তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_৫৫

0
344

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৫৫

ভানু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বিরহে কাতর ললনা। তার অশ্রুসজল নয়ন জোড়া নিবদ্ধ অর্থহীন ঠিকানায়। অনুশোচনা-অনুতাপে ক্লিষ্ট অন্তঃস্থল। স্মরণে এসে পড়ছে তূর্ণয়া’র বাগদানের মধ্যাহ্ন লগ্ন। সে-ই অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্ত। দুঃখময় চেহারা, সে চেহারায় একরাশ আকুলতা, নয়ন জোড়ায় অসীম ভালোবাসা। মেয়েটির কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়লো নেত্রজল।
___

আজ তূর্ণ, দুয়া’র বাগদান। স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ত সকলে। তৃষা পুষ্পির সঙ্গে কথা বলতে বলতে লন ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিছুটা পথ অগ্রসর হয়ে বিভক্ত হলো তাদের পথ। বায়ের পথে এগিয়ে গেল পুষ্পি। তৃষা ডান দিকের পথে পা বাড়ালো। হঠাৎই হাতে অনুভূত হলো হ্যাঁ’চকা এক টান। ডান পার্শ্বের দেয়ালে পৃষ্ঠ ঠেকে গেল কিংকর্তব্যবিমূঢ় মেয়েটির। তার অবাক নেত্রে দৃশ্যমান হলো নিশাদের মুখখানা। মানুষটির অধরে লেপ্টে দুষ্টু হাসির রেখা। নিশাদ ওর বাহুপাশ সংলগ্ন দেয়ালে দু হাতের ভর ছেড়ে দিলো। কিঞ্চিৎ ঝুঁকে গেল মায়াবী মুখপানে। ফিসফিসিয়ে আদুরে কণ্ঠে শুধালো,

” কি জানেমান? আমায় ছেড়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে? ”

তৃষা ততক্ষণে নিজেকে ধাতস্থ করতে সক্ষম হয়েছে। গমগমে স্বরে বলে উঠলো,

” এ কেমন ধরনের আচরণ? এভাবে কেউ টান দেয়? ”

” নিশাদ দেয়। ” একরোখা জবাব।

কঠোর স্বরে মেয়েটা বলে উঠলো,

” আমার পথ ছাড়ুন বলছি। ”

ঈষৎ নড়েচড়ে ওঠে, ” যেতে দিন। ”

” নো। ” দৃঢ় উত্তর এলো।

” তাহলে কি করবেন? চিপায় এনে র*ঙ্গলীলা করবেন?”

তৃষার অভিব্যক্তি কেমন অস্বাভাবিক। চোখমুখ ম্লান। ওর থেকে হঠাৎ এমন অপ্রত্যাশিত নোং রা বাক্য আশা করেনি নিশাদ। মানুষটার দু হাত স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলগা হয়ে গেল। এ কি শুনতে পেল সে? আস্তে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ালো নিশাদ। হতাশ কণ্ঠে প্রশ্ন করে বসলো,

” এ-এসব কি বলছিস তৃষা? র*ঙ্গলীলা? এ কেমন শব্দ? ”

” ভুল কিছু বলেছি কি? বন্ধুর ছোট বোনকে নিয়ে মানুষ চিপাচাপায় কেন যায়? লুডু খেলতে? ”

নিশাদ তৎক্ষণাৎ বাঁধা প্রদান করলো,

” স্টপ ইট। কিসব ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করছিস তুই? নিজে আদৌও শুনছিস তো? ”

তৃষা দৃষ্টি নত করে নিলো। জবাব দিলো,

” নিশ্চয়ই শুনছি। আমি তো আর কানে কালা নই। ”

” হাঁ আমি জানি তুই কানে কালা নস। তবুও। তখন থেকে কিসব বলে যাচ্ছিস? শুনতে বাজে লাগছে। ”

চোখ তুলে তাকালো মেয়েটা। বিদ্রুপের স্বরে শুধালো,

” আচ্ছা? শুনতে বাজে লাগে। করতে বাজে লাগে না? লজ্জা করে না বন্ধুর ছোট বোনকে নিয়ে এমন করতে?”

