয়।তানাজ চোখ বুলিয়ে নেয় রুমটাতে না কেউ নেই এখানে।

ও হাফ ছেড়ে বাঁচে ভাবে রুমে তানিম নেই।ওদের বিয়ের ছবিটা এখনো রুমে বড় করে টানানো আছে।তানাজের খুব কান্না পেলো ছবিটা দেখে কিন্তু সে কাঁদতে চায় না।তাই নিজেকে সামলে নিলো।পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরলো তাকে চমকে ওঠে তানাজ।কারো গরম নিশ্বাস তার কাঁধে আছড়ে পরছে।

সে জানে লোকটা অন্য কেউ নয় তার ভালোবাসার মানুষ।তানাজ কাঁপতে থাকে। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও সেই শক্তি হয়ে উঠে না।তানিম এতো বছর পর তার প্রেয়শীকে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি তাইতো জড়িয়ে ধরলো।সে বুঝতে পারছে তানাজ ভীষণ ভাবে কাঁপছে।তানাজকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরে।তানাজের নড়াচড়া না দেখে ওকে নিজের বুক থেকে উঠিয়ে দেখে ও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।

তানিম তানাজকে কোলে তুলে বিছনায় শুইয়ে দেয়।কপালে চুমু খায় গভীর ভাবে।পাশে বসে দেখতে থাকে তানাজকে গভীরভাবে।নিজের তিনবছরের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।তানিম তানাজের হাত ধরে বলে,,,,
“আমি তোমাকে কখনোই ছাড়বো না তানুরানী তুমি আমার শুধুই আমার”

১৮.
সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে।আরশি আরসুকে কোলে নিয়ে বসে আছে। তানাজ মাথা নিচু করে সামিহার পাশে বসে আছে সিফাত ও আছে।তানিম তুনান বসে আছে সিফাতের পাশে।
সামিহা বলল,,,,
“আমি জানি না তানাজ আর তানিম তোমাদের মাঝে কি হয়েছিলো যে তোমরা তিনটা বছর একসাথে থাকোনি।কিন্তু যাই হোক এখন থেকে তোমাদের একসাথে থাকতে হবে সেদিন তোমাদের ভেতরে যাই হোক না কেনো!তানাজ তুমি তানিমের সাথে ঢাকা যাবে এটাই আমার শেষ কথা”

তনাজ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,,”মা..মনি আ..মি যেতে পা..রবো না। আ..র আমি থাক…তেও চা…ই না উ..নার সা..থে”

তানিম রেগে বলে,,,”তুমি থাকতে চাও বা না নাও তোমার আমার সাথেই থাকতে হবে এটাই শেষ কথা। আমার থেকে কেউই তোমায় আলাদা করতে পারবে না সে যেই হোক না কেনো।তুমি শুধু আমার শুধুই আমার।”

তানিম ওখান থেকে হনহন করে বের হয়ে যায়।সিফাত সামিহা হেসে চলে যায়।তারা বুঝতে পেরেছে তাদের ছেলে ভালোবেসে ফেলেছে তানাজ নামক মেয়েটাকে।আরশিকে চলে যেতে বলে তুনান চোখের ইশারায়।

তারপর তানাজের কাছে গিয়ে বলে,,,,”মনে আছে তোমার সেইদিনের কথা যেদিন তোমার আর আমার প্রথম দেখা হয়েছিল।তুমি আমায় নিজের বন্ধু হতে বলেছিলে তাই না।আমি কিন্তু উত্তরটা এখনো দেইনি। আজকে বলছি আমি তোমার শুধু বন্ধু না বড় ভাইও হতে চাই দেবে কি সেই অধিকার আমায়”

তানাজ কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়ায়।তুনান চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,,,”কাঁদেনা বোন আমার তুমি বলো তুমি কি ভালোবাসো না তানিমকে”

তানাজ কিছু বলে না।তুনান হাসে তারপর বলে,,,,”দেখো এখন যদি তানিম অন্যকোনো মেয়েকে বিয়ে করে নেয় তুমি না গেলে তখন সয্য করতে পারবে তুমি”

তানাজ কিছুটা জোড়েই বলে,,,”না না আমি ওনাকে অন্যকারো সাথে সয্য করতে পারবো না যাবো আমি কালকে উনার সাথে।”

