অমানিশায়_সেই_তুমিই #লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা ১৮.

0
321

#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা

১৮.

ইরাজ যেদিন মেঘালয়ার মুখে এমন অনীহার বাণী শুনেছিল, তাকে আর বেশি করে বোঝাতে হয়নি যে, মেঘালয়া তার প্রতি বিরক্ত। আর তাবির যে মেঘালয়াকে পুরোদমে ফাঁসিয়ে ফেলেছে; এ কথায় সন্দেহের অবকাশ নেই। সেদিন ইরাজের ছটফটানি কেবল, ওই চাঁদহীন অমানিশায় ঢাকা খোলা আসমানের তারা’রা হয়ত নিরবে চেয়ে চেয়ে দেখেছিল। তারপর থেকে ইরাজ নিজেকে থামাতে সিগারেট অবধি থেমে থাকেনি। সব রকমের নেশায় ডুবিয়ে ফেলেছে নিজেকে। মাঝেমধ্যে নিজেকে শান্ত করতে, ড্রাগসের ব্যবহারও বাদ রাখেনি।

ছোটবেলা থেকে ইরাজ, মেঘালয়াকে বাবার বন্ধুর মেয়ে হিসেবেই দেখে এসেছে। তবে তাদের মাঝে বয়সের দুরত্বটা ছিল বেশ খানিকটা। যে কারনে মেঘালয়া যখন কেবল তার বয়ঃসন্ধিকাল পার করছে, ইরাজ তখন একুশ বছরের তাগড়া যুবক। এখানে ইরাজের মাঝে এই অনুভূতিটা জাগার পেছনে দু পরিবারের অভিভাবকদের ভূমিকাও ছিল অল্প সল্প। হেলাল সাহেব ইরাজকে অতিমাত্রায় ভরসা করতেন। ছোটো থেকেই ইরাজ চরম বেপরোয়া স্বভাবের। আর এই স্বভাবটাই তাকে করেছিল সকলের কাছে অনন্য। তাকে কোনদিন সেচ্ছায় মেঘালয়ার আশেপাশে ঘেষতে দেখা যায়নি। যেন তার গায়ে চুলকানী হয়, এভাবে দূরত্ব বজায় রেখেছে সর্বক্ষণ। ইরাজের এই অনন্য স্বভাবের প্রতিই বোধহয়, হেলাল সাহেব গলে গেলেন। তিনি অবাধে মেঘালয়াকে ইরাজের ওপর ছেড়ে দিতেন। ইরাজ সেই ভরসার দাম রেখেছে সুদে আসলে। বরং তাকে ডেকেও পাওয়া যেত না মাঝেমধ্যে। যেন চরম বিরক্ত সে মেঘালয়াকে সঙ্গে নিয়ে চলতে। তবে চলতে চলতে, নিজের দায়িত্বের বাইরে কবে যে যূবক ইরাজের মনে মেঘালয়ার জন্য নরম অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল।

এখান থেকেই ওই কিশোরী মেঘালয়ার প্রতি আলাদা এক টান জন্মাতে শুরু করল, ইরাজের। এরপর সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে জেলা ছাড়লেও, যখনই আসতো, মেঘালয়াকে শাসিয়ে রেখে যেতে ভুলত না। দিন দিন অভ্যাস এবং এই টানটা কবে যেন অধিকারবোধ, আর অধিকারবোধ থেকে ভালোবাসার মতো জটিল অনুভূতিতে পরিবর্তিত হয়ে গেল। তবুও ঘাঁড় ত্যাড়া ইরাজ মেঘালয়ার সম্মুখে নিজেকে উপস্থাপন করেনি কোনদিন। তার স্বভাব আচরণে পরিবর্তন আসেনি। সে যে খিটখিটে; সেই খিটখিটে মেজাজেরই রয়ে গেল।

এতে মেঘালয়ার সাথে তার সম্পর্কটা কখনও মধুর হয়ে ওঠেনি বরং শাসনের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এটা হয়ত মেঘালয়ার মনে হয়েছে বরাবর। কিন্ত ইরাজ যে মেঘালয়াকে সর্বদা জোর জবরদস্তিতে রেখেছে, এমন নয়। শুধু এই অসভ্য দুনিয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছে। মেঘালয়ার কোন ইচ্ছে সরাসরি পূরণ না করলেও, অপূর্ণ থাকতে দেয় নি। ইরাজের এই শাসনের পেছনের তীব্র অধিকারবোধকে আর আগলে রাখার ব্যাপারটি হয়ত মেঘালয়া কোনদিন ধরতে পারেনি!