” না করে না। বন্ধুর ছোট বোন হোস তুই। নিজের বোন তো আর নয়‌। তাহলে লজ্জা করবে কেন? আর তাছাড়াও। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বন্ধুর ছোট বোনদের প্রতি ছেলেদের আলাদাই একটা অধিকার বোধ থাকে।”

” ওহ্ আচ্ছা। সেই অধিকার বোধের অসৎ ব্যবহার করছেন? ”

দৃষ্টি নত করে,

” আমার তো ভাবতেও অবাক লাগছে আপনি ভাইয়ার বন্ধু। ভাইয়া বন্ধু নির্বাচন করতে শেষমেষ এমন ভুল করে বসলো! কি করে? ”

তৃষার মায়াবী মুখশ্রীতে আজ জিজ্ঞাসু ভাব। নিশাদ অবাক নেত্রে তাকিয়ে। এসব কি বলছে তৃষা? মেয়েটা আজ এমন অদ্ভুদ আচরণ করছে কেন? কি হয়েছে ওর? নিশাদ কোনোমতে নিজেকে সামলে তৃষার মাথায় বাঁ হাত স্থাপন করলো। কেশে আদুরে হাত বুলিয়ে নরম কণ্ঠে শুধালো,

” তৃষা। কি হয়েছে তোর? বল আমায়। নিশাদ ভাইয়া শুনছি। কোনো অসুবিধা হলে বল। ইনশাআল্লাহ্ সলভ্ করে দেবো। বল না কি অসুবিধা হচ্ছে। এমন করে বলছিস কেন? কেউ কিছু বলেছে? নাকি কোনো আবদার পূরণ হয়নি? বল আমায়। নিশাদ ভাইয়া শুনছি। ”

কেশে বুলাতে থাকা হাতটি ঝটকা মে.রে সরিয়ে দিলো তৃষা। দাঁড়ালো মুখ ঘুরিয়ে। অধর কা’মড়ে নিজস্ব অনুভূতি লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নেত্রকোণে জমায়িত হতে লাগলো অশ্রু কণা। থেমে থেমে বললো,

” অসুবিধার কথা জিজ্ঞেস করছেন? সবচেয়ে বড় অসুবিধা তো আ-আপনি নিজে। ”

হৃদয়ের অন্তঃস্থলে ধক করে উঠলো নিশাদের। অসহনীয় যাতনা জাপ্টে ধরলো চরমভাবে। শুকিয়ে কাঠ হলো গণ্ডস্থল। কণ্ঠনালী বুঝি অবরুদ্ধ। ভেতরটা ছিঁড়ে খানখান। ক্ষীণ কম্পিত স্বরে পুনরায় নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করলো,

” আ আমি অসুবিধা? ”

তৃষা ভিন্ন দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে। দৃঢ় স্বরে বললো,

” তা নয়তো কি? দিন নেই রাত নেই অ;ভদ্রের মতো পিছু পড়ে আছেন। আ-পনার জন্য একমাত্র বড় ভাইয়ের বিয়েতে আনন্দ উদযাপনও করতে পারছি না। সবসময় ঝা-ঝামেলা ফেস করতে হচ্ছে। ”

টলে উঠলো সুঠামদেহী মানবের পদযুগল। কর্ণদ্বয় বুঝি আজ বে`ইমানি করে চলেছে। যা নয় তাই শ্রবণ হচ্ছে কর্ণ কুহরে। তৃষা কখনোই এমনটি বলতে পারে না। সে ভুল শুনছে। হাঁ ভুল শুনছে সে। তবে কেন শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে পৌঁছাচ্ছে,

” আপনাকে আমি এত করে এড়িয়ে চলছি। বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছি ইয়্যু আর নাথিং টু মি। তবুও আপনি পিছে পড়ে আছেন। অস`ভ্য, অ;ভদ্রের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন। বড় ভাইয়ের বন্ধু বুঝি এমন হয়? লুজ ক্যারেক্টার? ”