তুনান মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায়।আরশি উপর থেকে সবই দেখছিলো।আরশির কাছে তুনান যেতেই আরশি বলল,,,,”কিছু বোঝাতে পেরেছেন”

তুনান বলল,,,,”তানিমের বিয়ের কথা বলে রাজি করিয়েছি। যাবে বলল তো”

১৯.
তানিম আর তানাজ আজও সেই তিনবছর আগের মতো গাড়ি করে বেরিয়ে পরলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।একটা পার্থক্য আছে শুধু সেইবার তানাজ প্রচুর কথা বলেছিল আর এখন তানাজ ভদ্রমেয়ের মতো চুপ করে বসে আছে।

তানাজ এবারও গাড়িতে ঘুমিয়ে পরে।তানিম তা দেখে হাসে।কোলে তুলে নেয় তার প্রেয়সীকে।তানাজের ঘুম ভাঙতেই সে নিজেকে তানিমের বাহুডোরে আবিষ্কার করে।তানিম তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তানাজ সরে যেতে চাইলে তানিম তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।তানাজ নিজেকে ছোটাতে চায় কিন্তু পারে না।

সে তানিমকে বলে,,,,”ছাড়ুন লাগছে আমার।আমাকে জড়িয়ে কেনো ধরেছেন।অসস্থি হচ্ছে ছাড়ুন আমাকে”

তানিম তানাজের গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলে,,,,,”ছাড়ার জন্য তো ধরিনি তানাজ রানী।আর আমার ছোয়ায় অসস্থি হচ্ছে না সমস্যা নেই তাও আমি তোমায় স্পর্শ করবো”

তানাজ কাঁপতে থাকে। অনেকদিন পরে সে এই স্পর্শ পাচ্ছে তার শরীর অসম্ভব কাঁপতে থাকে।নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে তানিম হুট করে তাকে ঠোঁটে আলতো করে চুমু খায়।তানাজের কাঁপা-কাঁপি বন্ধ হয়ে যায়।

তানিম মুচকি হাসে।তারপর তানাজকে বলে,,,,”দেখেছো আমার স্পর্শেই কেমন তোমার কাঁপা কাঁপি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”[লেখিকা ইশা আহমেদ]

তানাজ কোনো কথা বলে না।তার মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।সে এই তানিমকে চেনে না।সে চেনে তার গম্ভীর মাঝেমধ্যে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলা বরকে।কিন্তু এ তানিম তো কথায় কথায় তাকে স্পর্শ করছে।

২০.
আজকে তানাজের এইচএসসির রেজাল্ট দিয়েছে। তানাজ খুব ভালো নাম্বার পেয়েছে। তানাজ ভীষন খুশি।সে কখনোই ভাবেনি এতো ভালো রেজাল্ট হবে।তানিম হুট করে রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে তাকে জড়িয়ে ধরে।
তারপর তানাজের সারামুখে চুমু দিয়ে বলে,,,,”আমি যা চেয়েছিলাম তুমি তাই করে দেখিয়েছো তানাজ রানী।ভালোবাসি ভীষন”

তানাজ হতভম্ব হয়ে যায়। তানিমের মুখে ভালোবাসি শুনে ও বিশ্বাস করতে পারছে না যে তানিম ওকে ভালেবাসি বলেছে।ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,”আপনি মাত্র কি বললেন আরেকবার বলুন”

তানিম তানাজকে ছেড়ে দিয়ে বলে,,,,”আমি বলেছি আমি ভীষণ খুশি হয়েছি তোমার রেজাল্ট দেখে আমি এটাই চাইছিলাম।”

তানাজ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,,”মানে?”

তানিম বলে,,,,”ওতো মানে বুঝতে হবে না পড়াশোনায় মনোযোগ দাও সামনে ভার্সিটির এডমিশন।তোমাকে এখানের ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেতেই হবে আজকে থেকেই পড়াশোনা স্টার্ট করে দাও”

তানাজ কিছু বলে না। তানিম ফ্রেশ হতে চলে যায়।সে বলেই ফেলেছিলো কিন্তু শেষে কথা ঘুরিয়ে নেয়।

চলবে,,,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here