#রোদহীন_বিকালে_তুমি✨
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪
৮.
অস্টেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা শহরের একটা বিশাল এপার্টমেন্টে দাঁড়িয়ে আছে একটা লোক।লোকটা একটা মেয়ের ছবি নিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,,
“আমি আসছি জান খুব তাড়াতাড়ি। আ’ম কা’মিং সু’ন মা’ই জান”
রাফসান নামের একটা ছেলে এসে লোকটাকে বলল,,,,
“স্যার একটা মেয়ে এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে”
লোকটা গ’ম্ভী’র কন্ঠে বলল,,,,”কে এসেছে”
“স্যার মেয়েটা বলল আপনার কাছে এসে তার নাম আফিফা বলতে”
এবার লোকটার ভ্রু দুইটা বি*র*ক্তিতে কু’চকে গেলো।কপালে বু’ড়ো আ’ঙ্গুল দিয়ে স্লা’ই’ড করতে করতে বলল,,,,
“পাঠিয়ে দেও”
রাফসান ছেলেটা বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।কিছুসময় পর একটা মেয়ে রুমে আসলো।মেয়েটার পরনে একটা শর্ট ড্রেস।আর মুখে মেকাপ করে প্রচুর।মেয়েটা এসেই লোকটাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,
“বেবিববববববব আমি তোমাকে খুব মিস করেছি”
লোকটা আফিয়া নামের মেয়েটাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে রা*গি ক’ন্ঠে বললল,,,
“তোমার সা’হ’স কি করে হয় আমাকে জড়িয়ে ধরার।প্রচন্ড সা’হ’স বেড়েছে না।আর বেবি কি!আমি কি তোমার সাথে রিলেশনে আছি”
আফিফা নে’কা’মি করে বলল,,,”বেবিববববব মম ডেড তো চাই তোমার সাথে আমার বিয়ে দিতে তুমিই তো রা’জি হচ্ছো না প্লিজ এবার তো রা’জি হও”
লোকটা এবার রেগে আফিফাকে থা’প্প’ড় মে’রে বলল,,,,”ইউ স্টু’পি’ড গার্ল!তোমায় বলেছি না আমি একজনকে ভালোবাসি তারপরও ও কেনো বে’হা’য়া’র মতো পিছে পরে আছো”
আফিফা থা*প্প*ড় খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে গেলো।লোকটা বিরক্তি নিয়ে বলল,,,,”এই মেয়েটা একটু বেশিই করে”
৯.
আলভি তার ফ্রেন্ডের সাথে একটা নি’র্জ’ন জায়গায় বসে আছে!আলভির ফ্রেন্ড নাহিন,তিশাম,নিশান একসাথে বসে আছে।সবাই কথা বলছে আর আলভি এক জায়গায় চুপচাপ বসে আছে।নাহিন বলল,,,,
“কি শুরু করলি তুই আলভি তুই এমন থাকলে আমাদের কারো ভালো লাগে না তুই জানিস না”
আলভি বলল,,,”আমার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখ কেমন লাগে তারপর কিছু বলিস”
তিশাম আলভির কাঁধে হাত রেখে বলে,,,,”আমরা বুঝতে পারছি তোর ক*ষ্ট কিন্তু দেখ আমরা সবাই জানি ফারিহা কেমন তুই হাজার চে’ষ্টা করলেও ফারিহা আর ফিরবে না”
“জানি নাহ আমি কি করবো কিন্তু আনিশাকেও মে’নে নোওয়া স’ম্ভ’ব নয় আমার আর।আনিশার জন্যই সব হয়েছে ক*ষ্ট তো ওকে পেতেই হবে”
নিশান বলল,,,
“দেখ এখানে আনিশার কোনো হাত নেই তাই বলছি মেয়েটাকে কিছু বলিস না বা কিছু করিস না।মেয়েটা সত্যিই খুব ভালো”
আলভি রে*গে বলল,,,,”ও ভালো তুই চিনিস ওকে হ্যা ও একটা বে’হা’য়া মেয়ে। আর ভালো কোন দিক দিয়ে”
“দেখ আলভি যত যাই বলিস না কেনো তুই নিজেও ভেবে দেখ মেয়েটা কারো সাথে তেমন কথাও বলে না আর ফারিহা ইয়ামিন ছাড়া কারো সাথে মিশেও না।আর না কখনো কারো সাথে খা’রা’প ব্যবহার করেছে।আমি ওকে রাস্তায় অসহায়দেরও সাহায্য করতে দেখেছি”
আলভি চি’ল্লি’য়ে বলল,,,,”নিশান চুপ কর আমি ওই মেয়ের কিছুই শুনতে চাই না”
নিশান হেসে বলল,,,,”দেখ একদিন এমন না হলো যে তুই ওই মেয়েকে ছা’ড়া এক মূহুর্তও থাকতে না পারিস।চো’খের আ’ড়াল হলে না তোর দ’ম ব’ন্ধ হয়ে যায়।কখন কাকে ভালো লাগে তা আমরা কেউই জানি না।”
আলভি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,,”চুপ কর তুই আমি আর ওকে ছাড়া কখনো থাকতে পারবো না এটা কখনোই হবে না”
আলভি কথাটা বলে হনহন করে চলে গেলো।গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। তিশাম আলভির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিশানকে বলল,,,,”কেনো বললি এগুলো আমিও জানি হয়তো আসবে এমন কোনো একদিন যেদিন ও আনিশাকে ছাড়া থাকতে পারবে না”
নিহান দী’র্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,,”আমি চাই সেই দিনটা খুব তাড়াতাড়ি চলে আসুক”
ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকলো।নিহান ভাবছে কিভাবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়।না আনিশা ঠিক আছে না আলভি আর না ফারিহা।কেউই ঠিক নেই।
১০.