সবশেষে বাজি! ইরাজের ওই সরল মেঘালয়ার প্রতি এতটাই বিশ্বাস ছিল, সে এত চতুর হয়েও এভাবে ভাবতে পারে নি যে, মেঘালয়া তাবিরকে সুযোগ দেবে তাকে নিয়ে খেলার। তা তো দিয়েছিল, তবুও ইরাজ মেঘালয়ার প্রতি নিজের দৃষ্টি সরায় নি, নিজের মতো করে প্রতিক্ষণে চেষ্টা করেছে মেঘালয়াকে আগলে রাখার। এতে তাবিরের বড়ো অসুবিধা হতো। সে মেঘালয়াকে যেভাবে চাইত, সেভাবে পরিচালনা করতে পারত না। তখনই তাকে নানান উষ্কানিমূলক কথা বলতে থাকে। কাজেও দিল তা। ইরাজ মেঘালয়ার অবহেলায় ঘৃনায় সরে আসল। সারাক্ষণ মনটা মেঘালয়ার কাছে পড়ে থাকলেও, দেহটাকে সে বেঁধে রেখেছিল নেশার দড়িতে। আনতারা খানম ছেলের অধঃপতন দেখেছেন কিছু কিছু। তবে তিনি আবিষ্কার করতে পারেন নি কারনটা। ইরাজকে বুঝতে পারা, সেও এক অভিযানই বটে!

যেদিন ইরাজের কাছে হেলাল সাহেবের অসহায় কল এলো, মেঘালয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না! সেদিন ইরাজ মেঘালয়াকে চিরতরে ত্যাগ করেছিল! তবে তার ত্যাগও বড়ো রহস্যময়। যাকে সে ঘৃনার সাথে ত্যাগ করল চিরতরে, কাটিয়ে ফেলল নাকি সব মায়া! তার জন্য ছুটতে তার এক মুহূর্ত ভাবতে হয়নি। শোনা মাত্র সে যশোর থেকে চট্রগ্রাম পাড়ি দিয়েছে। হুশে ছিল না এ খবর শোনার পর ইরাজ! ওই তাবির খারাপ কিছু করে না বসে মেঘালয়াকে নিয়ে। এই ভাবনাতে উন্মাদের মতো ছুটেছে সে সেদিন তার ত্যাগকৃত মেঘের রক্ষার্থে!

এই তার ত্যাগ! এই তার ঘৃনা!

দিনের পর দিন ইরাজ নিজেকে ধ্বংস করেছে, পুড়েছে, আঘাতে জর্জরিত হয়ে ডুবে থেকেছে রাতভর নেশায়। সকালে সূর্য উঠলে, দিনের আলোয় আবার ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পড়েছে, নিজের বেপরোয়া রূপে। তার রূপান্তর বড়ো জটিল। যার সত্যতা আবিষ্কার করা যায়নি কোনদিন।

এ সবটাই মেঘালয়ার কাছে অজানা ইতিহাসের পাতায় রচিত সত্য। যা তার বোকা মস্তিষ্ক কোনদিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। হয়েছে কি হয়নি কে জানে! হলেও হয়ত ইরাজ তা স্থায়ী হতে দেয় নি। কারন, তার আচরণ তো সেই বেপরোয়াই রয়ে গেছিল। কখনও কখনও যদি ইরাজের প্রতি খানিকটা মনোযোগ এসেছে মেঘালয়ার, তো পরক্ষণেই ইরাজের ত্যাড়ামির নিচে চাপা পড়েছে সেই মনোযোগটুক।

