আমায়_ডেকো_অপরাহ্নে #আকাঙ্ক্ষা_আহনাফ_স্নেহা #পর্ব_০১

0
501

#আমায়_ডেকো_অপরাহ্নে
#আকাঙ্ক্ষা_আহনাফ_স্নেহা
#পর্ব_০১

সন্ধ্যায় ছাতা নিয়ে দোকান থেকে ফিরলাম তিথিকে টেলিফোন করে। তিথি আমার বান্ধবী, তার মাধ্যমিক ফলাফল খুব খারাপ হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি গিয়েছে সেই সকালে। তিথিদের বাড়িটা বিশাল বড় বাড়ি,তাই ডুকতে গেলে কেমন যেনো নিজেকে আলাদা কেউ মনে হয়। অবশ্য তিথির মা আমাকে খুব ভালোবাসে তিথির বান্ধবী হওয়ার সুবাদে।

তিথিকে ফোন করতেই সে কুড়মুড়ে কিছু একটা খেতে খেতে হেসে হেসে বলল ‘ চিত্রা, বাড়ির কেউ তেমন ধমক টমক দেয়নি। চিন্তা করিস না,বাবা কি না কী বলবে তা নিয়ে টেনশনে ছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি বাবা রাজশাহী গিয়েছে।’

‘ আচ্ছা রাখি তাহলে, বৃষ্টি পড়ছে বাড়ি যেতে হবে তড়িগড়ি।’

‘ আরেহ শোন, আমার সম্ভবত বিয়ে ঠিক হয়েছে। ঐ যে ফরহাদ সাহেব আছে না? একদিন স্কুলে এসে যে আমাকে খুকি বলে চলে গেলো। উনার সাথে,হিহিহি’

‘ আশ্চর্য হাসছিস তুই? ফরহাদ সাহেব উনার সাথে বিয়ে। ভদ্রলোক তো জাপান চলে যাবে শুনেছি। তোর থেকে উনাকে বয়সে বড় লাগে,কত বড় ভুড়ি দেখেছিস?’

কথার মাঝেই একজন বৃদ্ধ এসে টেলিফোনের জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন। ‘ কীসব আলাপ করছো, দেও ফোনটা। জরুরী সুসংবাদ দিতে হবে।’

আমার ধারণা উনার যদি ক্ষমতা থাকতো টেনে ফোনটা নিয়ে নিতেন। ভাবটা এমন করতেন যেনো কিছুই হয়নি। তিথির হাসি ছাড়া কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না। ফোনটা রেখে। বেগুনী রঙা ছাতা মেলে দিয়ে বাড়ির সামনে আসলাম। বা পায়ের স্যান্ডেলে একগাদা কাঁদা লেগে আছে। যার কারণে জুতোটা ভার লাগছে। ল্যাম্পোষ্টের আলোয় বাড়ির বাগান বিলাস গাছের নিচে একটা লম্বা লোক দাঁড়িয়ে আছে। সিগারেট ফুঁকে যাচ্ছে, লক্ষ্য করলাম উনি আমাদের বারান্দায় পরপর দু’বার তাকালেন। গেটের দেওয়ালের উপর চা রাখা ছিলো, সম্ভবত বৃষ্টির ফোঁটা পড়াতে চা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম পেছনে।

লোকটা শব্দ করে চুমুক দিচ্ছে কাপে, চায়ের কাপ হাতে নিয়ে পায়ে সিগারেটের ফিল্টার পিষে। এগিয়ে গেলেন বাড়ির নেম প্লেটের কাছে। কালো কালি দিয়ে বড় বড় অক্ষরে লিখা,’ চিত্রলেখা কুঞ্জ’ চিত্রলেখা আমার ভালো নাম। ডাকনাম চিত্রা। মা ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের বড় ভক্ত। আমাদের বাবা ছিলেন মায়ের রসায়নের শিক্ষক। লোকে বলে রসায়নে রসকষ নেই। কিন্তু কীভাবে যে মা- বাবার মাঝে প্রণয় শুরু হয়। এবং বিয়েও করে নেন। আমি যখন মায়ের পেটে, তখন মা পূর্বে থেকে আমার নাম ঠিক করে রেখেছেন। এবং আগ বাড়িয়ে বাড়ির নামও দিয়েছেন চিত্রলেখা কুঞ্জ। হুমায়ূন আহমেদের হিমুর হাতে কয়েকটি উপন্যাসে একটি বাড়ির নাম ছিল চিত্রলেখা। শুধু তাই নয়,মায়ের প্রিয় উপন্যাস মেঘ বলেছে যাব সেখানে দ্বিতীয় নায়িকার নাম চিত্রলেখা। বাড়ির নামটা মা পছন্দ করে রেখেছেন। বাবা প্রশ্ন করেছিলেন ‘ যদি আমাদের মেয়ে নাহয়?’

মা হেসে জবাব দিয়েছিল ‘ না হলে না হবে। বাড়ির নাম এটাই। চিত্রলেখা হলো একটি নক্ষত্রের নাম। নামটা আমার ভীষণ পছন্দের।’

আমাদের এই বাড়িতে পা রাখার প্রথম রাতেই আমি জন্ম গ্রহণ করি। বাবা কখনো কাঁদেন না, তাকে শক্ত মনে হয়। উনিও সেদিন খুশিতে কেঁদে বলেছেন ‘ এইতো চিত্রলেখা!’

বর্তমানে লোকটা নেম প্লেটটা ছুঁয়ে শব্দ করে উচ্চারণ করছে ‘ চি..ত্র..লে…’

আমি পিছন থেকে স্পষ্ট গলায় বললাম ‘ চিত্রলেখা কুঞ্জ, কে আপনি? বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?’

লোকটি উত্তর না দিয়ে বাগান বিলাস গাছের নিচে চলে যাচ্ছেন। বাড়িতে ডুকেই দেখলাম মা ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছে। আমি বললাম ‘ কী হয়েছে মা?’

মা আমাকে দেখেই কান্না থামিয়ে বললো ‘ তোর বাবা দরজা খুলছে না। সেই কখন থেকে কীসব সূত্র দাগিয়ে যাচ্ছে। লোকটা পাগল হয়ে গেলো না তো?’

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here