ফারিহা আর ইয়ামিন বসে আছে ফারিহাদের ছাদে।ফারিহা বসে আছে।ইয়ামিন বি*র*ক্ত হচ্ছে ফারিহার কাজে।কি চাইছে কি ও।ইয়ামিন বি’র’ক্তি নিয়ে বলল,,,,,
“কি চাইছিস কি তুই ফারু!সকালে কেনো আনিশাকে জিজ্ঞেস করতে দিলি না কিভাবে ওদের বিয়েটা হয়েছে”
ফারিহা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,”দেখ আজকে আকাশে চাঁদ উঠেনি ঠিক আমার আকাশের মতো আমার চাঁদটাও এখন আমার নেই।সে অন্যকারো তাও আমার বেস্টফ্রেন্ডের”
ইয়ামিন এবার চি’ল্লি’য়ে বলল,,,,”চাইছিসটা কি তুই একটু বলবি”
“আমি এখন চাইছি আনিশা আর আলভি ভালো থাকুক।আলভি আনিকে মে’নে নিক আর আমি সম্পূর্ণ চে’ষ্টা করবো তার”
ইয়ামিন করুন কন্ঠে বলল,,,,,”তাহলে তোর কি হবে ফরু”
ফারিহা মিল হেসে বলল,,,”আমি এখন যেমন আছি তেমনই থাকবো”
ইয়ামিন ফারিহার নিজের দিকে ফিরিয়ে কাঁ’ধ ঝা’কি’য়ে বলল,,,,
“এভাবে চললে না মামা মামি ভালো থাকবে না আমি আনি আর না তুই।তুই জানিস তুই যেমন আনির ক*ষ্ট স*য্য করতে পারিস না আনিও তেমন তোর ক*ষ্ট স*য্য করতে পারে না”
ইয়ামিনের থেকে নিজেকে ছা’ড়িয়ে ফারিহা বলল,,,”আমি জানি তাই তো ওর সামনে হাসি খুশি থাকার চে’ষ্টা করি আর কালকে থেকে আলভি আনিশাকে কাছাকাছি আনার মিশনে আমি আর তুই নেমে পরবো”[লেখিকা ইশা আহমেদ]
ইয়ামিনের আনিশার জন্যও খা’রা’প লাগছে তেমনি ফারিহার জন্যও। কি করবে ভেবে পায় না ও।তাই সিদ্ধান্ত নেয় ফারিহার কথা মতোই কাজ করবে।ইয়ামিন ফারিহাকে বলল,,,”চল ঘুমাবি!আমারও ঘুম পেয়েছে”
ফারিহা বলল,,,”আমার ঘুম আসছে না তুই যা ঘুমিয়ে পড়”
ইয়ামিন ফারিহাকে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে গিয়ে বলল,,,,”এবার তুই ঘুমাইস না সারা রাত বইসা থাকোস আমি দেখমু না বাই”
কথাটা বলেই ইয়ামিন রুম থেকে বেরিয়ে ফারিহার রুমের দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে বলল,,,”নে এবার ভালো করে ঘুমা হি হি হি”
ইয়ামিন নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলো।ফারিহা হাসলো।ছেলেটা সিরিয়াল মূহুর্তেও হাসাতে পারে।ফারিহা বসে বসে ভাবতে লাগলো কালকে কিভাবে কি করবে।
১১.