এতসবের পরেও ইরাজ বারবার চেয়েছে, মেঘালয়াকে এসব থেকে বের করে আনতে। কিন্ত, ওই যে অধিকার হারানোর যন্ত্রনা! যেখানে তাকে আগলে রাখার অধিকারটুকু মেঘালয়া নিজে কেঁড়ে নিয়েছে! সেখানে কোন মুখে সে গিয়ে আবার দাঁড়াবে মেঘালয়ার সম্মুখে! তাছাড়াও ইরাজ কখনও ভবনায় আনতে পারেনি, মেঘালয়ার পালানোর মতো এমন জঘন্য পদক্ষেপ নিয়ে নেবে। সে নিজেকে বারবার প্রস্তত করত, মেঘালয়াকে গিয়ে তাবিরের ব্যাপারে বলার। কিন্ত সামনে এসে দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে যেত, মেঘালয়ার বলা সেই অবজ্ঞাসূচক কথাগুলো আর বাজিতে জিতে যাওয়ায় বিশ্রী হাসিতে মগ্ন তাবিরের মুখটা। ইরাজের বিশ্বাস আর ভরসা যেখানে মেঘালয়া পায়ে পিষে সামনে এগিয়ে চলেছে, সেখানে ইরাজ কি করে মেঘালয়ার সম্মুখীন হতে পারে আবারও। তবুও যদি ইরাজের আন্দাজ থাকত, তাবিরের পরিকল্পনা এত জঘন্য পর্যায়ে নেমে গিয়েছে, সে সব সংকোচ কাটিয়ে তার মেঘকে বাঁচিয়ে নিত। যেখানে তাবির শর্তে জিতে গিয়েছে; ইরাজ ভেবেছিল এখানেই শেষ। হয়ত সে নিজেই এবার খেলা শেষ করবে। কিন্ত, তাবির এখানেই থামেনি।

তাবিরকে শাসাতে আবারও সে গোপনে গিয়েছিল, তাবিরের কাছে। তাবিরের কাছে শুনে এসেছে, মেঘালয়া নাকি পাগল তার জন্য। তাকে ছাড়া কিছুই বোঝেনা। তার প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছে।

এরপর আর কি বলার থাকে? এ কথা বিশ্বাস করার ভিত্তিটুকুও মেঘালয়াই দিয়েছিল ইরাজকে; যেদিন সে ইরাজকে তার পিছু করতে নিষেধ করেছে। ইরাজ এ সময় পাগলের মতো উঠেছিল পুরো। তার নিজের ভালোবাসায় অন্যের অধিকার! তার কোন ভূমিকা নেই তার মেঘের জীবনে। যে মেঘকে সে নিজের সবটুকু মনোযোগে আবদ্ধ করে রেখেছিল এতকাল, সেই মেঘ তাকে নিজের আশেপাশে ঠায় দিতেও নারাজ! ইরাজ কেঁদেছে; অপমানে, দুঃখে, মন ভাঙার যন্ত্রনায়, অধিকার হারানোর ব্যর্থতায়, আত্মমর্যাদাবোধে লাগা তীব্র আঘাতে, সবশেষে মেঘকে ভুলতে চেয়ে, ভুলতে না পারার অপারগতায়। সেদিন ইরাজকে শান্ত করার শক্তি অতিমাত্রার, তীব্র অ্যালকোহলেরও ছিল না। সবশেষে সে ত্যাগ করেছিল তার মেঘকে। সে কেমন ত্যাগ, তার বর্ননা নেই, নেই কোন সরূপ।

এসব মেঘালয়া কোনদিন জানতে পারবে না। ইরাজ জানতে দেবে না। সে নিজেকে লুকিয়ে চলে, সে নিজের দুর্বলতা গুলোকে খুব সন্তর্পণে দাফন করেছে তার বেপরোয়া চলনের চাদরের তলে।