” তৃষা! ” অস্ফুট স্বরে বেদনাদায়ক কণ্ঠ নিঃসৃত হলো নামটি।

” হাঁ তৃষা। আ-আপনার বন্ধুর ছোট বোন। আপনারও ছোট বোনের মতো। তাই দয়া করে এসব বন্ধ করুন। লোক জানাজানি হলে আমার সম্মানহানি হবে। আপনার তো আর কিছু হবে না। আফটার অল পুরুষ মানুষ আপনি। পুরুষ মানুষের আবার কিসের স-ম্মানহানি? সব দোষ তো নারী জাতির। ”

ভেজা কণ্ঠে বলে চলেছে তৃষা। ওদিকে ঘুরিয়ে রাখা মুখখানি। বড় কষ্টে এমন নি ষ্ঠুর শব্দমালা ব্যক্ত করছে সে। পারছে না আর নিজেকে সামলাতে। নিশাদও পারছে না আর শুনতে। আজ এমন করুণ মুহূর্তে নিজস্ব অনুভূতি লুকাতে ব্যর্থ হলো। রয়েসয়ে বেদনা মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলো,

” তৃষা আ-আমি তোকে ভা.. ”

অসম্পূর্ণ রয়ে গেল বাক্যটি। তৃষা বাঁধা প্রদান করে বললো,

” ওহ্ প্লিজ। এসব সো কল্ড অ্যাট্রাকশনকে যেনতেন নাম দেবেন না। ”

” অ্যাট্রাকশন! নাহ্। না। বিশ্বাস কর আমি। আমি তোকে সত্যিই.. ”

ডান হাত প্রদর্শন করে বাঁধা দিলো তৃষা। তার কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কণা। যা রয়ে গেল নিশাদের দৃষ্টির আড়ালে। মেয়েটি কাট-কাট কণ্ঠে বলে উঠলো,

” কিচ্ছু নেই আমাদের মধ্যে। বুঝেছেন? এসব অ্যাট্রাকশন ফ্যাট্রাকশন ভুলে যান। আমাকে আমার মতো বাঁচতে দিন। প্লিজ। আপনার কাছে হাতজোড় করে মিনতি করছি। ”

হায়! নি ষ্ঠুর নিয়তি! তার হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি আজ স্বেচ্ছায় তার কাছ থেকে মুক্তি চাইছে। হাতজোড় করে মিনতি করছে। তার প্রগাঢ় ভালোবাসাকে অ্যাট্রাকশনের নাম দিয়ে ধামাচাপা দিতে চাইছে। বেদনায় কাতর মানুষটির আঁখি যুগল আর’ক্ত হলো। ভারী হলো কণ্ঠস্বর। টলমলে পদযুগল মন্থর গতিতে পিছু হটতে লাগলো। বেসামাল তৃষা একটিবারের জন্যও পিছু ঘুরে তাকালো না। নিজেকে সামাল দিতে দৌড়ে প্রস্থান করলো সেথা হতে। পেছনে রয়ে গেল একজনার আধুরি কাহানি।
___

তার নি ষ্ঠুর বাক্যমালা সত্যিই মেনে নিয়েছে মানুষটি। সেদিন সে প্রহরের পরমুহুর্ত হতে আর স্বেচ্ছায় সামনে আসেনি। কখনো ভুলে দেখা হয়ে গেলেও দৃষ্টি সরিয়ে প্রস্থান করেছে। যেন সে অদৃশ্য, অস্পৃশ্য। সে তো এমনটাই চেয়েছিল। তাই তো ভেতরকার নাম না জানা অনুভূতি দা ফন করে নি’ষ্ঠুর রূপ ধারণ করলো। শোনালো কিছু অবাঞ্চিত বাক্য। আজ সে মুক্ত বিহঙ্গ। নেই কোনো পিছুটান। তাড়া করে বেড়াচ্ছে না কোনো নিশাদ নামধারী শা;সক। তবে? কেন যাতনায় পিষ্ট হৃদয়! কেন সহে না এ ব্যবধান? কেন? জানা নেই এ বোকা- অবুঝ ললনার। সে তো শুধু জানে ক্রন্দনের লীলা। বরাবরের ন্যায় কপোলের কোমল আবরণে মুক্তোর মতো দানা জ্বলজ্বল করে চলেছে। অসহনীয় যন্ত্রণা তোলপাড় করে দিচ্ছে অন্তঃপুর।