“আন্টি আমার জানা মতে তোমরা বাড়ির বউকে না পরিয়ে রাখবে না তাই বলছি আনিশা আজকে থেকেই ভার্সিটি যাক তবে”
নাফিয়া বলল,,,,”হ্যা হ্যা সমস্যা নেই ও যেতে পারে।”
ফারিহা হেসে বলল,,,”আচ্ছা ঠিক আছে আন্টি আমি আনিশার কাছে গেলাম”
ফারিহা আর ইয়ামিন সকাল সকাল আলভিদের বাসায় এসে হাজির।এতে অবশ্য নাফিয়া বেশ চ’মকেছেন।তার ফারিহার করা কাজগুলো খুব অ’দ্ভু’ত লাগছে। সে হলে কখনোই এইসব করতে পারতো না মোটেও।ফারিহা আর ইয়ামিন আলভির রুমের সামনে এসে দরজায় ধা’ক্কা মা’রলো।দরজা ধা’ক্কানোর শব্দে আনিশার ঘুম ভা’ঙলো। কালকে রাতে সে সোফাতেই ঘুমিয়ে পরেছিলো আলভির অপেক্ষা করতে করতে।বিছানায় তাকিয়ে দেখলো আলভি এ’লো’মে’লো ভাবে ঘুমিয়ে আছে।আনিশার আলভিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে খুব নি’ষ্পাপ লাগছে।কিন্তু আনিশা এটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল যে এই মানুষটা ঘুম থেকো উঠলেই ডে’ঞ্জা’রা’স হয়ে যায়।
দরজায় আবার টোকা পরলো।আনিশা ঘো’র কাটলো।সে গিয়ে দরজা খুলল।দরজা খুলতেই ফারিহা আর ইয়ামিন হুরমুর করে রুমে ঢুকে পরলো।রুমে ঢুকে আনিশাকে বলল,,,
“আনি তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে ভার্সিটি যাবি”
আনিশা অবাক হয়ে বলল,,,”কিন্তু আমাকে কি মামনি বাবা যেতে দিবে?”
ফারিহা হেসে বলল,,,”আমি তোর মামনির কাছে শুনেই এসেছি আর এই নে ড্রেস এই শাড়ি পরে তো আর যেতে পারবি না।আর ড্রেসও তো নেই এইখানে তোর”
আনিশা হাসলো।ওদের বসতে বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে আর ড্রেস চেঞ্জ করতে।শপিং ব্যাগ খুলতেই একটা বে’গুনি রঙের থ্রিপিচ।আনিশা জানে ফারিহা মাত্রই এটা কিনে এনেছে কারণ ফারিহা থ্রিপিচ পরে না টপস ওয়ানপিস পরে।সে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।বের হতেই দেখল ইয়ামিন আর ফারিহা গল্প করছে।ফারিহা আনিশাকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে দেয়। তারপর নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,,,
“এই তো এখন একেবারে ঠিকঠাক লাগছে”
আলভি ঘুম থেকে উঠে পরেছে কিছু সময় আগে ও বসে বসে ওদের কাজ দেখছিলো। ফারিহার এইসব কাজকর্মে প্রচুর রা*গ ও বি*র*ক্ত লাগছে।আলভির ভাবনার মা’ঝেই ফারিহা আনিশাকে বলল,,,,
“চল এবার খেয়ে ভার্সিটি যাবি”
আলভি ফারিহার কথায় ভ্রু কুচকালো।ফারিহা যখন আনিশাকে নিয়ে রুম থেকে বের হবে তখনই আলভি আনিশার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে এনে দাঁড় করায়।যাতে আনিশাসহ ইয়ামিন ফারিহাও অবাক হয়।ফারিহা ভ্রু কুচকে বলে,,,,
“তুমি ওর হাত ধরে নিজের পাশে দাঁড় করালে কেনো হাত ছাড়ো ও ভার্সিটি যাবে”
আলভি ভা’বলেশহীন ভাবে বলল,,,
“আনিশা আমি কি তোমাকে ভার্সিটি যাওয়ার অ’নুমতি দিয়েছি”
আনিশা কিছু বলবে তার আগে ফারিহা বলে,,,”তুমি যখন ওকে বউ বলে মানোই না তাহলে অনু!মতি নেওয়ার কি আছে!হাত ছা’ড়ো ওর”
কথাটা বলেই আনিশার হাত ধরে নিজের পাশে আনে।আলভি আনিশার হাত শ*ক্ত করে ধরে নিজের কাছে এনে বলে,,,,
“ওকে আমি বউ হিসাবে না মা’নলেও ও আমার বউ আর আমার কাছ থেকে অ’নুমতি নিতেই হবে।আর আমি ওকে যাওয়ার অ!নুমতি দেইনি”
“ফারিহা ছা’ড় না উনি যেতে দেবে না আমায় তোরা চলে যা”
“আমি তো তোকে ছাড়া যাবো না!আর তুমি আলভি যেদিন ওকে নিজের বউ হিসাবে মে’নে নিতে পারবে সেদিনই ওকে আটকাতে এসো।”
কথাটা বলেই আনিশার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলো।আলভি রা*গে ফুঁসতে লাগলো।সে এখন মোটেও চায় না ফারিহা তার বাসায় আসুক আনিশার কাছে আসুক।
১২.
“বাবা তুই কি বাসায় আসবি না।তিনটা বছর হয়ে গেলো তুই একবারো বাংলাদেশে আসিসনি।এবার তো আয়।বয়স তো কম হলো না এবার তুই বিয়েটা কর নাতিনাতনির মুখ দেখে তো ম*রি।”
“মম তোমার ছেলে নেক্সট মান্থেই আসছে তোমার কাছে।বিয়ে আমি করবো এসেই আর মেয়েওআমার ঠিক করা আছে ”
মিসেস রুহানা চৌধুরী বলল,,,,”সত্যি তুই আসছিস বাবা”
লোকটা হেসে বলল,,,,”হ্যা মম পা’ক্কা প্রমিস আমি আসছি”
চলবে,,,,,,,?