ভাবনাগুলো মেঘালয়াকে এই ধারণায় পৌঁছাতে সাহায্য করল; আজ দুপুরে আব্বু বলেছিল, সে ভুলের চেয়ে বোকামি বেশি করেছে। অতীতের এই বিশ্লেষনে মেঘালয়াও যেন তাই খুঁজে পেল। আব্বু তাকে ভাবতে বলেছিল বোকামিগুলো। মেঘালয়ার মনে হলো, এগুলোই তার বোকামি। সে ইরাজকে দূরে সরিয়েছে যেখানে, তার ধ্বংসের শুরু ঠিক সেখান থেকেই। এতদিনে এভাবে ভাবার মতো মানসিকতা কাজ করেনি তার মাঝে। আজ ভেবে, সবকিছু এলোমেলো লাগে বড্ড।

ভাবনায় মশগুল মেঘালয়া সম্বিত ফিরে পেল ভারী গলার আওয়াজে, “রুমে যা।ʼʼ

ইরাজের আচমকা উপস্থিতিতে মেঘালয়া একটু চমকে উঠল, তবে তা প্রকাশিত হলো না। ইরাজ এসে দাঁড়াল পাশে। মেঘালয়া একবার তাকাল ইরাজের দিকে। ইরাজ সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে চাঁদ নেই। মেঘে ছেয়ে আছে, সাথে মৃদূমন্দ বাতাস। মেঘালয়াকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখে বিরক্ত হলো ইরাজ, “দাঁড়িয়ে গিলছিস কথা? রুমে যেতে বলেছি।ʼʼ

মেঘালয়া জবাব দিল, “এখানে ভালো লাগছে।ʼʼ

ইরাজের কণ্ঠ এবার একটু সিরিয়াস শোনাল, “তোর ভালো-খারাপ লাগার অনুভূতি জানতে চাইনি। এখান থেকে যেতে বলেছি।ʼʼ

মেঘালয়া এবার বেশ জিদের সাথেই বলল, “যাব না।ʼʼ

ভেবেছিল ইরাজ এ নিয়েও চোটপাট করবে হয়ত। অথচ ইরাজ আর কিছুই বলল না। সিগারেট জ্বালাতে উদ্যেত হলো। সিগারেটের ধোঁয়াতে এমনিতেও দাঁড়াবে না মেঘালয়া। মেঘালয়া তবুও দাঁড়িয়ে রয় চুপচাপ। কিছু সময় দুজনেরই নিরবতার পর মেঘালয়া অভিযোগের স্বরে বলল, “আপনি সব জানতেন। আমার জীবনটা আপনার কাছে একটা বাজি ধরার বস্ত মনে হয়েছিল? সব জেনে বুঝেও কোনদিন আমায় জানাতে আসেন নি। এটাকে ভালোবাসা বলবেন আপনি?ʼʼ

ইরাজের গায়ে সহ্য হলো না যেন মেঘালয়ার কথাগুলো। দাঁতের মাড়ি পিষে জবাব দিল, “তোর এসব বা লে র প্রশ্নের জবাব দিতে এখানে এসে দাঁড়াই নি আমি। আর কে বলেছে তোকে এটাকে ভালোবাসা বলছি? আমি বলেছি কোনদিন? নাকি আর কেউ বলেছে? ভালোবাসা! হাহ! এই শব্দটাকে মৃত্যুর চেয়েও বেশি ঘৃনা করি আমি, সেখানে তা ভেতরে পুষে রাখার প্রশ্নই ওঠে না।ʼʼ

মেঘালয়ার কাছে ইরাজের বলা কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য লাগল না মোটেই। আজকাল ইরাজকে বুঝতে চেষ্টা করে মেঘালয়া। কিছুটা বুঝতে সক্ষমও হয়। ইরাজের চোখের ছটফটানিগুলোতে মাঝেমধ্যেই নজর দেয় সে। সেখানে শুধুই বিষাদ নজরে আসে মেঘালয়ার। আজকাল সকলকে ছাপিয়ে নিজেকে ঘৃনা করতে ইচ্ছে করে। সকলে তাকে যে আদরে আগলে রেখেছিল, তা সে তুচ্ছজ্ঞান করে যে সিদ্ধান্তগুলোই নিয়েছে, সবগুলোতেই তাকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। তার আজকের পরিণতি কেবলই মাত্র তার আবেগী বয়সের করা ভুল, এবং বোকামির ফল।