” তৃষা? অ্যাই তৃষা? ”

আকস্মিক মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে হকচকিয়ে গেল তৃষা। তড়িঘড়ি করে অশ্রুবিন্দু মুছে নিলো। কক্ষে ব্যস্ত পায়ে প্রবেশ করলেন তাসলিমা।

” কি রে! কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না? ”

তৃষা ধীরে ধীরে পিছু ঘুরে তাকালো। দৃষ্টি নত করে মিহি স্বরে বললো,

” সরি আম্মু। ”

তাসলিমা চমকালেন! ওনার চঞ্চল মেয়ে আজ কথা না পেঁচিয়ে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করছে! এ যে অভাবনীয়! উনি হাতে থাকা কিছু পোশাক বিছানায় রেখে মেয়ের পানে এগিয়ে গেলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর মাখা স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,

” কি হয়েছে মা? তুই ঠিক আছিস তো? ”

তৃষা মায়ের কাঁধে মুখ লুকালো। আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে জড়ানো স্বরে মিথ্যে বললো,

” আ’ম ফাইন আম্মু। ”

তাসলিমা উদ্বেগ প্রকাশ করলেন,

” সত্যি বলছিস তো? ক’দিন ধরে তোকে কেমন দেখাচ্ছে। ব্যস্ততার জন্য কিছু যে জিজ্ঞেস করবো সে সুযোগ অবধি পাচ্ছি না। তুই সত্যি ঠিক আছিস তো মা? বিয়েবাড়িতে কিছু হয়েছে? ”

তৃষা মেকি হেসে মায়ের ডান কপোলে চুমু এঁকে দিলো।

” আমি ঠিক আছি আম্মু। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো। আ’ম ফাইন, ওকে? ”

মাতৃহৃদয় তো! দুশ্চিন্তা সরাতে পারলেন না। তবুও মিথ্যে হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন,

” আচ্ছা ঠিক আছে। দেখ তো তোর আব্বু কোথায়। সে-ই কখন থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। মানুষটা রীতিমতো উধাও। ”

” ওকে মাদার। আমি এই যাচ্ছি আর পিতাজিকে খুঁজে নিয়ে আসছি। ”

একটুও বিলম্ব করলো না তৃষা। মায়ের সন্দেহভাজন দৃষ্টি এড়াতে দ্রুত পায়ে কক্ষ ত্যাগ করলো।
.

নিজস্ব ভাবনায় মশগুল মেয়েটি লন ধরে এগিয়ে চলেছে। বিপরীত দিক হতে ফোনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে তূর্ণ। হঠাৎ তার কণ্ঠ শুনে ভাবনায় ছেদ পড়লো দুয়া’র। মেয়েটি স্বামীকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে তাকালো। তূর্ণ নৈকট্যে পৌঁছাতেই সে কিছু বলতে উদ্যত হলো। কিন্তু হতাশ হলো চরমভাবে। পাশ কাটিয়ে চলে গেল তূর্ণ। একটিবারের জন্য তাকালো না। মলিন হলো মায়াবী বদন। মানুষটি তাকে এভাবে পাশ কাটিয়ে চলে গেল! কেন? গতরাতের জন্য? সে তো ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটি করেনি। হাঁ মেহেদী অনুষ্ঠান শেষে রাত্রি বেলা ছাদে যাওয়ার কথা ছিল। ছিল সাক্ষাত করার পরিকল্পনা। কিন্তু তৃষার ভাবনায় মশগুল সে যেতে পারেনি। ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে নিদ্রায় তলিয়ে গিয়েছিল। সেজন্য মানুষটি গোস্যা করেছে! সামান্য কারণে বাবুর এত গোস্যা! অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম দুয়া’র। একদিকে প্রিয় বন্ধুর না বলা আধুরি কাহানি। এর ওপর স্বামীর অভিমান। কোথায় যাবে সে? কোনটা রেখে কোনটা আগে সমাধান করবে? বুঝে উঠতে পারছে না সে। এমন সময় সেথায় হাজির হলো পুষ্পি, বিন্দু। পুষ্পি উদগ্রীব হয়ে ডান হাতের তেলোয় হবু কনের মেহেদী রাঙা হাতটি রাখলো। দেখলো ওর গাঢ় আভায় আচ্ছাদিত হাত। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো বেশ।