এক সময় সকলেই নিজের করে আসা ভুলগুলোকে উপলব্ধি তো করে, তবে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর, যখন আর কোন লাভ হয়না। সে সমাজের চোখে সম্মান হারিয়েছে, ইরাজকে অজান্তেই নরক যন্ত্রনা দিয়ে ফেলেছে, নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করেছে, তাবিরের মতো অমানুষকে বিশ্বাস করার মতো নিকৃষ্টতম বোকামি করেছে, তার বদলে আবার তাকেই পুড়তে হয়েছে জলন্ত আগুনে। আজ তা বুঝতে পারলেও লাভের লাভ কিছুই নেই। আজকের পরীক্ষার ফলাফল তাকে আবারও একবার উপলব্ধি করাল, সে নিজের কতবড়ো ক্ষতি করে বসেছে। এবং সেই সকল মানুষকে ঘৃনা করেছে, যারা হয়ত সত্যিই তার আপনজন, তারা তার ভালোর জন্য সবটা লুটিয়ে দিতে প্রস্তত। তাদের যে আচরণ গুলো মেঘালয়ার কাছে বিষের মতো ঠেকত, সেই আচরণে আটকে থাকলে আজ তার পরিণতি এমন হতো না মোটেই।

মেঘালয়ার চুলগুলো হাত খোপা করা ছিল। বাতাসের তরে তা খুলে পিঠে ছড়িয়ে পড়ল। তাতে কোন সমীহ দেখাল না মেঘালয়া। ইরাজকে প্রশ্ন করল আবারও, “ভালোবাসা কি ফুরিয়ে যায় কখনও? কাউকে ভালোবাসলে ঘৃনা করা যায়?ʼʼ

ইরাজ মৃদূ হেসে ফেলল। অন্ধকারে তা দৃষ্টিগোচর হয় না মেঘালয়ার। সিগারেটটা ঠোঁটের ভাজ থেকে নামিয়ে হাতে ধরে জবাব দিল ইরাজ, “ভালোবাসা বড়ো নাজুক, স্পর্শকাতর আর মসৃণ অনুভূতি। তার ওপর অবেহেলা এবং অধিকারহীনতার মতো ধারাল অনুভূতি দ্বারা আঘাত করা হলে, ভালোবাসার সেই মসৃণ অনুভূতি প্রথমত ক্ষত-বিক্ষত হয়, র ক্তা ক্ত হয়, যার ফলে বুকে অসহ্য ব্যথার সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য সময়ের সাথে সাথে সে ব্যথা তুলনামূলক কমে আসে, সয়ে যায়! তবে ভালোবাসার অনুভূতিটা বদলে এক অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হয়। যাকে ঘৃনা তো বলা যা না, তবে সে অনুভূতিতে আগের মতো মায়া, টান আর নেশা থাকে না। আঘাতগুলো জড়ো হয়ে এক কঠিন দেয়ালের রূপ নেয়, যে দেয়াল টপকে নরম অনুভূতিরা উঁকি দিতে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। সে দেয়ালকে বয়ে নিয়ে বেড়ানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে খুব।ʼʼ

মেঘালয়া অভিভূত হয়ে শুনল ইরাজের মুখে ভালোবাসার এমন ঘাত-প্রতিঘাতী সংগা। ইরাজকে বরাবর নতুন নতুন ভাবে আবিষ্কার করে যাচ্ছে মেঘালয়া। আজ যেমন এই ইরাজ মিলছে না তার পরিচিত ইরাজের সঙ্গে! মেঘালয়া খুব বুঝল, ইরাজের বলা কথাগুলো কোন বইয়ের পাতা থেকে সংগৃহীত বাক্যমালা নয়। ইরাজে বুক চিরে বেরিয়ে আসা, চাপা আত্মচিৎকার ঝরে পড়ল প্রতিটি শব্দের পরতে পরতে!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here