” হায়! মেহেদির রঙ কি গাঢ় হয়েছে! আদ্রিয়ান স্যার তো ফাটিয়ে দেবেন জাস্ট। বান্দুপি আমগো সোহাগী সাগরে দিবা-রাত্রি রীতিমতো হাবুডুবু খাইবো। ”

পুষ্পির দুষ্টু কথার রেশ ধরে বিন্দু হাসিমুখে বললো,

” আর আসছে বছরে আমরা খালামনি হয়ে যাবো। ভাগ্নে, ভাগ্নী হাজির হো। ”

সশব্দে হেসে উঠলো ওরা দুজন। তবে এসবের ভিড়ে একদম অনুপস্থিত দুয়া। থেকেও যেন নেই। মন যে আঁটকে ভিন্ন কোথাও। কোনো অতল ভাবনায়।
.

একদিকে তূর্ণয়া’র বিবাহ আয়োজন। খুশিতে আত্মহারা প্রতিটি সদস্য। অন্যদিকে অজানা এক স্থানে চলছে কুটিল ষ*ড়যন্ত্র। কারো থেকে আপনজন কেড়ে নেয়া, বুঝিয়ে দেয়া কষ্টের সপ্ত কাহন।

আহা সে কি য’ন্ত্রণাদায়ক, বি*ভৎস পরিকল্পনা!
.

সারাটা দিন যেনতেন ভাবে অতিবাহিত হলো দুয়া’র। বরাবরই খেয়াল করেছে তূর্ণ কেমন অন্যমনস্ক। বিগত দিনগুলোর ন্যায় উৎফুল্ল, সতেজ নয়। কেমন একটা লাগছে। কোনো চিন্তায় মগ্ন কি? সুযোগের অভাবে জানা হলো না। তবে মনে মনে দ্বৈত ভাবনা পোষণ করে চলেছে দুয়া। আজ রাত কিছু হতে চলেছে। কিন্তু কি?
.

আঁধারিয়া রজনী। হিমাংশু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। হিমেল পবনে নৃত্যরত বৃক্ষপত্র। ভাবনায় মশগুল তূর্ণ ইটে বাঁধানো পথ ধরে হেঁটে চলেছে। আশপাশে অবস্থিত গাছপালা পেছনে ফেলে পৌঁছে গেল গন্তব্যে। সেথায় পৌঁছাতেই চমকালো বেশ! এক লহমায় পালিয়ে গেল ভাবনার দল। ত্রিকোণ আকৃতির ক্ষুদ্র ছাদ। চারটে চিকন পায়ার ওপর দন্ডায়মান ছাদটি। ফেইরি লাইটস জ্বলজ্বল করে কৃত্রিম আলোকছটা ছড়িয়ে চলেছে চারিধারে। ছাদের নিম্নভাগে ছোট্ট এক টেবিল। টেবিলের দু প্রান্তে দু’টো চেয়ার। মোহময়ী রমণী বসে একটি চেয়ারে। পড়নে তার লাল রঙা থ্রি-পিস। পাতলা ওড়না জড়িয়ে মাথায়। ওড়নার অন্তরাল হতে উঁকিঝুঁকি দিয়ে চলেছে একগুচ্ছ কেশ। ফেইরি লাইটের কৃত্রিম আলোয় অবর্ণনীয়-মোহনীয় লাগছে! সম্মোহিত হলো পৌরুষ চিত্ত। ধীরজ গতিতে এগিয়ে গেল তূর্ণ। বসলো অর্ধাঙ্গীর বিপরীতে। নয়নে নয়ন মিলিত হলো। দৃষ্টি আকর্ষণ করলো কপোলে লেপ্টে থাকা লজ্জালু আভা। কিছুটা সময় ধরে মুহুর্তটুকু উপভোগ করলো তূর্ণ। অতঃপর গলা খাঁকারি দিয়ে পরিবেশ স্বাভাবিক করার প্রয়াস চালালো। সফল হলো বটে। লাজুক রমণী অবনত করে নিলো দৃষ্টি। তূর্ণ মৃদু হাসলো। আশপাশে তাকিয়ে বললো,

” নাইস অ্যারেজমেন্ট! ”

দুয়া তৃপ্ত হলো। ওর পানে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মানুষটি। ফিচেল হেসে বলল,

” বউকে একবেলা এড়িয়ে চললে এত ভালো চমক পাওয়া যায় জানা ছিল না তো। এখন মনে হচ্ছে মাঝেমধ্যে এমন ছোটোখাটো চমকের জন্য হলেও এড়িয়ে যেতে হবে। ”

কথাটা পছন্দ হলো না দুয়া’র। সে সরু চোখে তাকিয়ে বললো,

” আরেকবার শুধু আমাকে অ্যাভয়েড করে দেখো না। তখন জানবে এড়িয়ে যাওয়ার ফলাফল কি। ”

” তাই নাকি? কি করবে বউ আমার? ” দুষ্টু হেসে প্রশ্ন করলো মানুষটি। বিপরীত দিক হতে জবাব এলো,

” সোজা বাপের বাড়ি চলে যাবো। ”

সশব্দে হেসে উঠলো তূর্ণ। দুয়া এতে অসন্তুষ্ট হলো। তূর্ণ হাসতে হাসতে বললো,

” লাইক সিরিয়াসলি! পাঁচ মিনিটের দূরত্বে বাপের বাড়ি। এখন বরের সাথে ক্যাঁ’চাল করে বাপের বাড়ি চলে যাবি? ”

” দরকার হলে যাবো। ”

” তাহলে আমিও শ্বশুরবাড়ি হানা দিয়ে বউ তুলে নিয়ে কেটে পড়বো। ”

” ইশ্! ভাষার কি দশা! ” চোখমুখ কুঁচকে ফেললো দুয়া।

তূর্ণ দু হাতে টি-শার্টের কলার ঠিক করে গর্বিত কণ্ঠে বললো,

” বাঙালি আমরা। মাঝেমধ্যে এমন ভাষাশৈলী প্রয়োগ করা উচিত। বুঝলি? ”

” ঘেঁচু বুঝলাম। ”

হেসে উঠলো তূর্ণ,

” এই তো বউ আমার বুঝে গেছে। তা ম্যাডাম। এবার বলুন হঠাৎ তলব কেন? বরের জন্য মন কেমন করছিল? ”

” জ্বি না। ”

” তাহলে? ” জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে তূর্ণ।

দুয়া ওর পানে তাকালো। মৃদু স্বরে আমতা আমতা করে বললো,

” আ আসলে কিছু বলার ছিল। ”

” সরি বলতে চাস? ”

” সরি! কেন? মানে সরি বলবো কেন? ”

” গতরাতে ছাদে এলি না। বরের কথা অমান্য করলি। সেজন্য। ”

” না মশাই। এমন কিছুই নয়। ”

” তাহলে কি? ”

দুয়া কিছু বলতে উদ্যত হতেই তূর্ণ থামিয়ে দিলো। ডান পার্শ্বে অবস্থিত সরু জলধারা দেখিয়ে বললো,

” চল ওখানে গিয়ে বসি। ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। ”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মেয়েটি। স্বামীর সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো। হেঁটে পৌঁছালো গন্তব্যে। বসলো জলধারা সংলগ্ন সবুজ ঘাসের আচ্ছাদনে।

চলবে.

[ ঈদ মোবারক পাঠকবৃন্দ! আল্লাহ্’র রহমতে নিরাপদ ও বরকতময় হোক আপনার কোরবানি।

কেমন লাগলো আজকের পর্বটি? নিশাদ-তৃষার বিষয়টি দুই বা এক পর্বের মধ্যেই পুরোপুরি খোলাসা হতে চলেছে। একটু ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here